জীবন মানে তুমি পর্ব-১৮

0
4556

#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Irini Ori
#পর্ব:১৮

(৬৬)

-“আচ্ছা,বিয়ে কবে করবো আমরা?”

-“এতো সোনা,পল্লবীর একটা গতি করি তারপর।”

-“কবে করবে?গত এক বছর ধরে কথাটা শুনেই যাচ্ছি।আচ্ছা আদেও কী তুমি আমাকে বিয়ে করবে সায়ন?”

সায়ন মেয়েটার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,

-“সেই কবেই তো ওকে ছেড়ে দিতাম কিন্তু ভয় হয় ওর ভাই-বোনদের নিয়ে।বিশেষ করে আমার ওই দু’টা শালীকে নিয়ে..ইয়ারাবী আর জারা।”

মেয়েটা নিজের গায়ের চাদরটা ঠিক করে বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বলে,

-“তোমার যা ভালো মনে হয় করো কিন্তা তাড়াতাড়ি।আমিও স্বপনকে ডিভোর্স দিবো,ওর সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

সায়ন ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,

-“জারিকা বেবি,প্লীজ একটু বোঝার ট্রাই করো।তোমার বোনগুলো তো এক একটা এটম বোম।বিশ্বাস নেই যে কোনো সময় ব্লাস্ট হতে পারে।”

জারিকা নিজেকে সায়নের বাহুডোর থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।আর সায়ন বিছানায় বসে বসে জারিকার সাথে প্রথম দিনের পরিচয় মনে করে।

জারিকা সম্পর্কে সায়নের শালী হওয়া সত্ত্বেও তারা নিজেদের মধ্যে এক ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে যায়।ভুলে যায় তাদের আসল পরিচয়।একটাবারও সায়ন ভাবেনা তার মেয়ে আর পল্লবীর কথা।আর জারিকা, এটাতো তার নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জারিকা ভালোবেসে পালিয়ে যেয়ে বিয়ে করেছিলো সমীরকে।আর দু’বছর পরে যেয়ে তাদের একটা মেয়েও হয়,যার নাম নিরা।কিন্তু ধীরে ধীরে জারিকা অন্য পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে,আর তার জন্য রোজ সংসারে অশান্তি হয়।তার উপর জারিকার মায়ের কুমন্ত্রণা আছে,সুখে থাকার বদলে অশান্তি তৈরি করে দেন মেয়ের সংসারে।

যেদিন পল্লবীর মেয়ে পরী হয় সেদিন জারিকার নজর সায়নের উপর যায়।ব্যাস তখন থেকে ইনিয়ে-বিনিয়ে নিজেদের মধ্যে এক সম্পর্ক তৈরি করে,যাকে বলা হয় পরকীয়া।ক্ষণিকের সুখের জন্য তারা এক ভয়ানক খেলায় মেতে উঠে।

জারিকা ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে একটা শাড়ি পরে বেরিয়ে আসতেই সায়ন ওকে পিছন থেকে জাপটে ধরে আর বলে,

-“কাল আসতে পারবে সোনা?”

-“না,কাল সমীর আসবে।”

-“আচ্ছা তাহলে থাক তাহলে”

-“প্লীজ রাগ করেনা,এই শোনো আমাকে কিছু টাকা দিতে পারবে?”

-“কত লাগবে তোমার?”

-“দশ হাজার মতো,আছে তোমার কাছে?”

-“হ্যাঁ,আজ পল্লবীর অ্যাকাউন্ট থেকে কিছু তুলেছি।মানিব্যাগে আছে নিয়ে নাও।”

জারিকা মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করতে করতে একটু চিন্তার ভান ধরে বলে,

-“সায়ন,টাকা কম পরলে পল্লবীকে কী বলবে?”

-“উল্টো-পাল্টা কিছু বুঝিয়ে দিবো,তুমি নাও তো।চলো তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আমিও বাসায় যাবো।”

সন্ধ্যায় সায়ন বাসায় ফিরে রুমে ঢুকে শুনতে পায় পল্লবী বলছে,

-“আল-কুরআনে ব্যভিচারকে বর্জন করার সুস্পষ্ট নির্দেশ এসেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ”। (সূরা বনী ইসরাঈল -৩২) “আর যারা আল্লাহ ব্যতীত অপর কোন ইলাহের ইবাদত করে না, আল্লাহর নিষিদ্ধকৃত প্রাণী যথার্থ কারণ ব্যতীত হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আর যে ব্যক্তি এসব কাজ করে, সে শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে সে হীন অবস্থায় চিরস্থায়ী হবে। তবে তারা নয়- যারা তাওবা করে এবং সৎ কাজ করে, আল্লাহ তাদের মন্দ কাজগুলো ভাল কর্ম দিয়ে পরিবর্তন করে দেন, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াশীল”। (সূরা আল-ফুরকান ৬৮-৬৯)

হাদিস শরিফে ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে। যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে, তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে, তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে। আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে, সে আল্লাহর অসন্তোষ, কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি, হা নং ৫৬৪)

এছাড়াও আরো অনেক হাদিসে পরকীয়া আর ব্যভিচার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা দেওয়া আছে।একটা কথা মনে রাখবে সব সময়,পরকীয়া করলে ইহকাল আর পরকাল দু’টোতেই শাস্তি ভোগ করতে হবে।”

সায়ন রুমে ঢুকে দেখে পল্লবী ওর ননদকে এসব বলছে।ওই দিনের পল্লবীবের দেওয়া জবাবের পর সায়নের বোন শান্তা সত্যিই নিজের ভুল বুঝতে পারে।একে তো শ্বশুড়বাড়ি বেশি থাকা হয়না,তার উপর বাপের বাড়ি এসে পল্লবীর সাহায্য না করে কাজ বাধিয়ে দেয়।

সায়ন পল্লবীর কথা শুনে ওকে প্রশ্ন করে বলে,

-“তুমি ওকে এসব কেন বলছো?”

-“কেননা শান্তার স্বামী পরকিয়ায় জড়িয়ে গেছে।তাই ওকে বলছি,যাতে ও যেয়ে ওর স্বামীকে বুঝাতে পারে।”

সায়ন কথাটা শুনে টেবিলে একটা লাথি মেরে বলে,

-“ওই কুকুরের বাচ্চার এতবড় সাহস,ও তোকে ঠকায়।বুক একটুও কাঁপলোনা পরকীয়ায় জড়াতে।আর তুই এতদিন ওই চরিত্রহীন লোকের সাথে ঘর করছিস।ওকে আমি জেলের ভাত খাওয়াবো।”

শান্তা ওর ভাইকে বলে,

-“দেখ আমি এসব কিছুই জানতাম যে মাসুদ পরকীয়ায় জড়িতো।এই এক সপ্তাহ আগে সবটা জানলাম।”

-“ওকে তো আমি খুন করে ফেলবো।ওই শালাকে ওতো সহজে ছাড়বোনা।”

পল্লবী এবার না পেরে চিল্লিয়ে বলে,

-“পাগল হয়ে গেলে নাকী?ওর দু’টা বাচ্চা আছে,যদি ওর স্বামীকে বুঝিয়ে বলে দেখি আগে।”

-“আরে রাখো তোমার বুঝিয়ে বলা,ওকে তো আমি ছাড়বোনা।”

কথাটা বলেই সায়ন বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়।শান্তা পল্লবীর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“এবার কী হবে ?মাসুদকে যদি সত্যিই কিছু করে দেয়?”

-“কিছু করবেনা,তোমার ভাইকে আমি চিনি আপু।ও শুধু লম্বা লেকচার দিতে পারে কিন্তু কিছু করতে পারেনা।চিন্তা করেনাতো,রাতের রান্না করতে হবে,চলো।”

পল্লবী মেয়েকে ঠিক করে শুয়ে দিয়ে শান্তার সাথে রান্নাঘরে চলে গেলো।প্রথমে সরিষার তেল গরম করলো,কেননা ওর শ্বাশুড়ির বাতের ব্যাথা।একটু পরে হাক-ডাক ছাড়বে।আগে একা হাতে সামলাতে হিমশিম খেতো,কিন্তু এই কয়েকদিন ওর ননদের জন্য কিছুটা স্বস্তি পায়।

(৬৭)

রাতে ইয়ারাবী টেবিলে বসে পড়ছে আর ওর ঠিক পাশের সোফায় বসে আবরার ল্যাপটপে কাজ করছে।ইয়ারাবী এক পৃষ্ঠা নিয়ে প্রায় আধাঘন্টা সময় নিয়ে বসে অাছে।ওর একটা সমস্যা,জোরে চিল্লিয়ে না পড়লে পড়তে পারেনা।কিন্তু শ্বশুড়বাড়ি বলে কথা,এখানে তো আর চিল্লানো যায়না।

আবরার ল্যাপটপটা বন্ধ করে বাইরে যেয়ে ঠিক পাঁচ মিনিট পর এক হাতে গরম দুধ আর অন্য হাতে মেডিসিন নিয়ে ফিরে ইয়ারাবী সামনে রাখে।ইয়ারাবী চোখের চশমাটা খুলে বলে,

-“আজ মেরে ফেললেও দুধ খেতে পারবোনা।”

-“খেতে হবে ইয়ারাবী,নাও তাড়াতাড়ি করে খেয়ে নাও।”

-“আপনার মনে নেই দুধ খেয়ে কেমন অস্বস্তি হয়।প্লীজ আবরার জোর করবেননা।আর আমিতো এখন ঠিক হয়ে গেছি তাহলে মেডিসিন কেন নিবো?”

ওর কথাটা শুনে আবরারের ঠোঁটের হাসি মিলিয়ে যায়।ও কী বলবে বুঝতে পারছেনা।ইয়ারাবী আবারও বলে,

-“আপনি বলছেন না কেন?”

-“কে বললো তুমি ঠিক হয়ে গেছো?ডোজ কম্পিলিট করতে হবে,এখানে ডাক্তার আমি না তুমি?এখন বেশি কথা না বলে খাও।”

ইয়ারাবী মেডিসিন নিয়ে হাফ গ্লাস দুধ খেয়ে রাখতে গেলে আবরার ওকে চোখ গরম দিয়ে বাকীটুকু জোর করে খাইয়ে দেয়।ইয়ারাবীর দুধ খেলে মনে হয় ওর গলা পর্যন্ত খাবার আটকে আছে।এ কারনে দুধকে পুরোপুরি ভাবে না খাওয়ার পক্ষপাতিত্ব করতো,কিন্তু যখন ওর খালার বাসায় যেতো তখন রিতিমতো আবরারের মতো টর্চার শুরু করতে।

আবরার গ্লাসটা ওর কাছ থেকে নিয়ে একবার বইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আধাঘন্টা ধরে এই এক চ্যাপ্টার নিয়ে বসে আছো,কোনো সমস্যা হচ্ছে নাকী?”

-“মুখস্ত হচ্ছেনা।”

-“বুঝে পড়ো,তাহলে হয়ে যাবে।”

ইয়ারাবী মাথা নিচু করে বলে,

-“আমি জোরে ছাড়া কিছু পড়তে পারিনা,সেটা বুঝে পড়া হোক বা মুখস্ত।”

আবরার ওর কথা শুনে হাসতে হাসতে বলে,

-“এখানে কেউ তোমাকে নিষেধ করছে নাকী?তোমার যেভাবে কমফোর্টেবল হবে তুমি করবে।তাছাড়া আমার রুম থেকে কোনো সাউন্ড বাইরে যায়না।”

-“কিন্তু আপনিতো কাজ করছেন।”

-“হেডফোন আছে,তুমি পড়তে থাকো।এমনিতে অনেক গ্যাপ গেছে তোমার।”

আবরার সোফায় বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে কাজ করতে শুরু করে,এদিকে ইয়ারাবী পড়তে থাকে।এতক্ষণ পরে ওর কিছুটা শান্তি লাগছে।হঠাৎ করে ইয়ারাবীর ফোন বেজে ওঠে।ও একবার ফোন চেক করে নাম্বারটা দেখে কেটে দেয়।কিন্তু আবারও ফোন আসে,ও আবারও কেটে দেয়।
আবরার হেডফোনটা খুলে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“কে ফোন করছে যে বারবার কেটে দিচ্ছো?”

-“ন্ না মানে ও ওই আরকী…”

-“দেখি কে ফোন দিচ্ছে..”

কথাটা বলে আবরার সোফা থেকে উঠে যেয়ে ওর হাত থেকে ফোনটা নেই।কললিষ্টে যেয়ে দেখে ওর মা মিসেস ইশানি ফোন দিচ্ছে।

-“তোমার মম ফোন দিচ্ছে আর তুমি কেটে দিচ্ছো,কেন?”

-“প্ পড়ছিলাম তাই..”

আবরার বুঝতে পারছে ইয়ারাবী ওর মায়ের সাথে কথা বলতে একটুও আগ্রহী নয়।এর মধ্যে আবার কল আসলে সাথে সাথে আবরার রিসিব করে সালাম দেয়।মিসেস ইশানি সালামের উত্তর দিয়ে বলেন,

-“বাবা,কেমন আছো তুমি?”

-“আলহামদুলিল্লাহ,আপনারা সবাই কেমন আছেন?”

-“আমরাও ভালো আছি,বলছি ইয়ারাবী কোথায়?ওকে কল করছিলাম বারবার কেটে দিচ্ছিলো…”

আবরার একবার ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আম্মু,ও পড়ছে তো তাই।যদি জরুরী কোনো কথা থাকলে বলেন আমি ওকে বলে দিবো।”

-“বলছিলাম পরশু তোমার নানাভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকী।প্রতিবারের মতো এবারও দোয়া-খায়ের করা হবে।তাই কাল যদি তোমরা রংপুর যেতে তাহলে ভালো হতো।”

-“আচ্ছা,আম্মু আমি ওকে নিয়ে যাবো।”

-“বাসায় সবাইকে নিয়ে আসবে কিন্তু”

-“সরি আম্মু, ওনারা সবাই গ্রামে গেছেন,আমরাও যেতাম কিন্তু ইয়ারাবীর পরীক্ষা আর আমারও কাজ ছিলো তাই আর যাওয়া হয়নি।তবে আমরা আসবো এটা সিওর।”

-“আচ্ছা বাবা খুব খুশি হলাম,আমরা সবাই রাতেই রওনা হচ্ছি।”

-“সাবধানে যাবেন আল্লাহ হাফেজ।”

আবরার ফোনটা কেটে ইয়ারাবীকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ও বলে উঠে,

-“আমি রংপুরে যাবোনা আবরার।”

কথাটা বলে বইটা বন্ধ করে বেলকনিতে চলে যায়।আবরার ওর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।ইয়ারাবীর না যেতে চাওয়ার নিদিষ্ট কারন আছে,ওই রাতের পরে গত চার বছরে ইয়ারাবী রংপুরে আর যায়নি।ওকে জোর করে কখনো নিতে পারিনি।এক প্রকারের ট্রমার ভিতর চলে গেছে।

মাঝে মাঝে পরিবারের সমস্যাটা এতো বড় হয় যে,দুনিয়ার সব কষ্টকে উপেক্ষা করে যায়।এই পারিবারিক সমস্যাগুলো এমনভাবে মানসিক স্ট্রেস দেয় যা বলে বোঝানো যায়না।আর যদি এমন কিছু টিনেজার বয়সে ঘটে থাকে তাহলে তো কথায় নেই।

আবরার বেলকনিতে যেয়ে ইয়ারাবীর কাঁধে হাত রেখে বলে,

-“ইয়ারাবী,দেখো তোমার নানুভাইয়ের জন্য দোয়া করা হবে।আর আমরা কাল সকালে বের হবো ব্যাস।”

-“আবরার প্লীজ,এটা নিয়ে জোর করবেন না।”

-“আমি জোর করছিনা ইয়ারাবী,তোমার ভালোর জন্য বলছি।একটা ভয়কে সারা জীবন ধরে রেখে অন্ধকারে হারিয়ে যাবে,সেটা আমি কিছুতেই মানতে পারবোনা।”

-“আ আপনি এসব..”

-“দেখো,তুমি কাল যাবে।কেউ কিছু করতে পারবেনা।আমার দিকে তাকাও,ভয় পেলে আমাকে পাবে অন্য কাউকে নয়।বাইরে তো বাঘিনী রুপে থাকো,তাহলে।”

-“য্ যদি আবার কিছু হয় তাহলে?”

আবরার ইয়ারাবীকে কাছে টেনে নিয়ে দু’হাত দিয়ে কোমড় বন্ধন করে বলে,

-“স্বামীর উপর কী একটু বিশ্বাস নেই?”

ইয়ারাবী আবরারের কাঁধের কিছুটা নিচে পর্যন্ত,তাই ওর কথাগুলো আর প্রতিটি নিঃশ্বাস ওর মুখে আছড়ে পড়ছে।ওর কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছে,যা আগে কখনো হইনা।ইয়ারাবী ওর কোমর থেকে হাত সরানোর জন্য মুচড়া-মুচড়ি যত করছে ও তত আরো শক্ত করে ধরছে।

-“আ আ আবরার,প্ প্লীজ হাতটা সরান..”

-“কেন?”

-“আ আমার খ্ খারাপ লাগছে,সুরসুরি লাগলো প্ প্লীজ।”

আবরার ওকে ছেড়ে দিয়ে কপালে হাত রেখে বলে,

-“কপাল গুনে বৌ পেয়েছে,যার নাকী কোমরে সুরসুরি লাগে।আচ্ছা,শুনো এখন যেয়ে কাপড় গুছিয়ে নাও…কাল ব্রেকফাস্ট করে বের হবো আমরা।”

ইয়ারাবী ওর কথাশুনে রুমে যেয়ে নিজের আর আবরারের কাপড় বের করে গুছিয়ে নেয়।তারপর রাতে দু’জন একসাথে এশার নামায আদায় করে।
ইয়ারাবী ড্রেস চেন্জ করে এসে বিছানায় শুতে যাবে এমন সময় দেখে আবরার সোফায় বসে কিছু ভাবছে।

-“আপনি ঘুমাবেন না?”

-“হ্যাঁ,ঘুমাবো তো অবশ্যই।”

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার বলে উঠে,

-“ইয়ারাবী,এখন কিছু কথা বলবো মন দিয়ে শুনবে কেমন।”

ইয়ারাবী ওর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ায়।আবরার ওর সামনে বসে ওর ডান হাতটা ধরে বলে,

-“তোমার লোয়ার এবডোমেনে ব্যাথা কেন করে জানো?”

-“না,তবে ডাক্তার দেখিয়ে ছিলাম।উনি আমাকে শুধু বলেছিলো, ইটস্ নরমাল বাট্ ভারী কোনো কাজ করতে নিষেধ করেছিলো।কেন,কিছু হয়েছে?”

-“একটু সমস্যা আর আরকী…আর সে জন্য রেগুলার মেডিসিন নিতে হবে আর কিছু ট্রিটমেন্ট।”

ইয়ারাবী একটু নড়েচড়ে বসে বলে,

-“আবরার,প্লীজ আপনিও ভাইয়ার মতো মিথ্যা বলবেন না।আজকাল জাস্ট এগুলো নিয়ে ভাবতে পারিনা,মাথায় প্রচুর ব্যাথা হয়।তাই প্লীজ সত্যিটা বলেন।”

আবরার ওর মাথার ব্যান্ডটা ঠিক করে দিয়ে বললো,

-“রিল্যাক্স,সবকিছু নরমাল তবে কারো বেশি করে কারো কম।এটা জরায়ুর একটা সমস্যা,তবে ঠিকমত মেডিসিন নিলে ঠিক হয়ে যাবে।”

-“আপনি আগে না বলে এখন কেন বলছেন?”

-“কেননা আজ থেকেই তোমাকে মেডিসিনগুলো নিতে হবে তাই।”

-“রাতে তো খাওয়ালেন,”

-“হ্যাঁ,বাট্ এখন একটা ইনজেকশন নিতে হবে তাই..”

ইনজেকশনের কথা শুনে ইয়ারাবী লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।

-“আবরার দ্ দেখুন আমি কোনো ইনজেকশন নিতে পারবোনা।”

-“এর আগে তো দু’বার দিয়েছি,তখন তো ভয় পাওনি।”

-“তখন নিজের মধ্যে ছিলাম না তাই আপনারা সুযোগে সৎ ব্যাবহার করেছেন।দেখুন আমি ওসব কিছু নিতে পারবোনা।”

আবরার ওর কথার তোয়াক্কা না করে একটা ইনজেকশন রেডি করে ওর হাত শক্ত করে ধরে বসিয়ে ইনজেকশনের জায়গা ক্লিন করতে থাকে।ইয়ারাবী হাত ছাড়ানোর অনেক ট্রাই করছে কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছেনা।আবরার ওর দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলে,

-“বাচ্চা বৌয়ের অতো শক্তি নেই আমার হাত ছাড়ানোর।”

-“দেখুন ভালো হবেনা কিন্তু।”

-“কী করবে শুনি,মাত্র ৪০ কেজি ওয়েট নিয়ে আমার সাথে লাগতে আসবে?”

-“ফালতু কথা বলবেন না,আর আমি নিবোও না।”

আবরার ওর হাত ছেড়ে দিয়ে বলে,

-“হয়ে গেছে….”

-“কখন দিলেন?”

-“ঘুমিয়ে পরো,রাত অনেক হয়েছে।আর হ্যাঁ,কাল হাতে একটু ব্যাথা হতে পারে।”

ইয়ারাবী মুখ ফুলিয়ে থেকে হঠাৎ ওর কিছু মনে পড়তেই আবরারকে বলে,

-“আবরার আপনি অনেক সুন্দর কোরআন তিলাওয়াত করতে পারেন,যদি রাগ না করেন তাহলে একটু শুনাবেন।”

-“ঠিক আছে,কিন্তু তার আগে শুয়ে পুরো”

ইয়ারাবী শুয়ে পড়লে আবরার ওর দিকে কাত হয়ে এক হাতে ভর দিয়ে ওর হাতটা শক্ত করে ধরে সূরা-ইয়াসীন পড়তে শুরু করে।ইয়ারাবীর কোরআন তিলাওয়াত অনেক ভালো লাগে।আর আবরারও না দেখে কোরআন তিলাওয়াত করতে পারে।তাই ইয়ারাবী আজ রাতে শুনাতে বললো।

ও ঘুমিয়ে যেতেই আবরার লাইট অফ করে শুয়ে পরে।আবরার ওকে মিথ্যা বলে মেডিসিনটা দিয়েছে।কেননা সত্যটা ইয়ারাবী কখনো মানতে পারবেনা আর না আবরার বলতে পারবে।সামনে কী হবে সেটা আবরারের জানা নেই তবে,ও যাতে ভালো থাকে সেই ব্যাবস্থায় করবে।

(৬৮)

রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার খান বাড়িতে বড় করে প্রতিবছর দোয়া পড়ানো হয়।ওইদিন গরীব,এতিমদের খাওয়ানো হয়।মাদ্রাসার ছেলেদের নতুন জামা-কাপড়সহ আরো অনেক কিছু দেওয়া হয়।সকাল ধরে সব কিছুর আয়োজন চলছে।

মিসেস ইশানিরা পাঁচ বোন ,দুই ভাইসহ তাদের পরিবারের সবাই রাতের দিকে রওনা দিয়েছিলো।তাই ভোরের আগেই পৌঁছিয়েছে।

এখানে আদিবাদের সাথে হাসানও এসেছে।ওদের গ্রামের বাড়িটা অনেক সুন্দর,তবে সাত জনের বাড়ি মাঝের বড় উঠানকে ঘিরে অনেক সুন্দর করে করা।

হাসান ভোরে ঘুম থেকে উঠে শুভ আর নিলয়ের সাথে হাঁটতে বের হয়।অনেক কথা বলতে এক পর্যায়ে প্রশ্ন করে,

-“শুভ,এই আবরারটা কে?”

-“ও আবরার,উনি আমাদের দুলাভাই আপনার মতো।ইয়ারাবী আপুর হাসবেন্ড।ফুপু তো বললো উনাদেরও আসার কথা আজ?”

-“ইয়ারাবী কী ওর শ্বশুড়বাড়ি থাকে,আচ্ছা এমন এডুকেটেড ফ্যামিলিতে এমন অল্প বয়সে বিয়ে কেন হলো?”

-“আমরা তো আর জানিনা,তবে আপু পড়াশোনা করছে।আর দুলাভাই আপুর খুব খেয়াল রাখে।”

-“উনি পেশায় কী করেন?”

-“ভাইয়া একজন ডাক্তার,সাথে একজন সাইন্টিস্ট ও শুনলাম।”

-“আচ্ছা চলো ফেরা যাক।”

ওরা হেঁটে বাড়ি ফিরে ব্রেকফাস্ট করে নেয়।আদিবা কিছুটা নরমাল হওয়ার চেষ্টা করছে হাসানের সাথে,তবে হুট করেই তো আর সব হয়না।

রিচিকা অনেকক্ষণ ধরে মিসেস ইশানির পিছন পিছন ঘুরঘুর করছে।মিসেস রহমান ভাইয়ের মেয়ের কান্ড কারখানা দেখছেন।এদের এমন ব্যাবহার মানে ইয়ারাবীর জন্য কোনো খারাপ কিছু।মিসেস ইশানি ইয়ামিলাকে খাইয়ে মুখ মুছে দিয়ে রিচিকার দিকে তাকিয়ে বলে,

-“কিছু বলবি আম্মু?”

-“ফুপু,বলছিলাম তোমার ছাদের উপর যে রুমটা মানে ইয়ারাবীর আরকী,ওইটা একটু খুলে দিবে।ওখানে আমি রোহিতের সাথে থাকতে চাচ্ছিলাম।”

-“তুই তো জানিস,ওই রুমটা ইয়ারাবী নিজে ডিজাইন করে বানিয়েছিলো।ওর খোলামেলা জায়গা পছন্দ,আর ওর বাবারও পছন্দ নয় কেউ ওর রুমে থাকুক।”

রিচিকা রাগে গজগজ করতে করতে বলে,

-“মেয়েকে এতো লাই কেন দাও বলোতো,কোনো সোনা-দানা চাইনি,শুধু রুমটা চেয়েছি।”

-“রাগছিস কেন তুই?তুই ওখানে থাকলে ও কোথায় থাকবে?”

-” গত চার বছরে তো একবারও আসেনি,তাহলে আজ কেন আসবে?আর তোমাদের তো আরো রুম আছে,আর যদি না হয় তবে আমাদের রুমে থাকতে দিয়ো।”

মিসেস রহমান ঠাস্ করে রিচিকার গালে থাপ্পড় লাগিয়ে দিয়ে বলে,

-“মার যদি না খেতে চাস তবে যা এখান থেকে।আর হ্যাঁ,কোনো প্রকারের সিনক্রেট আমি দেখতে চাইনা।”

রিচিকা ওর এই ফুপুকে যমের মতো ভয় পায়।তাই কোনো টু-শব্দ না করে তাড়াতাড়ি চলে যায়।মিসেস ইশানি কিছু বলতে চেয়েছিলো তবে বোনের চোখ রাঙ্গানিতে কিছু বলার সাহস পায়না।

(৬৯)

বিকালের দিকে ইয়ারাবীরা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়।প্রথমে আবরার গাড়ি থেকে নামে তারপর ইয়ারাবী। আজ আবরার ব্লু জিন্স,ব্লাক টি-শার্ট,ব্লাক জ্যাকেট,চুলগুলো হালকা কপালের উপর,চাপ দাড়ি আর সবুজ চোখ সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর লাগছে।অপরদিকে ইয়ারাবী ব্লু কালারের বোরখা পরেছে।রাস্তায় ব্রেক নিয়েছিলো তাই একবারে নেকাব বেঁধে এসেছিলো।

মিসেস ইশানি ওনাদের দেখে এগিয়ে যান।তবে ইয়ারাবী ওর মায়ের কাছে না যেয়ে ওর খালাকে জড়িয়ে ধরে কথা বলে।আবরাররা সবার সাথে কথা বলে ইয়ারাবীর রুমে চলে যায়।ওর রুমটা ছাদের উপরের অর্ধেক জায়গা জুরে,পুরো চার বছর পর ও ওই রুমে পা রাখলো।ও আসবে শুনে ওর খালা লোক দিয়ে ওর রুমটা সুন্দর করে পরিষ্কার করেন।

আবরার সিড়ি দিয়ে ছাদে উঠে ওর রুমে ঢুকে পুরো অবাক।কেননা এত ছোট বয়সে কোনো রুম ডিজাইন করা আর সেটা ডেকোরেট করা কম কথা নয়।আবরার প্রথমে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসে দেখে ইয়ারাবী বসে হাত মুচরা-মুচরি করছে আর পায়ের নক দিয়ে ফ্লোরে গুতা দিচ্ছে।ওর আচারনে আবরার বুঝতে পারছে ও ভয় পাচ্ছে।আবরার ওর কাধে হাত রাখতেই লাফিয়ে উঠে।

-“কী হলো?”

-“ক্ কিছুনা,ফ্রেস হবো।আবরার আমি ওয়াসরুমে যাচ্ছি আপনি প্লীজ এখানে থাকবেন।”

-“আচ্ছা আমি আছি,তুমি যাও।”

ইয়ারাবী একটা কালো গাউন বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়।আবরার রুম থেকে বের হয়ে ছাদে হাঁটাহাঁটি করে চারপাশটা দেখতে থাকে।ইয়ারাবী বের হয়ে দেখে আবরার রুমে নেই।ইয়ারাবী জ্যাকেটটা পরে মাথায় ওড়না দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে দেখে আবরার রেলিং এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ইফাজের সাথে কথা বলছে।হঠাৎ ইয়ারাবীকে দেখে দু’জনের চেহারায় ভয় ফুটে উঠে।কেননা ওরা একে আপরকে তুই করে বলছিলো।

ইয়ারাবী ওদের দেখে বুঝতে পারে ওরা ব্যাপারটা লুকাতে চাইছে।তবে কেন লুকাতে চাইছে সেটা বোধগম্য হচ্ছেনা ইয়ারাবীর।ও নিজেকে নরমাল করে বলে,

-“আপনাকে আমি বলেছিলাম না রুমে বসতে।”

-“রুমের সামনেই দাঁড়িয়ে আছি,সেই একই কথা।”

ইফাজ ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“পিচ্চি,কীরে আমার সাথে কথা বলছিস না কেন?”

-“আমি তোমার কী হই?বলবোনা কথা যাও ভাগো।”

মিসেস ইশানি ওনাদের কাজের লোক পারু আর মিনার সাথে করে আবরারদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসেন।রুমে দিতে গেলে আবরার নিষেধ করে ছাদের ছোট টেবিলে দিতে বলে।ওনারা নাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ওর মা ইয়ারাবীর দিকে তাকায়।কিন্তু প্রত্যেকবারের মতো ও ওর মায়ের সাথে কোনো কথা না বলে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।

ইফাজ হেসে ওর ডান হাত টেনে ধরলে ইয়ারাবী ব্যাথায় চেচিয়ে উঠে।ইফাজ একবার আবরারের দিকে তাকিয়ে ওকে বলে,

-“কী হয়েছে তোর?কোথায় ব্যাথা লেগেছে?”

-“আরে বাবা,হাতে ব্যাথা।কাল ইনজেকশন দিয়েছে ওটার জন্য ব্যাথা করছে।”

আবরার ইয়ারাবীর দিকে হেসে বলে,

-“থ্যাংকস,তুমি যদি না বলতে তাহলে নির্ঘাত তোমার ভাই আমাকে খুন করতো।”

-“ওয়েলকাম,আমি আবার পরোপকারী।”

ইফাজ এবার ওর বাম হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে,

-“কথা কেন বলবিনা?আমি তো এমন কিছু বলিনি যার জন্য কথা বলা যাবেনা।”

-“দু’সপ্তাহে একবারও কল করেছে,অনলাইনেও থাকোনা।বড়টা বিজি থাকে অলওয়েজ তাই, তার কোনো সময় হয়না।কিন্তু তুমি..”

-“কে বললো খোঁজ করিনা।আবরারের কাছ থেকে রোজ খোঁজ নেওয়া হয়।”

ওরা বিভিন্ন কথা বলতে বলতে নাস্তা শেষ করে।একটু পর মাগরিবের আযান দেয়।যেহেতু ওদের বাসার সাথে মসজিদে তাই ছেলেরা মসজিদে যায় নামায পড়তে।আবরার যেতে গেলে ইয়ারাবী বলে,

-“ঘরে পরলে হয়না।”

আবরার হেসে বলে,

-“তুমি ওযু করে নামায,কোরআন শরীফ পড়তে থাকো আমি চলে আসবো।আর বেশি ভয় করলে রুম লক করে বসো।”

-“না লক করছিনা,কিন্তু আপনি তাড়াতাড়ি আসবেন।”

আবরার হালকা হেসে মাথা নাড়িয়ে পান্জাবির হাতা ঠিক করতে করতে মসজিদে যায়।ইয়ারাবী দরজাটা হালকা চাপিয়ে দিতে গেলে মিসেস রহমান ওর রুমে আসে।

-“খালামনি,কিছু বলবে?”

-“না আসলে নামায পড়তে এলাম,যদি তোর সমস্যা না হয়।”

-“না না আসো আসো,চলো নামাযটা পড়েনি।”

ইয়ারাবী ওর খালার কথা শুনে খুব খুশি হয়ে গেলো।আসলে ওর খালাকে আবরার বলেছিলো ওর কাছে যেতে।কেননা ও এতদিনে এতটুকু বুঝতে পেরেছে ইয়ারাবী ওর মায়ের কাছে থাকলে নিরাপদ নয়,তাছাড়া ও ওর মাকে বিশ্বাস পর্যন্ত করেনা।

ওরা নামায শেষ করলে ইয়ারাবী কোরআন শরীফ পড়তে বসে।টিকলি এসে ওর খালাকে নিচে ডাকে,রান্নার ব্যাপারে কথা বলার জন্য।
ওর খালা হালকা দরজাটা চাপিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যান।ইয়ারাবী কোরআন শরীফ পড়া শেষে রাখতে যায় তখন কারোর কথার আওয়াজ শুনতে পায়।

-“না আছে মায়াবিনী চোখ,না আছে গোলাপী ঠোঁট।না আছে কিউট ভয়েজ,না আছে সিল্কি চুল।তবুও বলবো ভালোবাসি,হৃদয়ের এক অনন্য স্থানে
ঠাই দিয়েছি যে তোমাকে।”

ইয়ারাবী কোরআন শরীফটা রেখে ঘুরে তাকিয়ে দেখে ইমনের বয়সি একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।তবে চেহারাটা দেখে মনে হয় এখনো স্কুল কলেজে পড়ে।ইয়ারাবী হেসে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“ভ্যাকান্সি খালি নেই…”

-“তোমার কী মনে হয়,লাইন মারছি তোমাকে?”

-“অবশ্যই নয়,তবে অন্য কেউ এটাই ভাব্বে মি. শাহরিয়ার রিফাত”

-“কেমন আছো?”

-“আলহামদুলিল্লাহ,বাট্ খুব রাগ করেছি তুমি আসোনি তাই।”

-“টুরে ছিলাম,ইমন রাতে ফোন করে বলে তোমার বিয়ে।তখন তো আর আসতে পারিনা।”

-“ভিতরে এসে বসো।”

শাহরিয়ার ইমনের বাল্যকালের বন্ধু।এজন্য ইয়ারাবীর সাথেও খুব ভালো সম্পর্ক।শাহরিয়ার ভিতরে এসে বসলে ইয়ারাবী বলে,

-“হবু ভাবীর খবর কী?”

-“আর ভাবী,এটাও হাত থেকে গেছে।আমার জীবনে প্রেম নাই,শেষমেষ এরেন্জ ম্যারেজ হবে দেখো।”

-“তুমি পারো বটে,আচ্ছা নামায তো শেষ তাইনা।”

শাহরিয়া ওর কথা শুনে হেসে বলে,

-“তোমার হাসবেন্ড নিচে কথা বলছে আঙ্কেলের সাথে।”

-“ওহ্ বাট্ আমি এমনি জিজ্ঞাস করেছি তোমাকে।”

ওর সাথে কথা বলতে বলতে আবরার রুমে ঢোকে শাহরিয়ারকে দেখে খানিকটা অবাক হয়ে যায়।শাহরিয়া আগে হাত এগিয়ে হ্যান্ডশেক করে বলে,

-“শাহরিয়ার রিফাত,ইমনের ব্যাচমেট।”

আবরার খানিকটা হাসার চেষ্টা করে বলে,

-“আবরার,ওর হাসবেন্ড।”

-“জানি,আসলে অনেকদিন পরে দেখা হলো তাই কথা বলছিলাম।আচ্ছা তো আ না মানে তোমরা থাকো আমি দেখি ইমন কোথায়।”

-“আচ্ছা ভাইয়া..”

শাহরিয়ার বেরিয়ে যেতেই ইয়ারাবী আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আপনি দেরি কেন করলেন?”

-“তোমাকে কম্পানি দেওয়ার জন্য কেউ তো ছিলো।”

-“আবরার উনি আমার ভাইয়ার মতো,আপনি যা ভাবছেন তা নয়।”

-“ম্যাডাম এমন কিছুই ভাবছিনা আমি,তুমি একা ছিলেনা তাই বললাম।আর এটাও জানি তুমি ওর কাছে বোনের মতো।সেই এসে ধরে রুমের মধ্যে আছো,চলো বের হই।”

-“হামম চলুন।”

ওরা নিচে নেমে দেখে ওদের সব ভাইবোন উঠানে চেয়ার নিয়ে বসে গোল হয়ে কথা বলছে।কিন্তু সবাই থাকলেও শুভর তিন বোনেরা নেই।তাতে ইয়ারাবীর ভালোই হয়েছে তবে আদিবাকে দেখে ওর কেমন একটা লাগছে।আবরার,হাসানরা বেশ কিছুক্ষণ কথা বলছে।হাসান আবরারকে দেখে সত্যিই অবাক,কেননা আবরার ইয়াং ডাক্তারদের মধ্যে এক রোল মডেল,তাছাড়া অনেক নাম ডাক আছে।এবার ও ভালোই বুঝতে পারছে আদিবা কেন এত আকৃষ্ট হয়েছিলো।

হঠাৎ ওদের বাড়িতে পিয়াস আর ওর বাবা আছে।যাদেরকে দেখে ইয়ারাবী সত্যিই খুব ভয় পায়।ভয় পেয়ে ও আবরারের বাম হাতটা খামছে ধরে।আবরার ওর দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে,

-“এখানে আমি আছি,তোমার ভাইয়ারা আছে।ডোন্ট ওরি কিছু হবেনা।”

-“আমি রুমে যাবো প্লীজ চলুন।”

ইমন মোবাইলে গেম খেলতে খেলতে ওর পাশে এসে বসে বলে,

-“ডিনারের আগে একপাও কোথাও যাবিনা।চুপচাপ বসে থাক।”

-“খাটাস একটা”

-“ভালো..”

পিয়াস ওর দিকে তাকাতেই আবরার ওর বাম হাত ইয়ারাবীর পিছন দিয়ে ওর কাধে রেখে কথা বলতে থাকে।আবরারের এটিটিউড দেখে ওর আর সাহস হয়নি সামনে আসার।

কোনো ঝামেলা ছাড়ায় রাতের ডিনার কম্পিলিট করে নেয় সবাই।ইয়ারাবী উঠানের একপাশে দাঁড়িয়ে অনুর সাথে ফোনে কথা বলছিলো।ঠিক তখনি কেউ ওর পিঠ খুব বাজে ভাবে স্পর্শ করে।প্রথমে ও আবরারকে ভেবেছিলো কিন্তু পরে যেয়ে মনে হয় এটা আবরার নয়।কেননা আবরার এমন স্পর্শ কখনো করবেনা।ফোনটা রেখে পিছন ঘুরে দেখে আক্কাস আলী পিয়াসের বাবা।

ও এক ঝটকায় ওকে ধাক্কা দিয়ে পিছনে সরে যায়।আক্কাস ওকে পিছাতে দেখে বলে,

-“আরে ছ্যামড়ি,সরে গেলি ক্যান?তোরা তো শহরে মাইয়া,এসব তো করেই থাকিস।”

-“মুখ সামলে কথা বলবেন।নয়তো ভুলে যাবো আপনি মুরুব্বি মানুষ।”

-“ওই কী করবি তুই?তোর বর কী জানে চার বছর আগে গেরামে কী হইছিলো।আমার ভালা পুলাডারে কেমনে কাছে টানছিলি?ও তো…”

আর কিছু বলতে পারেনা আক্কাস আলী।কেননা তার আগেই আবরার ওকে গলা টিপে ধরে।আবরারকে এই মুহুর্তে খুব ভয়ংকর দেখতে লাগছে।ও এমনভাবে ওকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে আছে আর একটু হলে প্রাণ যায় যায়।ইয়ারাবী নতুন করে কোনো অশান্তি চায়না।ও আবরারকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু ছাড়াতে পারেনা।পাশে তাকিয়ে দেখে ইমন চেয়ারে বসে কোক খাচ্ছে আর ওদের দেখছে।ইয়ারাবী দৌঁড়ে ওর কাছে যেয়ে বলে,

-“ভাইয়া তুমি দেখতে পারছোনা,উনাকে প্লীজ মারতে নিষেধ করো।”

ইমন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,

-“বরটা তোর, আমার কথা কী শুনবে?তাছাড়া যা ওর কর্তব্য তাই করছে।”

ও ওর ভাইয়ার সামনে হাত জোর করে বলে,

-“এমনিতে কিছু না করে অপয়া নাম হয়ে গেছে,এবার এটা নিয়ে কিছু হলে আমাকে কথা শুনাতে বাকী রাখবেনা।”

ইমন উঠে দাঁড়িয়ে বলে,

-“তুই তো কিছু করিসনি ফড়িং,তাহলে ভয় পাচ্ছিস কেন?”

-“আমি ভয় পাচ্ছিনা ভাইয়া,জাস্ট কালকের দোয়া মাহফিলটা ঠিক করে হয়ে যাক সেই চেষ্টা করছি।প্লীজ ওকে আটকাও।”

ইমন দেখলো ওকে না আটকালে হবেনা।ওরা যেতে যেতেই আবরার আক্কাসের দুটা হাত ভেঙে দেয়।ইমন অনেক কষ্ট আবরারকে বুঝিয়ে ওখান থেকে সরায়।আক্কাস ব্যাথায় কুকড়াতে থাকে।আবরার ওর শার্টের কলার ধরে বলে,

-“তোর কোনো ধারনা নেই আমি কে?তাই ইয়ারাবী দিকে তোর যে নজর আছে ওটা সরিয়ে নিস।ওই দিন তোর ছেলেকে মেরেছিলাম আর আজ তোকে।অ্যাকচুয়ালি,আমি মানুষকে একটা সুযোগ দি।তাই তোকেও দিলাম।ভালো হয়ে যা,নয়তো পস্তাবি।আর হ্যাঁ,এখনকার কোনো ঘটনা যেনো কেউ না জানে।”

কথাটা বলেই আবরার ইয়ারাবীর হাত ধরে উপরে চলে যায়।কথায় আছে,”স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হওয়া উচিত হাত ও চোখের মতো।যদি হাত ব্যাথা পায় তো চোখ কাঁদে আর যদি চোখ কাঁদে তাহলে সেই হাত চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।”

আবরার রুমে এসে ইয়ারাবীকে খাটে বসিয়ে ব্যাগ থেকে মেডিসিন আর এক গ্লাস পানি দেয়।ও কাঁপাকাঁপা হাতে খেয়ে নেয়।আবরার ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“যা হলো সেটাই তোমার কোনো দোষ নেই,তার ভয় পাওয়ার কোনো দরকার নেই।আর আমি তোমার বাবা-মা নই যে কিছু না জেনেই তোমার গায়ে হাত তুলবো।ইসলামে কখনো স্ত্রীকে প্রহার করা নিষেধ। কেননা একজন স্বামীর দায়িত্ব হলো স্ত্রীর যত্ন এবং নিরাপত্তা রক্ষা করা। একজন রক্ষক কখনোই ভক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে পারে না।

তোমার পরিবার তোমার জীবনের দায়িত্ব নেয়ার জন্য জন্য আমার হাতে তুলে দিয়েছে, শোষণের জন্য নয়। একজন স্বামীর উচিত তার স্ত্রীর একজন ভাল বন্ধু হওয়া। আর কখনো স্ত্রীর মুখে আঘাত করা যাবে না।

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন,” রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও তাঁর কোন খাদেমকে অথবা তাঁর কোন স্ত্রীকে মারপিট করেননি এবং নিজ হাতে অপর কাউকেও প্রহার করেননি।”– [সহীহুল বুখারী ৩৫৬০, ৬১২৬, ৬৭৮৬, ৬৮৫৩, মুসলিম ২৩২৮, আবূ দাউদ ৪৭৮৫, ৪৭৮৬, আহমাদ ২৩৫১৪, ২৪৩০৯, ২৪৪৬৪, ২৫৪২৫, ২৭৬৫৮, মুয়াত্তা মালেক ১৬৭১, দারেমী ২২১৮, গয়াতুল মারাম ২৫২, মুখতাসার শামাইল ২৯৯।]

তাহলে আমি তার উম্মত হয়ে যেখানে তোমার কোনো দোষ নেই সেখানে কেন তোমার গায়ে হাত তুলবো।”

#চলবে_______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here