#তুই__আমার
#লেখাঃ সাফিয়া_জান্নাত_মুন
#পর্ব ৩য়
———কাব্য ভাইয়া চলে গেলো। আমি আবার বসে পড়লাম। ভাইয়া ভালো হয়েছে ভেবে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম আমি। কিন্তু সম্পর্ক গুলো কেমন অগুচ্ছালো হয়ে উঠেছে ভাবতে এক চাপা দীর্ঘ নিশ্বাস ভিতর থেকে আসে। কোথাও একটু শান্তি পাচ্ছি না। অন্যকিছুই সুখ দিচ্ছে না।
!
!
আয়েশা খালা এসে আমায় নিচে নিয়ে গেলো। আয়েশা খালার এক জিনিষ পছন্দ হওয়ার মতো তিনি সব সময় সময়ের কাজ সময়ে করেন। তার মতে ঘরির সাথে ছোটা উচিৎ তাতে নাকি সময়ের জন্য আফসোস হবে না।
!
!
আমার পাশে দারিয়ে আছে কবির ভাইয়া যার সাথে আমার বিয়ে হতে চলেছে। যার সাথে সারাজীবন টা আমি কাটাবো সেই মানুষ টার সাথে আমার তেমন মিল আমি কিছুই পাইনি কখনো।
আয়েশা খালা আমায় কবির ভাইয়ার সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো।
আমি নিচু হয়ে দারিয়ে আছি। কবির ভাইয়ার দিকে মুখ তুলে তাকাচ্ছি না।
আমাদের ঘিরে আয়েশা খালা মামিমা আর নানী বলতে কবির ভাইয়ার নানী দারিয়ে আছেন। সবার চোখ আমাদের দিকে এখন আংটি বদল অনুষ্ঠান নাকি শুরু হবে।
নিজের আঙ্গুলের দিকে তাকাতে ভয়ে আমার বুক টা কেপে উঠলো। কাব্য ভাইয়া তো কাল আমার আঙ্গুল টা,, এই মুহূর্ত কি হবে কি করার বা আছে এই আঙ্গুলে তো কিছুতেই আংটি পড়াতে পাড়বে না এক চিন্তায় পড়ে গেলাম সব কিছুইর মাঝে অসহায় লাগছে নিজেকে।
আয়েশা খালা এক গাল হেসে বলছে দেখেছো আপা কি সুন্দর মানিয়েছে দুইজনকে।
হ্যা রে ছোটো আমার ছেলের সাথে মেঘাকে বড্ড মানিয়েছে রে।
আর কত সুন্দর সুন্দর মেয়ে পাওয়া যেতে আমার কবিরের জন্য। এতে এতো কথা বলা বলির কি আছে?
নানীরর কথা সবাই একটু খারাপনজর দিয়ে দেখলো।
কিন্তু আমার কাছে বেশ লেগেছে। তার এই করলার মতো তিতা কথা গুলো আমার শুনতে বড্ড ভালো লাগে।
মামিমা বোধয় ভেবে নিয়েছে আমি নানীর কথায় মন খারাপ করে বসেছি।
তাই তাড়াহুড়ো করে আংটি বদল টা শুরু করতে চাইলো।
সবাই সম্মতি দিলো।
আয়েশা খালা আংটির বক্স টা নিয়ে কবির ভাইয়ার দিকে ধরলো,
কবির ভাইয়া আংটি টা তুলে নিয়ে আমার দিকে বাড়ালো আমি কাপা কাপা হাতে নিজের হাত টা বারিয়ে দিলাম।
আমার আঙ্গুলের বেহাল দেখে সবাই হতবাক কিছুই মহিলা ফুসফাস কথা বলতে শুরু করলো
নানীতো প্রায় চিৎকার করে বলতে লাগলো
দেখছিস পুতুল দ্খেছিস এই মেয়ে কত বড় অপেয়া
দেখ এই সময়ে হাত কেটে বসে আছে। অলক্ষী মেয়ে একটা ছোট বেলায় মা বাবা কে খেয়েছে এখন এসেছে আমার নাতির মাথা খাবে বলে।
আমি ছলছল নয়নে নানীর দিকে তাকালাম, মামিমার চোখ মুখে স্পষ্ট বিরক্তির ছাপ। কবির ভাইয়াকে দেখে মনে হলো তার কোনো ভাবান্তর নেই এই বিষয়ে।
আমি মাথা নিচু করে আছি,
আয়েশা খালা কঠিন স্বরে বলে উঠলেন
—–আমি তোমার কাছে এটা আশা করিনি মেঘা তোমায় একটু খেয়াল রাখা উচিৎ ছিলো নিজের প্রতি।
—–হ্যা রে মা মেঘা এটা কি কান্ড হলো বলতো দেখ আত্নিয় স্বজন কি চোখে আমাদের দেখছে তুই ভাবতে পারছিস? তোর মামার কথা টা একটু ভাব।
নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে। আজ আমার জন্য এতো কিছুই হচ্ছে শুধু আমার জন্য।
কোথাথেকে কাব্য ভাইয়া এসে আমার পিছোনে দারিয়ে বললো,
—–মা আমরা কি ১৯৯০ দশকের না এই ২০২০ দশকের।
—-কেন বলতো কাব্য এভাবে বলছিস কেনো?
—–মা এক্সিডেন্ট তো যেকোনো ভাবে হতে পারে যেকোনো সময় হতে পারে তা কি বলে বলে আসবে?
—কিন্তু কাব্য
—-মা আমাদের সমাজ মর্ডান কালচারের হয়ে গেছে কিন্তু আমাদের দেখো সেই পুরানো ব্যাকডেটেথ কালচারে পড়ে আছি। অপেয়া অলক্ষী আর বেকার সব শব্দ এ যুগে বসে ইউস করে যাচ্ছি অনায়াসে।
—-হুম কথা তুই মন্দ বলিস নি কাব্য।
—হুম নানি তোমাদের যুগে তো মনে হয় গুরুজন রা নাকি বালা পড়িয়ে দিয়ে আশীর্বাদ করতো তাহলে তুমি সেটা করছো না কেনো নিয়ম তো পালন হলেই হলো একভাবে নাহোক অন্যভাবে।
কাব্যর কথা খুশিতে গদগদো হয়ে গেলেন নানি তার নাতি তার নিয়মের কথা বলতে তার আর খুশি ধরছে না।
কাব্যর কথা পরিবেশ টা ঢান্ডা এখন আর কারো কোনো অভিযোগ নেই মেঘাকে নিয়ে। সবাই রাজি হয়ে গেলো যেখানে নানি মেঘাকে বালা পড়িয়ে দিবে সেখানে আর কেউ কিছুই বললো না।
নানীর মেঘাকে অপছন্দ কিন্তু এই মুহূর্ত তিনি তা ভুলে গিয়ে কাব্যর কথায় মেঘাকে বালা পড়ানোর জন্য এগিয়ে আসলো।
কাব্য পাশে দারিয়ে ছিলো।
কাব্য একটা বক্স থেকে একটা বালা বের করলো নানী সেটা হাতে নিয়ে মেঘা কে পড়াতে লাগলো।
বিপত্তি ঘটলো আবারো বালা কিছুতেই মেঘার হাতে ঢুকছে না।
হাতটা অনেক শক্ত করে চেপে ধরেছেন নানি মেঘার ব্যাথা লাগলেও প্রকাশ করছে না সে, নিরবে সহ্য করছে।
—কাব্য হেসে বললো,,,নানি হাতের হাড়গোড় ভেঙ্গে কি বালা টা ঢুকিয়ে দিবা।
নানী লজ্জামাখা মুখে কাব্যর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো
দেখনা কাব্য বালা টা ঢুকছেই না এত চিকন হাত আর বালা টা তো মাপের মনে হচ্ছে তাও ঢুকছে না।
–আরে নানী এটা এভাবে ঢুকায় না। এটা ব্যাস সিস্টেম বালা। ডিজাইনে বালা কিন্তু আসলে এটা ব্যাস।
—-এটা আবার কেমনে পড়ায় বালা আবার ব্যাস হয় নাকি?
সবাই নানীর কথায় মুখ টিপে হাসছে।
কাব্য বালা টা নিয়ে
চাপ দিতেই বালা টা দুপাশ হয়ে খুলে গেলো।
নানী অবাক হয়ে বললো
বালা টা তো ভেঙ্গে গেলো এখন কি হবে?? এসব কি ঝামেলা বলতো কাব্য?
নানীর কথায় সবাই হালকা শব্দে হেসে উঠলো।
কাব্য নানীর হাত ধরে বালা টা মেঘার হাতে পড়িয়ে দিলো।
সবাই হাত তালি দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করলো।
মেঘা অবাক হয়ে গেলো কারন ছলবলে কি কাব্য তাকে? না না তিনি এমন একটা আপত্তিকর অবস্থা থেকে আমায় বাঁচালেন আর আমি তার নামে এইসব ভাবতে পারি না। কিন্তু তার হুট করে ভালো হওয়ার রহস্য টা তো বুঝা বড় দায়ের।
!
!
একটা এনাউসমেন্টে সবাই সেই দিকে লক্ষ্য করলো।
আমি চোখ দিতেই দেখলাম মিশু মাসআল্লাহ মিশুকে অনেক সুন্দর লাগছে নীল রং টা বেশ মানিয়েছে।
মিশু আর কিছুই মেয়ে মিলে নাচ শুরু করলো
♪♪♪♪♪♪
আসমামে যেচে বাদাল হো রাহে হে,,
হাম ধিরে ধিরে ধিরে পাগাল হো রাহে হা,
আসমামে যেচে বাদাল হো রাহে হে
হাম ধিরে ধিরে ধিরে পাগাল হো রাহে হা
মে তো মারজানা হায়
উনা যো মিলনে আয়ে
মে তো মারজানা হায় উনা যো মিলনে আয়ে।
শ্বাসে মিলিহে উনকে হাতোন মে
ইয়াদ পিয়া কি, মেরে পিয়া কি আনে লাগি
হায়ে বিগি বিগি রাতো মে
সবাই কত উৎসাহ নিয়ে নাচ দেখছে আমার বোন টা যে এতো সুন্দর নাচ করে তা তো আমি জানতাম না। কেমন বোন আমি?
এতো ভিড়ের মাঝে কেউও আমায় টেনে নিয়ে গেলো।
!
!
!
একি কাব্য ভাইয়া আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
—চুপ আমার সাথে চলো।
—-মুষ্টিবদ্ধ করে ধরেছে কাব্য মেঘার হাত অদ্ভুত ব্যাপার মেঘার হাতে ব্যাথা লাগছে না যদি সে হাত টা ছাড়িয়ে নিতে পারলো না।
স্টোর রুমে এসে কাব্য মেঘার হাত টা ছেড়ে দিলো।
মেঘা ভয়ে ভয়ে বলতে লাগলো,
একি কাব্য ভাইয়া
—ছিই তোমার কি লজ্জা লাগে না?
মুহূর্ত এমন কথা শুনে মেঘা ঘাবড়ে গেলো কি সব বলছে কাব্য ভাইয়া?
—কেকোনো আমতাআমতা করে বললাম।
—নিজের হবুও বর কে ভাইয়া বলে সমদ্ধোধন করছো।
—মুহূর্ত কাব্য ভাইয়ার কথা আমি আকাশ থেকে পড়লাম এমন ভাব রেখে টেনে বললাম
ভাইয়া কিসব বলছেন আপনি??
—কেনো মেঘ বাজে কি বলছি? তোমার হাতে বালা তো আমি কিছুইক্ষন আগে পড়িয়ে দিলাম এর মানে এখন তুমি আমার হাফ বউ।
কাব্য ভাইয়ার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না তিনি পাগলের মতো এসব কি বলছে?
কাব্য মেঘার দিকে একটু হেলে গিয়ে ফুঁ দিয়ে তার অবাধ্য চুল গুলোকে কপাল থেকে সরিয়ে দিলো।
এই যে আমার ভাবুকরানী সারাদিন কি এতো ভাবনা চিন্তা করো বলতো?
—ভাইয়া আপনি যা করছেন তা একদম ঠিক না।
—কি ঠিক না মেঘ?
— আপনি আমার সাথে এভাবে এখানে থাকতে পারেন না।
— আমি তোমায় কি করেছি মেঘ? আমি কি তোমায় টার্চ করেছি বা অন্যকিছু করেছি আর তুমি তো আমার হাফ বউ সবাই হয়তো এই ছলনা বুঝে উঠতে পারেনি ঠিকমতো কিন্তু তুমি তো বুঝতে পারেছে মেঘ।
—ছলনা দিয়ে আপনি আমায় পেতে চান ভাইয়া।
–এখন যাও তুমি মেঘ কেউ দেখলে তোমায় ভুল বুঝবে আর তা আমি এই মুহূর্ত চাচ্ছি না।
মেঘা চলে গেলো।
মেঘার যাওয়ার দিকে অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে কাব্য। সে মনে মনে ভেবে চলেছে,
তুমি আমার জান মেঘ। আর তোমার কিছুই আমি হতে দিবো না আমি থাকতে তোমায় কেউ টার্চ ও করতে পারবে না। এর জন্য তোমার চোখে আমায় যত নিজে নামতে হয় আমি নামবো আমার বিশ্বাস করি তুমি একদিন আমায় ঠিক বুঝবা মেঘ। এই কাব্য তোমার সাথে যা করছে কেনো করছে সব বুঝবা তুমি মেঘ।
!
!
সবাই বড্ড জোর করছে মেঘা কে একটা গান বলার জন্য।
কিন্তু মেঘার মোটেও ইচ্ছে হচ্ছে না সে এই মুহূর্ত হে হে করে গান গাবে।
তবুও সবার জোরাজুরি তে বাধ্য হয়ে হল রুমের ঠিক মাঝ রাবর দারিয়ে পড়লো।
মেঘা গান শুরু করতে যাবে তখন মেঘা বলে কারো চিৎকারে সবাই পিছুই ঘুরে দেখার চেষ্টা করলে কে?
কাব্য মেঘার দিকে দৌড়ে আসছে সবাই এমন ঘটনায় অবাক হয়ে গেলো।
কাব্য কি করতে চাইছে এখন মেঘার মাথায় আসছে না।
সে কি?
চলবে______________