#তুমি_আমার_অভিমান❤
|| পর্ব – ১৭ ||
#লেখনীতে_বিবি_জোহরা_ঊর্মি
এই যে ছোট্ট একটা সংসার! এটা নীরার সংসার। অভিক আর নীরার সুখের সংসার। নীরা এখন সংসারী হয়ে গেছে। সংসারের গিন্নীদের মতো চলে। সাথে অভিকের খেয়াল রাখা, তার কোন সময় কি লাগবে না লাগবে, সে কি খেতে পছন্দ করে, এবং কি অফিসে যাওয়ার সময় তার পোশাক রেড়ি করে রাখে নীরা। এখন আর সে অফিসে যায়না। অভিক যেতে নিষেধ করেছে। অভিক যখন অফিসে যায় তখন কিছুক্ষণ তার সাথে ভিডিও কলে কথা বলে। বারান্দায় বসে উপন্যাস এর বই পড়ে সময় কাটায়। একা একা ভালোও লাগে না। প্রীতি কল দিলে নীরা খুব খুশি হয়। অর্ধেক সময় তার সাথে ফোনে কথা বলেই কেটে যায়।
আজো প্রীতি কল দিয়েছে। নীরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাগানের দিকে তাকিয়ে ছিল। অভিকের বাসার উত্তর দিকে তাদের একটা বিশাল বাগান আছে। নীরা কখনো নিজে ওই বাগানে যায়নি। শুধু বারান্দা থেকে নিচে তাকালেই বাগানটা দেখা যায়। প্রীতির কল আসায় নীরা কল রিসিভ করে। ওপাশ থেকে প্রীতি বলে,
‘কি গো আপু, বোনের বিয়ে আর তুমি কিনা এখনো ওখানে? এখানে আসবে কবে?’
নীরা হেসে বলে,
‘আজ বিকেলেই আসবো আপু।’
‘বায় দ্যা ওয়ে কোন বাসায় আসবে শুনি?’
‘ফাহাদ ভাইয়ার বাসায়।’
‘এই না না। তুমি আমার আপু। আমার বাসায় আসবে আগে।’
‘আরে, তুমি যেমন আমার বোন, ফাহাদও তো আমার ভাই। কোন দিকে যাই এবার?’
‘আমি এতো কিছু জানি না। তুমি আমার বাসায়ই আসবে। বায় বায়।’
প্রীতি কল কেটে দিল। নীরা পড়লো বিপাকে। সে অভিককে কল দিল।
‘শুনছেন?’
‘হুম। বলো।’
‘কি করছেন?’
‘শুভ্রর সাথে কথা বলছি। তুমি কি করছ? মন খারাপ?’
‘আরে না না। ওই যে প্রীতি কল দিয়ে জানায় যে বিয়েতে কোন বাসায় যাবো। আমি বলেছি ফাহাদ ভাইয়ার বাসায় যাবো। প্রীতি রেগে আছে। বলে আগে ওদের বাসায় যেতে। কি করবো এখন?’
অভিক শুভ্রর সাথে আলাপ করে নেয়। শুভ্র একটা আইডিয়া দেয়। অভিক সেটাই নীরাকে শোনায়।
‘শুভ্র বলল ফাহাদের বাসায় প্রীতিদের সবাইকে চলে আসতে। ফাহাদের বাসাটা অনেক বড়। যত লোকই থাকুক, ওখানেই বিয়ের সব এরেঞ্জমেন্ট করতে। আমি ফাহাদকে বলে দিচ্ছি। তুমি ট্রলি ব্যাগ গুছিয়ে রাখো। বিকেলে আমরা বের হবো।’
অভিকের কথায় নীরা ফোন কেটে একটা ট্রলি ব্যাগ নিয়ে অভিক এর কাপড় আর নীরার কাপড় গুছাতে থাকে। সাথে প্রয়োজন কিছু জিনিস নেয় নীরা। জোহরের আজান দিতেই শাওয়ার নিয়ে নামাজ পড়ে নেয়। নিচে গিয়ে খাবার খায়।
.
বিকেলে অভিক আসতেই নীরার ডিউটি শুরু হয়ে যায়। অভিকের জামা কাপড় রোদে দিচ্ছে, একবার অভিককে খাবার দিচ্ছে, আর একবার বিছানা ঝাড় দিচ্ছে। অভিক শুধু নীরার কার্জকলাপ দেখছে।
‘ম্যাম আপনি থামুন। আপনি তো দেখছি পাক্কা গিন্নী হয়ে গেছেন। এসব ছেড়ে যান, গিয়ে রেড়ি হন। আমিও ফ্রেশ হয়ে আসি।’
অভিক চলে যায় ওয়াশরুমে। নীরা এই ফাঁকে রেড়ি হয়ে যায়। শাড়ি পরেছে মেরুন রঙের। দুহাতে মেরুন রঙের কাচের চুড়ি। চুলগুলো খোঁপা করে নিয়েছে। চোখে শুধু একটুখানি কাজল দিয়েছে আর ঠোঁটে লিপস্টিক। ব্যাস! সে রেড়ি। এবার অভিক কি পরে যাবে তা বের করে বিছানায় রেখে দিল নীরা।
অভিক ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে নীরা প্রায় রেড়ি হয়ে গেছে। অভিক দেখে সে কি পরবে তাও চুজ করে দিয়েছে সে। নীরা পিছন ফিরে তাকাতেই এক চিৎকার দিয়ে উঠে। দু’হাতে চোখ ধরে রাখে। অভিক ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে।
‘এতো জোরে চিৎকার করলে কেন? কি হয়েছে?’
নীরা কিছুতেই বলতে পারছেনা অভিকের দিকে নীরা তাকাতে পারছেনা। কারণ অভিক শুধু একটা টাওয়াল কোমরে পেছিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে। অভিক নীরাকে ধমক দিতেই সে চোখ বন্ধ করে বলে,
‘আপনি শার্টলেস!’
অভিক মীরার সাথে কথা বলার সময়ই টি-শার্ট আর টাউজার পরে নিয়েছে। নীরার এই কথা শুনে অভিক মুচকি হাসে। কত লজ্জাবতী তার বউটা।
‘এই যে ম্যাম। তাকান এদিকে। আমি ঠিক আছি।’
নীরা অভিকের কথায় তার দিকে তাকিয়ে দেখে অভিক একটা টি-শার্ট আর টাউজার পরে আছে। এতো জলদি কিভাবে পরে নিল সব?
.
ফাহাদের বাসায় বিয়ের ধুম লেগেছে। সবটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আজ প্রীতি আর ফাহাদের হলুদ অনুষ্ঠান। প্রীতি সেজেছে আজ হলুদ সাজে। ফাহাদ সবুজ পাঞ্জাবি পড়েছে। শুভ্রও রেড়ি হয়ে চলে এসেছে। অভিক আর নীরাও উপস্থিত। সব ছেলেরা আজ সবুজ পাঞ্জাবি পরেছে। আর সব মেয়েরা হলুদ শাড়ি। প্রীতিকে সাজিয়েছে নীরা। বিয়েত কনেকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। ঠিক যেন হলদে পাখি।
নীরা প্রীতিকে মেহেদী পড়িয়ে দিচ্ছে। নাচের একটা দল এসেছে। তারা বাংলা, হিন্দি গানের সাথে নাচ করছে। প্রীতিকে মেহেদী লাগিয়ে ফাহাদের হাতেও মেহেদী লাগিয়ে দেয় নীরা। শুভ্র এসে ভাগ বসায়। তাকেও মেহেদী পড়িয়ে দিতে হবে। তাহলে অভিক কেন বাদ যাবে? শুভ্রকে পরিয়ে দেওয়ার পর অভিক নীরার সামনে আসে৷ নীরা অভিককে জিজ্ঞেস করে,
‘এবার আপনাকেও পড়িয়ে দিতে হবে?’
অভিক নীরার হাত থেকে মেহেদীটা কেড়ে নেয়। তারপর নীরাকে অবাক করিয়ে দিয়ে অভিক নীরার হাতে মেহেদী লাগিয়ে দেয়। সবাই জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে। নীরা মুগ্ধ হয়ে অভিকের দিকে তাকিয়ে আছে। অভিককে যতই দেখছে নীরা ততই অবাক হচ্ছে। মানুষটা অনেক চেঞ্জ হয়েছে। বলতে গেলে অনেকটাই। অভিক নীরার হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিয়ে নীরার কানের কাছে এসে বলে,
‘বিয়ের দিন তো তোমার হাতে আমার নামটা দেখলাম। তুমি যতই লুকিয়ে রাখো৷ আমার চোখে ধরা পরেছে সেটা। আজো তোমার হাতে আমার নাম থাকুক। শুধু তোমার হাতে নয়। তোমার মনেও আমার বসবাস হোক। আমার একটা অদ্ভুত তুমি লাগবে। যে তুমিটা কে আমি নিজের মতো করে সাজাতে পারবো, গোছাতে পারবো। ভালোবেসে সখি নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখ, তোমার মনের মন্দিরে।’
অভিক কথাগুলো বলেই ওখান থেকে উঠে যায়। নীরা স্তম্ভিত হয়ে আছে। চোখের কোণে জল জমে গেছে। একটা মানুষ এতোটা ভালোবাসে তাকে?
গানের সাথে সাথে প্রীতি আর ফাহাদ নাচ করে। ওরা জোর করে নীরা আর অভিককে নাচ করার জন্য রাজি করায়। অভিক নীরাকে খুব সুন্দর করে নাচ করাচ্ছে। নাচের মাঝখানে অভিক নীরাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসলে নীরা শুনতে পায় অভিকের হৃদ স্পন্দনের শব্দ শুনতে পায়। নীরার মনে এক অদ্ভুত শিহরণ ভয়ে যায়। ওদের নাচ শেষে শুভ্র গান গায়। তারপর প্রীতি আর ফাহাদের কিছু কাজিনরা নাচ গান করে। ফটোগ্রাফাররা ছবি তুলেই যাচ্ছে। প্রীতি আর ফাহাদকে হলুদ লাগানো হয়। ওরা নিজেদের মধ্যেও হলুদ মাখা মাখি করে। নীরা দৌড় দিয়ে ওদের হাত থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু অভিকের হাত থেকে বাঁচতে পারবে কি?
নীরা সবার কাছ থেকে দূরে একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। পর্দার আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে দেখছে কেউ আসছে কিনা। সামনে ফিরতেই অভিককে দেখে চমকে যায় নীরা। অভিকের হাতে হলুদ। এটা নিশ্চয়ই নীরাকে লাগাতে এসেছে। নীরা তা বুঝতে পেরেই চলে যেতে নেয়। কিন্তু অভিক তাকে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নেয়। অভিক আর নীরা দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর অভিক আলতো করে নীরার গালে হলুদ ছোঁয়ায়। অভিক নীরার খুব কাছে এসে নীরার গালের সাথে নিজের গাল লাগিয়ে স্লাইড করতে থাকে। নীরার গাল থেকে হলুদ নিজের গালে লাগিয়ে নেয়। নীরা খুব লজ্জা পায়। সে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। পরে অভিক সেখান থেকে নীরাকে নিয়ে চলে যায় প্রীতিদের কাছে। বেশ হৈ হুল্লোড় করে কাটে হলুদ আর মেহেদী অনুষ্ঠান।
চলবে…