ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল পর্ব, ২

0
1742

#ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
#পর্ব_২
লেখিকা : আফরোজা আক্তার

রুমে শুয়ে শুয়ে আগের কথা ভাবছে বেলী । বাসর ঘরে সেদিন বসে ছিল সে । ইরফান রুমে তো এসেছিল ঠিক , কিন্তু সেখানের ঘটনা গুলো ঘটেছিল উল্টো । ইরফান এসে সোজা শুয়ে পড়ে । বেলী তখনও বসা খাটে । এরই মাঝে একটা ফোন আসলো ইরফানের মোবাইলে , ফোনটা হাতে নিয়ে বাহিরে চলে যায় সে । আর তারপর যখন রুমে আসে তখন হয়তো ইরফান না কোজ এক দানব রুমে ঢুকেছিল । ইরফান খাটের এপাশ ঘুরে হাতে ধরে টেনে নিচে ফেলে দেয় বেলীকে । অকথ্য বিশ্রী ভাষায় কথাও বলে । আর তার শেষ কথা টা ছিল ,

– তুই যদি এক বাপের জন্মের হয়ে থাকিস আমার আশেপাশেও ঘেষবি না ।

আর তারপর দিনই ইরফান চলে যায় । মুখ বুজে সব টা সহ্য করে নেয় বেলী । বিয়ের ঠিক ১ মাস পর ইরফান আবার বাড়ি আসে তাও রহমান আলীর কথায় । সেইবার রাতে বেলী ভুল করে ইরফানের গায়ে দুধ ঢেলে দেয় । আর তার শাস্তি বেশি কিছু ছিলো না , শুধু পায়ের থেকে জুতা খুলে জুতা দিয়ে মেরেছিল নিজের সদ্য বিয়ে করা বউটাকে ।
সেইবার একদিন থেকেই আবার চলে যায় ইরফান । আর তারপর লাস্ট আসে রহমান আলীর শরীর খারাপ হওয়ার পর । সেইবার আসার পরই রহমান সাহেব ইরফানকে বাধ্য করে বেলীকে নিয়ে ঢাকা থাকার । ইরফান শত না করার পরেও রহমান আলী কিছুই শুনেন নি এবং শুনতেও চান নি । জোর করেই বেলীকে ইরফানের সাথে ঢাকা পাঠিয়ে দেয় । আর যার ফল স্বরূপ আজ সে কুকুরের মত মা’র খায় ইরফানের কাছে ।

এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুম চলে আসে বেলীর । শরীর ব্যাথা থাকা কারণে ঘুম চলে আসছে চোখে । মিনু ফাঁক দিয়ে একবার দেখে গেছে বেলীকে । মিনু মেয়েটা ইদানীং এক রকম আতংকে থাকে । ইরফান যেইভাবে মারে বেলীকে । কোন দিন জানি দেখে একেবারে মেরেই ফেলে । এই ভয়ে থাকে সারাদিন ।
বিকেলের শেষ দিকে ঘুম ভেঙে যায় বেলীর । ওযু করে নামাজ পড়ে রান্না ঘরে যায় সে । সন্ধ্যায় তারা আসলেই কফি চাইবে , বলার সাথে সাথে হাজির না করলে আবার মারবে । তাই আগে ভাগে সব করে রাখবে বেলী ।

মাগরিব নামাজের পর ইরফান আর রুবি বাসায় আসে । কলিংবেল বাজার সাথে সাথে মিনু গিয়ে দরজা খুলে । রুবি সোজা নিজের রুমে চলে যায় । ইরফান ড্রইং রুমে বসে । সোফায় বসে এ.সি টা ছেড়ে দেয় সে । এরই মাঝে বেলী কফি নিয়ে আসে । কফির মগটা ইরফানের হাতে তুলে দেয় বেলী । হাত বাড়িয়ে কফির মগটা নিতে গিয়ে বেলীর হাতে নজর পড়ে ইরফানের৷ বেল্টের বারির দাগ এখনও লাল হয়ে আছে । এটা দেখার পর একবার বেলীর মুখের দিকেও নজর দেয় ইরফান । মুখটা ফুলে একাকার হয়ে আছে । আজকে বোধ হয় মা’রের পরিমান টা বেশিই হয়ে গেছিলো । মুখে কিছুই বলে নি ইরফান । বেলী সেইখান থেকে চলে যেতে নিলে ইরফান ডেকে দেয় । ইরফানের ডাকে কলিজায় কামড় পড়ে বেলীর । বেলীর ধারণা আবার হয়তো মারবে । সেই এক জায়গায় ভয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মেয়েটা । আবার ডাকে ইরফান ,

– বেলী , শুন তো ?
– জ্বি ,
– রুবিকেও কফি দিয়ে আয় ।
– জ্বি আচ্ছা ,

বেলী রুবির রুমের সামনে গিয়ে দরজায় নক করে ।

– এই কে ?
– আপু আমি , বেলী ।
– কি চাই ?
– কফি দিতে আসছিলাম ,
– ভেতরে আয় ,

রুবিও কুকুর বেড়ালের মত ব্যবহার করে বেলীর সাথে । বয়সে এবং পড়ালেখায় অনেক এগিয়ে আছে রুবি । ইংলিশের উপর অনার্স কমপ্লিট করা , দেখতে শুনতেও খারাপ না , বাপের ভালো টাকা পয়সা যার কারণে মানুষকে মানুষ মনে করে না । আর বেলী , বেলী তো তার দু’চোখের বিষ । শুধু ইরফান তাকে আগে বিয়ে করার জন্যে সে প্রথম বউ আর রুবি দ্বিতীয় বউ । যদিও কয়েক দফা বলা হয়েছিলো বেলীকে ডির্ভোস দিতে , কিন্তু ইরফান চেয়েও দিতে পারে নি । কারণ গ্রামে তার বাবা রহমান আলী শুনলে তাকে হয়তো ত্যাজ্যপুত্র করে দিবে । এমনকি রহমান আলী এখনও জানে না যে ইরফান আরও একটা বিয়ে করেছে এখানে ।
রুমের মধ্যে গিয়ে বেলী কফির মগটা টেবিলের উপর রেখে চলে আসতে নিলে রুবি বেলীকে আটকে ধরে । বেলীর সামনে এসে বেলীর বাম গাল টা নিজের হাতে ধরে । আর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বেলীকে বলে ,

– লজ্জা থাকলে আর কখনো আমার বেড টি দিতে দেরি করবি না । আজকের মা’রের কথা মনে থাকলে ।
– হু ,
– মনে থাকবে ? ঠিক সকাল ১০ টায় আমার বেড টি চাই আমার বিছানার পাশে ।
– থাকবে ,
– যাহ এখান থেকে ।

রুবি ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় বেলীকে । চোখের পানি মুছতে মুছতে রান্না ঘরে ঢোকে বেলী । বেলীকে দেখে মিনু বুঝে যায় , কিছু একটা হয়েছে ।

– আবার কিছু কইছে ওই নবাবের বেটি ?
– মিনু আস্তে বলো বোন , শুনলে তোমাকে বের করে দিবে ।
– দেক বাহির কইরা , আমার কি আসে যায় , আমার কি আপনের মত কইলজা ছোড নি , তা কি কইছে সে ?
– কিছুই বলে নাই ।
– দেহি আমার দিকে তাকান তো ,

মিনু বেলীর মুখটা ধরে তার দিকে ঘোরায় । বেলীর মুখটা আসলেই অনেক মায়ায় ভরা । মিনু কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে , তারপর আবার বলে ,

– ভাইয়েরে ভালাবাসেন ?

মিনুর কথায় চোখ বড় করে তাকায় বেলী । মিনু এইসব কি বলে ? আসলে এইটাই যে বেলীর মনের কথা । কিন্তু মিনু বুঝে ফেললো কিভাবে ?

– মিনু কি সব বলো ?
– আপনে ভালাবাসেন ভাইয়েরে , এইজন্যেই তার এমন পিডা খান । ভাবী একটা কথা কই ?
– বলো ,
– আপনেরে মাইরাই ফেলাইবো ভাইয়ে । ভাবী এহনও সময় আছে , যান গা ।
– কই যাবো মিনু ? যাওয়ার মত কোন জায়গা আছে ? গ্রামে যাইতে পারবো না সেইদিকে তার বাবায় আছে । আর আমার মা ? তার কাছে থাকলেও মানুষে অনেক বাজে বাজে কথা বলবে ।
– শরীরডা তো আছে , রত তো আছে , কাম কইরা খাইবেন । তবুও আর মাইর খাইয়েন না ।
– কিন্তু আমি তাকেও ছাড়তে পারবো না ।
– কিহ , ধুর বেয়াক্কেল মাতারি , যান যান মরেন গিয়া , আমার কি ? আপনেরে মাইরা ফালাইয়া রাইখা যাইবো আর আমি গিয়া মলম লাগামু । হায়রে ভালাবাসা রে , ফিছা মারি এমন ভালাবাসার কফালে ।

মিনু রেগে মেগে বক বক করতে করতে কাজে মন দেয় । বেলী রুমে যায় , দরজা এটে দিয়ে ওড়নায় মুখ চেপে কেঁদে দেয় ।
বেলী সত্যিই নিরুপায় । কি করবে সে ? আবেগের কাছে সে বাঁধা । ভালোবাসে অনেক ইরফানকে , যদিও সে জানে ইরফান তাকে শুধুই তার বাসার বান্দি ভাবে , বউ সে কখনোই হতে পারবে না । তবুও কেন জানি বেলী ছাড়তে পারে না ইরফানকে ।

[ বিঃদ্রঃ সমাজে এখনও কিছু কিছু মেয়ে আছে যারা ভালোবাসা আর আবেগকে প্রাধান্য বেশি দেয় । যার জন্যে প্রতি বছর কম করে হলেও ৫০% স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে স্বামীর হাতে । অনেকেই বলে , বিশেষ করে আমাদের মত মেয়েরা কিংবা আমি নিজেই বলি এমন স্বামীর কাছে না থাকলে কি হয় , কাজ করে খেলেই তো হয় , কিন্তু আসলে যার যার পরিস্থিতি সে সে বুঝে । কতটা অসহায় পরিস্থিতি হলে একটা মেয়েকে সতীন নিয়ে ঘর করতে হয় কিংবা স্বামী দ্বারা নির্যাতিত হতে হয় , আর মেয়েরাও অনেকটা হিংস্র যারা অন্যের সংসার এইভাবে নষ্ট করে । গল্পটা আমাদের সমাজের প্রাচীন এবং বর্তমান কিছু প্রেক্ষাপটে বানানো সাথে কিছু সত্যতা/বাস্তবতা এবং কিছুটা কাল্পনিকতার মিল রেখে লিখা হয়েছে । কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখিকার দোষ নেই ]

সকাল সকাল উঠে নাস্তা বানিয়ে টেবিলে সাজিয়ে রাখে বেলী । রোজ সকাল ৯ টায় অফিসে যায় ইরফান । এই ৭ মাসে ইরফান শুক্রবার ব্যাতিত সপ্তাহে ৬ দিনই একা নাস্তা করে । কারণ তার দ্বিতীয় স্ত্রী ঘুম থেকে উঠে সকাল ১০ টায় । তার পক্ষে সকাল সকাল উঠা ইম্পোসিবল ব্যাপার আর নাস্তা বানানো তো অসম্ভব ব্যাপার । এই ৭ মাসে সে একবারও রান্নাঘরে ঢুকে দেখেও নি রান্নাঘরের চেহারাটা কেমন ? ইরফান একাই ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে নাস্তা খেয়ে অফিসে চলে যায় । তার বাঁধা বান্দি বেলী তো আছেই , সেই সব করে দেয় ।
আজও ব্যাতিক্রম কিছু হয় নাই । বেলী সব সাজিয়ে রাখে , মিনু দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করছে রান্নাঘরে । ইরফান শার্টের হাতা ঠিক করে ব্লেজার হাতে নিয়ে নাস্তার টেবিলে বসে । ইরফান বলার আগেই তার সামনে সব হাজির করে রাখে । ইরফানের সকালবেলা দুধ চা না হলে চলেই না । আর বেলী চা + কফি দুইটাই ভালো বানায় , যদিও ইরফান কখনো প্রশংসা করেনি এইসবের । তবে সেও মানতে বাধ্য হয় যে হ্যাঁ বেলী চা টা ভালোই বানায় । নাস্তা করতে করতে এক হাত দিয়ে কলারের নিচের বোতামটা খুলতে গিয়ে একদম পুরো ছিড়েই ফেলে ইরফান ।

– ধুর , মেজাজটা কেমন লাগে এখন , তাড়াতাড়ির সময় দেরি হয়ে যায় ।

বেলী সাইডে দাঁড়িয়ে ছিল বিধায় দেখে সব । আর মিনু রান্নাঘর থেকে সবটাই খেয়াল করে । মুচকি হাসি দিয়ে ভেতরেই বক বক করে সে ।

– এক্কেবারে ভালা হইছে , হারামজাদা অসিভ্য বেডা । বিয়া একটা কইরা আবার আরেকটা করছে , বউডারে জানোয়ারের মত ফিডায় , এক্কেরে ভালা হইছে । এই বেডায় এক জানোয়ার আর এইডার ছোড বউডা আরও বদমাইশ ।

ইরফানের চৌদ্দ গুষ্টিকে তুঙ্গে তুলে দেয় মিনু । যদিও আস্তে আস্তে বলেই নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে মিনু । কারণ ইরফান বা রুবি কারো সামনেই এইস বলার ক্ষমতা নেই তার । তাই নিজে নিজেই বলে । এইদিকে বেলী ফ্লোর থেকে বোতামটা কুড়িয়ে হাতে নেয় । ইরফান একা একাই বলতে থাকে ।

– আজকে প্রেজেন্টেশন আর আজকেই এমন হতে হলো , ধুর

বেলী ইরফানের বিরক্ত হওয়া দেখে নিজেই বলে ওঠে ,

– আমি লাগিয়ে দেই ?
– এখন আবার শার্ট খুলতে হবে , লাগাতে গেলে শার্টের ইস্ত্রিটাও নষ্ট হয়ে যাবে ।
– আপনি নাস্তা খান , আমি সুই-সুতা নিয়ে আসি । শার্ট খুলতে হবে না , এমনিতেই লাগানো যাবে ।

ভেতর থেকে সবটাই শুনে নেয় মিনু । বেলীর উপর অতিরিক্ত মেজাজ খারাপ লাগছে তার ।

– এহহহহহ , হের এক্কেরে আদর বাইয়া বাইয়া পড়ে । এহন হের পেয়ারের ছোড বউরে উডাইয়া লাগাইতে ফারে না । শয়তান এইডা নামাজ কালাম তো ফড়েই না চিত্তায়া পইড়া ঘুমায় । অসিভ্য বেডি কোনহানের ।

এই বলে বোতামটা হাতে নিয়েই বেলী রুমে যায় সুই-সুতা আনতে । প্রায় ৫ মিনিট হয়ে যায় বেলীর আসার খবরও নেই । ইরফানের নাস্তা খাওয়াও শেষ হয়ে যায় । কিছুক্ষন বসে থেকে নিজের রুমে যায় ইরফান । রুবি তখনও ঘুমাচ্ছে । রুবিকে ডাকতে থাকে সে ।

– রুবি , এই রুবি,,,,,,?
-…….
– আরে এই রুবি , শুনছো ?
– কি হয়েছে ডাকো কেন ?
– শার্টের বোতামটা লাগিয়ে দেও না ।
– শার্টের কি অভাব পড়ছে ঘরে , আরেকটা পরে যাও ।
– কি সব বলো ঘুমের তালে , আজকে আমার প্রেজেন্টেশন । তাই তো এই শার্ট পরছি আমি ।
– ঘুমাইতে দিবা একটু , আমি তোমার বোতাম লাগানোর জন্যে ঘুম নষ্ট করবো নাকি , যাও সরো এখান থেকে । পারলে নিজে লাগিয়ে নাও ।

ধমক টমক দিয়ে আবার ঘুমিয়ে যায় রুবি । ইরফানের মেজাজ সেই লেভেলের চড়ে গেছে । ওর মন চাইছে রুবি এক লাথি মেরে খাট থেকে ফেলে দিতে । কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই । একবার জোরে ধমক দিয়েছিল বলে রুবির বাবা ইচ্ছামত ঝেরেছিল ইরফানকে । বড়লোকের মেয়ের এই একটা সুবিধা , বাপের অঢেল টাকা পয়সা থাকলে জামাইকে পাত্তা দেয় না । এখানে রুবিও তেমনটাই । ইরফান নিজের রুম থেকে বেরিয়ে বেলীর রুমে যায় । গিয়ে দেখে বেলী তখনও সুচে সুতা গাঁথছে । ইরফান রুমের ভেতরে যায় ,

– তুই এখনও সুতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস ?
– আসলে আমি ভুলেই গেছিলাম এইগুলা কোথায় রাখছি , খুজতে খুজতে এই মাত্রই পাইলাম , এখনি সেলাই করে দিচ্ছি ।
– তাড়াতাড়ি কর ।
– এই তো হয়ে গেছে , এখনি লাগিয়ে দিবো ।

এই বলে বেলী ইরফানের সামনে যায় । কাঁপা কাঁপা হাতে ইরফানের বুক অবদি উঠায় নিজের হাত জোড়া । যথাস্থানে বোতামটা রেখে সুই গাঁথে বেলী । ইরফান খেয়াল করছে বেলীর হাত প্রচন্ড কাঁপছে । ইরফান একবার বেলীর মুখের দিকেও তাকায় । বেলী সব সময় মাথায় ওড়না পরে থাকে । দুই পেচ দিয়ে চুল গুলো ঢেকে সে ওড়না পরে সব সময় । গালের দিকে নজর দিয়ে দেখে কালকের মা’রের দাগ গাঢ় হয়ে আছে ।

– তুই এইভাবে যে কাঁপছিস , কখন না জানি আমার বুকেই সুই গেঁথে দেস ।
– ভয় নাই আমি কারো বুকে মনে আঘাত করি না ।
– মুখে কিছু দেস না ? এমন কালসে হয়ে আছে কেন ? স্নো বা কিছু কি নাই ?

ইরফানের এমন কথায় বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো বেলীর । কান্না পাচ্ছিলো ভিষণ সেই মুহুর্তে , কিন্তু তবুও সে চুপ করে আছে । লাস্ট কবে স্নো মেখেছিল সেইটাও ভুলে গেছে সে । ইরফান সাইডে তাকিয়ে কোন স্নোর বক্স খুজে পায় নি । ওমনি তোতলাতে তোতলাতে বেলী কিছু বলে ,

– একটা কথা বলতাম ?
– বল ,
– আমার দুইটা জামা লাগতো ?
– কেন , জামা নাই ?
– বাড়ি থেকে যেইগুলা আনছিলাম সেই গুলাই এতদিন পরছি , জামা গুলা ছিড়ে গেছে । আর কয়েকটার রঙ জ্বলে গেছে । আমাকে সুতির জামা কিনে দিলেই হবে ।
– কেমন সুতির জামা পরবি ?
– ৬০ টাকা গজের গজ কাপড় গুলা আছে না গ্রামে পাওয়া যাইতো , ওই রকম এনে দিলেই হবে ।
– আচ্ছা দেখি পাই কিনা ,

বোতাম লাগিয়ে দেয়ার পর ইরফান রুম থেকে বেরিয়ে যায় । কয়েক সেকেন্ডের মাথায় আবার রুমে ঢোকে সে ।

– কয় গজ লাগে তোর ?

পিছনে ফিরে তাকায় বেলী , ইরফানকে আবার রুমে আসতে দেখে অবাক সে । তারপর ইরফানের ডাকে কথার উত্তর দেয় ,

– জ্বি ,
– কয় গজ লাগে তোর ?
– জামা ওড়না সেলোয়ার সব গুলাতেই আড়াই গজ লাগে ।
– আচ্ছা ,

বেরিয়ে যায় ইরফান । তারপর সোজা নিচে চলে যায় সে । বেলীর রুমের জানালা দিয়ে নিচের সব কিছুই দেখা যায় । পর্দার আড়ালে ইরফানকে এক নজর দেখবে বলে নিচে তাকায় সে । ইরফান তখনও নিচে দাঁড়ানো ছিল । আজ ইরফানকে ভালোই দেখাচ্ছিলো । সাদা ফরমালে অনেক সুন্দর লাগছিলো তার বরটাকে । এরই মাঝে মিনু এসে পিছন থেকে বেলীর গায়ে হাত রাখে ।

– কিছু বলবা মিনু ?
– আপনে মানুষ হইবেন কবে ?
– মানে ,
– ফিডা খাইতে খাইতে কি লজ্জা শরমের মাতা খাইছেন আপনে ?
– কি হইছে বলবা তো ।
– কি দরকার ডা আছিলো ভাইয়ের জামার বোতাম লাগানোর । আমি তো দরকার দেখলাম না ।
– আমি তো দেখছি ।
– এহন হের ছোড বউ কই যহন প্রয়োজন পড়ে তহন আপনের কাছে আহে , আর ছোড বউয়ের কান কতা হুইন্না আপনেরে গুম্মুর গুম্মুর লাগায় । বেডা বজ্জাত কোনহানকার ।
– থাক না মিনু , মানুষটার আজ অফিসে কি জানি আছে । আর আমি মনের মধ্যে হিংসা রাখতে পারি না । বাদ দাও ,
– আমি যে কই আপনে বেয়াক্কেল মাতারি কতা ডা আমি ভুল কই না আপনে আসলেই বেয়াক্কেল মাতারি । তো যান এহন আপনের সতীনের বেড ঠি লইয়া যান , নবাবজাদি বিছানায় নইয়া চা পান করবো ।
– মিনু কোনদিব জানি সব শুনে ?
– শুনুক গা তাতে আমার কি ? আমি ডরাই না কাউরে ।

এ বলে মিনু রুম থেকে বের হয়ে যায় । আর বেলীও কফি নিয়ে রুবির রুমে যায় । দরজায় নক করার পর রুবি ভেতরে যেতে বলে । রুবি তখন বিছানায় বসেছিল
। বেলীকে দেখে রুবি একটা হাসি দেয় । রুবির ভেজা চুল গুলো বেলীর ভেতর টাকে ফালা ফালা করছিল , তাড়াতাড়ি কফির মগটা রেখে বেরিয়ে যেতে নিলে রুবি ডাক দিয়ে বসে ,

– যাস কই তুই , আমি কি বলছি যেতে ?
– কিছু লাগবে ?
– নাকি আমার ভেজা চুল তোর সহ্য হয় না কোনটা ?
– হাতে কাজ তো , তাই আর কি ।
– আফসোস লাগে তোর জন্যে , তোর বর আমারও বর । ফারাক হচ্ছে তোর বর আমাতে মত্ত্ব , আর তোকে দেখতেই পারে না । প্রতি রাতে সে আমাতে লেপ্টে থাকে আর প্রতি রাতে তুই একা ঘরে কাতড়াস । আফসোস লাগে রে বড় আফসোস লাগে তোর জন্যে ।
– আমি আসতেছি কফিটা খেয়ে নিন ।

এই বলে বেলী রুম থেকে বেরিয়ে যায় । দৌড়ে নিজের ঘরে এসে বিছানায় উপুর হয়ে পড়ে । বুকে হাত দিয়ে মুখে বালিশ চেপে চিৎকার করে কাঁদে বেলী ।

– এমন টা তো হওয়ার কথা ছিল না । তবে কেন এমন হলো , বাবা আমাকেও সাথে করে নিয়ে যাইতা । এতিম করে কেন গেলা বাবা । এখন আমি কার বুকে মাথা রাখবো বাবা ।

.
.

চলবে………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here