তুমি হাতটা শুধু ধরো সিজন ২ (পর্ব ১২)

0
1156

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ১২(বোনাস)
#Jhorna_Islam

দায়ানের গায়ে ঠান্ডা কিছুর অস্তিত্ব টে’র পেয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে সোহা তার দিকে হেঁসে তাকিয়ে আছে। হাতে তার হলুদ।

দায়ান গালে হাত দিয়ে তারপর হাতটা সামনে এনে দেখে তার গালে হলুদ।

এটা কি করলে সোহা?

হলুদ লাগালাম।

দায়ান ক’পট রা’গ দেখিয়ে বলে,,, কেনো লাগিয়েছো? লাগানোর আগে আমাকে একবার জিজ্ঞেস করে নিবা না?

সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,একটু হলুদ লাগিয়ে দেওয়ায় কি এমন হয়েছে?

আমি এসব লাইক করি না।দেখোনা দূরে বসে আছি? নয়তো রুশের সাথেই থাকতাম।রুশ কি এতক্ষন চুপচাপ বসে থাকতো? আমাকে হলুদ দিয়ে গোসল করাতো,সাথে আমিও।এসব উঠাতে আমার অসহ্য লাগে। কতো টাইম যায় জানো?

যেটা থেকে দূরে থাকার জন্য এখানে এসে বসে আছি তুমি সেটাই করলে।।

সোহা ঠোঁট উল্টায় বলে,,,,স’রি! আমি জানতাম না আপনি পছন্দ করেন না এসব। আমিতো ম’জা ভেবে করেছি।আপনি খুব রা’গ করেছেন আমার উপর তাই না?

সত্যি বলতে এতক্ষন প্রচুর রা’গ লেগেছিল। বাট তোমার এরকম বাচ্চা ফেস করে স’রি বলায় সব রা’গ উড়ে হাওয়া হয়ে গেছে। তোমার ফেস দেখে এখন হাসি পাচ্ছে।

হাসি পাচ্ছে মানে আপনি আর রা’গ করে নেই। হাসুন তবে।

দায়ান সত্যি সত্যি এবার হেসে দেয়।

সোহা ও দায়ানের হাসি দেখে হাসে।তারপর আড় চোখে কিছু দূরে দাড়িয়ে থাকা তমার দিকে একবার তাকায়। তারপর তমার হাতে থাকা হলুদের দিকে।

খুব সখ না উনাকে হলুদ লাগানোর? সকলের চোখে ফাঁকি দিয়ে তুই হলুদ নিবি আর ভেবেছিস আমি দেখবো না? হুহ তোর হাবভাব দেখে আমারই কেমন সন্দেহ হচ্ছিল।

এদিক ওদিক তাকিয়ে যখন কাউকে খুঁজতে ছিলি তখনই বুঝে গিয়েছিলাম তুই উনাকেই খুঁজতেছিস।

কতো বড় সাহস আবার লুকিয়ে হলুদ নিয়ে আসে উনাকে লাগানোর জন্য। আমি থাকতে এটা হতে দিব নাকি? কখনো না। তাইতো আমই এসে হলুদ লাগিয়ে দিলাম। কথাগুলো মনে মনে বলতে থাকে সোহা আড় চোখে তমার দিকে তাকিয়ে।
হঠাৎ করে কারো ডাকে সোহা ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। দায়ানের মা দায়ান কে ডাকছে।

আসছি মা বলেই দায়ান তার মায়ের কাছে চলে যায়।
সোহা ও তার বোনের কাছে আবার গিয়ে বসে পরে।

এদিকে তমা তার হাতে থাকা হলুদ গুলো ছুড়ে ফেলে দেয়। রা’গে হাত মু’ষ্টি করে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে।এই সোহাটার জন্য সব গ’র’র্ব’র হয়ে যাচ্ছে। কিছুতেই দায়ানের কাছে এগুতে পারছে না।

ভেবেছিলো দায়ানকে তার রূপের জ্বালে ফাঁসাবে। নিজের হাতের মুঠোয় আনবে।আজকের বাজারে এমন হ/ট সু’দ’র্শ’ন পুরুষ পাওয়া চারটি খানি কথা না।তারউপর ওয়েল সে’টে’ল্ড। সব দিক দিয়ে পার্ফেকট।দায়ান একবার প’টে গেলে লাইফটা বদলে যাবে তমার।উফফ শহরে বসে বসে ছ’ড়ি ঘুরাবে। রানীর মতো থাকতে পারবে। এসব ভাবতেই তো কেমন সুখ সুখ লাগছে। আর যখন সব কিছু চোখের সামনে থাকবে তখন তো তমাকে আর পায় কে?

কিন্তু এই সোহা হচ্ছে যতো নষ্টের মূল।কিছুতেই তমা দায়ানের ধারে কাছেও যেতে পারছে না তমা এই সোহার জন্য। প্রতিটা প্ল্যা’ন ভেস্তে যাচ্ছে।

তুই কি ভেবেছিলি সোহা তোর চোখের ভাষা আমি বুঝবোনা? তুই যে উনার উপর দূর্বল তা আমি ভালো করেই জানি।এজন্য তুই ইচ্ছে করে আমার কাজে ব্যা’ঘা’ত ঘটাচ্ছিস।

বুঝে গেছি এখন এসব পটানোর কাজ করলে হবে না। ডাইরেক্ট এ’ক’শান এ যেতে হবে। এমন কিছু করতে হবে যেন সা’প ও না মরে লাঠি ও না ভাঙে।

হাতে সময় বেশি নেই যা করার কালকের মাঝেই করতে হবে।”আমার রাজত্ব ও চাই,রাজপুত্র ও চাই।”

ভাবতে ভাবতেই হাতে ফোন নিয়ে কাউকে ক’ল লাগায়।অপর পাশ থেকে ক’ল রিসিভ করতেই তমা বলে উঠে,,, তোমাকে একটা কাজ করে দিতে হবে কাল।আমার সাথে এখনি একবার দেখা করো।
বলেই অন্য দিকে চলে যায় তমা।

————————————-
কালকের তুলনায় আজ বাড়িতে আত্নীয় স্বজনের সংখ্যা অনেক পরিমাণ বেশি।সকাল থেকেই অনেকে আসা শুরু করেছে।

সকলেই বিভিন্ন কাজে বি’জি। বাবুর্চি রা বিয়ের রান্না সকাল থেকেই করছে।সেখানে সোহা ও দায়ানের বাবা উপস্থিত।

দায়ান রুশকে সুন্দর করে তৈরি করে দিচ্ছে।

ভাই আমার না প্রচুর ভ’য় লাগছে।দেখ আমার হাত গুলো কেমন কাঁপছে!

— আশ্চর্য তুই কি চুরি করতে যাচ্ছিস? বিয়ে করবি এতে ভয়ের কি আছে?

— না মানে আমিও বুঝতে পারছি না।

— মুখে হাসি ফোটা।মানুষের হাসির পাত্র হতে ইচ্ছে না করলে।মেয়েদের মতো শুরু করে দিয়েছে।

— ম’জা নিচ্ছিস?

— হুম!কে না নিবে এসব হাস্যকর কথা শুনলে? আমিতো তাও কিছুই বলছি না রে।তুই শুধু একবার ভা’ব তোর শা/লিকা একবার এই তোর ভ’য় পাওয়া আর হাঁটু কাঁপা কাঁপির কথা শুনলে কি করতো?

রুশ এবার বলে আমার মান সম্মানের কি’মা বানিয়ে খেতো।কি ডে’ঞ্জে’রা’স! দেখ ওর কথা শুনেই আমার সব ভ’য় না’র্ভা’স’নে’স কেটে গেছে।

রুশের কথা শুনে দায়ান না হেসে থাকতে পারে না। শা/লি কে বেচারা ভ’য় পায়।

—————————————–
সোহা নোহার সাথেই আছে।আজ নোহাকে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে লোক এসেছে। সোহা বোনের সাজানো দু চোখ ভরে দেখছে।কি সুন্দর লাগছে তার বোনকে।মনে হচ্ছে একটা পুতুল।

কিছু সময় পরই বোনটা এই বাড়ি ছেড়ে তাকে ছেড়ে চলে যাবে ভাবতেই কান্না রা এসে ভি’র করে।চোখ ঘুরিয়ে পানি লোকানোর চেষ্টা করে। এখন একদম কাঁদলে চলবে না।নোহা যদি সোহার চোখে পানি দেখে তাহলে সাজ রেখে নিজেও কাঁদতে বসবে।

তাই নিজেকে সামলে নিয়ে আবার বোনের সাজ দেখতে মন দেয়। তারপর নোহার সাজ শেষ হলে নিজেও সেজে নেয়।

—————————————-
সোহা আর তার অন্যান্য কাজিন গো’ষ্ঠী বিয়ের গেট ধরা থেকে শুরু করে হাত ধোয়ানো,জোতা চু’রি কিছুই বাদ রাখেনি।রুশ বলে কয়েও একটা থেকেও বাঁচতে পারে নি।যা যা দা’বি করেছে সব দিতেই হয়েছে।

রুশকে একেবারে খালি হাতে ছেড়েছে।দায়ান চুপচাপ দাড়িয়ে দাড়িয়ে সকলের কান্ড দেখে হেসেছে কিছুই বলেনি।রুশ তখন বলে উঠে তোকে আমি আমার পাশে কি জন্য রেখেছি? কোথায় তুই আমায় এই রা/ক্ষসী দের হাত থেকে রক্ষা করবি তা না তুই হাসছিস? ম’জা নিতেছিস?

আমার কি করার আছে? তুই ওদের একমাত্র দুলাভাই। তোরে না’কা’নি’চু’বা’নি খাওয়াবে না তো কাকে খাওয়াবে?

সহ্য করে নে ভাই।আর আমি ওদের এসব কথা কি করে বলি বলতো? আমি তোর বড় ভাই হই না?

বড় না ছা’ই।শুধু এক বছরের বড়, এসব কেউ গো’না’য় ধরে না বুঝলি।

বড় মানে বড়। সে এক বছরেরই হোক বা এক ঘন্টার ই হোক।

ওকে বুঝে গেছি আমি। নে তুইও ম’জা নিতে থাক।আমার ও সময় আসবে তখন দেখিস আমি কি করি।

দেখবনে।আমিতো বিয়েই করবোনা।আর যদিও কখনো করা লাগে শা/লি ছাড়া করবো বুঝলি? একটু ভাব নিয়ে বলে দায়ান।

—————————-
তমা আজ গতকালের তুলনায় দ্বিগুণ বেশি সাজ করেছে। আলাদা একটা ভাবের মধ্যে আছে সে। হাই হি’ল পরে ঢেং ঢেং করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনো ছেলে সামনে এলে বা পাশ দিয়ে গেলে কোমড় টাকে দুলিয়ে একটা ভাব নিয়ে চলে।আজ সে পুরাই মেকাপ সুন্দরী। নোহার থেকেও বেশি গর্জিয়াস ভাবে সেজেছে।

সে তার লক্ষ পূরনের চেষ্টায় আছে। দায়ানের সব গতি বিধির উপর ন’জর রাখছে।কোথায় যাচ্ছে কি করছে। সঠিক সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় আছে।সময় বুঝে নিজের করা প্ল্যা’ন কার্যকর করবে।

চারিদিকে যখন অন্ধকার হয়ে এসেছে। সকলে বর কনে কে নিয়ে ব্যস্ত।তখনই তমা তার সুযোগ টা পেয়ে যায়।

দায়ানের ফোনে হঠাৎ করেই একটা কল আসে।সে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকে।

তমা বুদ্ধি করে সোহাদের বাড়িতে যে ছেলে টা টুকটাক কাজ করে তাকে বলে যে দায়ান কে সোহা উত্তর দিকে ডাকছে।তারাতাড়ি যেনো যায়।অপেক্ষা করছে সোহা সেখানে।ছোটো ছেলেটা ভেবেছে সত্যি ই বুঝি সোহা ই তমা কে বলেছে দায়ানকে ডাকতে।

ছেলেটা গিয়ে দায়ানকে বলে সোহা তাকে উত্তরের দিকে ডাকছে।

দায়ান কিছু সময় ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভেবে বলে ঠিক আছে আমি যাচ্ছি কথাটা শেষ করেই।ছেলেটা দায়ানের কথায় মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।

তমা তারাতাড়ি উত্তর দিকে গিয়ে দেখে নেয় সব ঠিক আছে কি না।তারপর কাউকে ফোন করে বলে,,,, সব ঠিক হচ্ছে। কিছু সময়ের মাঝেই সব কার্যকর হয়ে যাবে। তুমি কিন্তু তোমার কাজটা ভালো মতো করবা।ঠিক টাইমে এখানে এসে উপস্থিত হবে। না হলে যদি তোমার জন্য কিছু উলট পালট হয় তাহলে এক টা টাকা ও দিবো না।এখন রাখো।

দায়ান তার ফোনে কথা বলা শেষ করে।।। ছেলেটার কথা মতো উত্তর দিকে এগিয়ে যায়। ভেবে পায় না এই মেয়েটা ওকে ঐদিকে কেনো দেখা করতে বলল। দেখা যাক কি এমন দরকারী কথা বলে। ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে যায়।

দায়ান যদি জানতো তার সাথে কি হতে চলেছে,,তাহলে ঐদিকে কল্পনায় ও যাওয়ার কথা ভাবতো না। আর সোহা ও কিছু টে’র ই পেলো না তার নাম করে কি কি হতে চলেছে।
বড় কোনো ঝড় ধেয়ে আসছে,,,,,,,,,,

#চলবে,,,,,,

বিঃদ্রঃ দায়ানের সাথে তমাকে মিলিয়ে দিবো ভাবছি।বে’চারি দায়ান কে অনেককক লাভ করে।আপনারা কি বলেন??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here