#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৩১
#Jhorna_Islam
দায়ান সোহার মুখ থেকে ভালোবাসার কথা শুনার জন্য
অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে চাতক পাখির মতো।
সোহা মাথা নিচু করে নির্বাক ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে। ওড়নার শেষ প্রান্ত হাতের মুঠোয় নিয়ে পেঁচাচ্ছে আর শুকনো ঢুক গিলছে।
দায়ানের সেই মোহনীয় আকুলতা ভরা চোখের দিকে তাকানোর একদম সাহস নেই সোহার।কি করে সে লোকটাকে উপেক্ষা করবে।কি করে সারা না দিয়ে থাকবে।সে যে নিজেও লোকটাকে পা’গলের মতো ভালোবাসে। নিজের মনে মনে এখনই কতোবার দায়ান কে ভালোবাসার কথা বলে ফেলেছে। অথচ ঠোঁট নাড়িয়ে সশব্দে উচ্চারণ করতে পারছে না।
কথা গলায় আটকে আছে মুখ দিয়ে একটা শব্দ ও বের করতে পারছে না।
দায়ান অনেক সময় নিয়ে সোহাকে অনুরোধ করে প্রপোজের রিপ্লাই দিতে।ঐদিনের ঘটনার জন্য আজও বার কয়েক স’রি বলেছে। এখন আর নিজেও কিছু বলছে না। চুপ করে সোহার দিকে তাকিয়ে আছে।
এটাই ভাবছে তার ভালোবাসার চেয়ে সোহার অভিমান বেশি হয়ে গেলো। তার দিকে চোখ তুলেও তাকাচ্ছে না। বুক চিরে একটা দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে বলে ঠিক আছে তুমি যেতে পারো কিছু বলতে হবে না তোমায়।অনেক রাত হয়ে গেছে গিয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পরো।নয়তো অসুস্থ হয়ে যাবা।
কথাগুলো সোহাকে বলেই হাতের ফুলের তোড়া টা দূরে ছুড়ে মারে।তারপর উঠে যেতে নেবে এমন সময় ঝড়ের গতিতে সোহা ছুটে এসে দায়ানের বু’কে ঝাপিয়ে পড়ে।
হুট করে দায়ান তাল সামলাতে না পেরে পিছনের দিকে হেলে পরে যেতে নেয়।দুই হাত ফ্লোরে রেখে নিজেকে পরে যাওয়া থেকে আটকায়।
সোহা দায়ানকে শক্ত করে আ’ষ্টে পি’ষ্টে জড়িয়ে ধরে। যেনো দায়ান ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে।
হঠাৎ করে সোহা দায়ানকে এমন ভাবে ধরায় দায়ান কিছু টা হকচকায়।
সোহা দায়ানের গলায় মুখ রেখে কেঁদে উঠে। আমি ও আপনাকে খুব ভালোবাসি দায়ান।খুব খুব ভালোবাসি।নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। এখন থেকে না সেই শুরু থেকেই আপনাকে ভালোবাসি।
দায়ান সোহার মুখে ভালোবাসার কথা শুনে চোখ বন্ধ করে শুকনো ঢুক গিলে। নিজের জীবন টা এখন স্বার্থক মনে হচ্ছে। নিজেকে সামলে সোহাকে নিয়ে নিচেই বসে পরে। তারপর দুই হাত দিয়ে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয় তার তোতাপাখি কে।সোহা এখনো কেঁদে চলেছে।
ভালোবাসার কথা বলে এমন ভাবে কেউ কাঁদে?
এতো ভালোবাসিস আগে কেন বলিস নি পা’গলি?
সোহা কাঁদতে কাঁদতে দায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,, আমি খুব খারাপ তাই না?
কে বলেছে এসব কথা? তুমি খারাপ হবে কেনো? তুমিতো আমার ভালো মিষ্টি একটা বউ।
আমি আপনাকে এই কয়দিন অনেক কষ্ট দিয়েছি।
বেশ করেছো।আমি অপরাধ করেছি তুমি শাস্তি দিয়েছো।দরকার পরলে আবার দিবা।আমি আমার মহারানীর দেওয়া শাস্তি মাথা পেতে নেবো।
সোহা দায়ানের গালে দুই হাত রেখে বলে,,আপনি এতো ভালো কেনো?
পা’গলি আমার বলেই দায়ান সোহার কপালে নিজের অধর ছোয়ায়।
সোহা চুপচাপ দায়ানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। কালকের অপারেশনের কথা মনে হতেই আবার ডুকরে কেঁদে উঠে।
আবার কেনো কাদছো?
আমার খুব ভ’য় করছে।
কিসের ভ’য়? এইযে আমার বুক পাঁজরে শক্ত করে ধরে রেখেছি আর কিসের ভ’য় তোমার?
কালকের অপারেশনে যদি কিছু হয়ে যায়। আপনার কাছে আমি যদি আর না ফিরতে পারি।
সোহার কথা শুনে দায়ান ধমকে উঠে এসব কেমন কথা? সামান্য একটা অপারেশন হবে।তুমি এসব কি আজেবাজে কথা ভাবছো?
জানিনা গো আমার মন টা কু ডাকছে। মনে হচ্ছে আপনাদের সাথে আর থাকতে পারবোনা। আমি আপনাদের ছেড়ে যেতে চাই না। আমি বাচতে চাই।আমি আপনার সাথে বাঁচতে চাই।প্লিজ কিছু করেন আমার কতো স্বপ্ন আছে আপনাকে নিয়ে সেগুলো এখনও পূরণ হয়নি।
তুমি এসব কি ভাবছো? বাঁচবে তো আমরা এক সাথে বাঁচবো। তোমার সব ইচ্ছে আকাংক্ষা সব পূরণ করবো।কিছু হবে না । তুমি মনে সাহস রাখো।আজেবাজে কথা একদম ভাববে না।
আল্লাহর উপর একটু ভরসা রাখো পাখি।কিছু হবে না ভ’য় পেও না।আমি তোমার সাথে সবসময় আছি।এসব ভাবনা বাদ দিয়ে এখন প্ল্যানিং করতো আমরা হানিমুনে কই যাবো।
কোন দেশে যেতে চাও? হুু বলো বলো!
হানিমুনের কথা শুনেই সোহা লজ্জা পেয়ে যায়। দায়ান কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,, জানিনা।
ওমা এটা আবার কেমন কথা? জানবানা কেনো? জানতে হবে তো সিলেক্ট করো।
এসব বাদ দেন তো পরের টা পরে দেখা যাবে।
এইই তুমি মুখ তুলে তাকাও তো আমার দিকে তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো বাই এনি চান্স?
বলে সোহার মুখ টা নিজেই তুলে।সোহা চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে।জোরে জোরে শ্বাস ছাড়ে।
দায়ান নিজের মুখ টা এগিয়ে এনে সোহার ঠোঁটের কোণে চুমু খায়। সোহা দায়ানের পিঠের জ্যাকেট খামচে ধরে। দায়ান ও কিছু টা ঘোরে চলে যায় সোহার অধর নিজের অধরের সাথে মিলিয়ে দেয়।তারপর হঠাৎ সোহার অসুস্থতার কথা মাথায় আসতেই ছেড়ে দেয়।মেয়েটার শরীরে এখন কিছুতেই ধকল দেওয়া যাবে না।
তোমার শীতের পোশাক কই? শীত করছে না?
একটু একটু করছে তবে খুব ভালো লাগছে শান্তি লাগছে এখানে থাকতে। দায়ান নিজের জ্যাকেট খুলে সোহাকে দিতে নেয় পরে কি যেনো ভেবে জ্যাকেটের চেইন খুলে সোহাকে বুকে নিয়ে জ্যাকেট দিয়ে আগলে নেয়।
আজ তোমার জন্য ক্যানডেল লাইট ডিনারের ব্যবস্থা করেছি আসো বলে সোহা কে কোলে করে উঠে চেয়ার টেনে বসাবে সোহা বলে আমি এখানে বসবো না।এতোসময় যেমন ভাবে ছিলাম তেমন ভাবেই বসবো।
দায়ান আর কথা বাড়ায় না সোহাকে নিজের কোলে নিয়ে একটা চেয়ারে বসে পরে।
আজও এই ঘাস পাতা?
হুু সুস্থ হও দেন সব খেতে পারবা আর কয়েকটি দিন।
যদি না হই?
সোহা বলেই ধমক দিয়ে উঠে দায়ান।
ঠিক আছে আর বলবো না । নিন তারাতাড়ি খাইয়ে দিন তো খিদে লেগেছে।
সোহার খাওয়া শেষ হলে টেবিলের উপর থেকে ঔষধ নিয়ে খাইয়ে দেয়। আগেই এনে রেখেছিলো দায়ান।
আমি আপনাকে খাইয়ে দেই?
এটা আবার জিজ্ঞেস করা লাগে? দাও!
সোহা খুশি মনে দায়ান কে খাইয়ে দেয়। দায়ান ও তৃপ্তি সহকারে খেতে থাকে সোহার হাতে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে সোহা কে কোলে করেই নিজের রুমে নিয়ে আসে দায়ান।বিছানায় সুন্দর করে শুইয়ে দিয়ে কম্বল টেনে দেয় শরীরে।অনেক রাত হয়ে গেছে চুপটি করে ঘুমাও তে।কাল আবার সকাল সকাল উঠতে হবে।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
সোহার তো আজ কোনোভাবেই ঘুমে ধরবে না। তার মনে যে হাজারো ভ’য় চিন্তা। এসব ভাবতে ভাবতেই দায়ান ফ্রেশ হয়ে চলে আসে। এখনো ঘুমোও নি কেন?বলে নিজের সোহার পাশে শুয়ে পরে।
সোহা কোনো জড়তা ছাড়াই বলে উঠে,, একটু ভালোবাসুন না আমায়। এই সুখ টুকু আপনাকে দিয়ে যেতে চাই।পরে আর আমার কোনো আফসোস থাকবে না।
দায়ান সোহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। তোমাকে কিন্তু আমি এবার মাইর লাগাবো। আগে সুস্থ হও সব হবে।
কিন্তু,,,,,,,,,
কোনো কিন্তু না।ঘুমাও।
আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরুন না।
দায়ান হাতের বাঁধন আরেকটু শক্ত করে ।
আরেকটু শক্ত করে ।
ব্যাথা পাবে তো।
আপনার বুকের ভিতর আমায় লুকিয়ে রাখুন।
এমন পাগলামি করে না পা’গলি ঘুমাও।এই যে আমার বুকের মাঝে আগলে রেখেছি তোমায়।
সোহা দায়ানের বুকে মাথা রেখে একটা সময় ঘুমিয়ে যায়। দায়ানের চোখে ঘুম নেই।তারও যে অজানা ভয়ে বুক টা বারবার কেপে উঠছে।
————————–
পরের দিন পরিবারের সকলেই সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দেয়। তারপর সোহাকে নিয়ে হাসপাতালে বেরিয়ে পরে। সোহা সেই যে দায়ানের হাত ধরেছে আর ছাড়েনি।
দায়ান ও ছাড়ানোর চেষ্টা করেনি।
অপারেশনের সব কিছু রেডি। সোহাকে নিয়ে যাওয়া হবে দায়ান ও থাকবে সাথে।এমন সময় ডাক্তার খান কে সোহা বলে উঠে,, আংকেল আমার একটা কথা আছে।
জ্বি মামুনি বলো।
আমি চাই না উনি আমার সাথে অপারেশন থিয়েটারে থাকুক।
সোহা কি বলছো তুমি পা’গল হয়ে গেছো? আমি তোমার সাথেই থাকবো।
তাহলে আমি অপারেশন করাবো না।
ঠিক আছে মামুনি তুমি যা চাইছো তাই হবে।
কিন্তু আংকেল?
সোহা যখন চাইছে না। তখন থাক।এখন ওকে এসব নিয়ে জোর করলে শরীরে প্রভাব পরবে।তোমার নিশ্চয়ই অজানা নয়। আমরা আমাদের সর্বোচচ দিয়ে চেষ্টা করবো। তুমি চিন্তা করো না।
তারপর সোহাকে নিয়ে ভিতরে চলে যায় দায়ান করুন চোখে সোহার দিকে তাকিয়ে রয়। একোণ শাস্তি দিচ্ছে মেয়েটা তাকে?
সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলে উঠে,, আপনি কষ্ট পেলেও আমার যে কিছু করার নেই।অপারেশন থিয়েটারে আমার কিছু হয়ে গেলে আমি চাই না সেটা আপনি নিজের চোখে দেখুন বা সাক্ষী থাকুন।আমাকে মাফ করবেন দায়ান।বলতে বলতেই দুই চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।
হঠাৎ করেই দায়ান দৌড়ে এসে বলে,,স্যার দুই মিনিট দিন প্লিজ। ডাক্তার সম্মতি দিয়ে দায়ানকে সময় টা দিয়ে সরে যায়।
দায়ান সোহার কপালে চুমু খেয়ে বলে,,তোমার ডাক্তার তার ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করে থাকবে বুঝেছো? একদম ভ’য় পাবে না।
,সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি কিন্তু তোমার অপেক্ষা করবো।
আপনি পুরো নিব্বাদের মতো করছেন ডাক্তার।
আমার পাখি কে ভালোবাসলে যদি নিব্বাদের মতো হয় তাহলে তাই।তারপর দায়ান বেরিয়ে যায়। আড়ালে চোখের পানি মুছতে মুছতে।
সোহা ও দায়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদে। মনে মনে একটাই প্রার্থনা করে সে যেনো তার এই ডাক্তার টার কাছে ফিরে আসতে পারে।
#চলবে,,,,