তুই আমার পর্ব ২

0
1386

#তুই__আমার
#লেখাঃ সাফিয়া জান্নাত মুন
#পর্ব ২য়

——— কারো হাতের স্পর্ষ আমার ঘুমের ঘোর কাটছে। কেউ আমায় অনেক ব্যস্ততা নিয়ে ডাকছে মনে হচ্ছে তার কাছে সময়ের বড্ড অভাব এক সেকেন্ড এসপারওসপার হলেই সে অনেক সমস্যায় জড়িয়ে পড়বে।
আচ্ছা কাব্য ভাইয়া কি আবার এসেছে? সে কি বেতালা ভাবে ডাকছে আমায়? সে আবার কি করতে চায় আমার সাথে?
ঘুমের ঘোর টা কাটছে আমার ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখলাম মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিশু।
মিশুকে দেখে আমি একটু শান্তি পেলাম আমার কাছের মানুষের মধ্য সব থেকে কাছের আমার মিশু।

—–আপু তোর কি কিছুই হয়েছে?

মিশুর কথায় চমকে উঠলাম ওকি কিছুই বুঝতে পারলো নাকি? কাব্য ভাইয়ার বিষয় টা কি আন্দাজ করে ফেলেছে?

—-আপু ছোট ছোট প্রশ্ন করলেও এতো ভাবনা চিন্তার মধ্য পড়ে যাও জানি প্রশ্নের উওর খুঁজা তোমার কাছে বড়সড় কোনো সমস্যার মতো।

মুচকি হেসে বললাম
তুই এতো বড় কবে হইলি?

—কেনো আপু তোমার সামনে তে হলাম এর মানে তুমি আমারর দিকে খেয়াল করোনি?

—পাগলি তুই তো আমার জান।

–হুউ হয়েছে হয়েছে। আপু

— হুম বল?

—আমি কি তোমার পর হয়ে যাবো?

মিশুর মুখে এমন কথা শুনে বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমার সেই ছোট মিশু টা কবে এতো বড় হয়ে গেলো?এতো কঠিন কঠিন কথা আজ অনায়াসে বলে যাচ্ছে সে।
মিশুর দিকে তাকিয়ে বললাম

না তুই আমার পর হবি কেনো?? তুই কি আমার পর?

আমার কথায় মিশু তেমন কোনো উওর দিলো না কিন্তু অন্যন দিন সে প্রতিটি কথার উওর দিবেই না দিলে ওর চলবেই না। আমার দিকে না তাকিয়ে মিশু কি জানি নিয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে চলে গেলো। মিশুর অদ্ভুত ব্যবহার আমায় বড্ড ভাবাছে কি চলছে ওর মনে কিছুই জানি না আগে কত হাসিখুশি প্রানবতো থাকতো আর এখন দেখলে মনে হয় শুকিয়ে যাওয়া ফুল।

রোজকার মতো জানালার পাশে থাকা শুকিয়ে যাওয়া কাঁঠালে গাছটির ডালে ছোট পাখি গুলা এসে কিচিরমিচির শব্দ করে আমায় জানিয়ে দিচ্ছে সকাল হয়ে গেছে আর কতক্ষন অগুচ্ছালো হয়ে ঘুমিয়ে থাকবে? মানুষ তো তোমায় অলস ভাববে উঠো এখন।
!
!
!
৯ টা বেজে ১৫ মিনিট আমি সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসতেই মামু বলে উঠলো,

মেঘা মা এইদিকে একটু আসবি।

আমি গুটিসুটি পায়ে মামুর পাশে গিয়ে বসলাম। মামু আমার মাথায় হাত রেখে বলতে লাগলো,
মা তুই যতটা শান্ত নম্র ভদ্র মিশু টা ঠিক তার উল্টে হয়েছে ওর ব্যবহার দিন দিন নাকি খুব রুড হয়ে যাচ্ছে এই সেইদিনের কথা তোর মামিমা বললো তোর মামিমা নাকি মিশুকে লেট করে আসার জন্য একটু বকেছে তাতে নাকি মিশু তোর মামির সাথে অভদ্রতা করেছে, এটা কি ঠিক বল।

আমি মাথা নিচু করে বললাম,
না মামু ঠিক না আমি ওকে বুঝিয়ে বললো ও আর এমন কখনো করবে না।

মেঘা মা আমি ভাব ছিলাম তোমার বিয়ের পর মিশুকে বাহিরের সব থেকে ভালো হোস্টেলে রেখে আসবো বাহিরে থাকলে পড়াশুনো ভালো করে করতে পারবে।

মামুর কথায় আমার মনটা বিষাদে ভরে গেলো। মিশুকে ছাড়া আমি কখনো থাকিনি আর ও আমার সাথে থাকতে পারবে না। আমায় ছাড়া মিশু কেমনে থাকবে? হাজার প্রশ্ন আমার মাথায় আর এক দায়িত্ব এর বেড়াজালে বেধে যাচ্ছি কি আমি?
আমায় চুপ থাকতে দেখে মামু বললো

কি রে মা নাস্তা করেছিস??

আমি মাথা নেড়ে না সূচক জবাব দিলাম।

মামু হেসে বললো যা করে নে। আজ তো অনেক বড় একটা অনুষ্ঠান যাহ

ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে বসতেই আয়েশা খালা এসে হাজির হলেন। আয়শা খালা মামিমার একমাত্র বোন তিনি প্রায় সময় এই বাড়িতে থাকেন আমায় বড্ড ভালোবেসেন তিনি কিন্তু তার সব ভালো লাগলেও মিশুর প্রতি আচারন আমায় বড্ড ভাবায় আর এই বিষয়ে তাকে আমার বড্ড অপছন্দনীয়।
তিনি আমার দিকে এক গাল হাসি নিয়ে এগিয়ে এসে বললো,

ঘুম হয়েছে তোর মা।

জ্বী খালা।

তুই দেখ কত লক্ষী মেয়ের মতো নিচে নেমে এসে ব্রেকফাস্ট করছিস আর মিশু টাকে দেখ সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লো বই খাতা হাতে নিয়ে জানে আজ বাড়িতে কত বড় একটা অনুষ্ঠান কত কাজ হাতে হাতে একটু সাহয্য করবে তা না। কোনো ডিসিপ্লিন বলতে নেই। আমার বড্ড অপছন্দনীয় তার ব্যবহার গুলো। মেয়েটার ভদ্রতা বলতে নেই বড়দের মুখের উপর কথা ও বলে।

আমি একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বললাম
আমি কি কোনো কাজে হ্লেপ করবো খালা?

আরে তুই কেনো করবি আজ বাদে কাল তোর বিয়ে আর তুই কাজ করবি এটা কি হয় বল?
আসলে বিয়ের পর নিজের সংসার বুঝিয়ে নিস বাপু তখন কিছুই বলতে আসবো না।

খালা ভাঙ্গা রেডিওর মতো কথা বলে জানচ্ছেন তার কথা বলা এখন শেষ হবে। এ কথা থেকে এ কথা বলতে বলতে তিনি দুনিয়ার সব কথা বলবেন।
!
!
!
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলো মুহূর্ত শুনশান বাড়িটা আমেজ আন্দন পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো। সব যায়গা গিজগিজ করছে মানুষ হৈচৈ এর রোল পড়ে গেছে চারিদিকে। এতো শব্দ আমার ভালো লাগছে না।
আধা ঘন্টার উপর থেকে মিশুকে ফোনে ট্রাই করে যাচ্ছি কিন্তু কিছুইতে পাচ্ছি না। ওর হাব ভাব আমার মোটেও ভালো লাগছে না। আজকাল খুব রুড বিহেভিয়ারের মেয়ে হয়ে উঠেছে।

আজ আমার আর কবির ভাইয়ার এংগেজমেন্ট। নিয়মমাফিক পার্লারের লোক এসে আমায় সাজাতে বসে গেলো।

মেয়েদের নাকি সাজতে অনেক ভালো লাগে। সৌন্দর্য টাকে বারাতে নাকি সাজ টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পার্ট।
কিন্তু সব কিছুইর মাঝে আমার বিরক্ত লাগছে। দুইজন মহিলা এখন ১ ২ ঘন্টা ধরে আমায় সাজিয়ে চলেছেন। আর আমি হাতের পুতুল হয়ে বসে আছি।

আমাকে আয়নার সামনে দার করিয়ে তারা ভোজ করতে চলে গেছেন তাও ১৫ মিনিট আগে। আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখার ইচ্ছেটুকু জাগছে না আমার।

জাম রঙ এর একটা লেহেঙ্গা পড়িয়েছে তাড়া সাথে গলায় হাড় আর একটা সীতা হার ঝুলিয়ে দিয়েছেন হাত এন্টিকের মোটা মোটা বালা। আর খোঁপায় বেলি ফুলের মালা গুঁজে দিয়েছে।

আয়ান দিকে তাকাতে আমি ভয়ে কেঁপে উঠলাম। কাব্য ভাইয়া আমার পিছুনে দাঁড়িয়ে আছে তাকে দেখলে আমার পেলপিটিশোন শুরু হয়ে যায় আমার হাত পা কাঁপতে থাকে আমি ভয়ে কিছুই বলতে পারি না।

কাব্য ভাইয়া ঠিক আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আমি ভয়ে ভয়ে পিছুই ফিরতে তিনি বললেন

— I am sorry মেঘ আমার বড্ড ভুল হয়ে গেছে যাকে আমি এতো ভালোবাসি তাকে এত কষ্ট কিভাবে দিতে পারি বলো আসলে আমি মানুষ না অমানুষ একটা।

—ভাভাইয়া

—তুমি ভয় পেয়েও না মেঘ আমি তোমায় আর কিছুই করবো না মেঘ দেখো যে হাত দিয়ে আমি তোমায় কষ্ট দিয়েছিলাম সেই হাত কে আমি শাস্তি দিয়েছি মেঘ দেখো

কাব্য হাত বারিয়ে দিলো মেঘার দিকে
কাব্যর হাতে ব্যান্ডেজ। কি নিষ্ঠুর ভাবে নিজের হাত টাকে ক্ষত বিক্ষত করেছেন তিনি।

—আপনি এসব কেনো করছেন?

—তোমার জন্য মেঘ। জানো মেঘ ভালোবাসা যেকোনো ভাবে হতে পারে যখনতখন হতে পারে। ভালোবাসা কোনোসময় বলে আসে না। এক অবেলায় হুট করে তোমার মনের দরজায় এসে পড়বে।

—সামন্য একটা মেয়ের জন্য আপনি পাগলামো করবেন ভাইয়া??

—-হাহাহাহা, তুমি আমার কাছে সামান্য নয় মেঘ তুমি আমার ভালোবাসার নেশা যে নেশা আমার রক্ত শিরা উপ শিরায় মিশে গেছে।

আমি কাব্য ভাইয়ার কথা নিশ্চুপ কাল যে রাগী দৃষ্টি তার ছিলো সেই দৃষ্টি আজ শান্ত তাতে কোনো হিংস্রতা নেই।

কাব্য ভাইয়া আবার বলতে লাগলো

—আমি শুনেছিলাম ভালোবাসা আর যুদ্ধ নাকি সব কিছুই জায়েজ। তো আমি যা করেছি তা ভুল কেনো মেঘ? আমি তোমায় পাগলের মতো ভালোবাসি। যেদিন তুমি এই বাসায় এসেছিলি সেদিন থেকে তোমার প্রতি ভালো লাগা শুরু হয়ে গেছিলো। তুমি সামনে আসলে আমার অনুভূতি গুলোর শুধু তোমার দিকে আর্কষন বেরে চলতো আমার কথা গুলো অগুচ্ছালো হয়ে যেতে তুমি যদি আমার অনুভূতি গুলো হেলায় উড়িয়ে দেও সেই ভয়ে রাগ টা প্রকাশ করতাম তোমার প্রতি। আর রোজ শুধু তোমার ঘুমান্ত মুখ টা দেখবো বলে লুকিয়ে লুকিয়ে ওই পাইপ বেয়ে তোমার রুমে আসতাম তোমায় রাতের আধারে দেখে আমি আবার চলে যেতাম।

—- ভাইয়া প্লিজ আপনি সব ভুলে যান ভাইয়া প্লিজ আর কিছুই সম্ভব না ভাইয়া আমি কিছুই করতে পারবো না আমি মামুর উপর কিছুই বলতো পারবো না আমায় ক্ষমা করো তুমি।

—মেঘা আমি কিছুই বললে ভাইয়া আমার সাথে যদি কথা না বলে? আমার মুখো যদি না দেখতে চায় আমায় দূরে ঠেলে দিলে আমার কি হবে? আমি পাগল হয়ে গেছিলাম যাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি সেই আমার ভাবতে আমার মধ্য এক ঝড় বয়ে চলেছিলো আমি আমার রাগ আমার আবেগ ধরে রাখতে পারিনি তাই তোমায় আঘাত করেছি মেঘ।

কাব্যর চোখ দিয়ে পানি বয়ে পড়ছে কাব্য মাথা নিচু করে দারিয়ে মুখে হাত দিয়ে কথা গুলো বলছে।

মেঘা কিছুই বলতে পারছে না সে কি বা বলবে। কাব্যর এক সময়ের এক রূপ দেখে মেঘা বুঝার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে এখন যা হচ্ছে তা শুধু তার দেখার ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

কাব্য মেঘার দিকে একটা গোলাপ ফুল এগিয়ে দিলো।
আর বললো মেঘ আমি তোমার জীবন থেকে অনেক দূরে চলে যাবো মেঘ তুমি দেখো আমার জন্য তোমার কোনো ক্ষতি আমি হতে দিবো না মেঘ আমায় তুমি শুধু ক্ষমা করে দেও ।

মেঘা আর কথা না বাড়িয়ে ফুল টা নিয়ে নিলো।

কাব্য ফুল দিয়ে পিছুন ঘুরে চোখ মুঝতে লাগলে।
আর মুখে শয়তানী হাসি নিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলো
মেঘ তুমি কতো বোকা আমার কথার জালে জরিয়ে গেলে? জান তোমায় কাল অনেক কষ্ট দিয়েছি সারারাত আমি ঘুমাতে পারিনি। এখন তোমায় আমি কষ্ট দিবো না বলে কথা দিয়েছি
এখন দেখো তোমার সাথে কি হয়? এমনটা আমি একদম করতে চাইনি কিন্তু এটা ছাড়া এই বিয়ে টা আটকানোর উপায় তো নেই। সারপ্রাইজ বেবি।

চলবে______________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here