তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা ৯.

0
2182

#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
৯.
#WriterঃMousumi_Akter

একটা মানুষ মিনিটে মিনিটে এমন অদ্ভুত ভাবে বদলে যায় কিভাবে।রাগের সময় সম্পূর্ণ আলাদা একটা মানুষ। রাগ কমে গেলে সম্পূর্ণ আলাদা একটা মানুষ। কি সুন্দর যত্ন নিয়ে খাইয়ে দিলেন বিহান ভাই আমাকে।উনার ভাত মুখে তুলে দেওয়া টার মাঝে অদ্ভুত এক তৃপ্তি ছিলো।খাইয়ে দেওয়ার পরে বিহান ভাই ড্রয়ার থেকে একটা ট্রাউজার আর গেঞ্জি নিয়ে ওয়াশ রুমে প্রবেশ করেন। ওয়াশ রুমে প্রবেশ করে গোসল শেষ করে ট্রাউজার আর গেঞ্জি পরে বাইরে বেরিয়ে আসেন টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে।আমি হা করে তাকিয়ে আছি কি স্নিগ্ধ লাগছে উনাকে।

উনি আমার মাথায় একটা টোকা দিয়ে বলেন যা এবার সুয়ে পড়।আমার শীত শীত লাগছে ঘুমোবো।আমি বিহান ভাই এর হাত টা ধরে বললাম অনেক রক্ত বেরিয়েছে তাইনা।বিহান ভাই বলেন ইয়াং ছেলে আমি এতটুক রক্ত বেরোলে কিছুই হয়না।যা এবার সুয়ে পড়।

পরের দিন সকালে মামি আমাকে বলে দিয়া কাল রাতের সব ঘটনাই আমি জানি।আর আমি জানতাম তুই থাকলে বিহান ফিরে আসবেই।মামির কথায় মারাত্মক লজ্জা পেয়ে বাসায় চলে গেলাম।

ভ্যালেন্টাইন্স সপ্তাহ চলছে।চারদিকে মানুষ কিস ডে,হাগ ডে, টেডি ডে,কত কি পালন করছে।আর এই দিকে আমার কপাল দেখো।না অন্য কারো সাথে কথা বলতে দিবে।না নিজে কিছু বলবে।নিজে তো আনরোমান্টিক এর বস। বিহান ভাই এর মনে কি প্রেম বলে কিছুই নেই।কাল ভগালেন্টাইন্স ডে।আজ তো আমাকে বলতে পারে তোকে নিয়ে বিশেষ কিছু ভেবেছি।এইদিকে আমার মন মানছে না।রাত ১১.৫৯ এ ফোন দিলাম বিহান ভাই কে।

“খুব নরম সুরে ডাক দিলাম বিহান ভাই”

যত ই নরম সুরে ডাকিনা কেনো?উনার নাম তো বিহান।খারাপ ব্যাবহার তো করতেই হবে।আমি যে উনার হবু প্রেমিকা সেই আমার সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে সেটাও বুঝেন না উনি।

“এত রাতে কি আমার নাম ধরে ডাকার জন্য ফোন দিয়েছিস।”

“না বিহান ভাই”

“তাহলে।এই মাঝ রাতে কি রামায়ণ শুনাতে ফোন দিয়েছিস।”

“তাও না।”

“তাহলে সমস্যা কি তোর।”

“এখন কয়টা বাজে বিহান ভাই।”

“তোর ফোনে কি টাইম ওঠে না দিয়া খিটখিট কন্ঠে বললেন।”

“ওঠে তবুও আপনি বলেন।”

“১২.১ বাজে।”

“আজ কি বার তাহলে আর কত তারিখ বিহান ভাই”

“আজ আল্লাহর ঠিক করে দেওয়া দিন শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারী। এই শোন তুই কি আমাকে জ্যোতিষি পাইছিস।এখন কি তোর রাশি গনণা করতে বলবি।তোর যদি এত প্রয়োজন হয় আমি তোকে ভালো কোনো জ্যোতিস এর নাম্বার দিচ্ছি আমাকে ক্ষমা দে ভাই।”

“আমাকে ভাই ডাকছেন যে।”

“তুই ও তো আমাকে সারাদিন ভাই ভাই ডাকিস।”

“ভাই হন তাহলে কি আঙ্কেল ডাকবো বিহান ভাই”

“বারবার ভাই ডেকে আহত করার চেয়ে একবারে আঙ্কেল ডেকে নিহত করাই ভালো।এবার ফোন রাখবি নাকি এই মাঝ রাতে তোর বাসায় এসে থাপ্পড় মেরে তোর গেজ দাঁত যেটা আছে ওটা ফেলে দিবো।!”

“আমি বললাম দেখুন সব সময় এত মাইর দেওয়ার ভয় দিবেন না।আমি এখন আর আপনাকে ভয় পাই না।আপনি কথায় কথায় গায়ে হাত তোলার হুমকি দেন কেনো? আমার কিন্তু মারাত্মক প্রেজটিজ এ লাগে বিহান ভাই।”

“তোর মতো মেয়ের আবার প্রেজটিজ বলে কিছু আছে নাকি।”

“আমার মতো মেয়ের মানে কি বোঝাতে চাইছেন।”

“বুঝাতে চাইছি তুই কি এখনো মেয়ে হতে পেরেছিস নাকি। মেয়ে হলে ঠিক ই অনেক কিছু বুঝতি।”

“এইজন্য আপনাকে আমি ফোন দিতে চাই না।ফোন দিলেই শুধু খারাপ ব্যবহার করেন।”

“আমি এখন বই পড়ছি আর তুই এখন ফোন দিয়ে আজ কত তারিখ,কয়টা বাজে এসব মেন্টাল প্রশ্ন করছিস কেনো?”

“করছি কারণ ১৪ ফেব্রুয়ারী ভালবাসা দিবস।তাই!”

“তাতে আমার মতো সিঙ্গেল এর কি।আমি একটা সিঙ্গেল ছেলে।আমাকে এসব বলে খুঁচা দিস কেনো?কাল সারাদিন রুমে সুয়ে সুয়ে ঘুমোবো আর মানুষের প্রেম কাহিণী দেখবো।”

“ভালবাসা দিবস তাতেও কোনো পাত্তা নেই আপনার।”

“আমি পাত্তা দিয়ে করবো শুনি। আর তোর ও বা কি। ভালবাসা দিবসে দিয়ে তুই কি করবি ভালোই পেকেছিস।শোন দিয়া এসব আলথু ফালতু দিবস নিয়ে ভাবার মতো সময় আমার নেই।দুনিয়ার ফালতু দিবস বাবারে বাবা। সত্যি করে বল আলিপ আবার তোকে প্রপোজ করে নিতো।”

“আপনার মতো জঘণ্য হৃদয়হীন মানুষের সাথে আমার কোনো কথা নেই আর থাকতেও পারে না।আপনি আবার করবেন মানুষের হার্ট এর চিকিৎসা। যার নিজের ই হার্ট নেই।”

বিহান ভাই বলেন আচ্ছা ভালবাসার কি নির্দিষ্ট কোনো দিন তারিখ সময় আছে।ভালবাসার জন্য রাখা নির্দিষ্ট কোনো দিন থেকে থাকে তাহলে আমি কেনো কোনো তারিখ বলতে পারি না।কোন তারিখে কোন সময়ে তোমাকে ভালবেসেছি।কখন কোন মুহুর্তে আমার ম৷ হারিয়েছে।কখন সর্বনাশ করে আমার মন কে তোমার দিকে টেনে তালাবন্ধ করে দিয়েছো।ভালবাসা কি শুধুই একটি দিনের জন্য।যার জন্য এতটা মন খারাপ তোমার।আমার জন্য প্রতিটি সেকেন্ড ই ভ্যালেন্টাইন্স। তুমি আমার কাছে একটা দিনের জন্য মাত্র ইমপরর্টেন্ট নও।তোমাকে ভালবাসার জন্য আমার আলাদা কোনো দিনের প্রয়োজন নেই।মানুষের ফিক্সড করা দিনে তোমাকে মাতামাতি করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আমি পারবোনা ১৪ তারিখে তোমাকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে পিক তুলে ফেসবুকে পোষ্ট দিতে। তোমার পিক দেখে মানুষ বিভিন্ন কমেন্ট করবে সেটা আমার সহ্য হবে না।

শোন দিয়া আমার প্রেমিকা কে আমি রোজ এমন ই ভালবাসবো।ওসব ডে ফে পালন করতে পারবো না।”

আমি ফোনটা কেটে দিলাম।ভাবলাম এত সুন্দর কথা গুলো হয়তো আমাকেই বলছেন।কিন্তু না উনার প্রেমিকাকে উনি ওভাবেই ভালবাসবে বাসুক তাতে আমার কি।

পরের দিন রুশা আপু আমাকে বলছে,, দিয়া তোর হবু জিজু কে কি গিফট করবো একটু আইডিয়া দেনা।
আমি বললাম জিজুর পছন্দ এমন কিছু দাও আপু।রুশা আপু বলে,, আমি স্পেশাল কিছু দিতে চাই যেটা দেখে তোর জিজু মারাত্মক ভাবে সারপ্রাইজ হয়।
আমি বললাম কোথাও ঘুরতে যাচ্ছো রুশা আপু।হুম আজ লং ড্রাইভে যাচ্ছি।কিন্তু কি গিফট দিবো তাই ভাবছি।আমি আপুকে বললাম,আপু যে তোমাকে ভালবাসে তার কাছে তুমি ই বড় গিফট। তুমি একটা গোলাপ দিয়ে ভীষণ ভালবাসি রাজ বললেই দেখবা রাজ ভাইয়া ভীষণ খুশি হয়েছে।

এর ই মাঝেতোহা আপুর আগমণ ঘটলো,,

“দিয়া রুশা আপু কে তো আইডিয়া দিয়ে দিলি আমার বিহান কে কি দিবো বল না।প্লিজ বল না দিয়া।তোর আইডিয়া বেটার।”

“ঘোড়ার এক হালি ডিম দাও।তোমার বিহান ভাজি করে খাবে দুইটা আর দুইটা সিদ্ধ করে খাবে।”

“ফাইজলামি করিস না দিয়া।প্লিজ দিয়া আমি আজ বিহান কে প্রপোজ করতে চাই।”

“বিহান ভাই রাজি হবে তোহা আপু।”

“বিহান আমাকে ভালবাসে দিয়া আমার মন বলে।ও একটু মুডি তো ভালবাসার কথা কখনো প্রকাশ করবে না।জানিস দিয়া আমার মন বলে বিহান হয়তো মনে মনে চাইছে আমি ওকে প্রপোজ করি।”

“ভ্রু কুচকে তাকালাম তোহা আপুর দিকে।আপু সিরিয়াসলি তোমার তাই মনে হয়।বিহান ভাই এটাই চাই।”

“আরে হ্যাঁ আজ আবিদ দেখেছে বিহান লাল,কালো বিভিন্ন রোজের অর্ডার দিয়েছে।ভাবা যায় দিয়া বিহান এর মতো ছেলে কিনা রোজের অর্ডার দিয়েছে।দিয়া আমার যা এক্সসাইটেড লাগছে। দিয়া বিহান কে কি প্রচন্ড হট লাগে দেখেছিস।কি ফিগার বিহানের।”

কেনো জানিনা তোহা আপুর উপরে প্রচন্ড হিংসা লাগছে।রাগে শরীর রি রি করে জ্বলছে।অন্যদিকে মনের মাঝে জ্বলছে পুড়ছে। অনেক কষ্টে কাঁন্না টা আটকালাম।

তোহা আপু বলে দিয়া একটা কাজ করে দিবি।

কি কাজ।

আমার হয়ে বিহান ভাই কে প্রপোজ করে দিবি প্লিজ।

“ইম্পসিবল তোহা আপু”

“কেনো দিয়া?”

“আমাকে উনার হাতে মাইর খাওয়াতে চাও”

“দিয়া আমার ব্যাপারে বিহান কিছুই বলবে না।বিহান হয়তো এই একটা কাজের জন্য তোর উপর খুশি হবে।”

“এত কনফিডেন্স তোমার।”

“হুম অনেক”

“কনফিডেন্স ভালো বাট Over confidence sometimes kill us.”

রাগে শরীর জ্বলতেছে। বিহান ভাই এর কাল রাতের বাজে বিহ্যাভ এর জন্য। উনাকে কষ্ট যন্ত্রণা বোঝানো উচিত আমার।উনি আমাকে যা ইচ্ছা তাই করুক। উনাকে আজ তোহা আপুর হয়ে প্রপোজ করবোই।

এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর যে কপালে কি যে ছিলো কাল ই জানতে পারবেন।

চলবে,,

(আজকের পর্বের কোন অংশ টুকু ভাল লেগেছে জানাবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here