#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২৩
#Jhorna_Islam
দায়ানের বুকে মাথা রেখে চুপচাপ বসে আছে সোহা।এখনো শ্বাস স্বাভাবিক হয় নি ভালো করে।
প্রায় আধা ঘণ্টা যাবত একই ভাবে বসে আছে। সোহা দায়ানের বুকে চুপটি করে। দায়ান ও কিছু ব’লে নি।নিজের সাথে সোহাকে সে ও আঁকড়ে ধরে আছে।
সোহার বুক ব্যাথা হালকা একটু কমেছে এখন।নিজের ভালোবাসার মানুষটার বুকে মাথা রাখার সৌভাগ্য বোধয় সবার হয় না। কি যে শান্তি লাগছে।সোহার ইচ্ছে করছে সারাজীবন দায়ানের বুকে মাথা রেখেই কাটিয়ে দিতে।
সোহার দায়ানের কিছু সময় আগে করা কাজটা মাথায় আসতেই এক রাশ লজ্জা এসে হানা দেয়। লজ্জায় আরো কোকড়ে যায় মেয়েটা।দায়ানের বুকে আরো ঢুকে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালায়।
দায়ান সোহার মাথাটা ধরে নিজের বুকের থেকে উঠায়।সোহা চোখ বন্ধ করে রাখে।লোকটার মুখের দিকে কিছুতেই তাকানো যাবে না।
দায়ান সোহার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। সোহা যে কিছু সময় আগের ঘটনা টা নিয়ে লজ্জা পাচ্ছে বেশ বুঝতে পারছে সে।তাই কিছু না বলে সযত্নে সোহার মুখের অগোছালো চুল গুলো সরিয়ে দেয়। সোহার মুখ টা নিজের কাছে নিয়ে কপালে দীর্ঘ সময় নিয়ে চুমু খায়। সোহা দায়ানের ঠোঁটের ছোঁয়া নিজের কপালে পেয়ে চোখ মুখ আরো খি”চে ফেলে। দায়ানের পিছনের শার্ট খামচে ধরে।
“অনেক বুক ব্যাথা করছে তাই না? ”
সোহা দায়ানের কথাতে চোখ পিটপিট করে তাকায়। এতো সময় দায়ানের করা কাজে মাথা থেকে ব্যাথার কথা বেরিয়েই গিয়েছে।
ঐ সময় একটু বেশি ছিলো। অসহনীয় এখন একটু কমেছে এটা সহ্য করার মতো। মিনমিনিয়ে বলে উঠে সোহা।
আমি ঐদিন ভেবেছিলাম তোমার এটা হয়তো না খাওয়ার জন্য গ্যা’স’টি’ক হয়ে গেছে। বাট এটাতো অন্য কিছু।
সোহা তার দৃষ্টি এবার দায়ানের দিক থেকে সরিয়ে এদিক ওদিক তাকায়।
“কবে থেকে এই রকম হচ্ছে? ”
না মানে,,,,,,,,
এ টু জেট জানতে চাইছি আমি।কোনো বাহানা বা মিথ্যা কথা শুনতে চাই না।
আসলে হয়েছে কি ক্লাস সি'”ক্স এ থাকতে এরকম হচ্ছে। কোনো রকম কা”টা ছে”ড়া র/ক্ত এগুলো আমি দেখতে পারি না। অনেক সমস্যা হয়।বুক ব্যাথা শুরু হয়।শ্বাস কষ্ট হয়।
সব শুনে ডাক্তার এক বস্তা ঔষধ দিয়েছিলো। আর আমি ঔষধ খেতে একদম ই পছন্দ করি না। তাই যখনই বুক ব্যাথা করতো চুপচাপ শুয়ে থাকতাম গিয়ে। কাউকে বলতাম না এ কথা। এমন কি আপু কে ও না। কিন্তু এই ব্যাথা দিন দিন বেড়ে চলেছে। আগে সহ্য করা যেতো।এখন আর পারি না।
সোহার কথা গুলো শুনে দায়ানের প্রচন্ড রা’গ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে ঠা”টিয়ে গালে একটা লাগিয়ে দিতে। ঔষধ খাওয়া ভয়ে অসুস্থতা নিয়ে মানুষ এসব করে?
ডাক্তার ঐ সময় কোনো টেস্ট করায় নি?
না শুধু চেক আপ করে ঔষধ গুলো দিয়ে খেতে বলেছিলো।না সারলে বলে ছিলো পরের বার করাবে।আর উনি বলে ছিল আমার হা”র্ট দূ”র্বল।
দায়ান কিছু সময় চুপ থেকে বলে,,,, এখান থেকে ডিরেক্ট আমরা হাসপাতালে যাচ্ছি। সব টেস্ট করাবো। এতো দিন তুমি আমার ডাক্তার ছিলে না? এখন আমি তোমার! দেখি ম্যাডাম এবার ঔষধ না খেয়ে কই যায়।
সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে এই যে তার ডাক্তার বর এবার ডাক্তার গি”রি শুরু করবে।
“বলছিলাম যে অন্য একদিন যাবো।আজ না হয় থাক।এখন ব্যাথা একদম নেই সেরে গেছে। চলুন বাড়ি চলে যাই।
দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙায়।
সোহা এবার দ”মে যায়। ঠিক আছে এমন ভাবে তাকাতে হবে না। আপনি যা বলবেন তাই হবে।
বলেই সোহা দায়ানের কোল থেকে নেমে যেতে নেয়।যদিও একটু ও ইচ্ছে করছে না তার।ইশশশশ দায়ানের বুকে কি রকম শান্তি। সব দুঃখ কষ্ট কমে যায়।
দায়ান সোহাকে কোল থেকে সরতে দেয় না। আরো নিবিড় ভাবে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
” তুমি চুপচাপ এখানে শুয়ে থাকো।একদম নড়াচড়া করবে না। আমাদের পৌঁছাতে অনেকটাই সময় লাগবে। সো তুমি আরাম করো।”
সোহা দায়ানের কথা শুনে অনেক খুশি হয় যায়।সে তো মনে এতো সময় এটাই চেয়েছিল। মনের আশাটা যখন পূরণ হয়েই গেছে তাহলে আর তার সাথে কে? দায়ান কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে।
দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করে।
বলছি যে আপনার সমস্যা হচ্ছে না? আমাকে এভাবে নিয়ে গাড়ি চালাতে? দায়ান কে সোহা কথাটা জিজ্ঞেস করলেও মনে মনে এটাই চাইছিল দায়ান যেনো তাকে আবার সিটে না পাঠিয়ে দেয়।
চুপচাপ রিলেক্স করো। আই উইল ম্যা’নেজ।
সোহা আর কথা বাড়ায় নি।দায়ানের বুকে মাথা ঠেকিয়ে দায়ানের শরীরের মিষ্টি সুবাস উপভোগ করতে থাকে। এক সময় ঘুমিয়ে ও যায়।
দায়ান গাড়ি চালাতে চালাতে সোহাকে ধরে রাখা হাতটা সরিয়ে এনেছিলো।সোহা ঘুমিয়ে যাওয়ায় দায়ান কে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখা হাতগুলো আস্তে আস্তে আলগা হয়ে যায়।
দায়ান বুঝতে পারে নি সোহা যে ঘুমিয়ে গেছে। তাই রাস্তার মোড় ঘুরানোর সময় সোহা পরে যেতে নেয়। দায়ান গাড়ি থামিয়ে তারাতাড়ি সোহাকে আগলে ধরে। মাথাটাও পরে যাচ্ছিল।তাই মাথাটা নিজের বুকের মাঝে সযত্নে রাখে। মেয়েটা ঘুমিয়ে গেছে। ঘুমানোরই কথা এতো কিছুর পর শরীরটা অনেকটাই দূর্বল হয়ে গেছে। এবার আর দায়ান জোরে গাড়ি চালালো না আস্তে আস্তে ড্রাইভ করছে।সোহার ঘুমে যেনো ব্যা”ঘাত না ঘটে।
——————-
হাসপাতালের সামনে এসে দায়ান গাড়ি টা দার করায়।তারপর সোহার দিকে তাকায়। তাকিয়ে দেখে কি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা।জাগাতে ইচ্ছে করছে না। মন বলছে আরেকটু থাকুক না।ঘুমাক মেয়েটা।
দায়ান কে আর বেশি সময় সোহার ঘুম ভাঙার অপেক্ষা করতে হয় নি। গাড়ি থামানোর দশ মিনিটের মাথায় সোহা নিজেই উঠে পরে। ঘুমের ঘোরে দায়ানের বুকে নাক ঘষতে থাকে।সে এখন ভুলেই বসেছে কোথায় আছে।
সোহার কান্ডে দায়ানের শরীর অব’শ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে সোহাকে বলে,,,,,,
সোহা তোমার ঘুম ভাঙলো তাহলে। এবার আসো আমরা হাসপাতালে এসে পরেছি।
দায়ানের কথা শুনে সোহা ত”রি’ঘ’রি করে উঠে সিটে চলে যায়। সে ভুলেই গিয়েছিল এখনো সে দায়ানের কোলেই ছিলো। কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে তা নিজেও জানে না।
দায়ান বুঝতে পেরে বিষয় টা নিয়ে বেশি ঘাটায় না। বলে সোহা কে ঠিকঠাক হয়ে নিতে।
সোহা দায়ানের কথা মতো চুল গুলো ভালো করে বেঁধে নেয়।তারপর ওড়না টা ভালো করে শরীরে জড়ায়।
দায়ান গাড়ির দরজা খুলে বের হয়ে যায়। তারপর ঘুরে এসে সোহার পাশের টা খুলে চোখের ইশারায় বেরিয়ে আসতে বলে।
সোহা কিছু বলার জন্য উশখুশ করছে।
দায়ান বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করে,,, কিছু বলবে?
হ্যা আসলে খুব খিদে পেয়েছে আমার। চোখ বন্ধ করে বলে সোহা।
দায়ান বিনিময়ে মুচকি হেসে সোহাকে হাতে ধরে নিজে বের করে গাড়ির দরজাটা লাগাতে লাগাতে বলে,,,আমি জানি ম্যাডামের যে খিদে পাবে। হাসপাতালের ক্যা’ন’টিন এ চলো আমার সাথে। খাইয়ে তারপর সব করাবো। এখানে ভালো টেস্টি খাবার পাওয়া যায় চিন্তা করো না।
তারপর সোহা কে নিয়ে ভিতরে ঢুকে যায়।
সোহাকে নিজে পাশে বসিয়ে খাওয়ায় দায়ান।সোহা অবশ্য বলেছে দায়ান কে ও খাওয়ার জন্য। কিন্তু সে মানা করে দেয়।ঐসময় দায়ান খেয়েছে ভালো করে। এখন পেট ফুল আর খাবে না।সে যেনো ভালো করে খায়।
ভালো করে খাওয়ার কথা বললেও সোহার একটু ইতস্তত লাগছিলো। তাও কিছু করার নেই।
খাওয়া শেষ করে সোহা পানি খেতে খেতে দায়ানের হাতের দিকে ন’জর যায়। হাতটা দেখে সোহার ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠে। কি অবস্থা হয়ে আছে। ছি’লে গেছে অনেক টা র/ক্ত জমে শুকিয়ে আছে।বুঝতে একটুও অসুবিধা হয় না যে এগুলো ওরই কাজ।
পানির গ্লাস টা রেখে দায়ানের হাত টা ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। দায়ান এতো সময় এক হাত টেবিলের উপর রেখে আরেক হাত দিয়ে মোবাইল টি’প’ছি’লো।
সোহা দায়ানের হাত নিয়ে ক্ষ’ততে হাত বোলাতে বোলাতে বলে,,আমি কি করেছি এগুলো? আপনার খুব কষ্ট হয়েছে না? মলম লাগাতে হবে নয়তো সমস্যা হবে পরে। বলেই দায়ানের দিকে তাকিয়ে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টায়।
দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে উঠতে উঠতে বলে,,,,বাড়ি গিয়ে না হয় আমার ডাক্তার মেম আমার চিকিৎসা করবে।সে যখন জ’খ’ম করেছে তাহলে এটা তারই দায়িত্ব জ’খ’ম ঠিক করার।
এবার আসো ফাস্ট । বলেই সোহাকে টেস্ট করার জন্য নিয়ে যায়।
সোহা মিনমিনিয়ে বলে,, আমার ভ’য় লাগে।
ভ’য় পেয়ো না। আমি আছি না? আমি তোমার সাথেই থাকবো।
তারপর সোহার কি কি টেস্ট করতে হবে সব দায়ান পাশে দাড়িয়ে থেকে নিজে বলে দিয়ে করিয়েছে। সব টেস্ট করিয়ে দুই জন ই বেরিয়ে আসে। রিপোর্ট আসতে আরো দুয়েক ঘন্টা সময় লাগবে।তাই দায়ান সিদ্ধান্ত নিয়েছে একেবারে রিপোর্ট দেখে তারপর বাড়ি যাবে।তাই আপাতত সোহাকে নিয়ে নিজের ক্যাবিনে গিয়ে বসার জন্য নিয়ে যেতে থাকে।
সোহার একটা হাত দায়ানের হাতের মুঠোয়। দায়ান সোজা দিকে তাকিয়ে হাটলেও।সোহা এদিকে ওদিকে তাকিয়ে হাঁটছে।
হঠাৎ করেই দায়ান দাড়িয়ে যায়। সামনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।
দায়ান থেমে যাওয়াতে সোহা ও থেমে যায়। দায়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে দায়ান সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। সোহা ও দায়ানের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকায়।
সোহা সামনে তাকিয়ে একটা ঝ”টকা খায়।ততক্ষণে দায়ানের হাত সোহার ধরে রাখা হাত ছেড়ে দিয়েছে। সোহা একবার সামনের দিকে তাকিয়ে আবার দায়ানের দিকে তাকায়। তো আবার নিজের হাতের দিকে যা এতোসময় দায়ান ধরে রাখলেও এখন আর ধরে নেই।
তিতিশা! তিশা! এই তিশা বলে,,
দায়ান ততক্ষণে দৌড়ে বেরিয়ে গেছে।
সোহা শুধু নীরবে দাড়িয়ে দায়ানের চলে যাওয়া দেখছে।তার চোখ দিয়ে জলের ধারা বয়ে চলেছে।
#চলবে,,,,,,,,,,,