তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব ২৯

0
1697

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ২৯(বোনাস)
#Jhorna_Islam

সোহার বাবা দায়ানের কল পেয়ে কি যে খুশি হয়েছে।সোহার মা শুধু লোকটার কান্ড দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।

রমিলা আমার কিযে খুশি লাগতাছে রমিলা।আমি তোমায় কি করে বোঝাই। আমার ছোটো আব্বা আমারে ফোন দিছে।তুমি ভাবতে পারতেছো? আমারে ফোন দিছে।

আমাদের খুঁজ খবর নেওয়ার জন্য। আমাদের কথা কতোটা ভাবে দেখো।মেয়েকে না জানিয়েই আমাদের খোঁজ খবর নিচ্ছে। বড় জামাইটা তো এক দিন ও ভুলেও আমার ফোনে কল করেছে কিনা বলতে পারবো না রমিলা।খোঁজ খবর নেওয়া তো দূরের কথা। আমার আজ আনন্দ লাগতেছে।আমার ছোটো আম্মা ভালো আছে।জামাই খারাপ থাকতে দিবোই না বুঝে গেছি আমি।

সোহার মা হাসে।হুম এবার ঘুমান অনেক রাত হইছে।

হুম।

——————————————

দায়ান একই ভঙ্গিতে বসে আছে।

দরজায় জমেলা খালা এসে কড়া নারে।ঐ খান থেকেই বলে উঠে,, বাবা আপনাদের জন্য শরবত আনছি।

দায়ান ভাঙা গলায় বলে খাবনা খালা। তুমি ডাইনিং টেবিলে রেখে যাও।আর তুমি এখন গিয়ে রেস্ট নাও।আজ তোমার কিছু করা লাগবে না।

জমেলা খালা আর কথা বাড়ায় না।চলে যায়।দায়ানের কথা না শুনলে আবার রে’গে যাবে।যেই রা’গী।

চলে যাওয়ার আগে বলে যায়।বাবা আমি সব রান্না করে দিয়ে গেছি।কিছুই করতে হবে না।টেবিলে ঢাকনা দিয়ে রেখে গেলাম খাবার।বৌমাকে নিয়ে খেয়ে নিও।এমনিতেই অনেক রাত হয়ে গেছে। আর বেশি রাত করো না।ঠান্ডা হয়ে গেলে খাবার খেতে ভালো লাগবে না।

তোমার বৌমাকে কোথায় পাবো খালা বলতে পারো আমায়? তাকে তো খুঁজে পাচ্ছি না।সেতো আমায় ভুল বুঝে কোথায় হাড়িয়ে গেলো।

না না এমনি বসে থাকলেতো হবে না।আমার তো খুঁজতে হবে সোহাকে।যে করেই হোক খুঁজে বের করতে হবে।হাওয়াতো হয়ে যেতে পারে না।

কোথায় আছো তুমি সোহা? আই হোপ তুমি সুস্থ আছো।তোমার যেনো কিছু না হয়।

এভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না।খুঁজতে হবে।এভাবে তো খুঁজে পাওয়া সম্ভব ও না।

পরোক্ষনে পুলিশের কথা মাথায় আসে।পুলিশ স্টেশনে যেতে হবে।এভাবে খোজলে পাওয়া যাবে না।

ভেবেই উঠে দাঁড়ায়। আলমারির কাছে গিয়ে মানি ব্যাগে আরো কিছু টাকা ভরে নেয়। ক্রেডিট কার্ড ভরে নেয়।

টাকা লাগবে।টাকা ছাড়া কিছুই হবে না।বর্তমানে টাকা ছাড়া কেউ এক পা ও এগোয় না।টাকা নাকি সব পারে।

রুম থেকে বের হতে নিবে তার মধ্যেই দায়ানের মাথা চক্কর দিয়ে উঠে। মাথা ধরে দায়ান তারাতাড়ি খাটে গিয়ে বসে।সারাদিন না খাওয়ার ফলে হয়তো এমন হয়েছে।সারাদিন পেটে এক গ্লাস পানি ও পরে নি।চ’ক্ক’র দেওয়াটাই স্বাভাবিক। তার উপর এতো দৌড়াদৌড়ি। এতো টেনশন।হাত টা ও বাজে ভাবে কেটে আছে।ড্রেসিং করার ও যেনো সময় নেই। একটা রুমাল পেচিয়ে রেখেছে। সময় নেই নাকি ইচ্ছে নেই বুঝা গেলো না।হয়তো নিজেকে এটা একটা ছোটো শাস্তি দেওয়ার প্রয়াস মাত্র।

নিজের এরকম পরিস্থিতি দেখে দায়ান বোঝে গেলো,,একা কিছুই করতে পারবে না অর্ধেক রাস্তা যেতে পারবে কি না সন্দেহ।

সবকিছু ভেবে রুশকে ফোন লাগায়।রুশই একমাত্র ভরসা এখন।আর কেউ নেই।

————————————

দায়ান রুশকে একের পর এক ফোন দিতেই আছে। কখনো বলছে বিজি,কখনো বা রিং হচ্ছে ঐ পাশ থেকে নো রেসপন্স।

কাম অন রুশ পিক আপ দা ফোন।পিক আপ দা ফোন প্লিজ ইয়ার।

অনেকবার কল করার পর ঐ পাশ থেকে রুশ কল রিসিভ করে।

দায়ান রুশকে কিছু না বলতে দিয়ে নিজেই বলতে শুরু করে

হোয়ার আর ইউ রুশ? কখন থেকে কল দিতেছি তোকে? রিসিভ কেনো করতে ছিলিনা ড্যা’ম? রা’গে দাত কিরমমির করে বলে উঠে দায়ান।

রুশ বলে,,,,আমি এখন বিজি আছি দায়ান পরে কথা হবে।
কাল কথা বলি? আমার একটু রেস্ট ও নেওয়া লাগবে।সারাদিন অনেক ধকল গেছে।

গো টু হে’ল ইউর বি’জি এন্ড রেস্ট। আমার সাথে এখনই দেখা কর।খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।

কিন্তু,,,,,,,

কোনো কিন্তু না প্লিজ ইয়ার আই নিড ইউর হেল্প।

রুশ একটা দীর্ঘ’শ্বাস ফেলে। এখন না গিয়ে কোনো উপায় নেই।যেতে হবেই। এই ছেলেটা এতো জে’দী এখন না গেলে, বাড়িতে এসে উঠিয়ে নিয়ে যেতেও দুই বার ভাববে না।দায়ান যেইটা বলে সেইটাই শুনতে হবে।

— ঠিক আছে আমি আসছি।

— থেংকস দোস্ত থেংক ইউ সো মাচ।তুই ওয়েট কর আমি তোকে বাড়ি থেকেই পিক করবো।

— ন-না না তার দরকার নেই। তুই বড় রাস্তার মোড়ে আয়।আমি আসতেছি।

— ওকে বলেই দায়ান তারাতাড়ি বের হয়ে যায় । যাওয়ার সময় দরজাটা ও লাগাতে ভুলে যায়।

রুশ আস্তে ধীরেই রাস্তার মোড়ে আসে।এসে সামনে তাকিয়ে অবাক।দায়ান গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুশ মনে মনে বলে উঠলো এতো ফাস্ট?

— কিরে কি হয়েছে?

— দোস্ত এখন এতোসব বলার সময় নেই। চল আমার সাথে।

— আরে কোথায় যাবি সেটাতো বল।

— সোহা কে খুঁজে পাচ্ছি না ইয়ার।পুলিশ স্টেশনে যাবো।এবার চল আর একটা প্রশ্ন ও করবিনা।

রুশ দায়ানের দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসে।

দায়ান ও গাড়িতে বসে গাড়ি চালাতে শুরু করে।

————————————

পুলিশ স্টেশনে এসে দায়ান রুশকে রেখে দৌড়ে ভিতরে ঢুকে যায়। রুশ ও দায়ানের পিছন পিছনে যায়।

দায়ান গিয়ে এসিপির সাথে কথা বলে। সব শুনে উনি আরেকটা অফিসার কে দেখিয়ো দেন। মিসিং ডায়রি লিখানোর জন্য। যেহেতু চব্বিশ ঘন্টা হয়ে গেছে। উনার একটু কাজ আছে।

দশ মিনিট পর ই আমি এসে পরবো।ততোক্ষণে আপনারা মিসিং ডায়রি টা লিখান।বলেই এসিপি চলে যায়।

দায়ান অন্য অফিসারটার কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পরে। মিসিং ডায়রি লিখানোর জন্য। রুশ পাশেই চুপচাপ দাড়িয়ে রয়।

অফিসারটা লিখতে লিখতে ক’টাক্ষ করে বলে,,,কি সাব? হুদাই এসব করে পেরা নিতাছেন।এসব কে’স তো আর কম দেখিনাই।দেখেন হয়তো কোনো প্রেমিকের সাথে প’লায় গেছে।আপনা কে দিয়ে পো’ষা’য় না বলে।বলেই একটা বি’শ্রী হাসি দেয় অফিসারটা।

দায়ানের মাথায় যেমন র/ক্ত চেপে বসে।এই অফিসার মুখ সামলে কথা বল।বলেই উঠে চ’ড় লাগাতে যায়।তার আগেই রুশ আটকে দেয়।দায়ান কে পেচিয়ে ধরে রাখে।

অফিসার টাও রে’গে দাড়িয়ে যায়।তোর এতো বড় সাহস।তুই আমার গায়ে হাত তুলতে আসিস? তর কি হা’ল করবো জানিস? তকে এখনি জে’লে ভ’রে দিবো।

তুই আরেকবার আমার ওয়াইফের নামে কিছু বল।তারপর আমার সাহস দেখবি।

রুশ দায়ানকে বলে শান্ত হো দোস্ত প্লিজ।

ততোক্ষনে এসিপি এসে পরে।এতো হইচই দেখে জানতে চায় কি হয়েছে।

রুশ সব খুলে বলে।সব শুনে এসিপি ও অনেক রে’গে যায়।অন্য অফিসার টা কে ধমক দিয়ে ঐখান থেকে তাড়িয়ে দেয়।তারপর নিজে সব কাজ সম্পন্ন করে।দায়ানকে আশ্বস্ত করে।যে তারা তাদের যথা স্বা’দ্ধ চেষ্টা করবে খোঁজার।

রুশ দায়ানকে নিয়ে পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসে।

তারপর দায়ান রুশকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজতে থাকে।কোথাও পায় না।

দেখতে দেখতে আরো একটা দিন কেটে গেলো।দায়ান সোহাকে তন্ন তন্ন করে খুজে চলেছে পায় না।

রুশ এর মধ্যে বাড়ি থেকে এসে দায়ানের গাড়ি তে গিয়ে বসে সোহাকে খুজার জন্য।

— দোস্ত কিছু খেয়ে নে আগে।তোকে ঠিক লাগছেনা।কাল কতো জোড় করে শুধু মাত্র একটা রুটি খাওয়াতে পেরেছি।অসুস্থ হয়ে যাবি।

— আমার গলা দিয়ে কিছু নামবেনা দোস্ত। আই নিড সোহা।এনে দিবি দোস্ত এনে দেনা।দেখ আমার এখানে কষ্ট হচ্ছে। বুকের বাম পাশে দেখিয়ে। বাবা মা মারা যাওয়ার পর এই প্রথম আমার এতো কষ্ট হচ্ছে। কেন হচ্ছে বলনা? মেয়েটা কখন আমার এতো আপন হয়ে গেলো।কতো অবহেলা করেছি তাও মুখ বুঁজে সব সহ্য করে নিয়েছে।দোস্ত এনে দিতে পারবিরে আমায়? বলেই দায়ান চোখ বন্ধ করে গাড়ির সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে।

রুশ স্পষ্ট লক্ষ করতে পেরেছে দায়ানের চোখের পানি চিকচিক করছে। এই কয়দিনে কি হা’ল করেছে নিজের।বেচা’রা বুঝতেই পারতেছে না সোহাকে কতোটা ভালোবেসে ফেলেছে।

দায়ানের অবস্থা দেখে রুশ আর চুপ থাকতে পারলোনা।

“দোস্ত সোহা আমার কাছে আছে।আই মিন আমার বাড়িতে।”

কি বললি তুই বলেই দায়ান রুশের দিকে তাকায়।

রুশ মাথা নাড়িয়ে যানায় যে সত্যি বলছে।

সাথে সাথে রুশের নাক বরাবর ঘু’ষি মেরে বসে দায়ান।শা*লা আমি এইদিক দিয়ে আধম’রা হয়ে গেছি।আর তুই সব জেনে তা’ম’শা দেখলি।বলেই আরেকটা লাগাতে যায়।

রুশ ও নাকের থেকে হাতটা সরিয়ে দায়ানের হাত ধরে ফেলে। রা’গে চিললিয়ে বলে কি করতাম আমি? কি অবস্থা তে ওরে পাইছি তোর কোনো আইডিয়া আছে?

ঐদিন পার্টিতে যেতে আমার একটু লে’ট হয়ে গিয়েছিলো। রাস্তায় পা/গলের মতো এই বৃষ্টিতে দৌড়াচিছলো।আরেকটুর জন্য আমার গাড়ির নিচে পরে নি। বৃষ্টিতে ভিজে শ্বাস বেরে গিয়েছিল। হসপিটালের নিয়ে যেতে হয়েছে।একদিন ঐ খানে ছিলো। এখনো ঠান্ডায় মেয়েটার অবস্থা বে’হা’ল। গলা বসে গেছে। তোকে ফোন করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু সোহা দেয়নি। তার থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম।তুই কিছু একটা ঘটিয়েছস। আমাকে ভাই ডাকছে মেয়েটা।আমিও নিজের বোনই ভাবি।কে তার বোনের এমন কষ্ট সহ্য করতে পারতো বল আমায়?

দায়ান সব কথা শুনে চোখ বন্ধ করে রাখে।

তাও তোর আমায় বলার দরকার ছিলো।তারপর রুশকে ঐ দিনের পুরো ঘটনা খুলে বলে।তিশার কথাও।রুশ তিশার ব্যাপারে আগে থেকেই সব জানে যেহেতু।

সব শোনে রুশ দায়ানের দিকে অপ’রা’ধীর মতো তাকায়।মিনমিনিয়ে বলে স’রি দোস্ত।

দায়ান রুশের দিকে তাকিয়ে বলে তোর স’রির গু’ষ্টি কি’লাই। আগে তোর বোনের ব্যবস্থা করি তারপর তোকে দেখেনিবো শা*লা।

একদম আমার বোনকে কিছু করবিনা।তাহলে তোর কাছে যেতে দিবো না।

হুহ আসছে বোনের চা’ম’চা। বলেই রুশের বাড়ির দিকে গাড়ি ঘোরায়।

————————————

রুশদের বাড়ির সামনেও ছোটো একটা বাগান আছে। সেখানে সোহা মন খারাপ করে বসে আছে।কিছু সময় পর পর কাশি উঠছে।মনটা খুব খারাপ দায়ানের বলা কথা গুলো কাউকে বলেনি। দায়ানকে দেখতে খুব ইচ্ছে করতেছে।

মন খারাপ করে বাগানের শিউলি গাছের নিচ থেকে বসে বসে ফুল কুড়িয়ে এনেছে।মালা গাথে আর ভাঙা গলায় আস্তে আস্তে গান ধরে।

সে যে কেনো এলো না কিছু ভালো লাগে না,
এবার আসুক তারে আমি মজা দেখাবো।
যদি ফুল গুলো হায়,অভিমানে ঝড়ে যায়।
আমি মালা গেথে বলো কারে পরাবো?

আর গাইতে পারে না।কাশি উঠায় কাশতে থাকে।ঠিক তখনই পাশে এসে কেউ একজন বসে।

তোমার পাশে এতো বড় একটা জল’জ্যা’ন্ত মানুষ বসে আছে।তোমার হাত থেকে মালা পরার জন্য। আর তুমি তাকে দেখতেই পাইতেছো না? দিজ ইজ নট ফ্যা’য়ার বউ।

#চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here