#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ২৬
#Jhorna_Islam
দায়ান পরে গিয়ে তেমন একটা ব্যাথা পায় নি।ভা’জ্ঞি’স ডান হাতটা সামলে নিয়েছিলো।হাতে কোনো ভ’র পরেনি।যদি পরতো তাহলে হয়েই যেতো।আবার যদি হাতে ব্যাথা পেতো তাহলে হাত দিয়ে দুই-তিন মাস আর কিছু করা লাগতোনা।
দায়ান এখনো ফ্লোরেই বসে আছে।সোহার দিকে তাকিয়ে। রা’গে মাথা ফেটে যাচ্ছে। সব কিছুর একটা লি’মি’ট আছে।এই মেয়েটা অতি’রি’ক্ত শুরু করছে।বা’চা’লপনার শে’ষ পর্যায়ে এসে গেছে এই মেয়ে।
একটা মানুষ এতো কথা কি করে বলতে পারে? সব কিছু নিয়ে ফা’ন করে।তাই দায়ান বলে উঠে,,,,
সোহা তোমার মুখে লা’গা’ম টানো বলে দিলাম।সব সময় এসব ফা/লতু জো’ক্স সব জায়গায় খা’টে না। হাসি মজা করার ও একটা সময় আছে।
সোহা দায়ানের কথা গুলো শুনে কিছু সময়ের জন্য চুপ হয়ে যায়। সত্যিই বেশি করে ফেলেছে।
দায়ানের দিকে দুঃখী দুঃখী ভা’ব নিয়ে বলে,,,,,,স’রি আর এমন হবে না।খুব বেশি লেগেছে তাই না আপনার?
নো।
আসলে,,,,বাগানে ফুল ফোটেছে।তাই খুব এ’ক্সা’ই’টেড হয়ে গেছিলাম।দৌড়ে আপনাকে বলতে এসেছিলাম।হঠাৎ-আসতে গিয়ে আপনি সামনে এসে পরবেন,,তার উপর আবার ধা’ক্কা খাবো ভাবিনি।
নে’ক্স’ট টাইম সামনে দেখে শুনে চলবা।এখন আমি ব্যাথা পাইনি।সব সময় তো আর এমন হবে না।তাই আগেই সা’বধান করে দিলাম।
হুম খেয়াল রাখবো।নিন এইবার উঠে আসুনতো দেখি।বলেই দায়ানের দিকে হাসি মুখে হাত বাড়িয়ে দেয়।
দায়ান বসা অবস্থাতেই সোহার মুখের দিকে একবার ও সোহার হাতের দিকে তাকায়। তারপর কিছু না ভেবেই নিজে নিজে উঠে দাঁড়ায়।
সোহা মুখটা বে’জা’র করে হাতটা গু’টিয়ে নেয়।হুহ হাত ধরলে কি এমন হতো শুনি? আপনার ও হে’ল্প হতো, আমিও আপনার হাতের একটু প’রশ পেতাম। কথা গুলো মনে মনেই বলে সোহা।
দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,, আমি এতোটাও অ’কে’জো হয়ে পরিনি যে তোমার সাহায্য লাগবে।সামান্য পরে যাওয়ার থেকে উঠার জন্য।
হুু জানি।
খাবারের কিছু ব্য’ব’স্থা করো খু’দা লাগছে প্রচুর।
আগে বলবেন না আমায়।আমাকে জাস্ট পনেরো মিনিট টাইম দিন।আমি এখনই আসছি।
হুম যাও।বাট তা’ড়া’হু’ড়ো করার কিছু নাই। ধী’রে ধী’রেই করো সব। সাবধানে করো।আবার হাত পা পু’ড়ে ফেলো না যেনো।
সাবধানেই করবো।চি’ন্তা করবেন না।
তারপর সোহা রান্না ঘরে ও দায়ান নিজের রুমে চলে যায়।
—————————————-
ঘড়ির কাটায় যখন ঠিক রাত এগারোটা বাজে,,,, তখন সব কাজ শেষ করে রুমে আসে নোহা।রুমে এসেই বাথরুমে ঢুকে যায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
যাওয়ার আগে বিছানার উপর বসে থাকা ওমির দিকে একবার তাকায়। ওমি বসে বসে ফোন টি’প’তেছে।
ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। টাওয়াল দিয়ে হাত মুখ মুছে ফেলে। হাত পায়ে নিত্য দিনের ব্যবহার্য প্র’সাধ’নী লাগিয়ে নেয়। ওমি মোবাইল চালানোর ফাঁকে ফাঁকে নোহাকে দেখছে।
চুলের অগোছালো খোপাটা টান দিয়ে খুলে ফেলে।মু’হূ’র্তের মধ্যে চুল গুলো কো’মড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পরে।দুই বোনের চুলই কোমড় ছারিয়ে। খুব সুন্দর করে চুল গুলো আ’চ’ড়ে বি’নু’নি পাকাতে থাকে। চুল গুলো এক সাইডে নেওয়া তে নোহার পি’ঠ’টা অনেকটাই দৃ’শ্য মান।
ওমি ফোন ফেলো উঠে দাঁড়ায়। এগিয়ে এসে নোহার পিছনে দাঁড়ায়।। নোহা এখনো খে’য়াল করেনি ওমিকে।সে এক মনে চুল বাঁধতেছে।
হঠাৎ করেই নোহাকে ওমি জড়িয়ে ধরে গলায়,, পিঠে পাগলের মতো চুমু খেতে থাকে।
নোহা হঠাৎ আ’ক্র’মনে ঘা’বরে যায়। তারপর শরীরে ওমির ছোয়া পেয়ে। নিজের হাত শ’ক্ত করে মুঠো করে ফেলে।
ওমির প্রতিটা ছোঁয়া বি/ষের মতো লাগছে একদম সহ্য হচ্ছে না। লোকটা প্রতিদিন নোহার কাছে আসে নিজের প্রয়োজন মেটাতে। আর এমনি একবার নোহার দিকে ফিরেও তাকায় না।
নোহার ভাবনার মাঝে ওমি নোহাকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে শুয়িয়ে দেয়।নিজেও এবার নোহার দিকে এগিয়ে যায়।
এইবার নোহার মাথায় কেনো জানি ওমির ছোয়ায় র/ক্ত উঠে যায়।এক ধা’ক্কা’য় বিছানার অপর পাশে ফেলে।হঠাৎ করে ধা’ক্কা লাগায় ওমি নিজেকে সামলাতে পারেনি।
পরে গিয়ে।নোহার দিকে রা’গী চোখে তাকায়।
নোহা নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠে,,, অনেক তো হলো ওমি এই বার আমাকে একটু শান্তি দিন।বিশ্বাস করুন আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি।মা’নসিক ভাবে শাীররিক ভাবে।সব ভাবেই ক্লান্ত হয়ে গেছি।
অনেকতো চেয়েও চোখ বুঁ’জে ছিলেন।এবার চোখ খুলে চার পাশটা দেখুন।আমরা চোখে যা দেখি সব সময় কিন্তু সত্যি হয় না।নিজের আপন মানুষ গুলোই আমাদের বো’কা বানিয়ে রাখে।এবারতো সব টা ভালো ভাবে দেখার বোঝার চেষ্টা করুন। নিজেকে আর কা/পু’রুষ প্রমান করবেন না।
যেইদিন নিজেকে সঠিক রাস্তায় চালনা করতে পারবেন ভালোবেসে আমায় কাছে টানবেন,,,,শুধু শরীরের জন্য নয়। সেই দিন আমার কাছে আসবেন।আমি সা’দরে আপনাকে ভালোবেসে মন থেকে গ্র’হন করে নিবো।তার আগে আমাকে ছোঁয়ার ও চেষ্টা করবেন না।বলেই পাশ ফিরে শুয়ে পরে।চোখ দিয়ে নো’না জল বয়ে চলেছে নিরবে।
নোহার কথা গুলো শুনে ওমির মাথায় রা’গ উঠে যায়।রা’গে বালিশ টা নিচে ফেলে দেয়।বিছানা থেকে নেমে। রুম থেকে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে যায়।দরজার আওয়াজে নোহা কেঁপে ওঠে। কান্না করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে যায়।
——————————————-
প্রতিটা রাত কাটিয়ে একটি দিনের নব্য’সূচনা ঘটে। রাতের সমাপ্তি জানান দেয় আরেকটি নতুন ভোরের।
আজ দায়ানের পার্টিতে যাওয়ার কথা। তাদের পার্টিটা মূলত রাতের বেলা। তার আগেই তাদের যেতে হবে।কারণ তাদের সকল ব্যবসায়িকদের একটা মিটিং এ অংশগ্রহণ করতে হবে। অবশ্য পার্টি দেওয়ার মূল উদ্দেশ্যটাই হচ্ছে মিটিং।
সকলের জন্যই রুম বরাদ্দ করে রাখা হয়েছে। তারা যেনো ঐখানে থাকতে পারে।
যেহেতু রাতের বেলা পার্টি তাই আলাদা ড্রেস লাগবে। ঐখানে পৌঁছে ও ফ্রেশ হতে হবে।তাই দুইটা করে ড্রেস নিয়ে নেয়। সোহা তার ড্রেস আর অলংকার গুলো গুছিয়ে রেখেছিলো।দায়ান তার ড্রেসের সাথেই সোহার ড্রেস নিয়ে নেয়। এতো ট্র’লির দরকার নাই।একদিনের জন্যই তো যাচ্ছে।
আজ আকাশটা মেঘলা।যে কোনো সময় বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা রয়েছে।
দায়ান রেডি হয়ে সোহার জন্য অপেক্ষা করছে ড্রইং রুমে বসে ।সোহা এখনো রেডি হয়েই চলেছে।আসার কোনো খবর নেই। বিরক্তি নিয়ে সোহার রুমের দিকে তাকায়।
সোহার রুমে তাকাতেই দায়ানের কয়েকটা হার্টবিট মিস হয়ে যায়। হা করে তাকিয়ে থেকে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় দায়ান।এক দৃষ্টিতে সামনের দিকেই তাকিয়ে রয়।
সোহা বিয়ের দিন বাদে,, বিয়ের পর এই প্রথম শাড়ী পরেছে।সাথে হিজাব। সামান্যই সেজেছে। তাতেও কি যে সুন্দর লাগছে।
দায়ান এই প্রথম সোহাকে শাড়ী পরতে দেখলো।আর তাতেই আঁটকে গেলো।কি যে সুন্দর লাগছে। দায়ান বলতে বাধ্য সোহাকে আজ অপূর্ব সুন্দর লাগছে। চোখ ফেরানো দা’য়।এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে।
সোহার কথায় ধ্যান ভাঙে।
চলুন।দেরি হয়ে গেছে না? আসলে শাড়ী পরতে একটু টাইম লেগে গেছে।
দায়ান নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠে চলো।
সোহা ও মাথা নাড়িয়ে দায়ানের সাথে বেরিয়ে পরে।
——————————–
পার্টিটা মূলতো একটা ফাইভ স্টার হোটেলে করা হবে।
দায়ানদের গাড়ি এসে হোটেলের বড় গেটের সামনে থামে।বাইরে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে।
সোহা গাড়ির ভিতর থেকেই চারিপাশটা দেখছে।আরো অনেক মানুষই আসতেছে,,,,তাদের ফ্যামিলি নিয়ে।
হোটেলের চার পাশে ক’ড়া সিকিউরিটি।গার্ডদের ও অভাব নেই।।
দায়ান হোটেলের গেটের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়েছে কারণ,,তাদের সবাইকে ইনভিটেশন দেওয়ার সময়,,কার্ড দিয়ে দিয়েছে।ঐটা ছাড়া কেউ ঢুকতে পারবে না।কার্ড দেখিয়ে তারপর ঢুকতে হবে।
দায়ান গাড়ির কাচ নামিয়ে।কার্ড চে’ক করে যে লোকটা তার কাছে নিজের পকেট থেকে বের করে দেয়।
লোকটা কার্ডটা চে’ক করে দায়ান কে স্বাগত জানায় হাসি মুখে।দায়ান ও মাথা নাড়ায়।
সোহা এদের কান্ড দেখে নিজের মনেই বিরবির করে বলে উঠে,,,,” বড় লোকের বড় বড় ব্যাপার স্যাপার।”
দায়ান গাড়িটা পাকিং ল’টে পার্ক করে সোহাকে নিয়ে তারাতাড়ি হোটেলে ঢুকে যায়। যেনো সোহার শরীরে বৃষ্টি না পরে। এই বৃষ্টিতে ঠান্ডা জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা আছে বেশি তাই। যাওয়ার আগে গাড়ির চাবি এইখানে ওদের জন্য নিয়োজিত এক স্টাফ কে দিয়ে যায়। যেনো ট্রলিটা গাড়ি থেকে নামিয়ে ওদের রুমে পৌছে দেয়।
রিসেপশনে গিয়ে তাদের জন্য বরাদ্দ করে রাখা রুমের চাবিটা রিসেপশনিস্ট এর কাছ থেকে বুঝে নেয় দায়ান।
তাদের রুমটা এগারো তলায় পরেছে।আর রাতে পার্টিটা হবে দশ তলায়।।
দায়ান লিফটে আগে ঢুকে,,তারপর সোহা এগিয়ে যায় ঢুকার জন্য। এখন লফটে কেউ নেই।সোহা লিফটে ঢুকার পর দায়ান এগারো তলায় যাওয়ার জন্য লিফটের বাটনে চাপ দিয়ে দেয়।
দায়ান আর সোহা কেউই খেয়াল করেনি সোহার শাড়ির আঁচল অসাবধাানতা বসত লিফটেট দরজায় আটকে গেছে।
লিফট চলতে শুরু করার সাথে সাথে কেউ কিছু বোঝার আগেই সোহার শাড়ী খুলে চলে যেতে থাকে। সোহা লিফটের দরজায় কয়েকটা বারি খায়। গলা’ হাত ছিলে যায়।মাথায় ও বাড়ি খায়।মাথা ধরে আহ বলে উঠে সোহা।
দায়ানের পুরো ব্যাপারটা বুঝতে অনেকখানি টাইম লেগে যায়।যখন বুঝতে পারে তরিঘরি করে সোহার কাছে এসে নিজের কাছে টেনে নেয়।
ঠিক আছো তুমি? কি করলে এটা বলোতো? এতোটা কেয়ারলেস মানুষ কি করে হতে পারে সোহা।শাড়ির আঁচল টা তুমি সাবধানে রাখবানা।কি অবস্থা হতে পারতো তুমি ভাবতে পারতেছো? আমার তো ভাবতেই শরীরে কাটা দিচ্ছে।
দায়ান রা’গে বলে উঠে,,, এই বা** শাড়ি কে পরতে বলেছে হ্যা? যখন সামলাতেই না পারো।
সোহা শব্দ করে কেঁদে দেয়।
উফফ একদম কান্না করবেনা বলে দিলাম।আমার ভাবতেই মাথা ঘুরাইতেছে সোহা কি রকম দূ’র্ঘ’ট’না ঘটতে পারতো তুমি আইডিয়া করতে পারতেছো।তুমি আমায় পা’গ’ল করে দিবা। যদি তোমার বড় কিছু হয়ে যেতো?
সোহা হি’চ’কি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলে আমি বুঝতে পারিনি।খেয়াল ছিলোনা আচল টা যে বাইরে রয়ে গেছে।
খেয়াল ছিলো না মানেটা কি? খেয়াল কোথায় থাকে তোমার হ্যা? বলেই চেচিয়ে উঠে।
সোহা দায়ানের চেঁচানো তে ভ’য় পেয়ে যায়। ব’দ্ধ লিফটে দায়ানের গলার স্বর বারবার প্রতি’দ্ধ’নিত হচ্ছে। সোহার কান্নার বে’গ আরো বেরে যায়।
রা’গ দমন না করতে পেরে হাত উঠায় চ’র দেওয়ার জন্য দায়ান।
সোহা চোখ ব’ন্ধ করে ফেলে। দায়ান সোহার কান্নারত মুখটা দেখে হাত নামিয়ে নেয়। নিজের রাগকে ক’ন্টো’ল করে বলে,,,,
তুমি কি বুঝতে পারো? নিজেতো শে/ষ হবাই সাথে আমাকেও শে/ষ করবা তুমি।
বলেই সোহাকে নিজের আরো কাছে টেনে এনে জড়িয়ে ধরে। সোহা যেনো এটারই অপেক্ষাতে ছিলো শক্ত করে দায়ানকে জড়িয়ে ধরে।
দায়ান ফিল করতে পারছে সোহার হাত পা মৃদু কাঁপতেছে।দায়ানের ও এই অবস্থা দেখে হা’র্ট’বি’ট বেড়ে গিয়েছিলো।
গলাটা কতো খানি কেটে গেছে দেখছো? হাত পা গুলাও ছিলে গেছে।
দায়ানের কথা সোহার কান দিয়ে ঢুকছেই না।সে কেঁদে কেটে দায়ানের শার্ট ভিজাতে ব্যস্ত।
পাগলি আর কাঁদে নাতো।শান্ত হও।আর কাঁদতে হবে না।অসুস্থ হয়ে পরবেতো বাবা শান্ত হও এবার।বলেই দায়ান আরেকটু শক্ত করে সোহাকে জড়িয়ে ধরে।
লিফটটা পাঁচ তলায় আসতেই থেমে যায় তার মধ্যে। লিফটের ভিতরের লাইট ও অফ হয়ে যায়।
সোহা অন্ধকার দেখে আরো ঘাবড়ে যায়।
দায়ান ওহ নো বলেই একহাতে মাথার চুল খামচে ধরে।
#চলবে,,,,,,