#টক_ঝাল_মিষ্টি
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব -৭
শাহাদ কুহুকে নিয়ে পার্কের এক পাশে একটা কফিশপে আসলো। কফিশপের সামনে ছাতা টাঙিয়ে তার নিচে চেয়ার টেবিল রাখা হয়েছে। কুহুকে একটা ছাতার নিচে এনে চেয়ার দেখিয়ে বললো-
“এখানে বসুন।”
কুহু চুপচাপ বসে পড়লো।শাহাদ কফিশপের ভিতরে চলে গেলো।কুহু দাঁত দিয়ে ওড়না কামড়ে ধরলো। লজ্জায় তার মরে যাওয়ার জোগাড়। কেন করতে গেলো এমন? বাসা থেকে যে এতো প্রতিজ্ঞা করে আসলো তার কি হলো? কুহু এক হাত কপালে দিয়ে বসে রইলো।এই বয়সে এসে এমন কান্ড কি মানা যায়? কি চলছিলো ওর মনে তখন যে দোলনায় দাঁড়িয়ে গেলো? শাহাদ কি ভাবছে তাকে নিয়ে? নিশ্চয়ই তাকে লাজ লজ্জাহীন ভাবছে? কুহু নিজের দুই গালে দুটো চড় দিলো। টেবিলের উপর দুইহাত রেখে সেখানে মুখ গুজে দিলো। চোখে ভাসলো একটু আগে করা তার ঘটনার কথা।এই মুখ আর শাহাদকে দেখাতে পারবে না সে।
শাহাদ কফিশপের ভিতর থেকে একটা পানির বোতল আর টিস্যুর প্যাকেট নিয়ে এলো। কুহুকে এভাবে টেবিলে মাথা রেখে বসে থাকতে দেখে ডাকলো-
“কুহু?”
কুহু মাথা তুলে তাকালো।শাহাদের চোখে চোখ পড়তেউ দ্রুত সরিয়ে নিলো।শাহাদ পানির বোতলের ক্যাপটা খুলতে খুলতে বললো-
“বাম পায়ের জুতোটা খুলুন?”
কুহু বিস্ময় নিয়ে তাকালো।প্রশ্ন করলো-“কেন?”
“আগে খুলুন।”
শাহাদের কথায় কুহু আর দ্বিরুক্তি করলো না।সে তার বাম পায়ের জুতোটা খুললো।জুতোটা খুলে তার চোখ পড়লো বুড়ো আংগুলের দিকে।অনেকটা চামড়া চড়ে গেছে,কিছুটা রক্তও বের হয়েছে। এত কিছুর মাঝে সে টের পায় নি। শাহাদ দাঁড়িয়ে থেকে কুহুর বাম পায়ের বুড়ো আংগুলে পানি ঢেলে দিলো। কুহু হালকা জ্বলুনি অনুভব করলো।শাহাদ পানি ঢালা থামিয়ে টিস্যুর প্যাকেটটা কুহুর হাতে দিয়ে বলল-
“ক্ষতটা ভালো করে মুছুন।নয়ত ইনফেকশন হবে।এখানে ফার্স্ট এইডের কিছু নেই তাই আপাতত টিস্যু দিয়েই কাজ সারতে হবে। ”
কুহু বিনাবাক্য ব্যয়ে টিস্যু দিয়ে ক্ষতটা মুছলো।শাহাদ আরেকবার পানি ঢেলে দিলো। তারপর বললো-
“আবার মুছুন।”
টিস্যুর প্যাকেট থেকে আরেকটা টিস্যু নিয়ে ভালো করে মুছলো কুহু।শাহাদ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো। তারপর সন্তুষ্ট হয়ে চেয়ারে বসে পড়লো।পানির বোতলটার ক্যাপ লাগিয়ে টেবিলে রেখে দিলো। কুহু শাহাদের দিকে আড়চোখে তাকালো। শান্তমুখে বসে ফোন টিপছে। কোনো অস্থিরতা নেই, একদম দিঘির পানির মতো শান্ত।কুহু ইতস্তত করে বলল-
“আগে যা হয়েছে এইজন্য সরি। আসলে এর আগে যতবার এসেছি ততবারই এরকম করেছি তো……অতিরিক্ত অস্থিরতায় আসলে হুশ ছিলোনা। আই এম সরি।”
শাহাদ ফোনের দিকে চোখ রেখে এক হাতে থুতনি ঘষে জিজ্ঞেস করলো-
“এর আগে কার সাথে এসেছেন?”
“বন্ধুদের সাথে।”
শাহাদ ফোন থেকে মুখ তুলে কুহুর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো-
“ছেলে বন্ধু?”
কুহু দুহাত নেড়ে বললো-
“না না,মেয়ে বন্ধু। একজনকে আপনি দেখেছেন।ওই যে ওই দিন বাজারে আমার সাথে ছিলো,ওর নাম তনয়া। ”
শাহাদ মাথা নাড়লো। সে চিনেছে। জিজ্ঞেস করলো-
“তো বন্ধুদের নিয়ে এসেও এসব করেন?”
কুহু লজ্জিত ভংগিতে বললো-
“আমি একা করি না ওরাও করে।আমাকে এটা তনয়া শিখিয়েছে।”
শাহাদ কৌতুকপূর্ন দৃষ্টিতে তাকালো। আজকালকার মেয়েরা কিসব জিনিস আবিষ্কার করে বেড়াচ্ছে। দোলনায় দাঁড়িয়ে দোল খাওয়াও কোনো কাজ হতে পারে?কফিশপে কাজ করা ছেলেটা এসে দুকাপ কফি দিয়ে গেলো। কুহু কফিটা নিয়ে ছোট একটা চুমুক দিলো। গরম কফি তার জিভ পুড়িয়ে দিলো। দাঁত চেপে যন্ত্রনা টা সহ্য করে কফির কাপটা নামিয়ে রাখলো। খানিক বাদেই কফি শপের মালিক ছুটে এলো। বয়স তেমন বেশি না শাহাদের বয়েসিই হবে।শাহাদের কাছে এসে হাত কচলাতে কচলাতে বললো-
“আমার কি সৌভাগ্য আপনি আমার দোকানে আসছেন ভাই। দোকানের কাজ করা ছেলেটা আপনারে চিনে নাই তাই পানি আর টিস্যুর দাম রাখছে।”
শাহাদ হাত তুলে থামিয়ে বললো-
“এটা আপনার ব্যবসা, দাম তো রাখবেই সে।”
দোকানের মালিক লোকটা কুহুকে এক পলক দেখে শাহাদকে জিজ্ঞেস করলো-
“ভাই, উনি কি…..”
শাহাদ কফিতে একটা চুমুক দিয়ে বলল-
“আমার হবু বউ।”
কুহু কফির কাপের দিকে তাকিয়ে ছিলো এই কথা শুনে শাহাদের দিকে তাকালো। টেবিলের অপর প্রান্তে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। এক হাত টেবিলের উপর রাখা অন্য হাত উরুর উপর। কেমন নেতা নেতা ভাব!! শাহাদের বলা সহজ কথাটায় কুহুর বুকের ভেতর ঢিপঢিপ আওয়াজ হলো। নিজের আশেপাশের সবকিছুকে রঙিন মনে হলো।প্রথম প্রেমের অনুভূতিতে তার মন প্রাণ নেচে উঠলো।
দোকানের লোকটা শাহাদের কথা শুনে কুহুর দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললো-
“আসসালামু আলাইকুম ভাবি।”
বিনিময়ে কুহু সালামের জবাব দিলো।লোকটা কুহুর দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে বললো-
“ভাবি কি খাবেন বলেন? ফাস্টফুডের মাঝে বার্গার আর চিকেন ফ্রাই এর ব্যবস্থা আছে।”
কুহু শাহাদের দিকে তাকালো। শাহাদ কুহুর দিকেই তাকিয়ে ছিলো কুহুকে তাকাতে দেখে ভ্রু নাচিয়ে বুঝালো কুহু কি খাবে তা বলতে। কুহু দোকানের লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল-
“আমি কিছু খাব না।”
“না ভাবি আপনাকে খেতেই হবে। ভাই আপনাকে নিয়ে এই প্রথম আমার দোকানে আসছে শুধু কফি খেলে হবে না।”
কুহু আরেকবার তাকালো শাহাদের দিকে। শাহাদের কোনো নড়চড় নেই সে আগের মতোই তাকিয়ে আছে।কুহু না পেরে বললো-
“বার্গার খাব।”
লোকটা খুশি হয়ে শাহাদকে জিজ্ঞেস করলো-
“ভাই আপনার জন্য?”
“আমার কিছু লাগবে না। আমার দুজন বোন আছে সাথে তাদের জন্য বার্গার চিকেন ফ্রাই দুটোই।আর আমার দলের ছেলেরা এসেছে। তাদের জন্য কফির ব্যবস্থা করে দিন।”
লোকটা অর্ডার পেয়ে চলে গেলো।শাহাদ তৎক্ষনাৎ ফোন বের করে তমালকে কল দিয়ে রাফা রিদিকে নিয়ে আসতে বললো,দলের বাকিদেরও আসতে বললো। তারপর কুহুর দিকে তাকিয়ে বললো-
“কফিটা খান ঠান্ডা হচ্ছে।”
কুহু কফির কাপে চুমুক দিলো। আসলেই ঠান্ডা হয়ে গেছে। তারপরেও সে পুরোটা কফি শেষ করলো। কিছুক্ষন পরে রাফা রিদিকে নিয়ে চলে আসলো তমাল।আস্তে আস্তে বাকি ছেলেরাও এসে অন্য একটা টেবিলে বসে পড়লো। ওদেরকে কফি দেয়া হলো। রাফা রিদি আর কুহুকে বার্গার আর চিকেন ফ্রাই সার্ভ করা হলো। রাফা রিদি এক প্রকার লাফিয়ে উঠলো খাবার দেখে। শাহাদের কল আসায় শাহাদ উঠে গিয়ে কল রিসিভ করলো। রাফা খাবারসহ তাদের তিনজনের অনেক গুলো সেল্ফি তুলে রাখলো। তারপর খেতে খেতে কুহুকে বললো-
“জানো ভাবিমনি, ওইদিন ভাইয়াকে তোমার শাড়ি পড়া ছবি দিয়েছিলাম। তারপর ভাইয়াকে কফি দিতে গিয়ে দেখি ভাইয়া তোমার ছবি জুম করে দেখছে।বেচারা ভাই আমার তোমাকে ওইদিন দেখতে যেতে পারে নি,তাই ভাবলাম তোমার সাথে একটু দেখা করিয়ে দেই। এজন্যই এত কাঠখড় পুড়িয়ে তোমাকে এখানে এনেছি।”
কথাটা বলে রাফা কিটকিট করে হাসলো। রিদিও যোগ দিলো সেই হাসিতে। কুহু বার্গারে কামড় দিয়েছিলো এই কথা শুনে গালভর্তি খাবার সহ তার মুখে লাজুক একটা হাসি ফুটলো।সে তাড়াতাড়ি মুখে হাত চেপে ধরে হাসি আড়াল করলো। একবার আড়চোখে তাকালো দূরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলা শাহাদের দিকে। ততক্ষনে শাহাদের কথা বলা শেষ হয়ে গিয়েছে। কথা শেষ করে চেয়ারে এসে বসলো। ওদের সবাইকে হাসতে দেখে জিজ্ঞেস করলো-
“কি নিয়ে হাসছিস?”
রিদি মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললো-
“আসার সময় গাড়িতে ভাবিমনি তোমাকে খুঁজে না পেয়ে অনেক মন খারাপ করেছে।অনেক মিস করেছে তোমাকে। তাই না ভাবিমনি?”
কুহু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।একবার তাকালো রিদির দিকে আরেকবার শাহাদের দিকে।শাহাদ অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।যে দৃষ্টির অর্থ “তাই নাকি?”। সে তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলো।এই মেয়ে দুটো তো মারাত্নক!! এভাবে ফাঁকা ময়দানে কেউ এসব বলে?রাফা আফসোস করে বলল-
“ভাবি মনিকে আনতে না গিয়ে তুমি অন্যায় করেছো ভাইয়া।তোমার শাস্তি পাওয়া উচিত।”
শাহাদ রম্য কন্ঠে বললো-
“হুমমম… আসলেই পাওয়া উচিত। ঠিক আছে, শাস্তি হিসেবে তোদের ভাবিমনিকে যাওয়ার সময় না হয় আমি বাড়িতে পৌঁছে দিব।ওকে?”
তারপর কুহুর দিকে তাকিয়ে চমৎকার করে হাসলো। কুহুর গাল দুটো গরম হয়ে গেলো।আর তাকালো না শাহাদের দিকে। তিন ভাই বোন মিলে কিসব শুরু করেছে!! ওকে লজ্জায় মেরে ফেলবে নাকি?
খাওয়া শেষে শাহাদ তমালকে ডেকে কয়েকটা নোট হাতে দিয়ে বলল-
“বিলটা দিয়ে দে, বাকিটা তোরা খরচ কর।”
বিল দেয়ার সময় দোকানের মালিক কিছুতেই বিল নিতে চাইলো না।শাহাদকে ডেকে বিল না দেয়ার অনুরোধ করলো। শাহাদ সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলো পিছন ফিরে হাত উচিয়ে বিলটা নিয়ে নিতে বললো।
পার্ক থেকে বের হয়ে তমালকে দিয়ে রিদি আর রাফাকে বাড়ির গাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দিলো। তারপর কুহুকে বললো-
“আসুন।”
গাড়ির কাছে গিয়ে প্যাসেঞ্জার সিটের দরজা খুলে দিয়ে কুহুর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।কুহু ধীরে ধীরে হেঁটে গাড়িতে উঠে বসলো। হাঁটার সময় কয়েকবার শাহাদের দিকে আড়চোখে তাকিয়েছে। শাহাদ সেই যে স্থির দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়েছিলো আর চোখ সরায় নি। হাঁসফাঁস করতে করতে কুহু দ্রুত গাড়িতে উঠে বসেছে। উঠে বসে নিজেই নিজের সিটবেল্ট বেঁধে নিয়েছে।শাহাদ গাড়িতে উঠে নিজের সিটবেল্ট বেঁধে কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল-
“আপনার সিটবেল্ট…..”
কুহুকে সিটবেল্ট বাঁধা অবস্থায় দেখে থেমে গেলো। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে এক টানে রাস্তায় উঠে গেলো। গাড়ি চালানোর এক পর্যায়ে শাহাদ জিজ্ঞেস করলো-
“বিয়েতে কি কি করতে চান?”
“হু?”
” অনেক মেয়েদের বিয়ে নিয়ে অনেক ইচ্ছা থাকে,শখ থাকে। আমার বড় বোনের ছিলো। তার ইচ্ছা পূরন করতে গিয়ে আমার বোন জামাইয়ের ঘাম ছুটে গিয়েছিলো। আপনার আছে এমন কোনো ইচ্ছে?”
কুহু কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো। তার এত তাড়াতাড়ি বিয়ে ঠিক হয়ে যাবে এটাই সে কোনোদিন আশা করে নি, তাই বিয়ে নিয়ে কোনো কল্পনা সে তেমন একটা করে নি। কিন্তু ওর খুব ইচ্ছে পালকি চড়ে শ্বশুর বাড়ি যাবে। কুহু বলবে কি বলবে না এটা নিয়ে দোনামোনা করে শেষে বলার জন্য উদ্যত হলো-
“আমার আসলে……..”
কর্কশ শব্দে শাহাদের ফোনটা বেজে উঠায় কুহু আর বলতে পারলো না।শাহাদ এক হাতে গাড়ি চালাতে চালাতে ফোনটা কানে ধরলো। কথা না বলে যাস্ট শুনলো। তারপর শেষে গিয়ে বললো-
“ওদের আটকে রাখ আমি আসছি।”
ফোন কেটে দিয়ে আচমকাই গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলো। ২০ মিনিটের রাস্তা ১০ মিনিটে চলে এলো। কুহুদের বাড়ির গেটের সামনে গাড়ি থামালো। কুহু দরজা খুলে নামতে উদ্যত হলে কুহুকে ডেকে বললো-
“শুনুন।”
কুহু শাহাদের দিকে ফিরে তাকালো। শাহাদ সরাসরি কুহুর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো-
“রাজনীতি করার কারনে আমাকে অনেক সময় নোংরা কাজ করতে হয়, কাঁদায় না নামলেও কাঁদার ছিটে এসে আমার গায়ে লাগে। আশা করব আমার সহধর্মিণী হয়ে আমি ঘরে ফিরার পর সেই কাঁদা মুছে দেয়ার দায়িত্বটুকু নিবেন। ”
কুহু বিমূঢ় হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো। কি বলবে সে বুঝতে পারলো না।সে তো রাজনীতি পছন্দই করতো না।কি থেকে যে কি হয়ে গেলো, সে রাজী হয়ে গেলো বিয়েতে। কুহুকে চুপ করে থাকতে দেখে শাহাদ প্রশ্ন করলো-
“দায়িত্ব নিতে পারবেন না? বিয়ে ভেঙে দিব?”
কুহু দুহাত নেড়ে বললো-
“না না, নিব না বলিনি তো।অবশ্যই নিব।মানে চেষ্টা করব আর কি।”
“ব্যস,ওইটুকুতেই হবে।আমার জন্য এটাই এনাফ।এখন তাহলে যাই,কাজ আছে।”
কুহু মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।দরজা খুলে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো। শাহাদ গাড়ি স্টার্ট দেয়ার আগে ঝুঁকে গাড়ির জানালা দিয়ে কুহুকে একবার দেখলো। কুহু মনের অজান্তেই হাত উঁচিয়ে নাড়লো। শাহাদ ডান দিকে ঠোঁটের কোণ বাঁকিয়ে মৃদু হাসলো। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে গেলো। শাহাদের গাড়ি যতক্ষন দেখা গেলো কুহু ততক্ষণ তাকিয়ে রইলো সেদিকে। গাড়িতে থাকা শাহাদের প্রতি অন্যরকম এক অনুভূতির শিহরণ জাগলো মনে। পেটের ভিতর কয়েকটা প্রজাপতি ডিগবাজি খেলো। এটা বোধহয় প্রেম। এরপর ভালোবাসা। আর তারপর?…… কাছে আসা? ইশশশ!!!!!!
———-
রাহাত হাত ভর্তি গোলাপ নিয়ে বাড়িতে ঢুকলো,সাথে এক বাটি রসমালাই। রসমালাই আনিশার খুব প্রিয়। বাড়িতে ঢুকে নিচে দু একজন কাজের লোকজন ছাড়া অন্য কাউকে দেখতে পেলো না। এখন সময়টা সন্ধ্যার কাছাকাছি, নিশ্চয়ই সাহারা বেগম আর আনিশা দুজনেই যার যার ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছে। রাহাত বড় বড় পা ফেলে সিড়ি বেয়ে দুতলায় চলে এলো।দুতলায় এসেই সাহারা বেগমের মুখোমুখি হয়ে গেলো।
সাহারা বেগম আসরের নামাজ পড়ে আনিশার খবর নিতে বের হয়েছিলেন। মেয়েটার মন খারাপ দেখার পর তার নিজেরও মন ভালো নেই।ঘর থেকে বের হয়ে রাহাতকে দেখে তিনি অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালেন। মায়ের মুখোমুখি হয়ে রাহাত তাড়াতাড়ি ফুলগুলো পিছনে লুকিয়ে ফেললো।জোর করে হাসলো কিন্ত সাহারা বেগমের অগ্নিদৃষ্টির সামনে তা বেশিক্ষন স্থায়ী হল না। হাসি থামিয়ে হাতের প্যাকেটে থাকা রসমালাইয়ের বাটিটা উচিয়ে বললো-
“অনির জন্য এনেছি।রসমালাই খাবে বলে ওইদিন বায়না করলো।”
সাহারা বেগম কঠিন স্বরে বললেন-
“দূর হ আমার সামনে থেকে। মেয়েটাকে মিথ্যা আশা দিয়ে বসিয়ে রেখেছিস।”
“ইয়ে…. আসলে মা, কাজ ছিলো। জানোই তো বাবা বাড়িতে নেই। সব কাজ আমার উপর।আর তাছাড়া তোমাকে একা রেখে যাই কি করে।”
“তোকে আমার সামনে থেকে দূর হতে বললাম না?”
মায়ের আগুনের মতো রাগ দেখে রাহাত মানে মানে কেটে পড়লো।নিজের ঘরের সামনে এসে বড় একটা শ্বাস ফেলে সাহস সঞ্চয় করলো। তারপর মুখে হাসি ফুটিয়ে আদুরে কন্ঠে “অনি,অনি” ডাকতে ডাকতে দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলো। ঘরে ঢুকে চমকে গেলো। ফ্লোর থেকে বিছানা সব জায়গায় জামা কাপড় ছড়ানো ছিটানো। একটু ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলো জামা কাপড় গুলো আসলে তার।আরেকটু ভালো করে দেখে বুঝতে পারলো সব গুলোই ছিঁড়ে ফালা ফালা করে দেয়া হয়েছে । শার্ট প্যান্ট, গেঞ্জি,টিশার্ট ব্লেজার কোনো কিছুই বাদ নেই। রাহাত চোখ সরিয়ে আনিশার খুঁজে সামনে তাকালো। আনিশা ডিভানে আধশোয়া হয়ে সামনের টেবিলে ল্যাপটপ রেখে মুভি দেখছে আর ফল খাচ্ছে। রাহাত যে বাড়ি ফিরেছে এতে তার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। রাহাত রসমালাইয়ের বাটিটা বিছানার উপর রেখে ব্যস্ত পায়ে আনিশার সামনে দাঁড়িয়ে বললো-
“এসব কি অনি? কে করেছে এসব?”
আপেলের স্লাইস মুখে দিতে দিতে আনিশা উত্তর দিলো-
“আমি করেছি। ওই যে ওইখানে কাঁচিটা দেখছো ওটা দিয়ে করেছি।”
রাহাত আনিশার দেখানো জায়গায় তাকিয়ে কাঁচিটার দিকে এক পলক দেখে অসহায়ের মতো জিজ্ঞেস করলো-
“কেন?”
” তোমাকে তো কাঁচি দিয়ে কাটতে পারব না তাই তোমার জামা কাপড় কেটেছি।”
রাহাত আলমারির দিকে তাকালো।আলমারিটা খোলা পড়ে আছে। ওখানে শুধু আনিশার কাপড় রাখা। রাহাত আহত কন্ঠে বললো-
“এমনটা করতে পারলে? এবার আমি কি পড়ে বাইরে যাব?”
“যেটা পড়ে আছো সেটা পড়ে যাবে।”
“ঘরের ভিতর কি পড়ব?”
“কিছু পড়তে হবে না,ন্যাংটো থাকবে। আমি তোমাকে দু চোখ ভরে দেখব।যতদিন বাপের বাড়ি না নিয়ে যাচ্ছ ততদিন তোমার জামাকাপড় পড়া বন্ধ।”
রাহাত বিস্ফোরিত চোখে তাকালো।তার মুখের ভাষা হারিয়ে গেলো এসব শুনে। মাথায় যেন ছোটখাটো একটা বাজ পড়লো।
চলবে