জোনাকিরা ভীড় করেছে part 2

0
690

#জোনাকিরা ভীড় করেছে
#পর্ব-২

মেঘলা কিছুটা ভয়,কিছুটা অসস্তি নিয়ে আমরিনদের বাসায় ঢুকলো। ছিমছাম,সুন্দর গোছানো বাসা।ভেতরে ঢোকার পর মনে হলো, ইশ!কেন যে সে পরনের জামাটা পাল্টে আসলো না,শুধু ওরনাটাই ভালো পরে এসেছে।ড্রয়িংরুমে ঢুকে দেখতে পেল,একজন পৌঢ়া মহিলা বসে টিভি দেখছেন।হয়ত আমরিনের মা হবে!মেঘলা কাছে এসে সালাম দিলো।

নাহার বেগম চমকে তাকিয়ে মেঘলাকে দেখলেন।সালামের জবাব দিয়ে বললেন, তোমায় তো চিনলাম না, মা?

আন্টি, আমি মেঘলা। এই পাড়াতেই থাকি।আমরিন ডেকেছিল আমায়।

ওহ, আচ্ছা, দাঁড়াও আমি আমরিনকে ডেকে দিচ্ছি।
কিন্তু আমরিনকে ডাকতে হলো না তার আগেই সে দৌড়ে এসে মেঘলাকে জড়িয়ে ধরলো।

৫.
আদিব ঘরে ঢুকে দেখলো তার লাইব্রেরী ঘরের দরজাটা খোলা।তার ঘরের ভেতরে লাগোয়া ছোট ঘরটায় সে সমস্ত বই গুলো সাজিয়ে একটা ছোটো, খাটো লাইব্রেরী তৈরী করেছে।বাসার কারো এই ঘরে ঢোকার অনুমতি নেই।ধুলো ঝাড়া মোছা সব সে নিজেই করে।দরজা খোলা দেখে অবাক হলো কারণ, সকালে সে বের হওয়ার সময় দরজাটা বন্ধ করেছিল। তাহলে খুললো কে?আদিব দরজাটা বন্ধ করতে এগিয়ে গেল কিন্তু বন্ধ করতে পারলো না।একরাশ বিষ্ময় নিয়ে থমকে দাঁড়ালো। চোখের ভ্রম হচ্ছে নাকি?একি দেখছে সে?মেঘলাকে কেন দেখতে পাচ্ছে?তার লাইব্রেরী ঘরে মেঘলা আসবে কি করে?সব প্রশ্ন গুলো তার মাথার মধ্যে বারি দিচ্ছে। গলা শুকিয়ে আসলো আদিবের।সারাঘরে পানির সন্ধান করলো, কিন্তু পেল না।সে আবার তাকালো লাইব্রেরী ঘরের দিকে।নাহ্,এখন তো মেঘলাকে দেখতে পাচ্ছে না।তাহলে সত্যি সে ভুল দেখেছে।মাথা গেছে তার মেঘলার ভাবনায়।আজকাল কি তার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে!

ঘর থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরে এসে পানি খেলো।আমরিন নুডলস রান্না করছিল।ভাইয়ের অবস্থা দেখে লুকিয়ে হাসলো।আদিব ড্রয়িংরুমের সোফায় এসে বসলো।কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে রইলো।কল্পনা গুলো যেন জট পাকিয়ে যাচ্ছে। এক কাপ কফি খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতেই উঠে দাঁড়ালো।আবার রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো।ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে থমকে গেল।সে আবার মেঘলাকে দেখতে পাচ্ছে!শুধু তাই নয়,সে আমরিনকেও দেখতে পাচ্ছে। মেঘলার সাথে গল্প করছে আর হাসিতে গড়িয়ে পরছে।এর মানে সব কল্পনা নয় বরং বাস্তব।মেঘলা সত্যি তাদের বাড়িতে এসেছে!আদিবের হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে গেল । রান্নাঘরে এগোনোর শক্তিটুকুও যেন পাচ্ছে না।বুকের ভেতর যেন ভারী বর্ষন শুরু হলো।

আমরিন ভাইকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,”ভাইয়া তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

“আ-আমি কফি বানাতে এসেছি। ”

“ভাইয়া, তোমার আজও কফি খেতে হবে!তোমার না পেট খারাপ,সকাল থেকে টয়লেটে যাচ্ছো, বারবার। গরম কফি খেলে আরও বেশি হবে।পাতলা পায়খানা হলে পেট ঠান্ডা রাখতে হয়।আমারিন ঝটপট কথা গুলো বলে ফেললো।”

আদিবের মাথায় যেন বজ্রপাত হলো।স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এভাবে আমরিন তাকে মেঘলার সামনে অপদস্ত করবে তাও আবার সর্ম্পূন মিথ্যা বলে তা কল্পনাও করতে পারেনি। কখন পেট খারাপ হলো তার?এই পঁচিশ বছরের জীবনে একবারও পেট খারাপ হয়নি তার!অথচ আমরিন কি অবলীলায় সুন্দর মতো মিথ্যা বলে গেল।নিজের মায়ের পেটের বোন হয়ে তার মান সম্মান এভাবে নষ্ট করে দিলো!অন্য সময় হলে আদিব দু’সেকেণ্ডের মধ্যে রেগে ফেটে পরতো।অথচ আজ রাগ তো দূরের কথা, কথাই বলতে পারছে না।

আমরিন অনেক কষ্টে হাসি চেপে বললো,”এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে ঘরে গিয়ে বিশ্রাম করো।আমি তোমায় স্যালাইন বানিয়ে দিচ্ছি। ”

আদিব ভাষাহীন হয়ে পরলো।আমরিনের কাছে নাস্তানাবুদ হচ্ছে নীরবে। তার মনে হলো মেঘলা তার দিকে তাকিয়ে আছে।আমরিনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাকিয়ে দেখলো, ঠিকি মেঘলা করুন চোখে চেয়ে আছে।সেই দৃষ্টি দেখে আদিবের মনে হলো সে আসলেই ডাইরিয়ার রোগী!

৬.
আম্মা তুমি খাইছো?

মেঘলার কথায় মালিহা বেগম মেয়ের দিকে তাকালেন।মেয়েটার মুখটা দেখলেই শান্তিতে মনটা ভরে যায়,আবার দুশ্চিন্তাও হয়।রাতে ঘুমাতে পারেন না।মা হয়ে সন্তানের দায়িত্ব পালন করতে পারেন নি।উল্টো, মেয়েটা এই অল্প বয়সে কতগুলো দায়িত্ব পালন করছে।মেয়েটা ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। বিয়ের সময় হয়ে আসছে।নিজে তো সঠিক পাত্রের খোঁজ করতে পারবেন না,সবটাই ভাই ভাবীর হাতে ছেড়ে দিতে হবে।তারা কতটুকুই বা ভালো চাইবে মেয়েটার?সারাদিন শুয়ে থাকলেও সবটা বুঝেন তিনি।মেয়েটার সাথে মোমেনা বেগম যে খুব ভালো ব্যবহার করে না তা আর অজানা নয়।সংসারে বেশিরভাগ কাজই তো মেঘলাকে করতে হয়।আজ ওর বাবা বেঁচে থাকলে এইদিন আসতো না তাদের।মেয়েকে মাথায় তুলে রাখতেন। আর, ছেলেটাকে নিয়ে ভাবতে গেলে কূল কিনারা খুঁজে পান না।কি করবেন প্রতিবন্ধী ছেলেটাকে নিয়ে?

মাকে চুপ করে থাকতে দেখে মেঘলা বললো,”ও আম্মা,এত কি ভাবো?”

“তুই কলেজ যাবি না?”

“যাবো তো।ভাইকে খাইয়ে দিয়েছি।তুমি ওকে দুপুরে ঘুম পারিয়ে দিও।”

“হ্যাঁ রে মা,ফর্মফিলাপের টাকা জমা দিয়েছিস?”

“নাহ্, তোর্সার মা বেতনটা দিলেও নাবার মা এখনো দেয়নি।দুদিন পর দেবে বলেছে।তুমি চিন্তা করো না আম্মা,এখনো অনেক সময় আছে।”

“তোর মামিকে বলে দ্যাখ তো, যদি দেয়?”

“মামি যে টাকাটা দেবে সেটা দিয়ে তোমার ডাক্তার দেখাবো,ঔষধ কিনবো।এতো ভাবো না তো।আমি যাই তৈরী হই।”

মেঘলা, মায়ের পাশ থেকে উঠে দাঁড়ালো।কলেজ যেতে হবে।একবার লতার বাড়িতেও যেতে হবে।টিউশনির টাকায় ফর্মফিলাপ হবে না।হাজারখানেক টাকা বেশি লাগবে।ধার করা ছাড়া অন্য উপায় নাই।আম্মাকে এ কথা জানানো যাবে না।চিন্তা করে শরীর খারাপ করে ফেলবে।

আমরিন গত দুদিন যাবত আদিবের থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সুযোগ পেলে আদিব তাকে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবে।আদিব থাকলে সে নাহার বেগমের সাথে থাকে।এখন সে পড়াশোনায় মনোযোগী হয়েছে।সামনেই বোর্ড এক্সাম। রেজাল্ট খারাপ করলে মা আর ভাইয়া মিলে তার অবস্থা খারাপ করবে।
পাখি এক গ্লাস পানি এনে আমরিনের সামনে রাখলো।

আমরিন অবাক হয়ে বললো,”আমি তো পানি চাইনি!”

“না মানে আপা,আনাফ ভাই আইছে। তারে ঠান্ডা পানি দিতে গিয়া মনে হইলো আইন্নেরও এক গ্লাস পানি দেই।পড়ালেহা করতাছেন মাথা গরম হইয়া যায়।”

আনাফ আসার কথা শুনে আমরিন একটু চমকালো।পাখির আনা পানিটুকু পুরোটা এক ঢোকে শেষ করলো।

পাখি হায়,হায় করে উঠলো,”এইডা কি করলেন আপা?হুজুর সাব কইছিল ডাইন দিকে মুখ কইরা বিসমিল্লাহ কইয়া খাইতে হইবো।”

“এসব কি বলছো পাখি,আমি তো কিছুই বুঝতেছি না?”

পাখি জিহ্বায় কামড় দিলো।ধরা পড়ে গেছে এমন ভাব করে বললো,”আপা পানি পড়া খাইলে বদ জ্বীনে আইন্নের সাথে কুনু খারাপ কাম করবার পারবো না!”

আমরিন বিষ্ময়ে হা হয়ে গেল।একটুপর বললে,”তোমার মনে হয়েছে আমায় জ্বীনে ধরেছে?”

“হ আপা,আইন্নের লক্ষণ গুলা দেইখ্যা আমার মনে হইছে।”

পাখির কথায় আমরিন হাসতে,হাসতে গড়াগড়ি করলো।কোনোমতে হাসি থামিয়ে বললো,”তুমি ঠিক বুঝেছ পাখি।সত্যি আমায় জ্বীনে ধরেছে।জ্বীনটা আসলেই বদজাত, কিছুতেই আমার বশে আসতে চায় না।তোমার হুজুরের কাছ থেকে আমায় পানি পড়া এনে দিও তো, আমি জ্বীনটাকে খাওয়াবো।”

পাখি চোখ বড়,বড় করে আমরিনের কথা শুনলো।আঁতকে উঠে দ্রুত বেরিয়ে গেল।আমরিন পড়ায় মনোযোগ দিলো।কিন্তু অবাধ্য মনটা ঘরের বাইরে ছুটে যেতে চাইছে।এক পলক দেখতে চাইছে।কিন্তু সে যাবে না,কিছুতেই না।আগে বড় হবে, তারপর।মনটাকে কষে ধমক দিয়ে পড়তে শুরু করলো।

আনাফ ঘরে ঢুকে আমরিনকে গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়তে দেখে বাঁকা হাসলো।কাছে গিয়ে আমরিনের মাথায় টোকা দিয়ে বললো,”ব্যাপার কি,খুকি আজ এতে পড়ছে কেন?”

আমরিন মাথা তুলে তাকালো না।ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।খুকি ডাকটা শুনলেই জোরে কেঁদে দিতে ইচ্ছে করে।বইয়ের উপর সর্ম্পূণ দৃষ্টি রেখে বললো,”আনাফ ভাই আমি এখন পড়ছি, তুমি ভাইয়ার ঘরে যাও।”

“বাপরে খুকি দেখছি বড়দের মতো কথা বলছে!”

“আমি বড় তাই বলেছি,খুকি হলে তো বলতে পারতাম না।খুব শক্ত গলায় বললো আমরিন।”

আনাফ ঘর কাঁপিয়ে হাসা শুরু করলো আমরিনের কথায়।আনাফের হাসির প্রতিটা ধ্বনি আমরিনের বুকে তীরের ফলার মতো বিঁধছে।

৭.

“তুমি থেকো পৃথিবীর একপ্রান্তে,
আমি থাকবো অন্যপ্রান্তে।
না হোক কথা,না হোক দেখা,
শুধু অনুভূতিরা থাকুক বেশ।”

মেঘলাকে দেখলেই আদিবের মনে কথা গুলো বাজে।মেঘলার মনে কালো মেঘ জমে থাকুক তা চায় না সে।মেঘলার মন জুড়ে শুধু থাকুক শুভ্র মেঘেদের ছোটাছুটি। রোদ উঠুক,বৃষ্টি নামুক, না হোক শুধু ঝড়।আদিব আজ মেঘলার কলেজের কাছে আসলেও ছুটি পর্যন্ত থাকবে না।তাকে কমলাপুর রেলস্টেশনে যেতে হবে।বাবা,মা ট্রেনেই ফিরছে।কাজ সেড়ে মেঘলার কলেজ থেকে বেরিয়ে এলো সে।বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেল।ছুটির পর মেঘলা বের হলো বেশ চিন্তিত হয়ে।তার ফর্মফিলাপের টাকা জমা হয়েছে।অফিস থেকে তাকে সইয়ের জন্য ডেকেছে।মেঘলা অবাক হয়েছে, কারণ সে এখনো টাকা দেয়নি।কেরানীকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো তার বাড়ির লোক দিয়েছে।অথচ মেঘলা বেশ ভালো করেই জানে বাড়ির কেউ দেয়ার মতো নেই।মেঘলা চিন্তিত মনে হাঁটছে।হঠাৎ তার সামনে এসে বাইকটা থেমে গেল।ভয়ে কেঁপে উঠলেও বাইকে বসা মানুষটাকে দেখে হেসে বললো,”আপনি এখানে?”

“একটা কাজে এসেছি।বাড়ি যাবে নিশ্চয়ই? ”

“হ্যাঁ।”

“বাইকে ওঠো।”

“না,না আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।আমি রিকশা নেব। ”

“আমিও যাব তোমার সাথে, খালাকে দেখতে।মা অনেক দিন থেকে বলছে আমার সময় হয়ে ওঠেনি।তাই বলছি, উঠে বসো।”

মেঘলা এরপর আর কিছু বলতে পারলো না।উঠে বসলো।বসার পর কেমন যেন লাগলো।নিজের অজান্তেই আশে,পাশে তাকালো কয়েকবার।

আদিব বাবা মাকে ভেতরে পাঠিয়ে ব্যাগ গুলো সিএনজি থেকে নিতে এসে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ালো। তার চোখের সামন দিয়ে বাইকটা চলে গেল।সাথে, সাথে আদিবের রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।বুকের ভেতর ওই বাইকের গতির থেকে দ্রুত বেগে রক্তক্ষরণ শুরু হলো।ক্ষু্দ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো খোলা রাস্তাটার পানে।

ভালোবাসা কি শুধু পোড়াতে জানে,দগ্ধ করতেই জানে?নিজেকে নিঃস্ব করে ভালোবাসতে নেই, কারণ বিনিময়ে শুধু কষ্টই পাওয়া যায়।আদিব তার ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে। জ্বলজ্বল করছে মেঘলার ছবিটা।মেঘলা দুহাত ভর্তি কাপড় নিয়ে তাকিয়ে আছে মাথার উপর টানানো দড়িটার দিকে।আদিব কয়েকমাস আগে এই ছবিটা লুকিয়ে তুলেছে।মেঘলাদের বাসার পেছনে অনেকটা খোলা জায়গা আছে, আদিব সেখানে ক্রিকেট খেলতে যায়।মেঘলা রোদে দেয়া কাপড় গুলো তুলছে এসেছিল।বিকেলের মাখনের নরম রোদ মেঘলার আদুরে মুখে পড়েছিল।একটু দূর থেকে আদিব ছবিটা তুলে নিয়েছিল সেদিন। গভীর রাতে কতশত কথা বলে সে এই ছবিটার সাথে।আজও সে মেঘলার ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। তবে সে দৃষ্টিতে আজ রাগ,ক্ষোভ, অভিমান প্রকাশ পাচ্ছে। আদিবের মনে হলো ছবির ওই টানানো দড়িটা যদি সে হতো, তবে মেঘলাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখতো!কখনো ছেড়ে দিতো না।

পাখি হাঁপাতে, হাঁপাতে এসে বললো,”ভাইজান জলদি আহেন।”

পাখির চিৎকারে আদিব চমকে উঠলো। ধমক দিয়ে বললো,”কি হয়েছে? ”

“আম্মা আর খালুজানের ব্যাপক ঝগড়া হইতাছে। নাহার খালা থামাইতে পারে নাই,আইন্নে আহেন।”

“বাজে কথা বলিস কেন,বাবাকে দেখেছিস কখনো ঝগড়া করতে?ঝগড়া হলেও আমায় যেতে হবে না,তুই বুঝবি না।”

“হ, আইন্নে তো আর জানেন না? খালুজানও কম যায় না।ফুট কইরা একখ্যান কতা কইয়া চুপ কইরা বইসা থাহে।আর আম্মায় হেই কথার জন্য কান্দে, আইন্নে তাড়াতাড়ি আহেন।”

আদিব বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো। বাবার ঘরে ঢুকে দেখলো,পরিস্থিতি খারাপ।দিলারা বেগম ব্যাগের সবকিছু গুছিয়ে রাখারা বদলে সারাঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে।মায়ের এমন কান্ডে হাসি পেল তার।

আনোয়ার চৌধুরী ঘরের এক কোণে গম্ভীর মুখে বসে আছেন।

বাবা তোমরা বিশ্রাম না করে কি শুরু করলে বলোতো।

আমায় দোষ দিচ্ছিস কেন?তোর মাকে বল এসব কথা।

দিলারা বেগম ফোপাঁতে, ফোপাঁতে বললেন,তোর বাবা এই বুড়ো বয়সে তোদের জন্য সৎ মা আর আমার জন্য সতিন আনার পরিকল্পনা করেছে!

মায়ের কথায় আদিব হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।আনোয়ার সাহেব চেঁচিয়ে উঠে বললেন,একদম বাজে কথা বলবে না ছেলের কাছে!

কেন বলবো না?তোমার তো ফেরার পর থেকে কিছুই ভালো লাগছে না।

বাড়িয়ে কথা বলবে না তুমি।আমি শুধু বলেছি সমুদ্রের কাছে থেকে এসে এই পরিবেশ আর ভালো লাগছে না।আর তুমি সেই কথার অন্য মানে বের করে ফেলছো!

ওহ আচ্ছা। তাহলে তুমি শায়লা আপাকে নিয়ম করে গুড মর্নিং, গুড নাইট, হ্যাভ এ নাইস ডে এসব কেন বলতে?

এসব সৌজন্যতা করে বলতে হয়, সেটা তুমি জানো না?

শায়লা নামের মহিলা আনোয়ার সাহেবের কলিগের স্ত্রী। খুব গায়ে পড়া স্বভাব।ওই মহিলাকে যে মা পছন্দ করে না তা জানে আদিব।
বাবা,শায়লা আন্টি আর জাফর আঙ্কেল ও তোমাদের সাথে গিয়েছিল?

নাহ্,ওরা আমাদের একদিন আগেই গিয়েছিল।আমি তো জানতাম না।আমাদের হোটেলেই উঠেছিল ওরাও।আর তোর মা কিসব ভাবছে!

আমি ঠিক ভাবছি।আদিব তোর বাপকে বলে দে আমায় না রাগাতে, তাহলে কিন্তু আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।

আদিব মুচকি হেসে বাবার দিকে তাকালো।আনেয়ার সাহেব অসহায় মুখ করে চেয়ে আছেন স্ত্রীর দিকে।দিলারাকে ছাড়া তিনি থাকতে পারেন না।এই দূর্বলতা যেদিন থেকে প্রকাশ করেছিলেন সেদিন থেকে স্ত্রীর এমন চলে যাওয়ার হুমকি শুনতে হচ্ছে।

বাবা,মায়ের এমন খুনসুটি, ঝগড়া দেখলে আদিবের মনে হয় পৃথিবীট আসলেই সুন্দর!

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here