তুমিময় আসক্তি ২ পর্ব ১৮

0
605

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“১৮” (রহস্য উন্মোচন পর্ব)

–” রত্না চৌধুরীর ঘরে দাঁড়িয়ে আছে দোলা। রত্না চৌধুরী দোলার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে উল্টো দিকে চেয়ারে বসে আছে। দোলা মা হওয়ার খবরটা জানার পর অনেক খুশি হয়৷ খুশি হওয়ারই কথা। একজন নারীর কাছে মা হওয়ার অনুভূতিটা কতটা আনন্দের সেটা একমাত্র সেই নারী উপলব্ধি করতে পারে আর সেটা যদি হয় প্রথম মা হওয়ার আনন্দ তাহলে তো কোনো কথাই নেই। রত্না চৌধুরীও দাদিমা হওয়ার আনন্দে সব কিছু ভুলে যায় কিছু সময়ের জন্য। বেজায় খুশিতে দোলার হাত ধরে আনন্দ ভাগ করে নেন। কিন্তু দোলা যখন রুদ্র অতীত সম্পর্কে জানতে চাই তখন আবারও মুখ ফিরিয়ে নেয় রত্না চৌধুরী। রুদ্রর কথা মনে হতেই সেই আগের স্থানে ফিরে যান তিনি। কিন্তু দোলা হাল ছাড়ে না৷ রত্না চৌধুরীকে রাজি করায়। রত্না চৌধুরী দোলাকে ঘরে আসতে বলে তিনি আগে চলে আসেন। দোলা নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে রত্না চৌধুরীর ঘরে যায়।

– বলুন না মা! কি হয়েছিলো রুদ্র আর রোজার মধ্যে। উনি এমন কেনো হয়েছেন?
– দোলার কথায় রত্না চৌধুরী বলতে শুরু করে!

– রুদ্রর বাবা আর রোজার বাবা ছিলেন দুই বন্ধু আবার বিজনেন পার্টানারও। সেই সূত্রে রুদ্র আর রোজা ছোট থেকে একে অপরকে চেনে জানে। তাদের এই চেনা-জানা সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ভালোলাগা এরপর ভালোবাসায় রুপ নেই। রুদ্র ছিলো খুবই হাসিখুশি আর চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে। বন্ধুবান্ধব আড্ডা পড়াশোনা এইসব নিয়ে দিন যেতো তার! আর তার সাথে তো ছিলোই রোজা৷ রুদ্র আর রোজা সেম ক্লাসে পড়াশোনা করে। যার জন্য তাদের মধ্যে সম্পর্কটা আরো দৃঢ় হয়। রোজা,রাজ,রুদ্র আর নেহা চার বন্ধু মিলে একটা গ্যাং ছিলো তারা। রুদ্র রোজা বলতে পাগল ছিলো। রোজাকে এতটা ভালোবাসে রুদ্র যে রোজাকে ছাড়া তার একটা মুহুর্ত যেনো চলতো না৷ রোজাও যে রুদ্রকে ভালোবাসে না এমন নয়৷ কিন্তু রুদ্রর মতো এত পাগলামি ছিলো না তার মধ্যে । রুদ্রর পড়াশোনা শেষ হলে রোজার সাথে বিয়ের কথাবার্তা চলতে থাকে৷ এবং বিয়ের ডেটও ফিক্সড হয়ে যায়। কিন্তু বিপত্তি বাধে আরেক জায়গা৷ রুদ্রর বাবা জাহির চৌধুরী জানতে পারেন যে রোজার বাবা কালোবাজারি ব্যবস্থার সাথে জড়িত। এবং তাদের কোম্পানির প্রডাক্টও ভেজাল করা শুরু করে আর সেটা অনেক আগে থেকেই। কিন্তু জাহির চৌধুরী এর কিছুই জানতে পারেননি কখনো। ব্যবস্থা যখন লসের দিকে অগ্রসর হয় তখন জাহির চৌধুরী সবকিছুতে ভালো ভাবে লক্ষ্য রাখেন আর তখনই সবটা জানতে পারেন তিনি। এরপর দুই বন্ধুর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়৷ জাহির চৌধুরী রোজার বাবাকে সাবধান করলে উল্টো তিনি আরো রেগে যান এবং জাহির চৌধুরীর ক্ষতি করার জন্য উঠে পড়ে লাগে৷ জাহির চৌধুরী উপায় না পেয়ে রোজার বাবাকে জেলে পাঠাতে বাধ্য হয় সব তথ্য প্রমাণ দিয়ে৷ তবে এর কোনো প্রভাব রুদ্র আর রোজার বিয়েতে পড়েনি৷ রুদ্র প্রথমে ভেবেছিলো রোজা হয়তো তাদের সম্পর্কটা শেষ করে দেবে৷ কিন্তু রোজা রুদ্রকে অবাক করে দিয়ে বিয়ের পিরিতে বসে আর বিয়েটা করেও নেয়। খুব ভালো ভাবে চলে তাদের সংসার মাস ছয় মতো। রুদ্র সুখী ছিলো রোজাকে নিয়ে। এর মধ্যে একদিন খবর আসে রোজার বাবা জেলে আত্মহত্যা করেন। এরপর রোজা ভেঙে পড়ে অনেক। রুদ্র সামলে নেয় রোজাকে এরপর। কিন্তু হঠাৎ করে রোজার রুপ বদলাতে শুরু। রুদ্রর সাথে বাজে ব্যবহার, সব সময় ঝগড়া ঝামেলা লেগেই থাকতো। রুদ্র যতটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে রোজা আরো বেশি করে যেনো বাঁধাতে চাই। এরপর রোজা আরও বেশি উন্মাদনা শুরু করে। বাইরে যাওয়া, পার্টি করা৷ ছেলেদের সাথে মেলামেশা করা সব কিছুই রুদ্র দেখলেও ঝগড়া ঝামেলার ভয়ে রোজাকে কিছু বলতো না। যখন সহ্য করতে পারতো না রুদ্র তখন রোজাকে বোঝানোর চেষ্টা করতো। কারণ রুদ্র চাইনা রোজা আর তার সম্পর্ক নষ্ট হোক। অনেক ভালোবাসে রুদ্র রোজাকে৷ যার ফলে সব কিছু চুপচাপ মেনে নেওয়ার চেষ্টা ছিলো তার। আর এই ভালবাসার সুযোগই রোজা বারবার কাজে লাগায়। রোজা জানতো রুদ্র তার প্রতি কতটা দুর্বল ছিলো। এর মাঝে রোজা হঠাৎ করে প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়। এইটা রুদ্র জানার পর খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ে। কারণ রুদ্র ছোট বাচ্চাদের অনেক পছন্দ করে। তার নিজের ঘরে একটা বাচ্চা আসবে ভেবেই রুদ্র যেনো অধিক সুখের অধিকারী হয়ে যায়। কিন্তু এতে খুশি হতে পারিনি রোজা৷ যার ফলে সে বাচ্চাটা নষ্ট করার কথা রুদ্রকে জানায়৷ রোজার এই ডিসিশন রুদ্রকে মানসিক ভাবে বিব্রত করে তোলে। রুদ্র রোজাকে জানায় বাচ্চাটা যেনো পৃথিবীতে নিয়ে আসা হয়৷ দরকার হয় রুদ্র নিজে মানুষ করবে তাকে৷ রোজা না চাইলে বাচ্চা তার কাছে দেওয়া হবে না। তাও যেনো বাচ্চাটাকে দুনিয়ার আলো দেখানো হয়। কিন্তু রোজা তাতেও রাজী ছিলো না। তার মতে তার এখনো সময় আসেনি বেবি নেওয়ার। রোজা নিজে গিয়ে এবর্শন করে আসে। এটা রুদ্র জানার পর অনেক ভেঙে পড়ে। সেদিনই যেনো রুদ্রর অর্ধেক মৃত্যু হয়ে যায় বাচ্চাটা হারিয়ে যাওয়াতে। যে বাচ্চাকে নিয়ে নিজের মতো একটা দুনিয়া সাজাতে ব্যস্ত ছিলো রুদ্র তাকে এইভাবে হত্যা করবে তার হবু মা রুদ্র এটা ভাবিনি। রুদ্র এরপর থেকে বেশ চুপচাপ আর গম্ভীর হয়ে যায়। কারণ ছাড়া হাসি তার জন্য নিষিদ্ধ ছিলো। রোজা আর রুদ্রর সম্পর্কটাও আস্তে আস্তে তিক্ততায় ভরে উঠে। সব কিছু ভুলে রুদ্র আবারও চেষ্টা করে নতুন করে সব কিছু গুছিয়ে নিতে৷ রোজাকে বোঝাতে। কিন্তু রোজা একদিন হঠাৎ করে রুদ্রর কাছে ডিভোর্স চেয়ে বসে। তার মতে রুদ্রর সাথে সংসার করা সম্ভব নয়৷ রুদ্র যখন কারণ জানতে চাই তখন রোজা জানায় সে একজনকে ভালোবাসে আর তার সাথে থাকতে চাই। স্বামী থাকা সত্ত্বেও পর-পুরুষের আসক্ত হয়ে যায় রোজা। এটা যেনো রুদ্রকে পুরোপুরি মেরে ফেলতে যথেষ্ট ছিলো। প্রথমে সন্তানকে হারালো এরপর নিজের ভালোবাসার মানুষটা দূরে চলে যাচ্ছে৷ সব কিছু মিলিয়ে রুদ্র উন্মাদ হয়ে উঠে। রোজা রুদ্রকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায় তার নতুন প্রেমিকের হাত ধরে। রত্না চৌধুরী, তানিয়া অনেক চেষ্টা করে রোজাকে বোঝানোর। কিন্তু তারা বুঝেনি। তানিয়া যদিও তখন বয়সে বেশ ছোট ছিলো।

–রুদ্র অনেক ভেঙে পড়ে। এর মধ্যে ঘটে আরেকটা দুর্ঘটনা। রুদ্রর বাবা আর মা একসাথে বাইরে যান একটা দরকারী কাজের জন্য। কিন্তু হঠাৎ তাদের গাড়িটা এক্সিডেন্ট করে আর জাহির চৌধুরী সে এক্সিডেন্টে নিহত হোন। আর রত্না চৌধুরী হারায় তার একটা পা সাথে চলাফেরা করার ক্ষমতা। কিন্তু তাদের এক্সিডেন্টটা কিভাবে হয় সেটা আজও অজানা সবার কাছে।
– প্রতিটি আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায় রুদ্র। নিজেকে ঘর বন্দী করে রাখে৷ রত্না চৌধুরী কি করবেন বুঝতে পারে না৷ একে তো স্বামী হারানোর শোক তো আরেকদিকে একমাত্র সন্তানের এমন কষ্ট। সব কিছু মিলিয়ে তিনিও পাগলপারা হয়ে উঠে। রুদ্র রোজার অনুপস্থিতিতে পাগলামি শুরু করে। বারবার ছুটে যায় রোজার কাছে সব কিছু ঠিক করে নেওয়ার জন্য। কিন্তু রোজা ততবারই অপমান করে ফিরিয়ে দেয় রুদ্রকে। রুদ্র আস্তে আস্তে অন্য রকম হতে থাকে। ভালোবাসার কাছে অবহেলিত হয়ে নুয়ে পড়ে সে৷ নিজেকে শেষ করে দেওয়ারও চেষ্টা করে অনেকবার। এক সময় এসে রুদ্র মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকে। রুদ্রর ধ্যান-জ্ঞ্যান জুড়ে শুধু রোজা আর রোজা৷ একটা মানুষ কতটা ভালোবাসলে এমন পাগলামি করতে পারে সেটা ওই মানুষটাই ফিল করতে পারে যে সত্যিকারের ভালোবাসার অর্থ বুঝে।
— রত্না চৌধুরী উপায় না পেয়ে রাজের সাহায্য নেয়। রুদ্রকে চিকিৎসা করানোর জন্য রাজী করায়। আবার রুদ্রর বাবা না থাকায় তাদের ব্যবস্থাও পথে বসে প্রায়। সব দিকে থেকে দিশেহারা হয়ে রত্না চৌধুরী। অতঃপর রুদ্রর চিকিৎসা শুরু করা হয়। মানসিক ভাবে একেবারে ভেঙে পড়েছিলো রুদ্র। সেখানে থেকে ওভারকাম করতে বেশ খানিকটা সময় লাগে তার। রুদ্র যখন আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। নিজেকে মানিয়ে নিতে শুরু করে তখন আগের রুদ্র আর নতুন রুদ্রের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ দেখা দেয়। সে রুদ্র ছিলো প্রাণোচ্ছল হাসিখুশি সে রুদ্র গম্ভীর, রাগী, বদমেজাজি হয়ে উঠে। তার জীবন থেকে হাসি যেনো একবারে উবে গেছে৷ রুদ্র নতুন করে আবারও ব্যবস্থার হাল ধরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে। এতটুকু বলে রত্না চৌধুরী চোখ মুছেন। দোলার চোখেও অঝোর ধারা বয়ছে। রুদ্রর মধ্যে এত কষ্ট আছে কখনোই বুঝতে পারেনি দোলা।

– আমার যে ছেলে প্রতিদিন আমার কাছে এসে আমার কোলে মাথা রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতো। তার মনের কথা আমাকে জানাতো সে ছেলে আমার কাছে আর আসে না৷ একা একা থাকতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে। দরকার ছাড়া আমার আর রুদ্রর কথা হতো না৷ কেমন যেনো অনুভূতিহীন মানব হয়ে উঠে। যাকে বলে মানব রোবট। এইভাবে চলে যায় চার-বছর। যতদিন যায় রুদ্র ততই সফল হতে থাকে বিজনেসে। আর দিন দিন আরো গম্ভীর হয়ে উঠে। সব সময় রেগে থাকা, কেউ একটু ভুল করলে তাকে শাস্তি দিতেও পিছপা হয়না। এর মধ্যে আমি অনেক চেষ্টা করি রুদ্রকে আবার বিয়ে দেওয়ার। যাতে করে নতুন কেউ এসে রুদ্রকে গুছিয়ে দেয়। ওকে আবার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়। রুদ্র কখনোই রাজী হয়না আবারও বিয়ের পিরিতে ভরতে। আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না সে।।

– এরপর একদিন রুদ্র এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে হঠাৎ করে আর সেদিন আমি আমার সেই আগের রুদ্রকে আবার দেখতে পাই। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর আমি রুদ্রর মুখে আবারও হাসি দেখেছিলাম। সেদিন রুদ্র আনন্দিত কন্ঠে বলেছিলো মা আমি নেহার বাচ্চাকে আমার কাছে রাখতে৷ আমার পরিচয় দিয়ে বড় করতে চাই৷ আমি অবাক হয়েছিলাম রুদ্রর কথায়। কারণ আমার জানা মতে নেহার বিয়েই হয়নি তাহলে বাচ্চা কোথায় থেকে আসবে৷ আর যদি বাচ্চা হয়ও তাহলে রুদ্রকে কেনো দেবে নেহা? আমি রুদ্রর কাছে জানতে চাইলে রুদ্র আমাকে জানায় সামির নাকি নেহার সাথে রিলেশন করে আর তার সন্তানই নেহা গর্ভে ধারণ করেছে। কিন্তু সামির এখন সেটা মানতে চাইনা। নেহা অনেক ভেঙে পড়ে সন্তানটা নষ্ট করতে চাই৷ কিন্তু রুদ্র নেহাকে বারণ করে। রুদ্র বলে নেহার সন্তানকে ও বড় করবে পালন করবে। আর এতে নাকি নেহা রাজিও হয়। কারণ নেহা জানতো রুদ্র বাচ্চাদের প্রতি কতটা প্রজেসিস। নিজের সন্তানের শোক! তাকে হারানোর দুঃখটা রুদ্র নেহার সন্তানকে দিয়ে ভুলতে চাই। কিন্তু সেবারও ভাগ্য সহায় হয়না আমার রুদ্রর জন্য। হঠাৎ করে নেহা আত্নহত্যা করে যা আমাদের কল্পনাতীত ছিলো। সেদিনও আমার রুদ্রটা ভেঙে পড়ে আবার। ভেতর থেকে নিঃশেষ হয়ে যায়। দোলা কান্না করছে অনেক। দম বন্ধ হয়ে আসছে। এত কিছু কি করে হতে পারে একটা মানুষের জীবনে। তখনই দোলার হাত যায় আবার তার পেটে। তার আর রুদ্রর সন্তান এখানে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠবে। রুদ্র নিশ্চয় এই সন্তানকে পেয়ে সব কিছু ভুলে যাবে? সব কিছু ভেবে দোলার একটু সুখ অনুভব হয়৷ শান্তি লাগে মনে।
— নেহার মৃত্যুর পর রুদ্র আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। সামিরের উপর রাগ,জেদ বেড়ে যায়। সাথে সামিরের যে মেয়ের সম্পর্ক আছে তার উপরও ক্ষোভ জন্মায় রুদ্রর। কিন্তু রুদ্র জানতো না ওই মেয়েটা তুই দোলা। এইভাবে যায় আরো তিন-চার মাস। রুদ্র সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতো আর গভীর রাতে ফিরে আসতো। আমি ঠিক ভাবে আমার ছেলের মুখটাও দেখতে পেতাম না। তিলে তিলে কীভাবে শেষ হয়েছে আমার রুদ্র আমি উপলব্ধি করতে পারতাম। তারপরও আমার কিছু করার ছিলো না। এরপর রুদ্র একদিন আমার চেয়ার ধরে ঘোরাতে থাকে আর আনন্দ নিয়ে বলতে থাকে মা আমি আমার জীবন নতুন করে সাজাতে চাই৷ আর তার জন্য সঠিক মানুষ পেয়ে গেছি আমি। যাকে দেখে আমার মনে নতুন করে ভালোবাসার ফুল ফুটে, যাকে দেখে আমি আরেকবার মুগ্ধ হয়। জানো মা আমি মেয়েটাকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ। আমার মধ্যে সেই প্রশান্তি ছিলো যেটা আমি রোজার বেলায় অনুভব করতে পারতাম। আর তুই বিশ্বাস কর দোলা সেদিন রুদ্রর মুখ থেকে নতুন জীবন শুরু করার কথা শুনে আমি যে কি পরিমাণ খুশি হয়েছিলাম বলে বোঝাতে পারবো না৷ রুদ্রর সাথে সাথে আমিও যেনো একটা নতুন অধ্যায় নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছিলাম। এরপর রুদ্র তোর কথা জানায় আমাকে৷ রুদ্র যতখন তোর কথা বলেছিলো আমার কাছে ততখন যেনো তার ঠোঁট থেকে এক মুহুর্তের জন্য হাসি সরেনি৷ আমি শুধু অপলক দৃষ্টিতে আমার রুদ্রর সেই হাসিটাই দেখেছিলাম। আর এটা বুঝতে পেরেছিলাম আমার রুদ্রটা আবার নতুন ভাবে প্রেমে পড়েছে এত বছর পর। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে৷ আমি বিধাতার কাছে সেদিন বলেছিলাম আমার রুদ্রটা যেনো এই নতুন জীবনে সবচেয়ে সুখী মানুষটা হয়। তার মনের মতো করে সংসারটা গড়ে তুলতে পারে। আর আল্লাহ আমার সে কথা শুনে৷ তোকে বিয়ে করে নিয়ে আসে রুদ্র হঠাৎ করে। কিন্তু এত তাড়াহুড়ো করে বিয়ে কেনো করে রুদ্র আমার জানা ছিলো না। তবে আমি খুশি হয়েছিলাম তোকে দেখে। রত্না চৌধুরীর কথায় দোলা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। রত্না চৌধুরী না জানুক দোলা তো জানে রুদ্র তাকে কীভাবে বিয়ে করেছে।

— রুদ্র তোকে বিয়ে করে আনার পর আমাকে জানায়! রুদ্র আর রোজার কথাটা তোকে জানাবে। যেহেতু তুই এখন তার স্ত্রী! তাই সব কিছু তোর জানা দরকার। কিন্তু সেদিন আমি বারণ করি রুদ্রকে এইসব না বলতে। কেনো জানিস? রত্না চৌধুরীর কথায় দোলা কৌতুহলী হয়ে ভ্রু কুচকে তাকায়।
– কারণ একটা মেয়ে আর যাই হোক নিজের স্বামীর ভাগ কখনো কাউকে দিতে চাইনা। জানি রোজা রুদ্রর জীবনে নেই কিন্তু রোজার জন্য রুদ্রর যে ভালোবাসা ছিলো এখনো আছে সেটা তুই কোনোভাবে মানতে পারতিস না। তোর স্বামীর আরেকজনের প্রতি ঝোঁক ছিলো এটা তুই সাময়িক ভাবে মেনে নিলেও ভেতরে ভেতরে ঠিকই কষ্ট জমিয়ে রাখতিস। আর এই জন্য আমি রুদ্রকে বারণ করি বলতে। সব জানার পর রুদ্রও চাইনা তোকে কষ্ট দিতে৷ রোজার জন্য তোর আর রুদ্রর সম্পর্কে কোনো রকম দাগ ফেলতে। যার জন্য ওই ঘরে তোকে যেতে বারণ করে রুদ্র। আমরা কেউ তোকে কিছু বলতে পারিনা।
– দোলা দ্বিতীয়বারের মতো ভারী নিশ্বাস ত্যাগ করে। রত্না চৌধুরীর কথা একদম ঠিক। দোলা যখন রোজা আর রুদ্রর বিয়ের ছবি দেখে তখন থেকেই মরমে মরছে যেনো। নিজের স্বামীর সাথে আরেকটা মেয়ের হাসিখুশি মুখটা যেনো একদমই সহ্য হচ্ছিলো না তার।

তোদের বিয়ের কিছুখন পর রুদ্র জানতে পারে সামিরের যে মেয়েটার সম্পর্ক আছে। যার জন্য নেহাকে ত্যাগ করে সে মেয়েটা তুই। আর তুইও সামিরকে ভালোবাসিস। তোদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক আছে। আর সেদিন এই কথাটা জানার পর আমার রুদ্র আবারও ভেঙে পড়ে। দ্বিতীয়বারের মতো ধাক্কাটা সামলাতে পারে না। একদিকে তোর প্রতি রুদ্রর ভালোবাসা আরেকদিকে ঘৃণা৷ দোটানায় পড়ে যায় রুদ্র কি করবে। সেদিন আমার ছেলে আমার কাছে কান্না করে। আমি সেদিন অঝোরে কাঁদতে দেখেছি আমার রুদ্রকে। কিন্তু ভালোবাসার কাছে হেরে গেছে ঘৃণা। রুদ্র তোকে এই অল্প সময়ে এতটা ভালোবেসে ফেলে যে নেহার মৃত্যুর জন্য তুই দায়ী হলেও সেটা তোকে জানায় না আর বুঝতে দেয়। কিন্তু তোর প্রতি সে রুদ্রর সন্দেহ কাজ করতো এটা আমি বুঝতে পারতাম। আমার ছেলেটা যে একবার ঠকে গেছে রে দোলা৷ তাই দ্বিতীয়বার বিশ্বাস করার সাহসটা পাই না৷ যার জন্য তোকে কারো সাথে মিলামিশা করতে দেয়না৷ কোনো পর-পুরুষের সাথে দেখলে রেগে যেতো। হ্যাঁ মানছি আমার রুদ্র তোর সাথে যা কিছু করেছে অন্যায় করেছে কিন্তু আমার ছেলেটার সাথে কম অন্যায় হয়নি। প্রতিনিয়ত পুড়ে ছারখার হয়েছে। এখন তুইও আমার ছেলেটার সাথে একই কাজ করলি। ঠকালি আমার রুদ্রকে। তোর আর রোজার মধ্যে কোনো তফাতই রইলো না কথাটা বলে রত্না চৌধুরী শাড়ির আঁচল চেপে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

– দোলা নিজেকে শক্ত করে নিয়ে রত্না চৌধুরীর সামনে দাঁড়ায়। রত্না চৌধুরীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে হাতে হাত রেখে বলে আমি তোমার ছেলেকে ঠকাইনি মা। আর এটা আমি প্রমাণ করে ছাড়বো। আমি যে নির্দোষ এটা তোমাদের প্রমাণ দিয়ে তবে আমি এই বাড়ি থেকে বের হবো। দোলার কথায় আঁতকে উঠে রত্না চৌধুরী। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বলে কোথায় যাবি তুই দোলা?………..

[যাদের গল্পের শেষ পর্যন্ত যাওয়ার ধৈর্য নেই তারা দয়া করে গল্প এড়িয়ে যান। এমনকি যারা গল্পের শেষ কি হবে আগেই জেনে বসে আছেন তারাও ইগ্নোর করুন৷ গল্পের শেষ নিয়ে আপনারা অস্থির হয়েন না আর আমাকেও বিভ্রান্ত করবেন না দয়া করে। একটা জিনিস লক্ষ্য করছি! মাফ করা নিয়ে আপনাদের ঘোর-আপত্তি৷ যেখানে মহান আল্লাহ’তা’লা তার বান্দার হাজার ভুল,পাপ ক্ষমার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যদি তার বান্দা মন থেকে ক্ষমা চাই! সেখানে তারই সৃষ্টি মানুষ হয়ে আমাদের ক্ষমা করা নিয়ে অনিহা ভীষণ। মানে আপনারা বোঝাতে চাইছেন রুদ্র যদি ভুল বুঝতে পেরে মন থেকে ক্ষমা চাই তাহলে তাও হবে না৷ তার শাস্তি হিসেবে দোলাকে সরে আসতে ডিভোর্স দিয়ে। মানে কি ভাই? ডিভোর্স একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে আজকের সমাজে। যে স্বামী ভুল করেছে আর সে বুঝতে পারলে ক্ষমা চাইলে তাও হবে না৷ ডিভোর্স লাগবে৷ একজন ডিভোর্সি নারীর জন্য সমাজ কতটা কঠিন বুঝেন আপনারা? ডিভোর্স নামক শব্দটা জীবনে কতবড় অভিশাপ একমাত্র একজন ডিভোর্সি নারীই জানে৷ আর রইলো গল্পের কথা৷ গল্পের শেষটা কীভাবে করবো সেটা তো আমি গল্পের শুরুতেই ঠিক করে রেখেছি। কারো কথায় তো বদলাবে না সেটা। তবে যারা প্রতিবাদ জানাতে এসে লেখক-লেখিকা পার্সোনাল ভাবে এট্যাক করেন তাদের বলছি! একটা গল্পের ভালো মন্দ মন্তব্য করার জন্য গল্পের শেষ পর্যন্ত যাওয়া লাগে৷ যদি আপনার মন মতো শেষ না হয় তখন বলতে পারেন আপনি। তার আগে এইভাবে মানসিক বিপর্যস্ত করা ঠিক না৷ আর শেষ পর্যন্ত যাওয়ার সে ধৈর্য আপনাদের নেই। যার মধ্যে গল্পের শেষ জানার ধৈর্য নেই তার গল্প পড়ার কোনো দরকার নাই। অযথা আপনারা বিভ্রান্ত সাথে আমাদেরও মানসিক ভাবে দুর্বল করে দেন৷
– আর গল্প মানে কাল্পনিকচরিত্র, কাল্পনিক সব৷ আর সেখানে এসে সব প্রতিবাদের ঝড় বয়ে দেয়। কিন্তু বাস্তব সমাজে দোলা-রুদ্র অহরহ আছে। এর থেকেও জঘন্য কাজ হচ্ছে নারীদের সাথে কই সেখানে আপনাদের একটাও প্রতিবাদ বাক্য দেখিনা৷ শুধু চুপচাপ দেখে ঠিকই সরে আসেন৷ কিন্তু যত বাক্য বিনিময় আপনাদের এই কাল্পনিক চরিত্রে এসে। আর লেখক-লেখিকারদের উপর হামলে পড়া। প্লিজ শেষ পর্যন্ত দেখুন আর সেটা না পারলে গল্পের ইতি টানুন এখনই। ]

– চলবে….

– ❌❌কপি করা নিষেধ ❌❌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here