#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম (লেখিকা)
“১৫”
–” দোলা সামিরের থেকে ছাড়া পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে। সামির যেনো পণ করেছে! তার কথা না শোনা পর্যন্ত দোলাকে সে ছাড়বে না।
– কেনো করছো এমন সামির? প্লিজ আমাকে যেতে দাও। অসহায় কন্ঠস্বর দোলার।
– আমার কথাটা শুনো দোলা। আমি তোমার ভালো চাই বিশ্বাস করো। আহত কন্ঠে বলে সামির।
–
— দোলা নিজেকে শান্ত করে বলে আচ্ছা বলো কি বলবে।
– আমি জানি তুমি রুদ্রর সাথে ভালো নেই। আমি এটাও জানি যে রুদ্র তোমার উপর অত্যাচার করে। তুমি বাধ্য হয়ে রুদ্রর সাথে আছো। কারণ তুমি রুদ্রকে ভালোবাসো না। আর রুদ্র এটারই যোগ্য। ও কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়। দৃঢ় কন্ঠে বলে সামির।
— তুমি কীভাবে জানলে যে রুদ্র আমার উপর অত্যাচার করে? আমি রুদ্রর সাথে বাধ্য হয়ে থাকছি। আমি কি কখনো বলেছি তোমাকে এইসব সামির? দোলার কথায় হকচকিয়ে উঠে সামির। ঘাবড়ে যাওয়া চোখে তাকিয়ে আমতাআমতা করে বলে তুমি না বললেও আমি সব জানি দোলা।
কীভাবে? সেটাই জানতে চাচ্ছি আমি। দোলার মধ্যে বিশাল কৌতুহল।
— যাকে ভালোবাসি তার খোঁজ রাখবো না! তার সম্পর্কে জানবো না তাই কখনো হয় দোলা। সাবলীল ভাবে সামির। কিন্তু দোলার ঠিক বোধগম্য হয়না সামিরের কথা।
– ভালোবাসো মানে? কি বলতে চাইছো তুমি সামির?চোখ মুখ কুচকে যায় দোলার।
– সামির মাথা নিচু করে বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি দোলা। আর সেটা আজ নয় অনেক আগে থেকে। আমাদের বন্ধুত্বের শুরু থেকে আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু কখনো বলতে পারিনি। ভেবেছিলাম সময় মতো তোমার কাছে আমার মনের কথাগুলো প্রকাশ করবো। কিন্তু তার আগে তুমি রুদ্রকে বিয়ে করে নাও।
— আর এই জন্যই তুমি আমার আর উনার সম্পর্কটা নষ্ট করতে চাও। এখন আমি সবটা বুঝতে পারছি সামির। এই হলো তোমার গুরুত্বপূর্ণ কথা। তুমি আমাকে ভালোবাসো বলে আমাকে পেতে চাও এখনো। আর তার জন্যই তুমি উনার নামে উল্টো পালটা কথা বলে আমার মনটা বিষিয়ে তুলতে চাও উনার সম্পর্কে।
– দোলার কথায় সামির আঁতকে ওঠা চোখে তাকিয়ে ব্যস্ত হয়ে বলে না না দোলা। তুমি আমাকে ভুল ভাবছো। আমি সে জন্য কিছু করছি না। সত্যি রুদ্র তোমার যোগ্য নয়৷ ও ভালো নয় দোলা। আর তার প্রমাণ আমি তোমাকে দেখাবো ওয়েট বলে সামির পকেট থেকে ফোন বের করতে যায় তখনই দোলা ধাক্কা দিয়ে সামিরকে সরিয়ে দেয়। অবাক চোখে তাকায় সামির।
– আমি খুব ভালো করে বুঝে গেছি সামির৷ তুমি উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এইসব করছো। তুমি আমার আর উনার সম্পর্কে ভাঙন ধরাতে চাও। যাতে তোমার পথ ক্লিয়ার হয়ে যায়৷ কিন্তু এমনটা কখনোই হবে না সামির। তবে একটা জিনিস হবে আজ থেকে। তোমার সাথে আমার যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো সেটা আর থাকবে না৷ তুমি বন্ধুত্বের মর্যাদা দিতে পারোনি সামির কথাটা বলে দোলা ছুটে বেরিয়ে আসে ক্লাসরুম থেকে। সামির নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে দোলার দিকে।
– দোলা দুইতলায় ছিলো। আশা দোলাকে খুঁজতে খুঁজতে নিচে চল আসে৷ ওয়াসরুম থেকে এসে দোলাকে না দেখতে পেয়ে ভাবে দোলা হয়তো নিচে চলে গেছে৷ তাই সে নিচে চল আসে।
– দোলাকে ছুটে আসতে দেখে আশা দোলাকে থামিয়ে দেয়।
– দোলার চোখের মধ্যে পানিতে টলমল।
– কি হয়েছে দোলা? তুই এইভাবে ছুটছিস কেনো? আর কোথায় ছিলিস তুই। আমি তো তোকে উপরে দেখলাম না। দোলা নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে আমি বাড়ি যাবো আশা। আমার কিছু কাজ আছে। তুই তানিয়াকে প্লিজ বলে দিবি কথাটা বলে দোলা দাঁড়ায় না এক মুহুর্ত। হনহন করে চলে আসে৷ দোলা আসতেই তানিয়া বেরিয়ে আসে ক্লাসরুম থেকে। আশা অবাক হয়ে দোলার পাণে চেয়ে। হঠাৎ কি হলো বুঝতে পারছে না।
– একি আশা তুমি এখানে দাঁড়িয়ে যে? ভাবি কোথায়? তানিয়ার কথায় আশা মুখটা মলিন করে বলে দোলা এই মাত্র চলে গেলো।
– চলে গেলো? উত্তেজিত কন্ঠে বলে তানিয়া। ভাবি আমাকে না নিয়ে চলে গেলো? কিন্তু কেনো?
-ওর নাকি কি একটা কাজ আছে। আর তাই তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো৷ আশার কথায় তানিয়া ভাবনায় পড়ে যায়। দোলার আবার কি এমন কাজ আছে এখন৷ এরপর তানিয়াও বেরিয়ে যায় সাথে আশাও।
— দোলা হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে। দোলাকে একা ফিরে আসতে দেখে বিস্মিত চোখে তাকায় রত্না চৌধুরী। তিনি ড্রয়িংরুমেই বসা ছিলেন।
— আমার কি সামিরের কথাগুলো শোনা উচিত ছিলো? কি বলতে চেয়েছিলো সামির? আর আমাকে কি দেখাতে চাই। কি প্রমাণের কথা বলছিলো সে? উফফ মাথা গরম করে চলে আসাটা ঠিক হয়নি। আমার আর একটু সময় দেওয়া উচিত ছিলো সামিরকে। এইসব ভাবতে ভাবতে আসে দোলা। দোলার শরীরটা খারাপ করছে খুব। হয়তো অতিরিক্ত চিন্তা করার ফলে। দোলা প্রচন্ড ঘেমে আছে।
– কি রে দোলা মা৷ তুই একা কেনো? তানিয়া কোথায়?
রত্না চৌধুরীর কথায় দোলা চমকে উঠে। কারণ সে অন্যমনস্ক থাকায় রত্না চৌধুরীকে খেয়াল করেনি প্রথমে। দোলা পিছু ঘুরে কিছু বলতে যাবে তার আগে মাথার মধ্যে চক্কর দিয়ে উঠে। দোলা একহাতে মাথা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলে। দোলাকে এমন করতে দেখে রত্না চৌধুরী ঘাবড়ে যাওয়া গলায় বলে কি হয়েছে দোলা? তুই ঠিক আছিস। রত্না চৌধুরীর কথার জবাব দেওয়া হয়ে উঠে না দোলার! মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
– দোলায়ায়া চিৎকার করে উঠে রত্না চৌধুরী। রত্না চৌধুরীর চিৎকারে দুজন সার্ভেন্ট ছুটে আসে। সাথে সাথে তানিয়াও হাজির হয় সেখানে৷ দোলার পেছনেই ছিলো সে। তাই বাড়ি ফিরতে বেশি সময় লাগে না। দোলাকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে তানিয়া চমকানো চোখে তাকিয়ে উচ্চস্বরে ভাবি বলে উঠে ছুটে আসে। রত্না চৌধুরী হুইলচেয়ার নিয়ে এগিয়ে আসে। সবার মধ্যে ভীষণ উত্তেজনা। জেসমিন চৌধুরী সবার চিৎকার শুনে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। দোলাকে এইভাবে পড়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকায় শুধু এরপর একটা ভেংচি কেটে বলে যতসব ঢং এরপর আবারও ঘরে চলে যায়। তানভীর আহমেদ বা রুদ্র কেউ-ই বাড়িতে নাই।
— হসপিটালের করিডোরে অপেক্ষা করছে সবাই। রুদ্র খবরটা শোনামাত্র ছুটে আসে। তার আগেই সন্দেহ হয়েছিলো দোলার শরীর ভালো নেই। শুধুমাত্র দোলার জেদের জন্য রুদ্র ডক্টর দেখাতে পারে না৷ রুদ্রর মধ্যে ভীষণ টেনশন, হারানোর ভয়। কি হয়েছে দোলার ভাবতেই ঘামছুটে যায় যেনো রুদ্রর। তানিয়া আর তানভীর আহমেদও আছে সাথে৷ তানিয়া এম্বুলেন্স খবর দিলে তারাই দোলাকে নিয়ে আসে এখানে। এরপর রুদ্রকে খবর দেয়।
… দোলাকে নিয়ে আসা হয়েছে একঘন্টা হয়েছে। অতিরিক্ত ট্রেস নেওয়াতে দোলা জ্ঞ্যান হারায়। তাছাড়া আগে থেকে শরীর খারাপ তো আছেই৷ ডক্টর দোলার সমস্ত রকম টেস্ট করান। কিছুখন বাদে দোলার জ্ঞ্যান ফিরে। খবরটা রুদ্রর কান অব্দি আসতেই ছুটে যায় রুদ্র। এতখন তার প্রাণ’টা যেনো সাথে ছিলো না৷ দোলার জ্ঞ্যান ফিরেছে শুনে স্বস্তি পাই একটু।
— আমি জানতাম তোমার শরীর ঠিক নেই। বলেছিলাম ডক্টর কল করি। কিন্তু তুমি আমার কথা শুনোনি৷ তুমি আমার একটাও কথা শোনো না দোলা। এই যে শরীর খারাপ নিয়ে হসপিটাল আছো খুব ভালো লাগছে এখন তাই না। মনোক্ষুন্ন হয়ে বলে রুদ্র। দোলা ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে শুধু। রুদ্রর মধ্যে স্পষ্ট আতংক দেখতে পাচ্ছে দোলা। রুদ্র দোলার হাত চেপে ধরে কোমল কন্ঠে বলে এখন কেমন আছো দোলাপাখি? দোলা কিছু বলে না। শুধু মোহময় চাহনিতে রুদ্রকে উপলব্ধি করছে। সত্যি এই মানুষটা এত চিন্তিত আমাকে নিয়ে? আমার জন্য এত অস্থিরতা? আর সেই মানুষটা কীভাবে খারাপ হতে পারে? সামির কেনো এইগুলো বলছিলো। কি এমন আছে? দোলার মধ্যে আবারও একই ভাবনা। দোলাকে চুপ থাকতে দেখে রুদ্র ভ্রু কুচকে বলে কি হলো দোলা কিছু বলো। কোনো সমস্যা নেই তো আর। তুমি ঠিক আছো?
– আমি ঠিক আছি রুদ্র! চিন্তা করবেন না। রোদের মধ্যে এসেছি তার জন্য.. আর একটাও এক্সকিউজ শুনতে চাইনা দোলা। এবার যা বলার ডক্টর বলবে। তোমার নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে। নয়তো এতটা দুর্বল তুমি কীভাবে হবে। দোলাকে থামিয়ে দিয়ে বলে রুদ্র। এর মধ্যে তানিয়া আসে।
– ব্রো ডক্টর তোমায় ডেকেছে। তানিয়ার কথায় রুদ্র দোলার হাতটা মুঠো বন্দী করে বলে তুমি বসো আমি আসছি। এরপর দোলার হাতের তালুতে ঠোঁট স্পর্শ করে চলে যায় রুদ্র। তানিয়া এসে বসে দোলার পাশে।
– হঠাৎ কি এমন হলো বলো তো ভাবি। তুমি ভার্সিটি থেকে এইভাবে চলে আসলে। বাড়িতে এসে দেখি তুমি জ্ঞ্যান হারিয়ে ফ্লোরে পড়ে। মামি খুব চিন্তায় আছে তোমাকে নিয়ে। ইনফ্যাক্ট আমি নিজেও ঘাবড়ে গিয়েছিলাম অনেক। তোমার শরীর খারাপ করছে সেটা তো আমাকে জানাতে পারতে। গাড়ি না নিয়ে হুট করে চলে এসেছো। এটা যদি ব্রো জানতে পারে তাহলে কি হবে ভাবতে পারছো। তুমি তো বকুনি খাবে সাথে আমিও। তানিয়ার কথায় দোলা মুচকি হেসে বলে কিছু হবে না তানিয়া৷ চিন্তা করো না৷ তাছাড়া আমি ঠিক আছি দেখো।।
— মিস্টার চৌধুরী! আমরা আপনার ওয়াইফের বেশ কিছু টেস্ট করিয়েছি। সেগুলোর রিপোর্ট আসতে দুদিন লাগবে। এরপর আমরা আপনাকে ইনফর্ম করবো ওকে। তবে চিন্তা করবেন না। আপনার ওয়াইফ সুস্থ আছে। তেমন কোনো চিন্তার বিষয় নেই।
– যদি ঠিকই থাকবে তাহলে হঠাৎ এমন হওয়ার মানে কি ডক্টর? ডক্টরের কথার বিপরীতে বলে উঠে রুদ্র৷
– আমার মনে হয় উনি ঠিক ভাবে খাওয়া দাওয়া করেন না। আর কোনো কিছু নিয়ে অনেক টেনস থাকেন৷ যার ফলে এমন সমস্যা উনার। কয়দিন রেস্ট নিলে আর ঠিকঠাক ভাবে খাওয়া দাওয়া করলে আবার সুস্থ হয়ে উঠবেন উনি। তাছাড়া আমরা অন্য কিছুও ভাবছি সেটা রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত শিওর হতে পারছি না। এই কথাটা শুনে রুদ্র ঘাবড়ে যায়। ভয়ার্ত ফেসে তাকিয়ে বলে অন্য কোনো সমস্যা? কি হয়েছে ডক্টর দোলার।
– আরে মিস্টার চৌধুরী ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আপনার ওয়াইফের সিরিয়াস কিছুই হয়নি৷ আর রিপোর্ট আসলে আমরা আপনাকে শিওর জানাবো। এখন উনাকে নিয়ে যেতে পারেন সমস্যা নেই। ডক্টরের কথায় রুদ্র মুচকি হেসে বলে থ্যাঙ্কিউ ডক্টর। এরপর রুদ্র বেরিয়ে আসে চেম্বার থেকে।
— রুদ্রর ঘরে রত্না চৌধুরী, রাশেদ মিয়া, রোকন, তানিয়া তানভীর আহমেদ সবাই উপস্থিত আছে। সময়টা সন্ধ্যার পর। দোলার শরীর খারাপ খবরটা পেয়ে রাশেদ মিয়া ছুটে আসে মেয়েকে দেখার জন্য। রুদ্র এই সময় বাড়িতে নেই। একটা কাজের জন্য বেরুতে হয় তাকে। তবে এই সময়টা দোলাকে ছেড়ে কোথাও যেতে একদম নারাজ রুদ্র। কিন্তু কি করার কাজের জন্য তো যেতেই হবে।
– আমি আর খাবো না মা। বাড়ি এসে পর্যন্ত তোমরা আমাকে এটা ওটা খাওয়ায় চলেছো। এত খেলে আমি তো একদিনে মটু হয়ে যাবো। গাল ফুলিয়ে বলে দোলা।
– কোনো কথা শুনবো না দোলা। ডক্টর স্ট্রেট জানিয়ে দিয়েছে তোমাকে ঠিক ভাবে খাওয়া দাওয়া করতে হবে। কারণ তোমার শরীর প্রচন্ড উইক। তাছাড়া রুদ্রর কড়া নির্দেশ যে একদম অনীহা করা যাবে না খাবার নিয়ে। মৃদু হেসে বলে রত্না চৌধুরী।
– দোলা অসহায় চাহনি রাখে রত্না চৌধুরীর দিকে।
– জামাই যা বলে তাই শুনবি দোলা মা। আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম বলতো। হঠাৎ তোর এমন শরীর খারাপ হলো কীভাবে?.
– আমি ঠিক আছি বাবা চিন্তা করোনা। আমার জন্য তোমার শরীর খারাপ করবে এবার। দোলার কথায় রাশেদ মিয়া হাসার চেষ্টা করে।
— রাত দশটায় রুদ্র বাড়ি ফিরে। রাশেদ মিয়া একটু আগে চলে গেছে রোকনকে নিয়ে। দোলা পড়ে গেছে বিপাকে। এসে পর্যন্ত ঘরে শুয়ে বসে আছে। এইভাবে ঘরে বসে থাকতে কার ভালো লাগে। তানিয়া এতখন দোলার সাথে ছিলো৷ রুদ্র আসায় বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।
– রুদ্র ফ্রেস হয়ে এসে দোলার পাশে বসে। দোলা মুখটা গোমড়া করে বসে আছে।
– কি সমস্যা? ভ্রু উঁচিয়ে বলে রুদ্র দোলাকে এইভাবে বসে থাকতে দেখে।
— আপনার জন্য সবাই আমাকে এইভাবে ঘরে বসিয়ে রেখেছে। কেউ কিছু করতে দিছে না আবার একটু পর পর খাওয়া। এইভাবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে ভালো লাগে নাকি মলিন কন্ঠে বলে দোলা।
– সেটা তোমার আগে ভাবা ছিলো দোলা-পাখি। রুদ্রর কথায় দোলা বিস্ময় নিয়ে বলে মানে?
– মানে খুবই সিম্পল! শরীর খারাপ করার আগে ভাবা উচিত ছিলো তোমার। যেহেতু শরীর খারাপ করেছো এখন রেস্ট করতে হবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত।
– কিন্তু আমি তো সুস্থ! করুণ স্বরে বলে দোলা।
– সেটা তুমি বললে তো হবে না। যখন আমার মনে হবে তুমি সুস্থ তখনই তুমি অন্য কিছু করবে। তার আগে প্রোপার রেস্ট নিবে৷ একদম কোনো কথা শুনবো না।
– জানি না কখনো সুস্থ হবো কি-না আপনার চোখে বিড়বিড় করে বলে দোলা। দোলার কথায় মুচকি হাসে রুদ্র দোলার অগোচরে।
– আচ্ছা রুদ্র একটা কথা বলব?
– দোলার হঠাৎ এমন কথায় রুদ্র কৌতুহলী হয়ে বলে হুম বলো। পারমিশন নেওয়ার কি আছে দোলাপাখি। তোমার যা ইচ্ছে তাই বলতে পারো। রুদ্রর কথায় দোলা কিছুক্ষন অপলক ভাবে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, আচ্ছা রুদ্র আপনার মধ্যে এমন কিছু আছে যা আমি জানি না। হঠাৎ দোলার এমন কথায় ঘাবড়ে যায় রুদ্র। কিছুটা সংশয়, ভয়ের ছাপও বিদ্যমান হয়।
– কি হলো বলুন না৷ আপনার কি কোনো অতীত আছে যেটা আপনি আমার থেকে লুকিয়ে গেছেন? দোলার মধ্যে প্রবল কৌতুহল জানার।
– রুদ্র হতভম্ব হয়ে যায়। কি বলবে বুঝতে পারছে না। কিন্তু দোলা হঠাৎ এই কথা কেনো জিজ্ঞেস করছে এটাও রুদ্রর ভাবনা ছাড়া হয়না।
– আমার আবার কি অতীত থাকবে। কি যা-তা বলছো দোলা? তোতলানো স্বরে বলে রুদ্র। দোলা সন্ধিহান চোখে তাকিয়ে বলে আপনি এতটা ঘাবড়ে কেনো আছেন রুদ্র? আমি তো জাস্ট এমনি জানতে চাইলাম।
– তুমি রেস্ট করো দোলা। আমার কিছু কাজ আছে। সেগুলো শেষ করি বলে রুদ্র উঠে ল্যাপটপ হাতে বারান্দায় চলে যায়। দোলা প্রশ্ন গুলো নিজের মধ্যে রেখে আশাহত হয়ে বসে থাকে৷
– রুদ্রর মধ্যে উত্তেজনা। হঠাৎ দোলা এইসব কথা কেনো জানতে চাইছে? কি হয়েছে। রুদ্রর মধ্যে আবার ও একটা ভয় কাজ করে।
— একটা কাজও ঠিক ভাবে করতে পারো না তুমি। আবার স্বপ্ন দেখো দোলাকে পাওয়ার। কি করতে বললাম আর কি করলে তুমি? দোলাকে সামান্য প্রমাণ গুলো দেখাতে পারলে না। ক্রোধান্বিত হয়ে বলে ব্যক্তিটি।
– আমি কি করবো যদি দোলা রাজি নাহয়। আমি তো অনেক ট্রাই করেছিলাম সবটা বলার। করুণ স্বরে বলে সামির।
– এবার যা করার আমাকেই করতে হবে দেখছি। শুনলাম দোলার নাকি শরীর খারাপ হঠাৎ করে। রুদ্র তো এখন দোলাকে নিয়ে অনেক ব্যস্ত।
– কিহ! দোলার শরীর খারাপ? কি হয়েছে দোলার। আর তোমাকে কে বলল? উত্তেজিত কন্ঠে বলে সামির।
– আমাকে কে বলল সেটা বড় বিষয় না। এখন আমাদের খুব সাবধানে কাজ করতে হবে৷ রুদ্র আর দোলাকে আলাদা করতে হবে এটাই মূল কথা৷ নাহলে কিন্তু তুমি কখনোই দোলাকে পাবে না সামির।
– আমাকে কি করতে হবে এখন? সামিরের কথায় ব্যক্তিটি মুচকি হেসে বলে তোমাকে আর কিছুই করতে হবে না৷ যা করার আমি করবো এবার। ওয়েট এন্ড সি বলে শব্দ করে হাসতে থাকে সে।
— এইভাবে চলে যায় আরো দুদিন। দোলা এখন সুস্থ পুরোপুরি। সবাই বিশেষ ভাবে খেয়াল রেখেছে দোলার। তবে অপেক্ষা দোলার রিপোর্ট গুলো আসার। রুদ্র অফিসে বসে আছে৷ সামনে আছে রাজ। এই সময় একজন কর্মচারী আসে রুদ্রর রুমে।
– স্যার আপনার জন্য একটা পার্সেল এসেছে। কর্মচারীর কথায় রাজ এবং রুদ্র দুজনেই ভ্রু কুচকায়। হঠাৎ পার্সেল আবার কে পাঠালো ভাবে রুদ্র। এরপর পার্সেলটা হাতে নিয়ে ওই লোকটাকে চলে যেতে বলে। বাদামি রঙের খাম একটা।
– এই সময় পার্সেল কে দেবে বলতো? রুদ্রর কথায় রাজ ঠোঁট উল্টোয়। রুদ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পার্সেল আসা খামটা খুলে দেখতে থাকে।
— চলবে….
– ❌❌কপি করা নিষেধ ❌❌ ভুলক্রুটি ক্ষমা করবেন।