তুমি হাতটা শুধু ধরো সিজন ২ (পর্ব ২৬)

0
1369

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২৬(বোনাস)
#Jhorna_Islam

“ডো’ন্ট ডেয়ার টু টাচ মি!”

কথাটা প্রবল আ’ক্রো’শের সাথে বলে উঠে সোহা দায়ানকে।

দায়ান এক দৃষ্টিতে সোহার দিকে তাকিয়ে রয়।

সোহা দায়ানের থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।তারপর হাত দিয়ে মুখ ঢেকে শব্দ করে কেঁদে উঠে। হাউমাউ করে কাঁদছে সোহা।চোখের পানি তার হাত বেয়ে গড়িয়ে নিজের কোলে পরছে।

সোহার কান্না দেখে দায়ানের বুকে মোচড় দিয়ে উঠে। মেয়েটার কান্না একদমই সহ্য হচ্ছে না তার। সব দোষ তো তারই তার পিচ্চি পাখিটা তার উপর নিশ্চই খুব অভিমান করেছে। তাইতো তাকে কাছে যেতে দিচ্ছে না।

দায়ান তবুও নিজেকে সামলে সোহার কাছে এগিয়ে আসে।
সোহা রা’গ করেছো আমার উপর?

আমি জানি রাগ করারই কথা। কিন্তু আমাকে একটু বলতে দিবে? শুধু একবার আমার কথা শুনো।এ’ক্স’প্লে’ইন করার সুযোগ দাও পা/গলি।

সোহা মুখের থেকে হাত সরিয়ে দায়ানের দিকে তাকায়। তারপর কাঠ কাঠ গলায় বলে,,,আমি কারো কাছ থেকে কিছু শুনতে চাই না।

আমার কিছু শোনার নেই।

একবার প্লিজ!!

না মানে না আমি কিছু শুনতে চাই না। কাল এতো অনুরোধ কোথায় ছিলো? যখন আমি ঘন্টার পর ঘন্টা আপনার পথ চেয়ে হাসপাতালে অধির আগ্রহে পথ চেয়ে বসেছিলাম?

কোথায় ছিলো এতো দরদ? যখন রাতের বেলা আমাকে একা একা বাড়িতে আসতে হয়েছে। আমার কাছে কোনো টাকা ছিলো না। আর সাথে না ছিলো ফোন।

আপনার মনে না হয় জায়গা নাই পেলাম।কিন্তু মানুষের বাড়িতে কু’কুর বিড়াল থাকলেও মায়া হয়।

একটু মানবতার খাতিরেই না হয় ভাবতেন।মেয়েটা এই রাতের বেলা একা একা কি করবে? বাসায় যেতে পারবে কিনা। রাতে নিজে ফিরলেন না।একটা ফোন ও কি দেওয়া যেতো না? আমার ফোন না হয় আপনার গাড়িতে ছিলো। বাড়িতে কি আর কারো ফোন ছিলো না?

একটাবার খোঁজ নিয়ে দেখতেন মেয়েটা ঠিক মতো বাড়িতে পৌঁছাতে পেরেছে কি না?

হাহ্ কি করে নিবেন।আপনিতো আপনার প্রথম ভালোবাসার খোঁজে বেরিয়েছিলেন।আমার কথা তখন মাথায়ই ছিলো না আপনার। সোহা নামের কেউ যে আপনার লাইফে আছে সেটা আপনি ভুলেই গিয়েছিলেন।

ভুলারই কথা ভুলবেন ই তো।আমি আপনার কে? কেউ না।উটকো ঝামেলা আমি আপনার জীবনে। বিয়ে টা ও পরিবারের জোরাজোরি তে করেছেন বুঝতে পেরে গেছি।

এতোকিছু করে এখন যখন দেখলেন তিশা আপু অন্য কারো। তাই আমার কথা মনে পরেছে।এখন তাই আমার কাছে এসেছেন আপনি।

“আমি শুধু আপনার প্রয়োজন,, প্রিয়জন না।”

আমি থাকবোনা আপনার জীবনে।আর না থাকবো আপনার বাড়িতে। সব ছেড়ে চলে যাবো।সব কিছু থেকে আপনাকে মুক্তি দিয়ে দিবো এমন কি এই বিয়ে নামক বন্ধন থেকেও।

তখন আর আপনাকে ডিসটার্ব করার জন্য কেউ থাকবে না।

দায়ান সোহার কথা গুলো এতো সময় মাথা নিচ করে শুনে গেছে। সব দোষ তো তারই। সে কেন মেয়েটা কে একা ফেলে তিশার পিছনে ছুটে গেলো। মাথায় কেনো আসলোনা মেয়েটার কাছে টাকা আছে কি না।

কতোটা কষ্ট নিয়ে কথা গুলো বলছে সোহা। কাল খুব কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা।

সোহা যখন দায়ানকে বিয়ের বন্ধন থেকে মুক্তি দিবে বলেছে তখন তার টনক নড়ে। কি বলছে মেয়েটা এসব? দায়ান কে মুক্তি দিবে মানে?

দায়ান তারাতাড়ি সোহাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসে। তারপর দুই গালে হাত রেখে সারা মুখে চুমু খেতে থাকে পাগলের মতো।

সোহা চেয়েও দায়ান কে সরাতে পারছে না। একেইতো শরীরে জোর নেই তার উপর প্রচন্ড বুক ব্যাথায় নিশ্বাস ভা’রি হয়ে আসছে। কি কষ্টে যে নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছে শুধু সোহাই জানে।একদম জানতে দিবে না লোকটাকে অসুস্থতার কথা।

দায়ান সোহাকে নিজে সোহাকে বু’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলতে শুরু করে,,,,,

তুমি একদম আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববে না। আমি জানি আমি কাল খুব বড় অন্যায় করেছি।তার জন্য যা শাস্তি দেওয়ার আমাকে দাও ল’ক্ষি’টি আমি সব শাস্তি বিনা সংকোচে মাথা পেতে নিবো।যা বলবা তাই শুনবো।

আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা একদম বলবেনা। এটা আমি হতে দিবো না কখনো।আমাকে ছেড়ে যাওয়া ছাড়া সব শাস্তি মেনে নিবো। আমার সাথে থেকে আমাকে না হয় শাস্তি দিও তুমি!!

কালকে আমার পা/গলিটাকে ছেড়ে যেয়ে আমি খুব বড় অন্যায় করেছি। তোমার হাতটা ছাড়া আমার একদম উচিৎ হয় নি। কিন্তু হঠাৎ করে তিশাকে চোখের সামনে দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারিনি আমি। যাকে এতোদিন জেনে এসেছি মৃ’ত তাকে হুট করে চোখের সামনে দেখলে কি ঠিক থাকা যায়?

ঐ মুহূর্তে তিশাকে দেখে আমার মাথা ফাঁকা হয়ে গিয়েছিলো। তাই ওকে ধরতে তোমার হাত ছেড়েই তিশার পিছনে ছুটে যাই। বাইরে গিয়ে আমি আরেকটা ঝটকা খাই।

যখন দেখলাম তিশা আর ওমি হেসে হেসে কথা বলছে আর গাড়িতে উঠছে।আমি তখন পিছন থেকে অনেক ডেকেছি আমার ডাক শুনেনি। গাড়িতে উঠে চলে যেতে থাকে।

তাই আমি গাড়ি নিয়ে ওদের পিছু নেই। প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট পিছনে যাওয়ার পর হঠাৎ করেই কোথায় যেনো গাড়ি টা হাড়িয়ে যায়।অনেক খুঁজেও আর পেলাম না। রাগ লাগছিলো খুব ভিতরে ভিতরে যে কিছু একটা প্যা’চ ছিলো বুঝতে বাকি নেই। আমি অনেক বড় একটা ধোঁয়াশার মধ্য ছিলাম।সেইটাই খুঁজে বের করতে পারছিলাম না।

তখন হঠাৎ করেই তোমার কথা মাথায় আসে। এসব ভাবতে ভাবতে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে তোমাকে আমি হাসপাতালেই রেখে এসে পরেছি।

তারপর গাড়ি ঘুরিয়ে তারাতাড়ি হাসপাতালের দিকে রওনা দেই। তখনই মাথায় ফোনের কথা আসে।তোমায় ফোন লাগাই। কিন্তু তাকিয়ে দেখি তুমি তোমার ব্যাগ আর ফোন গাড়িতেই রেখে ছিলে।

তারপর আরো জোরে ড্রাইভ করতে গিয়ে একটা এক্সিডেন্ট হয়ে যায়। একজন বৃদ্ধ মহিলা আমার গাড়ির সামনে এসে পরে। যদিও আমি ব্রেক করায় তেমন লাগে নি।তাও পরে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে।মাথা ও কেটে গেছে। হাটতে পারতেছিলো না।উনার হাসবেন্ড অবশ্য সাথে ছিলো।তাও দুজন বৃদ্ধ মানুষ কি করে একে অপরকে সামলাবে?

মহিলাটা কে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে পাশের একটা ফার্মেসিতে নিয়ে যাই।মাথায় ব্যানডেজ করে দেই।পা টা ও মচকে গেছে। কোথায় যাবে জিজ্ঞেস করতে জানায় শহরে নিজের ছেলের কাছে এসেছিল। ছেলের সাথে নাকি অনেক দিন যোগাযোগ হয় না। ছেলে বউ নিয়ে শহরে থাকে।কিন্তু ওনারা যাওয়ায় নাকি ছেলে আর ছেলের বউ অনেক কথা শুনিয়েছে।তাই বেরিয়ে এসেছে রাতের বেলা।

এতো রাতে গ্রামের দু’জন বৃদ্ধ মানুষ কি করে যাবে বলো? তার উপর আবার আমার জন্যই পা টা মচকে গেছে। তাই কোনো উপায় না পেয়ে আমাকেই ওনাদের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রওনা দিতে হয়।

তখন প্রায় অনেক রাত।তোমার জন্য ও খুব টেনশনে পরে গিয়েছিলাম।সব দিক দিয়ে নিজেকে আমার অসহায় মনে হচ্ছিল।

তারপর বাড়িতে নোহা কে ফোন দেই।ওর ফোন বেজে কেটে যায়। হয়তো সাইলেন্ট ছিলো। তারপর অনেক চিন্তা ভাবনা করে দারোয়ান কাকা কে কল দেই। জিজ্ঞেস করি তুমি এসেছো কি না। উনি বললেন বাড়িতে এসেছো।বিশ্বাস করবে না আমার বুক থেকে যেমন বড় একটা পাথর সরে গেছে এটা শুনে। তারপর দারোয়ান কাকা আমায় সবই বলেছে,,। শুনে চু’প ছিলাম।আমার মতো অসহায় তখন কেউ ছিলো না। আমি জানি আমার পা/গলিটা হয়তো রা’গ করে থাকবে।তাই সিধান্ত নেই বাড়িতে এসে তার সব রা’গ অভিমান ভেঙে দিবো।

তারপর উনাদের বাড়িতে দিয়ে কিছু টাকা দিয়ে রাতেই আবার রওনা দেই তখন রাত দুইটা কি তিনটা। খুব ক্লান্ত লাগছিলো।একটু ফ্রেশ হওয়ার জন্য একটা ব্রিজের সামনে গাড়িটা থামাই। অনেক সময় নিয়ে ঐখানেই দাড়িয়ে থাকি।এতো রাতে আর বাড়িতে ফিরতে ইচ্ছে হয় নি। সকালেই আসি।

আর নিচে যে ভাঙচুর করেছিলাম না? ঐটা তিশা কে ভালোবেসে না। আমার রা’গ লাগছিলো এটা কেনো আমার থেকে লোকানো হলো? এই মিথ্যাবাদী ঠ’ক মেয়েটা কে আমি এতোদিন ভালোবেসেছে গেলাম। কাল বিকেল পর্যন্ত কিনা মনের এক কোণে ঐ মেয়েটা কে আমি বসিয়ে রেখেছিলাম। একটা স্বার্থপর মেয়ের জন্য আমি এতো কষ্ট পেয়েছিলাম এটা ভেবে রা’গে এমন করেছি।ওর প্রতি যে৷ টুকু ও টান ছিলো তার এক ফোটাও নেই বিশ্বাস করো।

বলেই দায়ান সোহার মাথায় চুমু খায়। তারপর মুখটা তুলতে গিয়ে বুঝতে পারে সোহা হাত পা ইতিমধ্যে ছেড়ে দিয়েছে। তারাতাড়ি সোহার মুখ তুলে দেখে অজ্ঞান হয়ে গেছে।

সো- সোহা এইইই এইই,, কি হয়েছে তোমার?
সোহা কথা বলো চোখ বন্ধ করে আছো কেনো তুমি? শুনতে পারছোনা আমার কথা? বলেই সোহাকে ঝাকাতে থাকে।
এইই আমার কাল ভুল হয়ে গেছে।

তোমাকে আমি আর জীবনে ও জ্ঞান থাকতে একা ফেলে যাবো না।হাত ও ছাড়বোনা তোমার কখনো।
তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো সোহা?

উঠো বলছি।উঠো সোহা এই মেয়ে উঠ। বলতে বলতে বলতে দায়ান চোখের পানি ছেড়ে দেয়।

চিললিয়ে তার আম্মু কে ডাকতে থাকে।

আম্মু,,,,,,,, আম্মু ,,,,, এই আম্মু দেখোনা সোহা কথা বলছে না আমার সাথে। ওরে চোখ মেলতে বলো আমার সাথে কথা বলতে বলো।আমি আর এমন ভুল জীবনেও করবো না।

সোহা,,,,,,

#চলবে,,,,,,,,,,,,

এই গল্পের আর কোনো বোনাস পার্ট দিবো না। 😒

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here