#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
৬..
#WriterঃMousumi_Akter
নিজের ভালবাসার মানুষের সাথে বিয়ে এর চেয়ে বড় আনন্দ বোধ হয় এ পৃথিবীতে আর কোনো কিছুতে নেই।রুশা আপুর বিয়ে।বাড়িতে আনন্দের উৎসব চলছে।মার্চ মাসেই বিয়ে রুশা আপুর।আপু সারাক্ষণ ফোনে বিজি থাকে দুলাভাই এর সাথে।সামনে ১৪ ফেব্রুয়ারী। তারা কোথায় ঘুরতে যাবে সেই প্লান ই চলতেছে।আহা ভালবাসা দেখতে কতই না ভাল লাগে।
এইদিকে আমার বুকের মাঝে প্রচন্ড ভেঙে চুরে যাচ্ছে।অদ্ভুত এক অস্হিরতা কাজ করছে। বিহান ভাই কে বড্ড দেখতে ইচ্ছা করছে।১৪ তারিখ কি বিহান ভাই আমাকে কিছু বলবে নাকি আমাকে আবার বুঝিয়ে দিবে তার আমার প্রতি কোনো ফিলিংস ই নেই।বিহান ভাই কি আমাকে ক্লিয়ার ভাবে কিছুই বলতে পারে না। বিহান ভাই এর দেওয়া খরগোশ টা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি জানালা ধরে।এমন সময় বিভোর ভাইয়া,রাফি ভাই,আর বিহান ভাই কে খবর দিয়ে নিয়ে আসলো তোহা আপু।বিহান ভাই কে দেখেই ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি আমার।মনে মনে তোহা আপুকে বিশাল বড় একটা থ্যাংক্স দিলাম।কিন্তু বুঝলাম না তারা সবাই কেনো হঠাত?তোহা আপু নাকি সারপ্রাইজ দিবে বলে তাদের ডেকে এনেছে।সব গুলা কাজিন আমার রুমে শুধু আমার ভাইয়া বাদে।রুমে লক করে দিলো তোহা আপু।।
সকলের সামনে চিঠি পড়ছে তোহা আপু,,
“আমার কাছে তুমি মানে রাতে ঘুম না হওয়ার এক বিশাল বড় কারণ।তোমাকে দেখার জন্য বিভিন্ন বাহানায় বারবার ছুটে যায় তোমার শহরে।তোমাকে আমি ভীষণ ভাবে ভালবেসে ফেলেছি।তোমার প্রতি আমার যে তীব্র ভালবাসা সেটা দিনে দিনে ভয়ংকর রুপ ধারণ করছে।তুমি যখন বাচ্চাদের মতো ছাদে দাঁড়িয়ে হাসো আমার মনে হয় প্রকৃতি মুগ্ধ হয়ে তোমার প্রেমে পড়ে যায়।সেই মুহুর্ত ভেবে আমার রাগ হয়।এত হাসির কি আছে।তোমার হাসি আমি দেখবো আর আমি মুগ্ধ হবো।তোমার নরম গালে সেদিন আলতো ভাবে ঠোঁট ছুইয়ে ছিলাম। আমার যে কি ভয়ানক সর্বনাশ হয়েছিলো সেদিন।সেই সর্বনাশ আমার বেড়েই চলেছে।আমি ভীষণ যন্ত্রনায় ভুগছি। প্রেমে পড়ার মাঝে এত যন্ত্রণা আগে জানতাম না।আমি কবে তোমার প্রেমে পড়েছি জানিনা।এটা কি প্রেমে পড়া বলে সেটাই বুঝতাম না।তোমাকে কারো পাশে দেখলে রাগে তাকে খুন করতে ইচ্ছা করে।এমন টা হতে হতে কবে আমাকে তোমার মায়ায় আবদ্ধ করে ফেললে তুমি।ব্লু জিন্স আর কালো টপস পরে আমার বাইকে পেছনে আমাকে জড়িয়ে ধরে বসেছিলে আমি একবার পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখেছিলাম বাতাসে কি সুন্দর চুল গুলা উড়ছিলো তোমার।দেখেছো কত হাবিজাবি চিন্তা আমার মাথায় ঢুকেছে। আমাকে কিভাবে নষ্ট করে চলেছো।একদিন তোমাকে নিয়ে এই পুরা পৃথিবী জুড়ে ভালবাসার কার্ফু জারি করবো।”
সবাই সন্দিহান দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে এটা কার চিঠি পড়ছে তোহা।আবিদ ভাইয়া বলে কিরে তোহা আপু তোকে কে চিঠি দিলো।এতদিন তো বিহান ভাই বিহান ভাই চিল্লাইতিস। এখন এই প্রেমিক কইত্তে আসলো।রিয়া বলে আমাদের বিহান ভাই কি তাহলে মারাত্মক আকারে একটা স্যাকা খেয়ে গেলো।বিভোর ভাই বলে কি তোহা ব্যাপার কি?মামাতো ভাই দের দিকেও দেখো একটু।রাফি বলে তোহা আপু আমাদের বিহান ভাই কে এত্ত বড় স্যাকা টা না দিলেও পারতে।বিভোর ভাই বলে কিরে ভাই ফিলিংস টা কি এখন।থাক কাঁদিস না মেয়ে মানুষ এমন ই।
বিহান ভাই চরম বিরক্তি নিয়ে বলেন ডিজগাস্টিং। বিহান ভাই এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন উনার কপালে কয়েক টা ভাজ পড়ে গিয়েছে।
তোহা আপু বেডের উপোর দাঁড়িয়ে চিৎকার দিয়ে বলে এই চিঠি আমার না।এই চিঠি আমাদের পুচকির।যে কিনা লুকিয়ে লুকিয়ে এভাবে প্রেম করছে।
সবাই সন্দিহান ভাবে জানতে চাই কার ই চিঠি।আমি খেয়াল করে দেখলাম শুধু বিহান ভাই এর কোনো আগ্রহ নেই কার চিঠি কাকে দিয়েছে সে ব্যাপারে।বিহান ভাই এর চোখে মুখে এমন জঘন্য বিরক্তি সেটা বলে বোঝানো যাবে না।উনি সোফায় বসে ফোন স্ক্রল করছেন।আর দু এক বার হালকা কেশে নিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছেন।ঘামের ফোঁটা নাকের উপোর পড়েছে।এ্যাশ কালারের গেঞ্জি ব্লাক জিন্স পরা ইস কি মারাত্মক সুন্দর টাই না লাগছে উনাকে।
তোহা আপু বলে বিহান তোমার কাছে নালিশ দিলাম আমাদের দিয়া এভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে রিলেশন করছে।এই চিঠি আমাদের দিয়ার।দিয়ার বালিশের নিচে আমি পেয়েছি।আমি নিজেই অবাক।এ চিঠি আমার কই আমি তো জানিনা।আমি দুঃখি দুঃখি মন নিয়ে বিহান ভাই এর দিকে তাকালাম।
বিভোর ভাই আর রাফি ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলে বোন দুলাভাই এর ছবি দেখা।আবিদ ভাই আর রিয়া বলে তলে তলে এই কাহিনী।রুশা আপু বলে তোহা বিহান এর সামনে দিয়া কে এভাবে হেনস্হা না করলেও পারতি।বিহান তো এক্ষুণি দিয়ার গায়ে হাত তুলবে।
আমি বললাম বিলিভ মি কে রাখছে আমি জানিনা।আমি শুধু বিহান ভাই এর বিরক্তি দেখছি।উনার চোখ মুখ এটাই বুঝাচ্ছে আমি মারাত্মক বিরক্তি বোধ করছি রাগে আমার দিয়া কে মেরে ফেলতে ইচ্ছা হচ্ছে।
বিহান ভাই দুই পকেটে হাত গুজে ঠাঁই দাঁড়িয়ে পড়লেন।আমি ভয়ে ভয়ে বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে খুব জোরে কেঁদে দিলাম বিহান ভাই প্লিজ আমায় মাফ করে দিন।আমি কিচ্ছু করিনি।কার চিঠি তাও জানিনা।আমি জানি বিহান ভাই আমাকে আজ মেরেই ফেলবে।এই চুমু দেওয়ার ব্যাপারে উনি কি কি বলবেন তার ঠিক নেই।বিহান ভাই হালকা কেশে আমাকে বলে কাঁদছিস কেনো?বয়স হয়েছে প্রেম করার প্রেম করেছিস।সবাইকে বল বেশ করেছি প্রেম করেছি।রিয়া বলে বিহান ভাই আপনি এ কথা বলছেন।রুশা আপু বলে প্লিজ বিহান দিয়া কে কিছুই বলো না।কে না কে চিঠি দিয়েছে।আবিদ ভাই, বিভোর ভাই আর রাফি তো গালি গালাজ করেই যাচ্ছে এতে আমার বোনের কোনো দোষ নেই।কে না কে ছেলে খুজে ঠ্যাং ভেঙে দিবো।
আমি জানি বিহান ভাই এই মুহুর্তে কিছু বললেন না।কিন্তু আমাকে উনি মেরেই ফেলবেন।
তোহা আপু বলে বিহান তুমি আজ কিছুই বললে না যে।দিয়া কে কোনো শাষন করলে না।দিয়া কে চুমু ও দিয়েছে।বিহান ভাই বলে,,দিয়া কে কি আর শাষন করবো।চিঠিটা যে দিয়েছে তাকে গালি গালাজ করে তার গুষ্টি উদ্ধার করে দিলে ভাই বোন মিলে।তাছাড়া তোমরা সবাই ই এখন প্রেম করো।সেখানে দিয়াকে কি বলবো।শাষন করলে আগে বড় গুলা থেকে শুরু করতে হয়।আর চুমু দিলে দিয়ার প্রেমিক ই দিয়েছে তাইনা দিয়া।আমার হৃদপিন্ড থরথর করে কাঁপছে। এই শান্ত আচরণ ঝড় আসার আগের মুহুর্ত আমি নিশ্চিত।
বিভোর ভাই বলে বিহান আমি কিন্তু এ বাড়িতেই শ্বশুর বাড়ি বানাবো।হয় তোহা নইলে রিয়া।শোনো তোহা আর রিয়া যে আমার গলায় আগে মালা পরাবে সে পরাও।মোটামুটি বউ একটা হলেই হচ্ছে।রিয়া বলে বাহ বিভোর ভাই বাহ আমাকে রাস্তায় পেয়ে পটাচ্ছেন ঘরে আমার বোন কে।বিভোর বলে বউ দুইটা হলে আমার কদর বাড়বে।ওরা সবাই হাসিতে মাতোয়ারা।কিন্তু আমার মনে কোনো হাসি নেই।
রিয়া বলে বিভোর ভাই চলুন আমাদের ফুচকা খাওয়াতে হবে।বিভোর ভাইয়ের সাথে সবাই বেরিয়ে পড়লাম।ফুচকার দোকান টা মামাদের বাড়ির সাইডেই।জানিনা কপালে আজ কি আছে। সবাই ফুচকা খাচ্ছে তো খেয়েই যাচ্ছে বিভোর ভাইয়ের এক হাজার টাকার বাঁশ দিয়ে দিলো সবাই।আমি মাত্র একটা ফুচকা খেলাম আর প্লেট ধরে রিয়া কে দিয়ে দিলাম। বিহান ভাই সাইডে দাঁড়িয়ে আছে উনার এসব খাওয়ার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই।
এমন সময় আলিপ ভাই আমার মুখে একটা ফুচকা পুরে দিলো।রাফি বলে আলিপ ভাই শুধু আমার বোন কে খাওয়ালেই হবে আমাদের ও খাইয়ে দিন।বিহান ভাই একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার ফোনের স্ক্রিনে চোখ বুলালেন।আজ বার বার বিহান ভাইয়ের সামনে ধরা খাচ্ছি।না জানি কত শত শাস্তি অপেক্ষা করছে আমার জন্য।ফুচকা টা খেলাম ঠিক ই কিন্তু হজম হলো না।
বিভোর ভাই বলে আলিপ ভাই তুমি যে আমাদের একটা মাত্র বোনের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকো তার কি কোনো ট্যাক্স আমরা পাই না।রিয়া বলে আজ থেকে আলিপ আমাদের দুলাভাই।
বিহান ভাই কোনো কথা না বলে বাসার দিকে রওনা দিলেন।উনার মুড ই অন্যরকম দেখাচ্ছে।শুধু অন্য রকম না।এক ভয়ানক রুপ দেখা যাচ্ছে।বিহান ভাই এর রাগের তীব্র মাত্রা কে বড় ছোট সবাই ভয় পান।রুশা আপু তোহা আপু সবাই বললো চলো বিহানের বাসায়।বিহান এর কি নিয়ে রাগ হলো শুনে দেখি।এখানে তো রাগের কিছুই দেখলাম না।আমি তো কিছুতেই যাবো না।যার সাথেই রাগ হোক উনি ভয়ানক কিছু করে ফেলবেন।রাফি বললো দিয়া গেলে বলতে পারে একমাত্র।সবাই টেনে হিচড়ে আমাকে আজ বিহানের হাতে জবাই দিতে নিয়ে গেলো।বিহান ভাই এর পেছনে পেছনে আমরা এলাম।উনি রুমের দরজা খুব জোরে ধাক্কা দিয়ে লাগিয়ে দিলেন।তোহা আপু,রুশা আপু সবাই ডাকাডাকি করলো বিহান ভাই কিছুতেই দরজা খুললেন না।
এতক্ষণে ও বুঝে উঠতে পারি নি কি আছে কপালে।
চলবে,,,
(বিহানের রাগের কারণ কি গাইস।দুইটা কারণ হতে পারে।সবাই স্টোরি পড়ে পেজ এ কমেন্ট করবা।আর গ্রুপে একটা করে পোস্ট দিবা।যার যার টা সঠিক হবে আমি তাদের নিয়ে একটা পোস্ট দিবো)