তুমি অতঃপর তুমিই
পর্ব ০৩
Writer Taniya Sheikh
ইমরোজ তিনদিন অনুসন্ধান করেও শানের নিখোঁজ স্ত্রী সম্পর্কিত সঠিক কোনো ক্লু পেল না। এদিকে আগামীকাল তাকে অফিসিয়াল কাজে যেতে হবে ঢাকার বাইরে। বেশ চিন্তিত এই মুহূর্তে সে।
” খেতে আয় আব্বু!” ইমরোজের মা আমেনা বেগম ছেলের রুমের দরজায় এসে দাঁড়ায়। ছেলের সাড়াশব্দ না পেয়ে রুমে ঢুকলেন আমেনা। তার ছেলে মুখের উপর বাহু রেখে চোখ মুদে আছে। এমন তখনই হয় যখন ইমরোজ অতিরিক্ত চিন্তিত থাকে। আমেনা ধীর পায়ে ছেলের শিওরে গিয়ে বসলেন। ছেলের মাথায় হাত রাখলেন পরম স্নেহে। মায়ের মমতার হাতের স্পর্শে ইমরোজ চোখ খোলে। মুচকি হেঁসে গড়িয়ে পড়ে মায়ের কোলে সে। আমেনা ছেলের চুলে বিলি কাটতে কাটতে জিজ্ঞেস করে,
” বউটার খবর কিছু পেলি?”
” না মা! শানকে দুশ্চিন্তা মুক্ত করতে চেয়ে আরও বাড়িয়ে দিয়েছি দুশ্চিন্তা।” বিমর্ষ দেখাল ইমরোজকে।
আমেনা বললেন,
” ওকে এখানে আসতে বল। কতদিন আসে না এদিক। ছেলেটাকে ভালোমন্দ রান্না করে খাওয়াতে পারলে ভালো লাগে খুব। আমরা ছাড়া কেইবা আছে ওর।”
” আসবে না। জানোই তো ওকে। একাকীত্ব কতো পছন্দ ওর। তারউপর এসব কারনে মনটা ভীষণ খারাপ। ভেবেছিলাম বিয়ের পর হয়তো কিছুটা পরিবর্তন আসবে ওর জীবনে। সেটাও হলো না।” ইমরোজ উঠে বসল মায়ের পাশে।
” বাপ মা না থাকলে পৃথিবীটাই শূন্য শূন্য মনে হয়। খান বাড়ির লোক তো স্বার্থের কারনে ছেলেটার জীবন নষ্ট করে দিল। নিজের ছেলে মেয়েগুলোকে বিদেশ পড়িয়ে সাহেব বানিয়েছে আর বেচারা শানকে বানিয়েছে সন্ত্রাস।”
” শান সন্ত্রাস না মা। শান সন্ত্রাস না।” ইমরোজ পাশ ছেড়ে উঠে চলে যায় রুমে বাইরে। আমেনা নির্নিমেষ চেয়ে আছে জানালার বাইরের শূন্যলোকে। একটু পর বাইরে স্বামী উঁচু গলার স্বরে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। ইমরোজের বাবা আহসান মিয়া দু’হাতে বাজারের ভারী ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে স্ত্রী , মেয়েকে ডাকছেন। আমেনা বেরিয়ে এসে কড়া গলায় ধমকে বললেন,
” তোমার কী আক্কেল হবে না কোনোদিনই? পুরো এলাকা মাথায় তুলে নিয়েছ চিৎকার চেচাঁমেচি করে। বাজারে কী তুমি একাই যাও নাকি?”
আমেনা বেগম স্বামীর হাত থেকে বাজারের ব্যাগ নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলেন। স্ত্রীর কড়া কথায় আহসান মিয়া দমলেন না বরং বিরক্ত হয়েই বললেন,
” বাজার করা কতো ঝামেলার বোঝো তুমি? দু’টো ব্যাগ বহন করে এতোদূর আসাটা চাট্টিখানি কথা?”
” তাই বলে চেঁচাবা নাকি এলাকা মাথায় করে?” রান্নাঘর থেকেই প্রশ্ন করলেন আমেনা। আহসান সাহেব হাঁটু ভর দিয়ে বসার ঘরের সোফাটায় বসলেন। ফ্যানের বাতাসে এতোক্ষনের চেপে বসা বিরক্তি কমলো কিছুটা। গলার স্বর নরম হয়ে এলো। স্ত্রীর কথার জবাব না দিয়ে স্বাভাবিক গলায় বললেন,
” ইলিশের দাম খুব চড়া বুঝলে আমু। তবুও একটা নিয়ে আসলাম। পাঁচশ টাকা দাম নিয়েছে। কচুশাকও এনেছি। মাথা দিয়ে কচুশাক আর মাছ দিয়ে হাতে মাখা পাতলা ঝোল করো তো আজ।”
” তুমি এতো টাকা দিয়ে ইলিশ কিনে এনেছ? কেন? কী দরকার ছিল? রিটায়ার্ড হয়ে বসে আছ সেদিকে কী হুশ আছে তোমার? কতোবার বলেছি অযথা খরচ করো না। না তিনি শুনবেনই না। মাথার উপর আবিয়াত্তা একটা মেয়ে আছে, দু’টো ফ্লাটের কিস্তি দিতে হয়, আবার বাড়ি ভাড়া বাবদ মাসে মাসে কতো যায় সে হিসেব কী রাখো তুমি? আমার ইমু দিনরাত এক করে খাটছে আর তুমি টাকা উড়াচ্ছ। ওর ভবিষ্যতের কথা কী ভাববে না?”
রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা আমেনার নাকে কান্নায় আহসান সাহেব মনমরা হয়ে সোফা ছেড়ে ওঠেন। চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তার ভেতর থেকে। স্ত্রীর কথা যুক্তিসংগত তিনি জানেন৷ নিজেকে মনে মনে দোষ দেন শুধু শুধু এতোগুলো টাকা অযথা খরচ করায়। অযথা খরচ! পছন্দের জিনিসটা খেতে চাওয়া কী অযথা খরচ? মনটা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। সারাটা জীবন খেটেখুটে ছেলেমেয়ে দু’টোকে পড়ালেখা শেখালেন। ঢাকা শহরে ভালো থাকতে,পড়তে অনেক খরচ। সাধ্যের বাইরে গিয়ে ছেলে,মেয়েকে ভালো স্কুল, কলেজে পড়িয়েছেন। নিজে দু’টো শার্টে বছরের পর বছর অতিবাহিত করেছেন। তবুও ছেলে মেয়েগুলোর সাধ আহ্লাদ পূরণে কার্পণ্য করেন নি। যদিও তার সামর্থ্যের বাইরে থাকায় অনেক সময়ই ইমরোজ এবং আশাকে কাঁদতে হয়েছে কিংবা দুঃখী হতে হয়েছে। ভেবেছিলেন ছেলে মেয়ে দু’টো বড় হলে সকল কষ্ট, অভাব লাঘব হয়ে যাবে। তা আর হচ্ছে না। ছেলেটা তার একটু বেশিই সৎ। পুলিশের চাকরী করে সৎ হওয়াটা কী এতোটাই জরুরি? একটু অসৎ হলে কী হতো? দু’টো টাকা বেশি উপার্জন করলে আজ তার ইলিশ খাওয়া নিয়ে এতোকথা শুনতে হতো না। ছেলে পুলিশের এসপি শুনলে বন্ধু,আত্মীয় স্বজন টেনে টেনে চোখ ছোট করে বলে,” আহসান সাহেব তো মজে আছেন তাহলে? ছেলেতো কোচ ভরে আনে আর আপনারা” বাকিটা বলে না তারা। শব্দ করে হাসে। আহসান বোঝেন বাকিটার অর্থ। বিব্রত হন তিনি। কিছুতেই কাউকে বিশ্বাস করানো যায় না তার ছেলে সৎ। একটা টাকাও অসৎ কামাইয়ের গ্রহণ করে না তার ইমরোজ। বুঝানোর সময় সবাই যেন গম্ভীর হয়ে যায়। চোখে চোখে একে অপরকে ইশারা করে। আহসান সাহেব তাদের ইশারা পড়তে পারেন। তারা ইশারায় আহসান সাহেবকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে। আহসান সাহেব তখন চুপসে যান। ছেলের উপর প্রবল রাগ জন্মায় তার। এই যুগে সৎ হওয়ার দরকার কী ছিল ইমরোজের! ছেলের সততায় মোটেও খুশি হননা আহসান সাহেব। কাপড় ছেড়ে গোসলে ঢুকে নিরবে কাঁদেন। বিরবির করে বলেন,
” আমি ঘুষখোর জন্ম দেই নি। আমার ইমু সৎ! আমি সৎ পুলিশ অফিসারের বাবা।”
ইমা নুসরাতকে নিয়ে সকাল সকাল এসে উপস্থিত নাসরিন আপার মহিলা পূনর্বাসন কেন্দ্রে। ইমাকে দেখামাত্রই নাসরিন নিজের রুমে টেনে আনল। চাপা ধমকে বললো,
” কাকে পাঠিয়েছিস তুই?”
” কেন? সমস্যা কী?” ইমা নাসরিনের ধমক গায়ে মাখল না একরত্তি। হেলেদুলে জানালার পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। নাসরিনের মেজাজ বিগড়ে যায় ইমার নির্লিপ্ত হাবভাব দেখে।
” সমস্যা কী জিগাস আবার? এই মেয়ে তো নাবালিকা তারউপর আবার অবিবাহিতা, প্রেগন্যান্ট।”
” হ্যাঁ জানি তো।” ইমা চুইংগাম মুখে দিয়ে কোমরে হাত রেখে নির্বিকার ভঙ্গিতে রুমে পায়চারী করে। নাসরিন ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করে,
” জেনেশুনে এখানে পাঠিয়েছিস? তোর সাহস কেমনে হয়?” নাসরিন এ পর্যায়ে গলা চড়িয়ে বললে ইমা বিরক্ত হয়। কানে কনিষ্ঠ আঙুল নাড়িয়ে চেয়ার টেনে দু’পা ছড়িয়ে বসে। ভাবলেশহীন গলায় বলে,
” আরে আপা চিল মারো। তোমার এই সংস্থা তো এসব অবলা,অসহায় মেয়েদের জন্যেই। তাইলে হুদাই পার্ট নিতাছ ক্যান?”
নাসরিন কপাল চাপড়ে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
” এইটা এমন কেন বলতো? কোনো কিছু বুঝাইতে গেলেও বোঝে না।” নাসরিন ইমার দিকে ঝুঁকে আঙুল নাড়িয়ে বলে,
” তুই ভাবিস দুনিয়াতে দুই বুঝদার বাকিসব বেক্কল?”
ইমা ফিক করে হেঁসে উঠতেই নাসরিন গাট্টা মারে ওর মাথায়। ইমা ঠোঁট ফুলাতেই নাসরিন রেগে বলে,
” অনেক ঝামেলা হবে ইমা। এই সংস্থার কেয়ারটেকার আমি,মালিক নই।এখানে কিছু নিয়ম কানুন আছে বুঝেছিস? এর বাইরে যাওয়া আমার পক্ষে কঠিন।কেউ যদি জানে এই মেয়ে অবিবাহিতা তাহলে আমার চাকরী নট। তোর জন্যে আমি তো চাকরী হারাতে পারি না, তাই না?”
” আপা তুমি আসলেই একটা সেন্টিমেন্টাল মহিলা। আরে তোমার সমস্যা কী সেটা ক্লিয়ার করো আগে।”
” এতোক্ষণ কী বললাম?”
” অনেক কিছু বলছ। যা এতোই বিস্তারিত ছিল যে মাথায় ঢোকে নাই। শর্ট এ বলো। ইমা শর্ট বোঝো। শর্ট! শর্ট!” নাসরিন আবার কপাল চাপড়ায়। বিরক্তি ঝেড়ে বলে,
” উফ! এই মেয়ে অবিবাহিতা গর্ভবতী। এটাই সমস্যা। ”
” ব্যস!”
নাসরিন, নুসরাত ইমার নির্লিপ্ত ভাব আর স্বাভাবিক কথা বলার ধরনে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। নাসরিন কিছু বলার পূর্বেই নুসরাত বললো,
” ব্যস এমন ভাবে বললি যেন কিছু না সমস্যাটা।”
” একদম। শোনো নাসরিন আপা। কুলসুম এখানেই থাকবে আর সবার মতো। ওর অবিবাহিতা হওয়া নিয়েই তো সমস্যা তাই না?”
নাসরিন গম্ভীরমুখে মাথায় নাড়ায়। ইমা চেয়ার ছেড়ে উঠে নাসরিন সামনে এসে বলে,
” ওর বিয়ে হয়ে যাবে।”
” হয়ে যাবে মানে? সবকিছু সহজ মনে করিস নাকি?” নাসরিন জোর গলায় বলে।
” অবশ্যই। খালি অপেক্ষা করো আর দেখো। ইংলিশে কী যেন বলে নুসরাত?”
” জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ।” নুসরাত পাশ থেকে বললো।
ইমা প্যান্টের পকেটে এক হাত রেখে ভরাট গলায় বলে,
” জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ নাসরিন আপা। নুসরাত চল।” ইমা নুসরাতকে নিয়ে চলে আসে কুলসুমের কাছে। কুলসুমকে রেডি করে বেরিয়ে যায় তিনজন। নাসরিন কপালের একপাশ চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের যাওয়ার পথে চেয়ে মনে মনে বললো,
” আল্লাহ এই ইমাকে সুমতি দাও। একটু মেয়ে স্বভাব করে দাও। রক্ষা করো আল্লাহ। এই বিপদ থেকে রক্ষা করো।”
মঈন খানের ঔরসজাত এবং একমাত্র সন্তান মাহিব খান। একটা প্রবাদ আছে,বাপকা বেটা সিপাহীকা ঘোড়া। মাহিব খানের ক্ষেত্রে কথাটা শতভাগ মিলে যায়। মঈন খান নিজের যৌবন কালের মিল খুঁজে পায় ছেলের মধ্যে। প্রচন্ড রকম মদ্যপ, নারী লোভী আর হিংস্র সে। ছেলের এহেন স্বভাবের কারনে ভীত থাকেন তিনি। হিংস্র আর জেদের দিক দিয়ে তার ছেলে তাকেও ছাড়িয়ে গেছে। ছেলের সুরক্ষা এবং স্বভাব পরিবর্তনের জন্য বারোটা বছর ছেলেকে বিদেশ পড়ালেখার করতে পাঠিয়েছিলেন। তাতে লাভ খুব একটা হয়নি। এখনও আগেও মতোই রয়ে গেছে মাহিব। শ্যামলা ক্লিন সেভ মুখের, দীর্ঘদেহী জিম বডির মাহিবকে একনজর দেখলেই ক্রাশ খায় মেয়েরা। মাহিবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য জানা স্বত্বেও অনেক মেয়ে আকৃষ্ট হয় তার প্রতি। তাদের মধ্যে থেকে যাকে পছন্দ তার সাথে কিছুদিনের খেলনা মনে করে খেলে মাহিব। খেলা শেষে ছুঁড়ে ফেলে তার জীবন থেকে। তবে মেয়েটা কোনোরকম উচ্চবাচ্য করলে তার রেহায় থাকে না। এই যেমন এখন মাহিবের সামনে রক্তাক্ত মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছে আয়ুশী নামের মেয়েটি। আয়ূশী বার ডান্সার। ঘটনাচক্রে পরিচয় হয় মাহিবের সাথে। যথেষ্ট রূপবতী আয়ুশীকে পাওয়াটা সহজ ছিল না মাহিবের জন্য। তবুও ছলে বলে কৌশলে ভালোবাসার মোহে ফেলে ঠিকই ভোগ করেছে সে দিনের পর দিন আয়ুশীকে। এখন আর আগের মতো আবেগ কিংবা উত্তেজনা কাজ করে আয়ুশীকে দেখলে তার। তাইতো ছুঁড়ে ফেলতে চাইল জীবন থেকে। আয়ুশী এই যুগের সংগ্রামী মেয়ে। এতো সহজে সে মাহিবকে ছাড়ল না। হুমকি দিল তাকে গ্রহণ না করলে থানা, পুলিশ,মিডিয়ার কাছে যাবে সে। মাহিবের প্রেমিক রূপটায় এতোদিন দেখেছে আয়ুশী। এর বিপরীত রূপ যে কতোটা ভয়ংকর তার জানা ছিল না। দু’পায়ের রগ কেটে, রড দিয়ে পিটিয়েছে মুহিব তাকে। শেষ সময়ে পানির জন্য ছটফট করতে লাগল আয়ুশী। মাহিব চেয়ারে গা এগিয়ে বিয়ারে চুমুক দিয়ে বাকিটা ঢেলে দিল ক্ষতাক্ত আয়ুশীর মুখের উপর। আর্তনাদ করে উঠল আয়ুশী ক্ষত জ্বলে ওঠায়। মাহিব মুখের উপর পা দিয়ে চেপে ধরতেই ছটফট করে উঠল আয়ুশীর দেহ। বাঁচার আকুতি জানালো দূর্বল দু’হাত জোর করে। মাহিব মুচকি হেঁসে ঝুঁকে চাপা স্বরে বললো,
” জানেমান, বলেছিলাম মাহিবকে ভয় দেখিয়ো না। দেখলে তো আমাকে হুমকি দিলে কী হয়? আহা! মরে গেল? উম্মা!” আয়ুশীর নিস্তেজ দেহটা পড়ে আছে মাহিবের পায়ে কাছে। সেটাকে পা দিয়ে আরেকটু দূরে ঠেলে চিৎকার করে ডাকল,
” শামীম, শানকে কল কর।”
” জি ভাই।”
শান সেখানে এসে পৌঁছাল মিনিট পাঁচেকের মধ্যে। ততক্ষণে আয়ুশীর লাশ পলিথিনে মোড়া হয়েছে। শানকে দেখামাত্রই দাঁত পিষল মাহিন। শানের ঠোঁটে তখন আধপোড়া জ্বলন্ত সিগারেট। মাহিব এগিয়ে এলো ওর মুখোমুখি। শানের ঠোঁট থেকে দু’ আঙুলের ডগায় সিগারেট নিয়ে ফেলে পায়ে পিষল সে। পাশে দাঁড়ানো গার্ডের পকেট থেকে রিভলভার নিয়ে আচমকা শানের কপালে ঠেকিয়ে বললো,
” ভয় পেয়েছিস?” হো হো শব্দে হেঁসে উঠল মাহিব। বিকৃত সে হাসি। মাহিবের দেখাদেখি বাকিরাও হাসল। তাদের হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না শানের তীক্ষ্ণ নজর পড়ায়। শান মৃদু হেঁসে ঘাড় চেপে ধরে মাহিবের। খুব জোরে চেপে ধরায় ব্যথায় কাতরে ওঠে মাহিব৷ চোয়াল শক্ত করে শানের চোখে চোখ রাখতেই শান বলে,
” এমন মজা বাচ্চারা করে ভাই। সো গ্রো আপ।” মাহিবকে ধাক্কা দিয়ে দূরে ঠেলে পকেট থেকে বের করে আরেকটা সিগারেট ধরায় সে। আশেপাশে দাঁড়ানো দলের লোক থম মেরে আছে শানের ভয়ে। সিগারেট টেনে নাক দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে শান,
” ডেকেছ কেন?”
মাহিব অপমান হজম করে শামীমকে ইশারায় বলতে বলে। শামীম ভীতু স্বরে বলে,
” লাশটা মাছের খামারে ফেলে দিতে হবে।”
” ওকে।”
শান আয়ুশীর পলিথিন মোড়ানো লাশটা কাঁধে তুলে ঘুরতেই মাহিব আবার সামনে দাঁড়ায়। মৃদু হেঁসে শানের জ্যাকেটের কলার ঝেড়ে বলে,
” তোকে ঠিক একদিন এই পায়ে পড়তে হবে। এই যে আমাকে অপমান করিস তার শোধ সুধে আসলে সেদিন নেব আমি। পালতু কুকুরের লাগাম কী করে টানতে হয় মাহিব জানে।”
শান ঠোঁট থেকে সিগারেট বা’হাতের আঙ্গুলে ধরে নামায়। স্থির চোখে গম্ভীর গলায় জবাব দেয়,
” গুড লাক ভাই!” পাশ কাটিয়ে চলে আসে গাড়ির কাছে। মাহিব হাতের রিভলভারের ট্রিগার চেপে শূন্যে এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে। চিৎকার করে বলে,
” তোকে আমি ভয়ানক শাস্তি দেব শান। এমন শাস্তি যা তুই কল্পনাও করতে পারবি না।” শামীম দু’হাতে জাপটে ধরে শান্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালায় মাহিবকে। মাহিব রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। শান মাহিবকে বড়ভাই তুল্য ভাবলেও মাহিব শানকে ভাই নয় প্রতিদ্বন্দ্বী এবং শত্রু ভাবে। শানকে মারাটাই তার জীবনের বড় লক্ষ্য। কিন্তু শানের শক্তি আর তার বাবার বাঁধার কারনে সে লক্ষ্য বার বারই ব্যর্থ হয়।
চলবে,,,