জীবন মানে তুমি পর্ব-৩২

0
4132

#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Rini (Irini Ori)
#পর্ব:৩২

(১১২)

মি.ফুয়াদ খাটিয়ার পায়া ধরতে যেয়ে পরে যাচ্ছিলেন তখন মনে হচ্ছিলো তার উপর কোনো মস্তবড় এক বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে যার ভর ওনার পক্ষে নেওয়া স্বভব নয়।ওকে কবরে মি.ফুয়াদ নামিয়ে ছিলেন আর শেষবারের মতো কাফনের কাপড়ের উপর দিয়ে শেষ আদরটুকু করেছিলেন।

আদিবা ইস্মিতার সমবয়সী ছিলো,ভালো বন্ধুত্ব ছিলো দুইজনের মধ্যে।মিসেস জামান ইস্মিতাকে সহ্য করতে পারতেন না তবে,সেদিন লোক দেখানো কান্না উনিও করেছিলেন।সেদিন আদিবা তার মায়ের এই রুপটার সাথেও পরিচিত হয়।ওর ভাবী ইতি ঠিকই বলে,মিসেস জামানের রুপ গিরগিটির নিকটেও হার মানবে।

আচ্ছা নিয়তি কী বড় কঠিন জিনিস?হতে পারে, কেননা নিয়তির উপর কারো হাত নেই।নিয়তির নিষ্ঠুরতা জীবিত মানুষকে প্রতিনিয়ত ধুকে ধুকে খায়।মানুষ মারা গেলে মৃত কিন্তু যে মানুষগুলো বেঁচে থেকেও মৃত তারা,জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে থাকে।

আদিবা নানা কথা চিন্তা করছে আর হাসানের মাথায় বিলি কাঁটছে।হাসান ওর উরুর উপর মাথা রেখে ফোনে একমনে কাজ করে চলেছে।আদিবা মাঝে মাঝে ভাবে,”ওর ভাগ্যে আবরার ছিলোনা, তাই ওকে পায়নি।আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন,আবরার নয় কিন্তু হাসানের মতো একজনকে দিয়েছেন।অন্যান্য পুরুষেরা স্ত্রীর অন্যের প্রতি দুর্বলা দেখে তাকে কথা শুনায় বাজে ব্যবহার করে কিন্তু হাসান।”তবে প্রথমদিন হাসানের ব্যবহার দেখে ওর মনে হয়েছিলো হাসান বখাটে ধরনের ছেলে হবে।কেননা হাসান ওকে জোর করে বিয়ে করেছে সবটা জেনেও,কিন্তু পরে সব ধারনা পাল্টে গেলো।

হাসান আদিবার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলে,

-“তোমার মায়ের ফোন,আশাকরি ভদ্রভাবে কথা বলার চেষ্টা করবে।”

আদিবা ফোনটা নিয়ে কানে ধরে বলে,

-“আসসালামুআলাইকুম,বলো…”

-“হ্যাঁ হ্যাঁ,ঠিক আছে আমাকে এতো সালাম দিতে হবেনা।তোরা কী সত্যিই আসবিনা?”

-“আমি তো বলেছি আম্মু তুমি যদি শুধরে যাও তবে আমরা আসবো তার আগে নয়।”

-“আমি তোর পেটে হয়েছি নাকী তুই আমার পেটে।হঠাৎ ওই ছোটলোকের জন্য তোর এতো দরদ হলো কেন?”

-“আম্মু তোমরা কী বড়লোক?না,তাহলে…তাছাড়া উনি ভাইয়ার স্ত্রী,তোমাদের বংশের একটা ছেলেও আছে তুমি মানো বা না মানো রক্তের সম্পর্ক।তাকে যদি না ডাকো তাহলে আমরাও আসবোনা।”

মিসেস জামান মেয়ের এই কথা শুনে রাগে গর্জন করে বলেন,

-“তুই ইয়ারাবীর মতো জ্ঞান দিতে আসবিনা আমাকে,ওই বেয়াদবের মতো হয়েছিস।মায়ের সাথে তর্ক করছিস”

আদিবা শান্তভাবে বলে,

-“আমিতো তোমার সাথে তর্ক করছিনা,তোমাকে বুঝাচ্ছি।আর একটা কথা আম্মু,ইস্মা বেয়াদব না,আমি আসলেই বুঝতে পারিনা তোমার সমস্যা কোথায় ওকে নিয়ে?ওতো তোমার কোনো ক্ষতি করিনি…”

-“বেয়াদব,ওই অপয়ার কথা মুখেও আনবিনা।ওকে আমি কবরে শুয়িয়ে ছাড়বো।”

মিসেস জামান চিৎকার করে কথাটা বলে।আদিবা হেসে ওর মাকে বলে,

-“তুমি পারবেনা আম্মু,এতদিন যখন করতে পারোনি,পরেও পারবেনা।রাখে আল্লাহ মারে কে?তাছাড়া ওর স্বামী ওকে রক্ষা করার জন্য আছে।তোমাকে বুঝানো সম্ভব নয়,তুমি বুঝবেও না।যাই হোক নিজের স্বার্থের সময় তুমি ভাবীকে বাসায় এনেছিলে,তাহলে এবার কেন আনছোনা।ভাবী না এলে আমিও যাবোনা তোমার শ্বশুড়বাড়ি।দাদার জন্য এখান থেকেই দোয়া করবো।আল্লাহ হাফেজ”

আদিবা কথাটা বলে ফোনটা কেটে দেয়।হাসান ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“তোমার মা খু্ব ব্যাস্ত মহিলা তাইনা?”

-“মানে?”

-“এই যে অন্য পরিবারে কী ঘটছে না ঘটছে সেই সব ব্যাপারে খোঁজ রাখা খুব একটা সহজ বিষয় নয়।”

-“জানিনা,কিন্তু মা এমনি।হাজার বললেও বদলাবেনা।আত্মীয়দের মধ্যে কোনো পরিবারকে খুশি দেখে তো তাদের মধ্যে প্যাঁচ লাগিয়ে অশান্তি তৈরি করে দেয়।তবে এমনভাবে করে যাতে ওনার নাম কখনো না হয়।দুই পক্ষ থেকে কথা বলে আরো বারিয়ে দেয়।”

-“আচ্ছা বাদ দাও এসব,একটু মাথাটা ভালো করে টিপে দিবে…”

আদিবা হেসে ওর মাথা টিপে দেয়।হাসান ঘুমিয়ে গেলে ওর মাথার নিচে একটা বালিশ দিয়ে রুমে থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে যেয়ে দেখে ওর শ্বাশুড়ি তরকারি কাটছে।

-“মা আপনি এসব কেন করছেন?আমিতো করে দিতাম।”

-“ছেলেটা সপ্তাহে দু’দিন বাড়িতে রেস্ট নেয়, তোমারও তো মন চাই স্বামীর কাছে থাকার।আমি বুঝি সবকিছু,ওই বয়স আমরাও পার করেছি।রোজ তো তুমি করো,তাছাড়া আজ হাসান বললো যে আমার হাতের রান্না খাবে।”

-“আপনি সত্যিই খুব ভালো…”

-“কবরের ভয় যে আছেরে মা,মাদ্রাসায় পরেছি হাদিস-কালামের শিক্ষা আছে।তুমি বরং মাছটা কেঁটে দাও,আমি মাংসটা রান্না করেনি।”

আদিবা মেঝেতে বসে মাছ কাঁটতে শুরু করে।নিজের বাসায় আদিবা সবজি থেকে শুরু করে সব কাজ করেছে তাই আর কোনো সমস্যা হয়না।

(১১৩)

মিসেস ইশানি স্বামীর পাশে এসে বসলেন।মি.ফুয়াদ চায়ের কাপটা রেখে ওনার দিকে তাকিয়ে বলেন,

-“কিছু বলবে?”

-“য়ুহারের আজ আকদ হয়েছে,ফোন করেছিলো।ওরা সামনের সপ্তাহে ওকে ঘরে তুলতে চাইছিলো কিন্তু ইয়ারাবী না থাকলে ও বলে যাবেনা।কেমন পাগলামি করে মেয়েটা?”

-“ওর পাগলামির জন্যই ইস্মা এখনো বেঁচে আছে।”

-“আচ্ছা,মেয়েটা কী কোনোদিন মাফ করবেনা আমাদের?বাবা-মা তো শাসন করতে পারে তাই বলে এমন ব্যবহার করাও ওর ঠিক না।”

মি.ফুয়াদ একবার বারান্দা থেকে বাড়ির সামনে ওনার ছোট মেয়ে ইয়ামিলার দিকে তাকিয়ে দেখলেন খরগোশ নিয়ে খেলা করছে।মুখে এক চমৎকার হাসি,ঠিক এমনভাবে হাসতো ইয়ারাবী।ইয়ামিলা দেখতে হুবহু ইয়ারাবীর মতো হয়েছে তবে গায়ের রঙটা ফর্সা।মিসেস ইশানি স্বামীর কাঁধে হাত রেখে বলেন,

-“আমাদের ছোট মেয়েটাও আস্তে আস্তে বড় হয়ে যাচ্ছে,তাইনা।”

-“হ্যাঁ,তবে ভাবছি অন্যকথা।ইস্মার মুখে ওইদিনের পরে কখনো বাবা ডাকটা শুনতে পারিনি।”

-“তোমার মেয়েটা অনেক বেশি বেশি ফুয়াদ।”

মি.ফুয়াদ মাথা নাড়িয়ে না করে বলে,

-“সামনে স্বীকার না করলেও বলতে হবে মেয়েটা খুব বিচক্ষণ আর বুদ্ধিও চমৎকার।আমরা শুধু ভাবতাম ও বেশি করে কিন্তু না বেশিটা আমরা করতাম।তোমার মনে আছে,ঐদিনের পর থেকে মেয়েটা হাতে কখনো ঘড়ি পরেনা।এমন কী ওর নিজের পছন্দের সব ঘড়ি ও ভেঙে ফেলে।জেদ আছে মেয়েটার,আসলে রক্ত কথা বলেতো।বাবার মতো জেদী হয়েছে।”

মিসেস ইশানি স্বামীর কথা শুনে চুপ করে থাকেন।খুব বড় অন্যায় করেছিলেন ওইদিন।জীবনে প্রথমবার ফুয়াদ ওনার গায়ে হাত তুলেছিলেন।হ্যাঁ,এটা ঠিক উনি বাবা হয়ে সেই ভালোবাসা দেননি।উনি নিজেও ইয়ারাবীকে প্রচুর মারধোর করতেন,বকতেন তবে ওইদিন মিসেস ইশানি যে ভুলটা করে তার মাসুলও দিতে হয়েছিলো।তবে উনি মনে প্রাণে এখনো চান ওইটার জন্য মেয়েটার ভবিষ্যতে কোনো ক্ষতি না হোক।সেইদিনেন কথা মনে পড়তেই ওনার গাঁয়ে কাঁটা দিয়ে উঠেন।
ইস্মিতা মারা যাওয়ার পরে ইয়ারাবী মানসিক ভারসম্য হারিয়ে ফেলে।তার জন্য ওর খালার বাসায় থেকে ট্রিটমেন করে।পুরো একটা বছর সময় লাগে ওর স্বাভাবিক হতে।ও স্বাভাবিক হলে মিসেস ইশানি বোনের হাতেপায়ে ধরে মেয়েকে বাসায় নিয়ে আসেন।ওনার বোনও ওনাকে ননানা ধরনের সতর্কবাণী শুনিয়ে ইয়ারাবীকে পাঠান।বাসায় এসে এক সপ্তাহ পর থেকে ও স্বাভাবিকভাবে স্কুলে যেতে শুরু করে,তেমন কোনো বন্ধু ও বানাতো না,দুই একজন ছাড়া।সেদিন স্কুলের পর ও ওর বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ খেলা করে বাসায় যায়।প্রায় দুই ঘন্টা দেরি করে বাসায় যায়।মিসেস ইশানি ও বাড়িতে পা রাখতেই মারতে শুরু করেন।ইয়ারাবী মুখে হাত দিয়ে বলে,

-“আম্মুনি তুমি মারছো কেন?”

-“বেহায়া মেয়ে,একটা বছর শাসন করেনি বলে হাতির পাঁচ পা দেখেছিস।তোকে ঘড়ি কেন কিনে দিয়েছি?সময়-জ্ঞান রাখবি সেই জন্য।এতো দেরি কেন হলো।”

ইয়ারাবী কান্না করতে করতে বলে,

-“খ্ খেলা করছিলাম..”

ইশানি মেয়ের চুলের ঝুটি টেনে ধরে বলেন,

-“এতো কীসের খেলা তোর?ঘড়ি কিনে কিনে টাকা শুধু উড়াস,আজ তোর একদিন কী আমার একদিন।বারবার বলে দিয়েছি টাইমলি বাসায় আসবি,সেটা না করে উনি খেলতে বসেছে।তোর জন্য আমার মার্কেটে যেতে দেরি হলে গেলো।”

ইয়ারাবী ওর মায়ের হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করতে করতে বলে,

-“এসব ঘড়ি তো তুমি বা আব্বু কিনে দ।এগুলো তো ফুপামনি দেয়,তুমি এমন করো কেন সব সময় আমার সাথে।নিজের মেয়ের সাথে কেউ এমন করে?”

মিসেস ইশানি রেগে যেয়ে ওকে টানতে টানতে রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে গরম পানির মধ্যে ওর ডানহাতটা চেপে ধরে।অসহ্য যন্ত্রনায় ইয়ারাবী চিৎকার করতে থাকে ও,ইশানি ওর চিৎকার শুনে আরো রেগে মেয়েকে টান মেরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে জোরে লাথি মারতে থাকেন।ওনার পায়ে হাই হিল ছিলো বেশ শক্ত,একটা লাথি সোজা ওর তলপেটে যেয়ে লাগে।ইয়ারাবী একটা চিৎকার দিয়ে ওখানে বেহুঁশ হয়ে যায়।মিসেস ইশানির টনক নড়ে যখন উনি মেয়ের কোনো সাড়াশব্দ পাননা।ভয়ে উনি দ্রুত মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যান।ডাক্তারকে পুরো সত্যি না বলে ঘুড়িয়ে বলেন পরে যেয়ে পেটে আঘাত পেয়েছে।ডাক্তার মিসেস ইশানিকে পার্সোনালভাবে চেনে তাই কিছু বলেনি।ওর জ্ঞান ফিরলে পেটে প্রচুর ব্যাথা দেখে ডাক্তার কিছু টেস্ট করতে দেয়।উনিও করান,তবে রিপোর্টে যা আসে তাতে ওনার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে।ওনার মেয়ের জন্ম থেকে জরায়ুতে একটু সমস্যা ছিলো কিন্তু আঘাতের জন্য মা হওয়ার সম্ভাবনা মাত্র পঞ্চাশ শতাংশ।আর যদি পরবর্তীতে কোনো আঘাত পায় তবে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।কথাটা শুনে ওনার হাত-পা কাঁপতে শুরু করে।ওনার স্বামী জানলে কী করবে সেটা ওনার ধারনা নেই, তবে ওনার মেজো বোন কথাটা জানলে নির্ঘাত ওনাকে খুন করবে।উনি কিছুক্ষণ মাথায় হাত দিয়ে নানা কথা চিন্তা করতে থাকে।ওনার সামনের বেডে ঘুমিয়ে আছে ইয়ারাবী,ডানহাতটা ব্যান্ডেজ করা।ডাক্তার পরিচিত বলে ওনার আরো চিন্তা হচ্ছে,কেননা উনি যদি ফুয়াদকে বলে দেয়।অনেক কষ্টে ম্যানেজ করে ডাক্তারকে যাতে ওনার স্বামীকে কথাটা না জানায়।ডাক্তার রুপক ও উনার অবস্থা বুঝতে পেরে মেনে নেয় কথাটা।সেদিন রাতে হাসপাতালে একদিন থেকে পরদিন বাড়ি ফিরে আসে।মি.ফুয়াদ অফিসের কাজে বাইরে গেছিলো আজই ফিরবে তাই দ্রুত বাসায় চলে আসে।বাসায় এসে প্রথমে মেয়ের হাতের ব্যান্ডেজ খুলে দিয়ে দেখে পুরো হাতটা লাল হয়ে ফুলে আছে,জায়গায় জায়গায় অনেক ফোসকা পরেছে।উনি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,

-“কাল কী হয়েছে এটার কথা যেন কেউ না জানে?মনে থাকে যেন কথাটা।”

বিকালের দিকে মি.ফুয়াদ বাসায় আসেন।উনার স্ত্রীর হাতে ব্যাগটা দিয়ে মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করেন।ইশানি কোনো মতে ভালো আছে বলে দ্রুত রুমে যেয়ে হাসপাতালের রিপোর্টটা লুকিয়ে ফেলেন।মি.ফুয়াদ ফ্রেস হয়ে এসে দেখে মেয়ে বেলকনিতে বসে বই নিয়ে পরছে।উনি মেয়ের মাথায় হাত রাখতেই ইয়ারাবী কিছুটা ভয় পেয়ে উঠে ওনার দিকে তাকায়।উনি একটু হেসে বলে,

-“কী করছো ইস্মা?”

-“প্ পড়ছি আব্বু..”

-“পরীক্ষা বুঝি?না হলে তো তুমি এই সময় ছাদে খেলা করো।”

-“হ্যাঁ,পরীক্ষা।”

-“তো এই কয়দিন কেমন কাটলো?”

কথাটা শুনার সাথে সাথে ইয়ারাবী চুপ করে মাথা নিচে নামিয়ে নেয়।ইয়ারাবী ওনাকে ভালোবাসলেও মাঝে মাঝে ভয় পায়।তবে সেই ভয়টা কোনো কিছু ঘটলে তবে।আজ উনি মেয়ের চোখে ভয় দেখতে পারছেন।উনি মেয়ের চুল ঠিক করে দিতে দিতে বলেন,

-“জানো আব্বু আজ তোমার পছন্দের জিনিস নিয়ে এসেছে..”

-“কী?”

-“তার আগে জানতে চাইলেনা আব্বু কেমন আছে?”

-“ওহ্,ভুলে গেছিলাম..”

-“ভুলে তো যাবে,তুমি তো আমার সাথে কথা বলোনা ঠিকভাবে।আচ্ছা চলো,জিনিসগুলো ব্যাগে আছে তোমাকে দিবো..”

-“আমি পরে যায়..”

-“কেন?”

-“না,মানে তুমি উপরে আনলে ভালো হতো।তোমরা তো নিচের রুমে থাকো।”

-“ইস্মা সত্যি করে বলোতো কী হয়েছে?আমি এসেছি চার ঘন্টা হয়ে গেলো অথচ তুমি একটা বারও ঘর থেকে বের হওনি।”

ইয়ারাবী কিছু বলার আগেই ইশানি রুমে ঢুকে বলেন,

-“আসলে ওর শরীরটা একটু খারাপ ফুয়াদ।”

উনি এই কথা শুনে সন্দেহের চোখে মিসেস ইশানির দিকে তাকিয়ে বলে,

-“মেরেছো নাকী মেয়েকে?”

-“ন্ নাতো,মারবো কেন।তুমি তো জানো ও কেমন একটা ট্রমার মধ্যে ছিলো।চলো ডিনার করে নিবে।ইয়ারাবী ঘরে খাবার রেখে যাচ্ছি গরম গরম খেয়ে নাও।”

ইয়ারাবী কোনো কথা না বলে মাথা নাড়াই।মি.ফুয়াদ স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলেন,

-“আমার খাবারটাও এখানে দাও,আজ ইস্মার সাথে খায়।অনেকদিন মেয়েটার সাথে বসে খায়না।”

ইয়ারাবী রুমে চলে গেলে ফুয়াদ ওনাকে বলেন,

-“ডাক্তারের সাথে কথা বলেছো,মেজো আপাকে জানিয়েছো ওর অসুস্থতার ব্যাপারটা।”

-“তুমি চিন্তা করোনা,তেমন সিরিয়াস কিছু নয়”

-“রুম থেকে মেয়ের জিনিসগুলো এনে দিবে।ওর পছন্দের সব এনেছি,”

ইসানি হেসে মাথা নাড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই ফুয়াদ ঘরে এসে দেখে ইয়ারাবী বাম হাত দিয়ে চামচের সাহায্যে খাবার খাচ্ছে।

-“ইস্মা,বাম হাত দিয়ে কেন খাচ্ছো?ডান হাতে কী হয়েছে?”

-“ক্ কিছুনা আব্বু..”

-“যদি কিছু না হয় তবে ডান হাত দিয়ে খাবার খাবে।বাম হাত দিয়ে খেতে হয়না সেটা নিশ্চয়ই জানো।”

ইয়ারাবী ভয়ে ভয়ে ডান হাতটা দিয়ে চামচ ধরলে মি.ফুয়াদের নজর ওর হাতের দিকে পরে।উনি মেয়ের হাত টেনে ধরে বলেন,

-“হাতের এই অবস্থা কেন?”

মিসেস ইসানি তখন জিনিস নিয়ে রুমে ঢুকছিলেন।স্বামীর কথা শুনে উনি ভয় পেয়ে যান।কেননা উনি জানেন ওনার মেয়ে বাবাকে ভয় পায়,আর যদি ভয়ে সব বলে দেয় তাহলে ওনার রক্ষা নেই।উনি দ্রুত জিনিসগুলো রেখে বলেন,

-“আর বলোনা,কিচেনে গরম পানি বসিয়েছিলাম, ও খাবার নিতে গেলে পাতিলে ধাক্কা লেগে ওর হাতের উপর গরম পানি পরে।”

ইয়ারাবী ওর মায়ের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।কত সুন্দর করে ওর মা মিথ্যা বলে ওর বাবাকে।তবে আফসোস এটার সত্য মিথ্যা না জেনে ওর বাবাও এখন বকবে।হলোও তাই,উনি ইয়ারাবীকে জোরে এক ধমক দিয়ে বলেন,

-“তোমাকে নিষেধ করেছিনা তুমি রান্নাঘরে ঢুকবেনা,ছোটবেলার কথা মনে নেই।গ্যাসের আগুনে প্রায় পুরে যেতে যদি ইস্মি..”

সাথে সাথে উনার স্ত্রী ওনার হাত চেপে ধরে।কেননা মেয়ের সামনে নামটা নেওয়া যাবেনা।মি.ফুয়াদ নিজের রাগটা সংযত করে হাত ধুয়ে মেয়েকে খাইয়ে দেন।খাওয়া শেষ হলে ব্যাগ থেকে কিছু গল্পের বই,দু’টা জামা আর তিনটা কীসের ছোট প্যাকেট দেন।ইয়ারাবী প্যাকেটগুলো খুলে দেখে ওগুলোর মধ্যে সুন্দর ডিজাইনের ঘড়ি রয়েছে।ঘড়িগুলো দেখে ওর কালকের কথা মনে পরে যায়।ও তাড়াতাড়ি ঘড়িগুলো বক্সে রেখে বলে,

-“আমার লাগবেনা আব্বু..”

-“কেন তোমার পছন্দ হয়নি ইস্মা?তোমার তো এধরনের ঘড়ি খুব পছন্দের। নাকী আমি দিচ্ছি বলে তুমি নিতে চাইছোনা?আমি তোমার বাবা ইস্মা,আমার সাথে এমন করার কোনো মানে হয়না তোমার।”

ইয়ারাবী ওনার ধমকে কিছুটা কেঁপে,ও যে ঘড়ি কেন নিতে চাইছেনা সেটা শুধু ওর মা জানে।ইয়ারাবীর চোখে পানি চলে আসে,ওর বাবা ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“এমন কিছু হয়নি যার জন্য তুমি কাঁদছো,বললেই হয় আমার জিনিস তোমার পছন্দের নয়।”

ইয়ারাবী এবার না পেরে ওর বাবাকে সব সত্যি বলে দেয়।সব শুনে ওর বাবা থমকে যায়,ওর বাবা খেলাধুলার জন্য ওকে কখনো মারে বা বকেনা।কিন্তু ওনার স্ত্রী সামন্য খেলতে যেয়ে লেট হওয়ার জন্য মেয়ের সাথে এমন আচারন করে।যে মেয়ে কীনা কিছুদিন আগে সুস্থ হয়েছে।এক মেয়েকে হারিয়েছেন আরেক জনকে হারানোর কথা ভাবতেই বুকের মধ্যে ধক করে উঠে।ওইদিন উনি প্রথমবার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেন,পুরো রাত মেয়ের পাশে বসে কাঁটিয়েছেন।

মিসেস ইশানি আজও ওনার স্বামীকে সত্যটা বলেননি।তবে যেদিন রাতে শুনলেন আবরার ওনার স্বামীকে বলছে যে,ইয়ারাবী কোনোদিন মা হতে পারবেনা তখন ওনার কাছে মৃত্যু সমান কষ্ট লেগেছিলো।সত্যটা এটাই যে ওনার মেয়ের অক্ষমতার পিছনে ওনার হাত সবচেয়ে বড়।এইজন্য যখন টেনে থাকতে মেয়ের সমস্যা হলো তখন উনি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাননি।কেননা যদি ওনার মেয়ে সত্যিটা জেনে যায়।

স্ত্রীকে কিছু চিন্তা করতে দেখে মি.ফুয়াদ বলে,

-“চলো ভিতরে যাবে,মেয়েকে ডাক দাও ডিনার করবে।রাতে এভাবে বাইরে খেলা করা ঠিক নয়।”

-“হ্যাঁ,চলো।ইয়ামিলা আম্মু ওকে নিয়ে ভিতরে এসো ডিনার করতে হবে।”

ইয়ামিলা হেসে মাথা নাড়িয়ে খরগোশকে কোলে নিয়ে বাড়ির মধ্যে চলে আসে।মি.ফুয়াদের হঠাৎ দোলনার দিকে নজর যায়।এই জায়গা ইয়ারাবীর খুব পছন্দের ছিলো।এক প্রকার জেদের জন্যই এখানে দোলনা লাগতে হয়েছিলো।আগে মেয়ে ওনাকে ভয় পেলেও ভালোবাসতো,আব্বু বলতে অজ্ঞান ছিলো কিন্তু এখন মেয়ের কাছে সেই ভালোবাসা,ভয় সবকিছু ঘৃনায় পরিনত হয়েছে।

(১১৪)

-“এখন কেমন বোধ করছো?”

ইয়ারাবী মাথাটা হালকা নেড়ে বলে,

-“ভালো,ধন্যবাদ এতো খেয়াল রাখার জন্য।আচ্ছা কয়টা বাজে?”

আবরার হালকা হেসে বলে,

-“এখানকার সময় ধরলে দেখা যায় তিনটা বাজে।আর একঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাবো।কিছু খাবে তুমি?”

-“না,এখন কিছু খেলে বিশ্রী হয়ে যাবে।”

-“তুমি বেশি চিন্তা করো।আমি আনতে বলছি..”

-“আবরার শুধু নিজের জন্য বলুন,আমি পারবোনা।আর আপনি জানেন আমি বেশি খেতে পারিনা।”

-“আমি বুঝতে পারিনি তুমি অসুস্থ হয়ে পরবে।ঠিক আছে কিছু না খেতে চাইলে জোর করবোনা।”

ইয়ারাবী আবরারের কথা শুনে,

-“যাক বাবা,আবহাওয়ার সাথে সাথে আমার বরটাও বদলে গেছে।এতো ভদ্র হয়ে গেছে,যাক আমার ভালো হয়েছে।এই কয়টাদিন এমন ভদ্র থাকলে চলবে।”

আবরার ওর হাতের ম্যাগাজিনের পাতাটা উল্টাতে উল্টাতে বলে,

-“এতো অবাক বা খুশি হওয়ার কিছু নেই,সিক ফিল করছো বলে বেঁচে গেলে।আর হ্যাঁ,আবরার বদলায় না,ওর এ্যাটিটিউড যেমন সেভাবে থাকবে।আর তোমার ক্ষেত্রে প্রশ্নই আসেনা কেননা তোমার মতো ঘাড়ত্যাড়া মেয়েকে শুধু এইভাবে ঠিক করা যায়।”

-“শুনে নিয়েছেন বুঝি..”

-“হ্যাঁ,বাবু।কেননা তোমার মাথায় কী চলে সেটা আর কেউ না বুজলে আমি জানি।”

ইয়ারাবী ভ্রু কুচকে বলে,

-“বাবু?”

-“অভ্যস করে নাও,কেননা তোমার স্বামী প্রচুর অসভ্য।”

কথাটা বলে আবরার হো হো করে হেসে দেয়।ইয়ারাবী বুঝতে পারছে কথাটা ওকে ভয় দেখানোর জন্য বলেছিলো।আবরার ইয়ারাবী মাথায় হাত দিয়ে বলে,

-“হেজাবটা একটু কষ্ট হলেও বেঁধে নাও সোনা, এখানের আবহাওয়া খুব ঠান্ডা।”

ইয়ারাবী চশমা ওর হাতে দিয়ে সিটবেল্ট খুলে চলে যেয়ে ফ্রেস হয়ে হেজাবটা বেঁধে নেয়।ল্যান্ড করার কিছুক্ষণ আগে ওর ইয়ারাবী হাত শক্ত করে ধরে,

-“জার্কিংয়ে ভয় পাবেনা…”

নামার সময় আবরার ওর হাত ধরে রাখে কেননা ওর মুখে বললেও চেহারায় বুঝা যাচ্ছে ও অনেকটা সিক।ওকে নিয়ে টার্মিনাল পেরিয়ে ওকে লাউঞ্জে বসিয়ে দিয়ে একটা মোটা জ্যাকেট বের করে ওকে পরিয়ে দেয়।ওরা এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে দেখে একটা তেইশ-চব্বিশ বছরের ম্যাক্সিক্যান যুবক ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“গুড ইভিনিং স্যার,যাত্রাতে কোনো অসুবিধা হয়নি আশাকরি।এখানে আপনাকে দেখে অনেক ভালো লাগলো।”

আবরার ব্যাগ দু’টা ওর হাতে দিয়ে বলে,

-“তোমাকে ধন্যবাদ উইলিয়াম,এনি তোমাদের ম্যাম।”

-“হ্যালো ম্যাম,আপনাকে স্বাগতম লন্ডনে।”

ইয়ারাবী বিনিময়ে একটা হাসি দেয়।আবরার ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“ইয়ারাবী,এর নাম উইলিয়াম,আমার ড্রাইভার।চলো বাসায় যাওয়া যাক,তুমি অনেক বেশি অসুস্থ বোধ করছো।”

ইয়ারাবী আবরারের সাথে গাড়িতে উঠে বসে।উইলিয়াম গাড়ি চালাচ্ছে,পিছনের সিটে ওরা বসে আছে।ইয়ারাবী হালকা মাথা নুয়ে আবরারের কাঁধে রাখে।আবরারও ওকে পরম যত্নে একহাতে জড়িয়ে ধরে উইলামের সাথে এখানকার বর্তমান অবস্থার বিষয়ে আলোচনা করে।এয়ারপোর্ট থেকে ঘন্টাখানিক দূরত্বে আবরারের বাসা।গাড়িটা বড় একটা গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।ইয়ারাবী গাড়ি থেকে নেমে খানিকটা অবাক হয়ে যায়, বাড়িটা অনেক সুন্দর সাদা রঙের দোতালা ,বেশির ভাগ যায়গা থাইগ্লাস দেওয়া।বৃষ্টির দিনে কতটা সুন্দর লাগে ইয়ারাবী সেটা অনুভব করতে পারছে।আবরার হেসে ওর কাঁধে হাত রেখে বলে ভিতরে বলে,

-“ভিতরে চলো,আমার মতে বাইরে থেকে ভিতরটা বেশি ভালো লাগবে।”

উইলিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“তুমি এজেন্সিতে ফোন করে দিয়ে ওদের আসতে বলো।”

আবরার ইয়ারাবীকে নিয়ে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে।বাড়িটা ডু-প্লেক্স,ভিতরটাও সাদা রঙের।আবরার ইয়ারাবীকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে, উইলিয়াম ব্যাগগুলো রেখে যায়।ইয়ারাবী আবরারের রুমের চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে রুমটা খুব পরিপাটি করে সাজানো।ডাবল বেডের বিছানা,সাইড টেবিল,একপাশে বুক শেলফ,সোফা, ক্লজেট,কাবার্ড,আরো অনেক কিছু।আবরার ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,

-“আগে ফ্রেস হয়ে নাও,এজেন্সিতে কল দেওয়া হয়েছে।কিছুক্ষণের মধ্যে মেইড চলে আসবে।”

ইয়ারাবী ব্যাগ থেকে একটা প্লাজু,গেন্জি আর স্কার্ফ নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে একটা হট শাওয়ার নেই।আবরারও অন্য একটা ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে বাইরে এসে দেখে ইয়ারাবী কিচেনে দাঁড়িয়ে নখ কাটছে।আবরার টি-শার্ট পরতে পরতে ওর পিছনে দাঁড়িয়ে বলে,

-“কী করছো?”

-“কফি বানাতে চেয়েছিলাম,মাথা যন্ত্রনা করছে।বাট্ কিছু পাচ্ছিনা।”

আবরার হেসে ওর পাশ কাটিয়ে ভিতরে ঢুকে উপর থেকে একটা কফি ক্যান বের করে,পাশ থেকে চিনি আর ফ্রিজ থেকে দুধ বের করে ওকে বলে,

-“নতুন এই জন্য খুঁজে পাওনি।তুমি বসো আমি বানিয়ে দিবো।”

-“না,আপনি জার্নি করেছেন আপনি রেস্ট নিন আমি করে নিবো।আমিতো বারো ঘন্টায় একটু ঘুমিয়েছি বাট্ আপনিতো তাও করেনি।”

-“আমার জার্নিতে ঘুম আসেনা,তাছাড়া আমি চাইনা তুমি কিচেনে ঢুকো।হয়তো এখানে বসো নয়তো রুমে যাও…”

ইয়ারাবী চুপচাপ কোনো কথা না বলে ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকে।আবরার ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“খুব বেশি ক্ষুদা লেগেছে যে নখ খাচ্ছো?”

-“খাচ্ছি না কাঁটছি”

-“এর পরে যেন আর না দেখি….”

এর মধ্যে আবরারের ফোনে একটা কল আসে।আবরার ফোনটা তুলে দেখে ওর মা ফোন করেছে।ফোনটা রিসিভ করে কানে দিয়ে বলে,

-“আসসালামুআলাইকুম,মম।”

-“ওয়ালাইকুমুসসালাম,আব্বু ঠিকমত বাসায় পৌঁছিয়েছো?ইয়ারাবী কেমন আছে?”

-“আলহামদুলিল্লাহ,ভালো ভাবে পৌঁছে গেছি তবে ও কিছু অসুস্থ হয়ে পরেছিলো।”

-“সেটাই কী সম্ভব নয় সোনা,কী করছে ও?ফোনটা দাও কথা বলবো।”

আবরার ইয়ারাবীকে ফোন দিলে ও কিছুক্ষণ কথা বলে ফোনটা কেঁটে দেয়।তারপর আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আমি যদি ভুল না হই,তবে এখন বাংলাদেশ সময় রাত দু’টা।আম্মু এখনো জেগে আছে।”

আবরার কফির মগে কফি ঢালতে ঢালতে বলে,

-“মম এমনি,আমি যতবার বাইরে যাইনা কেন, উনি আমার সুস্থভাবে পৌঁছানো অব্দি ঘুমান না।সব মায়েরা এমনি হয়।”

-“সবাই হয়না…”

আবরার বুঝতে পারছে ইয়ারাবী ওর মায়ের কথা ভেবে মন খারাপ করছে।আবরার ওর কফিটা দিয়ে সোফায় যেয়ে বসে।কফিতে চুমুক দিয়ে ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা কফি না খেয়ে মগের রাউন্ড সার্কেলের উপর হাত ঘুরাচ্ছে আর গভীরভাবে কিছু চিন্তা করছে।

-“ইয়ারাবী?”

ডাকটা শুনে ও চমকে আবরারের দিকে তাকায়।আবরার কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে,

-“কফি খাচ্ছোনা কেন?”

-“কফি খাওয়ার নয় পান করার জিনিস।”

-“আমার কথা আমাকে ফেরত দিচ্ছো,”

-“আপনার থেকে শিখা”

-“একটা কথা বলবে?”

-“বলুন…”

-“আমি জানি যখন তোমার বয়স পাঁচ তখন থেকে তোমার পরিবার মিস বিহেভ করে তোমার সাথে।”

-“এ এমন ক্ কিছুনা,আপনি ভ্ ভুল ভাবছেন।”

-“তোমার শরীরের প্রতিটা আঘাতের দাগতো মিথ্যা নয়।”

-“এগুলো ওই সময়কার”

-“আমার কাছে মিথ্যা বলতে পারবেনা,আমি একজন সাইক্রেটিস।সুতরাং সত্যি বললে তোমার ভালো।”

-“আ..আমার ঘুম পাচ্ছে।”

-“কোথাও যাবেনা তুমি,এখানে বসবে আর সম্পুর্ন কথা আমাকে বলবে।”

ইয়ারাবী এবার না পেরে কেঁদে দিয়ে বলে,

-“আপনারা সবাই এমন কেন করেন আমার সাথে?আমিও একটা মানুষ,যে যার মতো জোর খাটান আমার উপর।”

আবরার নরমালি ওর সামনে বসে বলে,

-“কেউ তোমার উপর জোর খাটাবেনা,আর আমি চাইনা তুমি সাফার করো।”

-“তাহলে আপনি কেন এমন করছেন?আমি চাইনা কাউকে কিছু বলতে…”

-“আমি জানতে চাই,যে বাবা-মার নয়নের মনি ছিলে তারা হঠাৎ এমন আচারন কেন করে তোমার সাথে।”

-“আমি জানিনা,তবে আম্মুনি আমাকে অপয়া বলতো।বড়খালামনি চাচ্চুরা আমার নামে বাবা-মাকে নানা কথা বলতো।”

-“কী হয়েছিলো?”

-“ইউ নো আবরার,ছোট ছিলাম বেশি কিছু মনে নেই।তবে আগে আমরাও আপনাদের মতো ছিলাম,আব্বুর নিজের বিজন্যাস ছিলো,অনেক গাড়ি ছিলো।কিন্তু হঠাৎ করে সবকিছু হারিয়ে যায় তারপর থেকে ওনারা এমন করতে থাকে।কিছু একটা আছে যা আমার জানা নেই।”

আবরার ইয়ারাবীর মাথায় হাত রেখে বলে,

-“কোথাও এমনটা নয় তো,ওনারা ভাবে এগুলোর জন্য তুমি দায়ী।”

-“হাতে পারে তবে কারন শুধু এটা নয় আরো জিনিস আছে।মেজো চাচুর ঝগড়া আব্বুর সাথে হওয়ার পর আব্বু অনেক পাল্টে যায়।বুঝতাম না ভুল করে ফেলতাম,যার জন্য আমাকে মারতো।আম্মুনির তো চোখের বিষ আমি।সব সময় আমার মৃত্যু কামনা করে।অনেক আগে মেরে ফেলতো তবে খালামনি,মনি এদের জন্য বেঁচে আছি।”

আবরার কী বলবে বুঝতে পারছেনা,তবে এটা ঠিকই বুঝতে পারছেনা একমাত্র ওর বাবা-মা বলতে পারবে আসল কারণ।ও আর বেশি প্রশ্ন করেনা।

রাতের দিকে ইয়ারাবী আবরারের রুমের সাথে যে বেলকনি সেখানে চাদর পেচিয়ে রেলিংএর উপর বসে আছে।আবরার কিছুক্ষণ আগে একটা আর্জেন্ট কাজে বাইরে বেরিয়েছে।একজন মহিলা মেইড এমা ইয়ারাবীর কাছে ওকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-“ম্যাম,ডিনার তৈরি হয়ে গেছে”

-“তোমার স্যার এলে করবো।”

-“অনুগ্রহ করে আপনি ভোজন করে নিন,স্যার আমাদেরকে বলেছে,আপনাকে ভোজন করে নিতে।”

-“উনি না আসলে আমি খাচ্ছিনা,তুমি যাও..”

এমা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,

-“স্যার আপনাকে মেডিসিন নিতে বলেছে ভোজন করে,আপনি না করলে আমাদের বকবে।”

ইয়ারাবী হালকা হেসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“নির্দ্বিধায় থাকতে পারো,উনি এরুপ কিছু করবেন না।”

-“স্যার বন্ধু সুলভ হলেও খুব রাগী..”

-“জানি…”

এর মাঝেই আবরারের গাড়ি গেট দিয়ে বাসার মধ্যে প্রবেশ করে।ইয়ারাবী এমার দিকে হেসে তাকিয়ে বলে,

-“তুমি পরিবেশন করো,আমি আসছি..”

-“স্যার সত্যিই খুব ভাগ্যবান,আপনার মতো চমৎকার স্ত্রী পেয়েছেন।

-“কথাটা তুমি সত্য বলেছো এমা।”

দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে আবরার দাঁড়িয়ে আছে।

#চলবে_____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here