#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ২৪
#Jhorna_Islam
নোহা তার বাবার সাথে কথা বলে পিছনে ফিরতেই দেখতে পায়,,তার শাশুড়ী ভ’য়ং’কর দৃ’ষ্টি’তে তার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করে পিছনে ফিরে কাউকে দেখে প্রথমে ঘা’ব’ড়ে যায় নোহা।তারপর নিজেকে আবার সা’মলে নেয়।
–কিছু বলবেন মা?
— হেসে হেসে কার সাথে কথা বলতেছিলে?
— কেনো বলুনতো মা? আমি কি এখন কারো সাথে কথা বলতে গেলেও আপনার থেকে পা’র্মি’শ’ন নিতে হবে?
— অবশ্যই নিতে হবে।ভুলে যেওনা তুমি তোমার বাপের বাড়িতে নেই।এসব আমি একদম স’হ্য করবোনা।বাড়ির কাজ ফেলে উনি হাসি তা’মা’শা করে।
— কাজ এখন করি বা পরে।ফেলে রাখি বা করে ফেলি।আপনার তো দেখার বিষয় না মা।সবকিছু আপনি ঠিক টাইমে পেলেই হলো।এতো কথা শুনানোর তো কোনো কারণ দেখছিনা।আর ফেলে রাখলেও তো আপনি করে দিবেন না এতো কথা বলে লা’ভ আছে?
— মুখটা বেশি চলছেনা তোমার?
— এতো দিন চুপ থাকতে থাকতে কথা বলার জন্য যে গলার স্ব’র লাগে না? ঐটাতে জং ধরে গেছে বুঝলেন।তাই মুখটাকে বেশি বেশি চালিয়ে জং ছোটাচ্ছি।
বলেই নোহা ডো’ন্ট কেয়ার ভা’ব নিয়ে পা’শ কাটিয়ে চলে যায়।
ব’ড্ড বা’ড় বে’ড়েছো মেয়ে। কথায় আছেনা অতি বা’ড় বে’ড়োনা ঝ’ড়ে পরে যাবে।
কথাটা মনে মনে আ’ওড়ায় নোহার শাশুড়ী।
———————————————
দুপুরের খাবার রুশ ও মি.এলেক্স শেষ করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে।
খাওয়া দাওয়া শেষ হলে মি. এলেক্স কে রেস্ট নেওয়ার জন্য পাঠায়।রুশ ও চলে যায় একটু রেস্ট নেওয়ার জন্য। দুপুরের খাওয়াটা একটু বেশি ই হয়ে গেছে। এখন ইচ্ছে করতেছে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকতে। রেস্ট না নিলেই নয়।
রুশ ও মি.এলেক্স রেস্ট নেওয়ার জন্য চলে যেতেই সোহা,হাত ধুয়ে প্লেট নিয়ে দায়ানের পাশের চেয়ারে বসে।
খাবার মাখিয়ে খুব সুন্দর করে দায়ানের মুখের সামনে ধরে।দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,, আমি এখন খাবোনা।খিদে নেই আমার।তুমি খাও।সকাল থেকে অনেক কাজ করেছো।তোমার নিশ্চয়ই খিদে পেয়েছে? তুমি খেয়ে নেও।
কেনো খাবেন না? আশ্চর্য তো।বেলা কয়টা বাজে সে দিকে আপনার কোনো খেয়াল আছে? খেয়ে নিন চুপচাপ। আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা।ঔষধ আছে আপনার ভুলে গেছেন? তারউপর আবার ঠিক টাইমে না খেলে বুক ব্যাথা করবে।সো ল’ক্ষী ছেলের মতো খেয়ে নেন।
পা/গ/ল হয়ে গেছো।বাড়িতে আমরা একা না।আরো লোক আছে। ওরা দেখলে কি হবে ভাবতে পারতেছো তুমি? লজ্জায় পরতে হবে।তার মধ্যে রুশ দেখলে তো কোনো কথাই নেই।আমাকে নিয়ে লে’ক ফুল করবে।।
এগুলো কি রকম কথা বলেন আপনি? আমরা কি এখানে বসে প্রেম করছি নাকি।যে এতো ভাবাভাবি হবে।আর ওরা কেউ এখন আসবেনা।চুপচাপ খান তো।বা’ই এনি চান্স যদি এসেও পরে তো আমি রুশ ভাইয়াকে মা’না করে দিবো আপনাকে লে’ক ফু’লিং করতে।হয়েছে এবার হা করুন।
দায়ান তবুও খেতে চায় না।উঠে চলে যেতে নেয়।
সোহা তারাতাড়ি দায়ানের হাত ধরে বসিয়ে দেয়।আর নিজের পা দিয়ে,দায়ানের পা জোড়া পেঁচিয়ে ধরে।
হোয়াট দা !! এগুলা কি রকম ব্যাবহার সোহা?? পা সরাও।
একদম না।এতো সময় ভালো ভাবে বলেছি শুনেন নি।এখন এভাবে চুপচাপ খেয়ে নেন।নয়তো আমাকে তো চিনেন না।একদম কোলের উপর উঠে বসে দেন আপনাকে খাওয়াবো।আপনিকি সেইটাই চাইছেন? আমার কোনো আপত্তি নেই।বলেই লজ্জা পাওয়ার ভা’ন ধরে।
দায়ান পরেছে মহা ঝা’মেলায়।এই মেয়ে যে না খেলে ছাড়বেনা সেটা খুব ভালো করেই উপ’ল’ব্ধি করতে পেরেছে।তাই চুপচাপ হা করে খাবারটা মুখে নেয়।
এইবার তো খাচ্ছি। পা টা সরাও।
নাহ আপনার খাবার শেষ না হওয়া অবধি পা সরছেনা জনাব।
তুমি কিন্তু তোমার লিমিট ক্র’স করতেছো সোহা।বেশি বাড়াবাড়ি করলে কিন্তু তোমার খবর আছে।
সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে মুখটা কে বাচ্চাদের মতো করে বলে উঠে,,,, প্লিজ খেয়ে নিন না চুপচাপ তারাতাড়ি। আমার প্রচুর খিদে পেয়েছে।আপনাকে খাইয়ে তারপর আমি খাবো।আপনি না খেলেতো আমি খেতে পারতেছি না। দেখেন কতো বেলা হয়ে গেছে। কিছুসময় পর আসরের আজান দিয়ে দিবে।
দায়ান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি অনেক বেলা হয়ে গেছে। সোহার মুখটাও ছোটো হয়ে গেছে।হয়তো খিদে পেয়েছে অনেক। তাই কথা বাড়ায় না চুপচাপ খেতে থাকে।
সোহা খুব মনোযোগ দিয়ে দায়ান কে খাওয়াচ্ছে। দায়ান খাবার মুখে তুলে নিচ্ছে আর মলিন হয়ে যাওয়া সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
— সোহা।
— হু,, খাবার মাখাতে মাখাতে জবাব দেয় সোহা।
— দায়ান কোনো ভ’নিতা না করে,,সোজা’সা’প্টা বলে উঠে,,,,,,, তুমিও আমার সাথে খেয়ে নেও।নয়তো এতো লেট করে খেলে তুমিও অসুস্থ হয়ে যাবা।
সোহার চোখ জো’ড়া চিকচিক করে উঠে খুশিতে দায়ানের কথা শুনে।
দায়ানকে বলে,,,,,,,আপনি সত্যি বলছেন? এই প্লেট থেকে আমি খেয়ে নিবো?
হুম।
আপনার কোনো প্র’ব্লে’ম হবে না?
না।তুমিও খাও।
ওকে বলে সোহা ও একই প্লেট থেকে খাবার খেতে থাকে।একবার দায়ানের মুখে খাবার তুলে দেয়।তো একবার নিজের মুখে।
দায়ানের দিকে তাকিয়ে সোহা মনে করেন ভাবে,,,,লোকটা এতোটাও খা’রাপ নয়।মনটা খুব নরম।কাউকে দেখাতে চায় না।সবাইকে নিজের গ’ম্ভীর রাগী মু’ড টাই দেখায়।নিজের ভিতরে রাখা কোমল হৃ’দয় টা কাউকে দেখায় না।
লোকটা পুরাই নারকেলের মতো উপরটা শ’ক্ত । ভিতরটা নরম।আমি জানিনা কেনো আপনি এমন হয়ে গেছেন।দেইখেন আমি আপনাকে পাল্টে দিবো।আপনি মন খুলে হাসবেন।তার জন্য যা করা লাগে আমি তাই করবো।
সোহার ভাবনার মাঝে দায়ান বলে,,,সোহা তুমি এবার খাও।আমি আর খেতে পারবোনা।
খেতে পারবেন না মানে? এই কয়টা খাবারে পেট ভরে গেলো আপনার? আমায় বোকা পেয়েছেন।না খাওয়ার বা’হা’না দিতেছেন আমায়? কোনো বাহানা চলবে না।চুপচাপ খাবার খেতে থাকেন।
আরে কিন্তু,,,,,,,,
কিসের কিন্তু? কোনো কিন্তু না।অনেক জো’রা’জো’রির পর দায়ান আর কয়েক লো’ক’মা খায়।তারপর সোহা নিজেও খাবার খাওয়া শে’ষ করে। দায়ানকে ঔষধ খাইয়ে দেয়।
আজ সোহা নিজের ওড়না টা দিয়ে দায়ানের মুখ মুছিয়ে দিতে ভুলে যায়।
দায়ান ঠা’ই বসে রয়।মনে মনে চাচ্ছে সোহা যেনো তার ওড়না টা দিয়ে মুখ মুছিয়ে দেয়। কিন্তু কোথায় কি,,এই মেয়েতো থালা বাসন নিয়ে পরে আছে।দেখো কাল কি ভাব নিয়ে বলল,,, আপনার মুখ মুছিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব টা আমি নিলাম। আর একদিন না যেতেই ভু’লে গেছে।
সোহা এক মনে কাজ করে চলেছে আসলেই সে বে মা’লু’ম ভুলে গেছে।
দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে আছে। সোহা তা দেখে দায়ানকে একটা মুচকি হাসি উপহার দেয়।
দায়ান কিছু না ভেবেই সোহার ওড়নাটা টা’ন দিয়ে নিজেই মুখটা মুছতে থাকে। আর বলে,,,,, এই ভাবে দায়িত্ব নিতে আসছো? দেখোনা মুখে পানি লেগে আছে।
সোহার ওড়না তে টা’ন পরায়।দায়ানের দিকে তাকিয়ে পুরাই অবাক।দায়ান তার ওড়না দিয়ে মুখ মুছছে? এটা কি তার স্বপ্ন? দায়ানের কথাতে বুঝতে পারলো কোনো স্বপ্ন না বা’স্ত’ব।
দায়ান মুখ মুছে ততক্ষণে সোফায় বসতে যেতে নেয়।
সোহা নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে দায়ানকে বলে,,,এইই ঐখানে বসতে যাইতাছেন কেনো এখন? রুমে একটু শুয়ে রেস্ট নিন।ভালো লাগবে। এমনিতেই জ্বর থেকে উঠেছেন।শরীরটা নিশ্চই দূর্বল।ওরা আসলে আমি আপনাকে ডেকে দিবো যান।
দায়ান ও তাই করে রুমের দিকে যেতে থাকে।সত্যি একটু শো’য়া দরকার। যেতে যেতে বলে,,,তুমিও এসব রেখে একটু গিয়ে রেস্ট নেও।সকাল থেকে কাজ করে চলেছো শরীর খারাপ করবে।
আপনি যান।আমিও যাবো।
সন্ধ্যার দিকে দায়ান,রুশ ও মি.এলেক্স তাদের অফিসিয়ালি কথা শুরু করে।৷ ব্যবসায়িক অনেক কিছুই ওরা আলাপ আলোচনা করে।একটা ডি’ল ও সাইন করে দায়ান মি. এলেক্স এর সাথে।
মি. এলেক্স বেরিয়ে যাওয়ার আগে সোহার অনেক প্রশংসা করে।স্পে’শালি রান্নার। সোহা বলেছিলো রাতে খেয়ে যেতে শুনেনি।কি একটা কাজ নাকি আছে। রুশ ও মি.এলেক্স এর সাথেই বেরিয়ে গিয়েছিলো বি’দায় নিয়ে।
——————————————-
ভালো সময় গুলো খুব দ্রুত চলে যায়। বোঝাই যায় না।এর মধ্যে পাঁচ দিন কেটে গেছে।
সোহা আর দায়ানে সম্পর্কের উন্নতি না হলেও অব’নতি হয়নি।দায়ানের হাত এখন কিছুটা ভালো। গতকাল গিয়ে সে’লাই খুলে আনিয়েছে।অবশ্য হাত দিয়ে এখনো কিছু করতে পারবেনা।শুকাতে টাইম লাগবে।সোহাই দায়ানকে খাইয়ে দেয়।
এর মধ্যে সোহা ভার্সিটিতে গেছে দুই দিন। অবশ্য নিজে থেকে না।দায়ান সোহাকে ধ’মকিয়ে ধা’মকিয়ে পাঠিয়েছে।কতো বা’হা’না দিয়েছিলো না যাওয়ার জন্য। দায়ানকে একা রেখে যাবে না।এই হাত দিয়ে কিছু করতে পারবে না সোহা কে ছাড়া।কিছুর প্রয়োজন হলে তখন কে দেখবে? জমেলা খালাও তো নেই যে বলে যাবে।
কিন্তু কে শোনে কার কথা? সোহা জে’দি হলে দায়ান মহা জে’দি।কোনো বাহানা শুনেনি।
শে’ষে দায়ানের সাথে না পেরে গু’ম’ড়া মুখেই গেছে ভার্সিটিতে।যাওয়ার আগে অবশ্য দায়ান কে হাজার খানেক উপদেশ দিয়ে গেছে।
দায়ান ও বলেছে সব মেনে চলবে।
তারপর গিয়েছে।
———————————–
আজ সকাল সকাল সব কাজ সেরে ফেলেছে সোহা।কারণ আজ দায়ানের সাথে শপিং এ যাবে।দায়ানই বলেছে তারাতাড়ি সব কাজ শেষ করার জন্য। সময় বাড়ার সাথে সাথে লোকজনের ভি’ড় ও বাড়তে থাকে।আর দায়ানের এতো ভি’ড় লোকজনের সমা’গম পছন্দ না।তাই সকাল সকাল ই দুইজন বেরিয়ে পরে।
অবশ্য শপিং করার একটা কারণ আছে,,,, আরো দুইদিন আগেই দায়ান জানিয়েছে তাদের বিজনেস ম্যানদের জন্য একটা পার্টির আয়োজন করা হয়েছে।সেখানে ফ্যামিলি সহ উপস্থিত থাকতে হবে।তাই দায়ান যখন যাবে সোহা ও যেনো যায়।একা বাড়িতে রেখে যাবে না।আর জমেলা খালা ও বাড়িতে নেই যে সোহার কাছে রেখে যাবে।তাই সোহাকে যেতেই হবে।
সোহা শুনে খুশিই হয়েছিলো। তারপর আবার মনটা খারাপ হয়ে যায়।আমারতো ভালো কোনো জামা নেই।যা আছে তা পরেতো আর ঐসব পার্টিতে যাওয়া যাবে না।কতো বড় লোক মানুষ যাবে।এসব ড্রেস পরে গেলে মানুষ কি বলবে? সবাই তাকিয়ে থাকবে আর হাসাহাসি করবে।উনার তো মা’ন স’ম্মা’নের একটা ব্যা’পার আছে।এসব ভাবতে ভাবতে সোহা মুখটা কালো করে ফেলে।
দায়ান হয়তো সোহার মনের কথাটা বুঝতে পেরেছে। তাই সোহাকে শপিং করিয়ে দেওয়ার কথা নিজে থেকেই বলেছে।
দুজনেই শপিং কম’প্লে’ক্স এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে।আজ আর দায়ান নিজে গাড়ি ড্রা’ই’ভ করেনি।ড্রা’ইভার নিয়ে এসেছে সাথে।হাতটা এখনো একটু একটু ব্যা’থা করে।
কিছু সময়ের মধ্যেই ওরা পৌছে যায়।কারণ বেশি দূরে না। দায়ানের বাসার কিছুটা কাছেই।গাড়ি থেকে দু’জনেই শপিং কম’প্লে’ক্স এর ভিতরে ঢুকে পরে।
সোহা দায়ানের পাশাপাশিই হাটতেছে।এই শপিং কম’প্লে’ক্স এর কথা অনেক শুনেছে।ইউটিউব এ ও দেখেছিলো।কিন্তু সামনা সামনি এই প্রথম।
চারদিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করেই কারো সাথে জোড়ে ধা’ক্কা খায়। পরে যেতে যেতে নিজেকে অনেক ক’ষ্টে বাঁ’চি’য়ে নেয়। সামনে তাকিয়ে কিছু বলতে নিবে,,,তার আগেই কোনো মেয়ের ক’ন্ঠে আ’গ’ত বাক্য শুনে স্ত’ব্ধ হয়ে যায়। চোখ দিয়ে স্রো’ত ধারা বয়ে চলে নিরবে।
#চলবে,,,,,,