#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ১৭
#Jhorna_Islam
দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে আছে এখনো, সোহার তাকে ড্রাইভার বলা যেনো একদম ই বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না।
দায়ান কে সোহার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সোহা মিনমিনিয়ে বলে উঠে এমন ভাবে আমার দিকে তাকায় রইছেন কেনো? মনে হচ্ছে আজ আমায় প্রথম দেখছেন।চোখ সরান আমার লজ্জা লাগে।বলেই দুই হাতে নিজের মুখ ঢেকে ফেলল।
দায়ান এবার সোহার থেকে চোখ সরিয়ে নিলো মাঝে মাঝে মেয়েটার কথায় এমন রাগ ওঠে যা বলার বাইরে। অনেক কষ্টে নিজেকে নিজেই স্বান্তনা দেয়,,,,কনট্রোল দায়ান কনট্রোল এই পা/গল ‘ ছা/গলের কথা ধরে লাভ নেই।
দায়ান আর কথা বাড়ায় না চুপচাপ গাড়ি চালানো শুরু করে।
সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। এই লোকটা কে রাগাতে এতো ভালো লাগে।কি কিউট ইনা দেখা যায় যখন রাগে।তাই ইচ্ছা করে এসব আবোল তাবোল বলে দায়ান কে রাগায়।আর নিজের কাজে সফল ও হয়।লোকটা একটুতেই রেগে আ’গুন হয়ে যায়।
বিশ মিনিটের মধ্যেই দায়ান একটা বড় হাসপাতালের সামনে এসে গাড়ি থামায়।
দায়ান গাড়ি থেকে নেমে হাতে গাড়ির চাবিটা ঘোরাতে ঘোরাতে,,, সোহাকে চোখের ইশারায় নিজেকে ফলো করতে বলে হাসপাতালের ভিতর ঢুকে যায়।
সোহা ও দায়ানের ইশারা বুঝতে পেরে পিছনে দায়ান কে লক্ষ করে ভিতরে ঢুকে যায়।
— বলছি শুনোন না।পিছন দিক দিয়ে দায়ানের শার্টের নিচের অংশ টান দিয়ে।
— হোয়াট দা,,,,,! তুমি কি বাচ্চা মেয়ে হ্যা? এভাবে পিছন দিক দিয়ে শার্ট টানতেছো কেনো? দুই বছরের বাচ্চার মতো।
— আমার না একদম এখানে ভালো লাগতেছেনা।ভ’য় করতেছে।কি রকম গ’ন্ধ ব’মি আসতেছে।চলুন ফিরে যাই।
— চুপ,,,,,,,।
— কিসের চুপ? কোন চুপ টুপ না।চলেন এখান থেকে। আপনার ভালোর জন্যই তো বলতেছি।বোঝেন না কেনো? নিজের ভালোতো পা/গলেও বুঝে।
— আমার কিসের ভালো? ব্রু কোচকে জানতে চায় দায়ান।
— দেখেন এই হাসপাতাল টা দেখেই মনে হচ্ছে বড়লোকদের। এখানে ভিজিট ই কতো কতো টাকা হাতিয়ে নিবে আপনার থেকে।এখন যদি আমরা চলে যাই,,,তাহলে ভাবুন একবার আপনার কতো গুলো টাকা বেঁচে যাবে।মানছি আপনি বড় লোক মানুষ। তাই বলে ভেবে চিন্তা করে টাকা ভাঙবেন না? এভাবে টাকা ভাঙলে তো আপনার টাকা ফুরিয়ে যাবে।
— ওয়াও! এই না হলে তুমি আমার মিসেস।বিশ্বাস করো তোমায় পেয়ে আমি সত্যি অনেকককক গর্বিত।এরকম বউ যেনো প্রতিটা ঘরে ঘরে থাকে।
— প্রতিটা ঘরে ঘরে কি করে থাকবে? আমি ওয়ান এন্ড অনলি এক পিস ই।আর সেটা ভাগ্য গুণে আপনার ঘরে এসে পরেছে।
— তোমায় পেয়ে আমি সত্যি ধন্য।
— হু,,,,, আর শুনুন আমাকে হাসপাতালে আনলে আমার অসুখ এমনিই সেরে যায়।আপনাকে একটা বুদ্ধি দেই?
— চুপ করবে তুমি?
— আরে শুনুন না।আমি অসুস্থ হলে কি করবেন জানেন? হাসপাতালে নিয়ে আইসা একটা চক্কর দেওয়াইয়ে বাড়িতে নিয়ে চলে যাবেন।কারণ হাসপাতাল দেখলেই আমি একদম সুস্থ হয়ে যাই।
এবার বাড়ি চলুন আমার আর ডাক্তার দেখানো লাগবেনা।
এমনিতেই রাতে স্বপ্ন দেখেছি,,,দুই শুই একসাথে নিয়ে ডাক্তার আমায় ইনজেকশন দিচ্ছে। ওমাগো!
— দায়ান এবার মনে মনে বলে,,, ওহ এই ব্যাপার ম্যাডাম ইনজেকশন কে ভয় পায়।তাই এমন বাহানা দিচ্ছে এখান থেকে যাওয়ার।
গলা খেকারি দিয়ে সোহাকে বলে আহারে ইনজেকশনে ভয় পাও? আগে বলবানা আমায়।চিন্তা করো না এখানে দুই শুই একসাথে করে ইনজেকশন দেয় না।এক শুই ই দুই শুইয়ের সমান। সো চিল,,,,,,,,,,,।
সোহা শুকনো ঢুক গিলে উল্টে ঘুরে দাঁড়ায় বাইরের দিকে দৌড় দেওয়ার জন্য।
দায়ান বুঝতে পেরে খপ করে সোহার হাত ধরে ডাক্তারের ক্যাবিনে ঢুকে যায়। যেহেতু আগেই এপয়েনমেনট নেওয়া ছিলো,,আর দায়ানের সিরিয়াল ই প্রথম। তাই কোনো ঝামেলাই হয় না।
ক্যাবিনে ঢুকেও সোহা মোচড়া মোচড়ি করেছে বের হয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু দায়ানের শক্তির সাথে পেরে ওঠে নি।
ক্যাবিনে চেয়ারে বসে একটা লোক নাকের ডগায় চশমা দিয়ে চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে কি যেনো লিখে চলেছে। আর কিছু সময় পর পর চশমা উপরে উঠানোর চেষ্টা করে ঠেলে ঠেলে।কিন্তু সেই আগের জায়গাতেই চশমা ঘুরে ফিরে ফেরত আসে।
ডাক্তার দায়ানকে দেখেই মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলে।গুড মনিং ইয়াং ম্যান।কি অবস্থা তোমার,,,কেমন আছো? বলেই চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে এসে দায়ানকে জড়িয়ে ধরে।
– গুড মনিং আঙ্কেল এইতো,,আপনাদের দোয়ায় চলে যাচ্ছে।
— বসো বসো বসে কথা বলি।বলেই চেয়ারের দিকে ইশারা করলো।
দায়ান একটা চেয়ার টেনে সোহাকে বসতে দিলো।এবং আরেকটায় নিজে বসে পরলো।
তা কি অবস্থা তোমার দায়ান? আঙ্কেল কে তো ভুলেই বসে আছো।সেই কবে দেখা করেছিলে মনে করতে পারবে?
আসলে আঙ্কেল বুঝেনইতো ব্যস্ততার জন্য হয়ে ওঠে না।
তা ঠিক।কি সমস্যা এবার খুলে বলোতো।কি কারণে এই বুড়ো আঙ্কেল কে মনে পরলো।
আমার সমস্যা না আঙ্কেল ওর,,,,সোহাকে চোখের ইশারায় দেখিয়ে।
এবার লোকটা ভালো করে সোহার দিকে তাকায়। সোহা জোর পূর্বক মুখে হাসি ফোটায়।
— ও কে? তোমার কোনো রিলেটিভ নাকি? আগে দেখেছি বলে তো মনে হচ্ছে না।
সোহা এদের কথোপকথন শুনে বুঝতে পারলো ডাক্তার দায়ানের পরিচিতো বা কোনো আত্নীয়।
দায়ান এবার একটু ইতোস্ত বোধ করতে লাগলো।তাও নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে উঠে। আসলে আঙ্কেল ও আপনার বউ মা।মানে আমার ওয়াইফ।
দায়ানের মুখে ওয়াইফ কথাটা শুনে সোহার শরীরে যেনো কাটা দিয়ে উঠলো।এক অজানা অনূভুতিতে।কানে যেনো বারে বারে দায়ানের গম্ভীর কণ্ঠে আমার ওয়াইফ কথাটা প্রতি’দ্ধ’নিতো হচ্ছে।সোহা ভাবতেও পারে নি দায়ান তাকে ওয়াইফ বলে পরিচয় করিয়ে দিবে। সব সময় ইতো বলে তোমাকে আমি স্ত্রী হিসাবে মানি না।দায়ানের এভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ায়,, দায়ানের প্রতি সোহার সম্মান টা আরো বেড়ে গেলো।
— বিয়ে করে ফেলেছো? আমার কিন্তু বিশ্বাস হচ্ছে না।
— এটাই সত্যি আঙ্কেল।
— আহা,,, আমি কতো ভেবে রেখেছি তোমার বিয়েতে জমিয়ে ভুড়ি ভোজ করবো।আর এই বুড়োকে জানালেও না।দিস ইজ নট ফ্যায়ার।
— সরি আঙ্কেল আসলে হঠাৎ করে সব কিছু হয়ে গেছে তো।তাই কাউকে জানানো হয় নি।
— ইট’স ওকে ব্যাটা বুঝতে পেরেছি।বায় দ্যা ওয়ে,,,বৌমা কিন্তু ভারি মিষ্টি। একদম লিটল ফেইরির মতো দেখতে।
— দায়ান মুখে হাসি ফোটিয়ে সোহার দিকে তাকায়। আর মনে মনে ভাবে মিষ্টি না ছা’ই।না/গা মরিচের ঝা’ল এই মেয়ে।
তা কি সমস্যা তোমার মামনি? বলো শুনি।
সোহাকে বলতে না দিয়ে দায়ানই বলে,,,,,আসলে আঙ্কেল ওর শ্বাস কষ্টের সমস্যা আছে।ইন/হেলার ইউস করতে হয়।একটু চেক-আপ করা লাগবে।আর যা যা করা লাগে করুনতো আঙ্কেল। ঐইদিন শ্বাস বেড়ে যা’তা অবস্থা আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে।
আচ্ছা ঠিক আছে। মামনি তুমি বে’ডে গিয়ে শুয়ে পড়তো।আমি চেক-আপ করে দেখি।
সোহা চোখ মুখে ভ’য় ফোটিয়ে দায়ানের হাত খামচে ধরলো।আর মাথা নেড়ে না বোঝালো।যে সে যাবে না।
দায়ান সোহার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে ইশারা করে যাওয়ার জন্য।
সোহা দায়ানের কথাকে পাত্তা না দিয়ে,,জরোসরো হয়ে বসে থাকে।
ডাক্তার সাহেব সোহার দিকে তাকিয়ে বলে কোনো সমস্যা মামনি? তুমি কি কোনো কারণে ভয় পাচ্ছো?
দায়ান বলে উঠে,,,,,,,, ভয় মানে আংকেল দেখেন ভয়ে আমার হাতের মাংস রা/ক্ষসীদের মতো খামচে ধরে উঠিয়ে নিচ্ছে।
সোহা দায়ানের হাতের দিকে তাকায়।সত্যি বেচারার হাতের অবস্থা বে’হা’ল করে দিয়েছে। এবার আস্তে আস্তে হাত গুলো দায়ানের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয়।
ডাক্তার সাহেব দায়ানকে বললেন ভ’য় কেনো পাবে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা দায়ান।আমিতো জাস্ট চেক-আপ করবো।
ইনজেকশন কে ভয় পায় আংকেল।আবার নাকি স্বপ্নে দেখেছে,, দুই শুই এক করে ওকে ইনজেকশন দিচ্ছে। বলেই মুখ টিপে হেসে দিলো।
ডাক্তার সাহেব ও নিজের হাসি আটকাতে পারলেন না।হো হো করে হেসে দিলেন।
সোহা চোখ সরু করে দুইজনের দিকে তাকায়। আর বলে দেখো আমার দূর্বলতা নিয়ে এরা মজা নিচ্ছে।বিরবির করে বলার কারণে তাদের কাছে পৌঁছাতে পারে না কথাটা।
ডাক্তার সাহেব এবার নিজেকে কনট্রোল করে সোহাকে আ’শ্বাস দেয়। ভয়ের কিছু নেই মামনি।আমি কোনো ইনজেকশন দিবো না।
সোহা ভয়ে ভয়ে ব্যাডে শুয়ে পরে।
ডাক্তার অনেকসময় নিয়ে চেক-আপ করে।কি যেনো ভেবে মুখটা গম্ভীর করে চেয়ারে গিয়ে বসে।
সোহাও নিজের চেয়ারে এসে আবার বসে পরে।
যা বুঝলাম।মনেতো হচ্ছে এই সমস্যা ছোটো বেলা থেকে।
সোহা মিনমিনিয়ে বলে হ্যা আসলে,,ছোটবেলা একবার বৃষ্টি তে ভিজে ঠান্ডা লেগে,,নি’উ’মো’নিয়া হয়েছিল। অতিরিক্ত ঠান্ডা লেগে গেছিলো।হাসপাতালে ও ভর্তি করানো লেগেছে। তখন থেকেই শ্বাস কষ্টের সমস্যা।
দায়ান এবার বলে আঙ্কেল এর কি কোনো সমাধান নেই?
দেখো বাবা,,,এখন এর কোনো স্থায়ী সমাধান দিতে পারতেছিনা।তবে খুব সতর্কতার সাথে নিয়ম মেনে চলতে হবে।ঠান্ডা জাতীয় সব খাবার এভয়েড করতে হবে। ফ্রিজের ঠান্ডা পানি,খাবার একবারেই বাদ।বৃষ্টিতে ও ভিজা যাবে না।কোনো কিছু নিয়ে বেশি উত্তেজিত হওয়া যাবে না।আরো কিছু পরামর্শ দিয়ে,,কতো গুলো ঔষধ লিখে দেন।
দায়ান ডাক্তারের সাথে সোহার বিষয়ে আরো কিছু কথা বলে,,,কোশল বিনিময় করে বেরিয়ে আসে।
বেরিয়ে আসার আগে ডাক্তার অবশ্য বলে দিয়েছে সোহাকে নিয়ে ওনার বাড়ি যাওয়ার জন্য।
দায়ান মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়েছে।
আচ্ছা এই ডাক্তার আপনার কি হয়? সোহা দায়ানের থেকে জানতে চায়।
আমার আঙ্কেল আই মিন পাপার ফ্রেন্ড ছিলো।
ওহ তাহলে রিসেপশনের মেয়েটা আপনার কাছ থেকে এতো গুলা টাকা নিলো কেন? বলতে পারলেন না ঐটা আমার আঙ্কেল? তাহলেতো টাকা গুলো বেঁচে যে তো।
আর একটা কথা বললে ইনজেকশন দেওয়ার ব্যবস্থা করাবো সো চুপচাপ থাকো।
সোহা মুখে হাত দিয়ে চুপ হয়ে থাকে।এমনিতেই ইনজেকশন কে অনেক ভয় পায়।আর এই লোকটা তারই সুযোগ নিচ্ছে।
আমার ও সময় আসবে হুহ।
————————————-
গাড়ির কাছে আসতে কি হয়ে গেলো কেউ ই বুঝে উঠতে পারলো না।
হঠাৎ করেই কোথা থেকে একটা লোক এসে সোহার সাইড ব্যাগ ধরে হ্যাচকা টান দেয়।
সোহা তাল সামলাতে না পেরে নিচে পরে যায়।
ততোক্ষনে লোকটা ব্যাগ নিয়ে দৌড়।
দায়ান গাড়ির অপর পাশে থাকায় কিছুই করতে পারে নি দৌড়ে এসে সোহাকে তোলে।অস্থির হয়ে জানতে চায় তুমি ঠিক আছো সোহা? কোথাও লাগে নি তো?
সোহা মাথা দোলায় মানে সে ঠিক আছে।
দায়ান সোহার কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজেই তড়িঘড়ি করে চেক করতে লাগে হাত পা ঠিক আছে কিনা।সোহা ঠিক আছে দেখে স্বস্থির নিশ্বাস নেয় দায়ান।
ততোক্ষনে আশে পাশের লোক ঐই লোককে দৌড়ে গিয়ে ধরে ফেলেছে।
দায়ান এবার রাগী লুক নিয়ে দূরে লোকজনের ভিড়ে তাকায়,,, ঐ লোকটা কে যেখানে ধরে রাখা হয়েছে।
তুমি গিয়ে গাড়িতে বসো আমি আসছি। বলেই হাত মুষ্টি বদ্ধ করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
সোহা দায়ানের কথায় পাত্তা না দিয়ে সে নিজেও দায়ানের পিছনে যেতে থাকে।
#চলবে,,,,,,