#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ১০
#Jhorna_Islam
সোহাকে ভর্তি করিয়ে অফিস রুম থেকে বের হয়ে আসলো দু’জনই।
– শুনুন আমি ১ তারিখ থেকে ক্লাস করবো।তাও প্রতিদিন আসতে পারবোনা।অনার্সে উঠে যদি প্রতিদিন ক্লাস করা লাগে,তাহলে এতো ক’ষ্ট করে অনার্সে উঠে লাভ কি? তাহলেতো প্রাইমারি স্কুল ই ভালো তাই না? আমার আগের ভার্সিটিতে এমনিতেও আমি প্রতিদিন যেতাম না।
– দায়ান রাগী লুক নিয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে বলে, কি বললা তুমি? আবার বলোতো ঠিক শুনতে পাইনি।
— ঠিক আছে। ঠিক আছে যেহেতু ভার্সিটিটা আমার প’ছন্দ হয়েছে তাহলে না হয় সপ্তাহে চারদিন ই আসবো।এর বেশি আসতে পারবোনা।
— ওহ শি’ট।আমিতো আসল কথাই ভুলে গেছি।
— আবার কি ভুলে গেলেন আপনি?
— তোমার বই বাড়ি থেকে আনার কথা বলতে ভুলে গেছিলাম।তোমার বাবা মা ওতো দিয়ে দিলো না বই গুলা।ওনাদের ও কি মনে ছিলনা?
— কেন এখন কিনে দিবেন।আপনার টাকায়তো আবার ছিনি’মিনি,ছিনি’মিনি করে।হুদাহুদি কতো গুলো টাকা দিয়ে ভর্তি করালো। আর তাছাড়া বই থাকলেতো দিবে।বইতো আমি কিনিই নি।
– হোয়াট? বছরের অর্ধেক সময় শেষ এখনো তুমি বই কিনোনি? এক্সাম দিছো কি করে?
— আপনারে বলবো কেনো? যে ভাবে ইচ্ছে সে ভাবে দিয়েছি।
— বলা লাগবেনা।আমার জানা হয়ে গেছে। তুমি যে কি
চি/স। আর কি করতে পারো।
— হুহ।
— আজ যাওয়ার সময় তোমার বই,খাতা আর যা প্রয়োজনীয় জিনিস আছে সব নিয়ে যাবো।বারোটায় আমার মিটিং আছে।তোমাকে এখন আমার সাথে অফিসে যেতে হবে। আমার হাতে বেশি টাইম নাই। শী’ট এখানেই সাড়ে এগারোটা বে’জে গেছে। আর একটা ও কথা বলবা না চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে উঠে বসো।বলেই দায়ান পিছনে সোহার দিকে তাকায়।একি এই মেয়ে গেলো কোথায়? পিছন থেকে উধাও হয়ে গেলো? বলেই চুল টানতে টানতে এদিক ওদিক তাকায়।
— এইইই এখনো দাড়িয়ে আছেন কেনো? তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠেন।লেট হয়ে যাবেতো মিটিংয়ে।
— দায়ান অবাক হয়ে সোহার দিকে তাকাতে তাকাতে গাড়িতে এসে বসে।
— এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই।পরেতো মিটিং না করতে পারলে আমাকেই দোষতেন।আর তাছাড়া আপনার ক্ষ/তি হোক এমন কোনো কাজ আমি করবো না।
— দায়ান আর কথা বাড়ায় না চুপচাপ গাড়ি চালানো শুরু করে।
————————————————
নোহা সকল কাজ সেরে তারপর সকালের না’স্তা খেয়ে রুমে এসে বসেছে মাত্র।
বোনটার সাথে কথা বলতে মন চাচ্ছে। কে জানে কেমন আছে। সারাদিন কাজের মধ্যে থাকতে হয় বিধায় কারো সাথেই তেমন যোগাযোগ করা হয়না।
তাই কেমন জড়তা কাজ করতেছে বোনকে কল দিতে।
কি অবাক করা বিষয় যে বোনের সাথে এক সময় বাধাবিহীন আলাপচারিতা চলতো ঘন্টার পর ঘন্টা। সে বোনের সাথে কথা বলতে আজ কতো জড়তা।
সময় কিনা করতে পারে? নিজের আপন মানুষ গুলোকে দূরে নিয়ে গেলো।চাইলেই দেখা করা যায় না,,,মন খুলে কথা বলা যায় না।যে মানুষগুলো কে ছাড়া এক মুহূর্ত ও চলতো না,,অথচ সেই মানুষগুলোকে ছাড়া মাসের পর মাস,বছরের পর বছর কাটিয়ে দিতে হয়।
চাইলেই দেখা করা যায় না।কথা বলা যায় না।বুকের মধ্যে পাথর চাপা দিয়ে শ’ক্ত হয়ে থাকতে হয়।দূ’র্ব’ল হলেতো চলবে না এটাই নিয়ম।
সেই ছোট্ট বোনটা কবে যে বড় হয়ে গেলো।ভাবতেও অবাক লাগে সময় কতো দ্রুত চলে যায়।এইতো মনে হয় কিছুদিন আগে,,সোহা কোথাও ব্যাথা পেলে,,কেউ মারলে মায়ের কাছে না গিয়ে দৌড়ে নোহার কাছে ছুটে আসতো। সে কি কান্না বোনের আদর না খেলে যেমন ব্যাথা সাড়বেই না।নোহা একটু আদর করে ব্যাথার জায়গায় হাত বু’লিয়ে দিলে সব শে’ষ।
একবারতো এমনও হয়েছে,,খেলতে গিয়ে খেলার মাঝখানে কথা কা’টা’কা’টি নিয়ে নোহাদের পাশের বাসার এক মেয়ে নোহাকে ধা’ক্কা মারে।নোহা তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়।যেই জায়গায় পরে ঐখানে একটা ইটের টু’করো ছিলো।ইটের টু’করোতে লেগে নোহার হাত কে’টে যায়। এই কথা সোহা কোনোভাবে কারো কাছ থেকে শুনতে পায়।
দৌড়ে ঐ জায়গায় গিয়ে পৌঁছায়। ঐ মেয়ের উপর হা/ম/লে পরে।সে কি মাইর,,কা’মড়ানো,চুলে ধরে টানা,খা’মচানো কোনো কিছু বাদ রাখেনি।সোহাকে কতো ক’ষ্টে যে ছুটিয়ে ছিলো সেটা নোহাই জানে।
সব কথা শুনেতো মা সোহাকে মা’রতে ও গেছিলো তার এক কথা,আমার আপুরে মারবে।কতো বড় সা’হস আমার আপুকে মা’রে। আমিকি চুপ করে বসে থাকবো? বেশ করেছি মে’রেছি।দরকার পরলে আরো মারবো।যে আমার আপুকে মারবে আ/ঘা/ত করবে তাদের আমি এমনিতেই ছে’ড়ে দিবো? কক্ষনো না।কাউকে ছাড়বোনা।
আগের কথা ভাবতেই চোখের কো’ণে পানি ও ঠোঁটে মিষ্টি হাসি খেলা করে নোহার।
বোন যদি কোনো ভাবে এসব জানতে পারে,, তাহলে এদের কি অবস্থা করবে ভাবে নোহা।
অনেক ভাবনা চিন্তা করে বোনকে ফোন লা’গাতে যায়।এমন সময় শাশুড়ীর চি’ৎকার চেঁ’চা’মেচি কানে আসে।
বলি সারাদিন ঘরে বসে থাকলে হবে? কতো কাজ পরে আছে ঐগুলা কে করবে শুনি? রোদ পরে গেলে কি কাপড় ধুয়ে শুকাতে দিবে?
সারাদিন শুয়ে বসে থাকার ধা’ন্ধা। আমার বাড়িতে এসব চলবে না বলে দিলাম।
নোহা আর ফোন দেয়না সোহাকে। ফোন রেখে কাপড় ধোঁয়ার জন্য চলে যায়।সময় সুযোগ বুঝে বোনকে ফোন দিয়ে নিবে।এখন দিলে যদি এই মহিলা দেখতে পারে,,তাহলে আবার ছেলের কাছে না’লিশ দিবে।ওমিটা ও হয়েছে এমন যেনো মায়ের না’লিশের অপেক্ষায়ই থাকে নোহাকে শা’স্তি দেওয়ার জন্য।
নোহা মনে মনে ঠিক করে নেয়,যে করেই হোক এই মহিলার তাকে নিয়ে কি সমস্যা জেনেই ছাড়বে।কেনো এমন করে।কি দোষ তার।সেতো নিজের সবটুকু দিয়ে এই পরিবার আর পরিবারের লোক গুলো কে আপন করে নিতে চেয়েছিল।কিন্তু এরা প্রতিনিয়তো নোহা কে ওদের আচরণ দ্বা’রা মনে করিয়ে দেয় নোহা ওদের আপন না। প্রতিনিয়তো নোহার বি’রু’দ্ধে ওমিকে উ’স’কে দেয় এই মহিলা।
ওমিতো একটা কা/পু/রুষ। যে নিজের মায়ের কথায় ঠিক ভুল বিচার না করে অত্যাচার চালিয়ে যায় নোহার উপর।
আর এদের বাড়তে দেওয়া যাবেনা।এবার অ’ন্যা’য়ের বি’রু’দ্ধে প্র’তিবাদ করবে।
——————————————-
দায়ান অফিসের গে’টে এসে গাড়ি থামায়।
শুনো তুমি এসো আমি গেলাম।কাউকে বললেই আমার ক্যাবিন দেখিয়ে দিবে, ঐখানে গিয়ে বইসো।সোহাকে কিছু না বলতে দিয়েই দায়ান একপ্রকার দৌড়ে ভিতরে যেতে থাকে।এই মিটিং টা খুবই গুরু’ত্বপূর্ণ। নয়তো অনেক ল’স হয়ে যাবে।
সোহা আস্তে আস্তে গাড়ি থেকে নেমে চারিদিক ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে।বাহ অফিসটা ওতো দেখছি হে’ভি জোস। আরি’ব্বা’স এইখানেও দেখছি কতো ফুলের গাছ।
দৌড়ে বাগানের কাছে চলে যায় সোহা। জবা গাছ থেকে জবা ফুল নিয়ে হিজাবের মধ্যে গুঁ’জে দিয়ে গুন’গুন করে গান গাইতে থাকে।
তখনই কারো ক’র্ক’শ ক’ন্ঠ’স্ব’র শুনতে পেয়ে পিছনে তাকায়।
— এই মেয়ে কে তুমি? তোমারতো সাহস কমনা।তুমি আমাদের অফিসে এসে ফুল চু’রি করতেছো?(অফিসের একজন মেয়ে কর্ম’চারী)
— আমি যেই হইনা কেনো আপনাকে বলতে যাবো কেনো? আর ফুল চু’রির কথা বললেন না।দরকার পরলে পুরো অফিস আমি চু’রি করবো আপনার কোনো সমস্যা?
— একেইতো অন্যায় করেছো।তারউপর আবার মুখে মুখে কথা বলো? সাহস তো কমনা তোমার।
— হুম আমার সাহস একটু বেশিই।তো?
— তুমি জানো তোমার সাথে কি হতে পারে?
— না। জানার প্রয়োজন মনে করছিনা।
— এই তোমাকে ভিতরে ঢুকতে দিয়েছে কে? মুখে মুখে কথা বলো, তুমি জানো আমি কে?
— আপনি কে সেটা দিয়ে আমার কাজ কি? সরেন তো সামনে থেকে। বলেই যওয়ার জন্য হাটা দেয়।
— এই এই অফিসের ভিতরের দিকে কই যাও? বস কে দিয়ে এমন ব্যবস্থা করবনা। মজা তখন টে’র পাবে।চিনোনা তো আমাদের বস কে।
— সোহা মেয়েটার দিকে আঙুল তা’ক করে বলে,তোমাদের বস কে আমি ভয় পাই নাকি? আমি তোমার বসের ও বস বুঝলে।বলেই একটু ভা’ব নিয়ে অফিসের ভিতর ঢুকে গেলো।
মেয়েটা সোহার যাওয়ার পানে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।কি বলল এই মেয়ে? বসের ও বস?
———————————–
দায়ান অফিসে ঢুকেই সোজা মিটিং রুমে চলে গেছে।দ্রুত ড্রাইভ করায় বেশি টাইম লাগেনি আসতে।তাও দশ মিনিট লেট হয়ে গেছে। সবাই দায়ানের অপেক্ষাতেই ছিলো।
তাছাড়া রুশকে আগেই বলে রেখেছিল দেরি হয়ে যেতে পারে।রুশ যেনো সব কিছু ঠিকঠাক করে রাখে।
দায়ানের কথা মতো রুশ সব ঠিকঠাক করে রেখেছিল।যেনো দায়ান এসেই মিটিং শুরু করে দিতে পারে।
দায়ানও সকলের সাথে কু’শল বিনিময় করে মিটিং এর কার্য’ক্রম শুরু করে দেয়।
————————————-
সোহা অফিসে ঢুকে চারদিকে চোখ বুলাচেছ আর হাটছে।অফিসের কর্ম’চারীরা যে যার মতো কাজ করছে।কেউ কেউ সোহার দিকে আড়’চোখে তাকাচ্ছে। অন্যরা তাদের কাজ মনোযোগ দিয়ে করছে তাদের এতো দিকে খেয়াল নেই।সোহা ভাবছে কাকে জি’জ্ঞেস করবে,দা য়ানের অফিস কোনটা? ভাবতে ভাবতেই অন্য মন’স্ক হয়ে হাটতে গিয়ে কারো সাথে ঠা’স করে ধা’ক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেলো।
সকলে অবাক হয়ে সোহার দিকে আবার সামনে থাকা ব্য”ক্তিটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
আম্মু গোওওও টা’ইটা’নিক জাহাজের মতো কোন বরফের খ’ন্ডে’র সাথে ধা’ক্কা খেলাম গোওও! আমার কো’ম’ড় গেলো গোওওও।
যতোসব ঝা’মে’লার সাথেই আমার দেখা হয়।এখন আমার কি হবে? এই বয়সে আমার কো’মড় টা ভে’ঙে দিলো।এই ভাঙা কো’মড় নিয়া আমি কই যাবো?
এই কোন আ’ন্ধা আমারে ধা’ক্কা দিলি? দিন কা’না কোথাকার দিনের বেলা চোখ পকেটে নিয়ে হাটস?
#চলবে