তুমি অতঃপর তুমিই পর্ব -০৪

0
4904

তুমি অতঃপর তুমিই
পর্ব -০৪
Writer Taniya Sheikh

ইমা কুলসুমকে নিয়ে হাজির হয় বাবুমিয়ার হোটেলের পাশে। এই হোটেলেই কাজ করে কুলসুমের ভালোবাসার মানুষটা। ইমার মেজাজ বেজায় চড়া। চেয়েছিল দু’ঘা বসিয়ে হিড়হিড় করে টেনে আনতে কুলসুমের তথাকথিত প্রেমিক রাসেলকে৷ বেচারী কুলসুম তা শুনেই নাক টেনে কাঁদতে লাগল। বললো,

” আফা, এমন করিয়েন না। তাকে বুঝিয়ে বললে ঠিক বিয়ে করবে আমাকে। মারিয়েন না গো আফা। মন থেকে তো তারে আমি স্বামী মানছিই। চোখের সামনে স্বামীকে বেইজ্জত হতে দেখতে পারুম না।”

” স্বামী মানলেই স্বামী হয়ে গেল হারামীটা তোর? বেক্কল মেয়ে, কতোবড় চালবাজ ঐটা বুঝোস তো নাই। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে সর্বনাশ করেছে তোর। স্বামী মানছি! বেকুব।” রাগে গলা চড়িয়ে বলে ইমা।চোখদুটো রৌদ্রের খরতাপ সাথে রাগের তাপে মিলিমিশে তীব্র তেজে জ্বলছে।

” আফা, আপনে বকেন যা খুশি বলেন। দরকার পড়লে চড়ও দিতে পারেন আমারে। আমি কিচ্ছু কমু না। তবুও তারে কিছু কইয়েন না গো আফা। আপনে মনে হয় কুনোদিন ভালোবাসেন নাই কাউরে। ভালোবাসলে বুঝতেন আমার জ্বালা গো আফা,ভালোবাসলে বুঝতেন।” কুলসুম ওড়না দিয়ে নাক মুছে আবার কাঁদছে। ইমা রেগে ধমক দিতে উদ্যত হলে নুসরাত ইমার হাত ধরে ইশারায় থামতে বলে। নুসরাত স্বাভাবিক স্বরে কুলসুমকে বললো,

” ঠিক আছে তোমার তাকে কিছুই বলবে না ও। যাও ডেকে নিয়ে আসো এখানে। যাও।”

বৃষ্টির মধ্যেই হঠাৎ রোদ উঠলে হলে যেমন লাগে, ঠিক তেমনিই লাগল কুলসুমের অশ্রুসিক্ত হাস্যোজ্জ্বল মুখটা। ইমার গম্ভীরমুখে এক নজর তাকাতেই খানিকটা মলিন হলো সেই উজ্জ্বলতা। পাশে দাঁড়ান নুসরাতের হাসিতে কুলসুম পুনরায় হাসল। হাসিমুখে এগিয়ে গেল হোটেলের মুখে। ইমা সেদিক তাকিয়ে দাত খেঁচিয়ে বললো,

” এসব লাভ সাভ সেন্টিমেন্ট দেখলে আগুন ধরে যায় গায়ে। জাস্ট আগুন ধরে যায়। বুদ্ধি ঘাস খেতে গেছে ভালোবাসার মোহে পরে ওর। দেখিস এক্ষুনি আসবে উস্টা খেয়ে। ভালোবাসা! বুঝিয়ে দেব তখন ভালোবাসা কাকে বলে? কত প্রকার? ”

” জাস্ট রিলাক্স ইমা। তুই যা ভাবছিস তা নাও তো হতে পারে। ভালোবাসার পাওয়ার কিন্তু খুব হয় জানিস তো?” নুসরাত এক চোখ টিপে মুচকি হাসতেই ইমা চোখ পাকায়। নুসরাত সে নজর উপেক্ষা করে ফের বলে,

” একটু প্রেম করে দেখবি নাকি?”

” নুসরাতের বাচ্চা! গলা টিপে মেরে ফেলব যদি আবার এসব ফালতু জোকস মারছোস অটাইমে? চুপ থাক। একদম চুপ!” ইমার তিরিক্ষি মেজাজে নুসরাত চুপসে গেল। এর বেশি মজা করলে ঠিকই গলা চেপে ধরবে। এই ইমাকে বিশ্বাস নাই। নুসরাত গুনগুন করে হোটেলে দিকে তাকিয়ে আছে। আড়চোখে একবার ইমার অস্থিরতাও দেখল। ঠোঁট কামড়ে হাসছে নুসরাত৷ ইমার ধারণা যেন ভুল হয়, মনে মনে ব্যাকুল প্রার্থনা করলো রবের কাছে। বেশখানিক সময় অতিবাহিত হতেই হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে এলো কুলসুম। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। বোধহয় খুব কেঁদেছে মেয়েটা। ওর পেছন পেছন বিশ বাইশ বছরের কালো গাত্রবর্ণের মধ্যমদেহি একটা ছেলেও আসছে৷ নুসরাত একবার সামনে আবার পেছনে তাকাতে তাকাতে এগিয়ে এলো ওদের দুজনের সামনে। ইমা মুখটা নুসরাতের কানের কাছে এনে চাপা স্বরে বললো,

” যাওয়ার সময় মুখের উপর চারশ চল্লিশ ভোল্টেজের আলো নিয়ে গেছিল, আর ফেরার সময় মুখের উপর অমাবস্যা। ভালোবাসা দারুন শিক্ষা দিছে আজ ওরে। ঐ শালারে তো খাইছি আজ।”

ইমা কটমট দৃষ্টিতে সোজা হয়ে দাঁড়াল। নুসরাত কপাল কুঞ্চিত করে নিচু গলায় বললো,

” আগে সব ক্লিয়ার হোক তারপর লাফাইস। মেজাজ কন্ট্রোলে রাখ ইমা।”

নুসরাতের কথার ধরণ ইমার পছন্দ হলো না। এই মেয়ে সবসময়ই জ্ঞান দেয়। আরে ইমা কী কম বোঝে? এই কুলসুম ছ্যাঁকা খাবে ইমা সিওরের উপর সিওর। তবুও নুসরাত ভ্রান্তি মনে বেঁধেছে।

” বাঁধো সখি বাঁধো ভ্রান্তি। তোমারে একটু পরেই ভুল প্রমাণিত করে তবেই আমার শান্তি।” ইমা মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।
কুলসুম মুখ নামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর ঠিক পাশে হাত পেছনে নিয়ে দাঁড়ানো রাসেল। ইমা ক্রোধান্বিত দৃষ্টিতে রাসেলকেই দেখছে। হাতটা নিশপিশ করছে খুব। ইমা কুলসুমকে লক্ষ্য করে কিছুটা গম্ভীর গলায় বললো,

” মেনে নিয়েছে তোরে ও?”

কুলসুম কথা বলে না। মাথা দুলে দুলে উঠছে কান্নায়। ইমা নুসরাতের দিকে ঠোঁট বাকিয়ে আচমকা সামনে দাঁড়ানো রাসেলের গলা চেপে ধরে।

” শালার ব্যাটা, মাইয়্যা মানুষরে দেখলে চোখ টাটায়? শুইতে মন চায় খালি? কথা ক শালা?” ইমা চড় দিতে হাত উঠাতেই কুলসুম হাত ধরে শব্দ করে কেঁদে ওঠে। ইমা হাত ছাড়াতে চেয়েও পারছে না। মেয়েটার শরীরে জোর আছে বলা যায়। ইমা ধমক দিয়ে বলে,

” হাত ছাড়। বেক্কল ছেরি এখনও তোর হুশ ফেরে নাই। এখনও বলবি আফা সে আমার ভালোবাসা। তারে আমি মনে মনে সোয়ামী মানছি।”

” হ বলমু।” কুলসুম ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জবাব দেয়। ইমা হাত ছাড়িয়ে ভ্রুকুটি করে বলে,

” হ্যাঁ রে নুসরাত, এই মেয়ে কী আসলেই বেকুব? ঐ মেয়ে মাথা ঠিক আছে তোর?”

” আফা, আপনে আগে পুরা কথা তো শুনবেন।”

” পুরা কথা!”

” হ! আপনে তো সব না শুইনাই তারে মারতাছেন। হেই ভালা পুরুষ।”

” হেই ভালা পুরুষ! ভালা পুরুষ কারে কয় জানিস তুই? ভালা পুরুষরা বিয়ার আগেই,, ”
রাসেল চোখে চোখ পড়তেই দাঁত খিঁচে থেমে যায় ইমা। রাগে শরীরের শিরায় শিরায় টান ধরেছে। কপালের পাশটা ধরে নুসরাতকে ইশারা করে সব জিজ্ঞেস করতে। নুসরাত কুলসুমের কাঁধে হাত রেখে বলে,

” কী হয়েছে খুলে বলো।”

” ঐ আফা এতো রাগে ক্যান? ও আফা,আপনে রাইগেন না গো। সে সত্যই ভালা। যা হইছে তার আমার সম্মতিতেই হইছে। সে আমারে কথা দিছে আজই বিয়া করব।”

” কী?” ইমা চমকিত হয়। রাসেল,কুলসুমের দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুঞ্চন করে বলে,

” বিয়া করব মানে কী? আজ কেন করব? আগে কেন করে নাই? তোমার হেই ভালা, বড়োই ভালা। আবে হালা কস না ক্যান? এই মাইয়্যারে লইয়া খেলছোস ক্যান এতোদিন?”
রাসেলের কলার পুনরায় চেপে ধরে দু’চড় লাগিয়ে দেয় ইমা। নুসরাত রেগে যায়। ইমার হাত ধরে টেনে সরিয়ে আনে। কুলসুম ফুঁপিয়ে কাঁদে রাসেলের গালে হাত বুলিয়ে। ইমা চেঁচিয়ে ওঠতেই মুখ চেপে ধরে নুসরাত। চাপা ধমকে বলে,

” বেশি হচ্ছে কিন্তু এবার। আগে শোন কী বলে ওরা। সবসময়ই গুন্ডাগিরি না দেখালেই হচ্ছে না উনার।”

ইমা ক্রুর দৃষ্টিতে নুসরাতকে দেখে ঝটকা মেরে সরে আসে। রাসেলের দিকে তাকাতেই রাসেল বিনম্র স্বরে বলে,

” আপনি যা বলতে চাচ্ছেন আমি বুঝতে পারছি আপা। তবে আপা সবসময়ই সবাই খারাপ ইচ্ছা করে হয় না। পরিস্থিতিতে পরেও হতে হয়। কুলসুমের এই অবস্থার জন্য আমি দায়ি। অপরাধ আমি মানছি। আবেগের কারনে হয়তো ভুলটা হয়ে গেছে। আমি বিয়ে করতে চেয়েছিলাম ওরে। দুজনে প্লানও করেছিলাম পালানোর। কিন্তু তার আগেই এতিম খানার কেয়ারটেকার সব জেনে যায়। আমারে খুব মারে কেয়ারটেকার। ভয় দেখায়। কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারি নাই ওর সাথে। পরে শুনলাম ওর বিয়ে হয়ে গেছে। এই খবর শোনার পর থেকে আমার ঘুম হয় না আপা, আমি খাইতে পারি না,কোনো কাজে মন বসে না। খালি কান্দা আহে। আমি তো ওর শরীরের সাথে ওরেও ভালোবাসছিলাম আপা। অনেক ভালোবাস ছিলাম।” রাসেল চোখ মোছে। ইমার রাগ গলে বিস্ময় ভেসে উঠল। কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না রাসেলের কথা। নুসরাত ইমার মুখের ভাব বুঝে মৃদু হাসল। এগিয়ে গেল কুলসুম এবং রাসেলের দিকে। কুলসুমের মাথায় হাত রেখে পরম স্নেহে বললো,

” চলো কাজী অফিসে যাই।” কুলসুম হাসতে গিয়েও হাসল না ইমার মুখের দিকে তাকিয়ে। এগিয়ে এল ইমার সামনে। ইমার হাতদুটো মুঠোবন্দি করে বললো,

” আফা আপনের জন্যে আমি তারে পাইছি। যার সাথে আমার বিয়ে ঐদিন হইতাছিল সে নাকি খুব ধনী। আমার ধন সম্পদ চাইনা আফা। খালি ভালোবাসার মানুষটা পাশে থাকলেই খুশি আমি। তারে না পাইলে বাইচ্যা থেইকা কী করুম? তাই তো মরতে গেছিলাম। অভিমানে ঐদিন তারে কতো গালমন্দ করছি। আমার মাথা ঠিক আছিল না। আপনে তার উপর ক্যান রাগ করতাছেন আমি বুঝছি আফা। বিশ্বাস করেন সে যা কইছে সব সত্য। তারে ক্ষমা কইরা দেন আফা। আপনেরে আমি সম্মান করি। আপনে ক্ষমা না করলে আমি শান্তি পামু না। আপনে বড়ো ভালা। পরের জন্যে এতো কেউ করে না। আপনার কাছে আমি ঋণী। আপনে আজ থেইক্যা আমার ধর্ম বইন।” কুলসুম ইমাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কাঁদছে। ইমা স্থির দাঁড়িয়ে আছে। একটু আগেও ভেবেছিল রাসেলকে মেরে শান্তি মিলবে এখন আর তা মনে হচ্ছে না। ঘৃণা, ক্রোধ কোনোটাই কাজ করছে না রাসেলের প্রতি। ইমা নুসরাতের চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল। আনন্দিত দেখাল নুসরাতকে । আরও দু’তিনজন বন্ধু বান্ধবকে ডেকে আনন্দের সাথে বিয়ে দিল রাসেল,কুলসুমের। সবাই চাঁদা তুলে ইমাদের এলাকাতে একটা ছোট বাসা ভাড়া করল। ঘর গৃহস্থালির টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনে দিল ইমা। তিনহাজার টাকা কুলসুমের হাতে গুঁজে দিয়ে বললো,

” সুখী হ। অনেক সুখী।”

” তুমি আর আসবা না আফা?”

” আসব না মানে? অবশ্যই আসব। বোন বলেছিস এখন তো আসা লাগবেই।” ইমা কুলসুমের মাথায় হাত রেখে হাসল। লাল জামদানি শাড়ি পড়েছে কুলসুম। নুসরাত খুব সুন্দর করে বউ সাজিয়েছে। ইমার মনের কোনে সূক্ষ্ম টান অনুভব করল।কীসের টান বুঝতে পারল না সে। বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে খেয়ে দেয়ে, কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বিদায় নেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল ওরা। ইমা রাসেলকে গম্ভীর গলায় বললো,

” আমার বোনকে যদি কষ্ট দিয়েছ তো খবর আছে তোমার। এটা আমার এলাকা। এখানে আমার উপর কথা বলার সাহস কারো নেই। আর হ্যাঁ ঐ দোকানে তোমার কাজ করার প্রয়োজন নেই। কাল আমার সাথে দেখা করবে। তোমাকে একটা বড় দোকানে কাজ দেব৷ মোবাইল নাম্বার দিয়েছি সকালে কল দেবে।”

” জি আপা!” রাসেল বিনয়ের সহিত মাথা নাড়ায়। সবাই বিদায় নিয়ে চলে আসে। ইমার বাকি বন্ধুরা যার যার বাসায় ফিরে যায়। ইমা ওদের গলির আবছায়াতে ধীর পায়ে হাঁটছে। অন্যমনস্ক ভাব এসে ভর করেছে ওর উপর।

” কী ভাবছিস?”

ইমা চমকে পেছন ফিরতেই নুসরাতকে দেখে বিস্মিত হয়।

” তুই যাস নি বাসায়?”

” না! আজ তোর সাথে থাকব বলে ফিরে এলাম।” নুসরাত ইমার বাহু পেঁচিয়ে বললো।

” হঠাৎ? ”

” ইচ্ছা হলো। কেন তোর সমস্যা আছে?”

” আরে নাহ!” দু’জনে চুপচাপ হাঁটছে। কিছুদূর এসে নুসরাত বললো,

” ছেলেটার খোঁজ নিলে কেমন হয়?”

” কোন ছেলে?” ইমা ভ্রুকুটি করে।

” আমাদের দুলাভাই।” নুসরাত মৃদু হাসল।

” নুসরাত!” ইমা দাঁড়িয়ে যায়। বুকের ভেতরটা ধ্বক করে ওঠে হঠাৎই। নুসরাত বললো,

” আজব! চোখ পাকাচ্ছিস কেন? দুনিয়ার সবাইকে ন্যায় পাইয়ে দিতে তুই মরিয়া,শুধু দুলাভাইয়ের বেলায় অন্যায় কেন?”

” তুই হাত ছাড়! ছাড়! বেয়াদব ছেরি। দুলাভাই, দুলাভাই কারে কস তুই? তোরে ঐদিন কী বলছিলাম? বল কী বলছিলাম?” ইমা মুখ চেপে ধরতেই নুসরাত ইমার পেটে সুরসুরি দিয়ে সরে দাঁড়ায়। দুই গাল হাত দিয়ে ডলতে ডলতে বলে,

” এতো আগুন কেন তোর ভিতরে? দুলাভাইরে দুলাভাই কমুনা তো কী কমু?”

” যা খুশি বল।শুধু ঐ টা বলবি না।” আঙুল তুলে শাসায় ইমা। ভারী হয়ে আসছে নিঃশ্বাস। নুসরাত ঠোঁট টিপে হেঁসে শুধায়,

” কোনটা?”

” যেইটা মাত্র বললি।”

” কোনটা মাত্র বলছি?”

” নুসরাতের বাচ্চা। ” ইমা নুসরাতকে ধরতে গেলেই ছুটে দৌড়ায় নুসরাত। হাসতে হাসতে গানের সুরে বলে,

” দুলাভাই! দুলাভাই। ও আমার দুলাভাই। আপনাকে আপনার বউ দুলাভাই না বলিতে কয়। এটাকি ঠিক বলেন? এটাকী ঠিক?”

” নুসরাতের বাচ্চা আজ তুই গেলি?”

” দুলাভাই আপ কাহাপে হো? মুঝে বাঁচালো আপকি গুন্ডি বিবিছে।” নুসরাত একদৌড়ে চলে আসে ইমার মায়ের রুমে। ভাগ্য বলে বিভা তখন রুমেই ছিল। নুসরাতকে হাঁপাতে দেখে ধরে বিছানায় বসায়। ইতোমধ্যে ইমাও রুমে ঢুকে পড়েছে। মা’কে দেখে থমকে যায় ইমা। নুসরাতের মুচকি হাসি দেখে দাঁতে দাত পিষে রুম ছেড়ে বেরিয়ে আসে। নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় সশব্দে। বিভা ভ্রু নাড়িয়ে কী হয়েছে জানতে চাইলে নুসরাত “কিছু না” বলে হাসে। বিভা গম্ভীরমুখে বলে,

” তোরা আর বড় হলি না। আমারটা তো ভাব ধরে সে কতোইনা বড় হয়েছে। কাজের বুদ্ধি তো একচুল নাই ওর মাথায়। যা আছে সবই অকাজের বুদ্ধি। ভয় হয় আমার ওরে নিয়ে৷ মেয়ে হয়েও মেয়েলি ভাব নাই। এলাকা দাপিয়ে বেরায় বেটাছেলের মতো। একটু তো বুঝাইতে পারিস নাকি?”
দৌড়ের কারনে গলা শুকিয়ে গেছে নুসরাতের। টেবিলের উপর রাখা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলে,

” বুঝাইতে গেছিলাম বলেই তো দাবড়ানি দিছে। এখন কী আছে কপালে আল্লাহ জানে। ঐ পেটে থাকতে কী ব্রুসলির মুভি দেখছিলা আন্টি? কিছু হইলেই মারতে আসে।”

বিভা নুসরাতের কথা শুনেও শোনে না। বিমর্ষ মুখে বলে,

” বড় জ্বালায় আছি মেয়েটারে নিয়ে। বিয়া শাদী দিতে পারলেও বাঁচতাম। ” নুসরাত সবেমাত্র পানি মুখে দিয়েছিল। বিভার মুখে ইমার বিয়ের কথা শুনে পানি নাকে মুখে উঠে যায় ওর। বিভা এগিয়ে এসে নুসরাতের পিঠ ডলতে ডলতে বলে,

” হুশ করে পানি খা। তুইও ইমার সাথে থাকতে থাকতে হুশছাড়া হয়ে যাচ্ছিস দেখি। হয় ওরে পথে আন, নয়ত তুই ওর সঙ্গ ছাড়। আল্লাহ আমার মেয়েটারে একটু সুমতি দাও।সভ্য, শান্ত বানায় দাও গো মাবুদ।” বিভা হাপিত্যেশ করতে করতে রুমে ছেড়ে রান্নাঘরের দিকে যায়। নুসরাত কাশতে কাশতেই এক চুমুক পানি পান করে বলে,

” আমিন! আমিন! ইমা এক সের। আল্লাহ এবার সোয়া সেরের কাউকে পাঠাও৷ বেচারী আমার আন্টি আর আমি!” ঠোঁট উল্টে খিক করে হেঁসে ওঠে নুসরাত।

শান মাগুর মাছের খামারের দেয়ালের উপর বসে আছে। কালো কুচকুচে দানব আকৃতির মাছগুলো মাঝে মাঝে মাথা তুলে আবার ডুবছে পানির তলে। এরা কতোশত মানুষ ভক্ষণ করেছে তার হিসেব শান নিজেও জানে না। কোনোভাবে যদি নিচে একবার পড়ে যায় ছিঁড়ে খাবে মুহূর্তের মধ্যে তাকে। হাতে রাখা মাছের খাবারের কিছুটা ছিটিয়ে দিতেই পানি কাঁপিয়ে তান্ডব শুরু করে মাছগুলো। শানের মোবাইল ভাইব্রেট হচ্ছে। হাতে রাখা বাকি খাবারগুলো খামারে ফেলতেই মাছের তান্ডবলীলা শুরু হয়। শান উঠে দাঁড়ায়। মোবাইল রিসিভ করে লাইডস্পিকারে রাখে। সামনের পানির কলে হাত ধৌত করতে করতে জবাব দিল,

” বল।”

” তুই কী খামারে?”

” হুমম!”

” আজকে কাকে ভক্ষণ করালো?”

শান ইমরোজের কথার জবাব না দিয়ে প্রশ্ন করল,
” খোঁজ পেলি কোনো?”

ইমরোজ বলল,
” আগে তুই বল।”

শান বললো,
” মেয়েটা ইচ্ছে করে পালিয়েছে। তোর ধারণা ভুল ছিল।”

” মাই গড! তুই আসলেই বস। কীভাবে জানলি?”

” সামনাসামনি দেখা হলে বলব।” শান টিস্যু পেপারে হাত মুছে মোবাইল হাতে নেয়। এগিয়ে যায় বাইরে রাখা গাড়ির দিকে। ইমরোজ বলে,

” ঠিকানা খুঁজে পেয়েছিস?”

” হুম!”

” বাহ! তাহলে তো হয়েই গেল। তা কবে দিলওয়ালে দুলহানিয়া নিয়ে আসবে?” ইমরোজের হাস্যরস বিফলে গেল। শান রুক্ষ, কঠিন স্বরে জবাব দিল,

” কোনোদিন না।”

ইমরোজ ব্যগ্রস্বরে বললো
” মানে কী? বউকে এভাবে ছেড়ে দিবি তাই বলে?”

শান গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে মোবাইল সামনে রাখে। চোখ ছোট করে সামনে তাকিয়ে বলে,

” ছেড়ে দেব কে বলেছে? আমাকে কেন অপমান করলো তার জবাব দিতে হবে না তাকে? দোয়া কর যেন জবাব আমার পছন্দ হয়। আর,,?”

” আর কী?” ইমরোজ শানকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করে।

” তুই ভালো করেই জানিস আমার মুখে আর কথাটার পরে কী হয়? আল্লাহ হাফেজ। শীঘ্রই দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। ”

” শান! শান! শান কল কাটবি না। শান,,,,” শান চোয়াল ফুলিয়ে মোবাইল একবারে বন্ধ করে সামনে ফেলে রাখে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ছুটে যায় নির্ধারিত গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here