#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Rini (Irini Ori)
#পর্ব:৬৬
(২২৩)
ব্রেকফাস্ট টেবিলে সবাই বসে ইফাজ আর তারার জন্য অপেক্ষা করছে।ইয়ারাবী ইনি-মিনি, চেলসির খাবার দিয়ে আবরারের পাশে এসে বসতেই রোজ হেসে আবরারকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“শুনেছো তোমার বৌয়ের কথা?জমজ খাবার খেলে বলে জমজ বাচ্চা হয়।ভবিষ্যৎ ডাক্তার যদি এসব বলে তাহলে রোগী কী করবে?”
টেবিলের সবাই কথাটা শুনে হেসে উঠে,ইয়ারাবী গাল ফুলিয়ে বলে,
-“ভাবী ভালো হচ্ছেনা কিন্তু।তাছাড়া দোলা নানী বলেছিলো তাই আমিও খাবো।আপুও খেতো বুঝলে।তাছাড়া আমি পাগল নই রোগীকে এসব বলবো।”
-“আচ্ছা বাবা স্যরি ননদিনী,মাফ করে দাও।”
-“হুম।”
ইয়ারাবী জুসের গ্লাসে জুস ঢালছে তখনি ওর চোখ নিলয়ের দিকে যেতেই দেখে ছেলেটা চেয়ারে বসে বসে ঝিমাচ্ছে।ইয়ারাবী অল্প একটু জুসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে নিলয়কে উদ্দেশ্যে করে বলে,
-“কী ব্যাপার নীলুমনি,কাল রাতে কী চুরি করতে গেছিলি যে এখন ঝিমাচ্ছিস?”
নীলু নামটা শুনেই নিলয়ের ঘুম ছুটে গেছে,ও তাড়াতাড়ি চোখ দু’টো ডলা দিয়ে বিরক্ত নিয়ে ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ওহ্হ্ আপু,নিলয় থেকে নিল বলো তাতে কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু তাই বলে নীলু,দেখ এই মেয়েদের নামে ডাকবেনা আমাকে।তোমাকে কতবার বলেছি।”
ইয়ারাবী ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
-“আমি আমার ভাইকে ডাকবো,এখানে তোর কী সমস্যা সেটা বুঝলাম না?”
-“আপু তুমি কিন্তু দুষ্টু হয়ে যাচ্ছো দিন দিন।”
-“কী বললি?”
নিলয় ওর কথা শুনে মুখে হাসি দিয়ে বলে,
-“না মানে বলছিলাম,তুমি কত ভালো।”
-“আমি জানি আমি ভালো,।একটা কথা বলতো, শুভ বাসায় কেন চলে গেল?থাকতে বললাম থাকলোনা।তোরা তো দুই জন একসাথেই থাকিস,কাল কী হয়েছিলো?”
-“আরে আপু তেমন কিছু নয়,একটু ঝামেলা হয়েছে ঠিক হয়ে যাবে।”
-“এমন কী ঝামেলা করিস তোরা?”
-“বাদ দাও তো আপু,আচ্ছা একটা কথা বলবো তোমাকে?”
-“হ্যাঁ,বল।”
-“তুমি কী জানো জারিকা আপু কোথায়?”
কথাটা শুনার সাথে সাথে ইয়ারাবীর মুখে হাসি চলে যায়,কেমন একটা অস্বস্তিবোধ করে যেটা নিলয়ের চোখ এড়িয়ে যায়।ও কোনো মতে চেহারায় রাগী ভাব ফুটিয়ে তুলে বলে,
-“তোরা তিন বছরে কোনো খবর পাসনি সেখানে লন্ডনে বসে আমি কীভাবে পাবো?তাছাড়া জারিকা আপুর সাথে আমার সম্পর্ক কেমন সেটা তোরা ভালোই জানিস।”
-“আহ্হ্ রাগ করছো কেন?ওইতো ভাইয়া-ভাবী চলে এসেছে,এখন রাগটা কমাও।”
তারা এসেই ইয়ারাবীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“শুভ সকাল পুতুল।”
-“শুভ সকাল,বাহ্ অনেক খুশি লাগছে।কেমন কাঁটলো তোমার?”
-“চুপ ফাজিল,আমি কিন্তু তোর বড়।”
-“এখানে তো একজন বাদে সবগুলোই আমার বড়।”
রোজ তারাকে ইফাজের পাশে জোর করে বসিয়ে দেয়।মি.রহমান তারার দিকে তাকিয়ে হেসে বলেন,
-“মা তারা,তোমার কোনো অসুবিধা হচ্ছেনা তো এই বাড়িতে।”
কথাটা শুনে তারা একবার ইফাজের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে,
-“না বাবা,আমি ঠিক আছি।”
-“খুব ভালো,এটাকে সব সময় নিজের বাড়ি মনে করবে।আমি তো বেশি থাকিনা বাসায়,তোমার কখন কোনো কিছুর প্রয়োজন বা অসুবিধা হলে তোমার ভাবী,ইমনকে বলবে।তাছাড়া ইফাজ তো আছেই তোমাকে দেখে রাখার জন্য।”
-“ঠিকই বলেছেন বাবা,সত্য বলতে উনার মতো মানুষ হয়না।”
ইয়ারাবী কথাটা শুনে বোনের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
-“বলেছিলাম না,আমার ভাইয়া সবার থেকে বেস্ট।”
প্রতিত্তুরে তারা শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে,ইফাজের আসল রুপটা যে কেমন সেটা ও কাল রাতেই জেনেছে।মানুষ কতটা অদ্ভুত!ঘরে এক তো বাইরে আরেক,ইফাজকে দেখে এখন বোঝায় যাচ্ছেনা রাতে কিছু ঘটেছে।যদি সত্যটা ইয়ারাবী জানতো তবে কখনও বলতোনা আমার ভাইয়া বেস্ট।ইয়ারাবী ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“মেজো ভাইয়া দিয়েছিলে তুমি?”
-“উহু,মনে ছিলোনা।ব্রেকফাস্টের পর দিয়ে দিবো।”
-“মনে থাকে যেন,বৌকে রাতেই গিফ্ট দিতে হয় এটাও জানোনা।”
-“স্যরি পিচ্ছি,কাবার্ডে রেখেছিলাম বের করতে মনে নেই।আচ্ছা বসে কেন আছো?শুরু করো সবাই।”
রোজ সবাইকে খাবার বেড়ে দিতে থাকে,তারা সাহায্য করতে চাইলে মানা করে দেয়।সবাই খাবার খাওয়া শুরু করে দিয়েছে,রোজ এটা-ওটা এগিয়ে দিচ্ছে।কিন্তু ইয়ারাবী পোলাও ভাতে হাত দিয়ে একমনে নাড়াচাড়া করে যাচ্ছে,মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে খাওয়া জিনিসটা সবচেয়ে বিরক্তির বিষয় ওর নিকট।রোজ ডিমের কোর্মা ওর প্লেটে দিয়ে বলে,
-“ননদিনী খাওয়া শুরু করো।এভাবে বসে থাকলে গুলুমুলু হতে পারবেনা সোনা।”
-“আমাকে কী মারার প্লান করছো ভাবী?”
-“ছিঃ ছিঃ এসব কী বলছো?তুমি আমার বোনের মতো।”
ইয়ারাবী করুন চোখে রোজের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“জানো যেদিন থেকে প্রেগন্যান্ট হয়েছি ডিম,দুধ, মাছ,মাংস কিছুই খেতে পারিনা।”
-“এসব না খেলে কীভাবে শরীর ঠিক থাকবে বলো?এই সময় সবারই একটু সমস্যা হয় তবে মানিয়ে নিতে হয়।”
তারা ইয়ারাবী মাথায় হাত রেখে বলে,
-“পুতুল আমি কিছু করে দিবো তোকে,তুই শুধু বল কী খাবি?”
-“স্টারপু খেতে চাইছি কিন্তু পারছিনা তো।”
আবরার নিজের প্লেটটা সরিয়ে ইয়ারাবীর প্লেটটা হাতে নিয়ে একটা রোস্ট নিয়ে লেবু দিয়ে ভাত মাখাতে মাখাতে তারার দিকে তাকিয়ে বলো,
-“তারা তোমার কিছুই করতে হবেনা,ও এটাই খাবে।ইয়ু কাল রাতেও কিছু খেতে পারোনি,অল্প একটু হলেও খেতে হবে তোমার।”
-“প্লীজ আবরার জোর করবেন না,জানেন তো খেলে ভোমিট হয়।”
-“বেশি নয় অল্প খাও,তোমার মাধ্যমেই তো বেবীদের খাবার পৌঁছায়।তুমি না খেলে ওরাও না খেয়ে থাকবে।তুমি কী চাও বেবীরা না খেয়ে থাকুক।”
ইয়ারাবী বেবীদের কথা শুনে আর না করলোনা।কারণ এই বেবীগুলো যে ওর অনেক সাধনার ফল।এদের জন্য ও হাজার কষ্ট সহ্য করতে পারে।তাই ও চুপচাপ অনেক কষ্টে এক প্লেট ভাত খেয়ে উঠে পরে।আবরার আর বেশি কিছু বলেনা,আজ একটু হলেও খেয়েছে।মি.রহমান আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“বাসায় তো মনে হয় একা থাকে মেয়েটা।”
-“না আঙ্কেল,সারাদিন বাসাতে এনা থাকে।তাছাড়া মিয়ো নামের আরেকটা মেয়েকে রেখেছি।যখন মেডিকেলে যায় তখন একটু ভয় লাগে,ও তো বেশি কারোর সাথে মিশেনা।”
-“এই সময় একা রাখাটাও ঠিক না।”
-“মম্ বলেছে উনি আমাদের সাথে যাবে।তাছাড়া বড় ফুপিরা লন্ডনে চলে এসেছে আগামী মাসে।বাড়িতে ফিরে আর কোনো চিন্তা থাকবেনা।”
খাবার টেবিলে সবাই টুকটাক এটা-সেটা নিয়ে কথা বলে।সবার খাওয়া হয়ে গেলে রোজ তারাকে রুমে নিয়ে যায়,কিছুক্ষণের মধ্যে পার্লার থেকে লোক এসে তারাকে সাজাতে থাকে।আস্তে আস্তে বাড়িতে অাত্মীয়-স্বজনরা আসতে শুরু করে।এদিকে ইয়ারাবী মিনিকে কোলে নিয়ে ঘরে এসে দেখে আবরার অায়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে।মিনি ইয়ারাবীর কোল থেকে লাফ দিয়ে নেমে আবরারের পায়ের কাছে যেয়ে ঘুরঘুর করে শব্দ করতে থাকে।আবরার চুলটা সেট করে মিনির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এখন কোলে নিতে পারবোনা,ব্লাক স্যুটে তোমার পশম লেগে যাবে।”
মিনি কথাটা শুনে অনেকটা মায়াবী চোখ নিয়ে ওর দিকে তাকাতেই আবরার হেসে নিচের দিকে ঝুঁকে ওকে আদর করে দেয়।তবে মিনি তো নাছোড়বান্দা,ওর কোলে উঠেই ছাড়বে।ইয়ারাবী বিষয়টা বুঝতে পেরে মিনিকে কোলে নেওয়ার জন্য যে ঝুঁকতে যাবে তখনি আবরার ধমক দিয়ে বলে,
-“এই কী করছো?”
-“ক..কই কী করলাম।”
-“তোমার সাহস কী করে হলো নিচে ঝুঁকার।আমি বলেছিনা এই অবস্থায় কখনো নিচে বসবেনা।”
-“এতো হাইপার হওয়ার কী আছে?কেবল তিন মাস আর…”
আবরার মিনিকে দুই হাত দিয়ে উঁচু করে ইয়ারাবীর কোলে দিয়ে বলে,
-“ডাক্তার আমি,তুমি নও।”
-“আর কয়েক বছর পর আমিও হবো।”
-“জানি,ওকে বিছানায় রেখে রেডি হয়ে নও।”
ইয়ারাবী ওকে রেখে কাবার্ড থেকে একটা ড্রেস বের করে ওয়াশরুমে যেয়ে চেন্জ করে আসে।গাউনটা সাদা-কালোর মিশ্রণে তৈরি জর্জেটের,লং হাতা, গলার ডিজাইনটাও অনেক সুন্দর।ইয়ারাবী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলটা আচড়িয়ে হিসাব বাঁধবে ঠিক এমন সময় আবরার ফোন থেকে চোখ সরিয়ে এগিয়ে আসে ওর দিকে।ইয়ারাবী মুচকি হেসে কিছু বলতে যাবে ঠিক তার আগেই আবরার ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে পেটের উপর হাত রেখে বলে,
-“অপূর্ব লাগছে তোমাকে।আর তোমার এই ছোট জায়গায় আমার রাজকুমারী আসাতে আর বেশি মায়াবী লাগছে।”
-“কী করছেন,ছাড়ুন তো।আবরার বাসা ভর্তি আত্মীয়,কেউ এসে যাবে।”
-“উহু কেউ আসবেনা।কারণ তোমার ঘরে অনুমতি ব্যতিত কারোর আসা পছন্দ করোনা,এটা সবাই জানে।জানো আজ আবার আমাদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকীতে ফিরে যেতে ইচ্ছা করছে।তোমার মনে আছে সেদিন তুমি সাদা-কালো শাড়ি পরেছিলে।”
-“মনে থাকবেনা কেন?আপনি এনেছিলেন, বরাবরই আপনার পছন্দের তুলনা হয়না।আর সারপ্রাইজটাও অনেক সুন্দর ছিলো।”
-“তুমি ছোট ছোট জিনিসেই খুশি হয়ে যাও।”
ইয়ারাবী ওর কথায় হেসে ফেলে ওর হাতের উপর হাত রেখে বলে,
-“ছোট ছোট উপহারের মধ্যে যে ভালোবাসা লুকিয়ে আছে,আর আপনি আমার জন্য যা করেছেন সেটা আজ পর্যন্ত কেউ করেনি।জানেন,জীবনে এমন একটা মানুষ চাইতাম যে আমাকে বোঝবে আমি কি চাই?যাকে বলার আগেই বুঝে যাবে আমার কষ্ট,যে আমার হাসির কারণে কখনো বিরক্ত হবেনা।যে আমার একটু হলেও কেয়ার করবে,শাসন করবে,ভুল হলে বকবে।একটা মানুষের সুস্থভাবে বাঁচার জন্য ভালোবাসা খুব প্রয়োজন।যা আপনি আমাকে দিয়েছেন।যখন সবার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যেতাম তখন আল্লাহর কাছে নামায পড়ে দোয়া করতাম আমি যেন একজন নেক,সৎ,আদর্শবান সঙ্গী পায়।একটু হলেও ভালোবাসা পায়।”
আবরার কথাটা শুনে ওর চুলগুলো সরিয়ে কাঁধের উপর মাথা রেখে বলে,
-“তোমার মনে আছে সেই সন্ধ্যার কথা।”
-“জ্বি,থাকবেনা কেন?জীবনের সুন্দর একটা দিন ছিলো।লেকের পাড়ে সন্ধ্যাবেলা চারপাশে মোমের আলোয় অপূর্ব লাগছি।
কথাটা বলতে বলতে ইয়ারাবী অতীতের স্মৃতিতে ফিরে যায়।দিনটি ছিলো সোমবার,বরাবরের মতোই ফজরে উঠে নামায আদায় করে পড়তে বসে ইয়ারাবী।আবরার তার জগিং করতে বাইরে বেড়িয়ে যায়।সাতটার দিকে এনা এসে ব্রেকফাস্ট তৈরি করে দেয়,ইয়ারাবী গুছিয়ে আবরারের জন্য অপেক্ষা করছে।আবরার আটটা নাগাদ বাসায় ফিরে জুস খেয়ে তৈরি হয়ে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে বসে।হঠাৎ ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আজ ক্লাস শেষ হলে আমাকে কল করবে,আমি নিয়ে আসবো।”
-“আপনার ডিউটি নেই?”
-“না,দুইদিন ছুটি নিয়েছি।”
ইয়ারাবীর অনেকটা ইতস্তত হয়ে আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ওহ্,একটা কথা বলতে চাইছিলাম।”
-“বলো।”
-“কাল ফোনটা ভেঙে গেছে,একটা নতুন ফোন কিনে দিবেন আমাকে?”
-“ঠিক আছে,আসার সময় নিয়ে আসবো।”
ব্রেকফাস্ট করে আবরার ওকে মেডিকেলে ড্রপ করে দিয়ে নিজের হাতের কাজগুলো সেরে ফেলে।বাকী পাঁচটা সাধারণ দিনের মতো ইয়ারাবীর দিনটা টায়।বিকাল পাঁচটার দিকে ইয়ারাবী বেলকনিতে বসে ইনিকে খাওয়াচ্ছে ঠিক তখনি আবরার এসে ওর হাতে একটা শপিংব্যাগ দেয়।ইয়ারাবী ইনিকে রেখে ফ্লোর থেকে উঠে ব্যাগটা খুলে দেখে ওর মধ্যে সাদা-কালো রঙের সুন্দর একটা শাড়ি।ও কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই আবরার বলে উঠে,
-“এটা পরে তৈরি হয়ে নাও,আমরা বের হবো।”
কথাটা শুনে ইয়ারাবী তাজ্জব হয়ে যায়,কেননা আবরার বোরখা ছাড়া ওর বাইরে যাওয়া একটুও
পছন্দ করেনা,শুধুমাত্র ক্লাসের সময় ছাড় দেয়।তাহলে আজ হটাৎ শাড়ি পরতে বললো কেন।আবরার হয়তো ওর কথা বুঝতে পেরেছে,তাই কাউচে বসে ফোন ক্রোল করতে করতে বলে,
-“যেখানে যাচ্ছি সেখানে বেশি কেউ নেই।”
ইয়ারাবীর আর কোনো কথা না বাড়িয়ে এনে দেওয়া শাড়ি,হিজাব পড়ে গুছিয়ে নেয়।আজ ইয়ারাবী মনের অজান্তেই চোখে কাজল,ঠোঁটে হালকা লিপিস্টিক ব্যবহার করেছে।আবরার ওর দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বেড়িয়ে পরে।ঘন্টা দুয়েক পর ওরা একটা ছোট লেকের পারে আসে, চার পাশে মানুষ তেমন নেই।লেকের সামনে মোম দিয়ে সুন্দর করে ডেকোরেট করা,সাথে লাইটিং আর বেলুন দিয়ে পাশের লাভ শেইপের বোর্ড সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।যেখানে লিখা আছে “হ্যাপি এনিভার্সারি”,ইয়ারাবী অবাক হয়ে স্বামীর দিকে তাকাতেই মুচকি হাসি দেখতে পায়।আবরার ওর সামনে এগিয়ে পকেট থেকে একটা আংটি বের করে ওর সামনে বসে বলে,
-“কীভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছিনা,হতে পারে তোমার কাছে বিয়ের দুই বছর পরে প্রপোজ করাটা একটা হাস্যকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।কিন্তু কী করবো বলো?মনের কোণে অনেক কথা জমিয়ে রেখে এই কয়েকদিনে।হ্যাঁ,এই দুই বছরে নানা ভাবে নানা সময় ভালোবাসি কথাটা বলেছি।তবে আজ না বলা কথাগুলো বলবো,জানিনা প্রথম দেখায় মানুষ ভালোবাসতে পারে নাকী?আমি নিজেও বিশ্বাসী ছিলাম না এই ব্যাপারে।কিন্তু আমি পেরেছি এবং বিশ্বাস করেছি,তোমার ওই মায়া ভরা চোখে আটকে গেছিলাম প্রথম দিনে।মানুষের ঠোঁটের তিল ঘায়েল করে সেখানে তোমার দু’টি চোখের তিল ঘায়েল করেছিলো আমাকে।তোমার ঠোঁটের মৃদু হাসি যা আমাকে সোজা ঘায়েল করেছিলো এই বুকে।প্রথম দেখায় অকারণেই আমার ভালো লাগার কারণ হয়ে গেছিলে তুমি।যখন মম আমায় প্রশ্ন করলো তোমাকে ভালোবাসি কীনা,আমার উত্তর কী ছিলো জানো?বলেছিলাম,জানিনা।শুধু এটা জানি ওকে চাই জীবনসঙ্গী রুপে।তোমার জিদ,গলা ফুলানো, রাগ-অভিমান,অন্যায়ের প্রতিবাদ করা সবকিছু যেন আমার অস্তিত্বের এক অংশ হয়ে গেছিলো।ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে যাচ্ছি তোমাতে,তুমি যখন কাঁদো নিজের বুকে আঘাত লাগে আর যখন হাসো অকারণে মনটা ভালো লাগে।ইউ হ্যাব আননোইংলি বিকম এ পার্ট অফ লাইফ।ইউ ব্লান্ডেড এভরি মোমেন্ট অফ লাইফ।ইউ হ্যাব মার্জড্ ইন এভরি পেইজ অফ লাইফ।ইউ হ্যাব বিকম দ্যা মিনিং অফ মাই লাইফ।’উইল ইউ মেরি মি’ বলাটা বোকামি,কেননা বিয়েটা আমাদের হয়ে গেছে।তাই একটা কথা আজও বলবো,আই লাভ ইউ।উত্তরটা শুনবো না কারণ আমি জানি তোমার উত্তর কী হবে।ইয়ু,একটা কথাই বলবো, আমাকে কখনো ভুল বুঝে দূরে সরে যেওনা।সময়ের সাথে সাথে মানুষ বদলায়,হতে পারে আমিও বদলে যাবো কিন্তু আমার বিশ্বাস তুমি মানিয়ে নেওয়ার থেকে আমাকে সামলে নিবে।তোমার হাত ধরে বৃষ্টি বিলাশ করতে চাই,তোমার স্বপ্নগুলো পূরণ করতে চাই।কাঁচা-পাঁকা চুলে বুড়াবুড়ি কোনো এক নদীর পাড়ে অতীতের মধুময় স্মৃতি বিচরণ করতে চাই।প্রতিটা মুহুর্তে তোমাকে হারানোর ভয় হও,যে আবরার কোনোদিন মানুষের সামনে কাঁদেনি সেদিন তোমার অপারেশনের সময় প্রথম কেঁদেছিলো।যে আবরার স্ট্রং তাকে তুমি দুর্বল করে দিয়েছ।এক বাচ্চা বৌয়ের জন্য সব হয়েছে।আজ এই আবরার সেই বাচ্চা বৌকে নিজের করে পেতে চাই।হবে কী আজ তুমি আমার?”
ইয়ারাবী কী বলবে বুছতে পারছেনা,ওর বিশ বছর পূর্ণ হয়ে গেলে আবরার বলেছিলো আপন করে নিবে,আর সেটাই চাচ্ছে।ইয়ারাবী লজ্জায় গুটিয়ে নেয় নিজেকে,এটা দেখে আবরার বাঁকা হেসে ওর কেনি আঙ্গুলে একটা আংটি পরিয়ে দিতেই পিছন থেকে কিছু শব্দ আসে।ইয়ারাবী পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখে আবরারের কিছু ফ্রেন্ড দাঁড়িয়ে আছে,আর কিটি নামের মেয়েটা ছোট ক্যামেরা দিয়ে পুরোটা মোমেন্ট রেকর্ড করছে।ও আবরারের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই বলে উঠে,
-“বাঁদরের দল পার্টি চাইছিলো,তাই।”
-“আপনি আমায় আগে কেন বলেননি,আমার তো এসব মনেই ছিলোনা।”
-“জানতাম পরীক্ষার চক্করে আপনার মনে থাকবেনা তাই এই ব্যবস্থা।”
-“ধুর!আমি এবার কিছুই দিতে পারলাম না আপনাকে।”
আবরার দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বলে,
-“কে বলেছে দাওনি?তোমার পুরোটাই তো আমাকে দিয়ে দিলে।”
-“ধুর আপনিও না!”
-“এখনও কিছু করলাম না তাতেই এতো লজ্জা আর করলে তো….”
-“আবরার!”
আবরার ওর রাগ মিশ্রত লজ্জা মাখা চেহারা দেখে হেসে উঠে।ওর বন্ধু ব্রুজ আবরারের পেটে ঘুষি মেরে বলে,
-“প্রপোজটা তো আমাদের ভাষায় করতে পারতে বন্ধু?মাত্র চার-পাঁচটা বাক্য ছাড়া কিছু বুঝতে পারেনি এই অসহায় প্রাণীগুলো।”
-“আমাদের মাতৃভাষাটাই এমন,যা সহজে বোঝা বোধগম্য নয়।তাছাড়া সবার সব কথা বুঝতে নেই।”
-“বলতে চাওনা ভালো,তবে তোমার হাসিতে অন্য কিছুর আভাস।”
-“তুমি আর ভালো হলেনা ব্রুজ।”
রাত অব্দি সবাই লেকের পাড়ে মজা করে,তারপর খাওয়া-দাওয়া করে সবাই চলে গেলেও আবরার আর ইয়ারাবী থেকে যায়।জিনিসটা ইয়ারাবীর কাছে অদ্ভুত লাগে,কেননা রাত এগারোটা বেজে গেছে অথচ জনাবের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।ও বিরক্ত নিয়ে আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“বাসায় যাবেন না?”
-“উহু,”
-“সারারাত এখানে থাকবেন।”
কথা শুনে আবরার মুদ হেসে মাথা ঝাকিয়ে ওকে কোলে তুলে নিয়ে লেকের পাশের এক তালা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।ইয়ারাবী চারপাশে তাকিয়ে দেখে অসংখ্য লাল রঙের বেলুন আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে ভিতরটা।ওর বুঝতে বাকী নেই আবরার আজ কী চাই।লজ্জায় আবরারের বুকে মুখ লুকায়।”
-“ম্যাডাম,কল্পনার জগতে হারিয়ে গেলেন নাকী?”
আবরারের কথার আওয়াজে বর্তমানে ফিরে আসে ইয়ারাবী,তবে কেমন একটা লজ্জা লাগছে।আবরার ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে বলে উঠে,
-“সেদিন রাতটা আমাদের জন্য অনেকটা স্পেশাল ছিলো তাইনা।তোমার মনে আছে…”
-“চুপ করবেন আপনি।”
-“আমিতো শুধু…”
-“আপনি খুব খারাপ।ধুর কথাই বলবোনা।”
(২২৪)
তারাকে বাইরের স্টেজে একটা চেয়ারে বসানো হয়েছে,জলপাই রঙের লেহেঙ্গাতে অনেক সুন্দর ফুঁটে উঠেছে মেয়েটা।নাকের নথটা জ্বলজ্বল করছে,গলার সীতা হাতটাও বেশ মানিয়েছে, চাকচিক্য আর মেকাপের আস্তরণে ঢাকা পরে আছে তারার হৃদয় ভাঙা আহাকার।মেয়ে জীবনটাই বড় অদ্ভুত,যেখানে প্রতিটা মুহুর্তে অভিনয় করে যেতে হয় নিজেকে।নিজের কষ্টকে পাথর চাপা দিয়ে আশেপাশের মানুষের ভালোর কথা চিন্তা করতে হয়।এই রকম মানসিক যন্ত্রণার চেয়ে বড় কোনো যন্ত্রণা আর কিছুই নেই। মানুষ মরে গেলে যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেয়ে যায়,কিন্তু যে বেঁচে থাকে তাকে মানসিক যন্ত্রণায় ভোগ করতে হয়,বেঁচে থাকতে হয় জীবন্ত লাশ হয়ে।ঠিক এমনটাই তারার সাথে হয়েছে।ইফাজের সাথে বিয়ে হয়ে ভেবেছিলো অতীতের কষ্ট সব দূর হয়ে যাবে কিন্তু তা হয়নি,বরং এই একদিনে কষ্টগুলো আরো বেশি দানা বেঁধেছে।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ইফাজের দিকে দৃষ্টি যায় তারার,জলপাই রঙের পাঞ্জাবিতে অনেকটা ফুঁটে উঠেছে সে।কত সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে অাত্মীয়দের সাথে,কিন্তু একটু আগে ঘরে যে ব্যাবহার করলো সেই ইফাজ আর এই ইফাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।কিছুক্ষণ আগে তারার সাজ কম্পিলিট হলে পার্লারের লোকেরা ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।ঠিক তখনি ইফাজ ঘরে ঢুকে পাঞ্জাবির কলার ঠিক করতে করতে বলে,
-“সব কম্পিলিট,ভাবী জানতে চাইছিলো।”
-“জ্বি।”
-“ও,শোনো ফুপু এসে তোমাকে নিয়ে যাবে।আর হ্যাঁ সকালে ঠিক যেমন ব্যবহার করেছো ঠিক সেই রূপ ব্যবহার করবে আত্মীয়দের সাথে।”
তারা নিজের জায়গা থেকে উঠে বলে,
-“কেন ভয় হচ্ছে আপনার?ও আপনি তো আবার বাবা আর ভাইয়াকে ভয় পান।”
-“এসব ফালতু কথা তোমাকে কে বলেছে?”
-“নিজেই চোখেই তো সকালে দেখাল।আচ্ছা যদি ভাইয়াকে সত্যটা জানিয়ে দেয় তবে কেমন হবে?উনি তো আমার ব্যাপারে সবটা জানেন?তাছাড়া ছয় মাস পরে এমনিও ডিভোর্স হয়ে যাবে…”
-“চুপ!একদম চুপ,আর একটা কথা বলবেনা তুমি।যদি বড় ভাইয়া জানে তবে আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা মনে রাখবে।”
ইফাজ কথা বলে ঘর থেকে পা বের করবে ঠিক তখনি পিছন থেকে তারা বলে উঠে,
-“আপনার থেকে খারাপ আর কেউ নেই।আপনি হলেন সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ যে নিজের বৌকে ঘৃণা করে।একটা কথা বলুন তো,আপনি ধর্ষিতাকে ঘৃণা করেন।তাহলে আমি যতদূর জানি,পুতুলকে মলেস্টের চেষ্টা করা হয়েছিলো।তাহলে তো জঘন্য পুরুষের ছোঁয়ায় পুতুলও অপবিত্র হয়ে আছে, জঘন্য মেয়েতে পরিনত হয়েছে।তাহলে ওকেও আপনার ঘৃণা করা উচিত,যেমনটা মামা-মামী করে।তাহলে আপনারা করেন না কেন?”
তারার কথা বলতে দেরি কিন্তু ওর মুখে চড় পরতে দেরি হয়নি।তারা গালে হাত দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে ইফাজ রক্তচক্ষু নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।তারা কিছুটা ভয় পেলেও সাহস নিয়ে বলে উঠে,
-“সত্য বললে গায়ে লাগে,আরে আমার ব্যাপারটা কেউ জানেনা কিন্তু ওরটাতো পুরো গ্রাম জানতো।বুঝলাম না হঠাৎ করে পুরো গ্রামের মানুষ চুপ হয়ে গেলো কেন?নিশ্চয়ই কিছু করেছিলো কেননা খা….”
কথা শেষ হওয়ার আগেই ইফাজ তারাকে দেওয়ালের সাথে ঠেসে গলা চেপে ধরে।তারা ওর থেকে ছুটার জন্য ধস্তাধস্তি করছে কিন্তু হচ্ছেনা।হঠাৎ করে ইফাজ ইমনের গলার স্বর শুনতে পেয়ে ওকে ছেড়ে দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।তারার এখনো গলায় আর মুখে ব্যাথা হয়ে আছে।চেয়ারে বসে বসে ঘরে হওয়া ঘটনার কথাগুলো ভেবে চলেছে।হঠাৎ করে ইয়ারাবী ওর কাছে এসে বলে,
-“স্টারপু,তোমার শরীর কী খারাপ?”
তারা বিরক্ত নিয়ে ইয়ারাবীর দিকে তাকায়, বাকীদের মতো এখন ওর ও ইয়ারাবীকে সহ্য হচ্ছেনা।ওকেই সব কিছুর জন্য অকারনেই দায়ী করছে তারা।মনে হচ্ছে ওকে বকতে পারলে বা মারলে নিজেকে শান্ত করতে পারতো।কিন্তু সেটা সম্ভব নয়,কেননা ওকে কিছু বললে এই পরিবারের কেউ তারাকে ছেড়ে কথা বলবেনা।ওর চুপ থাকা দেখে ইয়ারাবী ওর কাঁধ ঝাকিয়ে বলে,
-“স্টারপু,চুপ করে আছো কেন?”
-“না কিছু হয়নি।”
-“তোমার মন খারাপ,কিছুর উপর বিরক্ত তুমি?”
-“তুই জানিস পুতুল?আমরা মানুষরা খুব অদ্ভুত,না আপন হতে সময় লাগে আর না পর হতে।তাছাড়া একটা মানুষ বেঁচে থাকার জন্য ভালোবাসার প্রয়োজন হয়।আর সেই ভালোবাসা হতে হয় নিস্পাপ, সুন্দর, নিঃশ্বার্ত, ও পবিত্র।”
-“বুঝলাম না কিছু,ভাইয়ার সাথে কিছু হয়েছে।”
-“কিছুই হয়নি,কী হবে?আচ্ছা ইয়ারাবী একটা কথা বলতো?”
-“কী কথা?”
-“তোর শ্বশুড়বাড়ির লোক,স্বামী জানে তোর মলেস্টের সম্পর্ক?”
প্রশ্নটা শুনে ইয়ারাবী অবাক হয়ে বোনের দিকে তাকায়,কেন যেন তারার কথায় ক্ষোভ আর ওর প্রতি চোখে রাগ দেখতে পাচ্ছে।ইয়ারাবী বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে পাশের চেয়ারে বসে বলে,
-“এসব কী কথা স্টারপু?”
তারা ধমক দিয়ে বলে,
-“যা শুনছি সেটা বল।”
ইয়ারাবীর কাছে ওর আচারণগুলো স্বাভাবিক মনে হচ্ছেনা,খুব অপরিচিত লাগছে নিজের বোনকে।নিজেকে সামলে বলে,
-“আমার স্বামী সবটাই জানে।”
-“আর পরিবারের লোক?”
-“আম্মু আর আপু অর্থাৎ ভাবী জানে।তুমি এসব কেন জানতে চাইছো।”
-“এমনি,যাতো এখান থেকে।আমার ভালো লাগছেনা।”
ইয়ারাবী আর কোনো কথা বলেনা,এর মাঝে তারার বাবা-মা এসে তারার সাথে কথা বলতে থাকে।ইয়ারাবী তারার পাশ থেকে সরে এসে সামনে হাঁটতে থাকে ঠিক তখনি কারোর সাথে ধাক্কা খায়।সামনে তাকিয়ে দেখে ওর মা দাঁড়িয়ে আছে।পাশ কাঁটিয়ে আসতে গেলেই মিসেস ইশানি মেয়ের হাত ধরে বলেন,
-“আর কত কষ্ট দিবি মা,অনেক যন্ত্রণা সহ্য করেছি আর পারছিনা।তুই জানি তোর অাব্বু তোর চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পরেছিলো।নিজেদের অপরাধী মনে হয়,পাগল লাগে নিজেদের।মারে এবার একটু আম্মুনি বলে ডেকে শান্তি দে।”
-“আপনি জানেনা,আমার মা তো তিন বছর হতে চললো মারা গেছে।আপনি জানেন না বুঝি,বাসার পাশেই কবরটা দেওয়া আছে।”
-“আল্লাহর দোহায় লাগে,আর কষ্ট দিস না।ঈদের দুই দিন আগে এসেছিস অথচ বাড়িতে একটা বারও যাসনি।তোর য়ুহার কথা তো শুনিস,মৃত্যুর আগে তোকে বলেছিলো আমাদের ক্ষমা করে দিতে।তার কথাও কী রাখবিনা।”
-“আপুর কথা রেখেছি বলে অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি।এর থেকে বেশি কিছু আশা করবেন না।”
মিসেস রায়হান এসে মিসেস ইসানির সাথে কথা বলতে থাকলে ইয়ারাবী ওখান থেকে চলে যায়।হঠাৎ কোথার থেকে আহনাফ এসে ছোট ছোট হাত দিয়ে পা জড়িয়ে ধরে।বেখেয়ালি ভাবে হাঁটার জন্য ও প্রায় পরেই যাচ্ছিলো কিন্তু নিজেকে সামলে নেয়।আবীর এসে ছেলেকে কোলে নিয়ে বকা দিয়ে বলে,
-“আহনাফ,চাচীআম্মু আরেকটু হলে পরে যেত তোমার জন্য।স্যরি বলো চাচীআম্মুকে।”
আহনাফ স্যরি বলার বদলে ঠোঁট উল্টে বলে,
-“তাতীআম্মুর (চাচীআম্মু) তোলে (কোলে) যাবো।”
-“চাচীআম্মু অসুস্থ আহনাফ।”
ইয়ারাবী বাপ ছেলের ঝগড়া দেখে বলে,
-“আহ্হ্,ভাইয়া আহনাফকে বকছেন কেন?ও তো জেনে বুঝে কিছু করেনি।দিন ওকে আমার কোলে।”
-“না ইয়ারাবী,ও খুব দুষ্টু হয়ে গেছে।তোমার লেগে যাবে।”
-“ভাইয়া কিছু হবেনা আপনি দিন।”
আবীর দিতে চাইনা কিন্তু জোর করে ইয়ারাবী আহনাফকে কোলে নেয়।কিন্তু সমস্যা হলো ও একা এই মুহুর্তে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেনা সেখানে আরেকজনকে কোলে নিয়েছে।আহনাফ ওর কোলে শান্ত ভাবে গাড়ি নিয়ে খেলছে,ইয়ারাবী এদিক সেদিক মাথা ঘুড়িয়ে একটা চেয়ার দেখতে পেয়ে ওকে নিয়ে বসে ওখানে।ঠিক তখনি অনুষ্ঠানে প্রত্যয়কে দেখতে পায়।
#চলবে_____