#তোকে আমার চাই
#লেখিনীতে : ইসরাত জাহান তন্নি
#পর্ব : ৬
|।
|।
|।
|।
‘
সকালে ঘুম ভাঙতে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম, যতটা না অবাক হচ্ছি তার থেকে দিগুণ ঘাবরে গেছি উনাকে আমার পাশে দেখে,
‘
তনু : ভাইয়া ও শুভ্রব ভাইয়া আমি এখানে কেন, আমি তো সোফায় ঘুমিয়ে ছিলাম কী ভাবে এসেছি আমি ( অসহায় কন্ঠে )
‘
শুভ্রব : উড়ে উড়ে এসেছিস ডাফার, ( বিরক্ত )
‘
তনু : উড়ে উড়ে,ইয়ে ভাইয়া আপনি আমাকে নিয়ে এসেছিলেন, ( ভয়ে ভয়ে )
‘
শুভ্রব : এই তুই চুপ করবি তোর কি মনে হয় আমি তোকে সিনেমার নায়ক দের মতো কোলে করে নিয়ে এনেছি গাঁধী’ চুপ করবি তুই দেখি আমাকে শান্তিতে ঘুমাতে ও দিবি না!! ( রাগী )
‘
তনু : আমি কিন্তু এখন কেঁদে দিবো আপনি এসব কি বলছেন, টা কি হ্যাঁ আচ্ছা শুভ্রব ভাইয়া আপনি আবার আমাকে কিছু করেন টরেন-নি তো ( বলেই জীভ কেটে একটু থেমে আবার বললাম।) ইয়ে মানে আমি বলতে চাচ্ছি আপনি কি আমাকে সত্যি কোলে করে এনেছেন,ভাইয়া।
‘
শুভ্রব : তুই তো দেখি দিন দিন ভারি অসভ্য হয়ে যাচ্ছি,!!বলেই দুহাত দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে চেঁচিয়ে বললেন। সারাদিন এতো ভাইয়া ভাইয়া করিস কেন আমি তোর কোন জন্মের ভাই লাগি,,, এ বলে বিছানায় হেচঁকা টা মেরে উনি ওয়াশ রুমে চলে গেলেন,
‘
আমার কান্না পাচ্ছে ভীষণ কান্না পাচ্ছে,উনি এমন কেন সব সময় আমার সাথে কেমন বিহেভ করেন, মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সব কিছু ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাই, আব্বু আম্মু কে কিছু বললেই বলে মানিয়ে নেয়,সব ঠিক হয়ে যাবে,,,,,কি ঠিক হবে আমি তো কিছুই ঠিক হতে দেখছি না, কিচ্ছু ঠিক হবে না! উনি উনার বন্ধুদের সামনে আমাকে বোন হিসেবে পরিচয় দিয়েছে আর আমি ভাইয়া বলাতেই এতো রাগ,উহু,!!
‘
শুভ্রব : তুই এখনো এখানে বসে আছিস ( ভ্রু কুঁচকে )
‘
তনু : আমি যে কাঁদছি সেটা কি চোখে টোখে পড়ে না কাদঁছি ঐ টাই খালি চোখে পড়ে, ঢং( মনে মনে)
‘
শুভ্রব : যা ফ্রেশ হয়ে আয়,কলেজে যাবি না, দশ মিনিট এর মধ্যে নিচে আয় না হলে তোকে রেখে আমি চলে যাবো। ( শান্ত সুরে )
‘
তনু : হুহ ঢং তোর সাথে গেলেও কি আর না গেলেও কি, আমি একাই যেতে পারি। তোর সাথে যেতে আমার বয়েই গেছে। ( মনে মনে )
‘
ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতে দেখলাম ভাবি রান্না ঘরে রান্না করছেন, আমার মেজাজ টা যেনো বিগড়ে গেলো সবাই কত খারাপ এ সময় ভাবি দিয়ে কাজ করাচ্ছে,
‘
তনু : ভাবি এই ভাবি তুমি কাজ করছো কেন বলো তো আর ফুপি তুমি জানো না, এই সময় নারীদের রেস্ট নিতে হয়,কোনো কাজ কাম করা যায় না, বলো
‘
ভাবি : তনু তুমিও না যে কি বুঝিনা আমাকে কেউ কাজ করতে বলে না, আসলে একা একা রুমে বসে থাকতে ভালো লাগে কাজ করতে ইচ্ছে হয় আর দেখো না মা একা একা পারছে না তাই হেল্প করছি, কাজের লোকরা সবাই গ্রামের বাড়িতে গেছে।
‘
তনু : তো কি হয়েছে বাড়িতে কি আমি নেই নাকি,প্রয়োজন হলে আমি আর পড়াশোনা করবো না, বাড়ির কাজ করবো, তারপর ও তোমাকে কোনো কাজ করতে দিবো না, বুঝেছো ( দাঁত কেলিয়ে )
‘
শুভ্রব : তুই তো দেখি তোর বাপ দাদার মতো হয়েছিস চাপা বাজ ভারি চাপা ও মারতে জানিস তো ( অবাক।)
‘
তনু : শুভ্রব ভাই প্লিজ আপনাকে আমার অসহ্য লাগে আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই দয়া করে চুপ করুন আর সব সময় বাপ দাদার কথা টেনে হিচঁরে আনেন কেন,
‘
শুভ্রব : তনু তুই আমাকে,,,,,
‘
তনু : প্লিজ চুপ করুন তো,
‘
দাদি : আরে তনু দিদিভাই এখানে এভাবে রিয়েক্ট করার কি আছে তুমি তো জানো শুভ্রব একটু এমনই,,,আর শোনো না সারাদিন দুজনে এমন ঝগড়া জাটি না করে, দু চার টা নাতি নাতনির মুখ তো দেখাতে পারো ( হেসে )
‘
তনু : নাতি নাতনির মুখ দেখার আসা টা ছেড়ে দেও ( ভাব )
‘
দাদি : কেন ( কৈতুহাল।)
‘
তনু : তোমার দাদু ভাই তো এখনো কিছু,,,( আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি আমাকে চোখের ইশারায় থামিয়ে দিলে,,)
‘
শুভ্রব : মেরি জান পরে কথা হবে কেমন দেড়ি হয়ে চাচ্ছে যে,( অভিবাম সুরে )
‘
দাদি : হ্যাঁ যা তোরা তবে একটা কথা বলে যা,
‘
শুভ্রব : আবার কি কথা ( বিরক্ত )
‘
দাদি : বল তোরা দু চার টা নাতি নাতনির মুখ দেখাবি খুব তাড়াতাড়ি আমাদের সুখব দিবি!
‘
শুভ্রব : আরে হ্যাঁ দিবো তো দু চার টা কেন আমি তো ভাবছি ফুট বল টিম বানাবো, ( দাঁত কেলিয়ে )
‘
তনু : আমি যেনো লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম কি অসভ্য মানুষ উনি,মুখে যা আসে তাইই বলে! উফ এই মানুষ টাকে নিয়ে না পারা যায় না, সত্যি খুব খারাপ উনি। খুব ( মনে মনে মুচকি হেসে )
‘
শুভ্রব : এই মনে মনে কি গবেষনা করছিস নিশ্চয় আমাকে গালাগালি করছিস না, ( কাছে এসে )
‘
তনু : আমার কিন্তু দেরি হয়ে যাচ্ছে চলুন! ( হেটে )
‘
শুভ্রব : হ্যাঁ চল,
‘
— আজ প্রচুন্ড গরম পড়ছে আকাশে নিশ্চয় আগুনের খৈ ফুটেছে না হয় এতো গরম পড়ছে কেন গরমের জন্য মানুষ হাটা চলা করতে পারছে না রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে এক যুবক পড়নে টি-শাট, আর থ্রি কোয়াটার পেন্ট ব্যস্ত ভঙ্গীতে হেটে চলে মাথার উপর দিয়ে ঝুলে আছে ছাতা যার জন্য মুখটা দেখা যাচ্ছে না! সকালে শুভ্রব ভাইয়া কলেজে দিয়ে গেছেন বলেছিলে ক্লাস শেষে দাড়াতে উনি আসবে বললেন কিন্তু এখনো আসছেন না,অফিসে নিশ্চয় কাজে চাপ বেশি তাই,লেইট হচ্ছে, তাই আমি আশেপাশের একটা টোঙ্গে বসে আছি বান্ধুবীরা বলেছিল ওদের সাথে চলে যেতে আমার ও খুব ইচ্ছে করছে চলে যেতে ভয়াংক এই রৌদ্রতেজ থাকার মতো বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই অনিচ্ছেদ সর্তেও থাকতে হলো ঐ যে বলেছিলেন উনি আসবেন,না হয় পড়ে বলবে, তনু তোর দেখি বিন্দু মাত্র ধর্য নেই’!!একদম বাপের মতো হয়েছিস, বাপ দাদা সব তুলে আনবেন উনি,!! রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার ব্যক্তিটি ঘুটি ঘুটি পায়ে হেটে এসে বলললো,তনু তুমি এখানে কি করছো কলেজ তো প্রায় বিশ মিনিট আগে ছুটি হয়েছে,
বলেই ছাতাটা বন্ধ করে বসে পড়লেন পাশে পরিচিত মানুষটিকে দেখে হাসি না আসলেও একটু খানি মুখে হাসি রাখতে হলো।
‘
তনু : কিছু না। শুভ্রব ভাইয়া বলেছিলেন আমাকে নিতে আসবেন তাই উনার জন্য অপেক্ষা করছি আর কি ( দাঁত কেলিয়ে )
‘
সিফাত : ওহ্ আচ্ছা একটা ফোন দেও শুভ্রবকে, ( শান্ত কন্ঠে )
‘
তনু : আমার কাছে তো মোবাইল নেই? ( অসহায় )
‘
সিফাত : ওহ্ আমার ফোনটাও বাসা রেখে এসেছি, এখন কি করার ( একটু থেমে ) শোন তুমি এখানে বসো আমি তোমার জন্য আইসক্রিম কিনে আনছি যা গরম পড়ছে না!!
‘
– বলেই নিমিষে হাওয়া হয়ে গেলেন,আমার কাছে পৃথিবীর দুটি লোক কে বিরক্ত লাগে এক শুভ্রব ভাই দুই সিফাত ভাইয়া আমার মনে পৃথিবীতে সব চেয়ে বেশি কথা বলে এ দুটি মানুষ সারাখন কেমন গে গে করেন।
‘
সিফতা : এই নেই আইসক্রিম ( হাত বাড়িয়ে )
‘
– আমিও আর কথা না বাড়িয়ে আইসক্রিম টা নিয়ে নিলাম কিছু বললেই শুরু হয়ে যাবে বক বক করা, একটু মুখে দিতেই শুভ্রব ভাইয়াকে সামনে দেখতে পেলাম উনি কি মানুষ নাকি এলিয়েন কোথা থেকে উড়িয়ে এলেন! আমি হত্যাসা হয়ে তাকিয়ে আছি।
‘
শুভ্রব : কিরে পুচকি তুই ওমন করে তাকিয়ে আছিস কেন কি দেখছিস আমি কি জুকার নাকি গাঁধী, আর সারাদিন এতো খাস ক্যান মোটা হয়ে যাবি তো পরে আবার হাটতে পারবি না, ( দাড়িয়ে থেকেই বললেন।)
‘
সিফাত : এই শালা, তুই ওর সাথে এভাবে কথা বলছিস কেন আইসক্রিম খেলে কেউ কি মোটা হয়ে যায়, এতখন কই ছিলি তুই।
‘
শুভ্রব : কাজের চাপটা আজ একটু বেশিই ছিলো,তাই, তুই তো দেখি অন্যের বউ এর প্রতি যত্ন শীল বেশি তুই এখানে আছিস জানলে আমি আর আসতাম না, ওকে নিতে ( অভিমান।)
‘
সিফাত : অন্যে বউ মানে ( সন্দেহ )
‘
শুভ্রব : সে কিছু না তনু চল ( হেটে )
‘
সিফাত : আরে দাড়া কিছু তো একটা আছে বল না,( সামনে গিয়ে )
শুভ্রব : পরে বলছি পথ ছাড় না, তনু তুই কি এখানে থাকবি আসছিস না কেন। ( রাগী )
– আর কিছু না বলে দূরত পায়ে হেটে গাড়িতে গিয়ে বসলাম, উনি ড্রাইভ করছেন আর কিছু খন পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছেন, অভিমানি চোখে, সিফাত ভাইয়ার সাথে কথা বলাটা মনে হয় উনি মেনে নিতে পারছেন না,আমাকে ভালোই বাসেন না আবার এতো জ্বলছে কেন কে জানে,।।
‘
‘বাড়ি এসে উনি আমার সাথে দুটি কথাও ঠিক করে বলেনি, দেখেই মনে হচ্ছে প্রচুন্ড রেগে আছেন, উনার রাগকে পাত্তা না দিয়ে বেলকুনিতে গিয়ে আকাশের জোৎস্না মাখা চাঁদ খানি দেখছি আকাশে কি সুন্দর চাঁদ ফুটেছে,তারারা কেমন ফুটে আছে একটা তারা আরেক টা তারার পাশাপাশি হয়ে আছে আচ্ছা আজ কি তারার মেলা আকাশে কি তবে মেলা বইছে,
‘
শুভ্রব : তনু তোর সাথে কিছু কথা ছিলো, ( শান্ত )
‘
তনু : হ্যাঁ বলেন
‘
শুভ্রব : আসলে তোর আর আমার বিয়ে টা হটাৎ করেই হয়ে গেছে,
‘
তনু : তো ( অবাক,)
‘
শুভ্রব : আমি বলতে চাচ্ছি, আমি যদি তোর কাছে স্বামী অধিকার চাই তুই কি দিবি, ( আমার দুহাত মুঠো নিয়ে )
‘
তনু : পারি তবে একটা সর্ত আছে।
‘
শুভ্রব : কি সর্ত ( ভ্রু কুঁচকে )
‘
তনু : সর্ত টা হলো আমাকে তুই করে বলতে পারবেন না, তুমি করে বলতে হবে।
‘
শুভ্রব : ওকে। ( বাকা হেসে )
‘
—
‘বেলকুনি থেকে আমাকে পাচ কোলে করে নিয়ে এসেছেন,আমি যেনো লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম মনের মধ্যে কেমন যেনো একটা অনুভূতি কাজ করলো,কাল সকালটা শুরু হবে আমার জন্য এক নতুন সকাল, উনি কি তবে আমার সাথে আর ঝগড়া করবেন না আমি খুব মিস করবো উনার সাথে করা ঝগড়া,,,,,,,,,,
#গল্পটা কেমন হচ্ছে বলবেন কিন্তু আমি খুব তাড়াতাড়ি গল্পটা শেষ করতে চাচ্ছি,,,,
#চলবে
( সারাদিন রোজা রেখে রাতে খুবই ক্লান্ত হয়ে যাই কি থেকে কি লিখলাম জানি না,অর্ধেক রাতে লিখেছিলাম এখন আবার একটু লিখলাম , ভুল ক্রটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন! )
—