টুয়েন্টি মিনিটস (চ্যাপ্টার-০১) পর্ব ১২

0
230

#টুয়েন্টি_মিনিটস (চ্যাপ্টার-০১)
পর্ব-১২
লেখা: ShoheL Rana শামী

মসজিদ থেকে আসরের নামাজ পড়ে বের হলেন জাফর মাস্টার। কয়েকজন বৃদ্ধ লোক এলেন তাঁর সাথে কথা বলতে। ওঁদের সাথে মসজিদের ইমামও ছিলেন। তিনি জাফর মাস্টারের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘মাস্টার সাহেব, আপনার সাথে কিছু কথা আছে।’

‘কী বিষয়ে হুজুর? বলুন?’

‘চলুন, যেতে যেতে কথা বলি।’

একসাথে হাঁটতে লাগলো ওঁরা। ইমাম সাহেব শুরু করলেন, ‘দেখুন মাস্টার সাহেব, আপনি এলাকার শিক্ষিত একজন ব্যক্তি। নিয়মিত নামাজও পড়েন। কিন্তু, আপনি যে কাজটা করছেন, তা তো আমাদের শরীয়ত বিরোধী।’

‘কী করলাম আমি?’ অবাক হলেন জাফর মাস্টার।

‘আপনার তো বিয়ের উপযুক্ত একটা মেয়ে আছে। আপনি কী করে একটা বেগানা পুরুষকে দিনের পর দিন আপনার বাড়িতে ঠাঁই দিচ্ছেন?’

হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নে জাফর মাস্টার একটু বিভ্রান্ত হলেন। বললেন, ‘ছেলেটা একদম একা। ওর বাড়িঘর নেই। আর ছেলেটা মানসিক বিকারগ্রস্ত। তাকে কি সাহায্যটুকু করে আমি ভুল করেছি?’

‘কিন্তু আমাদের শরীয়তটুকুও তো মানতে হবে, তাই না?’

‘আমার মেয়ের কয়েকদিন পর বিয়ে হয়ে যাবে। তারপর তো কোনো সমস্যা থাকবে না…’

তখন একজন বৃদ্ধ লোক বলে উঠলেন, ‘জাফর, শুনেছি ওরা তোমার মেয়েকে বউ হিসেবে নেবে না।’

‘মানে? কী বলছেন শমসের চাচা? আমার মেয়েকে বউ হিসেবে নেবে না, কেমনে জানলেন আপনি?’

‘মোড়ল পাড়ার শুক্কুরের ছেলের জন্য তোমার মেয়েকে দেখতে এসেছিল না?’

‘হ্যাঁ।’

‘পাত্রী তো দেখে গেছে অনেকদিন হলো। এখনও তাদের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাইছো?’

‘না।’ অস্ফুটে শব্দ করলেন জাফর মাস্টার। আসলেই শুক্কুরের বাড়ি থেকে বিয়ের কাজটা আগানোর মতো কোনো ইঙ্গিত এখনও পাওয়া যায়নি। অথচ ওরা পাত্রী দেখে গেছে বেশ কয়দিন হয়ে গেছে।

‘তোমার বাসায় ঐ ছেলেটা থাকে। তোমার মেয়ে ছেলেটার সাথে কথা বলে, সময় কাটায়, এইজন্যই বিয়েতে ওদের মত পালটে যায়।’ বৃদ্ধটা জানালেন।

আরেক বৃদ্ধ তখন বললেন, ‘এখন আর মনে হয় না, তোমার মেয়েকে কেউ বউ করবে। এক কাজ করো জাফর, তুমি ছেলেটার সাথেই তোমার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দাও।’

জাফর মাস্টার কোনো জবাব না দিয়ে নিজ পথে চলে এলেন। পরবর্তীতে বিষয়টা নিয়ে শুক্কুরের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হলো, ওরা আসলেই তাঁর মেয়েকে বউ করবে না। জাফর মাস্টারও আর কথা বাড়ালেন না। তবে মেয়ের বিয়ে নিয়ে তিনি খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। নিজেই অনেক জায়গায় সম্বন্ধ ঠিক করতে চেয়েছিলেন, সবাই একই কারণে ফিরিয়ে দেয়। এভাবে চিন্তা করতে করতে একদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তবুও ছাড় পেলেন না গ্রামবাসীর কাছে। একদিন মসজিদের ইমাম তাঁকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যান। তারপর সরাসরি বলে দেন, হয় ছেলেটাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে, আর নয়তো ওদের দুজনকে বিয়ে দিতে হবে। সেদিন জাফর মাস্টার সবাইকে যেকোনো একটা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশ্বস্ত করলেও আরও কিছুদিন কেটে যায় এভাবে।

গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে। সেদিকে খেয়াল নেই সুফিয়ার। মন খারাপ করে পুকুর-ঘাটে বসে আছে সে। বাবার কথা ভাবছে। বাবা দিনদিন শয্যাশায়ী হয়ে পড়ছে। ছোটোকাল থেকেই দেখেছে সে, অনেক কষ্টে বাবা তাকে বড়ো করেছে। মায়ের অভাব কখনও বুঝতে দেয়নি। সেই বাবা আজ তার-ই বিয়ের কথা চিন্তা করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সকালে একবার ডাক্তার এসে দেখে গেছেন বাবাকে। কিছু ওষুধ দিয়ে টেনশন করতে নিষেধ করে গেছেন ডাক্তার। কিন্তু, টেনশন কি আর কমে? মেয়ের একটা গতি করে তিনি একটু শান্তিতে মরতে চান। ওদিকে রিহানকেও বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য বলতে পারছেন না। কোন মুখে বলবেন তিনি, ‘রিহান তুমি চলে যাও।’

আকাশে দুটো যুদ্ধ-বিমান আজকেও তাড়া করছে একটা অন্যটাকে। পেছনের বিমান থেকে গোলা ছোড়া হচ্ছে, সামনের বিমান থেকেও সমানে আক্রমণ চলছে। সেই গর্জনে যখন গ্রামবাসীও চিৎকার করতে করতে যার-যার মতো নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছিল, সুফিয়া তখনও বসেছিল পুকুর-ঘাটে। রিহান এসে ডাকলো তাকে, ‘সুফিয়া…’

‘হুমম… কিছু বলবেন?’ মাথা তুলে তাকালো সুফিয়া রিহানের দিকে।

‘সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছে, আপনি এখনও এখানে বসে আছেন যে? মন খারাপ?

‘না। একটু খারাপ লাগছে বাবার জন্য।’

‘আংকেল সুস্থ হয়ে উঠবেন। আপনি চিন্তা করবেন না। চিন্তা করতে করতে আপনিও অসুস্থ হয়ে পড়বেন। আমি ঠিক করছি, চলে যাবো এখান থেকে। আমার কারণেই এতকিছু হয়ছে।’

‘কোথায় যাবেন আপনি? আপনাকে কোথাও যেতে বলেছি? নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেন কেন?’ ধমক দিলো সুফিয়া। রিহান চুপ হয়ে গেল। খানিক পর সুফিয়া নরম কণ্ঠে বললো, ‘মেয়েদের গায়ে যে কলংক একবার লাগে, তা কি কখনও মুছে?’

হঠাৎ বিকট শব্দ হলো আকাশে। সামনের বিমানটাতে আগুন লেগে গেছে। বিমানটা আগুনে দাউদাউ করে জ্বলতে জ্বলতে নিচে পড়তে লাগলো। অন্য বিমানটা শত্রুর শেষ দেখে চলে গেল নিজ পথে। বিকট শব্দ শুনেই রিহান আর সুফিয়ার দৃষ্টি যায় ওদিকে। তারপর উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করলো সুফিয়া, ‘আহহ, আগুন ধরে গেল বিমানে। ও আল্লাহ। কী হলো এটা?’

পাশের একটা গ্রামে পড়েছে বিমানটা। নিধিয়ার চরে। আবারও বিকট একটা শব্দ হলো। সুফিয়া উঠে দাঁড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে বললো, ‘চলুন চলুন, দেখে আসি। আল্লাহ জানেন, ভেতরে কতজন লোক ছিল।’

রিহানকে সাথে নিয়ে দৌড় দিলো সুফিয়া। গ্রামবাসীও যারা নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়েছিল সবাই বের হয়ে ছুটতে লাগলো বিমানটা দেখতে৷ পুরো গ্রামে একটা রব পড়ে গেছে ইতোমধ্যে। বৃষ্টিও বেড়ে গেল খানিকটা। সেদিকে নজর নেই কারও। সবাই ভিজতে ভিজতেই ছুটছে। যাদের তাড়া একটু কম তারা ছাতা নিয়েই যাচ্ছে। রিহান আর সুফিয়া যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছলো, তখন আশেপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ যেন এসে পড়েছে ওখানে। বিমানটা তখনও জ্বলে যাচ্ছে। ভেতরে বোমা-বারুদ থাকতে পারে এই ভয়ে কেউ ওটার কাছাকাছি যাচ্ছে না। অনেকক্ষণ পর এলো প্রশাসনের লোক। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এলেন। তিনি পুলিশ দিয়ে ঘিরে ফেললেন ঘটনাস্থল। তারপর আগুন নেভাতে চেষ্টা করেও তিন ঘন্টা লেগে গেল সফল হতে। এরইমধ্যে সব যেন পুড়ে ভস্ম হয়ে গেল। ধাতব কিছু জিনিস উদ্ধার করতে পারলেও, লাশগুলো যেন আর লাশ নেই। ছাই হয়ে গেছে, চেনার উপায় নেই একটা লাশও। ঘটনাটা কেমন যেন পরিচিত মনে হলো রিহানের। কোথায় যেন সে একবার এরকম একটা ঘটনা পড়েছে। তবে মনে করতে পারছে না। পাশে সুফিয়া ছিল। বৃষ্টিতে ভিজে কেঁপে কেঁপে ওঠছে সে। তাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘সুফিয়া, এই এলাকাটার নাম কী?’

‘নিধিয়ার চর।’ জবাব দিলো সুফিয়া।

‘নিধিয়ার চর।’ বিড়বিড় করলো রিহান। নামটা আগেও শুনেছে সে। হ্যাঁ, এই জায়গায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একটা যুদ্ধরত বিমান পড়ে, এরকম একটা আর্টিকেল সে পড়েছিল একবার। আর ঐ বিমানে যিনি পাইলট ছিলেন, তিনি ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান এক ক্রিকেটার। নামটা মনে পড়তেই চমকে উঠে সুফিয়ার দিকে তাকালো রিহান। সুফিয়ার একটা হাত ধরে ডাকলো সে, ‘সুফিয়া…’

‘সুফিয়া মাথা নেড়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কী?’

রিহান ভাবলো কথাটা সুফিয়াকে বলবে কি-না। তারপর জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনি কি জানেন ঐ লাশগুলোর মধ্যে কার লাশ আছে?’

‘আমি কী করে জানবো?’

‘আমি জানি।’

‘কার লাশ?’

‘রস গ্রেগরি। আপনার পছন্দের ক্রিকেটার। উনিই ছিলেন এই বিমানের পাইলট।’

‘হোয়াট?’ রেগে গেল সুফিয়া। তারপর রিহানের হাতটা ঝাড়া দিয়ে দ্রুতপায়ে হাঁটতে লাগলো বাড়ির দিকে। বৃষ্টি থেমে গেছে ততক্ষণে।

জাফর মাস্টার ঘরেই ছিলেন। বাইরের বিকট শব্দ, গ্রামবাসীদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে তিনি আন্দাজ করেছেন অদূরে কোথাও বিমান পড়েছে। মেয়েকে ঘরে ঢুকতে দেখে তিনি এই ব্যাপারে জানতে চাইলে, সুফিয়া ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো, ‘আমাকে কেন জিঞ্জেস করছো? বাসায় একটা ভবিষ্যতের লোক রেখেছো, তাকেই জিজ্ঞেস করো। সে তোমাকে কী হয়েছে বলার পর ভবিষ্যতের কথাও বলে দেবে।’ হন-হন করে ভেতরের কক্ষে চলে গেল সুফিয়া। রিহান এলো কয়েক মুহূর্ত পর। মাস্টার সাহেব এবার তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হলো রে রিহান? সুফিয়া এভাবে রেগে গেল কেন?’

‘আংকেল, যুদ্ধ-রত দুটো বিমান থেকে একটা বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। আগুনে পুড়ে লাশগুলো চেনার উপায় না থাকলেও আমি জানি ওখানে একটা লাশ রস গ্রেগরির। বিমানটার পাইলট তিনি। এই কথা সুফিয়াকে বলায় সে রেগে গেছে।’

‘তুমি কী করে জানো ওখানে রস গ্রেগরির লাশ আছে?’

‘আংকেল, আপনি তো জানেন আমি ভবি…’

কথাটা শেষ করতে না দিয়ে জাফর মাস্টার বললেন, ‘আমাদের আজকের এই পরিণতি তোমার জন্য। তুমি না থাকলে এতদিনে আমার মেয়েটার বিয়ে হয়ে যেতো। আমারও আজ এভাবে বিছানায় পড়ে থাকতে হতো না। আর কত কষ্ট দেবে আমার মেয়েটাকে?’

‘দুঃখিত আংকেল।’ মাথা নিচু করে ফেললো রিহান।

‘তোমাকে একটা কথা বলবো, সিরিয়াসলি নেবে।’ জাফর মাস্টার প্রসঙ্গ পালটালেন।

‘কী কথা আংকেল?’ আগ্রহ দেখালো রিহান।

‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সুফিয়াকে তোমার সাথেই বিয়ে দেবো।’

চমকে ওঠলো রিহান। না, না, এ সম্ভব নয়। বিয়ের পর যদি কখনও রিহান তার সময়ে ফিরে যায়, তবে খুব কষ্ট পাবে সুফিয়া। সুফিয়াকে সে আসলেই ভালোবাসে। কিন্তু, সুফিয়ার কষ্ট সে দেখতে পারবে না। তাই জাফর মাস্টারের সিদ্ধান্তে অমত জানালো সে, ‘দুঃখিত আংকেল, আমি বিয়ে করতে পারবো না সুফিয়াকে।’

ভেতর থেকে সুফিয়া অগ্নিমূর্তি হয়ে এসে বললো, ‘বাবা, আমাকে উনার বিয়ে করতে হবে না। আমাকে নিয়ে কারও চিন্তা করতে হবে না। তুমি সুস্থ হয়ে যাও বাবা। যতদিন তুমি আছো, ততদিন আমার পাশে কাউকে লাগবে না। এরপর না হয় একা বাঁচতে শিখবো।’ শেষের কথাগুলো বলতে গিয়ে কণ্ঠটা নরম হয়ে এলো তার।

পরস্পরের দিকে তাকালো রিহান আর সুফিয়া। তারপর পুনরায় ভেতরে চলে গেল সুফিয়া।

রাতে নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিলো রিহান। এ বাড়িতে থেকে সে একটা সুখি পরিবারকে শেষ করে দিয়েছে। আর না। অনেক হয়েছে। এবার অন্তত একটু সুখে থাকুক ওরা। চলে যাওয়ার আগে রিহান বিদায় নিতে এলো জাফর মাস্টারের কাছে। মাস্টার সাহেবের বিছানার পাশে এসে শান্ত কণ্ঠে বললো, ‘আংকেল, আমি চলে যাচ্ছি।’

জাফর মাস্টার রিহানের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলেন। কিছুই বললেন না। রিহান পাশে বসে উনার হাত ধরে বসে থাকলো কিছুক্ষণ। তারপর বললো, ‘আমার মন-হৃদয় সবকিছু সুফিয়াকে নিজের করে পেতে চায়, কিন্তু মন যা চায় সবসময় তা পেতে নেই আংকেল। কিছু কিছু সময় মনের বিপরীতে চলতে হয় ভালো কিছু ঘটার জন্য। আপনারা কেউ তো আমায় বিশ্বাস করেন না। তবে এটাই সত্যি যে, আমি ভবিষ্যত থেকে এসেছি। আমি যে ভবিষ্যত থেকে এসেছি এটার প্রমাণ খুব শীঘ্রি পাবেন। আর একমাস পর একটা ঘটনা ঘটবে। সেটা আমি আপনাকেই বলছি শুধু, সুফিয়ার কষ্ট বেড়ে যাবে, তাই ওকে কখনও বলিনি।’ জাফর মাস্টারের হাত আরেকটু শক্ত করে ধরলো রিহান। মাস্টার সাহেব তার দিকে দৃষ্টি ফেরালেন। রিহানের বাকি কথাটা শোনার জন্য আগ্রহ দেখালেন।

রিহান কিছুটা দম নিয়ে বললো, ‘আজ থেকে একমাস পর কাজি নজরুল ইসলাম দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হবেন, বাকশক্তি হারিয়ে ফেলবেন তিনি। লেখালিখি থেমে যাবে তাঁর চিরতরে।’

জাফর মাস্টার দরজার দিকে চোখ বুলালেন। সুফিয়া কোথাও আছে কি-না দেখে নিলেন। রিহান এই মুহূর্তে যে কথাটা বলেছে, শুনলে মেয়েটা একেবারে ভেঙে পড়বে। তাই তিনি রিহানকে অনুরোধ করলেন সুফিয়ার কানে যেন কথাটা না পৌঁছে। রিহান উনাকে আশ্বস্ত করে বললো, ‘সুফিয়া জানবে না। শুধু আপনাকে বললাম। আমি চাই, আপনিই আমাকে আগে বিশ্বাস করুন যে, আমি ভবিষ্যতের কেউ। একমাস পর আমি এসে হয়তো দেখবো আমাকে নিয়ে আপনার ধারণা পালটে গেছে। শুধু একটাই আফসোস, এই একমাস আমার থাকার কোনো জায়গা রবে না, আমার সাথে চলার মতো আপনার যুগের কোনো টাকা রবে না। কয়েকটা দিন হয়তো উপোস হয়ে কাটাতে হবে।’

জাফর মাস্টার রিহানের হাতে কিছু টাকা দিতে চাইলে, রিহান ফিরিয়ে দিয়ে বলে, ‘অনেক ঋণী হয়েছি আপনাদের কাছে। আর ঋণী হতে চাচ্ছি না আংকেল।’

উঠে দাঁড়ালো রিহান। ভেতরের কক্ষ থেকে সুফিয়া এসে দাঁড়ালো। অসহায়ভাবে তাকালো সে রিহানের দিকে। রিহান অস্ফুটে শব্দ করলো, ‘আসি…’

বেরিয়ে গেল রিহান। ভেজা মাটিতে পা ফেলে হাঁটতে লাগলো সে। আকাশে চাঁদ ছিল। তবে মেঘে ঢাকা চাঁদটা রাতের আঁধারটাকে খুব বেশি কাটাতে পারেনি। টিনের গেইটটা পার হয়ে ইটের কাচা সড়ক দিয়ে হাঁটতে লাগলো রিহান। ঘর থেকে পিছুপিছু দৌড়ে এসেছিল সুফিয়া। গেইটের পাশে দাঁড়িয়ে সে রিহানের প্রস্থান দেখতে লাগলো। তারপর ‘হু হু’ করে কেঁদে উঠলো হঠাৎ।

[[চলবে…]]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here