তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব ৯

0
2172

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৯
#Jhorna_Islam

দায়ানের কথায় সোহা টলমলে চোখে তাকালো দায়ানের দিকে।দায়ান এখনো সোহার দিকে তাকায় নি সে নিজ মনে গাড়িতে বসে আছে।
সোহা দায়ানের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।বারবার যে কেনো এই পা/ষা/ণ লোকটার থেকে কিছু আসা করতে যায়।

দায়ান সোহার দিকে এবার তাকায়,,গাড়িতে উঠছেনা বলে কপাল কুঁ’চকে গাড়ির ডোর খুলে দেয়।এবার কি আপনাকে ইনভিটেশন কার্ড দিতে হবে? গাড়িতে উঠার জন্য।

তোমার সময়ের দাম না থাকতে পারে। আমার সময়ের অনেকদাম।এক কাজে বসে থাকলে হবে না।

সোহা কথা বাড়ায় না গাড়িতে উঠে বসে।
-সিট বে’ল্ট লাগাও।

– আমি লাগাতে পারিনা এসব।

– কি পারোটা কি তুমি?

-মানুষের মা’থা রান্না করে খেতে পারি। আপনাকেও খাওয়াবো খাবেন আপনি? কপট রাগ দেখিয়ে বলল।

– রান্না করে খাওয়ার কি দরকার? এমনিতেই তো বকবক করে আমার মাথা খে/য়ে ফেলতেছো।বিরবির করে বলে দায়ান।

– কিছু বললেন?

– নাহ।দায়ান নিজে সোহার কাছে এগিয়ে এসে,সিট বেল্ট বেঁ’ধে দেয়।

সোহা দায়ানকে পা’ত্তা না দিয়ে,জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে।

– ঠোঁ’টে এটা কি রঙ লাগিয়েছো? মনে হচ্ছে রা/ক্ষ/সী।কারো ঘার ম/ট/কে র/ক্ত চু’ষে খেয়ে এসেছো।ছিঃ ই’য়া’ক!
কি বি/শ্রী লাগছে।

– খবর’দার যদি আমার সাজ’গোজ নিয়ে আরেকটা বা’জে কথা বলেন তো।আর কি যেনো বলছিলেন? আমাকে কাজের মেয়ে সকিনা লাগে? তাহলে আপনি ঐ কাজের মেয়ে সকিনার বর।ভুলে যাবেন না।আর এটা ঠোঁটের দিকে ইশারা করে,এটাকে লিপ’স্টিক বলে।সঠিক নাম বলতে শিখুন।আর আমাকে যে সুন্দরী লাগছে সেটা আমি জানি হুহ। আমি একটা ইশারা করলেনা,হাজার ছেলের লাইন লেগে যাবে আমার পিছনে।

– করেই দেখোনা,,,বাকিটা আমি দেখে নিবো।

– প্র’মান লাগবে আপনার?

– সাট আপ।চুপচাপ বসে থাকো।নয়তো ধা’ক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিবো।বে/য়া/দপ হয়ে গেছো? সাহস দেখেতো অবাক হচ্ছি আমার মুখে মুখে ত’র্ক করো?

সোহা আর কথা বাড়ায় না।চুপ করে বাইরের দৃশ্য দেখতে থাকে।দায়ান ও গাড়ি চালানোতে মন দেয়।

———————————————
সকাল সকালই রহিমা বেগম চি’ল্লা পা’ল্লা করতেছেন।মেজাজ খারাপ হয়ে আছে।বাড়িতে কিছুই রান্না করার মতো নেই।মেয়েটা মাছ,মাংস ছাড়া খেতে পারেনা।মুখে খাবার দেয় না।আবার মেয়ের সাজ গোজের জিনিস ও শেষ হওয়ার পথে সেই দিকে খেয়াল নেই।

দায়ানের চাচা সবই বারান্দায় বসে শুনছেন।কিছু বলছেননা।কথায় কথা বাড়ে।এখন কিছু বললে রহিমা বেগম আরো পেয়ে বসবেন।

বলি সংসারটা কি শুধু একলা আমার? আপনার কি কোনো দা’য়িত্ব নেই? দায়ান কে ফোন লাগান।টাকা লাগবো আমাদের।বলেন টাকা পাঠানোর কথা। বিয়ে করে যেমন উ’দ্ধার করছে।টাকা দেওয়ার কথা ভুলে গেছে বউ পাইয়া।

কতো করে আপনারে বললাম, আমাদের মেয়ে হিমার সাথে বিয়ে দেন।শুনছেন আমার কথা? মেয়েটা কতো পছন্দ করতো দায়ান কে।আমার মেয়েটার সাথে বিয়ে দিলে,নিজের সব কিছু নিজেরই থাকতো।আমগোরে আর অভাব করন লাগতো না। মেয়েটা আমার দেখতে কি কম সুন্দরী ছিলো?

— আমার মাইয়ারে কা’ন্দাইয়া আপনি অন্য মেয়েরে দায়ানের গলায় ঝুলাইয়া দিছেন।
আমার মাইয়ায় আপনার কাছে দায়ানের কথা বলার পর।পরেরদিন ই আপনি এই সর্ব’নাশ টা করলেন।
মাইনষের কি দোষ দিমু? নিজের ঘরে ইতো শ’ত্রু।

আমার মেয়ে হিমা রে দায়ান ঠিকই বিয়া করতো আমনে কইলে।

— চুপ করো রহিমা।আর ভাল্লাগে না তোমার কথা।আমার বাপ মা মরা ভাতিজারেতো আমি নিজে গা’ঙ্গে ভাসায় দিবার পারি না।তোমারে আর তোমার মেয়েরে ভালা কইরাই চিনা আছে আমার। ভাতিজা আমার এমনিই দুঃখী তোমাগো লিগা তো আর তার জীনটা আরো দুঃখী বানাইতে পারুম না।

আমার জীবনটাইতো মা মেয়ে মিলে শেষ করে দিছো।এখন আমার ভাতিজার আর তার টাকার উপর ন’জর দিছো।তারেতো তোমার মাইয়া পছন্দ করে না।করে তার টাকারে।টাকা পাইলেতো মা মেয়ের কিছু লাগে না।

আমার মেয়ে হইয়া মেয়েটা আমার বৈ’শি’ষ্ট্য কিছুই পাইলো না।সব তোমারই পাইছে।যেমন মা তেমন মেয়ে।

–খবরদার হিমার বাপ। মুখ সামলে কথা কইবা।এই দুনিয়ায় টাকাই সব।টাকা আছে তো জীবন সুখী।আমার মাইয়া তার টাকারে পছন্দ করে তো কি হইছে? টাকাতো তারই,, তার টাকারে পছন্দ করা মানে তারেই পছন্দ করা।নিজের মেয়ের সুখ তো তুমি দেখতে পারো না।আবার বড় বড় কথা।

চুপচাপ দায়ানরে ফোন লাগাইয়া টাকা দিতে কও।তারপর বাজারে গিয়ে বাজার করে আনো।

— শুনো হিমার মা,,,অনেকতো হলো। পোলাটারে এইবার একটু শা’ন্তি তে থাকতে দেও।

— কেন আমি কি অ’শা’ন্তি করছি তোমার পোলারে?

— জানো না তুমি? আমার বলা লাগবো সব ভা’ই’ঙ্গা?

এবার রহিমা বেগম চুপ হয়ে যায়।

— আর একবার ও দায়ানের কাছে টাকার জন্য ফোন যাইবনা এই বাড়ি থেইকা।না আমি দিবো না তুমি।আমার যা রোজগার আছে সেই টাকা দিয়েই আমাগো হইবো।
অনেকতো পরের উপর চইড়া খাইলা।এইবার আর না।আমাগো যা টাকা পয়সা আছে,,ঐই টাকা দিয়া সুখে শান্তি তে ডাল ভাত খাইতে পারুম।

— ডাল ভাত খাইয়া জীবন চলে? তুমি জানোনা আমাগো হিমা টা বড়লোকদের মতো আচার ব্যবহার পাইছে।পোলাও কো’রমা ছাড়া খাইতে চায় না।

—- যার পোষা’ইবো না তার জন্য বাড়ির দরজা খোলা আছে।চইলা যাইতে পারে আমি বাঁ’ধা দিমুনা।বলেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলেন।রোজ রোজ আর মা মেয়ের অ’শান্তি ভালো লাগেনা।

—– এদিকে রহিমা বেগম হায় হায় করতেছেন।কি বলে গেলো এইলোক? সব শেষ গো। নিজের ভালোতো পা/গ/লে ও বোঝে।মার থেইকা মাসির দ’রদ বেশি? নিজের মাইয়ার থেইকা ভাতিজা বেশি হয়ে গেলো? কে সুখে না থাকতে চায়। দুনিয়াটা টাকায় চলে।এসব আ’বে’গের দা/ম নাই।কে বোঝাইবো এই লোকরে।সারাজীবন নিজের ইচ্ছে তে চইলা গেলো।আমার কতা শুনলো না।আমি তো ভালোর লাইগাই বলি।

এসব বলতে বলতে বি’লা’প শুরু করে দেন রহিমা বেগম।

———————————————
দায়ান গাড়ি নিয়ে এসে সোহাকে যে ভার্সিটিতে ভর্তি করাবে ঐখানে এসে থামায়।

সোহার ঐদিকে খেয়াল নেই।সে চারপাশ টা দেখতে ব্য’স্ত।

দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে বলে,,,শুনো যাওয়ার আগে কিছু কথা বলে নেই।

—- হুম৷ বলেন।

—- মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবা।এইটা তোমার গ্রাম না কোনো বা/দ/রামি করবানা।এইখানকার সবাই খুব স্মা’র্ট। চাল চলন ব্যবহার ও অন্য রকম। তাই বলে তোমাকে ওদের মতো হতে হবে এমন বলছিনা।নিজের শালী’নতা বজায় রেখে চলবা।সহজে কাউকে বি’শ্বাস করবানা।এদের সবার বাইরেটা যেমন ভিতরের টা ওরকম না ও হতে পারে।

আর সবচাইতে বড় কথা,,,আমি অনেক আশা নিয়ে তোমাকে ভর্তি করাতে আসছি।আমার ফেস ল’স হয় এমন কোনো কাজ করোনা।ছেলেদের সাথে অতো মিশার দরকার নেই।আশা করি বুঝতে পারছো?

—- সোহা এতোক্ষন মনোযোগ দিয়ে দায়ানের সব কথা শুনলো।জ্বি আচ্ছা। আমি আপনার মান রাখার চে’ষ্টা করবো।

— হুম গু’ড। এবার চলো যাওয়া যাক।বলেই দায়ান গাড়ি থেকে নেমে ঘুরে এসে সোহার পাশের ডোরটা খুলে দেয়।

সোহা ও নেমে পরে।চারিদিকে ঘুরে ঘুরে পরিবেশ দেখছে সোহা।

কতো সুন্দর! সব কিছু স্ব’প্নে’র মতো লাগছে।বি’স্ময়ে মুখ হা হয়ে গেছে। নিজের অ’জা’ন্তেই দায়ানের হাত খামছে ধরে।

দায়ান সোহার দিকে একবার।নিজের হাতের দিকে একবার তাকায়।

— এই শুনছেন? আমি কি স্ব’প্ন দেখছি? আল্লাহ সব কিছু এতো সু’ন্দ’র? এটা কি কোনো স্ব’প্নপু’রী? আমার হাতে একটা চি’মটি কাটেনতো।
— বি’হেভ ইউর সে’ল্ফ সোহা।

–চুপ থাকেন আপনি।উফ কি সুন্দর জায়গা।পরাণটা জুড়ায় গেলো গো দেখে।এতো সুন্দর জায়গায় আপনি আমায় নিয়ে আসলেন?

আপনাকে অনেক অনেক গুলা থ্যাংকস। আমার না এই খানে নাচতে ইচ্ছে করছে।পাখির মতো উড়তে মন চাচ্ছে।
আমি নিজেও জানিনা আমার কি করতে ইচ্ছে করছে।

কে বানিয়েছে গো এই ভার্সিটি তারে দেখতে মন চাচ্ছে। সে ও মনে হয় এমনই সুন্দর হবে তাইনা?আমার না এখানে থাকতে ইচ্ছে করতেছে সব সময়ের জন্য।
দেখেন না ব্য”ব’স্থা করতে পারেন কি না।আমি আর আপনার সাথে যাবই না এখানেই থাকবো।
আমার না এখানে গড়া’গড়ি খাইতে মন চাচ্ছে। জায়গাটা খেয়ে ফেলতেও মন চাচ্ছে।

—- হ্যা খাবাতো কিন্তু এই জায়গাটা না।চুপচাপ না গেলে আমার থা’প্প’র খাবা।অনেক টে’স্টি! টে’স্ট করানো লাগবে?

—- এমন করেন কেন? জায়গাটা মানে আমার ভার্সিটিটা অনেক পছন্দ হয়েছে তাই বললাম।

—- বলে আমায় ধ/ন্য করলেন।

—- এই শুনেন না।দেখেন এখানে কতো কতো ফুলের গাছ। আমিতো নাম ও জানিনা এগুলার।কি সুন্দর ফুল ফোটে আছে।আমি এখান থেকে চারা নিয়ে যাবো।আমাদের বাগানেতো এতো গাছ নাই।বলে নিলে দিবে? না দিলে এমনিই নিয়ে যাবো লুকিয়ে।

—- চুপ আমি অনেক ফুলের গাছ এনে দিবো। আর একটা কথা ও বলবানা।সবাই দেখো কেমন করে তোমার দিকে তাকাচ্ছে।

—– এবার সোহা ঠিকঠাক ভাবে অফিস রুমের দিকে হাঁটা দেয়।

দায়ান ও সোহার পিছনে হাটা দেয়। আর বিরবির করে বলে,,কি মেয়েরে বাবা।চুরি করবে সেটা আমাকে বলছে।ভয় করলোনা?

চু/ন্নি কা’হি’কা।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here