তারকারাজি- (২২)
লেখনীতে- অহনা নুযহাত চৌধুরী
গা দুলে উঠতেই ঘুমন্ত নীলাশা চমকে তাকাল। স্নায়ুতন্ত্র নিশ্চল। আকস্মিক বিক্ষুদ্ধে নিদ্রাভঙ্গ নীলাশার মস্তিষ্ক সহজেই ধরে উঠতে পারল না কারো কথার টাল। অতি বিলম্বে সোজা হয়ে বসতেই প্রথম যে কথাটা শুনতে পেল সে তা হলো,
“ নীলির বাচ্চা! তোরে কতবার বলছি যে, মরার মতো ঘুমাইবি নাহ্? ”
পিহু বলল না কথাটা? নীলাশার শ্রবণশক্তির অভিজ্ঞতা বলে দিল এই রিনিঝিনি কণ্ঠের রূঢ়ভাষী আসলে পিহু। সে হাই তুলে ভারপ্রাপ্ত মাথাটা জানালায় ঠেকিয়ে রাখল। তখন সানাম বলল,
“ বান্ধবী তুমি জাগছো? আমি তো ভাবলাম রাজপুত্র এসে কিছু-মিছু না দিলে তোমার ঘুম ভাঙবে না আর। একদম স্লিপিং বিউটি টাইপ! ”
সুষুপ্তা নীলাশা গাঢ় কণ্ঠে বলে উঠল এবার,
“ সানাম ডিয়ার, তোমার উচিত রোজ সকালে তোমার চিন্তা-ভাবনাকে হারপিক দিয়ে পরিষ্কার করা। বিকজ ইয়োর থট্স আর ভেরি ডার্টি। ইয়াক! ”
সানাম উত্তর দিতে নিলেও আর উত্তর দিল না। সাইফকে নীলাশার সাথে সহমত হতে শুনতেই সানামের মস্তিষ্কে ঝাঁকে-ঝাঁকে আক্রমণ করল যুবককে থামিয়ে দেওয়ার তীব্র তৃষ্ণা। নীলাশাকে ছেড়ে সাইফের সাথেই বাক-বিতণ্ডায় ব্যস্ত হতে দেখা গেল সানামকে। নীলাশা হাই তুলে আবারও চোখটা বন্ধ করল। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে তার। কিন্তু রেহাই মিললো না রিশানের রূঢ় কণ্ঠ হতে,
“ ওই চুচু ডায়াপার! আর মাত্র দশ মিনিট আছে ব্রেক টাইমের। উঠে খাবি না-কি খাবার কিনে আনা লাগবে তোর জন্যে? ”
নীলাশা চোখ ডলে তাকাল। আবারও একটা নতুন নাম শুনে ভ্রুতে বিরক্তির ডোরাকাটা চিত্র ফুটে উঠল। এদিকে রিশানের দেওয়া নাম শুনে পিহুর ডাকাতিয়া হাসিটা যেন জনশূন্য বাস কাঁপিয়ে তুলতে সক্ষম হবে! সে হাসতে-হাসতেই বলল,
“ কী বললি তুই? আমাদের নীল চুচু ডায়াপার? ”
রিশান হাসল, “ তা নাহলে কী? এই আলালের ঘরের দুলালির জন্য এই নাম-ই পারফেক্ট! ঘুম থেকে তুলে তাকে খেতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা লাগতাছে। তার মানে বুঝছোস ওই কী পরিমাণ নবাবজাদী? ”
নীলাশা শুনল না তাদের কথা। মুহূর্তেই রাজ্যের ঘুমটা সক্রিয় হয়ে বসল তার চোখে। মিশমিকে বলতে শোনা গেল,
“ ও তো আর আমাদের মতো করে বড় হয় নাই। ডেকে খাওয়ার কথা বলাটা কি স্বাভাবিক না? ওরে ঘুমাইতে দে তো তোরা। একবেলা না খেলে কেউ মরে না কিন্তু একবেলা না ঘুমালে মানুষের ব্রেনের সমস্যা হয়। ”
“ এই ঝাণ্ডুবাম, তোর এতো কেন জ্ঞান দেওয়া লাগবে বল তো? চুপ মেরে থাকতে পারিস না না-কি? তুই হাবাগোবা মাইয়া। যত কম কথা বলবি ততো মানুষ কম জানবে যে, তুই রূপে সুন্দরী আর বুদ্ধিতে অগাচণ্ডী। আর তুই কি-না মানুষরে জানিয়ে বেড়াইতে চাস যে, আমাদের সুন্দরী বান্ধবী আসলে একটা অগাচণ্ডী? তুই জানোস এটা আমাদের জন্য কত বড় অপমানের বিষয়? আমার তো বাসের তলে শুয়ে পড়তে মন চাচ্ছে তোর বুদ্ধির স্বল্পতা দেখে। ”
মিশমি নাক ফুলিয়ে তোলে, “ তো শুয়ে পড় না! আমি তোরে আটকাইছি? আমি বুঝতাছি না যে, আমি গাধার মতো কী বললাম? ”
পিহু ফিসফিসিয়ে উঠল,
“ আরেহ আবুইল্লা! আমাদের নীলি যা মরা ঘুম পাড়ে…! ওর এক ঘুমেই দেখবি কক্সবাজার চলে গেছি আমরা। ওই ঘুম পাড়লে আরাভ ভাইয়ের সাথে প্রেমটা হবে ক্যামনে? আর প্রেম না হইলে ওদের একসাথে বসাইলাম কীসের জন্যে? শোন, প্রেম করলে আমাদের নীলাশা এমনিই চাঙ্গা হয়ে যাবে। কিন্তু ঘুমাইলে সেই তো শাক-সবজিই থেকে যাবে ওদের মধ্যে, আমিষ হবে ক্যামনে? এখন বল তুই বুঝছিস যা বুঝাইলাম? ”
মিশমি বেশ ভাবুক স্বভাবে বলল,
“ কিন্তু দোস্ত, প্রেম তো কাল, পরশু, তরশু ইনফেক্ট ছয়টা দিন-ই করতে পারবে। না ঘুমাইলে যে ব্রেনের সমস্যা হবে সেইটা তো আর রিপেয়ার করা যাবে না। এতো বড় মেয়েরে কি আর ব্রেইন শার্প করার জন্য জুনিয়র হরলিক্স খাওয়ানো যাবে, বল? ”
মিশমির কথা শুনে পিহুরা সকলেই বিস্ময়াভিভূত হলো। এমনকি বাসে উপস্থিত সাইফ নিজেও তাজ্জব বনে গেছে। অতঃপর তারা আবারও অট্টহাসিতে বাস মাতিয়ে তুলতেই মিশমি ঠোঁট চেপে নিজের হাসিটা নিয়ন্ত্রণে আনল। বাস্তবিকপক্ষে মিশমির শেষোক্ত কথাগুলো ছিল অভিনয়। পিহু বলার পর বিষয়টা বুঝলেও এমন হাস্যরসিকতা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারল না মিশমি। তবে এটা ঠিক সে বিশ্বাস করে, যেই ভালোবাসা হবার তা এমনিতেই হবে। এতো আয়োজন করে আবার ভালোবাসা হয় না-কি? এই যে সে তিহামকে মনের কোণে জায়গা দিয়ে ফেলেছে… এটা কি কোনো আয়োজনের মাধ্যমে হয়েছে? না, বরং তিহামের লেখা সেই প্রথম সুশোভন বার্তাতেই আটকে পড়েছিল মিশমির মন। তবে যাইহোক, জীবনে প্রথমবারের মতো খানিকটা অভিনয় করে হলেও তো বন্ধুদের হাসাতে পেরেছে মিশমি? এতেই আনন্দ তার। হাসাহাসির তালেই উপস্থিত হতে থাকে বাসের যাত্রীরা। উপস্থিত হয় আরাভরা সককেই। আরাভ এসেই আগে নীলাশার দিকে উঁকি দিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“ উঠল না ও? ”
গাঢ় নিদ্রামগ্ন নীলাশা কি আর সেই খেয়াল রাখে যে, কেউ তার জন্য এতটা অবহিত? আরাভের প্রশ্নে লজ্জায় রক্তকমল রূপে দেখা গেল মিশমিকে। সে মাথা নত করে নিজ আসনে চলে যেতেই সাইফকে দাঁত কেলিয়ে বলতে শোনা গেল,
“ না রে ভাই। তোর ‘ও’ তো উঠল না। ”
সাইফের রসিকতাপূর্ণ কথায় সবাই হৈহৈ করে উঠল। আরাভ অপ্রস্তুত হলেও বুঝতে দিল না কাউকে। সে পাল্টা প্রশ্ন করল,
“ তোরা টম এণ্ড জেরি যে উঠলি না… পরে কি বাস তোদের খাওয়া-দাওয়ার জন্য ভিআইপি সার্ভিস দিবে? ”
নিশান বলল, “ এরা তো প্রতিজ্ঞা করে নিছে যে, আজকে পৃথিবী বীথিপৃ হয়ে গেলেও সীট থুয়ে উঠবে না। ”
উত্তরে আরাভ হেসে তাদের দুজনের দিকে দুটো খাবারের প্যাকেট ধরিয়ে দিল। তার নমস্য কাজে উপকৃত হলেও সানাম বেশ নাটকীয় স্বভাবে বলল,
“ বুঝলেন সাইফ ভাই, জলে-জঙ্গলে যেখানেই যাবেন বন্ধু আর বন্ধুর প্রিয়তমাকে নিয়ে যাবেন। এতে লাভ কী বলেন তো? এইযে ধরেন আমাদের নীলু খায় নাই দেখে আরাভ ভাই খাবার আনছে তার জন্য। আর নীলুর সাথে আমরাও না-খেয়ে আছি দেখে বিষয়টা খারাপ দেখায় না? তাই আমরাও না চাহিতে খাদ্য পেয়ে গেলাম। এর জন্যই কাছের মানুষের প্রেমিক-প্রেমিকাদের এতো ভালো লাগে। আহা্… সোনার ডিম পাড়া হাঁসের বাচ্চাগুলা আমার! ”
সানামের কথা ও বলার ভঙ্গিমা নিয়ে হাসাহাসি হলো ঠিকি তবে আরাভ হাসল না একটুও। সে ফোনে চোখ রেখে নিজেকে স্বাভাবিক প্রমাণ করতেই ব্যস্ত যেন কিছুই হয়নি! তবে সাইফ জবাব দিল,
“ বাহ্ সানাম! এখন দেখি তোমার মাথাটা ছেদ হয়ে ফুরফুর করে জ্ঞানগুল বেরিয়ে আসছে। ঘটনা কী বলো তো? ইদানীং ভালো মানের ঘাস খাচ্ছো না-কি? ”
সানাম নাক সিঁটকে বলল,
“ ধুর মিয়া! কেন যে এই আবাল কোথাকারের সাথে কথা বলতে গেছিলাম। ”
“ আমি তো ঢাকার। তুমি যেন কোথাকার? উমমম… হ্যাঁ, জাতীয় চিরিয়াখানার। তোমার মনে নাই সেখানে গিয়ে যে তোমাকে লতা-পাতা খাওয়ালাম আর তোমার সাথে সেলফি তুলে আসলাম? আমার কিন্তু হেব্বি মনে আছে! ”
সানাম বিরক্তিতে শ্রুতিকটু একটি শব্দ উচ্চারণ করতেই রিশান ধমকে উঠল তাকে,
“ ঠোঁটপালিশ! বাসের মধ্যে তোর সুন্দর ঠোঁট দুইটা না চালাইলে কি ভালো লাগতাছে না? মানুষরে জানাইতে চাস যে, তুই মূর্খ মানুষের মতো গালাইতে পারিস? ”
সানামও উল্টো ধমক দিল তাকে। অতঃপর তিক্ত গলায় সাইফকে বলল,
“ আমাকে আমার সীটটা দিয়ে দিলেই কিন্তু এতো ঝামেলা হয় না। আপদ একটা! আমার আর এক মুহূর্তও আপনাকে সহ্য করতে ইচ্ছা করতাছে না। ”
“ আর তোমারে যেন আমার চুম্মা দিতে ইচ্ছা করছে? যাও, ফুটো এখান থেকে। এই সীট তুমি একটুও পাবা না। ”
“ ছিঃ! আপনি তো দেখি মুখ দিয়েই ইভটিজিং শুরু করে দিছেন। ওই খচ্চর ব্যাটা, মানুষের কেলানি খাওয়াবো আপনারে? ”
সাইফ একবার চোখ পাকিয়ে তাকাল। অতঃপর কানে হ্যাডফোন লাগিয়ে বলল,
“ দেশে মশা-মাছি বেড়ে গেছে। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে সরকারের দৃষ্টিতে আনার জন্য তোমার নাম-ধাম দিয়ে একটা পোস্ট দেওয়া লাগবে। তাহলে তোমাকে খুঁজে পেতে সুবিধাই হবে সরকারের। ”
এই কথা শুনে সানাম আবারও কনুই দিয়ে আঘাত করল সাইফকে। ফিসফিসিয়ে করতে থাকা ঝগড়াটার মেয়াদ বোধহয় বৃদ্ধিই পাচ্ছে ক্রমশ! সেই সাথে বৃদ্ধি পেতে থাকল রাতের গভীরতাও। বাসের যাত্রীদের মাঝে বেশিরভাগ সদস্যই ঘুমন্ত। ঘুমন্ত মিশমি ও সায়ানও। মিশমি আর সায়ানের মাঝে দৈনন্দিন জীবনের নানান বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছিল অনেক। কিন্তু তিহামের ফোন আসার পর সায়ান খুব একটা কথা বলেনি মিশমির সাথে। এই নৈঃশব্দ্য বাসটিতে সায়ান স্পষ্ট শুনতে পেয়েছিল মিশমিকে বলা তিহামের কথাটা,
“ তোমরা চার-চারটা মেয়ে অথচ কেউই কারো সাথে বসো নাই? সায়ান ভাইয়ের সাথে বসার কী প্রয়োজন ছিল মিশমি? আমার এইসব একদম পছন্দ না। ”
মিশমি হয়তো তখন বুঝতে পারেনি যে, সায়ানের কর্ণকুহরে কথাটি পৌঁছেছে। মেয়েটা নানান ছলাকলা করে কথা ঘুরিয়ে নিলেও সায়ান মানতে পারেনি ব্যাপারটা। তবুও ঠাই বসে ছিল শুধু বন্ধুদের উপর ভরসা রেখে। কিন্তু বন্ধুরা কি আদৌ কোনো উপায় খুঁজেছে মিশমিকে মানিয়ে নেওয়ার? জানে না সায়ান। সে তার ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীরটা মিশিয়ে দিল আসনের সাথে। মিশমিকে পাওয়ার আগেই যে এভাবে হারিয়ে ফেলতে হবে তা মেনে নেওয়া খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে সায়ানের কাছে। অবশ্য নিজের জন্য একটা সান্ত্বনামূলক বাণীও খুঁজে নিয়েছে সে,
“ পেয়ে হারানোর কষ্টের থেকে না পাওয়ার কষ্ট হয় ভীষণ হালকা, নরম তুলতুলে। এই তুলতুলে কষ্টকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া একজন যুবকের কাছে কিছুই না। ”
বুক চিড়ে বেদনার ধূসর ধোঁয়া হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে আসে। সায়ান হাসল। মাথা ঘুরিয়ে পাশের ঘুমন্ত পরীটির দিকে তাকিয়েই সকল যন্ত্রণা ভুলে বসল নিমিষেই। মনের বিস্ময় উন্মুক্ত করল সে, এই সরল মেয়েটার পক্ষেই হয়তো তিহামের মতো একটা ছেলেকে পছন্দ করা স্বাভাবিক ছিল। হয়তো এই মায়াবীর মায়ায় জড়িয়ে তিহাম-ও নিজেকে শুধরে নিতে পারবে একদিন! কথাটা ভেবে সায়ান আবারও হাসল। অত্যন্ত নিভৃতে এই গহীন আঁধারেও ঘুমন্ত মিশমির একখানা ছবি তুলে রাখল মুঠোফোনের এক গোপন কোণে। কিন্তু ভাবেনি মায়াময় মুখশ্রীর জন্য ঠোঁটে থাকা হাসিটা পুনরায় মিলিয়ে যাবে। মিশমি যখন ঘুমের বশেই সায়ানের বা’কাঁধে মাথা রাখল তখন সায়ানের ব্যাখ্যাতীত অনুভূতিগুলো গাঢ় থেকেও প্রচণ্ড গাঢ়তর হতে লাগল। উথাল-পাতাল তরঙ্গ সৃষ্টি হলো তার বক্ষস্থলে। সেই মুহূর্তে সায়ানের মনে হলো সে শূন্যে ভাসছে, তার সুঠাম দেহখানা আত্মাশূন্য হয়ে পড়েছে। সেই সময় ঘুমন্ত মিশমিকে এলোমেলো বুলি আওড়াতে শোনা গেল,
“ আমি তোমাকে ভালোবাসি তিহাম। ”
এই কথা শোনা মাত্রই সায়ানের অনুভূতি অতরল হয়ে এলো। শূন্যে ভাসমান দেহখানা আবার যেন প্রাণ ফিরে পেল! বুঝতে পেল বাস্তবতা। তবে ভীষণ জেদে টগবগিয়ে ওঠা অভিমানী অনুভূতিগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে পারল না সে। বুকের তোলপাড় নিয়েই ঘুমন্ত মিশমির উদ্দেশ্যে অভিমান উন্মুক্ত করল সে,
“ আমার কাঁধে মাথা রেখে তুমি অন্য কাউকে চাইছো, মিশমি? ”
ঘুমন্ত মিশমি শোনে না সেই অভিমানের, সেই অভিযোগের হৃদয় শীতলকারক কথা। তবুও সায়ান বলেছে মিশমিকে। জাগ্রত মিশমিকে থোড়িই-না বলতে পারবে! সায়ান এখনো বিশ্বাস করে এই নরম কষ্টকে গিলে ফেলা তার কাছে কোনো ব্যাপার-ই না। তবুও যেন দু’চোখ জলে টলমল করে ওঠে। সহ্য হয় না আর! ছেলেরা আবার কাঁদে না-কি? সে মিশমির হেলানো মাথাটা আলতো হাতে সামলে নিয়ে পিছনের দিকে তাকায়। পিহু এখনো ফিসফিসিয়ে কথা বলে চলেছে আদ্রাফের সাথে। সে পিহুকে কাছে ডাকে। অতঃপর মিশমির মাথাটা পিহুর কাঁধে ছেড়েই সে চলে যায় পিহুর সীটে। বন্ধুরা যা ইচ্ছা তাই বলে সামাল দিক কিন্তু তার আর একটুকুও ধৈর্য্য নেই সেই ব্যথা সহ্য করার। সেই ব্যথা যে অত্যন্ত নিষ্ঠুর!
বাসের সহসা ব্রেক কসায় হুমড়ি খেয়ে জেগে উঠল নীলাশা। ক্ষীণ আলোয় পরিপূর্ণ বাসের সকলকেই ঘুমন্ত রূপে আবিষ্কার করল সে। সত্যিই কি সবাইকে? না, সে বিভিন্নভাবে আরাভকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নিল যে, সে ঘুমিয়ে আছে না-কি না। নীলাশার মনে হলো আরাভও গভীর নিদ্রায় মগ্ন। চুপিচুপি আরাভের কোল থেকে ব্যাকপ্যাকটা নিয়ে নিদ্রামগ্ন পুরুষটিকে আরেকটু আরামে নিদ্রা যাপন করার সুযোগ করে দিল সে। মসৃণ স্পর্শে আরাভের অমসৃণ ঝাঁকড়া চুলগুলোয় ছুঁয়ে দিল অকৃত্রিম আদর। চুপিসারে প্রশ্নও করল নীলাশা,
“ কবে ভালোবাসবেন আমায়? ”
আরাভের উত্তর আসলো না। তবুও আনমনে হেসে গেল নীলাশা। এই হাসিতে অনেক তৃষ্ণা, অনেক আকাঙ্ক্ষা ও আছে অনেক অপেক্ষা। কিন্তু আরাভ কি তা বোঝে? নীলাশারা মনে হয় না। ঘুমকাতুরে নীলাশা এপাশ-ওপাশ তাকাতে তাকাতেই ফের ঘুমিয়ে পড়ল আবার। কিন্তু সেই ঘুমন্ত নীলাশা কি বুঝতে পারল যে, এক জোড়া বিনিদ্র পুরুষালি হাত অভিমানিনীর কোল থেকে ব্যাগপত্রগুলো নিজের কাছে নিয়ে অভিমানিনীকে আরামে ঘুমোবার সুযোগ করে দিল?
#চলবে ইন শা আল্লাহ!