#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ২১(বোনাস)
#Jhorna_Islam
দায়ানের জ্বরের ঘুরে বলা কথা গুলো শুনে সোহা স্থ’ব্ধ হয়ে রেয়েছে।গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করতেছে। কেন উনি আমাকে ভালোবাসেন না।উনি কেন অন্য কাউকে ভালোবাসেন?
এখানে আর থাকা সম্ভব হচ্ছে না।এখনই নিজের রুমে গিয়ে কেঁদে নিজেকে হালকা করতে হবে।নয়তো দ/ম বন্ধ হয়ে যাবে।
তাই নড়েচড়ে দায়ানের বাধন থেকে ছোটার চেষ্টা করে। কিন্তু দায়ানের বাঁধন থেকে ছোটা এতোই কি সোজা।দায়ানের মতো এতো শক্ত সামন্ত পুরুষের থেকে এতো সহজে ছোটা সম্ভব না কখনো না। দায়ান যদি না চায় তাহলে সোহার ছোটা অসম্ভব এই হালকা পাতলা শরীরে এতো শক্তি নেই।
সোহার এতো নড়াচড়া তে দায়ানের ঘুমে ব্যা’ঘাত ঘটে।বিরক্ত তে চোখ মুখ কোচকে ফেলে।
ঘুমু ঘুমু চোখে মাথা টা একটু উঠিয়ে সোহার দিকে তাকায়। কি সমস্যা তোমার? এমন করতেছো কেনো? ঘুমুতে দেও।এতো নড়াচড়া করতেছো কেনো।চুপচাপ ঘুমাও না।আর আমাকেও ঘুমোতে দেও।কতোদিন হয়ে গেলো শান্তি তে ঘুমোতে পারি না।
“প্লিজ ডোন্ট ডিসটার্ব। ” বলেই দায়ান হাতের বাঁধন শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সোহাকে।
সোহা দায়ানের ঘুমু ঘুমু কন্ঠে এসব কথা শুনে স্থির হয়ে যায়।কি বলছে লোকটা জ্বরের ঘোরে নিজেও জানেনা।
সোহা দায়ানের দিকে ঘার ঘুড়িয়ে ভাবতে থাকে,,, এই লোকটাকে ছেড়ে আমি কি করে থাকবো? আমি পারবো না উনাকে ছেড়ে থাকতে।কখনো পারবো না।
আমি উনাকে কেনো ছাড়বো কখনো ছাড়বনা।ছাড়ার প্রশ্নই আসেনা।উনিতো বললেনই উনি ঐই মেয়ে না কাকে এখন ঘৃণা করে। আর ঐসব তো অতীত।এরকম অতীত এখন প্রায় সবারই আছে।উনারো থাকতেই পারে।ঐসব নাটক সিনেমার মতো আমি আমার স্বামীর অধিকার কাউকে দিবো না।
আমি উনার বিয়ে করা বউ। এখন শুধু আমার অধিকার। আমাদের বৈধ সম্পর্কের জোরে আমি উনাকে আমার কাছে বেধে রাখবো।
উনি নিশ্চই এখনো অন্য কাউকে ভালো বাসলে আমাকে নিয়ে করতো না।যে যাই বলুক উনি না চাইলে উনাকে কেউ জোর করে বিয়ে করাতে পারতো না।উনি চেয়েছিলেন উনার জীবনে কেউ আসুক।তাই আমি এসেছি।
সোহা মাথাটা উচু করে দায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,, এই যে জামাই জান আপনি শুধু আমার বুঝলেন।অতীতে যেই রঙ,ঢঙ ই করেন না কেনো।এখন সব বন্ধ। আপনার মনে ভালোবাসা জাগাবো নতুন করে আমার জন্য।
শুনছেন আমার কথা? বলেই দায়ানের গালে চুমু খায়। আবার নিজে নিজেই হাসে।দেখো কি নিশ্চিন্তে শান্তির ঘুম ঘুমোচ্ছে লোকটা।আচ্ছা যদি জানতো আমি উনাকে চুমু খেয়েছি তাহলে কি করতেন উনি? নিশ্চই খুব রা’গ করতো।
সোহা নিজেই এবার সব জড়তা বাদ দিয়ে,, দুই হাত দায়ানের পিঠে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
দায়ান সোহার আলিঙ্গন পেয়ে আরো কাছে এসে ঘুমিয়ে যায়।
সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে রয়।এই যে বর মশাই আপনিতো আমাকে জড়িয়ে ধরে আরামে ঘুমুচ্ছেন।আমারতো আর ঘুম আসবে না আজ। সব সময় তো ঘুমিয়েই রাত পার করি। আজ না হয় আমার জা’ন টারে দেখেই রাত কাটিয়ে দিবো।
কবে না কবে আবার এমন সুযোগ পাবো কে জানে।আপনি যেই মু’ডি। তাই সুযোগ যখন পেয়েছি আপনাকে কাছ থেকে দেখার তাই আর হা’ত ছাড়া করবো না।
একজন মনের মানুষকে প্রান ভরে দেখতে ব্যস্ত। আরেকজন শান্তির ঘুম ঘুমোতে ব্যস্ত।
সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে নিজেও জানেনা। সকাল বেলা জানালার ফাঁক দিয়ে আসা রোদের আলোতে ঘুম ভেঙে যায় সোহার।
ঘুমে ব্যা’ঘা’ত ঘটলে কারই বা ভালো লাগে।সোহা বিরক্ত হয়ে চোখ পিট পিট করে চোখ খুলে তাকায়।বাইরে মানুষ জনের আওয়াজ শুনা যায়।
সোহা এবার ঘাড় ফিরিয়ে দায়ানের মুখের দিকে তাকায়। দায়ান এখনো ঘুমুচ্ছে।হাত দিয়ে দায়ানের কপাল চেক করে। নাহহ জ্বর এখন বেশি নেই। কপালটা হালকা গরম।
ঔষধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।
এখন এখান থেকে যে করেই হোক কেটে পরতে হবে। নয়তো দায়ান উঠে গেলে সব শে’ষ।
ঘুমের ঘোরে দায়ানের হাতের বাঁধন আলগা হয়ে গেছে। সেই সুযোগে সোহা আস্তে করে খুব সাবধানে বেড়িয়ে আসে দায়ানের বাধন থেকে।
বিছানা থেকে নেমে নিজের গায়ে ওড়নাটা ভালো করে জড়িয়ে নেয়।যাওয়ার জন্য হাঁটা দিতেই কিছুর সাথে হোঁচট খায়।যাতে করে শব্দের সৃষ্টি হয়।
সোহা চোখ বন্ধ করে। না জানি উনি জেগে গেছে। দায়ানের দিকে আস্তে করে তাকায়।দায়ান হালকা করে নড়ে আবার ঘুমিয়ে যায়। সোহা স্বস্থির নিশ্বাস নেয়। মেঝে তে পরে থাকা বাটি আর কাপড় টা উঠিয়ে নেয়।নিচে পরে থাকা পানি গুলো একটা কাপড় দিয়ে মুছে নেয়।
রুম থেকে বেরিয়ে এসে ফ্রেশ হয়ে আসার জন্য নিজের রুমে ঢুকে যায়।ফ্রেশ হয়ে আবার উনার জন্য রান্না করতে হবে।অনেক বেলা হয়ে গেছে।খাইয়ে ঔষধ খাওয়াতে হবে। নয়তো আবার জ্বর আসবে।লোকটা যা কান্ড করলো জ্বরে।
—————————————-
রান্না সেরে সোহা দায়ানের রুমের দিকে এগোয়। উঠিয়ে ফ্রেশ হতে বলে,,তারপর খাবার নিয়ে গিয়ে খাইয়ে দিবে।
দায়ান মাত্রই ঘুম থেকে ওঠেছে।উঠার মতো শক্তি পাচ্ছে না। হাত পা কেমন ম্যা’জ ম্যা’জ করছে।খুব কষ্টে উঠে বসে।
তখনই সোহা এসে রুমে ঢুকে।
উঠে গেছেন আপনি? আমি আপনাকেই ডাকতে এসেছিলাম।ভালো হয়েছে উঠেছেন।যান গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসেন।
দায়ান সোহার দিকে তাকায়। কাল জ্বরের ঘোরে কি করেছে কিছুই মনে করতে পারছেনা সব ঝাপসা।
–কাল তুমি আমার রুমে এসেছিলে?
— হুম। জ্বরে তো গা পুড়ে যাচ্ছিলো। আমি এসে জলপট্টি দিয়েছি।শরীর মুছে দিয়েছি।
দায়ান শরীর মুছে দেওয়ার কথা শুনে,,নিজের দিকে তাকায়।নিজের শরীরে টি-শার্ট না দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে সোহার দিকে তাকায়। তুমি আমার শার্ট খুলেছো?
–হুম কেনো?
— হোয়াট!
— এতো চিললানোর কি আছে?
— চিল্লাবোনা তো কি করবো? তুমি আমার পার্মিশন ছাড়া আমার শার্ট চেঞ্জ করেছো।
— তো কি হয়েছে?
— কি হয়েছে মানে,,,জানোনা কি হয়েছে?
— এমন ভাব করছেন যেনো আমি আপনার ই’জ্জ’ত হ’রণ করেছি।হুহ
— এর থেকে কম কি করেছো মেয়ে।
— এজন্য মানুষের ভালো করতে নাই।যার জন্য করলাম চু’রি সেই বলে চো’র।
— ওটা চো’র না চু’ন্নি হবে।
— আপনি এটা আমায় বলতে পারলেন? আপনার বু’ক টা একটুও কাঁপলো না?
— মুখে বলেছি বু’ক কাঁপবে কেনো? আশ্চর্য!
— হয়েছে হয়েছে। থামেন এবার।ফ্রেশ হয়ে আসেন আমি খাবার আনছি।
দায়ান উঠে দাঁড়ায় বাথরুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।এক পা হাঁটা দেওয়ার পরই মাথাটা কেমন চ’ক্কর দিয়ে উঠে।ব্যালেন্স রাখতে বেডের পাশের আলমারি ধরে।
দায়ানকে এমন করতে দেখে সোহা এসে দায়ানকে ধরে।
আপনি কি বলুন তো আমায়।মাথা ঘুরে যদি এখন পরে যেতেন কি হতো? আমায় বলতে পারলেন না,,বলে সোহা দায়ানকে ধরে ওয়াশরুমের ভিতরে দিয়ে আসে।
আপনি ফ্রেশ হয়ে আসেন আমি ওয়াশরুমের বাইরেই আছি।
দায়ান ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসে। সোহা দায়ানকে ধরে নিয়ে বেডে বসিয়ে দেয়।দায়ানের হাত মুখ মোছা হয়নি এখনো।
সোহা নিজের ওড়না টা দিয়ে দায়ানের মুখ হাত মুছে দেয়।
— ওড়না দিয়ে কেনো মোছতেছো? আজব টাওয়াল আছে না।
— থাকুক। আমি এইটা দিয়েই মোছবো।
— এইটা হাত পা মুখ মোছার জন্য নয় বুঝলে? সব কিছুই একটা নির্ধারিত কারণে তৈরি করা হয় ওড়নার একটা নির্ধারিত কারণ রয়েছে। ঐটা হাত পা মোছার জন্য নয়।গায়ে জড়ানোর জন্য।
— সে যেই কারণই থাকুক।আজ থেকে আমার ওড়না কে আপনার সেবায় নিয়োজিত করে দিলাম।
আজ থেকে আপনার হাত,পা,মাথা,মুখ সব আমার ওড়না দিয়েই হবে।
টাওয়াল আপনার জন্য আমি নিষিদ্ধ করে দিলাম।
” তবে মনে রাখবেন এই কাজ শুধু আমি আমার ওড়না দিয়ে করবো।” অন্য কেউ না।
— দায়ান শুধু ড্যা’প ড্যা’প করে সোহার দিকে তাকিয়ে রয়।
কিন্তু,,,,,,,,,,,,,,
— কোনো কিন্তু না।কেনো আপনার ভালো লাগেনা? আমার ওড়না দিয়ে এই কাজ গুলো করলে?
দায়ান এবার চুপ হয়ে যায়।কি বলবে সে? বলার মতো কিছু রেখেছে এই মেয়ে।কেমন কথার পেঁচে ফেলে দিলো।
মনে মনে দায়ান বলে,,,,ভালো লাগে না মানে?খুব ভালো লাগে।প্রতিদিন এই কাজ গুলো করে দিলে খুবই ভালো হয়।আমার করতে একদমই ভালো লাগে না। তুমি এই কাজগুলো করার দায়িত্ব নিয়ে নাও প্লিজ।
তাহলে আমার বিরক্ত ও লাগবেনা।তোমার ওড়না থেকে মিষ্টি ঘ্রাণ টা আমি প্রতিদিন উপভোগ করতে পারবো।
আবার নিজের মন কে বুঝ দেয়।এসব কি বলছিস দায়ান? তর মাথা ঠিক আছে তো? কি সব বলছিস।এই আধা পা/গল মেয়েটার সাথে থাকতে থাকতে আমিও পা/গল হয়ে যাচ্ছি উফফ।
এই কথা গুলো যদি এই মেয়ে শুনতো,, তাহলে আকাশে উড়ে বেড়াতো।
দায়ানের আ’বোল’তা’বোল ভাবার মাঝেই কখন যে খাবার আনতে গিয়ে,আবার খাবার নিয়ে রুমে এসে পরেছে বুঝতেই পারেনি দায়ান।
সোহা খাবার দায়ানের মুখের সামনে ধরে,,,নিন খান বলার পর দায়ানের হুঁশ আসে।
নিজেকে স্বাভাবিক করে সোহার হাত থেকে প্লেট টা নিয়ে বলে,,,আমাকে দাও। আমি নিজেই খেতে পারবো।
কিন্তু আপনি কাটা হাতে খাবেন কি করে?
চামচ আছে কি করতে?
বলেই টেবিলে থাকা বাটি থেকে চামচ উঠিয়ে নেয়।
সোহা দায়ানের কান্ড গুলো দেখছে।হুহ নিজের কাটা হাতে খাবে ঢং!
দায়ান অনেক চেষ্টা করেও ডান হাতে চামচ ধরবে দূরে থাক।আঙ্গুল ই সোজা করতে পারছে না।ব্যাথায় ট’নট’ন করছে।
কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে বাম হাতে চামচ দিয়ে খাবার উঠিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করে। বাম হাতে কি খাওয়া যায় নাকি? প্লেট থেকে কোনোভাবে খাবার উঠাতে পারছেনা চামচ দিয়ে। অল্প উঠাতে পারলেও বার বার হাত কেঁপে কেঁপে পরে যাচ্ছে।
সোহা দায়ানের কান্ড দেখে হেসে দেয়।
সোহার হাসি দেখে দায়ান রা’গী চোখে তাকায়।
সোহা দায়ানকে পাত্তা না দিয়ে আবার খাবার নিয়ে দায়ানের মুখের সামনে ধরে।
বুঝলেন এই দুনিয়ায় ভালো মানুষের কোনো দা’ম নাই।
তাতে আমার কী? আমিতো বিরিয়ানি খাবো।তাও আমার জামাইর হাতে বানানো।
#চলবে,,,,,,