তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব ২

0
3180

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ২
#Jhorna_Islam

চারিদিকে শুনশান নীরবতা। কেমন কোলাহলহীন। মজার বিষয় হলো কারো কাছে এই নিরবতাটা উপভোগ্য বিষয়।আর কারো কাছে গা কা’টা দেওয়ার মতো।

দায়ান তার অফিস রুমে বসে গভীর চি’ন্তায় ব্যস্ত।বুঝতে পারে সোহার সাথে বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে।তারই বা
কি করার আছে।সে চায়নি তার এই অভি’শপ্ত জীবনে কাউকে জড়াতে। এই তী’ক্ত জীবন থেকে নিজেই তো মু’ক্তি চায়। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল।আসলে মানুষ যেইটা না চায় প্রকৃতি মনে হয় উঠেপরে লাগে ঐটাই ঘটানোর জন্য।

তার উপর গত কয়েকদিন ধরে মেজাজ চড়াও হয়ে আছে।বিজননেসে একশ পারসেন্ট নিশ্চিত হয়ে যাওয়া ডিল গুলো হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এতো নিরাপত্তার পরও অফিসের ইনফরমেশন বাইরে লি’ক হচ্ছে। কেউ যে পিঠ-পিছে চা’ল চালতেছে বুঝতে পারতেছে। জাস্ট আর কয়েকটা দিনের অপেক্ষা বিশ্বাস ঘা/তকতার শাস্তি কি করে দিতে হয় দায়ান ভালো করেই জানে।এসব ভাবনার মধ্যেই দায়ানের ফোনটা বেজে ওঠে _____

– হ্যা রুশ বল।(দায়ানের খুবই কাছের বন্ধু+ পি.এ)

– স্যার এইদিকের কাজ সব শেষ। মিটিং টা সাকসেস হয়েছে।
– তোকে কতো বার বলেছি আমাকে স্যার বলবিনা।
– অভ্যাস হয়ে গেছে দোস্ত।

– তুই কোনোদিন ও শুধরাবিনা।আর শুনে খুশি হলাম ডিলটা আমরা পেয়েছি।আমি সঠিক মানুষকেই দায়িত্বটা দিয়েছি।

কথা বলার মাঝখানেই দরজায় কেউ নক করে।

কামিং বলেই আবার কথায় মনোযোগ দেয় দায়ান।সামনে তার অফিসের ম্যানেজার লিমন সাহেব এসে দাড়ায়।রুশের সাথে কথা শেষ করে। ম্যানেজার থেকে জানতে চায়,,,, যা যা ইনফরমেশন কালেক্ট করতে বলেছিলাম করেছেন?

স্যার আরেকটু টাইম লাগবে।”

ওকে।নেন তবে সঠিক ইনফরমেশন যেনো পাই।

জী স্যার,,, বলেই ম্যানেজার সাহেব বের হয়ে যান।
দায়ান আবার কাজে মনোযোগ দেয়।

———————-
পা টিপে টিপে বাসায় প্রবেশ করে সোহা।সবগুলো আলো জালিয়ে স্ব’স্তির নি’শ্বাস নেয়। হাত পা ধুয়ে নামাজ পড়ে নেয়।এখন রাতের খাবার রান্না করা দরকার। ভাবতেই রান্না ঘরের দিকে আগায়।
দায়ানের জন্য কি রান্না করবে ভাবতে লাগলো।সকালে যা ট্রেইলর দেখাইলো।রাতের খাবার মন মতো না হলে পুরা মুভি দেখাবে বুঝতে আর বাকি নেই।

রাতের জন্য ভাতটাই উপযুক্ত বলে মনে হলো।আগে চাল ধুয়ে ভাত বসায় দিল।ফ্রিজ থেকে ইলিশ মাছ নিয়ে শর্ষে ইলিশ রান্না করলো।সাথে ডাল,, রান্না করা খাসির মাংস ছিল ঐটা গরম করলো। সবই দায়ানের জন্য সোহা এসব খাবার তেমন একটা খায় না।নিজের জন্য সীমের ভর্তা করলো ঝাল ঝাল।

সব রান্না শেষ করে খাবার ডাইনিং এ সাজিয়ে রাখলো।কিছুক্ষন ভেবে খেতে বসে পরলো।দায়ান জীবনেও সোহার সাথে খাবে না।তাই অপেক্ষা করে লাভ নেই।খেয়ে ঘুমিয়ে পরাই ভালো।খাওয়া শেষে সব কিছু গুছিয়ে ঢাকনা দিয়ে রেখে দিল। খাওয়ার পর শরীর টা যেনো ক্লান্ত হয়ে গেছে আরো।চোখ আপনা আপনি বুঁজে আসছে।তাই আর দেরি না করে শুয়ে পরলো।শুয়ার সাথে সাথেই চোখে ঘুম পরিরা এসে ভর করলো।
_____________________
দায়ান রাত দশটার দিকে অফিস থেকে বের হয়েছে। পথে জ্যাম থাকায় আসতে বারোটার কাছাকাছি বেজে গেছে।দরজার সামনে এসে ভাবলো কলিং বেল বাজাবে।আবার কি মনে করে নিজের পকেট থেকে একস্ট্রা চাবি দিয়ে লক খুলে ভিতরে ঢুকে।পুরো বাড়ি শুনশান নীরবতা। দায়ান চারদিকে চোখ বুলালো হয়তো সোহাকে দেখার আশায়।কিন্তু কারো কোনো চি’হ্ন ও দেখা গেলোনা। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে।

নিজের রুমে ঢুকে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে।প্রচুর খিদে পেয়েছে।সকালে ঐ কান্ডের পর আর খাওয়া হয়নি।নানান ঝামেলায় খাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গেছে।

ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরের দিকে হাটা দিল। সকালে খাবার নিয়ে এমন করা উচিত হয়নি।এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। কে জানে মেয়েটা রান্না করেছে কিনা।জমিলা খালাটা ও বাড়িতে নেই।রান্না করে খাওয়ার মতো এনার্জি পাচ্ছে না।

রান্না ঘরে যাওয়ার টাইমে ডাইনিং এর দিকে চোখ যায় দায়ানের।অনেকগুলো প্লেট ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখা।কৌতুহল হয়ে ডাইনিং এ এগিয়ে যায়।ঢাকনা খুলে খাবার দেখে স্বস্থির নিস্বাস ফেলে।প্লেট নিয়ে দ্রুত খেতে বসে পরে।
একটা প্লেটে ভর্তা দেখে আর লোভ সামলাতে পারল না দায়ান। অনেকদিন এসব খাবার খাওয়া হয় না। লোভে পরে খেতে গিয়ে বুঝতে পারলো কি ভুল করেছে।নাক,মুখ লাল হয়ে গেছে।কান দিয়ে যেমন ধো’য়া বের হচ্ছে।

“এই মেয়ে মানুষ নাকি ডাকাত।বিরবির করে বলতে লাগে দায়ান।এমন ঝাল কি ভাবে খায়?”ভেতর দিয়ে সব জ্ব’লে গেলো।কান দিয়ে ধোঁ’য়া বের হওয়ার উপ’ক্রম। পানি খেতে খেতে জান শেষ।
আর সাহসে কুলোয় নি ভর্তা দিয়ে খাওয়ার।বাকি আইটেম দিয়েই খাওয়া শেষ করে।খাওয়া শেষে তৃপ্তির ঢেঁ’কুর তুলে। অনেকদিন পর এধরণের খাবার খেলো দায়ান।মেয়েটার রান্নার হাত ভালোই।খাওয়া শেষে রান্নাঘরে প্লেট গুলো নিজ দায়িত্বে ধুয়ে রেখে আসে।

নিজের রুমের দিকে দায়ান যাওয়ার টাইমে সোহার রুমের দিকে একবার তাকায়। মেয়েটা মনে হয় লাইট জালিয়েই ঘুমিয়ে গেছে।আশচর্য এতো আলোর মধ্যে ঘুমোয় কিভাবে? মনে মনে একবার ভেবেছিল মেয়েটাকে সরি বলবে পরে আবার মত বদলে ফেলে। ইগো এসে হানা দেয়। দায়ান ও আর কিছু না ভেবে রুমে এসে লাইট অফ করে শুয়ে পরে।

মাঝরাতে হঠাৎ করেই সোহা ধর’ফর করে ওঠে বসে।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।টেবিল থেকে পানির বোতল নিতে গিয়ে দেখে খালি।পানি আনতে মনে ছিলোনা।তাই বোতল নিয়ে রুম থেকে বের হয় পানি আনার জন্য।

হঠাৎ করে সামনে কিছু একটা দেখে সোহার আ’ত্না কেঁ’পে ওঠে।
আল্লাহ গোওও,,,,,,,,,,,, বলেই এক চিৎকার মারে।

দায়ান দৌড়ে গিয়ে সোহার মুখ চে’পে ধরে। এই মেয়ে আস্তে। এতো জোড়ে কেউ চেঁ’চায়? তোমার জন্যতো মাঝ রাতে নিজের বাসায় ই গণ ধোলাই খেতে হবে।এমনভাবে চেঁচাচ্ছো যেমন ডাকাত পরেছে।বলেই সোহার মুখ থেকে হাত সড়িয়ে একটু পিছিয়ে আসে দায়ান।

দায়ানের কল আসায় কথা বলতে বলতে সেও পানি নিতে এসেছিল। আর সোহা তাকে ভালো করে না দেখেই চিৎকার করে ওঠে।

সোহা মিনমিনিয়ে বলে আমিতো ডাকাত ই ভেবেছিলাম।

হোয়াট! বলেই এইবার দায়ান চেঁ’চিয়ে ওঠে।

এবার আপনি চেঁ’চাচ্ছেন কেন? এইবারতো আপনিই মানুষ জড়ো করে ফেলবেন।আর তাছাড়া মাঝরাতে তো চোর-ডাকাত আর তেনারাই ঘুড়ে বেড়ায়।

আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে? আর হোয়াট ডু ইউ মিন বায় তেনারা? এরা আবার কারা?

সোহা দায়ানের কাছে এগিয়ে যায়।হুসসস আস্তে বলেন।এতো রাতে জোরে তেনাদের নাম নিতে নেই।তারা কিন্তু আমাদের চারপাশেই আছে।বলেই সোহা এদিক ওদিক তাকাতে লাগে।

দায়ান তো পুরাই অবাক।এই মেয়ে বলে কি? এই তেনারাই বা আবার কারা?

-তেনাদের আপনি চিনেন না?

– নাহ। দায়ানের সোজা উত্তর।

– আসলেই চিনেন না?

– আরে নারে বাবা।কতোবার বলবো?

– কিন্তু আপনার তো চিনার কথা।

– মানে?

– মানে হলো আমিতো ভেবেছিলাম আপনি তাদের দলেরই লিডার।বলেই সোহা রুমের দিকে ভো- দৌড়।

– দায়ান অবাক হয়ে সোহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
কি বলে গেলো এই মেয়ে?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here