#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ১১
#Jhorna_Islam
দেখতে দেখতে আরো কয়েকটা দিন কেটে গেলো।গ্রামের বাড়িতে দায়ান ও রুশদের দিন গুলো খুব ভালো ভাবে ম’জা, হাসি আনন্দে কেটে গেছে।
সোহা আর রুশ সারাক্ষণ নানান ধরনের খু’ন’সু’টিতে মেতে ছিলো।প্রতিদিন কিছু না কিছু নিয়ে দুইটায় দুইটার পিছনে লাগতো।আর বাড়ির সকলে রুশ আর সোহার কান্ড দেখে হেসে লুটোপুটি খেতো।
সোহা প্রায়ই দায়ান কে নিয়ে গ্রামে হাঁটতে বের হতো।এই কয়দিনে গ্রামের প্রকৃতি উপভোগ করতে পেরেছে দায়ান ভালোভাবে । এখন দায়ান প্রায় স্বাভাবিক হয়ে গেছে । আগের মতো হাসি খুশি থাকে সব সময়। তবে মনের মাঝে তিশার জন্য চাপা একটা কষ্ট অনুভব করে।নিজেই আবার নিজেকে সামলেও নেয়।
সোহা একদিন দায়ান কে বলে উঠে,,,,, আচ্ছা আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?
দায়ান সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে উৎসাহিত নয়নে দায়ানের দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে ফ্রেন্ড হওয়ার জন্য।
— তুমি কিসে যে নো পরো?
— কেন জানেন না? এইবার এইচএসসি দিয়েছি।
— আর আমি কি করি?
— ডাক্তার!
— তোমার আর আমার বয়সের পার্থক্য জানো? পিচ্চি একটা মেয়ে সে নাকি আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে আসে।
— একদম আমায় পিচ্চি বলবেন না।আর বন্ধু হতে সমানে সমান বয়স লাগে নাকি? জানতাম না তো।
— পিচ্চি মেয়ে তো তাই জানো না।
ধ্যা’ত হবেন না এটা বললেই হয়।এতো বাহানা দেওয়ার তো কিছু দেখছিনা।বলেই সোহা মুখ ঝা’ম’টা মেরে ধুপাধুপ পা ফেলে চলে যায়।
দায়ান পিছন থেকে ডাকে,,,আরে সোহা শুনতো,,,,মজা করছিলাম আমি।আসো বন্ধু হবো আমরা। একটা পিচ্চি বন্ধু জীবনে থাকা খুব দরকার। আমিতো তোমায় বন্ধু হিসেবে পেয়ে আমাকে অনেক লা’কি মনে করবো।তুমিতো আমায় ঘুড়ে দাড়াতে সাহায্য করেছো।চিরদিন কৃ’ত’জ্ঞ থাকবো তোমার উপর।
কে শুনে কার কথা।সোহা কি দায়ানের কথা আর শোনার মতো মেয়ে? দায়ান তাকে এভাবে বলায় সে রে’গে চলে যায়।
তারপর দুয়েক দিন দায়ানের ধারে কাছে ও যায়নি।ভালো করে কথা বলাতো দূরে থাক। দায়ান কতো ভাবে বুঝিয়ে স’রি বলে তারপর আবার স্বাভাবিকের করেছে সোহাকে।
————————————–
আজ নোহা আর রুশের গায়ে হলুদ।বাড়িতে সোহাদের প্রায় অনেক আত্নীয় স্বজন উপস্থিত। দায়ানদের পক্ষ থেকেও অনেকে এসেছে।বাকি গুলো কাল আসবে।
বাড়িতে মানুষ দিয়ে ভর্তি।গায়ে হলুদের আয়োজন চলছে পুরো দমে। রুশ আর নোহার জন্য এক স্টেজেই পর্দা লাগিয়ে দুই জনের আলাদা আলাদা হলুদ লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হলুদ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের পুরাতন আধুনিক হলুদের গান বেজে চলেছে। গায়ে হলুদের একটা আলাদা আমেজ ই আছে। বিয়ে বাড়িতে অন্যদের জন্য মূল আনন্দ ও আকর্ষনই হলো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। এখানে ছোট বড় সকলেই আনন্দে মেতে উঠে।
দায়ানের বাবা,মা আর রুশের বাবা মা সোহার বাবা মাকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করছে।যেহেতু সোহার বাবা একাই তার কোনো ভাই বোন নেই। সোহার মামা রা ও আবার একজন কাজের জন্য এখনো আসতে পারেন নি।আরেকজন আছে। বিয়ে বাড়িতে হাজার কাজ,,,একটার পর একটা লেগেই থাকে।
বিকেল বেলা গিয়ে বাড়ির মহিলা রা আর মেয়েরা গিয়ে মেহেদী তুলে এনেছে গাছ থেকে। টি’উ’ব মেহেদী ব্যবহার করলেও গাছের টা ও ব্যবহার করে গ্রামের সকলে।
মেহেদী এনে দেওয়ার সাথে সাথে পাড়ার মহিলারা মেহেদী,,হলুদ বাটা শুরু করে দেয়।আর বিভিন্ন ধরনের গীত(গান) গাইতে থাকে।
সকলেই নিজেদের সাজগোজ নিয়ে বি’জি। সোহা নোহাকে হলুদের সাজে সাজিয়ে দেয়।তারপর নিজেও গিয়ে হলুদের জন্য হলুদ একটা শাড়ি পরে সাথে হলুদের গহনা।
তমা সবার আগে সেজে উপস্থিত। মুখে মনে হয় পুরো ময়দার দোকান দিয়েছে।নিজের আসল চেহারাটাই ঢেকে দিয়েছে।
নানান লোক অবাক হয়ে তমার দিকে তাকাচ্ছে। আর ফিসফিস করে কিছু বলছে।তমাতো মহা খুশি সে ভাবছে তার বুঝি প্রশংসা করছে সকলে।করাটাই স্বাভাবিক যেই সাজ দিয়েছে।সকলের থেকে সুন্দর লাগবে বেশি।আরো ভেবে রেখেছে কাল আরো গর্জিয়াস করে সাজবে।সবাইকে তা’ক লাগিয়ে দিবে।বিয়ের কনেকে রেখে সকলে তখন তার দিকেই তাকিয়ে থাকবে।সাথে দায়ান ও তার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকবে।
দায়ান আজ কালো পাঞ্জাবি পরেছে।এখন চুল গুলো একটু ছোট করেছে।মুখে চা’প দা’ড়ি।
তমাতো দায়ানকে দেখে কয়েকবার টা’স’কি খেয়ে নিয়েছে।দায়ানের পিছু পিছু অনেক সময় ধরে ঘুর ঘুর করেছে।কিন্তু দায়ান পাত্তা দিবে দূরে থাক ঘুরেও তাকায় নি।
সেই দুঃখে সোহার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।আর মনে মনে কিছু একটা প্লেন করতে থাকে।
সোহা বোনের গায়ে গিয়ে হলুদ ছুঁইয়ে দেয়।নোহা মুচকি হেসে নিজেও কিছু টা হলুদ নিয়ে সোহার গালে লাগিয়ে দেয় আর বলে পরের বার তোর পালা।
হুহ বললেই হলো নাকি? আমি এতো সহজে এ বাড়ি থেকে যাচ্ছি না।তুমি তারাতাড়ি যাও তারপর সব আমার।আমি এই বাড়িতে একাই রাজত্ব করবো।
হ্যা করিস।দেখবোনে বা/দরামি করলে আব্বু যখন বাড়িতে থাকবে না। তখন কে তোকে বাঁচায়।
তখন আম্মু আমায় কিছুই করবে না কেন জানো?
কেন?
কারন তখন তুমি থাকবা দূরে। বাড়িতে শুধু আমি।আমাকে আদর করেই কূল পাবে না। আবার বকা বা মারবে কোন সময়?
তুমি ভালো করেই জানো সো’না এসব কিছুই হবে না।তোমার পিঠ বাঁকা করতে আম্মু একটুও পিছ পা হবেন না।
উফফ আপু এসব বাদ দেও।আমি তোমায় খুববববব মিসসসস করবো ঠোঁট উল্টে বলে সোহা।
নোহা সোহাকে বুকে জড়িয়ে বলে,,,আমিও তোকে খুব মিস করবো বোন।
দুই বোনের চোখের পানিই ছলছল করছে।দূর থেকে সোহার মা দুই বোনকে দেখে শাড়ির আঁচলে চোখের কোণ মুছে সরে যায়। এখন ওদের পাশে গেলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না।
তারপর সোহার পা’রা’প’র’শি এক কাকি পরিবেশ স্বাভাবিক করার জন্য বলে উঠে,, কিরে তোরা দুই বোনই হলুদ দেওয়া দেওয়ি করবি নাকি? আমাদের ও একটা সুযোগ দে। আর সোহা তুই গিয়ে তোর দুলাভাই কে হলুদ ছোয়া।
যাচ্ছি কাকি।বলেই সোহা রুশের পাশে চলে যায়। তমা ও সোহার পিছনে উঠে যায়।
সোহা রুশের পাশে গিয়ে বসে আবার ম’জা করতে শুরু করে দিয়েছে। ফল মিষ্টি নিয়ে রুশের মুখের সামনে নিয়ে যায় রুশ হা করলেই সেটা সোহা নিজের মুখে পুরে নেয় রুশ কে না দিয়ে।
তারপর দুই হাত ভর্তি হলুদ নিয়ে রুশের পুরো মুখ ভর্তি করে ফেলেছে। চোখ মুখ কিছু বাদ রাখেনি।
রুশ বলে,,,,শা’লিকা আমার মুখের ভিতর বাদ রাখলি কেনো? আমি হা করতেছি মুখের ভিতর ও দে কাঁচা হলুদের টেস্টি নেই। আর কানের ভিতর ও দে।
রুশের কথা শুনে সোহা সহ আশে পাশে বসে থাকা সকলে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।
এরমধ্যে তমা সোহার বা রুশের এসব খুনসুটির মধ্যে নেই।সে আছে তার ধা’ন’দা’তে। তমা সোহার পাশে দাড়িয়ে থাকলেও তার দুই চোখ খুঁজে চলেছে সেই সু’দ’র্শ’ন যুবক টা কে। কিন্তু কোথাও দেখতে পাচ্ছে না।
হঠাৎ করেই বাম দিকে চোখ যেতেই দেখতে পেলো কিছু টা দূরে একটা চেয়ারে দায়ান বসে আছে। ঐদিক টায় তেমন একটা মানুষ নেই। দায়ান বসে বসে মোবাইল টিপছে।
দায়ানকে দেখেই তমার মুখে হাসি ফোটে উঠে। স্টেজে রাখা হলুদের বাটির দিকে তাকায়। তারপর নিজের হাত বাড়িয়ে হাতে হলুদ নিয়ে ওড়নার আড়ালে হাত লোকায়।আশে পাশে আর সোহার দিকে তাকিয়ে আবার দেখে নেয় কেউ দেখেছে কি না।
তারপর ধীর পায় এগিয়ে যায় দায়ানের দিকে।
দায়ান ফোন টিপার মাঝেই হঠাৎ করে তার গালে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেয়ে চোখ মুখ কোচকে ফেলে। তারপর সামনের দিকে তাকিয়ে আবারো ব্রু কোচকে আসে দায়ানের ,,,,,,
#চলবে,,,,,,