#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব-২৫
-হেই সুইটি,তুমি এখানে!!
সামনে দাঁড়ানো ছেলেটা হাস্যজ্বল চেহারা নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেও তুরা এখনও বিমূর্ত চোখে তাকিয়ে হতভম্বিত হয়ে বলল
-আপনি? এখানে?
-হ্যাঁ আমিতো আসবই, কিন্তু তুমি এখানে যে
কৌতুহলী স্বরে জিজ্ঞাসা করলেও,উত্তরের সুযোগ না দিয়েই পরমুহূর্তেই আবারও বলল
-এক মিনিট, এটা তোমার বাড়ি? তাইলে তুমি কি ভাবির বোন?
সিফাতের ভ্রু যুগল জড়ো করে জিজ্ঞাসা করা প্রশ্নে তুরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলো, এখন সে কি উত্তর দিবে? এই ছেলে তো তারই ভার্সিটির সিনিয়র তাইলে আহানেরও স্টুডেন্ট। তুরা পরল মহা ফ্যাসাদে, এই ছেলেটাকে এখন এখানে আসতে কে বলল! যত্তসব ঝামেলা কি তার উপরেই আসতে হয়। তুরা সিফাতকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলবে তার আগেই পেছন থেকে রুহি তুরার হাত ধরে বলল
-তুমি এখানে কি করছ বলোতো? ওদিকে রাই আপুর হলুদ ছোঁয়ানো শুরু হয়ে গেলো,শিগগির চলো!
বলে তুরার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো স্টেজ এর দিকে। রুহি সিফাতকেও খেয়াল করেনি,আবার তুরাও কিছু বলার সুযোগ পেলোনা। তুরাকে টেনে নিয়ে যাওয়ার পানে কিছুক্ষণ হা করে চেয়ে রইল সিফাত। কাধের উপর কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘুরে তাকাতেই অতি পরিচিত চেহারা দেখে এক ফালি হাসল
-তোকে কখন থেকে খুঁজছি আর তুই এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস বল তো
ফারিনের কথায় সিফাত ভাবাবেগ তাড়িত করে বলল
-ও কিছুনা, আচ্ছা ভাবির কি কোনো বোন আছে?
সিফাতের কথায় ফারিন বেশ ভাবুক মুখ করে বলল
-আমিতো জানি রাইমার একটাই ভাই আছে,আহান। কিন্তু তুই হঠাৎ এই প্রশ্ন করছিস যে!
-ও না কিছুনা,চলো ফারু কই?
-ওর বাবার সাথে আসছে চল
বলেই সিফাতের সাথে স্টেজের দিকে গেলো।
সন্ধ্যা গড়িয়েছে বেশ অনেক্ষণ আগেই, নিকষ কালো আধারে ডুবন্ত ধরণীর এ নিত্যকর্মসূচিতে ইনসাফ মাহবুব এর বাড়ির পেছন টা একেবারে জ্বলজ্বল করছে হরেক রঙের আলোতে। ফুল,মালা,ঝালর, মরিচবাতি সহ নানা রকম আলোতে একদম ঝিকিমিকি হয়ে আছে পরিবেশ। রাইমার হলুদ ছোঁয়ানোর পর্ব শুরু হতেই সকলে স্টেজের সামনে জড় হলো। হলুদ ছোঁয়ানো শুরু করল রাইমার বাবা মা ইনসাফ আর রুবি, মেয়েকে হলুদ দিয়ে,মিষ্টি মুখে দিয়ে প্রাণ ভরে দোয়া করল দুজনে। বাবা মায়ের হলুদ ছোঁয়ানো হলে একে একে আমেনা খাতুন, মিনু, রাইমার চাচা চাচী ইউসুফ আর নাজ সাথে ফুফু ইলা সবাই কালক্রমে পরপর ছুঁয়ে দিলে এবার বাকিদের পালা আসলেই আমেনা খাতুন বলল
-আহান,এবার তুমি রাইমাকে হলুদ ছুঁয়ে দাও দাদুভাই
-আবার আমি কেনো দিদুন,থাক না তোমরাই দাও
বেশ অনিহা ধরা গলায় বললেও আহানের কথাকে অগ্রাহ্য করে মিনু বলল
-তা বললে তো হবে না,তুই ওর ভাই ও তুই না দিলে কি করে হবে, কোনো কথা না বস তুই
মিনুর করা আদেশে আহান আর দ্বিরুক্তি না করে রাইমার পাশে বসলেই মিনু আহানকে থামিয়ে বলল
-দাঁড়া বাবু, এই যে তুমি বসো আহানের পাশে
-আমি!!
বেশ অবাক হয়ে বলল এক কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা তুরা,মিনু ওকে উদ্দেশ্য করে আবারও বলল
-হ্যাঁ অবশ্যই তুমি, বাবু যেমন রাইমার ভাই তুমিও তো ভাবি৷ এভাবে এক কোণায় থাকলে কি করে চলবে,বাবুর ওই পাশটাই বসো গিয়ে দুজন একসাথেই হলুদ ছোঁয়াবে
মিনুর কথায় তুরাও দ্বিরুক্তি করার সাহস করল না,,হাজারো অনিচ্ছা সত্ত্বেও চুপচাপ রাইমার অপর পাশে বসে, মিনুর কথামতো এক সাথেই হলুদ ছোঁয়াল দুজনে। রাইমা বাটি থেকে হলুদ নিয়ে তুরা আর আহানের গালে লাগাতেই আহান উঠে দাঁড়িয়ে বলল
-উফ আপি,,কি করছিস, আই ডোন্ট লাইক টারমেরিক
-বিয়ের হলুদ ছোঁয়ান ভালো, না তো তোর মাঝে তো বিবাহিত টাইপ কোনো ভাইব ই নেই
-বিবাহিত ভাইব লাগবে নাহ আমার,ডিসগাস্টিং
বলেই উঠে হনহন করে স্টেজ থেকে নেমে গেলো আহান। আহান যেতেই তুরা ফিক করে হেসে দিলো,এতক্ষণ বড় কষ্টে আটকে রেখেছিল। বেশ হয়েছে, গোমড়ামুখো টারে আরও হলুদ মাখানো উচিত ছিল। রুহি আর তনু মিলে বসে রাইমার সাথে সেলফি তুলছিল এমন সময় ইউসুফ মাহমুদ এসে বললেন
-তোমাদের হলো গো? বরের বাড়ির লোকেরাও তো অপেক্ষা করছে
ইউসুফ মাহমুদ এর কথা শুনে নিজেদের হট্টগোল থামিয়ে তাকাতেই দেখল তার পাশেই মারুফ চৌধুরী, একটা অল্প বয়সী মেয়ে,তার পাশেই দাঁড়িয়ে আরেকটা লোক যার কোলে বছর দুয়েকের একটা বাচ্চা,আর সিফাত নামের ছেলেটা। কৌতুহলে তুরার কপালের ভাজ আরও গাঢ় হওয়ার আগেই ইউসুফ পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল
-মারুফ চৌধুরী কে তো নিশ্চয় চেনো ইমানের চাচা, আর এ হলো ফারিন ইমানের বউ আর পাশে দাঁড়ান..
-থাক না আংকেল আমরা নিজেরাই গ্রেটিং করে নিব।আর এদের সাথেই তো হবে আসল পরিচয় আফটার অল ইমানের শালা-শালী বলে কথা
বাচ্চা কোলে থাকা ভদ্রলোক টা ইউসুফ কে থামিয়ে বলল। মেয়েটি এগিয়ে এসে রাইমার পাশে বসে বলল
-আমায় চিনতে পেরেছ? আমি ইমানের বড় বোন ফারিন
-জ্বি আপু,আমি চিনতে পেরেছি।
রাইমার কথার সাথে সাথে ফারিনের স্বামী এসে পাশে বসে বলল
-তাহলে তো আমাকে আরও আগে চেনা উচিত, আমি তোমাদের একমাত্র দুলাভাই,আর এটা আমাদের মেয়ে ফারু
ফারিন আর তার স্বামী ইমতিয়াজ কিছুক্ষণ রাইমা সহ বাকিদের সাথেও কথা বলে পরিচিত হয়ে নিল। রাইমার গায়ে হলুদ ছুঁয়ে দিয়ে ওর জন্য আনা গিফট গুলো একে একে সব হাতে দিল। ওরা উঠতেই মারুফ চৌধুরী এসে রাইমার জন্যে আনা গিফট গুলো রাখতেই পেছন থেকে আরও একটা কন্ঠের কথা শোনা গেলো
-ভাবি স্মাইল প্লিজ
রাইমা তাকাতেই ফট করে একটা ছবি তুলে নিলো সিফাত, মুখের হাসি আরও প্রসারিত করে এগিয়ে এসে বলল
-ভাবি, আই এম ইউর ওয়ান এ্যন্ড অনলি দেবর,সিফাত। আপনার সাথে আমার আজই প্রথম পরিচয়
-পরিচয় প্রথম হলেও আমি কিন্তু তোমাকে চিনি সিফাত
-তাই না?
বলেই একটা শয়তানি হাসি দিলো সিফাত,রাইমাও উত্তর সুলভ হাসি দিলে ফারিন এসে বেশ অনেক্ষণ গল্প করল সবার সাথে। ওরা যাওয়ার জন্য উদ্যত হলে জায়মা তনু রুহি ওরা আবারও হলুদ মাখামাখি শুরু করল, তুরার মুখে অনেক বেশি মেখে যাওয়ার ও সরে আসল ভীড় ঠেলে। চোখের মধ্যেও কিছু একটা পরেছে হয়তো, তাকাতে পারছে না। চোখ বন্ধ রেখেই কয়েকবার ডাকল রুহি আর তনুকে,,ওদের উত্তর না পেয়ে জায়মাকে ডাকলে তার থেকেও উত্তর আসলো না। সবাই হলুদ নিয়ে খেলতে ব্যস্ত হয়ে গেছে। তুরা এক চোখ কোনো মতে খুলে ঝাপসা ঝাপসা দৃষ্টিতে এগিয়ে যেতে লাগলে তখনই সিফাত এসে বলল
-তুরা, এ্যানি প্রবলেম?
তুরা চোখ খুলে তাকানোর চেষ্টা করলেও জ্বলনের জন্য খুলতে পারল না,আরেক চোখে হালকা ঝাপসা দৃশ্যমান হলো সিফাতের চেহারা টা
-আপনি কি একটু ওদের কাওকে ডেকে দিতে পারবেন প্লিজ,আমার চোখে হলুদ ঢুকেছে মনে হয় খুব জ্বলছে
-আচ্ছা আমি এক্ষুনি ডেকে দিচ্ছি
বলে এগোতে নিলেও তুরা অন্ধকারে কিছু একটার সাথে গুতা লেগে ছোট্ট আর্তনাদ করে উঠল। সিফাত এগিয়ে এসে বলল
-তুরা ঠিক আছো? কোথায় লেগেছে?
-আমি ঠিক আছি,আপনি ওদেরকে তাড়াতাড়ি ডেকে দিন প্লিজ আমার চোখ খুব জ্বলছে
তুরার কথায় সিফাত এদিক ওদিক তাকালে পাশেই টেবিলের উপরে একটা পানির বোতল দেখে ছুটে গিয়ে সেটা এনে তুরাকে বলল
-আমি পানি এনেছি তুমি চোখে মুখে দাও
তুরা হাত পাতলে সিফাত বোতল খুলে পানি দিলে কয়েকবার চোখে মুখে ঝাপটা দেওয়ায় জ্বলন টা কমে আসে তুরার, টিপটিপ করে চোখ খুলে তাকালে সিফাতের বিচলিত চেহারা টা স্পষ্ট হলো।
-এখন বেটার ফিল করছ?
সিফাতের কথায় তুরা মৃদু ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দিলো৷ সিফাত তুরার গালের দিকে ইশারা করে কিছু একটা দেখাল,তুরা কিছু বুঝতে না পারলে সিফাত হাত দিয়ে থামিয়ে পানির বোতল টা রেখে পকেটে থেকে টিস্যু বের করে তুরার মুখে লেগে থাকা হলুদ টা মুছে দিয়ে বলল
-নাও পারফেক্ট
~~
-আরে বিহান আমাকে নিয়ে যাচ্ছিস কোথায়?
-চুপ করে থাক। গেলেই দেখতে পাবি
হলুদ ছোঁয়ান পর্ব শেষ হতেই ফারিন মারুফ চৌধুরী সহ বাকিরা বিদায় নিতেই,বিহান রাইমা কে নিয়ে এসেছে বাগানের দিকটাই।এই অন্ধকারে বাগানে কেনো নিয়ে আসল বিহান রাইমা এটাই বুঝতে পারছে নাহ। বাগানের এক কোণায় রাইমাকে দাড় করিয়ে বিহান বলল
-তুই এখানে দাঁড়া আমি আসছি
বলেই রাইমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হনহন করে বেড়িয়ে গেলো সেখান থেকে। এখন এই অন্ধকারে রাইমা একা কি করবে? এই বিহান টা কি পাগল হয়ে গেছে, মিনিট খানেক দাঁড়িয়ে থেকে রাইমা বিরক্ত হয়ে চলে যেতে নিলেই পেছন থেকে হাতে টান পরল৷ পেছন ফিরে তাকানোর আগেই কেও এক টানে বুকের মাঝে ফেলল রাইমাকে। আকস্মিক আক্র’মণে হতবাক হয়ে রাইমা কিছু বুঝার আগেই চেপে ধরল আগন্তুক। ভয়ে রাইমার হাত পায়ে কম্পন ধরেছে, বাকরুদ্ধ হয়ে সরে আসতে নিলেই আরও চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে বলল
-উহু,সরে কেনো যাচ্ছ রাই, দুটো বছরের তৃষ্ণার্ত, দু মিনিট তো বুকে থাকো
অন্ধকার বাগানে টিমটিমে আলো আসছে বাইরে থেকে,, তার মাঝে আকস্মিক কারো ঝাপটে ধরায় তুরা ভয় পেলেও হৃদয় শীতলকারী ভরাট কণ্ঠস্বরে এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলো রাইমা। জমে বরফ হয়ে গেছে সারা শরীর। তার ভালোবাসা, তার এতদিনের অপেক্ষা, যার সাথে আজ রাত বাদে কাল বিয়ে তাকে কি না রাইমা এখনো সচক্ষে দেখতে পারেনি। দুটো বছর কি কম? এতদিনে আসার সময় হলো?
নিগূঢ় অভিমানে কপোল ভিজে গেলো রাইমার। এতক্ষণে আসার সময় হলো? বলবে না সে কথা। ফট করে এক ধাক্কা দিয়ে ইমানকে সরিয়ে চলে আসতে নিলে আবারও ইমান ওকে আটকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। কাধে থুতনি রেখে বলল
-খুব অভিমান হয়েছে রাইপাখি? আমি সরি তো। অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হওয়ার আগে কোনো ভাবেই আসার সুযোগ হয়নি
রাইমা কোনো উত্তর হীনা নিঃশব্দে কেঁদে ভাসাচ্ছে, ইমান জানে তার প্রেয়সীর এ অভিমান কি করে ভাঙাতে হয়, পেছন থেকে ছেড়ে দিয়ে বলল
-আমি তোমার জন্যেই এসেছি রাই, এতদিন বাদে এসে কেমন চোরের মতো লুকিয়ে শালাকে হাত করে তোমায় দেখতে এসেছি আর তুমিই এমন চুপ করে আছো?
রাইমা তবুও নিশ্চুপ, শুধু ফুঁপিয়ে কাঁদার শব্দটাই কানে আসছে, ইমান রাইমার আরেকটু কাছে এসে বলল
-একবার জড়িয়ে ধরবে না রাই? চলে যাব?
ইমান তার কথা শেষ করার সাথে সাথে রাইমা পেছন ঘুরে ঝাপটে ধরল ইমানকে, বুকে মুখ গুঁজে সশব্দে কেঁদে দিলো। ইমান মুচকি হেসে ওকে আরও নিবিড় ভাবে জড়িয়ে নিলো। অবশেষে তাদের এতদিনের অপেক্ষা ভালোবাসা পরিপূর্ণতা পাবে, বুকের ভেতরে হৃদয় শীতলিকরণ অনুভূতিদের খেলা শুরু হয়েছে, শান্তি লাগছে। গাল আরও প্রসারিত করে নিবিড় বন্ধনে জড়িয়ে রাখল রাইমাকে
~
-আপনি কি করছেন,ছাড়ুন আমার লাগছে
তুরার কথাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে আহান গটগট করে হেঁটে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তুরার হাত ধরে। গালের হলুদ ধুতে ঘরে গেছিল আহান। মুখ ধুয়ে বেরিয়ে স্টেজের দিকে আসতেই এক পাশে দাঁড়িয়ে সিফাতকে তুরার গালে হাত দিতে দেখেই মাথায় খু’ন চড়ে গেছে আহানের, রক্তচক্ষু নিয়ে এগিয়ে গিয়ে তুরাকে কিছু বলতে না দিয়েই হাত ধরে টেনে হিচড়ে বাড়ির ভেতর নিয়ে এসেছে।
-আমার লাগছে,ছাড়ুন আমাকে
টেনে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো আহান, ঘরের মধ্যে এসে তুরাকে ছেড়ে ধড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিলো। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল তুরার দিকে, তুরা আহানের ধরা জাগায় হাত দিয়ে দেখল লাল হয়ে গেছে, ব্যথায় চোখে পানি এসে গেছে তার।আহানের চোখের দিকে তাকাতেই তুরার শরীর জমে এলো, নাকের পাটা লাল হয়ে গেছে, কপালের রগ গুলো ফুলে স্পষ্ট দৃশ্যমান, কপাল বেয়ে দুফোঁটা ঘাম টপকে পরল, গলার শিরার সাথে কম্পমান কণ্ঠনালির উঠানামা সবটা পরখ করে তুরা তাকাল আহানের ক্রুদ্ধ অগ্নিশর্মা হওয়া চোখে। শুকনো ঢক গিলে আমতাআমতা করে বলল
-আ’আপনি আমাকে এভাবে কেনো আনলেন, ওখানে..
পুরোটা শেষ করার আগেই আহান ঝড়ের বেগে এসে তুরাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরল। দু’হাত তুরার হাতে চেপে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে ধরে বলল
-ওখানে কি করছিলে তুমি,কি করছিলে হ্যাঁ?ওই ছেলের সাহস কি করে হলো তোমাকে স্পর্শ করার, তোমাকে বলেছি না দূরে দূরে থাকতে, তবুও সাহস কি করে হলো তোমার? চুপ করে আছ কেনো এ্যান্সার মি ড্যাম ইট!!
আহানের ভীষণ রাগী কন্ঠস্বরে বজ্রপাতের মতো কেঁপে উঠল তুরা, আধবোজা চোখ তুলে তাকাল আহানের রাগে টলমল হওয়া চোখে, সারা শরীরে রাগে রীতিমতো কম্পন ধরেছে আহানের,সেই সাথে চেপে ধরে রাখা তুরার, কণ্ঠনালীতে সব শব্দ আটকে গেছে, মুখ খুলে কিছু বলার নূন্যতম প্রচেষ্টাও অপব্যয়িত।
তুরার নিরুত্তর থাকা আহানের রাগে আগুনে ঘি ঢালার মতো প্রতিক্রিয়া দিলো। তুরাকে ছেড়ে দিয়ে পাশে থাকা কাঁচের জগ টা এক আছাড়ে ছুড়ে ফেলল৷ কাঁচ ভাঙার বিকট শব্দে কেঁপে উঠল তুরা, দুহাত কানে চেপে ধরে কেঁদে দিল। আহান আবারও তুরার কাছে এসে দাঁড়ায়, দুজনের মাঝে এক সুচ সমান ব্যবধান নেই, রাগে উত্তপ্ত হওয়া আহানের শরীরে তুরার শরীর লাগতেই ঝংকার তুললো সারা বদনে। আহান তুরার মুখের একদম কাছাকাছি মুখ এনে হিসহিসিয়ে বলল
-আ’ম ওয়ার্নিং ইউ ফর দ্যা ভেরি লাস্ট টাইম, ফারদার যদি তোমার আশেপাশেও কোনো ছেলে দেখি, আমার চেয়ে খারাপ কেও হবে নাহ, এ্যন্ড আই মিন ইট!
কথার সাথে উষ্ণ গরম শ্বাস তুরার সারা মুখে আঁছরে পরল,কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহান ওকে ছেড়ে পা বাড়াতে নিলে পেছন থেকে আহানের হাত ধরে বলল
-আমার কথাটা শুনুন আমি…
তার আগেই আহান এক ধাক্কায় তুরাকে ফেলে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে, আহানের যাওয়ার পানে চেয়ে তুরা সশব্দে কেঁদে দিল, উঠে দাঁড়িয়ে আবারও পা বাড়াতে নিলে পায়ের নিচে জগের ধ্বংসাবশেষ কাঁচের টুকরো বিধে ঢুকে গেল,,মৃদু চিৎকার করে আর্তনাদ করে উঠল তুরা
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ
Humu_♥