#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ১০
#Jhorna_Islam
সোহা আর দায়ান হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির রাস্তা ধরে,,,এমন সময় আবার আজও তমার সাথে দেখা হয়।
সোহাদের বাড়ির আরো অনেকটাই রাস্তা বাকি।দুই জন পাশাপাশি হাঁটছে। কোথা থেকে তমা এসে হা’জির হয়। এতে দু’জন ই হাঁটা থামিয়ে দেয়।
সোহা তোর থেকে এমন ব্যবহার আমি মোটেও আশা করি নি।তুই এমন কিভাবে করলি?
সোহা ব্রু কোচকে তমার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো যে সে আবার কি করেছে।
আমার ভাবতেও খারাপ লাগছে তুই এটা করতে পারলি।আমি না তোর বান্ধবী? না কি তুই আমায় বান্ধবী বলে মনেই করিস না কোনটা?
— মানে? আমি আবার কি করলাম তোর সাথে?
— তুই জানিস না কি করেছিস?
— জানলে নিশ্চয়ই আবার তোকে জিজ্ঞেস করতাম না।যা বলার সোজাসাপটা বল। এসব ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলা আমার একদম পছন্দ না।
দায়ান পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।এক সাথে যখন এসেছে তখন এক সাথেই ফিরবে।তাছাড়া এখনো অনেকটা পথই বাকি আছে। সোহার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও ওদের কথায় দায়ানের মন নেই।দুই বান্ধবীর কথায় কান দিয়ে লাভ নেই। ওদের ব্যাপার ওরাই না হয় বুঝে নিক।
ঘুরিয়ে তো বলিনি সোহা।সোজা ভাবেই বললাম।কাল আমায় রেখে তুই উনাকে নিয়ে ঘুরতে গেলি,,অথচ আমি তোর সাথে ঘুরার জন্য তোদের বাড়িতে গিয়ে খুঁজলাম। কেউ নাকি তোর খবরই জানে না।আশেপাশে ও কতো খুজলাম তোকে।
পরে কি দেখলাম তুই উনাকে নিয়ে একা একা ঘুরে আসলি।আর আজ ও সকাল সকাল তোর বাড়িতে গেলাম যেনো তোকে পাই।আর তুই কি করলি? আজও একই কাজ করলি। উনাকে নিয়ে একা একা ঘুরে এলি।আমার কথাটা তোর একবার ও মনে পরলো না? তমা সোহার কাছে জানতে চায়।
— নাহ। সোজাসাপটা উত্তর দেয় সোহা।
তমা সোহার সোজাসাপটা উত্তর শুনে কিছু টা হকচকিয়ে যায়। থতমত মুখে দায়ানের দিকে তাকায়। দায়ান কে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবার সোহার দিকে তাকায়।
কি বললি তুই? তুই এটা বলতে পারলিরে সোহা,,,নেকি স্বরে বলে তমা।
সোহা মনে মনে বলে,,, এ আসছে ঢং করতে।তুই কেরে যে বলতে পারবো না? শ/য়তানের নানি,, পে/তনি কোথাকার। তুই আমার বান্ধবি না ছা’ই! কে তোর বান্ধবিরে? এক সাথে একটু চললে আর কথা বললেই বুঝি বান্ধবি হয়ে যায়? ঢং’গী কোথাকার! মনে মনে সোহা তমাকে ইচ্ছে মতো বকে নিলো।
তারপর মুখের মাঝে হাসি ঝুলিয়ে ব’লে উঠে,,, আহারে আমি তো ম’জা করেছি।তুই সিরিয়াসলি নিচিছস কেনো? আমি কি তোকে কখনো এমব ভাবে বলতে পারি?
তমা সোহার দিকে তাকিয়ে বলে,, আমিও তাই ভাবছিলাম তুই আমাকে এমন ভাবে কখনো বলতে পারিস না।
সোহা আবার মনে মনে বলে,,, পারি পারি।আমি তোকে এমন ভাবে বলতে পারি।আমি সত্যি সত্যি বলেছি।এই যে এখনো মনে মনে বলছি। লু/চি মেয়ে একটা। কোনো সুন্দর পুরুষ দেখলেই চলে। তোকে কেন নিবো রে? উনার দিকে বা’জে নজর দেওয়ার জন্য? তোর নজরে পরে লোকটা কালো হয়ে,, শুকিয়ে যাওয়ার জন্য?
আর মুখে শুধু হাসি ঝুলিয়ে মাথা নাড়ে সোহা।
দায়ান এবার সোহার দিকে একবার তাকায় তারপর বলে,,,আমাদের এবার বাড়ি যাওয়া উচিত। কাউকে বলে আসিনি হয়তো সকলেই টেনশনে পরে গেছে। আর এমনিতেই অনেক বেলা হয়ে গেছে। তোমরা না হয় হাঁটতে হাঁটতেই কথা বলো।
তমা দায়ানের গলা শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,,হ্যা হ্যা সোহা দায়ান ঠিক কথাই বলেছে।চল চল হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি।
দায়ান তমার মুখে নিজের নাম শুনে ব্রু কোচকে ফেলে।এই দুই আংগুলের পিচ্চি মেয়ে তার নাম ধরে ডাকছে।বিষয়টা খুবই হাস্যকর।
সোহার ও রা’গ উঠে যায় তমার মুখে দায়ানের নাম শুনে।এতো রাগের কারণ টা সোহার ও জানা নেই।
দায়ান তমার দিকে তাকাতে দেখে তমার মনে লাড্ডু ফুটছে।এই প্রথম লোকটা তার দিকে তাকাচ্ছে। ধূর আগে জানলেতো সে আরেকটু সেজে আসতো।এখন অবশ্য সাজুগুজু কারাই আছে। তাও আগে জানলে আরেকটু ব্লা’স’ও’ন করতো গালে তাহলে গাল দুটো আরেকটু গোলাপি আভা ছড়াতো!
অথচ দায়ান তমার দিকে তাকিয়ে একটা টা’স’কি খেলো। মুখে পুরো মেকাপের গোডাউন নিয়ে ঘুরছে।শুধু শুধু এমন ভাবে সেজে থাকার মানে আছে? তাও যে সে সাজ নয় মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছে।
সোহার দৃষ্টি ও তমাতেই। দায়ানের দিকে তাকিয়ে দেখো কেমন লাজুক হাসছে আর শরীর দোলাচ্ছে মনে হচ্ছে কোনো নাচের রিয়েলিটি শো তে অভিনয় করে দেখাচ্ছে।
সোহা এবার দায়ানের দিকে এগিয়ে এসে বলে,,চলুন যাওয়া যাক।
তারপর তিন জনই হাঁটতে থাকে।সোহা মাঝখানে হাঁটছে দায়ান তার ডান পাশে।আর তমা বাম পাশে।তমা যে দায়ানের পাশে হাঁটার জন্য উশখুশ করছে তা সোহা ঢে’র বুঝতে পারছে। বার বার চেষ্টা ও করছে সোহাকে সরিয়ে দিয়ে দায়ানের পাশে হাঁটার। কিন্তু প্রতি বার ই তমার চেষ্টা কে বি’ফ’ল করে দিচ্ছে সোহা।তমাকে নাজেহাল করতে পেরে সোহা মনে মনে পৈ/শাচিক আনন্দ পাচ্ছে।
সোহা আস্তে আস্তে গুণ গুণ করে গান ধরে,,,,,,,,,,,
“তোমার ঘরে বাস করে কে’ডা’য় ও মন জানোনা?
তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা মন জানোনা?”
পুরো গানটা যে তমাকে ঠে’স মেরে গেয়েছে তমার বুঝতে বাকি নেই। কারণ তমারই যারে দেখে তারেই ভালো লাগে। তমার মনে মনে বেশ রা’গ হলো সোহার উপর।
দায়ান থাকায় সোহাকে তেমন কিছু বলতেও পারছে না।
সোহার গুণ গুণ করে গান গাওয়া দায়ানের ও কানে এসেছে।তাই দায়ান বলে উঠে,,,,,,,
গুন গুন করছো কেনো? গলা ছেড়ে গাও। তোমার গান শুনতে শুনতে যাই।এই পরিবেশে গান কিন্তু মন্দ হয়না।
সোহা বলে উঠে,, আমি এই শীতের মধ্যে অসহায় প্রাণীদের কষ্ট দিতে চাই না।
— মানে? তোমার গান গাওয়ার সাথে,, প্রাণীদের কষ্ট দেওয়ার কি সম্পর্ক বুঝলাম না।
আমার গান শুনলে ঐযে রাস্তার পাশে কু/কুর গুলো দেখতে পাচ্ছেন না? ওরা পানিতে পরে যাবে।
আর আমিকি এই শীতের মধ্যে ওদের কষ্ট দিতে পারি আপনিই বলুন?
তমার সোহার কথা শুনে হাসতে থাকে। এমন ভাবে হাসছে যেনো সোহা সত্যিই খুব খারাপ গায়।
দায়ান সোহার কথা বলার ধরণ দেখে মুচকি হাসে। তারপর বলে তুমি মোটেই খারাপ গাও বলে আমার মনে হয় না,,কারণ তোমার গুণ গুণ শুনেই তা বোঝে গেছি।
তমা সোহার উপর বেশ বিরক্ত। এই সোহাটার জন্য সে দায়ানের পাশই ঘে’ষ’তে পারছে না।
তমা দায়ানের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে লাজুক হাসছে আর হাঁটছে। মুখের অ’ঙ্গ ভ’ঙ্গি লাজুকতা এনে নে’কা সাজছে।হেলে দুলে হাঁটছে।
অথচ দায়ান তমার দিকে ফিরে ও তাকাচ্ছে না। সে একমনে প্রকৃতি উপভোগ করতে করতে হাঁটছে। তার এসব দিকে ন’জর নেই।
তমা দায়ানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁটছে। সামনে পিছে ওর কোনো হুঁশ নেই। কে আসলো গেলো বা তার সামনে কিছু আছে কি না। তাই হঠা করেই উঁচু মাটির উপর হোঁ’চট খায়। পরতে পরতে নিজেকে সামলে নেয়।
তমা পরে যেতে নিলে সোহা আর দায়ান দাঁড়িয়ে যায়।
তমা হেসে বলে,,আরে থামলে কেনো হাঁটো। আমিতো এমনি হোঁচট খাওয়ার অভিনয় করছিলাম।দেখছিলাম তোমরা কি করো হে হে হে!
দায়ান ও এবার বেশ বিরক্ত হলো তমার উপর।তাও প্রকাশ করলো না।
তমা আবার দায়ানের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে। এবার আর শেষ রক্ষা হলো না। ধপাস করে একটা আওয়াজ হলো।
দায়ান আর সোহা আবার দাড়িয়ে পাশে তাকায়।
তমা পরে গেছে,,,, তাও আবার যে সে পড়া পরেনি একেবারে চি’ৎপ’টাং। দুই হাত গোবর দিয়ে মাখামাখি হয়ে গেছে। আরেকটুর জন্য মুখটা বেঁচে গেছে। নয়তো মুখ টাও সুন্দর করে গোবর দিয়ে লেপ্টে যেতো। দুই হাত গিয়ে পরেছে গোবরে।
সোহা অনেক চেষ্টা করেও নিজের হাসি আটকাতে পারলো না। খিলখিল করে হেসে দেয়।
কিরে তমা এবারও বুঝি তুই অভিনয় করছিলি পরে যাওয়ার?
দায়ান ও এসব কান্ড দেখে নিঃশব্দে হাসতে থাকে।
তমা করুন চোখে দায়ানের দিকে তাকায়। সে মূলত চাইছে দায়ান তাকে উঠাক।তমার আশায় পানি ঢেলে দিয়ে দায়ান সোহাদের বাড়ির ভিতর ঢুকে যায়। হয়তো তার হাসি লোকানোর চেষ্টায়।
এই তমা আয় আয় তোর সাথে একটা সেলফি নেই।কি যে সুন্দর লাগছেরে তোকে। মনে হচ্ছে দুই হাতে গ্লা’ভ’স পরেছিস।আহা্ গোবরের গ্লা’ভ’স।
তমা সোহার কথায় রে’গে অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ায়। বেশ ব্যাথাও পেয়েছে। ইচ্ছে করছে যে গরুর গোবর সেই গরুকে কালা’ভূ’না করে খেয়ে নিতে।তারপর তমাও নিজের বাড়ির দিকে চলে যায়।
সোহা ও হাসতে হাসতে নিজের বাড়তি ঢুকে।
———————————
সোহা বাড়িতে ঢুকতেই সামনে এসে রুশ দারায়। রুশ কে হঠাৎ করে সামনে আসতে দেখে সোহা ও তার হাঁটা থামিয়ে রুশের ও তাকায়।
রুশ সোহার চারপাশে ঘুরতে থাকে।
সোহা এবার বলে উঠে,,,, কি ব্যাপার হুঁশ ভাইয়া? তুমিকি নতুন পুলিশের চাকরি তে জয়েন হয়েছো নাকি?
মানে?
মানে তোমার মাথা।এমন ভাবে আমার দিকে সন্দেহর দৃষ্টিতে তে তাকিয়ে ঘুরছো কেনো?
মনে হচ্ছে তুমি পুলিশ আর আমি চো’র!
— তুই চো’র না তো চু’ন্নি তুই।
— এইই কি বললা তুমি? আমি চু’ন্নি ? তুমি চু’ন্নি । তোমার বউ চু’ন্নি! আরে ধুর তোমার বউতো আমার বোন।তুমিই চু’ন্নি। না না চু’ন্নি তো মেয়েদের বলে।চু’ন্নির মে’ল ভার্সন কি হবে? জানি না তো।সে যাক গে তুমি একটা চু’ন্না।
— তর মাথার তার যে ছিরা সেইটার প্রমান তুই আবার দিলি।সে যাক সকাল সকাল কোথায় গিয়েছিলি?
— ঘোড়ার ঘাস কাটতে।তোমার কি?
— আমার কি মানে? আমারইতো সব।তুই আমার বোন+ শা’লিকা! আমার কতো দায়িত্ব আছে তোর উপর তুই জানিস?
— এএএ আসছে আমার দায়িত্বরে।
— তো কি? আর কই দেখি কি ঘাস কাটলি ঘোড়ার জন্য। আমার মামা শ্বশুর যে ঘোড়া পালে জানতাম না তো।
— আমার বাবা তোমার মামা শ্বশুর?
— হুম। মামা হয় না আমার? তারপর আবার শ্বশুর এই হলো মামা শ্বশুর!
— বাহ কি যু’ক্তি! বুদ্ধি ও আছে দেখছি অনেক। এই জন্যই ঘোড়ার জন্য ঘাস এনেছি যেনো আরো বুদ্ধি বাড়ে।
— তোমার মামা শ্বশুর ঘোড়া পালে জানতে না? এই যে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ঘোড়া।
— রুশ শুনেই বলে কি বললি সোহা তুই? তবেরে দাড়া তুই,,, বলেই সোহাকে দৌড়ানি দেয়।
— সোহা রুশ কে ঘোড়া বলেই দৌড়।
—————————-
দুপুরে খাওয়ার সময় রুশের পাশে আজ সোহা বসেছে।
অনেক সময় ধরে রুশকে এটা ওটা বলে খোঁচাচেছ। রুশ ও কম যায় না।
রুশ আর সোহার কাজে সকলেই হাসে।দুইটায় পারে ও বটে।একটার থেকে একটা কম যায় না।
রুশ তার পাশে রাখা জুসের গ্লাস টা নিয়ে তাকিয়ে বলে,,, বাহ্ জুসের কালারটা তো সেই। নতুন কিছু দিয়ে তৈরি নাকি?
রুশের মা বলে হুম।আজ জুস সোহা তৈরি করেছে সকলের জন্য। একেক জনের জন্য একেকটা বানিয়েছে।আমরা তো সবাই খুশি নিজে গিয়ে বানিয়েছে।নয়তো বলেও তো এই মেয়েকে রান্না ঘরের দিকে নেওয়া যায় না।
রুশ বলে ভালোতো রান্না বান্না শিখে নে সোহা।নয়তো শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে করবি কিভাবে? নোহার পরেই কিন্তু তোর পালা।
সোহা হাসে আর মনে মনে বলে,,,খাওনা খাও পরে ম’জা বুঝবা।তোমার জন্য স্পেশাল জুস তৈরি করতে কতো যে কষ্ট হয়েছে আমার।কতো কিছু দিয়ে জুসের আসল ঘ্রাণ ঢাকতে পেরেছি।আমি জানি না কি কি দিয়ে আসল ঘ্রাণ দূর করেছি।
রুশ জুসের মধ্যে মুখ ঠেকিয়ে এক চুমুক দিয়েই থম মেরে থেকে দৌড়ে বেসিনের উপর গিয়ে ওয়াক ওয়াক করতে থাকে। কয়েকবার মুখ ধুয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে বলে,,সোহা বোন আমার তুই এটা কিসের জুস বানিয়েছিস? বল আমায় তারাতাড়ি আমার ভিতরের সব উল্টে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
সোহা একটু ভাব নিয়ে বলে,,তেমন কিছুনা,,, মূলা,,করলা আর কি যেনো দিয়েছি আমি নিজেও জানিনা!
#চলবে,,,,,,,,