#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ১২
#Jhorna_Islam
দায়ানের সোহার এরকম অবস্থা দেখে রীতিমতো ঘাম ছুটে গেছে।
সোহা কি হয়েছে তোমার? বলো আমায়। এমন করতেছো কেনো কোথায় ক’ষ্ট হচ্ছে? বলেই সোহা কে ধরতে যায় দায়ান।
কিন্তু সোহা দায়ানকে ধরতে দেয়না।অনেক কষ্টে নিজের মুখ থেকে কথা বের করে।
আ-আপনি না মা-মানা করেছেন আ-আপনার কাছে যেতে।ন-না ছুঁতে। তা-হলে আপনি কেনো কাছে আ-আসছেন চলে যান।
দায়ানের হুঁ’শ আসে কিছুসময় আগে সোহা কে কি বলেছে।রাগের মাথায় মেয়েটাকে এভাবে বলা ঠিক হয়নি।কেন যে রাগটাকে সামলাতে পারলোনা।একজনের রাগ আরেজনের উপরে ঝেড়ে ফেললো।খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছে।অনুতাপ হতে লাগলো।নিজের গালে নিজেই চ’ড় মা’রতে ইচ্ছে করতেছে। মেয়েটাকে এভাবে বলা একদম ঠিক হয়নি।সেতো আমার ভালোর জন্যই এসেছিলো।আর আমি কি করলাম,,যা নয় তাই শুনিয়ে দিলাম? সেম অন ইউ দায়ান।নিজের মনে নিজেই গা/লি দিতে লাগলো দায়ান।
কিছুসময় আগে দায়ানের মোবাইলে যে ছবিটা এসেছে।সেটা আর কারো না রুশ ও এতোদিন যে কোম্পানি দায়ানের চু’রি হওয়া ফাইলের সব ডি’ল গুলো পেতো সে কোম্পানির এম.ডি।দুই জনের পাশাপাশি হাস্যে’জ্জল ছবি।
দেখে মনে হচ্ছে কি নিয়ে যেনো আলোচনা করছে।দায়ানের মাথাই কাজ করা ব’ন্ধ করে দিয়েছে যে রুশ এমন কিছু করতে পারে।
রুশ দায়ানের স্কুল জীবনের বন্ধু। খুবই কাছের।দায়ানের সব কিছু যেমন রুশ যানে,তেমনি দায়ান ও রুশের সব কিছু যানে।
দায়ান ভাবতেই পারতেছেনা রুশ তার পিঠ- পিছে ছু/ ড়ি চালাবে।
দুনিয়া থেকে মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ই উঠে যাচ্ছে। কাকে বিশ্বাস করবে।নিজে আপন মানুষরাই ক্ষ’তি করে বেশি।এজন্যই গুরুজনেরা বলে,,,” আপন থেকে পর ভালো।”
এসবই দায়ান মাথায় হাত দিয়ে বসে বসে ভাবছিলো।আর রাগ যেনো ফু’সছিলো।হঠাৎ সোহার আগমন আবার মাথায় হাত দেওয়ায় দায়ানের রা’গে যেমন ঘি ঢা’লার মতো কাজ করলো।তাই নিজেকে আর কন’ট্রো’ল করতে পারেনি।সোহার উপর ই রা’গটা ঝে’ড়ে ফেলেছে।
সোহা প্লিজ কাম ডা’উন।আ’ম সো সরি।আমার ভুল হয়ে গেছে এক্স”ট্রিম’লি সরি। রাগের মাথায় বলে ফেলেছি।প্লিজ বোঝার চে’ষ্টা করো একটু। আর এসব কথা কখনো বলবনা ওকে? প্লিজ এবার আমাকে বলো কি হয়েছে।কোথায় ক’ষ্ট হচ্ছে। তোমার কি শ্বা’স ক’ষ্ট হচ্ছে? বলো আমায়।চলো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।
সোহা এবার ক’রুণ চোখে দায়ানের দিকে তাকায়।
দায়ান কিছু না ভেবেই সোহার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
নিশ্বাস আর নিতে পারতেছেনা সোহা।সোহার চোখ উ’ল্টে আসছে।সামনের সব কিছু যেনো অ’ন্ধকার হয়ে আসছে।অনেক ক’ষ্টে দায়ানের হাতে কাঁ’পা কাঁ’পা হাত গুলো রাখে।
দায়ান শ’ক্ত করে নিজের মুঠোতে আগলে নেয় সোহার হাত গুলো।
—- ডাক্তার ললাগববে ননা। আ-আমার রুওওওমে,, বলেই আটকে যায় সোহা। মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না।
— হ্যা তোমার রুমে কি বলো? সোহা তাড়াতাড়ি বলোনা প্লিজ একটু ক’ষ্ট করে বলার চে’ষ্টা করো। আমি বুঝতে পারতেছিনা।দায়ানের কা’তর ক’ন্ঠস্বর।
—- সোহা দায়ানের হাত খাম’চে ধরে আবার বলার চে’ষ্টা করে। আআমার রুমের বে-বেড সাইইড টেবি,,,,,,,আর বলতে পারে না জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে।
—– দায়ান আর সোহার বলার অপে’ক্ষাতে থাকেনা।দৌড়ে সোহার রুমে চলে যায়। গিয়ে বেড সাইড টেবিলে খুঁজতেই দেখতে পায় ওখানে ই/ন/হে’লার রাখা আছে।দায়ান একপ্রকার ছুটে গিয়ে ওটা হাতে তুলে নেয়।যে ভাবে দৌড়ে গিয়েছিলো সে ভাবেই সোহার কাছে দৌড়ে এসে নিচে বসে।
সোহা ততক্ষণে হাত পা ছে/ড়ে দিয়েছে প্রায়। দায়ান দ্রু’ত সোহার মাথাটা নিজের কাছে আগলে নিয়ে সোহার মুখের কাছে ধরে।
সোহা কাপা কাপা হাতে অনেক কষ্টে ই/ন/হে’লার টা হাতে নিয়ে শ্বা’স নিতে থাকে।
দায়ান সোহাকে নিজের কাছে আগলে ধরে রাখে।
সোহা অনেকটা সময় শ্বা’স নিয়ে কিছুটা স্বা’ভাবিক হয়।তারপর হাত পা ছেড়ে নিচে বসেই সোফায় মাথাটা হে’লি’য়ে দিয়ে চোখ ব’ন্ধ করে রাখে।চোখ খোলার মতো শ’ক্তি ও অব’শিষ্ট নেই। সব যেনো কেউ শু/ষে নিয়েছে।
দায়ান ও যেমন নিজের প্রান ফিরে পেয়েছে।সোহার পাশেই মাথাটা সোফায় হে’লিয়ে দেয়।ক’রুণ চোখে সোহার দিকে তাকিয়ে থাকে।আজ এই মেয়েটা কতোটা ক’ষ্ট পেয়েছে। শুধুমাত্র তার করা ভু’লের জন্য। ভু’ল নয়তো অ’ন্যায় করেছে।ভাবতেই শরীরে কা’টা দেয় আরেকটুর জন্য মেয়েটা মৃ’ত্যু’র মুখেই চলে গেছিলো।
দায়ান এখনো এক দৃ’ষ্টিতে সোহার দিকে তাকিয়ে আছে। কি মায়াময় সেই মুখ।কি শান্ত হয়ে আছে।অথচ সারাক্ষণ কাউকে কথা বলার জন্য না পেলে নিজে নিজেই বক বক করে মেয়েটা।কান্না করায় চোখ মুখ ফুলে আছে। মুখটা এখনো লাল হয়ে আছে।চোখের কা’র্ণিশটা এখনো ভেজা।চুলের খোপাটা অগোছালো হয়ে আছে।ওড়নাটা মেঝেতে এলোমেলো হয়ে পরে আছে।এমন ভাবে হাত-পা ছড়িয়ে আছে মনে হচ্ছে দেহে প্রা’নটাই নেই।
দায়ান আরেকটু এগিয়ে এসে সোহার কাছে ঘেসে বসে।নিজের হাত গলিয়ে সোহার খোপা থেকে বেরিয়ে আসা এলোমেলো চুল গুলু কানের পিছনে গুঁ’জে দেয়।পাশ থেকে ওড়নাটা খুব য’ত্ন সহকারে তুলে নেয়। এই ওড়না নিয়ে মেয়েটা কতো কা’ন্ড করেছে।অথচ ঐই দিন এই ওড়না দিয়েই কতো য’ত্ন সহকারে মাথা মুছে দিয়েছে।
ওড়না থেকে মিষ্টি একটা ঘ্রা’ণ নাকে এসে বারি খাচ্ছে। ঐদিন ও এরকম একটা ঘ্রা’ণ পেয়েছিলো দায়ান।এসব ভাবতে ভাবতেই হাতে থাকা ওড়না টা নিজের নাকের কাছে এনে ধরে নিজের অজা’ন্তেই। সেই মাতাল করা ঘ্রা’ণ। দায়ান আবেশে চোখ ব’ন্ধ করে রাখে কিছুসময়। পরো মু’হূর্তে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়।খুব য’ত্ন সহকারে ওড়না টা গায়ে জড়িয়ে দেয়।
সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের তাপমাত্রা ও বেড়ে চলেছে।বাইরে কোলাহল পূর্ণ পরিবেশ।মানুষ নিজ নিজ উদ্যেগে যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছে।
দায়ান একমনে সোহার দিকে কতো সময় নিয়ে তাকিয়ে ছিলো তার জানা নেই।এই প্রথম সোহাকে এতো সময় নিয়ে এতো কাছ থেকে লক্ষ করছে।মেয়েটা যে অতিমাত্রায় সুন্দরী তা না।খুবই সাধারণ তাও দায়ানের চোখ মেয়েটার মাঝে আঁ’টকে আছে।
হয়তো ঠিকই বলা হয়েছে,,,,,
“সাধারণ হতেও অসাধারণ গুণ লাগে যা সবার মাঝে থাকেনা”।
সোহা ঐভাবেই রয়েছে কোনো নরচর নেই।ক্লান্ত শরীরটাতে ঘুম পরিরা এসে ভর করেছে।চোখ বুঁজে থাকতে থাকতেই ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমিয়ে পরলেও এখনো শ্বাস নেওয়ার গতি স্বাভাবিক হয় নি।
দায়ান সোহাকে ভালো করে পর্যবেক্ষন করে বুঝতে পারে ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো যে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে তার শব্দ কানে এসে বারি খাচ্ছে। তাই কিছু সময় ভেবে খুব সাবধানে হাত বাড়িয়ে সোহাকে কোলে তুলে নেয়।
সোহা ছোট্ট বিড়াল ছানার মতো দায়ানের বুকে মুখ গুঁজে দেয় ঘুমের ঘোরে।সোহার স্পর্শে দায়ানের বুক কেঁ’পে উঠে। চোখ ব’ন্ধ করে নিজেকে সামলে নিয়ে সোহার রুমের দিকে আগায়।
সোহার রুমে ঢুকে খুব যত্ন সহকারে বিছানার উপর আস্তে করে শুয়িয়ে দেয়। এতোটাই কমোলতার সাথে কাজ গুলো করে যেনো একটু এদিক ওদিক হলেই সোহার নরম তুলতুলে শরীর টা তে ব্যা’থা পাবে।শুয়িয়ে দিয়ে পায়ের কাছ থেকে কাঁথা টা টেনে শরীরে জড়িয়ে দেয়। শরীর টা ঠান্ডা হয়ে আছে সোহার।তারপর এগিয়ে গিয়ে জানালার পাশের পর্দা গুলো মেলে দেয়।যেনো সোহার ঘুমে ব্যা’ঘাত না ঘটে আলোর জন্য । তারপর আরেকবার সোহার দিকে চোখ বু’লিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
——————————————-
পুরো বাড়িতে পিন’পত’ন নিরবতা।যেনো কোনো কা’ক প’ক্ষি ও নেই।দায়ান সোহাকে রুমে দিয়ে এসে চুপচাপ রুমে ঢুকে বাবা মায়ের ছবির দিকে এক ধ্যা’নে তাকিয়ে আছে।চোখের পানি ছ’লছ’ল করছে।চাইলেও কাঁদতে না পারার কি যে নিদা’রুণ ক’ষ্ট, যে কাঁদতে না পারে সেই বুঝে।
অফিসের সময় কখনই পেরিয়ে গেছে।সে দিকে দায়ানের বি’ন্দু পরিমাপ খেয়াল নেই।পকেটের ফোন বিরতিহীন বে’জে চলেছে।আজ যেমন ধরার তা’ড়া নেই। একসময় ফোনটা বেজে বেজে বন্ধ হয়,আবার কিছুসময় পরই বেজে উঠে ।
—————————————–
রুশ অফিসে এসে দায়ান কে একের পর এক কল দিয়ে যাচ্ছে। দায়ানের ধরার নামও নেই। আজ অফিসে আসতে রুশের একটু লেট হয়ে গেছে। রুশ প্রথমে একটু অবাকই হয়েছে। অফিসে এসে যখন দেখতে পেলো দায়ান এখনো অফিসে আসেনি।দায়ানের অফিসে আসতে কখনো লেট হয়না।ঠিক টাইমে অফিসে এসে হা’জির হয়।আর আজ এতো দেরি? তাই ফোন লাগায়,,,,,,, কিন্তু বারে বারে রিং হতে হতে কেটে যায় রিসিভ হয়না।
বারোটার দিকে আবার দায়ানের আর রুশের নতুন বি’ল্ডিং এর ইন’সট্রা’কশনের কাজ হচ্ছে ঐখানে গিয়ে সব ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা দেখার কথা।
তাই দায়ানকে কল দিচ্ছে হয়তো ভুলে গেছে। একপর্যায়ে কল দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে ভাবলো হয়তো অন্য কোনো কাজে বিজি।তাই কল আর দিলোনা।ফ্রি হয়ে দায়ান নিজেই কল দিবে ভেবে নিলো।
এবং নিজেই কাজ ঠকঠাক হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য বেরিয়ে গেলো।
————————————
সময়ের কাটা যখন বারোটার ঘরে তখন ঘড়ির ঢং ঢং শব্দে দায়ানের ধ্যা’ন ভা’ঙে।খাওয়ার কথা বে’মা’লুম ভুলে বসে আছে। খিদে নেই দায়ানের পর পর এতোগুলো অনা’কা’ঙ্ক্ষি’ত ঘটনায় খিদে ম/রে গেছে।পরের মুহূর্তেই দায়ানের সোহার কথা মাথায় আসে।মেয়েটাতো না খেয়ে আছে।এমনিতেই যা হলো তাতে ময়েটার শরীর দূর্বল হয়ে গেছে বুঝাই যায়।
——————————
আরো অনেক আগেই হয়তো সোহা রান্না করে ফেলতো।কিন্তু মেয়েটার সাথে যা করলো দায়ান অ’নুশো’চনায় দ’গ্ধ হচ্ছে। বুঝতে পারলো নিজেকেই কিছু একটা করতে হবে।একা জীবনে চলার জন্য অনেক কিছুরই স’ম্মু’ক্ষীন হতে হয়েছিল দায়ানকে।তাই নিজ তা’গি’দে নিজের কাজ করতে শিখে নিয়েছিলো।রান্নাটাও বাদ রাখেনি।কম বেশি রান্না যানে দায়ান।সময় মানুষকে সব কিছুই শিখিয়ে দেয়।যেই ছেলেটা এক গ্লা’স পানিও নিয়ে খেতোনা,,এখন সে নিত্য প্রয়োজনীয় সব কাজই পারে।কিন্তু সময়ের অভাবে করেনা।তাছাড়া জমিলা খালাই সব কাজ করে দিয়ে যায়। তাই করা হয় না।আজ আবার করবে সোহার জন্য। ভাবতে ভাবতেই রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে যায় দায়ান,,,,,,
#চলবে