জীবন মানে তুমি পর্ব-৩০

0
4190

#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Rini (Irini Ori)
#পর্ব:৩০

(১০৭)

-“এজন্য আপনাদের চেহারায় অনেকটা মিল।”

জয়িতা হাসতে হাসতে বলে,

-“চেহারাতে শুধু মিল পাবে তাছাড়া আর কিছুতে পাবেনা।তুমি জানো তুমি কত লাকি?”

-“কেন আপু?”

-“কারন স্যারের মতো লাইফ পার্টনার পেয়েছো।হুমায়ূন আহমেদ একটা কথা বলেছেন-এই পৃথিবীতে প্রিয় মানুষগুলোকে ছাড়া বেঁচে থাকাটা কষ্টকর কিন্তু অসম্ভব কিছু নয়। কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না, জীবন তার মতই প্রবাহিত হবে। তাই যেটা ছিল না সেটা না পাওয়ায় থাক, সব পেয়ে গেলে জীবনটাও একঘেয়েমি হয়ে যায়। মনে রেখো পৃথিবীর সকল কষ্টই ক্ষণস্থায়ী।”

ইয়ারাবী জয়িতার কথা শুনে ওর দিকে তাকায়।ও আসলে বুঝতে পারছেনা জয়িতা হঠাৎ এই কথা কেন বললো?আর বলার আসল কারনটা কী?

-“আপু আমি বুঝতে পারিনি আপনি ঠিক কী বলতে চাইছেন?”

জয়িতা কিছুটা হেসে বলে,

-“আমি হুমায়ূন আহমেদের অনেক বড় একজন ভক্ত।আর ওনার এই কথাটা আমার খুব ভালোলাগে,তাই বলেছি।অন্যকিছু আবার মনে করনা।”

-“না,ঠিক আছে।”

ওরা কেবিনে বসে অনেক কথাবার্তা বলে।প্রায় দু’ঘন্টা হয়ে যাওয়ার পর ইয়ারাবী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আপু উনি কখন আসবেন?বলেছিলো আধাঘন্টা-একঘন্টার মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।”

-“আরে চলে আসবে এখনি,তুমি কী বিরক্তবোধ করছো?”

-“না আপু,আমি ঠিক আছি…”

-“কী কথা হচ্ছে তোমাদের মধ্যে?”

দরজায় দিকে তাকিয়ে দেখে আবরার আর বিহান ঢুকছে।জয়িতা হেসে বলে,

-“তেমন কিছুনা ওই আমরা একটু কথা বলছিলাম।”

বিহান জয়িতার চুল টেনে বলে,

-“তোর ওই একটু কথা বলা মানে মানুষের মাথা পাগল করে দেওয়া।কী জানি ম্যামের মাথা শেষ আজ?বাচাল একটা..”

জয়িতা বিহানের পিঠে একটা কিল মেরে বলে,

-“লজ্জা করেনা বড় বোনকে বাচাল বলিস?”

আবরার চেয়ারে বসতে বসতে বলে,

-“তোমরা দু’জন একসসাথে থাকলে শুরু করে দাও।”

-“স্যরি,স্যার…”

-“ইটস্ ওকে,আচ্ছা মন দিয়ে শোনো,দু’সপ্তাহ আমি বিডিতে থাকবোনা।ল্যাবের সব কাজ বিহান আর প্রাপ্তকে বুঝিয়ে দিয়েছি,আর বাকী যে সব কাজ আছে ওগুলো তুমি সামলে নিবে।”

-“স্যার চিন্তা করবেন না,আমি সব কাজ গুছিয়ে করবো।”

-“আই নো,তোমরা আছো বলে নিশ্চিন্তে থাকতে পারি।তাহলে আমরা আসি,যদি কোনো সমস্যা হয় কল দিবে।”

-“ওকে স্যার…”

বিহান আর জয়িতা চলে যেতেই আবরার খানিকটা মুচকি হেসে ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“অনেক অপেক্ষা করতে হলো?কী করবে বলো তোমার স্বামী এমনি?”

ইয়ারাবী ওর কথা শুনে বলে,

-“মোটেও না,আর এক কোথায় ছিলাম জয়িতা আপু সাথে তো ছিলো…”

-“আচ্ছা চলো এখন শপিং এ যাওয়া যাক…”

-“শপিং এ না গেলে হয়না?”

-“না হয়না চলো।মেয়েরা শপিং এর কথা শুনলে খুশি হয় আর তুমি?”

-“আমি বাকীদের মতো নই আবরার,আর চাইলেও হতে পারবোনা।”

আবরার জ্যাকেট পরতে পরতে বলে,

-“তুমি বাকীদের থেকে আলাদা বলে আমার এতটা ভালো লাগে।আর আমি চাইনা তুমি বাকীদের মতো হও।”

ইয়ারাবী ওর নেকাবটা বেঁধে নিয়ে আবরারের সাথে বেরিয়ে যায়।আবরার ড্রাইভ করতে করতে বলে,

-“তুমি যে কোনো রিয়্যাক্ট করলেনা?”

-“কী জন্য রিয়্যাক্ট করবো?”

আবরার ওর তাকিয়ে বলে,

-“এই যে আমার এ্যাসিস্টেন্ট একজন মেয়ে।”

ইয়ারাবী জানালার বাইরে চোখ রেখে বলে,

-“মেয়ে বা ছেলে এটা কোনো বিষয় নয়।বিষয় হলো সে আপনাকে কেমন চোখে দেখে।আমিতো জয়িতা আপুর মধ্যে খারাপ কিছু দেখিনি।বরং তার চোখে আপনার জন্য অনেক শ্রদ্ধা দেখেছি।”

-“ইয়ারাবী আমাকে কী তুমি করে বলা যায়না?”

-“আমার আপনি ডাকটা ভালো লাগে,তবে তুমি বলতে কিছু সময় লাগবে।”

আবরার ওর কথা শুনে হাসে তবে কিছু বলেনা।ওরা বেশকিছুক্ষণ পর একটা শপিং মলের পাশে পার্কিং এরিয়ায় গাড়ি পার্ক করে মলের মধ্যে ঢুকে।ইয়ারাবী মলের বাম পাশে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।আবরার ওর দাঁড়ানো দেখে প্রশ্ন করে কী হয়েছে?ইয়ারাবী ওর দিকে তাকিয়ে বামপাশের স্বর্ণের দোকানে ইশারা করে।আবরার লক্ষ্য করে দেখে দোকানে মিসেস ইশানি,ইয়ামিলা,য়ুহার আর মিসেস অচলা দাঁড়িয়ে শপের ওনারের সাথে কথা বলছে।হঠাৎ করে য়ুহারের চোখ আবরারদের দিকে পরতেই ও এগিয়ে এসে বলে,

-“তোমরা এখানে?”

আবরার হালকা হেসে বলে,

-“এইতো একটু শপিং এ এসেছি..”

-“কীরে বাচ্চা তুই যে কোনো কথা বলছিস না?”

ইয়ারাবী কোনো মতে মাথা নাড়িয়ে বলে,

-“তেমন কিছু নয় আপু,তোমরা শপিং এ এসেছো…”

-“হ্যাঁ,কাল মা খুব জোর করলো আসতে।আর শুনলাম সকালবেলা ইয়ামিলা জেদ করছিলো তাই ভাবলাম একসাথে আসি…”

-“ওহ্,আমিতো ভুলে গেছিলাম যে মাসে চারবার ওর জন্য শপিং এ আসে।”

ইয়ারাবীর কথার মধ্যে এক ধরনে ক্ষোভ দেখা যাচ্ছিলো।য়ুহার ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“চল,আম্মুদের সাথে দেখা করবি…”

-“না আপু,ওনাদের ডিস্টার্ব করা ঠিক হবেনা।আবরার চলুন আমাদের লেট হচ্ছে…”

-“কথা এড়িয়ে যাওয়া তো ভালোই শিখেছিস।”

-“বেঁচে থাকার জন্য শিখতে হয়,”

য়ুহার ওর কথা শুনে হেসে দেয়।আবরার য়ুহারের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“তোমা..আপনাদের ব্যাগ দেখে মনে হচ্ছে শপিং প্রায় শেষের দিকে।”

-“হ্যাঁ,তো তোমরা কাল যাচ্ছো ?”

-“সকাল দশটায় ফ্লাইট..”

-“আচ্ছা তাহলে তোমরা যাও পরে কথা হবে।”

আবরার ইয়ারাবীর হাত ধরে ওখান থেকে চলে আসে।কিছুক্ষণ পর একটা লেডিস শো’রুমে ডুকে কিছু গাউন দেখতে থাকে।

-“চয়েজ করো কোনটা নিবে?”

-“আমার কোনো চয়েজ নেই,আপনি করুন।”

আবরার হেসে সিলভার,মেরুন আর ব্লাক কালারের তিনটা গাউন নিলো,তার সাথে কিছু গেন্জি,প্লাজু আর স্কার্ফ।শো’রুম থেকে বের হতে পাশের একটা দোকানের দিকে আবরারের চোখ গেলে ইয়ারাবী ওর হাত টেনে বলে,

-“এখনো তিনটা নতুন বোরখা আছে,প্লীজ আর না।”

-“ওকে….”

ইয়ারাবী একটা লেডিস শো’রুমে ঢুকে বেগুনি রঙের একটা জামদানি শাড়ি দেখলে আবরার ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“শাড়িটা ভালো,নিয়ে নাও..”

-“আমার জন্য নয়,ইকরা আপুর জন্য।আপু তো শাড়ি পরতে ভালোবাসে।”

বেশকিছু শপিং করে আবরার একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়িটা থামায়।ইয়ারাবী ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“এখানে কোন কাজ আছে?”

-“হামম,লান্চ করবো।”

-“না,বাড়িতে করবো।বাসায় সবার উপস্থিতিতে বাইরে লান্চ করা মোটেও ভালো দেখাবেনা।”

-“ওয়াদা করছি,পরবর্তীতে নজরে রাখবো।কিন্তু এখন এসে পরেছি তো লান্চ করে যায়।”

ইয়ারাবী আর বেশি কথা না বাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে আবরারের সাথে ভিতরে যায়।যেহেতু এটা রেস্টুরেন্ট সেহেতু লোকজনে পরিপূর্ণ,তাই আবরার একটা কর্নারের একটা টেবিল দেখে বসে।ওয়েটার মেনু দিয়ে গেলে আবরার ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“কী খাবে?”

-“আপনি যেটা অর্ডার দিবে…”

আবরার মৃদ্যু হেসে বলে,

-“ওকে চিকেন বিরিয়ানি অর্ডার করি, তোমার তো গরুর মাংসে প্রবলেম।সাথে কী নিবে?”

-“সফ্ট কিছু,আর যদি আপনি কিছু খেতে চান তবে করুন কিন্তু আমার জন্য করবেন না।”

-“না খেয়ে খেয়ে কী অবস্থা তোমার শরীরের?আঠারো বছর বয়স আর মাত্র ওয়েট বিয়াল্লিশ কেজি।”

ইয়ারাবী কিছু না বলে চুপচাপ নিজের ফোনের দিকে মন দেয়।কারন এখন আবরারের কথার প্রত্যুত্তরে কিছু বলা মানে ফেঁসে যাওয়া।ওর রাম ধমক খাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।ওয়েটার ওদের খাবার দিয়ে গেলে ওরা লান্চ করে সোজা বাসায় চলে আসে।

ডিনারের পরে আবরার ওর স্ট্যাডি রুমে কাজ করছে আর এদিকে ইয়ারাবী নিজের রুমে পড়ছে।মেঘ ঘুমঘুম চোখে একটা বই হাতে নিয়ে ওর দরজায় নক করে।ইয়ারাবী ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“ভিতরে আয়,”

মেঘ একবার ইয়ারাবীর পাশে তাকিয়ে দেখে চেলসি ওর সাথে মিশে শুয়ে আছে আর ইয়ারাবী ডান হাত ওর মাথায় বুলিয়ে দিচ্ছে কিন্তু চোখ ওর বইতে আছে।মেঘ হাই তুলতে তুলতে ওর সামনে একটা ছোট টুল টেনে নিয়ে বসে বলে,

-“এত ধৈর্য্যে কেমনে পাসরে বোন?বাপরে বাপ তুই যেভাবে পড়ার মধ্যে ডুবে থাকিস আমি যদি এমন পড়তাম তাহলে এই প্রজন্মের বিদ্যাসাগর হয়ে যেতাম।”

-“তুই এমনভাবে বলছিস যেনো তুই কিছু পারিস না।সত্যি এটাই তুই আমার থেকে অনেক ভালো স্টুডেন্ট,রেজাল্ট দিলে দেখিস তুই টপে থাকবি।”

-“শোনেন ম্যাডাম,আপনার স্ট্যাডি হিস্টোরি আমি ভালো জানি।এবার বিয়ের ঝামেলার জন্য ঠিক হবেনা তবে পরবর্তীতে পারবি।যার জন্য আসছি, আমার এই চ্যাপ্টারের নোট লাগবে,তুই করেছিস, খাতা দে।”

-“টেবিলের উপর খাতাটা আছে,দেখে নে,”

মেঘ খাতাটা নিয়ে পেইজগুলো দেখতে দেখতে বলে,

-“বাহ্,আমার আর কষ্ট করতে হবেনা।একদিক থেকে ভালো হয়েছে ভাইয়ার বৌ বানিয়ে,সমস্যায় পরলে টাকা খরচ করে ফোন করতে হবে।তবে লাস্টের দু’টার লেখা এমন লাগছে কেন?কোথায় যেনো দেখেছি?”

-“ওইটা তোর ভাইয়া করে দিয়েছে,হচ্ছিলোনা এজন্য।”

-“বৌ এর প্রতি কত ভালোবাসা,দেখলে পরাণটা জুরিয়ে যায়।”

ইয়ারাবী বেড থেকে একটা কুশন ওর দিকে মেরে বলে,

-“যাবি তুই এখান থেকে,আমাকে না পঁচালে খাবার হজম হয়না।”

মেঘ হাসতে হাসতে ওর রুম থেকে বেরিয়ে বাইরে যেতেই দেখে ফাইকা এক সার্ভেন্টের সাথে কী নিয়ে তর্ক করছে।মেঘ এগিয়ে যেয়ে ফাইকাকে বলে,

-“কী হয়েছে?”

-“আরে দেখনা মেঘ,এই ছোটলোকটা পুরো দুধের গ্লাসটা আমার উপর ফেলেছে।”

মেঘ ফাইকাকে ধমক দিয়ে বলে,

-“ভদ্রভাবে কথা বলবি,ছোটলোক কী?উনি বয়সে তোর থেকে বড়।আর সব কোথায়,হালকা তোর ড্রেসে পরেছে।”

সার্ভেন্টটা মাথা নিচু করে বলে,

-“স্যরি,ম্যাম আমি তো আপনাকে বলেছি।প্লীজ ম্যাম মাফ করে দিন।”

মেঘ সার্ভেন্টের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“তুমি কেন স্যরি বলছো,আর ফাইকা তোর চোখ কোথায় ছিলো?এটা নিয়ে দ্বিতীয় কোনো কথা যেনো না হয়।”

মেঘ কথাটা বলে ওখান থেকে চলে গেলে সার্ভেন্টও কেটে পরে।কারন ফাইকার সাথে থাকা আর প্রান হারানো এক জিনিস।ফাইকা জামার একপাশ ঝাড়তে ঝাড়তে আবরারের বেডরুমের দিকে পা বাড়াই।

-“ওই মেয়ে আসবো?”

ইয়ারাবী পড়া রেখে চেলসির সাথে খুনসুটি করছিলো।এমন কথা শুনে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে ফাইকা অতিরিক্ত বিরক্তবোধ নিয়ে দরজায় মুখ বাঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,চুলগুলো একপাশ করে বাঁধা,পরনে একটা রাতের পাতলা পোশাষ।ইয়ারাবী ভেবে পায়না,কোনো মেয়ে এমন ধরনের পোশাষ পরে কীভাবে অন্য মানুষের রুমে যেতে পারে।আর একবার নিজের দিকে তাকায়, সাদা-সবুজ রঙের প্রিন্টের সার্ট আর পাজাম পড়া,এটা পরে ঘর থেকে বের হতে অস্বস্তি হয় ওর।ফাইকা আবারও দরজায় জোরে নক করে বলে,

-“এই মেয়ে তোমাকে বলছি,শুনতে পাওনা?”

-“লিসেন্ ফাইকা,আমার একটা নাম আছে তাছাড়া আমি সম্পর্কে তোমার ভাবি হই।আর ভিতরে যখন চলে এসেছো তখন আর অনুমতি নেওয়ার কী আছে।”

ফাইকা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে,

-“বয়সে আমি তোমার বড়,সেটা ভুলে যেওনা।”

-“কিন্তু সম্পর্কে তুমি আমার ছোট,যেহেতু আমি আবরারের স্ত্রী সেহেতু তোমার বড়।কী জন্য এসেছিলে সেটা বলো?”

-“আবরার কোথায়?”

-“স্ট্যাডি রুমে আছে,”

-“জানো আবরারের সাথে তোমার মতো মেয়ে একদম যায়না।”

-“জানি আমি,তাই অনুগ্রহ করে তোমাকে কষ্ট করতে হবেনা।তবে ও কিন্তু তোমার মতো মেয়েও ডিজার্ব করেনা।”

ফাইকা কথা শুনে রেগে যায়।ইয়ারাবী হালকা হেসে বলে,

-“ওর প্রয়োজন ছিলো একজন পার্ফেক্ট মেয়ে,তবে চরিত্রহীন নয়।যেমনটা তুমি,তো অস্ট্রেলিয়াতে কয়জনের সাথে রুম ডেট করেছিলে।”

ইয়ারাবীর কথায় ফাইকা কিছুটা ভড়কে যায়।ও বুঝতে পারছেনা ইয়ারাবী কিভাবে জানলো?ফাইকা চেয়ার থেকে উঠে বলে,

-“কী বলছো তুমি?”

-“সত্যটা বলছি,ভুল তো কিছু বলিনি।তো শেষ যে বয়ফ্রেন্ডটা ছিলো কতদিন হলো তোমাদের ব্রেকআপ হয়েছে যার জন্য আবার উঠে পরে আবরারের পিছনে লেগেছো?”

-“আমি আসি..”

ফাইকা চলে যেতেই ইয়ারাবী পিছন থেকে বলে,

-“আমার চুপ থাকাকে দুর্বলতা ভাবলে ভুল করবে, আমি ভালোর সাথে খুব বিনয়ী আর খারাপের সাথে কতটা খারাপ সেটা নিজেও জানিনা।”

ফাইকা দ্রুত রুম থেকে চলে যায়।ইয়ারাবী স্বাভাবিক ভাবে চেলসির সাথে খেলা করতে থাকে।প্রায় রাত সাড়ে বারোটার দিকে আবরার রুমে এসে একবার ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।ফিরে এসে বিছানায় বসে বলে,

-“সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছো?”

-“জ্বি,কিন্তু যেতে মন টানছেনা।বারবার বারবার মনে হচ্ছে এখানে কিছু একটা হবে,খুব কাছের কিছু হারিয়ে যাবে।”

আবরার ওর কথা শুনে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

-“এমন কিছুই হবেনা,তুমি বেশি ভাবছো বলে এমন নেগেটিভ চিন্তা-ধারা আসছে।”

ইয়ারাবী আবরারের বুকে মাথা রেখে বলে,

-“জানেন আজ ভোরের দিকে একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি,জানি দুঃস্বপ্ন বলতে হয়না তবে না বললেও শান্তি পাচ্ছিনা।”

আবরার ওকে দুই বাহু দ্বারা আবদ্ধ করে বলে,

-“তাহলে বলো…”

-“দেখলাম অপরিচিত কোনো এক মেয়ে মারা গেছে,কে মারা গেছে জানিনা।তবে কাফনে মোড়ানো কাপড় দেখেছি..”

-“এমন কিছু হবেনা,স্বপ্ন সব সময় স্বপ্ন হয়,কাল দশটাই ফ্লাইট সকালে উঠতে হবে।মনে হচ্ছে, তোমার মন খারাপ,কী হয়েছে?”

-“কিছুনা..”

-“বলতে চাইলে বলো,জোর করবোনা।”

-“ইংল্যান্ড এক সময় পড়তে যেতে চেয়েছিলাম, যেখানে হাজার হাজার স্টুডেন্ট পড়ার স্বপ্ন দেখে সেখানে পড়ার চান্স পেয়েছিলাম কিন্তু ওসব মানুষদের জন্য পুরন হলোনা।”

-“তুমি চাইলে আমি ব্যাবস্থা করতে পারি,তুমি কী চাও?”

-“না,আমি কারো সুপারিশে কিছু করতে চাইনা।যা করবো নিজের চেষ্টায়।আমার পরিবার সব সময় বলতো আমার দ্বারা কিছু হবেনা,রোজ ভোর থেকে শুরু করে রাত অব্দি নানা বাজে কথা শুনাতো, এমন কথা যেগুলো শুনলে আর বাঁচার ইচ্ছা থাকেনা।এমন কোনো দিন নেই রাতে বালিশ ভিজায়নি,এখন আমার টার্ন।যেটুকু পারি সেটা করে দেখাবো,তাও নিজের চেষ্টায়।”

-“বলো.”

-“মানে?”

-“যেটাকে মনের কোনে বন্ধ করে রেখেছো,বললে মন হালকা হয়।”

-“সময় হোক ,কোনো একদিন বলবো সব।”

আবরার ওর কথা শুনে বেশি ঘাটায়না।কেননা নিজ থেকে যখন এগুলো বলেছে তখন বাকী কথাও বলবে।

(১০৮)

রাতের শেষের দিক থেকে য়ুহারের খুব অস্বস্তি হতে শুরু করে।শোয়া থেকে উঠে বসে,বারবার ওর কেন জানি মনে হয় ওর হাতে সময় খুব কম।অল্প কিছুদিনের মেহমানও।ও ধীর পায়ে ওর ভাইয়ের রুমে যেয়ে দেখে নিলয় ফোনে গেম খেলছে।য়ুহার আস্তে করে যেয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

-“ঘুমাসনি এখনো?”

নিলয় ওর বোনকে দেখে ফোনটা রেখে কিছুটা হাসির চেষ্টা করে বলে,

-“ঘুম ভেঙে গেছে,তাই গেম খেলছিলাম।”

-“ঘুমিয়ে পর,নয়তো শরীর খারাপ করবে।”

নিলয় কিছুটা অবাক হয় য়ুহারের কথা শুনে,কেননা অন্যদিন এমনটা শান্ত কখনো থাকেনা ওর বোন,লঙ্কা-কান্ড বাঁধিয়ে দেয়।কিন্তু আজ কী হলো ওর বোনের।য়ুহার ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

-“আজ আমি ঘুম পাড়িয়ে দি।”

-“তুমি ঠিক আছো আপু,কী হয়েছে তোমার?”

-“আমার কী হবে,একদম ঠিক আছি আমি।”

য়ুহার নিজের কোলের উপরে নিলয়ের মাথা রেখে হাত বুলাতে থাকে।নিলয় ঘুমিয়ে পড়লে য়ুহারের চোখেও ঘুম ভর করে।হঠাৎ ওর চোখের সামনে ভেসে উঠে অর্কভের সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো।ঠিক এমনভাবে অর্কভ ওর কোলে মাথা রাখতো।

একদিন গ্রীষ্মের পরম দুপুরে ওরা শান্ত এক নদীর পারে হাঁটতে বের হয়েছিলো।য়ুহার শাড়ি পড়তে খুব ভালোবাসে,সেদিন আকাশী-সাদা রঙের একটা জামাদানি শাড়ি পরেছিলো।চুলগুলো হাতখোপা করা,সাথে শাড়ির সাথে ম্যাচিং করা ছোট ঝুমকো আর একহাতে চুরি।

একটা বটবৃক্ষের ছায়ার আরাম করে পা ছড়িয়ে বসতেই অর্কভ ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে।য়ুহার ওর হাত দ্বারা মাথায় বিলি কাঁটতে থাকে।অর্কভ ওর ডান হাতটা নিয়ে একটা চুমু দিয়ে বলে,

-“সময়টা যদি এখানে থেমে যেতো…”

-“বাস্তবিক ক্ষেত্রে সম্ভব নয়,কেননা সময় আর নদীর স্রোত কারোর জন্য থেমে থাকেনা।এগুলোকে উপন্যাস,সাহিত্য, কবিতায় ছন্দের জন্য ব্যবহার করা হয়।”

-“সবকিছুতে বাস্তব কেন খোঁজো বলবে?”

-“জীবনটা বাস্তবতায় ঘেরা,কল্পনা শুধু স্বপ্নে সম্ভব।”

-“তোমার সাথে কথা বলে কেউ পারবেনা,ভবিষ্যতে তুমি অনেক ভালো লয়ার হবে।”

-“ন্যায়ের পথে লড়বো।”

-“তুমি পারো বটে,আজকাল মানুষ টাকার পিছু ছোটে”

-“আমি নই,আমার পরিবার এমন শিক্ষা দেয়নি।আমার মা বেশি শিক্ষিত না হলেও ন্যায়-অন্যায়ের প্রতি আছে তার অনেক জ্ঞান।মায়ের ইচ্ছা ছিলো কিন্তু পুরন করতে পারেনি,বাবা অবশ্যই পড়তে বলেছিলো কিন্তু আমার জন্য ছেড়ে দেয়।”

হঠাৎ সবকিছু ঝাপসা হতে শুধু করে,কারোর ডাকে য়ুহারের ঘুম ভাঙ্গে।তাকিয়ে দেখে ওর মা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।মিসেস অচলা মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“দু’টাতো সাপ-নেউলে সম্পর্ক,আজ হঠাৎ মাছ আর পানি হয়ে গেলে।”

য়ুহার আড়মোড়া ছেড়ে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“তেমন কিছুনা,রাতে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পরছিলা।তা কোথায় তোমার সু-পুত্র?”

-“নিচে গেস্ট এসেছে,কথা বলছে।তুমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও,এই জামাদানি শাড়িটা পরে আসো।”

-“আমি শাড়ি কেন পরবো?”

-“কেননা তোমাকে দেখতে এসেছে,তাই…”

-“মানে?আমি তো আগেই বলেছি আমি বিয়ে করবোনা।তাহলে কেন জোর করছো?”

-“আরে ছেলেটা খুব ভালো,তোমার পরিচিতও।অনেক আশা করে এসেছে।”

-“সে কে,যাকে আমি চিনি?”

মিসেস অচলা হেসে বলেন,

-“কে আবার শৈল,এখন কথা না বাড়িয়ে তৈরি হয়ে এসো।”

মিসেস অচলা রুম থেকে চলে যেতেই য়ুহার মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে।শৈল সবকিছু জেনে ওকে বিয়ে করতে আসলো,কিন্তু কেন?এটা কী ভালোবাসা নাকী করুনা?

য়ুহার জামদানি শাড়িটা পড়ে পরিপাটি হয়ে নিচে যায়,কেননা শৈলের বাবা-মাও এসেছে।প্রাণো সোফা থেকে উঠে দৌঁড়ে এসে য়ুহারকে জড়িয়ে ধরে বলে,

-“শেষ পর্যন্ত তুই আমার ভাবি হবি,”

য়ুহার বিনিময়ে একটা হাসি দিয়ে সোফায় বসে।শৈলের মা হেসে য়ুহারকে একটা চেন পরিয়ে দিয়ে বলে,

-“য়ুহারকে তো আমাদের আগে থেকেই পছন্দ, তাই আজ কাবিনটা করতে চাই।”

য়ুহার অনেকক্ষণ ধরে কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু বলতে পারছেনা।শুধু একটাই কারন সবার হাঁসিমাখা মুখ।নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে হঠাৎ দাঁড়িয়ে বলে,

-“আমি শৈল ভাইয়ার সাথে আলাদা কথা বলতে চাই।”

মিসেস অাকৃতি য়ুহারের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“অবশ্যই মা,সারাজীবন একসাথে থাকবে কথা তো বলতেই হবে।শৈল যা ওর সাথে….”

য়ুহার শৈলকে ইশারা করে নিজের রুমে যায়।শৈল ওর ঘরে যেয়ে সোফায় বসে।য়ুহার কোনো প্রকারের বাহানা না করেই সোজা ওকে প্রশ্ন করে,

-“সব জেনে আমাকে বিয়ে করতে কেন চাইছেন?”

-“ভালোবাসি…”

-“এটা করুনা..”

-“ভালোবাসা…”

-“দেখুন আমি কোনো ঠকবাজ নই যে আপনাদেরকে ঠকাবো।”

শৈল বাঁকা হেসে আরাম করে বসে বলে,

-“জীবনের দু’টা দিনও যদি তুমি বেঁচে থাকো তবে চাইবো আমার নিকট থাকো।বিয়েতে রাজী হয়ে যাও,নয়তো সবাইকে সত্যি বলতে বাদ্ধ হবো।আর তুমি নিশ্চয় চাইবেনা তোমার পরিবারের মানুষ কষ্ট পাক।”

কথাটা বলে শৈল রুম থেকে বেরিয়ে যায়।য়ুহার বুঝতে পারছেনা ও কী করবে?জীবনের হাতেগুনা কয়েকটা দিন ওর পরিবার যাতে সুখে থাকুক এটাই চাইবে।কিন্তু কীভাবে বাকীদের ঠকাবে?আর শৈলই বা কেন চাই ওর এই দু’দিনের জীবনের সঙ্গী হতে?

#চলবে_____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here