জীবন মানে তুমি পর্ব-১৫

0
5665

#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Irini Ori
#পর্ব:১৫

(৫৪)

আবরার গাড়ি ড্রাইভ করছে আর পাশে ইয়ারাবী বসে আছে।কিন্তু ও কাল রাতের মতো কেমন একটা অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আবরার সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে করতে বলে,

-“সকাল ধরে দেখেছি,তুমি আমাকে দেখে যাচ্ছো।আই নো,আমি হ্যান্ডসাম বাট্ এভাবে তাকিয়ে থাকলে তো নজর লেগে যাবে।”

-“আপনি এখনো আমার প্রশ্নের উত্তর দেননি।কাল রাতে আপনি কোথায় ছিলেন?”

আবরার খুব শান্ত ভয়েজে জবাব দেয়,

-“তোমার ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলাম।কালতো বলেছি।”

-“তো কোথায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন?আমার জানা মতে রাতে বাইরে কিছুটা ঠান্ডা পরছিলো,আর ভাইয়ার রুমেও ফ্যান ছিলো।প্ পিয়াসকে আপনি মেরেছেন তাইনা?”

-“কে বললো আমি মেরেছি,ও ড্রাংক ছিলো,তোমাদের চিলেকোঠা থেকে পা পিছলিয়ে পরে গেছে।”

-“আপনি মিথ্যা বলছেন,আমি ঘুমিয়ে গেলে আপনি ওকে মারতে গিয়েছিলেন।আমি সবটাই জানি।”

আবরার সামনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,

-“ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখো সেটা জানি,কিন্তু আজকাল আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবে সেটা ভাবিনি।”

-“আপনি আর ইফাজ ভাইয়া যখন ওকে মারছিলেন তখন টিকলি দেখে নিয়েছিলো।আজ সকালে ও আমাকে সবটা বলেছে।”

আবরার জোরে ব্রেক কষে বলে,

-“ড্যাম ইট,কখন দেখলো ও।ওকে ফাইন,লিসেন ইয়ারাবী তুমি এখন আমার ওয়াইফ ,তোমাকে বকা,শাষন করা,ভালোবাসার সবটা অধিকার শুধু আমার।যেখানে বাইরের কেউ এসে আমার সম্পদে নজর দিবে সেটা আমি একদমই চাইবোনা।আগে কী হয়েছিলো সেটা আমার জন্য মেটার করেনা,মেটার করে তোমার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ।ইজ্ দ্যাট ক্লিয়ার।”

আবরারের কন্ঠে একধরনের রাগ মিশ্রিত ছিলো।ওর সবুজ চোখগুলো জ্বলজ্বল করে উঠছে।ইয়ারাবী ওর দিক থেকে নজর সরিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আ আবরার,আমি তো র্ রেগে যাওয়ার মতো কোনো কথা বলিনি।আপনি রাগ করছেন কেন?”

আবরার নিজেকে শান্ত করে বলে,

-“ইয়ারাবী আমার রাগ খুব ভয়ংকর,যেটাকে তুমি কোনোদিন সামলাতে পারবেনা।এজন্য আমার থেকে কোনো কিছু লুকাবেনা,সেটা ভালো হোক বা খারাপ।”

ডান হাত দিয়ে গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে ওকে বামহাতে একটা পানির বোতল দিয়ে বলে,

-“খেয়ে নাও ভালো লাগবে।”

ইয়ারাবী বোতল থেকে পানি খেয়ে বলে,

-“তাহলে কাল রাতে কেন বলেননি?”

-“বললে ভয় পেতে।”

ইয়ারাবী আর কিছু না বলে সিটে হেলান দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়।ও আবরারকে মিথ্যা বলেছে যে ঘটনা টিকলি স্বচোখে দেখেছো।ওর কেন জানি মনে হচ্ছিলো কাজটা আবরারদের।

কাল রাতে যখন ও আবরারকে জিজ্ঞেস করলো,

-“আপনি ক্ কোথায় গেছিলেন?”

আবরার ড্রেসিংটেবিলের উপর নিজের বাম হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বললো,

-“কাল চলে যাবো,তাই তোমার ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলাম।”

ওকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।ইয়ারাবী বিছানার উপরে বসে এখনো ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আবরার চেন্জ করে এসে দেখে ও না শুয়ে বসে আছে।আবরার ড্রিম লাইটটা জ্বালিয়ে ওর পাশে শুয়ে পরে।

-“না শুয়ে বসে আছো কেন?”

-“সত্যি করে বলুন আপনি কোথায় ছিলেন?”

আবরার উঠে ওকে টান দিয়ে শুয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পরে।তারপর বলে,

-“দেখো অনেক টায়ার্ড লাগছে,ঘুমিয়ে পরো।”

-“কিন্তু আমার কথা..”

-“নো মোর ওয়ার্ডস্,”

তারপর ওর বাম হাতটা শক্ত করে ধরে ঘুমিয়ে পরে।ইয়ারাবীর ও আজ অনেক ঘুম পাচ্ছে,ও নিজেও ঘুমের রাজ্যে পারি জমায়।

সকালবেলা মিষ্টি সুরে কোরআন শরীফ তিলাওয়াতের আওয়াজে ওর ঘুম ভাঙে।ইয়ারাবী উঠে বসে, ডান সাইডে তাকিয়ে দেখে আবরার তিলাওয়াত করছে।হঠাৎ তুরির আওয়াজে ওর ধ্যান ভাঙে।সামনে তাকিয়ে দেখে আবরার ওকে দেখে হাসছে।ইয়ারাবী এতটাই তিলাওয়াতে মুগ্ধ হয়ে ছিলো যে কখন আবরার ওর সামনে এসেছে বুঝতে পারেনি।ও বেশ লজ্জা পায় এতে।আবরার ওর মাথায় হাত রেখে কিছু একটা ফুঁ দিয়ে বলে,

-“এখন আর লজ্জা পেতে হবেনা ম্যাডাম,যেয়ে ফ্রেস হয়ে নিন।কালতো কিছু প্যাক করা হয়নি এখন করে নিলে ভালো হয়।”

ইয়ারাবী ওর কথা শুনে বিছানা ছেড়ে উঠে চুলগুলো আলতো হাতে বেঁধে নেয়।তারপর কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই আবরার পিছন থেকে ডাক দেয়।

-“ইয়ারাবী…”

-“জ্বি বলুন”

-“একটা জিনিস খেয়াল করছো কাল রাতে কিন্তু কোনো ভয় পাওনি।”

ইয়ারাবীর এতক্ষণে টনক নড়ে।ওর ব্যাপারটা মাথা থেকে বের হয়ে গেছিলো।পুরো চারটা বছর পর এই প্রথমবার এক ঘুমে রাত পার করেছে।বিষয়টা ওর কাছে খুব আশ্চর্যের লাগছে।আবরারের দিকে তাকিয়ে দেখে ও মিটমিট করে হাসছে।

-“আপনি হাসছেন কেন?”

-“নাথিং,তুমি ফ্রেস হয়ে নাও।”

ইয়ারাবী ফ্রেস হতে চরে যেতেই আবরার ড্রয়ার থেকে ছোট শিশি টাইপের কিছু বের করে নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে নেই।কাজটা খুব দ্রুত করে।কেননা ও চাইনা ইয়ারাবী এটা দেখুক।

ওরা সকালে সব কিছু ঘুছিয়ে নেয়।সব গুছানো হয়ে গেলে ইয়ারাবী একবার নিজের টেবিলে হাত বুলায়।এর সাথে অনেক স্মৃতি মিশে আছে।

সকালে ব্রেকফাস্টের জন্য মিসেস ইশানি ওদের ডাকতে আসেন।ইয়ারাবী যেতে চাইছিলোনা কিন্তু আবরার ওকে বুঝায়,গুরুজন ডাকতে এসেছে চলো।নিচে যেয়ে ও বেশি অবাক হয়।কেননা নাস্তার টেবিলে ওর বাবা-মা,ওর খালাতো ভাই বোনেরা,ইয়ামিলা আর ওর ফুপি আর ওনার মেয়ে।ও তারার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইফাজ বলে,

-“ছোট মাথায় বেশি চাপ নিসনা,উল্টো-পাল্টা কোনো প্রশ্নও করবিনা।চুপচাপ ব্রেকফাস্ট করবি।আমি যেন না খেয়ে উঠতে দেখিনা।”

-“করতে কই পারলাম তার আগেই তো চুপ করিয়ে দিলে।”

-“ভালো এবার খেয়েনে।আর আবরার,কাল বা পরশু সময় পেলে ওকে ক্লিনিকে নিয়ে আসবে,আবার চেকআপ করতে হবে।”

আবরার খেতে খেতে বলে,

-“সমস্যা নেই কাল নিয়ে যাবো,জাস্ট টাইমটা ম্যাসেজ করে দিও।”

মি.ফুয়াদ এবার ইফাজের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“কীসের চেকআপ?ওর কী হয়েছে?”

-“খালু আপনারা যা করেছিলেন তার ফল ভুগছে।”

-“ভাইয়া আমি ঠিক আছি।”

আবরার ইয়ারাবীর দিকে না তাকিয়েই বলে,

-“এখানে তোমার ডিসিশন কেউ চাইনি।”

তারা পাশ থেকে ওর কানে কানে বলে উঠে,

-“তোকে সোজা করার জন্য আবরারই পার্ফেক্ট।তুই যেমন ঘাড়ত্যাড়া,এবার দেখ কেমন লাগে আমার পুতুল সোনা।”

-“স্টারপু,উনি ঘাড়ত্যাড়া কীনা সেটা তো জানিনা বাট্ তোমারটা তো নাম্বার ওয়ান ঘাড়ত্যাড়া।দেখো এবার আমি কী করি।”

তারা ওর দিকে চোখ ছোট করে তাকিয়ে থাকে।ইয়ারাবী তারার দিকে কোনো নজর না দিয়ে ওর ফুপির দিকে তাকিয়ে বলে,

-“মনি,স্টারপুকে কবে ঘর থেকে বিদায় করবো বলতো।”

-“তুমি যেদিন এক রাজপুত্রকে এনে দিবে সেদিন।তোমার মনে নেই,তুমিই তো বলেছিলো।তোমার স্টারপুর বিয়ে তুমি দিবে।”

ইয়ারাবী ওর বোনের দিকে একটা ডেবিলমার্কা হাসি দিয়ে বলে,

-“মনি ইউ্ নো ছেলেতো সেই কবেই পেয়ে গেছি,কিন্তু তোমার মেয়ে কী রাজী হবে?”

-“ও হবে ওর বাপ হবে”

-“ওকে বরণ ডালা সাজিয়ে রেডি থেকে যে কোনো সময় ছেলেরা যেতে পারে।”

ওর কথা শুনে ইফাজ পুরোপুরি বিষম খেয়ে একদম যক্ষা রুগির উপাধি নিতে যাচ্ছিলো। কেননা কথাটা ইফাজের দিকে তাকিয়ে বলে।কথাবার্তার মধ্য দিয়ে সবাই ব্রেকফাস্ট করে রুমে যায়।ইয়ারাবী কাবার্ড থেকে বোরখা বের করতে গেলে আবরার বলে,

-“গাড়িতে যাচ্ছি,আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ব্যাক্তি নেই।শুধু হেজাব দিয়ে মাথা কভার করে নিও।”

এই সময় ওর মা আর টিকলি আসে ওদের রুমে।ইয়ারাবী ওর মাকে দেখে মুখটা অন্যদিকে করে নেয়।মিসেস ইশানি ওর মেয়ের কাঁধে হাত রেখে বলেন,

-“জানি মান-অভিমান অনেক আছে,দেখ আমি মা যা করি ভালোর জন্য করি।”

ইয়ারাবী হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলে,

-“মা বলেই তো মুখ বুজে সহ্য করি।যদি আপনার কিছু বলার থাকে বলতে পারেন।”

মিসেস ইশানির বুকে আজ খুব শূন্য অনুভব হচ্ছে।যেটা ইয়ারাবীর বিয়ের দিনও অনুভব করেননি।উনি আজ কিছু বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু মনে হয় বলা হয়ে উঠলোনা।উনি আবরারের কাছে যেয়ে বলেন,

-“এখানে আসার পর অনেক কিছু দেখেছো।তবে ওর মা হিসাবে একটা কথায় বলবো,ছোট থেকে অনেক কিছু সহ্য করেছে,তাই ওর পাশে থেকো সব সময়।অনেক জেদি,রাগী যার জন্য ওকেই পস্তাতে হয়।একটু ভালোবেসে ওকে বুঝালে বুঝবে।সত্য কথা কী জানো আবরার ওকে কোনোদিন মায়ের প্রকৃত ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে পারিনি।আচ্ছা শোনো তোমার শ্বশুড় একটু ডাকছে।”

আবরার মিসেস ইশানির সাথে চলে যেতেই ইয়ারাবী টিকলিকে প্রশ্ন করে,

-“আজ ব্রেকফাস্টে বাকীদের যে দেখলাম না।তুমি কিছু জানো?”

-“আপু আম্মুরা বড় খালার বাসায় গেছে।তোমার চাচারা রুমেই আছে আর না মানে..”

-“মানে মানে না করে স্পষ্ট করে বলো”

-“ওই যে পিয়াস ভাইয়া উনি কাল রাতে মাতাল হয়ে চিলেকোঠা থেকে নিচে পরে গেছিলেন।একটা হাত-পা ভেঙে গেছে,মাথায়ও অনেক আঘাত পেয়েছে।”

-“চিলেকোঠা থেকে মানে,চিলেকোঠার চাবিতো আমার কাছে থাকে,ও কীভাবে গেলো?”

-“আমি কী জানি?তারা আপু বলছিলো,উনিতো গেষ্টরুমে আছেন।”

ব্যাস তখন থেকে ইয়ারাবীর মনে সন্দেহের দানা বাঁধতে থাকে।কিন্তু ও ব্যাপারটা পরিষ্কার করার জন্য টিকলিকে টোপ হিসাবে দেয়।

হঠাৎ আবরারের আওয়াজে চোখ খুলে তাকায়।দেখে গাড়িটা গ্যারেজে পার্ক করছে।আবরার একজন সার্ভেন্টকে ফোন করে ব্যাগগুলো নিয়ে যেতে বলে।ইয়ারাবী গাড়ির থেকে নামার সময় ব্যাথার কুকড়ে উঠে।টেরপায় ওর তলপেটে অসম্ভব যন্ত্রনা হচ্ছে।আবরার ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“ঠিক আছো তুমি?”

-“হঠাৎ পেইন হচ্ছে খুব,বুঝতে পারছিনা এমন কেন হচ্ছে। আগে হলেও খুব কম হতো,কিন্তু এখন..”

-“যেতে পারবে নাকী…”

-“আমি পারবো,জাস্ট একটু উঠিয়ে দিবেন..”

আবরার ওর হাত ধরে আস্তে করে উঠায়।ওরা বাসার ভিতর যেতেই চেলসি দৌঁড়ে আবরারের কোলে ঝাপ দেয়।আবরার ওকে কিছুটা আদর করে নিচে নামিয়ে দেয়।ওর মা ইয়ারাবীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“মা তুই ঠিক আছিস?”

-“আলহামদুলিল্লাহ,আমি ঠিক আছি আন্টি না মানে আ আম্মু।”

-“পাগলি মেয়ে,আয় ভিতরে।”

ওরা সবাই সাথে কথা বলে রুমে যায়।ইয়ারাবী ফ্রেস হয়ে আসতেই আবরার ওর হাতে একটা মেডিসিন দিয়ে খেতে বলে।মেডিসিনটা খাওয়ার পর ও আস্তে আস্তে কিছুটা স্বস্তি পায়।সত্যিই স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক একটা পবিত্র বন্ধন।একজনের মনের কথা আরেক জন টের পেয়ে যায়।

(৫৫)

-“আমাকে একটু বলবেন আপনার সাথে আমার এতো দেখা কেন হচ্ছে?”

-“কো-ইনসিডেন্ট বলতে পারো?”

-“সবটাকেই কো-ইনসিডেন্ট ধরাটা একটা বোকামির পর্যায়ে পরে তাইনা।”

অনুর কথা শুনে প্রত্যয় হেসে দেয়।হ্যাঁ,অনুর সাথে প্রত্যয়ের আবার দেখা হয়েছে।সকালে যখনও ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়েছিলো তখন,আর এখন বাসায় আসার পথে।দুই ভাই কারে হেলান দিয়ে ওর বাসার রাস্তার বিপরীত পাশে দাঁড়িয়েছিলো।প্রাপ্ত ওদের কথা শুনে মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে বলে,

-“তোমার কোথাও এমনটা আবার মনে হচ্ছেনা দাভাই তোমাকে ফলো করছে?”

প্রত্যয় ওর দিকে চোখ গরম করে তাকায়।অনু প্রাপ্তের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আমাকে তো ফলো করার মতো এমন কিছু নেই।আসি আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।”

-“হামম,বাই।নিজের খেয়াল রেখো।”

অনু আর কিছু না বলে হনহন করে ওখান থেকে চলে যায়।প্রত্যয় কিছুক্ষণ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসিতে ফেটে পরে।প্রাপ্ত কিছুটা সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

-“দাভাই,তোমার মতলব আমার ভালো ঠেকছেনা।তোমার মতো একজন আর্মির অফিসার এই বাচ্চা মেয়ের পিছনে কেন লেগেছে?কোথাও…”

প্রত্যয় প্রাপ্তের মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলে,

-“ছোট ছোটদের মতো থাকবি”

-“চার মিনিটের ছোট,আমাকে যদি কিছু না বলো তাহলে মমকে ফোন করে সব বলে দিবো”

-“ব্লাকমিল….”

-“নো ,ওটা কালো ফ্যাক্টরি বুঝলে..”

-“হো বুঝলাম এবার চল…”

প্রত্যয় একবার অনুর ফ্ল্যাটের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে চলে যায়।অনু ঘরে ঢুকে ফ্রেস হয়ে নেয়।প্রত্যয়কে বারবার মাথা থেকে যত বের করতে চাই,তত আরো ঝেকে বসে।ওর বাঁকা হাসি,ওর কথা বলার স্টাইল।অনু ভাবতে চাইনা ওকে নিয়ে,কেননা যা হবার নই তা নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুধু বৃথা।ওর ধারণা,ওর অতীত জানলে কেউ ওকে ভালোবাসবেনা।

লান্চ করে ফোনটা হাতে নিয়ে বসে।ভর্সিটি তেমন কারো সাথে একটা মিলামেশা হয়না ওদের।ওরা দ’জন একসাথে সব সময় থাকতো,তাই আজ একা ক্লাস করতে ওর বেশি একটা ভালো লাগেনি।ভার্সিটির অনেক ওদের জোড়া কবুতর বলে ডাকে।অনু ফোনের ডায়াল লিস্টে ইয়ারাবীকে ফোন করে।প্রথমবার বাজার পর দ্বিতীয়বারে ইয়ারাবী ধরার সাথে সাথে ও চিল্লিয়ে বলে,

-“জা…….নু…..”

ইয়ারাবী কিছুটা ঘুরের ঘোরে ছিলো।কিন্তু ওর চিল্লানো শুনে উঠে বসে ভালো করে তাকিয়ে দেখে অনু।ও কিছুটা শান্ত স্বরে বলে,

-“হামম বল..”

-“এভাবে কেন বললি?জানিস তোরে কত মিস করছি?”

-“হামম জানি প্রাণু।কী করিস এখন?ভার্সিটিতে গেছিলিতো”

-“মেঘ বলছে তাইনা,আচ্ছা তুই কবে আসবি?”

-“উনি বলেছে সবকিছু কাল থেকে শুরু করতে।”

অনু কিছুটা হেসে বলে,

-“তুই এখনো ওনাকে আপনি করে বলিস?”

-“কী করবো বল?তুমি সহজে বলতে পারিনা,তাছাড়া এক প্রকার জড়তা কাজ করে।আর ভয় হয় খুব।”

-“তুই জিজুকে ভয় করিস,কেন?উনি কী খারাপ ব্যাবহার করেছে নাকী?”

-“না তেমন কিছুই করেনি তবুও ভয় লাগে,জানিস কাল উনি প্ পিয়াসকে মেরেছে?”

অনু কিছুটা অবাক হয়ে বললো,

-“এই সেই ছেলেনা যে তোকে…..দেখা হলো কোথায়?”

ইয়ারাবী সবটা খুলে বলে।ওর কাছে মনের কথাগুলো সিয়ার না করলে দম বন্ধ হয়ে আসে।সবটা শুনে অনু চমকে যায়।ও কিছুটা রেগে বলে,

-“এই চড়টা যদি আগে দিতিস,তাহলে এমন হতো না।বাইরে তো বাঘিনি হয়ে বেরাস,কতো ধর্ষনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিস,শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কাজ করিস অথচ নিজের ঘরে বিড়াল হয়ে যাস।”

ইয়ারাবী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,

-“তোকে একদিন একটা শেক্সপিয়ারের উক্তি বলেছিলাম- “ আমি সবসময় নিজেকে সুখী ভাবি, কারণ আমি কখনো কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা করি না, কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা করাটা সবসময়ই দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”আমার ক্ষেত্রেও তাই,এজন্য সব সময় চুপ করে থাকি।তবে আমার চুপ করাকে দুর্বলতা ভাবে যারা তারা খুব ভুল করে।আচ্ছা এসব বাদ দে,কাল কয়টায় যাবি ভার্সিটিতে?”

-“কাল তেমন ক্লাস নেই,এই সাড়ে নয়টা এমন টাইমে আসবো।ওই শোন তোকে কিছু বলার জন্য ফোন দিয়েছিলাম।”

-“হ্যাঁ, বল”

-“বলছিলাম যে,এক মিনিট তুই তার আগে বল তোর কী হয়েছে?আমি অনেকক্ষণ ধরে শুনছি তোর স্বরটা কেমন লাগছে?”

-“আরে ঘুমিয়েছিলাম তাই”

ইয়ারাবীর কথা শুনে অনু আকাশ থেকে পরার মতো অবাক হলো।যে ইয়ারাবীর ঘুমের নামই উচ্চারণ করেনা সে এই টাইমে ঘুমাচ্ছে।অনু আবার প্রশ্ন করলো,

-“সিরিয়াসলি তুই ঘুমাচ্ছিলি,এটা আমাকে মানতে হবে?”

-“মানা,না মানা এটা তোর ব্যাপার।আমি যা সত্যি তাই বলছি,আসলে পেটে কিছুটা পেইন হচ্ছিলো।তারপর আবরার একটা মেডিসিন দিয়েছিল,ওটা খেয়ে ব্যাথা কমলে ঘুম পেয়ে যায়।আচ্ছা এবার বল কী কথা?”

অনু কিছুটা নড়েচড়ে বসে বলে,

-“তোর ভাইয়াদের ওই যে প্রত্যয় নামের এক ফ্রেন্ড আছেনা?”

-“হ্যাঁ,তো”

-“জানিস এই দু’দিন যেখানেই যাচ্ছিস ওনার সাথে দেখা হয়ে যাচ্ছে।দু-একবার কো-ইনসিডেন্ট ধরা যায় কিন্তু তাই বলে প্রতিবার।”

ইয়ারাবীর ওর কথা শুনে মিটমিট করে হেসে বলে,

-“দেখ রাব নে বানাদি জুরি..”

-“দেখ মজা করবিনা,তুই সব জানিস।”

-“কখনো কখনো স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকা অনেক ভালো।”

-“আমি রাখছিরে,কিছু কাজ আছে।”

কথাটা বলেই অনু ফোনটা কেঁটে দেয়।পৃথিবীর সবচেয়ের ভয়ংকর রোগের নাম হলো কষ্টের অতীতগুলো।এগুলো শুধু মানুষকে কাঁদায়।এই অতীতের জন্য ও নিজের বাড়িতেও যায়না বেশি।ও মন থেকে প্রচুর শক্ত হয়েছে কিন্তু পুরানো ক্ষত জেগে গেলো ওগুলোর মলম সব সময় পাওয়া যায়না।
কথায় আছে,”নরম মাটি পেলে বিড়াল আচড়াতে ভালোবাসে”।অনুও নরম মনের তাই,বাকীরা ওকে ক্ষত বিক্ষত করতে মজা পায়।

(৫৬)

-“প্লীজ হুজুর,মেয়েটাকে বাঁচান।”

হুজুর হাবিবুল্লাহ একবার আদিবার দিকে তাকিয়ে মিসেস জামানকে প্রশ্ন করলেন,

-“আপনি বললেন আজ ওর আকদ হয়েছে,আমার মতো আপনার মেয়ের স্বামীকে এখানে ডাকা উচিত।”

-“এমন ভুল করবেন না হুজুর,ওনারা এসব জানলে মান-সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে।এখনো তো ওই বাড়িতে পাও দিতে পারিনি।”

আদিবার দিকে তাকিয়ে হুজুর হাবিবুল্লাহ বললেন,

-“তুমি জানো আজ তোমার ঘরে কে এসেছিলো?সেই খারাপ শক্তিটা আমি নাম নিচ্ছিনা,তবে আজ তোমার অনেক বড় বিপদ হতে পারতো।আমি যা বলছি মন দিয়ে শুনো।যাদুতে আক্রান্ত রোগীর উপর অথবা কোন একটি পাত্রে আয়াতুল কুরসি অথবা সূরা আরাফ, সূরা ইউনুস, সূরা ত্বহা এর যাদু বিষয়ক আয়াতগুলো পড়বে। এগুলোর সাথে সূরা কাফিরুন, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়বে এবং রোগীর জন্য দোয়া করবে। বিশেষতঃ যে দুআটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে:

“আল্লাহুম্মা, রাব্বান নাস! আযহিবিল বা’স। ওয়াশফি, আনতাশ শাফি। লা শিফাআ ইল্লা শিফাউক। শিফাআন লা য়ুগাদিরু সাকামা।”

(অর্থ- হে আল্লাহ! হে মানুষের প্রতিপালক! আপনি কষ্ট দূর করে দিন ও আরোগ্য দান করুন। (যেহেতু) আপনিই রোগ আরোগ্যকারী। আপনার আরোগ্য দান হচ্ছে প্রকৃত আরোগ্য দান। আপনি এমনভাবে রোগ নিরাময় করে দিন যেন তা রোগকে নির্মূল করে দেয়।)

জিব্রাইল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে দোয়া পড়ে ঝাড়ফুঁক করেছেন সেটাও পড়া যেতে পারে। সে দুআটি হচ্ছে- “বিসমিল্লাহি আরক্বিক মিন কুল্লি শাইয়িন য়ুযিক। ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদিন; আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহি আরক্বিক।”

(অর্থ- আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি। সকল কষ্টদায়ক বিষয় থেকে। প্রত্যেক আত্মা ও ঈর্ষাপরায়ণ চক্ষুর অনিষ্ট থেকে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি।)

এই দোয়াটি তিনবার পড়ে ফুঁ দিবেন। সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস তিনবার পড়ে ফুঁ দিবেন। আমি যে দোয়াগুলো উল্লেখ করলাম এ দোয়াগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিতে হবে। এরপর যাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তি সে পানি পান করবে। আর অবশিষ্ট পানি দিয়ে প্রয়োজনমত একবার বা একাধিক বার গোসল করবে।

আর সেই তাবিজ মনে হয় এই বাসাতেই আছে।ওটাকে আজ রাতের মধ্যে খুজে বের করবেন।তারপর সেই তাবিজ আর পুতুল আমাকে দিবেন,ওগুলো নষ্ট করতে হবে।মিসেস জামান দেখুন,আপনি যাই করতে গেছিলেন না কেন ওটার প্রভাব আপনার মেয়ের উপর পরেছে।আপনাকে সাবধান করছি আর এমন কাজ করবেন না।উপরের কাজগুলো করুন দেখুন কী হয়।”

মিসেস জামান ওনার দিকে তাকিয়ে বলেন,

-“তওবা করেছি,আর এসব করবোনা।আচ্ছা আপনাকে কত দিবো।”

ওনার কথা শুনে হুজুর হেসে বলেন,

-“দেখুন আমি এসবের জন্য কোনো কিছু নেয়না।আল্লাহর রহমতে আমার যা আছে তাই যথেষ্ট।আজ উঠি তাহলে।”

এই বলে উনি আদিবাদের বাসা থেকে বেরিয়ে যান।আজ বিকালের দিকে আদিবা নিজের রুমে বসে ছিলো।হঠাৎ ওর ঘরে একটা কালো বিড়াল দেখতে পায়।বিড়ালটা সাইজে খুব বড়,আর আদ্ভুত ভাবে সৌকেসের উপর থেকে সাববাক্স আর সাববাক্স থেকে খাটে আসা-যাওয়া করছে।কিন্তু বিড়ালের চোখগুলো আদিবার দিকে স্থীর,আর আদিবাও কোনো রিয়্যাক্ট না করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ করে বিড়ালটা একটা ভয়ংকর চিৎকার দিয়ে আদিবার উপর ঝাপিয়ে পরে।

মিসেস জামান তখন বাসায় একা ছিলেন,মেয়ের চিৎকার শুনে রুমে এসে দেখেন আদিবা বেহুশ হয়ে পরে আছে।উনি ওনার স্বামীকে ফোন করে আসতে বলেন।মি.জামান একজন ডাক্তারকে সাথে করে নিয়ে আসেন।আদিবার জ্ঞান ফিরলে ডাক্তার চলে যেতেই উনি হুজুরকে ফোন করে বাসায় আসতে বলেন।ওনার স্বামী ওনার কু-কীর্তির কাহিনি শুনে অনেক রেগে যান।ঝগড়ার এক পর্যায়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যান।

(৫৭)

পরেরদিন সকালবেলা ইয়ারাবী উঠে দেখে আবরার জগিং স্যুট পরে রেডি হচ্ছে।আবরার ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,

-“গুর্ড মর্নিং,এত সকাল সকাল উঠলে যে।সবেতো সাড়ে পাঁচটা বাজে।”

-“ভোরবেলা উঠতে উঠতে অভ্যাস হয়ে গেছে।আপনি জগিং এ যাচ্ছেন?”

-“হামম,এত সাতটার দিকে ফিরবো,বাই”

আবরার বাইরে বেড়িয়ে যেতেই ইয়ারাবী উঠে ফ্রেস হয়ে নেয়।তারপর নিচে নেমে দেখে ইকরা আর মা মিলে সার্ভেন্টদের সাথে ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে।ইয়ারাবী এসে ওনাদের সালাম দেন।মা ওকে দেখে বলে,

-“তুমি এতো সকাল সকাল উঠে গেলে কেন?”

-“আম্মু আমি ভোরের দিকেই উঠি।”

-“আচ্ছা তোকে কফি করে দিবো।”

-“না আম্মু লাগবেনা।আমি আপনাদের সাহায্য করি।”

ইকরা পাশ থেকে বলে,

-“তুমি কী কাজ করতে পারো যে করবে?তাছাড়া এসবের জন্য অনেক সময় পরে আছে।”

-“আপু,আব্বু কখনো আমাকে রান্নাঘরে ঢুকতে দেয়নি তাই পারিনা ঠিকই,কিন্তু শিখালে শিখে যাবো।”

-“আরে বাবা মন খারাপ কেন করছো?ঠিক আছে কাজ যখন করতেই চাচ্ছো সালাদটা কেটে দাও।”

ইয়ারাবী কথাটা শুনে ছুরি দিয়ে সালাদ কাটতে থাকে।ব্রেকফাস্টের সময় সবাই চলে এসে ডাইনিং এ বসে।মিসেসে নিশা ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলেন,

-“বাবা,সাড়ে দশটার দিকে আমাদের ফ্লাইট আছে”

আবরার ওর বড় ফুপির দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আজই কানাডা চলে যাবে,কিন্তু তোমরা আমাকে কিছু বলোনি কেন?”

-“এত তাড়াতাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা ছিলোনা,তোর বোনের এক্সাম স্টার্ট হয়ে যাবে কিছুদিন পর থেকে।এমনি মহা ফাঁকিবাজ।”

-“তো লিজা ফুপিও কী যাবে নাকী?”

মিসেস লিজা রাগে গজগজ করতে করতে বলে,

-“না যেয়ে আর কোনো উপায় রেখেছিস নাকী?আমি কিছু বললে তো তোদের সমস্যা।”

মি.রায়হান ব্রেকফাস্ট করতে করতে বলেন,

-“কেননা তুই কাজটা এমন করেছিলি যার জন্য আজ পর্যন্ত আমি তোকে ক্ষমা করিনি।শুধুমাত্র বাবার জন্য তোকে এই বাড়িতে এনেছি।”

মেঘ ব্রেকফাস্ট করতে করতে বলে,

-“চাচু বাদ দাওনা,পুরানো কথা এখন আর টানবেনা প্লীজ।আর ইয়ারাবী আজ কী ভার্সিটিতে যাবি?”

মিসেস নিশা মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“ও এখন তোর ভাবী হয় মেঘ?”

-“তো,ওসব ভাবী আমি বলতে পারবোনা।তাছাড়া বয়সেও আমি ওর থেকে বড়।”

-“তুই জীবনে শুধরাবিনা।আবরার তুই কী আবার লন্ডনে শিফট্ হবি?”

ফুপির কথা শুনে ইয়ারাবী আবরারের দিকে অবাক চোখে তাকায়।আবরার ব্যাপারটা বুঝে ওর ফুপির দিকে তাকিয়ে বলে,

-“এখনো ঠিক করিনি,তাছাড়া ওর স্টাডি কম্পিলিট হয়নি।”

সাড়ে নয়টার দিকে ভার্সিটিতে যেতে হবে।এখন বাজে সাড়ে আটটা,হাতে এক ঘন্টা সময়। ইয়ারাবীর একটা বদ অভ্যাস আছে,ও কিছুনা করলেও ওর লেট হয়ে যায়।ইয়ারাবী কাবার্ড থেকে জামা বের করতে গেলে আবরার ওর হাতে একটা প্যাকেট দেয়।ও খুলে দেকে প্যাকেটের মধ্যে সুন্দর একটা বোরখা,হেজাব-নেকাব,আর সুন্দর হাত মোজা।ও আবরারের দিকে তাকাতেই আবরার নিজের হাতে ঘড়ি পরতে পরতে বলে,

-“তোমার সৌন্দর্য দেখার অধিকার একমাত্র আমার।জানি তুমি বোরখা পরো,হেজাব বাঁধো বাট্ আজ থেকে নেকাবটা বাঁধবে।শুনো ইয়ারাবী তোমার ফ্রিডমে আমি কখনো বাঁধা দেবোনা।তুমি যা করতে ভালোবাসো,সব করবে ,আই উইল্ অলওয়েজ সাপোর্ট ইউ্। বাট্ সেটা পর্দার ভিতর থেকে।এখন রেডি হয়ে নাও লেট হয়ে যাবে।”

ইয়ারাবী কাপড়টা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।রেডি হয়ে নিচে এসে দেখে মেঘ সোফার বসে জুতা পরছে।মেঘ ওকে দেখে বলে,

-“তোরা মেয়েরা এতো লেট লফিত ক্যান আমাকে বলবি?”

-“যাহ বাবা আমি কী করলাম?তুই তো জানিস আমি যাই করিনা কেন,বিনা কারনে লেট হয়ে যায়।”

আবরার ড্রাইভ করছে,পাশে ইয়ারাবী বসে আছে আর পিছনে মেঘ।আবরার মেঘকে বলে,

-“মেঘ ওর দিকে খেয়াল রাখবি।আজ কী কোনো সোস্যাল ওয়ার্ক আছে তোদের?”

-“হামম,দু’টায়,কেন?”

-“ওর চেকআপ আছে?”

-“সমস্যা নাই,অনু থাকবে সাথে, তুমি এসে নিয়ে যেও।”

ইয়ারাবী এবার আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“কাল গেলে হতোনা?”

-“ইম্পসিবল,আজ যেতে হবে।আমি এসে নিয়ে যাবো।”

আবরার ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামালে মেঘ আর ইয়ারাবী ভিতরে ঢোকে।চৈতিদের সাথে দাঁড়িয়ে অনু কথা বলছিলো।হঠাৎ অনুর নজর ইয়ারাবীর দিকে পরতেই ও দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরে।মনে হচ্ছে ওর কাছের কোনো জিনিস হারিয়ে গেছিলো।ইয়ারাবী মুখ ঢেকে থাকায় চৈতিদের বুঝতে সময় লাগে,মেঘ যেয়ে ওদেরকে বলে।হিয়া পাশ থেকে বলে উঠে,

-“কীরে আমি বলেছিলাম না,বিয়ের পর কোনো ফ্রিডম পাবিনা।”

ইয়ারাবী ঘাসের উপর বসে বলে,

-“তোকে কে বললো আমার ফ্রিডম নেই?”

-“তাহলে প্যাকেট হয়ে এসেছিস কেন?”

-“দেখ হিয়া উনি আমাকে সবকিছু করার পারমিশন দিয়েছেন,কিন্তু শর্ত হলো পর্দা করে।তাছাড়া ওনি যদি আমার ফ্রিডম দিতে পারেন তাহলে আমি ওনার জন্য সামান্য পর্দাটুকু করতে পারবোনা?”

হিয়া ইয়ারাবীর কথা শুনে চুপ করে যায়।লিজা মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“তোর ভাইতো বিয়ে করে নিলো,তুই কবে করবি?”

-“বাড়িতে এখন বিয়ের কথা বললে চাচু আমাকে জুতা দিয়ে পিটাবেনে।ইউ নো আবির ভাইয়ার বিয়ের সময় মজার ছলে বলছিলাম আমিও বিয়ে করবো।বাকীটা ইতিহাস,পাতিহাঁস,রাজহাঁস হয়েছিলো।”

-“তুই পারিসও বটে।”

আজ তেমন কোনো ক্লাস না থাকায় ওরা বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে।দুটা ক্লাস করে বাইরে এসে দেখে আবরার পুরো ব্লাক ড্রেসে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দিয়ে একহাতে ফোন টিপছে।আর কিছু মেয়েদের স্বভাব যা,ওরা তাই করছে অর্থাৎ চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।

অনু ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“জানু দেখ,সব কয়টা কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে?”

-“ওদের স্বভাবই তো ওটা।”

মেঘ ইয়ারাবীকে বলে,

-“আমরা আর একটা পরে বের হবো।তুই তাহলে যা।”

-“আল্লাহ হাফেজ।অনু না থাক তোকে পরে ফোনে বলবো।”

অনু বুঝতে পেরেছে ইয়ারাবী কী বলবে তাই ওকে বাই বলে ওরা ক্যান্টিনে চলে যায়।ইয়ারাবী আবরারের কাছে যেয়ে সালাম দিয়ে গাড়িতে বসে।আবরার ড্রাইভ করতে করতে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“প্রচুর ঘামো দেখছি…”

-“ছোটবেলা থেকেই,আচ্ছা সকালে আপনাকে ব্লু শার্টে দেখলাম আর এখন ব্লাক গেন্জিতে?”

-“ল্যাবে একটা ক্যামিক্যাল পরে দাগ লেগেছিলো।তাই চেন্জ করছি।কেন সন্দেহ করছো নাকী?”

-“নাউজুবিল্লা,কী বলেন এসব?আপনাকে সন্দেহ কেন করতে যাবো?”

ওরা টুকটাক কথা বলে ক্লিনিকে পৌঁছে যায়।সেখানে ওকে চেকআপ করিয়ে ইফাজ ওকে নিজের কেবিনে বসতে বলে আবরারকে নিয়ে ডাক্তার প্রেমার কেবিনে যায়।ইফাজ প্রেমাকে বলে,

-“ডা.প্রেমা কেমন দেখলেন?”

-“সরি ডা.ইফাজ এন্ড আবরার স্যার।ইয়ারাবীর কন্ডিশন বেশি ভালোনা।প্রথমতো, খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো করেনা,তারপর ওর বুকে খুব বাজেভাবে আঘাত হয়েছে যদিও বা মেডিসিন নেয় তবে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।আর ওর পেটে ব্যাথা কেন হচ্ছে সেটা আমাকে বলতে হবেনা।ওর ইমিডিয়েটলি ট্রিটমেন্ট দরকার।ওর শরীরে প্রচুর মারের দাগ,ও মেন্টালি প্রচুর আফসেট,ডিপ্রেশন আর একটা কথা ও প্রচুর ভয় পায়,আর ছোটবেলায় যে আঘাত পেয়েছিলো তার জন্য মূলত্ব মাথা ব্যাথা।সত্যি কথা বলতে ওর ট্রিটমেন্টটা অনেক লেট করে শুরু করা হয়েছে তাই এতো প্রবলেম।”

আবরার সব শুনে চুপ করে আছে।ইফাজ ডা.প্রেমাকে বলে,

-“যে মেডিসিন আছে ওগুলো কী চলবে নাকী চেন্জ করতে হবে।”

-“না আমি যা দিয়েছি ওগুলো থাক,আর ওকে আলাদা সাইক্রেটিস দেখানোর কোনো দরকার নেই।কেননা যেহেতু স্যার আছেন।তবে ওর ঘুমের খুব প্রয়োজন ”

আবরার ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“হামম,এই দু’দিন ওর ঘুমটা ভালো হচ্ছে, রাতে কোনো ভয় পায়না।মেডিসিন দিচ্ছি ওকে..”

আর কিছু কথা বলে ওখান থেকে বের হয়ে ইফাজের কেবিনে ঢুকে দেখে ইয়ারাবী মুখ ফুলিয়ে বসে ফোন টিপছে।ওদের দেখে বলে,

-“তোমরা এমন প্যাঁচার মতো মুখ করে রেখেছো কেন?আর ডা.প্রেমা এমন কী বললো যে আমাকে এখানে পাঠিয়ে দিলে?রিপোর্টে কোনো খারাপ কিছু আছে?”

-“পিচ্চি এমন কিছু না।আসলে তোর রেস্টের জন্য এখানে থাকতে বলেছিলাম।”

-“রিপোর্টে কী এসেছে?এক মিনিট আমার কীসের চেকআপ করালে তোমরা,বললেনা তো?”

আবরার হেসে বলে,

-“আরে তেমন কিছুনা,বলেছে তোমাকে ঠিকমত ঘুমাতে হবে।অনেক লেট হয়ে গেছে,আমাদের যেতে হবেতো।”

ইফাজ আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“তুমি যাও ওর সাথে কিছু কথা আছে আমার?”

আবরার চলে যেতেই ইফাজ ইয়ারাবী বামহাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে,

-“দেখ এখন যে কথাগুলো তোকে বলবো সেগুলো আসলে তোকে তোর মার বলা উচিত ছিলো।কিন্তু আফসোস এটা আমাকে বলতে হবে।”

-“কী কথা ভাইয়া?”

-“আবরারকে তুই এখনো মানতে পারিসনি তাইনা?দেখ একটা মেয়ের বিয়ের পর ওর স্বামী ওর অভিভাবক হয়।ও খুব ভালো ছেলে,ওকে কখনো হার্ট করবিনা।ও যা করবে তোর ভালোর জন্য করবে।প্লীজ ওকে দূরে ঠেলে দিসনা।”

-“ভাইয়া আমি ওনাকে কখনো হার্ট করিনি।তবে হ্যাঁ,জানিনা কেন ওনাকে দেখে খুব ভয় করে?”

ইফাজ ওর কথা শুনে হেসে দেয় আর বলে,

-“অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে,যা তুই।আমার একটা ওটি আছে।”

ইয়ারাবী ওর ভাইয়ের বলা কথাগুলোর মাথামুন্ডু কিছু বোঝেনা।হঠাৎ করে ওসব কেন বললো?আর না ভেবে ও আবরারের সাথে বাসায় চলে আছে।

বিকালের দিকে ইয়ারাবী ঘুমাচ্ছে,বলতে গেলে ঘুমের ঘোরে আবরারের কোমর আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে।আবরার বেডে হেলান দিয়ে একটা বই পড়ছে।হঠাৎ ইয়ারাবীর ফোনে তিনটা কল আসে আননোন নাম্বার থেকে।ও ঔষধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে তাই আবরার আর ওকে ডাকেনা।হঠাৎ ওর ফোনে সেই আননোন নাম্বার থেকে ম্যাসেজ আসে।আবরার ফোনটা হাতে নিয়ে যা দেখে তাতে ওর চোখগুলো রক্তবর্ণ ধারন করে।

#চলবে________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here