#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৩২
#Jhorna_Islam
সোহা ও দায়ানের দিনগুলো মান অভিমান ও খুনশুটি তে ভালোই কাটতেছে। দায়ান এখন সোহার প্রচুর খেয়াল রাখে।যতোক্ষন বাড়িতে থাকে সোহার আশে পাশে ঘুরঘুর করে।অফিসে গেলে কিছু সময় পর পর নানান বাহানা দিয়ে সোহাকে কল দিতে থাকে । সোহা দায়ানের এসব কাজে,মুখে মুখে বিরক্ত বোধ দেখালেও ভিতরে ভিতরে কি যে খুশি হয়। সোহা এখন প্রতিদিন ভার্সিটিতে যায়।যদিও যেতে চায় না।দায়ান নানা বা’হানা দিয়ে নিয়ে যায় প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় নিজের সাথে।
দায়ানের হাত এখনো পুরোপুরি শুকায় নি।সোহাই খাইয়ে দেয়। দায়ান অবশ্য মনে মনে বলে,, যেনো হাত কখনো না শুকায়,আর সোহা তাকে খাইয়ে দেয়। সোহা বলে দিয়েছে দায়ান কে প্রতিদিন যেনো দায়ানের দুপুরের খাবার আগে ড্রাইভার কে তার ভার্সিটির সামনে পাঠিয়ে দেয়।সে অফিসে এসে দায়ান কে খাইয়ে দিয়ে যাবে।নয়তো দায়ান যে না খেয়ে থাকবে সে ভালো করেই যানে।পরে বুক ব্যাথায় কষ্ট পাবে লোকটা।আর সোহা এটা কখনই হতে দিবে না।
দায়ান প্রথমে সোহার কথায় দ্বিমত করে ছিলো।সোহা তাকে রে’গে গিয়ে বলে ঠিক আছে তাহলে আমিও ভার্সিটিতে যাবো না।আপনিই যান আবার পড়াশোনা করেন।
কিন্তু তোমার ক্লাশ?
এক ক্লাশ না করলে কিছু হবে না।বেশি টাইম লাগবেনা।আপনাকে খাইয়ে দিয়েই চলে আসবো।
দায়ান অবশেষে সোহার কথায় হার মেনে রাজি হয়।না হয়ে কি উপায় আছে? নয়তো ভার্সিটিতেই যাবে না এই মেয়ে।
——————————————
ইদানিং নোহার জীবনটা আরো বি’ষি’য়ে গেছে।ওমি আর তমার মেলা মেশাটা বেড়ে চলেছে।এমন ভাবে এরা চলাচল করছে যে কারো চোখেই প্রথম দেখায় মনে হবে এদের ভিতর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। নানি শ্বাশুড়ি অবশ্য শ্বাশুড়ির হাত থেকে নানান ভাবে নোহা কে বাচিয়ে নেয়।তাতে কি স্বামী ভালো না হলে কিছুই না।শ্বাশুড়ি ও যেনো ওমিকে তমার সাথে মেশার সুযোগ করে দেন।তমা কে ওমির পিছনে ভালো করে ঝুকিয়ে দেন
ওমির আর তমার এমন মেলামেশা সহ্য করতে না পেরে নোহা ওমিকে বলেছিলো।তোমরা এমন ভাবে কেন দু’জন চলাফেরা করছো।মানুষ মন্দ ভাবছে।তোমাদের নিয়ে নানা কথা বলছে। ওমি তখন রে’গে গিয়ে নোহার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে বলেছিলো,,,তর কি যেভাবে ইচ্ছে সে ভাবে চলবো।যে যা বলার বলুক তাতে আমার কি? তর কেনো এতো জ্বলে? চুপচাপ নিজের মতো করে থাকতে পারলে থাক নয়তো চলে যা।আমরা এমন ভাবেই মেলামেশা করবো।তোরে আমার বিয়ে করাটাই ভু’ল হয়েছে।নোহা ঐদিন প্রতিবাদ করতে পারেনি।কেনো জানি একটা কথা ও মুখ থেকে বের হয় নি।
এমনিতেই নোহার শরীরটা ভালো নেই।কাজে মনোযোগ দিতে পারে না।শরীরটা দিন দিন বেশ দূর্বল হয়ে গেছে। খেতে পারে না কিছু।এমনকি মাছের গন্ধ টা ও শুকতে পারে না।গা গুলায় ব’মি পায়। সারাদিন ঘুমোতে মন চায় । এসব লক্ষন দেখে নোহার সন্দেহ হয়।তাই কোনো ভ’নিতা ছাড়াই নানি শ্বাশুড়ির সামনেই শ্বাশুড়ি মাকে জানায়।
নানি শ্বাশুড়ি নোহাকে ভালো ভাবে দেখে হাসি মুখে বলে যে নোহা হয়তো মা হতে চলেছে। ওনার এতো বছরের অভিজ্ঞতা তাই বলছে।পুরোপুরি শিউর হওয়ার জন্য যেনো কি’ট এনে টেস্ট করে নেয়।নোহার মাথায় হাত বুলিয়ে উনি অনেক দোয়া দুরুদ পরে দেয়।
নোহার শাশুড়ীর মুখের দিকে তাকিয়ে কেনো যেনো মনে হলো,,ভদ্র মহিলা খুশি হননি।চিন্তায় পরে গেছেন। রা’গে মনে হয় ফুসছেন।
নোহার মনেও অনেক চিন্তা থাকলেও পাত্তা দিলো না।চোখের কোণে পানি জমেছে ছলছল চোখে নিজের ডান হাতটা পেটে রাখে।মনে মনে আওড়ায় আমার বাচ্চা। একটা প্রাণ আমার মধ্যে বেড়ে উঠছে।ভাবতেই নোহার কি যে আনন্দ লাগে।
পরে নোহা একটা প্রেগ’ন্যা’ন্সি’ কি’ট এনে পরীক্ষা করে দেখে রেজাল্ট পজেটিভ আসছে।নোহা ঐইদিন আনন্দে অনেক কাঁদে।
মনে মনে আশা করে এবার হয়তো সুখের দিন ফিরবে।স্বামীটা আর শ্বাশুড়ি টা ভালো হবে এই বাচ্চার উছিলায়।
ভাবতেই মনের মাঝে প্রশান্তি ছেয়ে যায় নোহার।
——————————————-
প্রতিদিনের মতো আজ ও সোহার পাখির কিচিরমিচির শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়ায়। ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরের দিকে যায়।কফি বানিয়ে দায়ানের রুমের দরজায় ধা’ক্কা দেয়। এখন আর টোকা বা অনুমতি ও নেয়না সোহা রুমে ঢুকতে।ধাক্কা দিয়ে সোহা অবাক হয়।দায়ানের রুম ভিতর থেকে ল’ক করা।এতোদিন ল’ক করতো না।শুধু ভিড়িয়ে রাখতো। সোহা দায়ানকে ডাকে।শুনছেন? আপনার ঘুম ভাঙেনি? কফি নিয়ে আসছি দরজা খোলেন।
ভিতর থেকে কোনো সারা শব্দ পায়না।আরো বার দুয়েক ডাকে।তাও সব নিরব।সোহা তেমন ভাবে আর মাথা ঘামায় না।হয়তে ঘুমুচেছ। তাই চলে যায়।
বাগানে গিয়ে গাছে পানি দিয়ে আসে।এসে রান্না বসায়।জমেলা খালা গ্রাম থেকে এসে অসুস্থ হয়ে গেছে। তাই সোহাই বলেছে কয়দিন রেস্ট নেওয়ার জন্য। রান্না শেষ করে দায়ানের রুমে উঁকি দেয় সোহা।
কি ব্যাপার,এখনো কি লোকটার ঘুম ভাঙলো না? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে অফিসে যাওয়ার সময় তো হয়ে গেছে। আবার ডাকার জন্য যেতে নিলেই কলিং বেল বাজাবে উঠে।
এমন সময় আবার কে এলো? ভাবতে ভাবতেই সোহা দরজার কাছে এগিয়ে যায়। দরজা খুলতেই দরজার ওপারে দেখতে পেলো রুশ দাড়িয়ে আছে।
— ওমা রুশ ভাইয়া তুমি?
— হুম বোন কেমন আছিস? মলিন হাসি দিয়ে বলে রুশ।
— এইতো ভালো।তুমি কেমন আছো?
— আমিও ভালো।
— ধূররর তুমি যে কি করো না।আসবে যে বলে আসবে না আমায়। কাজে এসেছো নাকি?
— রুশ ভিতরে ঢুকে সোফায় বসতে বসতে বলে। হুম খুবই জরুরি কাজে এসেছি।
— কিন্ত জনাব তো এখনো ঘুমে।সেই সকাল থেকে ডাকছি। উঠার কোনো নাম নেই।দরজা ও খুলছেনা। খাবেই বা কখন অফিসেই বা যাবে কখন?
— বোন আমি দায়ানের কাছে না তর কাছে এসেছি।আর দায়ান অফিসে আজ যাবে না।দরজা আজ খুলবে কিনা সন্দেহ।
— রুশের কথায় সোহার কপালে ভা’জ পরে।মানে? কি বলছো রুশ ভাইয়া? অফিসে যাবেনা বুঝলাম। দরজা কেনো খুলবে না?
রুশ সোহার কথার উত্তর না দিয়ে ব’লে,,, তর কি দায়ানের অতীত সম্পর্কে জানতে ইচ্ছে হয়না? দায়ানের মা বাবার কি হয়েছিলো।দায়ান কেনো তোকে মেনে নেয়নি?
— সোহা রুশের দিকে তাকিয়ে বলে,,, রুশ ভাইয়া এসব পরে জানা যাবে।আগে বলো উনি দরজা কেনো খুলবেনা? আমার ডাকেও সারা দেয়নি।আমার কিন্তু টেনশন হচ্ছে।
রুশ নিজের গলাটা পরিষ্কার করে বলে,,,,আজ দায়ানের বাবা মায়ের মৃত্যু বার্ষিকী।প্রতি বছর এই দিনে ছেলেটা নিজেকে ঘরে বন্দি করে রাখে।
সোহা রুশের দিকে তাকিয়ে বলে,, আমাকে সব খুলে বলো রুশ ভাইয়া। আমি সব জানতে চাই উনার সম্পর্কে।
আমি আর দায়ান স্কুল লাইফ থেকেই এক সাথে পড়তাম।আমরা দুইজন দুইজনের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম।কাউকে আমাদের মাঝে আসতে দেই নি।অন্যান্য সাধারণ ফ্রেন্ড থাকলেও তাদের সাথে সম্পর্ক টা এতো গভীর ছিলো না।
ভার্সিটি লাইফে আমাদের মাঝে আরেকজন আসে ফ্রেন্ড হয়ে।তার নাম তিশা।
প্রথমে আমরা তাকে আমাদের সাথে নিতাম না।মিশতাম না বেশি। তারপর সে অনেক অনুরোধ করে আমাদের ফ্রেন্ড হয়।
কয়েক মাস ভালোই চলছিলো।তারপর তিশার পা’গ’লামি শুরু হয় দায়ানের জন্য। নানা ভাবে দায়ান কে ইমপ্রেস করতে চায়।প্রতিদিন দায়ানকে কয়েকবার প্রপোজ করে। দায়ান আর আমি ওকে অনেক বুঝাই।কিন্ত সে মানতে না’রাজ।বলেই রুশ একটু থামে।
সোহার কলিজায় মোচর দিয়ে উঠে। যতো যাই হোক ভালোবাসার মানুষ এর পাশে অন্য মেয়ের নাম কেউই সহ্য করতে পারে না।তাও চুপ রয়। আজ তাকে সব সত্যি জানতেই হবে।
রুশ আবার বলতে শুরু করে,,, অনেক বুঝানোর পর ও কিছুই লাভ হয় না। সে হু’মকি দেয়,দায়ান তার সাথে রি’লেশনে না গেলে সু’ই’সা’ইড করবে। দায়ান তাও রিলেশন করবে না।তার এক কথা।আমি অনেক ঘা’বড়ে গিয়েছিলাম।
দায়ানকে আমি বুঝাই।দেখ কোনো এক সময় তো বিয়ে করতেই হবে। সেটা তিশা হলে সমস্যা কি? মেয়েটা তোকে সত্যি অনেক ভালোবাসে। আর ও যদি কিছু করে ফেলে তোকে না পেলে? তখন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবি?
কিন্ত আমারতো ওর প্রতি কোনো ফিলিংস নেই।
এখন নেই পরে হয়তো হবে।
অনেক ভেবে চিন্তে তারপর দায়ান রা’জি হয়। তাদের সম্পর্কটা ভালোই চলছিলো।আর চার-পাঁচটা সম্পর্কের মতো। মাঝখান দিয়ে একটা কারণ নিয়ে।তিশা সু’ই’সাই’ড ও করে।সেই কারণ টা আমি তোকে বলবো না দায়ানকে জিজ্ঞেস করে নিস।
তিশা পুরাই যেমন সা’ইকো।যা বলে তাই করতে হবে।কোনো কথার নরচড় করা যাবে না।মন মতো কিছু না হলেই অদ্ভুত আচরণ করতো।দায়ান ও মেনে নিতো।আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে পরেছিলো তিশার প্রতি।
তারপর একদিন বা’য়না ধরে, দায়ানের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতে হবে। দায়ান অনেক বোঝায় কিছুদিন যাক।তাদের কে তিশার কথা বলুক।তারপর মি’ট করাবে।কোনোভাবেই দায়ান তিশাকে মানাতে পারেনি। ও যা বলেছে তাই করতে হবে। মি’ট করাতে হবে মানে ঐদিনই মি’ট করাতে হবে কোনো কথা শুনতে বা বুঝতে নারা’জ।
সোহা দাঁতে দাঁত চেপে বসে সব শুনছে।বার বার ওড়নার অংশ খামচে ধরে নিজের রা’গ কমানোর বৃথা চেষ্টা করছে।
আংকেল আন্টি খুবই ফ্রি মাইন্ডের ছিলো।দায়ানের বন্ধুর মতো ছিলো তারা।আমি খুব কম মানুষই দেখেছি বাবা মায়ের সাথে তাদের এমন সম্পর্ক। মাঝে মাঝে দায়ানের প্রতি খুব হিংসে হতো। এটা ভেবে যে ও কতো লাকি এরকম বাবা মা পেয়ে। দায়ানের কোনো সখ আল্লাদ তারা অপূর্ণ রাখেনি যখন যা চাইতো তা পেয়ে যেতো।একটা ছেলে কিনা।ভালোবাসার কোনো কমতি রাখেনি।আমি খুব কম পরিবারই দেখেছি।এতোটা হাসি খুশি।দায়ানের বাবা মায়ের বন্ডিং টাও অনেক ভালো ছিলো যে কেউ দেখলেই বলতে পারতো এরা পার্ফেকট কাপল।
তিশার সাথে না পেরে।দায়ান ডাইনিং টেবিলে খেতে বসে,, বাবা মা কে জানায় তাদের জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।দায়ানের সাথে এক জায়গায় যেতে হবে ঐখানেই তাদের সারপ্রাইজ। দায়ানের মা তখন বলে ছিলো আমি মনে হয় বুঝতে পারছি কিছুটা।তাও চুপ থাকলাম দেখি কি সারপ্রাইজ দেয় আমার আব্বু। দায়ান তখন মুচকি হেসে ছিলো।
তারপর আংকেল আন্টি কে নিয়ে গাড়ি করে রওনা দেয়।তিশার ঠিক করা জায়গায় মি’ট করানোর জন্য। দায়ান অবশ্য তিশাকে বলেছিলো বাড়িতে মি’ট করতে।তিশা শুনেনি সে বাইরেই করবে।
হাসি মুখে তিনজন গল্প করতে করতে যেতে থাকে।আংকেল আর দায়ান সামনে বসেছিলো।আংকেল ড্রাইভ করতেছিলো।আন্টি পিছনে বসে ছিলো।মাঝ রাস্তায় যাওয়ার পর আমি কল করেছিলাম দায়ান কে।আমরা দুজন কথা বলতে ছিলাম।
হঠাৎ করেই দায়ান বলপ,,আব্বু গাড়ি এভাবে চালাচ্ছো কেনো? সাবধানে চালাও এক্সিডেন্ট হবে নয়তো।
তখন আংকেল এর গলা শুনতে পাই,,তিনি বলছেন দায়ান বাবা গাড়ির ব্রেক কাজ করছে না।
— কি বলো আব্বু। ভালো?
— হ্যা। কি করবো বুঝতেছিনা।
আমি তখন কলেই ছিলাম।ওদের সব কথাই শুনতে ছিলাম।
আন্টি কান্না করতে করতে বলেছিলো,,দেখো না ভালো করে।কি হবে এখন আল্লাহ।
— দেখেছি কোনো ভাবেই কাজ করতেছেনা।আস্তে আস্তে যেনো গাড়ির স্পিড বেড়ে চলেছে।
হাঠাৎই কিছুটা দূরে ওরা বড় একটা ট্রাক দেখতে পায়।আংকেল আন্টি একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় কিছু একটা ভেবে নেয়।দায়ান তখন তাদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো।ওদের ইশারার দায়ানের সন্দেহ হয়। কিছু বলতে নিবে তার আগেই আংকেল দায়ানের সিট বেল্ট খুলে ফেলে।দায়ান কে গাড়ির ডোর খুলে এক ধাক্কা দেয়। ধাক্কা দিতে দিতে দুজন একসাথেই বলে,,,আব্বু ভালো থেকো।নিজের খেয়াল রেখো। আমরা তোমার সাথেই আছি সবসময়।
তারপর দায়ান ছিটকে রাস্তার এক সাইডে গিয়ে পরে।মাথায় একটু ব্যাথা পায়।নিজেকে ঠিক করে গাড়ির দিকে তাকাতেই দেখতে পায়,, বি’কট শব্দে গাড়িটা ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়ে কয়েকবার উল্টে ভেঙে চুরমার হয়ে তারপর গিয়ে শান্ত হয়ে যায়।
দায়ান আব্বু আম্মু বলে জোরে একবার ডাক দিয়ে চুপ হয়ে যায়।
ঝড় যেমন তার তা’ন্ড’ব চালানোর পর পরিবেশ একেবারে শান্ত হয়ে যায়। তেমনই এক্সিডেন্ট হওয়ার পরও পরিবেশটা তেমন কিছু মূহুর্তের জন্য শান্ত হয়ে যায়।
আমি ও ততক্ষণে বেরিয়ে পরেছিলাম।ঐখানে পৌঁছে দেখি লোকজনের ভি’ড় জমে যাচ্ছে। ঠেলে যাই দেখার জন্য গিয়ে শুধু ভাঙাচোরা গাড়িটাই দেখতে পাই।লোকজন বলাবলি করছে হাসপাতালে নাকি নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের। আমিও হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার জন্য তারাতাড়ি করে গাড়িতে উঠতে নিবো,,এমন সময় রাস্তার অপর পাশে চোখ যায় আমার।
তাকিয়ে দেখি দায়ান চুপচাপ মাটিতে বসে আছে। দৌড়ে দায়ানের কাছে ছোটে যাই আমি।পাশে গিয়ে দায়ানের অবস্থা দেখে আমার চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পরতে থাকে।দায়ানকে আমি এমন অবস্থাতে আর কোনোো দিন দেখিনি।কপালের এক সাইডে র/ক্ত জমে আছে। কি যে বি’দ্ধ’স্ত অবস্থা ছিলো।দায়ান যেমন পাথরে পরিণত হয়েছে। কোনো দিকে তার খেয়াল নেই।প্রথম কয়েকবার ডাক দিলে সে সারা দেয় না।
তারপর ঝাঁকি দিতেই যেনো হুঁশ ফিরে। আমাকে দেখে বলে ভাই আম্মু আব্বু,,,,,, আর কিছু বলতে পারে না।
হাসপাতালে চল ভাই।আংকেল আন্টি কে হাসপাতালে নিয়ে গেছে চল।তারপর আমি ধরে ধরে দায়ান কে নিয়ে হাসপাতালে যাই।
ওখানে গিয়ে ডাক্তার দের কথাতে স্ত’ব্ধ হয়ে যাই। আংকেল আন্টি আর নেই।অনেক চেষ্টা করেছিলো ওরা।কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
দায়ানের দিকে তাকিয়ে দেখি সে একটা কথাই বিরবির করে বলছে।সব আমার দোষ। আমার জন্য হয়েছে সব।আমি দায়ী।
রুশ ঘটনা বলতে বলতে নিজেও কেঁদে দেয়।চোখ মুছে সোহার দিকে তাকিয়ে দেখে সোহা ওড়না দিয়ে মুখ চাপা দিয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে।
#চলবে,,,,,