জোনাকিরা ভীড় করেছে part 8

0
471

#জোনাকিরা_ভীড়_করেছে
#পর্ব_৮

১৯.
মেঘলা দূরে, দূরে থাকছে আদিবের থেকে। গতকালের পর থেকে মেঘলা ভয়ে, ভয়ে আছে। আদিবের সাহস বেড়ে গেছে কিছুদিন থেকে।উল্টো পাল্টা আচরণ করছে।

আদিব অবশ্য মেঘলার এভাবে পালিয়ে থাকা ভালো ভাবেই লক্ষ্য করলো আর হাসলো।মেঘলাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে দেখতে।সাদা কালো রঙের মিশেলের সালায়োর কামিজ পরেছে মেঘলা। চুল গুলো পিঠময় ছড়িয়ে রেখেছে।কানে ছোটো ঝুমকো পরেছে আর হাতে কয়েকটা চুড়ি।আদিব আজ চোখ সরাতে পারছে না মেঘলার থেকে।গোল মুখের ডাগরআঁখির মেয়েটা যে প্রতিনিয়ত তার বুকে ঝড় তুলছে।মেঘলার সরু নাকটা আদিবের খুব পছন্দের। ছিপছিপে নাকের ডগাটা চকচক করে সবসময়।মেঘলার ফর্সা গালে লাল হয়ে থাকা ব্রণ যেন সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।আদিবের খুব ইচ্ছে হচ্ছে মেঘলাকে তার মনের খাঁচায় বন্ধ করতে। সে ভেবে রেখেছে মেঘলা যখন তার বউ হবে সে সারাক্ষণ জ্বালাবে।সবসময় নাকটা ছুঁয়ে দেবে মেঘলার।আর মেঘলা তার দিকে রাগী চোখে তাকাবে।উফ,কবে যে স্বপ্ন গুলো সত্যি হবে!

খাওয়ার সময় আমরিন এসে বসলো তার কাছে।একটু পর দেখা গেল আদিবও এসেছে বসেছে।মেঘলা মনে মনে কপাল চাপড়ালো।এই ছেলেটা তাকে একটু শান্তিতে খেতেও দেবে না!মেঘলা ভয়ে,ভয়ে তাকালো মোমেনার বেগমের দিকে।দেখলো মনিরা আর মোমেনা অন্য টেবিলে বসেছে।সস্তির শ্বাস ফেললো সে।চুপচাপ খেতে থাকলো ধীরে সুস্থে। আদিব মেঘলার পাতে কাবাব তুলে দিলো না খেয়ে।তা দেখে আমরিন মুচকি হাসলো।আদিবের এমন কান্ডে কাশি উঠে গেল মেঘলার।আমরিন দ্রুত পানি খাওয়ালো।আদিব হা হয়ে গেল।কি এমন করেছে সে,মেঘলার কাবাব পছন্দ সে জানে, তাই নিজের দুটো না খেয়ে দিয়ে দিলো।

“তোমার কি সমস্যা হচ্ছে? ”

মেঘলা কটমটে তাকালো। আদিবের গলা শুকিয়ে গেল। দ্রুত পানি খেয়ে প্লেট হাতে উঠে গেল।

আমরিন হাসতে হাসতে বললো,”আপু, আমার ভাইয়া দেখেছ কত ভাবে তোমায় নিয়ে?”

“আমি তো ভাবতে বলিনি। তোমার ভাইয়াকে বোঝায়ও আমরিন,সে যেটা চায় তা কখনোই সম্ভব নয়। ”

“কে বলেছে সম্ভব নয়?তুমি একটু সহজ ভাবে ভেবে দেখ, ভাইয়া তোমায় কতটা ভালবাসে তুমি নিজেও জানো না।”

“আমি জানতেও চাই না, আমরিন।আমার জায়গায় থাকলে তুমি সবটা বুঝতে।কিন্তু তোমার ভাইয়া বুঝতে নারাজ।বাস্তবতা এতটাও সহজ নয়।আমি নিজের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছি।তোমার ভাইয়া আমায় এত ভালবাসে তার বিনিময়ে আমার উচিত তার ভালো চাওয়া।আমি চাই সে ভালো থাকুক কিন্তু আমার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে সে ভালো থাকবে না।”

“তাহলে স্বীকার করছো তো ভাইয়া তোমায় ভালবাসে?”

“মেঘলা জবাবে কিছু বলতে পারলো না।”

“আপু দেখ,তুমি হয়ত জানো না ভাইয়ার পরিবারের গুরুত্ব কতটা।সে নিজের পরিবারকে ভালো রাখতে নিজের বেষ্টটা দিবে।তোমার পরিবারকেও ভাইয়া নিজের ভেবে নিয়েছে সে কখনো খারাপ কিছু হতেই দেবে না।”

“সমস্যাটা তো সেখানেই, আমি চাইনা তোমার ভাইয়া আমার পরিবারকে নিজের বলে ভাবুক। ”

“এর মানে,তুমি ভাইয়া আসলে পুরোপুরি ভাবে চিনতে পারনি।সময় আসুক, দেখবে তোমার ভাবনাটা কতটা ভুল।আমরিন আর কথা বাড়ালো না।”

দিলারা বেগম দুদিন ধরে অস্থির হয়ে আছেন। আদিবের সাথে কথা বলা প্রয়োজন। আনোয়ার সাহেবও চিন্তিত বিষয়টা নিয়ে।আদিব যে মেঘলাকে পছন্দ করে তা জেনে গেছেন।ছেলেকে তিনি ভাল করে চেনেন।ছেলে যে সত্যি ভালবাসে মেয়েটাকে এটাও জানেন। এ নিয়ে তাদের কোনো সমস্যা নেই।সমস্যা হচ্ছে অন্য জায়গায়,মেয়েটার মামিকে নিয়ে।তিনি বিচক্ষণ তাই সহজেই বুঝে গেছেন আদিবের ভালবাসার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। ছেলেটা কি করে নিজেকে সামলাবে তাই নিয়েই চিন্তা। দুজনে সেদিন সারারাত এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।মেঘলাকে ছেলের বউ করতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু মেয়েটা আর তার পরিবার নিয়ে যে সমস্যা আছে তাই ভেবেই অস্থির।আদিবের সাথে এ নিয়ে কথা বলে জানবেন,ছেলে কি ভেবে রেখেছে।

পাখি দিলারা বেগমকে গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে এসে বললো,

আম্মা আইন্নেরও আপার লাহান রোগ হইলো নাকি?এমন ঝিম ধইরা বইসা আছেন ক্যান?

পাখি বেশি কথা বলবি না।আমরিনের আবার হলোটা কি?

কি জানি আম্মা?আপায় তো কিছু কয় না।আমার মনে হয় আপারে বদ জ্বীন বস কইরা ফ্যালাইছে।হের লাইগাই আপা কুনু কথাবার্তা কইতে চায় না।হ

পাখি তোরে আমি সত্যি চড় মেরে বসবো।এমনি মন মেজাজ ভালো নেই তার ওপর তোর বকরবকর। যা ভাগ, কাজ না থাকলে টিভি দ্যাখ।

আম্মা আমার কতা সময় থাইকতে হুনেন, তাইলে আপারে আটকাইতে পাইবেন।না হইলে দেখবেন জ্বীন আপারে নিয়া উরাল দিবো। আপারে বিয়া কইরা ফ্যালাইবো, আর আপার পেট থাইকা জ্বীনের বাচ্চা কাচ্চা হইবো।আইন্নে নানী হইবেন জ্বীনের বাচ্চা। আমি হমু খালা,ভাইজান হইবো মামা।

দিলারা বেগম রক্তবর্ণ চোখে তাকালেন পাখির দিকে।পাখি দৌড়ে চলে গেল ভয় পেয়ে।

২০.
আনাফ এসেছে শুনে আমরিন ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে আছে।পাখি কয়েকবার ডাকাডাকি করেছে তবু সে খোলেনি।শেষে দিলারা বেগম এসে ধমক লাগালেন।আমরিন বের হয়ে মুখ ভার করে রাখলো।দিলারা বেগম নাস্তার টেবিলে যেতে বললেন আমরিনকে।আনাফের দিকে না তাকিয়ে ঘাড় গুঁজে বসে রইলো।আনাফ কয়েকবার তাকালো আঁড়চোখে। কোনোরকমে নাস্তা শেষ করে আমরিন আবার চলে গেল ঘরে।দরজা বন্ধ করার আগেই আনাফ ঘরে ঢুকে পরলো তার।আমরিন দাঁড়িয়ে রইলো কিছু না বলে।

খুকি,এমন ভাব দেখাচ্ছিস কেন আমায়?এমন ভাব করছিস যেন পাত্র পক্ষ এসেছে তোকে দেখতে আর আমি সেই পাত্র?

আমরিন চমকে উঠলো। আনাফের কথাটা তার মনকে ক্ষতবিক্ষত করে দিলো।আনাফ ভাইয়ের কথাটা যদি সত্যি হতো!

কিরে বোবা হয়ে গেছিস নাকি?

হলেই বা তোমার কি?

আনাফ হাসলো,বললো, এইতো খুকির মুখে কথা ফুটেছে।একটা ছড়া শোনাতো আমায়,কোনটা শোনাবি বলতো?মামার বাড়ির কবিতাটা বল, তাহলে?

আনাফ ভাই তুমি কিন্তু ভালো করছো না?আমার রাগ উঠলে সত্যি, সত্যি তোমার মাথা ফাটিয়ে ফেলব!

তাই নাকি,তা ফাটা না।আমি তো চাই আমায় মার্ডার করার অপরাধে তোর ফাঁসি হোক!

একদিন দেখবে, আমি সত্যি, সত্যি তোমায় মার্ডার করবো, হু।

আমিও অপেক্ষায় থাকলাম।

আনাফের কথায় চট করে তার দিকে তাকালো আমরিন।কথা তার কানে অন্যরকম ভাবে লাগলো।সে আনাফের চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করলো।কিন্তু আনাফ চোখ নামিয়ে নিলো।

ফয়সালের সাথে মালিহা বেগম কথা বলার পর ভিষণ ভাবে অবাক হয়েছেন।ফয়সাল এভাবে রেগে গেছে সামান্য বিষয়ে!বিয়ের আগে মেলামেশা না করাই তো ভালো।মেঘলার তার সাথে যেতে চায়নি তো কি এমন হয়েছে?ফয়সাল তো এখুনি তার মেয়ের ওপর নিজের অধিকার দেখানো শুরু করেছে?আচ্ছা তিনি কি মানুষ চিনতে ভুল করলেন?ফয়সালের সাথে কথা বলার পর থেকে মনটা কেমন যেন করছে।মন থেকে সায় মিলছে না।বান্ধবীকে কথা দিয়ে ফেলেছেন মেয়ের সাথে আলোচনা না করেই।আসলে কাজটা বোধহয় ঠিক করেন নি তিনি।মেয়েটারও মতামতের প্রয়োজন আছে।দশ বছর বয়স থেকে কি কম করছে মেয়েটা!তিনি ভাবলেন যতই কথা দিয়ে থাকেন না কেন মেঘলার সাথে এ ব্যাপারে কথা না বলে এগোবেন না।এখন শুরু পরিক্ষা শেষ হওয়ার অপেক্ষা করতে হবে।

মেঘলা মাকে আনমনা হয়ে বসে থাকতে দেখে বললো,কি এতো ভাবছো, আম্মা?ডাক্তার কিন্তু তোমায় চিন্তা করতে মানা করেছে।

ডাক্তার তো কত কথাই বলে।ওসব কথা আমাদের জন্য না।

তুমি নিশ্চয়ই আমায় নিয়ে ভাবছো, তাই না?

তোকে নিয়েই তো ভাববো।

আমাকে নিয়ে এতো ভাবতে হবে না তেমায়।আল্লাহ যা করবেন ভালোর জন্যই করবেন।আমার হাতে তো কিছু নেই আম্মা।

জানি রে মা।কিন্তু চেষ্টাটা তো করতে হয়।সেই চেষ্টাটাই তো করার সামর্থ্য নেই আমার।

উফফ! আম্মা সবসময় আমার বিয়ে ছাড়া আর কোনো ভাবনা নেই তোমার? আমি এখনি বিয়ে করবো না আর তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাব না।

পাগলি, মেয়ে হয়ে জন্মেছিস বিয়ে তো করতেই হবে!

তোমার যুগে সেসব হতো।এখন বিয়ে না করলেও চলে।নিজের পায়ে দাঁড়াই আগে আম্মা।এখন কেউ কারও ভার বহন করতে চায় না সে যতই আপন হোক না কেন!
অন্যের ওপর নির্ভশীল হয়ে চলা যে কতটা যন্ত্রণার তা কি বোঝো না?

বুঝি তো কিন্তু সমাজ যে মেয়েদের একা থাকতে দেয় না রে মা।

সমাজ কি আমাদের দুবেলা খাবার এনে দেয়?

পাগলি আরও বড় হ ,বুঝবি।

আমি এতো বুঝতে চাই না আম্মা।তুমি এসব কথা আর বলবে না।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here