তুমি অতঃপর তুমিই
৩০
Taniya Sheikh
কয়েকদিনের মধ্যেই নিজেকে ইমরোজের বাসার একজন করে নিয়েছে মৌ। এক ইমরোজের মা ছাড়া সবার কাছে সে প্রিয় হয়ে উঠেছে। সবার কাছে! না, ইমরোজের মনের খবর সে জানে না। মানুষটা যেন কেমন। চোখের দিকে তাকালে মনে হয় বড়ো আপন,আবার কথার রুক্ষতায় মনে হয় ওর মতো পর কেউ হয়ই না। মৌ মাঝে মাঝে ভুলে যায় নিজের লক্ষ্য। এই আশা যখন আপু,আপু বলে ডাকে,আহসান আঙ্কেল যখন মা, মা বলে মাথায় হাত রাখে। মৌ সব ভুলে যায়। ভুলে যায় সে আর স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চায়না,ভুলে যায় প্রতিশোধস্পৃহা। মনের কোনে খুব করে জাগে একটা ছোট্ট সংসারের সাধ। লুকিয়ে কাঁদে তখন। প্রতিশোধস্পৃহার আগুনে নিজেকে পুড়িয়ে কালো না করলে এই সবই চাইতে পারত। ইমরোজকে সাহস করে বলতে পারত। আমি আপনার মতোই পুরুষকে পাবার স্বপ্ন দেখতাম। মৌ হঠাৎই কেমন বদলে যায় এসব ভাবতে ভাবতে। চুপচাপ হয়ে বসে থাকে শূন্যে চেয়ে। ইমরোজ দুপুরে বাসায় ফেরে। খাবার টেবিলে মৌ-য়ের অপেক্ষা করছে। আশা গিয়েছে তাকে ডাকতে। তাতে যেন কারো মনেই বিরক্তি নেই। বরঞ্চ উদ্বিগ্ন মৌ-য়ের না আশায়। কিছুক্ষণ পর মুখ ভার করে আশা ফিরে এলো। সকলের দৃষ্টি তখন ওর পেছনে। না,কেউ নেই। সকলের আগে আমেনা বেগম অধৈর্য্য হয়ে বলে ওঠে,
” কী হ’য়েছে আশা? ও মেয়ে কি খাবে না?”
আহসান সাহেব,ইমরোজ বিস্মিত আমেনার মুখের দিকে চেয়ে। এরা সবাই জানে আমেনা বেগম মৌকে মনে মনে পছন্দ করেনা। তবে এই চিন্তা কিসের! ইমরোজ, এবং আহসান সাহেব মনে মনে এসব ভাবলেও বাহিরে তারা নিশ্চুপ। আশা এগিয়ে আসে। অভিমান করেছে সে মৌয়ের উপর। এতোবার করে ডাকার পর মৌ এলো তো নাই ই উল্টো তাকে কড়া কথা শুনিয়েছে। বলেছে একটা বাইরের মেয়েকে নিয়ে কিসের এতো আদিখ্যেতা তাদের। আশার খুব লেগেছে সে কথা। এতো ভালোবাসে মৌ আপুকে সবাই। অথচ তার কাছে এসব আদিখ্যেতা! আমেনা বেগম মেয়েকে চুপ দেখে ধমকে ওঠেন,
” কি রে! বলছিস না কেন কিছু? ”
” কী বলব?” আশা তেজে ওঠে। আমেনা বেগম সহ বাকিরা চোখ বড়ো বড়ো করে দেখল আশাকে। সুন্দর মেয়েটা রাগে লাল হয়ে উঠেছে। বাকিরা ভ্রুকুটি করলেও আমেনা বেগম মেয়েকে তিরস্কার করে বলেন,
” কিছুই হয়না তোর দ্বারা। একটা মেয়েকে ডেকে আনবি সেটাও পারিস না।” আশা সচারাচর মায়ের সাথে তর্ক করে না। বাবা- ভাইয়ের সামনে তো নয়ই। আজ সব রেকর্ড ভেঙে গর্জে ওঠে,
” এতো আদিখ্যেতা কিসের ঐ মেয়েকে নিয়ে। চেনা নেই, জানা নেই বাসায় আনার কী দরকার ছিল তাকে? যত্তসব।” আশার কণ্ঠস্বর কাঁপে। কান্না লুকাতে দ্রুত পায়ে চলে যায় মায়ের ঘরে।সবাই স্তব্ধ হয়ে বসে আছে ওর দিকে চেয়ে। আমেনা বেগম লজ্জিত হলেন। সবাই চোখ মৌয়ের রুমের দিকে। মেয়েটা এসব শুনলে কী কষ্টটাই না পাবে! দুপুরে কেউ ই খেল না। ইমরোজ না খেয়ে চলে গেল। আমেনা বেগম একা একা অনেক্ক্ষণ ভাবলেন। তারপর ইতস্তত ভাবে এগিয়ে গেলেন মৌ যে রুমে আছে সেদিকে। মায়ার টান বড়োই কঠিন টান। এ টানের কাছে সবই যেন হার মানে।
ইমার পায়ের অবস্থা এখন ভালো। শানের কারনে এ’কদিনে পা-টা নিচে নামাতে পারেনি সে। আজ যখন পা নাড়িয়ে বলল, ” শান দেখুন,আমার পায়ের ব্যথা গায়েব।” শান গাল টেনে বলেছে,” তো।”
” তো আবার কী? আমি নিচে নামব। কতদিন হলো যাই না।”
” কতদিন!”
” কতদিনই তো। আপনি কোলে করে নিচে বসিয়েছেন,ছাদে ঘুরিয়েছেন। ওটা তো আর আমি নিজে যায়নি। নিজ পায়ে হেঁটে যাবার মজাই আলাদা।”
” এতো মজা ভালো না। পা”য়ের ঘা পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে তারপর যেখানে খুশি যেয়ো।”
” উহু! প্লিজ,প্লিজ।”
” পুরাই ড্রামাবাজ একটা। ওয়েট তোমার এই মুখাভঙ্গির একটা পিক তুলে রাখি। আমি একা কেন দেখব? সবাই দেখুক।”
” না।” শানের হাত টেনে সামনে বসায়।
” না কেন?” ইমার নাকটা টেনে জিজ্ঞেস করতেই ইমা ওর বুকে মাথা রাখে। বলে,
” আমার যত ন্যাকামি, বাঁদরামি সব তো আপনার জন্য। আপনি ছাড়া এসব দেখার হক আর কারো নেই।”
” আচ্ছা!” শান মুচকি হেসে ইমাকে দু-হাতে জড়িয়ে বিছানায় গড়িয়ে পড়ে। ইমার মুখে এসে পড়া চুলগুলে আলগোছে সরিয়ে পুনরায় বলে,
” ইমা।”
” হুমম।”
” আর ছেড়ে যাবে না তো?”
” কোনোদিন না।”
” ভুল বুঝবে না তো?”
” কোনোদিন না।”
” সত্যি?”
” অযুত,নিযুত, কোটিবার সত্যি।” ইমা গলা জড়িয়ে শানকে খুব কাছে টেনে নেয়। বাহিরের একফালি রোদ এসে ঢুকেছে এই রুমে। সাথে করে এনেছে শিহরণ জাগানো মধুর পবন। এই দু’টো মানব মানবীর কাছে মর্ত্য এখন স্বর্গ তুল্য।
বেশ কয়েকদিনের ঝামেলা শেষে আজ খান বাড়ির লোকেরা সবাই একসাথে খেতে বসেছে। সেখানেই শায়লা খান জানান,
” আগামি শুক্রবার মাহিব,সামিরার বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছে। হাতে মাত্র সাতদিন রয়েছে। এরমধ্যেই সকল কাজ শেষ করতে হবে।” মাহিব, সামিরা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রয় অপলক। প্রতিবাদ আজ কেউই করেনা। কেন করেনা তার খবর কেবল এদের অন্তর জানে। শায়লা খান সহ বাকিরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে এদের নীরবতা দেখে। তবুও শায়লা খান মনের খচখচানি দূর করতে আরেকবার জিজ্ঞেস করে।
” তোমরা কী সত্যি এ বিয়েতে রাজি আছ?”
” জি।” প্রথমে সামিরা বলে। ঠোঁটের কোনে একচিলতে ক্রুর হাসি ঝুলন্ত। মাহিবও দমে যাওয়ার পাত্র নয়। সে একপ্রস্ত হেসে বলে,
” আমারও আপত্তি নেই।”
শায়লা খান সহ সামিরার বাবা-,মা নিশ্চিন্ত হয়। এদের সকলের ধারণা গত কয়েকদিনের বুঝানোতে সামিরা,মাহিবের আচরণের এই পরিবর্তন। শায়লা খান সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন এ দুজনের উপর। সামিরাকে তিনি শাসিয়েছেন শানকে সব বলে দেবার ভয় দেখিয়ে। ব্যস, তাতেই এই বাঘিনী বিড়াল বনে গেছে। নিজের মধ্যে শক্তি ফিরে পান শায়লা খান। এখন মনে হয় তিনি একাই পারবেন স্বামীর রেখে যাওয়া রাজত্ব সামলাতে। ছেলেটাও তার বশ মেনেছে। সবই হয়েছে ইরার মৃত্যুকে পুঞ্জি করে। খুশি মনে রুমে ফিরে আসেন। তিনি কল্পনাও করেননি তার জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পার করছেন। যে সর্প দুটোকে বশ করেছেন ভেবে আনন্দিত হয়েছেন- একটু পর এরাই তার জীবন নাশের কারন হবে। শায়লা খান রাতে কিছুক্ষণ বাথটবে শরীর ভিজিয়ে আরাম করেন। এতে নাকি মাইণ্ড রিলাক্স হয়। আর সবার কথা জানেন না। তবে তার হয়। তিনি আজও তাই সেখানে গেলেন। পানি ছেড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অভ্যাস বশত নিজেকে খুঁটিয়ে, খুঁটিয়ে দেখলেন। কত সাধের শরীর খানা তার। কাড়ি কাড়ি টাকা ব্যয় করেছেন এই সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য। দিনশেষে সবই যেন ব্যর্থ হয়। নেতিয়ে,কুচিয়ে যায়। বাথটব পানিতে ভরে গেছে। তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে একটা পা রাখেন পানির ভেতর। সাথে সাথে তার শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে। কেউ সজোরে টেনে ধরেছে তার শরীরের রগ। চিৎকার করে ওঠেন৷ চারদেয়ালের বাইরে খুবই আস্তে শোনা যায় সে শব্দ। যে দুজনের কানে যায় তারা হাসে। অদ্ভুত নিষ্ঠুর সেই হাসি। শায়লা খান পুরোপুরি বাথটবে পড়ে যান। অচিরেই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় তার। শরীর শক্ত হয়ে আসে।
হাতে হাত রেখে নির্জন অন্ধকার মেঠো রাস্তা ধরে হাঁটছে শান, ইমা। পা’টার জন্য এতোদিন বাইরে বেরোতে পারেনি। আজ তাই এশা পড়েই দুজনে হাঁটতে বেরিয়েছে। শানের এক হাত ধরে হাঁটছে আর গুন গুন করছে ইমা। শান মুচকি হেসে বলে,
” জোরে গাও।”
” জোরে গাইলে শিয়াল ছুটে আসবে।” বলেই খিলখিল করে হেসে ওঠে। শান বিমুগ্ধ চোখে চেয়ে রয়। ইমার সেটা চক্ষুগোচর হতেই লজ্জায় মুখ নামিয়ে বলে,
” এভাবে তাকাবেন না।”
শান ভ্রু কুঞ্চিত করে বলে,
” কেন?”
” আমার লজ্জা করে।”
শান ইমার চিবুক ধরে ঠোঁট স্পর্শ করতেই ইমা লজ্জা রাঙা হয়ে বলে,
” ধ্যাৎ! আপনি না।”
একহাতে ইমার গলা পেঁচিয়ে কাছে টেনে শান হাসতে হাসতে বলে,
” আমি না কি?”
” ঘোড়ার ডিম।”
” আমি ঘোড়ার ডিম না, আমাদের ডিমের বাবা হতেই চাই।” ইমার মুখটা গম্ভীর হয়ে ওঠে। সাথে শান নিজেও। ইমার কাছ থেকে দূরে সরে দাঁড়ায়। দুজনের কেউ কিছুক্ষণ কথা বলে না। নীরবে হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ফিরে আসে। শান এড়িয়ে যেতেই ইমা ওকে জড়িয়ে ধরে সশব্দে কেঁদে ওঠে। শান সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পায়না। চুপচাপ মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে সে। ইমা কাঁদতে কাঁদতে বলে,
” আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ।” বলেই আবার কাঁদে। শান কোনো কথা বলছে না দেখে কান্না যেন থামলোই না। শান অনেক্ক্ষণ পর অনুভব করে ওর চোখের কোনা গড়িয়ে জল পড়ছে। চট করে জলটুকু মুছে ইমার মাথায় হাত রাখে।
” তোমার কোনো দোষ নেই ইমা। সব দোষ আমার। আমার পাপের শাস্তি আমি সন্তান হারিয়ে পেয়েছি।”
ইমা দু কদম সরে দাঁড়ায়। বিস্মিত সিক্ত চোখে চেয়ে বলে,
” এসব কী বলছেন আপনি?”
” ঠিকই তো বলছি। তোমার ভাই,বাবাকে আমিই তো ওদের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। না জেনেই দেই কিন্তু দিয়েছি তো। এটা তো পাপ। তোমার মা সন্তান হারিয়েছে, তুমি বাবা হারিয়েছ। তবে আমি কেন হারাব না। ঠিকই হয়েছে আমার সাথে। আমার পাপের শাস্তি এরচেয়ে ভালো আর কী হতো।” শান কঠিন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেই কাঠিন্য ভেদ করে সমস্ত মুখ ভিজে যাচ্ছে নোনাজলে। ইমা ছুটে এসে জাপটে ধরে শানকে। কথা বলার ভাষা ইমার নেই। কি বলবে কিছুই সে জানে না। শান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে,
” আমার সন্তান ইমা,অথচ আমি তাকে দেখতে পেলাম না,ছুঁতে পেলাম না। যেদিন থেকে তার কথা তুমি বলেছ আমি ওকে ভুলিনি। মাঝে মাঝে আমার ভাবনা দখল করে নেয় ও। আমি মরতে গিয়েছিলাম কয়েকবার। ও মরতে দেয়নি৷ কোনো অবয়ব না,একটা মাংস পিণ্ড আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
” বাবাই, ওরা আমাকে মেরে ফেলল কেন? বাবাই তুমি আমাকে বাঁচালে না কেন? ও বাবাই,বাবাই। তুমি শুনছ। শুনছ আমি কাঁদছি।” আমার কলিজা ছিঁড়ে যায় ইমা। আমি তখন বুঝি তোমার মায়ের কষ্ট। সন্তান হারানোর কষ্ট। আমার সকল প্রতিশোধস্পৃহা ভঙ্গুর হয়ে যায়। অপরাধবোধ কুঁড়ে, কুঁড়ে খায় আমাকে। বাঁচতে ইচ্ছে করেনা। ঘৃণা হয় নিজের উপর,প্রচন্ড ঘৃণা।” ইমাকে জড়িয়ে ধরে নিচে বসে পড়ে। দু’জনই শব্দ করে কাঁদছে। শান ঝাপসা চোখে দেখে একটা মাংসপিণ্ড। আজ হঠাৎই সেটা একটা ছোট্ট শিশুর অবয়ব নেয়। ঠোঁটের কোনে তার কী মিষ্টি হাসি! আজ দুঃখ নেই,কান্না নেই। ইমা অচেতন হয়ে পড়ে সাথে সাথে। শান ভয়ে কোলে তুলে নেয়। কাউচে শুয়ে দিয়ে ল্যান্ডফোনে ডাক্তারকে কল করে। রিসিভার নামাতেই সামনে সেই শিশুটিকে দেখে। এগিয়ে এসে শানের আঙুল ধরে নিয়ে এসে বসায় ইমার সামনে। ইমার পেটের উপর হাত রেখে মিষ্টি হেসে বলে,
” আমি আসছি তো বাবাই। এই দেখো।” শান অনুভব করছে আজ সেই স্পর্শ। একটা নরম হাতের স্পর্শ। যে হাতটা ওর হাতের উপর। চমকিত, হতবিহ্বল শানের দু-চোখ গড়িয়ে ফের জল পড়ে। সেই জল মুছে শিশুটি বলে,
” তুমি কী জানো বাবাই, অনুশোচনায় সকল পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়। ভুল তো সবাই করে- সেখান থেকে যারা শিক্ষা নেয়, নিজেকে পুড়িয়ে সোনা বানায় তারাই তো সত্যিকারের মানুষ। আশরাফুল মাকলুকাত তাদেরই তো বলে। তুমি ক্ষমা চাইবে না বাবাই? সে তো গাফুরুর রাহিম। নেক দিলে চাইলে তিনি কাওকে ফেরান না। তুমি চাইবে ক্ষমা,ক্ষমা করবে তাই না বাবাই, বলো বাবাই?”
” হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি চাইব ক্ষমা,করবও। আমি নিজেকে পুড়িয়ে সত্যিকারের মানুষ হব,তোমার বাবাই হব।” শান শিশুটির হাস্যজ্বল মুখটা ছুঁতেই সেটা গায়েব হয়ে যায়। একদৃষ্টে সেই শূন্যে চেয়ে চোখ মোছে। ইমাকে কোলে তুলে উপরে চলে আসে।
ডাক্তার এসে ইমাকে পরীক্ষা করে মুচকি হাসেন। শান জানে কী হতে চলছে। উত্তেজনায় অস্থির হয়ে উঠেছে সে। ডাক্তার ফারজানা জানায় ইমা অন্তঃসত্ত্বা। তবুও একবার বিষয়টা নিশ্চিত হতে কিছু চেকাপ করা জরুরী। শান সম্মতি দেয় তাতে। ডাক্তার ভিজিট নিয়ে চলে যায়। সাথে সাথে মোবারকও যায়। তার আজ খুশির সীমা নেই। মিষ্টি আনতে বাজারে ছুটেছে সে। এই নিভৃত স্থানে হঠাৎই খুশির আমেজ তৈরি হয়। ইমা খুশি হলেও মন ভার করে শুয়ে আছে বিছানার এক কোনে। সব ঠিক হয়েও যেন হচ্ছে না৷ অতীত ওদের মাঝে দেয়াল হয়ে ঠিকই দাঁড়াচ্ছে ঘুরে ফিরে।
” ইমা ভাবি, ওঠেন, ফলগুলো খেয়ে নেন।” ইমা ফিরে তাকায়না। নিচু গলায় বলে,
” আমি খাব না আসমা।”
” স্যার খেতে বলেছে আপনাকে।”
” বলুক। আমি খাব না।” আসমা মন খারাপ করে ট্রে হাতে নিচে নেমে আসে। শান কাইচে বসেছিল। আসমা ওর সামনে এসে বলল,
” ভাবি খেলো না।”
শান কিছুক্ষণ চুপ করে আসমার হাত থেকে ট্রেটা নিয়ে উপরে চলে আসে। বিছানার সাইড টেবিলে রেখে বলে,
” ইমা,ওঠো।”
ইমা ওঠেনা,ফিরেও তাকাইনা। শান ওর শিওরে গিয়ে টেনে তুলে মুখোমুখি বসায়।
” কী হয়েছে? ”
ইমা নাক ফুলিয়ে কাঁদছে। শান ঝুঁকে বলে,
” রাগ করেছ বউ। ও বউ,বউ।” ইমার নাক,গাল টেনে মুচকি হাসে শান। ইমা দু’হাত ছুঁড়ে শানের বুকে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
” আমাদের অতীত কেন বার বার আমাদের মাঝে দুরুত্বের দেয়াল তৈরি করে? কেন আমরা আলাদা হয়ে যাই?”
” আর এমন হবে না।”
” সত্যি বলছেন?”
” হুমম।” শান ইমার কপালে চুমু খায়। তারপর বলে,
” এখন খাও।”
” আপনি খাইয়ে দিন।”
” আহ্লাদী একটা।” একপিছ কমলা মুখে তুলে দিলে ইমা মুখে পুরে অস্ফুটে বলে,
“বউগত অধিকার এটা আমার।” শানের গালে চুমো দিয়ে মুখ নামিয়ে হাসে। শান এক হাতে গাল টেনে ঠোঁট স্পর্শ করতেই ইমা ঠোঁট উল্টে বলে,
” ধ্যাৎ! আপনি যা তা।”
” তুমি দিলে আহা! আমি দিলেই যা তা। বাহ! রে দুনিয়া। পুরুষ মানুষের তো শুধুই বদনাম।”
” ফাজিল একটা।” শানের কলার টেনে গলা জড়িয়ে ধরে ইমা বলে,
” আপনি খুশিতো শান।”
” অনেক।” দু’বাহুতে ইমাকে কাছে টেনে মাথায় হাত বুলায়। গুন গুন করে গায়,
” আমার যা কিছু সবই তোকেই ঘিরে,
আমার যত সুখ সবই তোর নামে।
তুই ছাড়া এই আমি,আমি নই,
এ জীবন তুই, শুধু তুই।
তোর নামেতে ফোটে হৃদয়বাগে প্রসূন,
তুই আমার বসন্ত, তুই ফাগুন।।
চলবে,,,,