জীবন মানে তুমি পর্ব:৬

0
5749

#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Irini Ori
#পর্ব:৬

(২৩)

সকালের সূর্যের কিরনের প্রথম রশ্নিতেই আবরারের ঘুম ভেঙে যায়।রাতে ঘুম হয়েছে নাকী তাই সন্দেহ।ইয়ারাবীকে এত তাড়াতাড়ি নিজের করে পাবে সেটা ওর কল্পনার বাহিরে ছিলো।আজ ওর কাছে সব স্বপ্নের মতো লাগছে।তবে ওকে স্বপ্নে বিভোর হলে হবেনা,অনেক কাজ বাকি।

-“আব্বু, আসবো।”

আবরার দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে ওর মা কফি হাতে দাঁড়িয়ে আছে।আবরার ওনাকে দেখে ওঠে বসে,

-“মম তোমাকে কতবার বলেছি,আমার রুমে আসার জন্য কোনো পারমিশন লাগবেনা।”

-“এখন নয় কিন্তু পরে তো হবে,তাই প্রাক্টিস্ করছি”

-“মম তুমি জানো ও ওমন মেয়ে নয়।”

-“সেই জন্যই তো ঘরের লক্ষী করে আনছি।শোন আব্বু কিছু কথা বলবো তোকে,অবশ্য তুই সব বুঝিছ তারপরও বলতে চাই।”

আবরার ওর মায়ের কোলে মাথা রেখে বলে,

-“জানি আম্মু,তারপর ও তোমার কথায় জাদু আছে।শুনতে খুব ভালো লাগে।”

ওর মা মিষ্টি করে হেসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,

-“জানিস একটা মেয়ে যখন নিজের পরিবার,আপন চেনা-জানা মানুষদের ছেড়ে স্বামীর হাত ধরে শ্বশুড় বাড়িতে পা রাখে তখন তার মনে হয় যে মানুষটার সাথে এসেছে, সে তারপাশে ছায়ার মতো সবর্দা থাকবে।কেননা বিয়ের পর স্বামী ছাড়া আপন আর কেউ হয়না।”

-“জানি আম্মু,এগুলো ভাবী বলেছে কাল।”

-“জানি মেয়েটা তোকে নিজের ভাই মনে করে।জানিস,একটা মেয়ে সবচেয়ে নিরাপদ থাকে তার বাবা,ভাইয়া আর স্বামী।বিয়ের পর যখন মেয়েটার পাশে কেউ থাকেনা তখন সে তার পাশে স্বামীকে আশা করে।”

-“যেমন পাপা তোমার পাশে থাকে তাইতো।”

-“হ্যাঁ,তোকে জানিস এসব কেন বললাম?”

-“কারন আমি যেন কখনো ইয়ারাবীকে ভুল না বুঝি।এন্ড আই প্রমিস্ কখনো ওকে ছেড়ে যাবোনা।”

-“আই নো মাই সন্,তোরা দু’ভাই সব সময় সঠিক পথে চলিস।এখন উঠ,ইয়ারাবীর ক্লাস শেষ হলে শপিং এ যাবো।”

-“হামম,আমি হসপিটাল যাবো।ফোন দিও আমাকে।”

সব সময়ের মতো ওর মায়ের কপালে একটা চুমু দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।মিসেস রায়হান ওনার ছেলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন।ছোট থেকে আজ পর্যন্ত কখনো কোনো রিপোর্ট আসেনি দু’ছেলের নামে।হ্যাঁ,ওরা দুষ্টু প্রকৃতির ছিলো এখনো আছে কিন্তু ওদের মজা বা কাজ দ্বারা কারো কোনো ক্ষতি হয়নি।আবরার ফ্রেস হয়ে এসে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।মানুষের জীবনটা কতটা অদ্ভুত না,কারো ঘরে হাসি দিয়ে দিন শুরু হয় আর কারো ঘরে কান্না।

(২৪)

ইয়ারাবী ক্লাস শেষ করে অনুর সাথে বেরতে গেলেই মেঘ এসে ওদের পথ আটকায়।ইয়ারাবী ভ্রু কুচকে মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“কী হয়েছে?”

-“তুই ভিলেনের মতো পথ আটকালি ক্যান?হাট আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

-“ওই বাচাল বেশি বকবক করবিনা।আজ শপিং এ যাবো তাই ,,,নয়তো তোরা জোড়া কবুতর কই উড়াল দিতিস আল্লাহ জানে।”

-“শপিং এ যাবি যা আমাদের কেন বলছিস?”

-“ইয়ায় বাচ্চার মা,তোর বিয়ের শপিং এ যামু তাই।সবাই ওয়েট করছে এখন চল।”

-“আমি যাবোনা রে,আম্মুকে বলছি যা তাদের পছন্দ তাই আনতে।”

-“একটা থাপ্পর দিবো,দেখ বাসার সবাই ওয়েট করছে।আন্টিও আসছে চল।”

-“ওকে তাহলে অনু তুইও চল,”

-“ইয়াপ জানু মুই তো যামু,তুই না কইলিও যামু,ইনফেক্ট তোর মা কাল রাতে কল দিয়েছিলো যে বিয়ে পর্যন্ত তোর বাড়ি থাকি।”

-“আমাকে কিছু বলেনিতো।”

-“বাদ দে চলতো।”

ইয়ারাবীরা ভার্সিটির গেটের কাছে যেয়ে মেঘদের দু’টো গাড়ি দেখতে পায়।আর একটার সাথে আবরার হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছে।এই প্রথম ইয়ারাবী আবরারকে ভালো করে দেখছে।আজ একটা ছায়ে কালারের গেন্জি,ব্লাক জিন্জ,ওয়াইট সু,ডান হাতে ব্লাক ঘড়ি,মাথার সিল্কি চুলগুলো বাতাসের তালে তালে উড়ছে,লম্বায় ছয় ফুট তিন ইন্চি মতো,ফর্সা আর চোখগুলো হালকা সবুজ হওয়ায় দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে।বলতে গেলে আবরার যাদের সাথে কাজ করে তাদের সবার ক্রাস।ভেবে পায়না এ ইয়ারাবীর মধ্যে এমন কী দেখেছে যার জন্য পাগল।

আবরার ওদের দেখে হাত নাড়ায়।ইয়ারাবী যেয়ে দেখে ওর মা, ওর ছোট খালা,ইয়ামিলা আর টিকলি,তিন্নিও আছে।ইয়ারাবী, মেঘ, জারবা,অনু আবরার গাড়িতে করে যায়।ওয়া একটা বড় শপিং কমপ্লেক্সের সামনে গাড়ি পার্কিং করে ওরা তিন তালার একটা শো-রুমে ঢোকে।মিসেস রায়হানকে কর্মচারীরা অনেকগুলো পাকিস্তানি লেহেঙ্গা দেখায়।ইয়ারাবীর পছন্দও হয় তবে ইয়ারাবীর খালা পাশ থেকে এক একটা বাঁকা কথা বলে ওঠে।আবরার দু’টা লেহেঙ্গা দেখে একটা হলুদ আর একটা সবুজ। গাঁয়ে হলুদ আর মেহেন্দীর জন্য কিন্তু পাশ থেকে ওর খালা বলে উঠে,

-“আরে বাবা টাকা আছে বলে খরচ করতে হবে নাকী?একটা শাড়ী কিনলেই তো হয়ে যায়।গায়ে হলুদ আর মেহেন্দীর জন্য শাড়িই কিনো,সেটা সব সময় পড়া যায়।তাছাড়া ওগুলো একদিনেই পরবে।তাইনা আপু”

মিসেস ইশানি মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন,

-“না নিকি ওর আব্বু বলেছে লেহেঙ্গা নিতে।তাছাড়া ইয়ারাবীর ছোটবেলা থেকে বলতো বিয়েতে লেহেঙ্গা নিবো।ওরা ওদের শপিং করুক না পছন্দ মতো তুই তোর মতো কর।”

মিসেস নিকি ভাবতেই পারেননি ওনার বোন সবার সামনে এভাবে কথা বলবে।

-“আরে না আমি তো এমনি বললাম।”

মিসেস রায়হান ইয়ারাবীকে বলে,

-“আম্মু আবরার যে দু’টা দেখালো ওই দুইটা ট্রাই করে দেখো,তোমার ফিটিং হয় কীনা।”

ইয়ারাবী কিছু না বলে ট্রাই করে আসে।ওর দু’টাই ফিটিং হয়।গায়ে হলুদের জন্য আবরার অনুকেও সেম ড্রেস কিনে দেয়।অনু প্রথমে নিতে চাইছিলোনা পরে নেয়।এরপর বিয়ের জন্য একটা পার্পেল কালারের বড় গাউন দেখে।ইয়ারাবীর বরাবরই লাল পছন্দ নয়।যেদিন থেকে শুনেছে আমাদের নবী করিম(সাঃ)এর লাল রং পছন্দ নয় সেদিন থেকে ও ওইটা ছুয়েও দেখেনা।আবরারও সেম কালারের ড্রেস দেখে।মোটামুটি সবাই শপিং করে নেয়,তবে বিল দেওয়ার সময় ঝামেলা বাধে।মিসেস রায়হান শুধু গায়ে হলুদের ড্রেসটার দাম দিতে দিলেন তাছাড়া সব নিজেরা দিলেন।ড্রেসগুলো সিম্পিলের মধ্যে গর্জিয়াস তাই দাম ও অনেক পরেছে।ইয়ারাবীর এত দামের কিছুই পছন্দ নয় তবুও নিতে হলো।ইয়ারাবীর বিয়ে হচ্ছে অথচ ওর মধ্যে কোনো আনন্দ নেই।

ড্রেসগুলো শেষে স্বর্ণের দোকান ঢুকতে গেলে ইয়ারাবী অসুস্থ হয়ে পরে।কাল থেকে গায়ে জ্বর অথচ কোনো মেডিসিন নেয়নি।নিবেই বা কীভাবে?ওর কাছে যা ছিলো ফুরিয়ে গেছে।তাই রাতে আর বের হয়নি।অপরদিকে রাতে ওর বাবা-মা খেতেও ডাকেনি তাই তারাও জানেনা।ও প্রায় পরে যাচ্ছিলো অনু ওকে ধরে ফেলে।আবরার তাড়াতাড়ি ওকে ফুড কোটে নিয়ে যায়, ওখানে নিয়ে গিয়ে ওকে প্রথমে পানি দেয়।মেঘকে পাঠায় গাড়িতে মেডিসিন আনতে।আবরার একজন ডাক্তার হওয়ার ওর গাড়িতে মেডিসিন সব সময় থাকে।ইয়ারাবী একদিনে জ্বর আরেক দিকে পেশার লো হয়ে পরেছে।

আবরার কিছু খাবার কিনে ইয়ারাবীকে খাওয়াতে গেলে ও না করে দেয়।মিসেস ইশানি মেয়ের জেদ দেখে বলে,

-“একদম জেদ দেখাবিনা বেয়াদব মেয়ে,কারোর কথা শুনিস না?জেদ দেখিয়ে কাল রাতেও কিছু খাসনি”

-“আন্টি প্লীজ একটু চুপ করবেন,ওর শরীর এমনিতে ভালো নেই।তারপর এসব বলা বন্ধ করুন।আপনারা যেয়ে বাকী শপিংগুলো করে ফেলুন।আমি ওর কাছে আছি।”

-“কিন্ত আব্বু ..”

-“মম তোমরা যেয়ে কম্পিলিট করে ফেলো প্লীজ,ওর পেশার লো।ওখান উঠতে পারবেনা,গায়ের জ্বর আছে।”

-“গায়ে জ্বর মানে?ইয়ারাবী তুই তো বলিসনি আমাকে?কখন এসেছে জ্বর।”

-“ব্ বলার প্রয়ো..জন মনে করিনি তাই।আবরার,একটু পানির গ্লাসটা দিবেন।”

আবরার গ্লাসটা দিলে ও পানি খেয়ে নেয়।অনু জোর করে দু’টা কেক খাইয়ে দেয়।ইয়ারাবীর কাছে অনু আর আবরার থাকে,বাকীরা শপিং করতে যায়।কারন আবরার চাইনা বিয়েতে কোনো ত্রুটি থাকুক।কেননা ও যে কাউকে কথা দিয়েছে। আর ওকে ওর কথা রাখতে হবে।

(২৫)

মিসেস জামান কারোর কাছে ফোনের পর ফোন করেই যাচ্ছে কিন্তু অপর প্রান্তের ব্যাক্তির কোনো নাম নেই।বেশ কয়েকবার ফোন করার পর কেউ একজন ফোন রিসিব করে লম্বা একটা সালাম দিয়ে বলে,

-“ম্যাডাম,এত ফোন কেন দিচ্ছেন?গাড়ি ঠিক করতে তো টাইম লাগে।”

-“ওদের প্রায় শপিং শেষ,বেরবে মনে হয় যা করার জলদি করো।”

-“বললাম তো আপনি চিন্তা করবেন না,আমরা সেই মলের সামনেই আছি।কাজ হলে কল দিবো।”

মিসেস জামান আরো কিছু কথা বলে ফোনটা দিলো।আদিবা এসে ওর মায়ের কাধে হাত রেখে বলে,

-“মা, তুমি আসলে কী করতে চাইছো বলতো?আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা?”

-“চিন্তা করিসনা পথের কাঁটা আর কয়েক ঘন্টা পরে দূর হয়ে যাবে”

-“মা দূর হবে মানে?”

-“চিন্তা করিসনা,আবরার তোর হবে।এখন যা তো,আমার অনেক কাজ আছে।”

-“সত্যি মা,তাহলে আব্বুকে নিষেধ করে দাও ওই ছেলেদের আনতে।”

-“আচ্ছা বলবো,তুই পড়তে বস।”

আদিবা হাসতে হাসতো নিজের রুমে চলে যায়।তবে কাউকে কাঁদালে নিজেকেও কাঁদতে হয় সেটা মনে হয় আদিবার মনে নেই।কেননা কারোর ক্ষতি করার আগে মনে রাখা উচিত তার কান্নার প্রতিটি ফোঁটার হিসাব সৃষ্টিকর্তাকে দিতে হয়।মিসেস জামান মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ভাবতে থাকেন তার মেয়ে কতটা খুশি।আর যে দিন আবরারকে আপন করে পাবে সেদিন তো খুশিতে পাগল হয়ে যাবে।হার-জিত,সফলতা-ব্যার্থতা সব মিলিয়ে জীবন।কিন্তু উনি শুধু চান নিজের জিত।এজন্য কারোর ক্ষতি করতেও দু’বার ভাবেননা।লোভ মানুষকে কতটা নিচে নামাতে পারে তা উনাকে না দেখলে বোঝা যাবেনা।লোভের বশবর্তী হয়ে নিজের বোনের মেয়ের ক্ষতি করতেও পিছপা হচ্ছেনা।তবে উনি ইয়ারাবীর জন্য কী বিপদ ডেকে আনছেন সেটা একমাত্র উনি জানেন।

(২৬)

-“ওই কই তুমি ইমন?আমি আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো।”

-“তুমি কোথায় সাদি?”

-“ওই পোলা আমি তোরে কইছিনা,মোরে জারা কইবি।”

-“ওই ছুরি ভুলবানা,আমি সম্পর্কে তোমার বড় ভাই লাগি।”
-“হু হু, বুঝলাম ,এখন কই তুমি?”

-“এইতো আমি কমপ্লেক্সের সামনে,তুমি কই?”

-“ফুট কোট মেরে বাপ,আপনি আসেন”

-“হু আইতেছি,তুমি খারাও মেরি মা।”

জারা ঠিক ৩০ মিনিট রেস্টুরেন্টে বসে আছে,কিন্তু ইমনের কোনো খোঁজ নেই।ইমন জারার সম্পর্কে খালাতো ভাই।তিন ভাই এরা।বাবা নৌবাহিনীতে চাকরী করে আর মা একজন প্রফেসর।বড় ভাই একজন আর্মি অফিসার,মেজ ভাই ডাক্তার আর ইমন পড়াশোনা করে।মিরপুর-১০ নিজস্ব একটা ফ্লাটে এরা থাকে।এদের সম্পর্কটা অনেক আগে থেকেই তবে হাতে গুনা তিন-চারজন ছাড়া কেউ জানেনা।ইমনের জেদ আগে ও নিজের পায়ে দাঁড়াবে তবে ওদের সম্পর্কের কথা বাড়িতে জানাবে।

তবে জারা যে কম ঝামেলা করে তা নয়।জারার রাগ নাকের ডোগায়।ইমন যদি কিছু করতে না করে তবে সোজা ব্লাকমিল, আর তাতেই স্যারের বারোটা বেজে যায়।

-“ইয়ারাবী আর ইউ ওকে?হাঁটকে পারবে।”

-“আবরার আমি ঠিক আছি”

-“তুমি অসুস্থ তাহলে কাল কেন মেডিসিন খাওনি?”

-“বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করেনা তাই”

-“মানে?একদম আজে বাজে কথা বলবানা।”

অনেকটা ধমকে কথাটা বলে আবরার।ইয়ারাবী মাথাটা নিচু করে বলে,

-“বয়সটা অল্প তবে মানুষ চিনেছি বেশ,বারবার ঠোকেও হাসা আমার পুরানো অভ্যেস।”

-“ইয়া চুপ বাজে বকবি না।দাভাই প্লীজ কিছু মনে করবেননা।”

-“আই নো “-বলে বাঁকা হাসি দেয়।

ইয়ারাবী আবরারের দিকে তাকাতে যেয়ে ওর পিছনে চোখ চলে যায় আর যা দেখে তাতে হাসবে নাকী রাগ করবে বুঝতে পারছেনা।কেননা পিছনের দিকের কর্নারের টেবিলে তাকিয়ে দেখে জারা চেয়ারে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে আর তার সামনে ওর ভাই ইমন কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।ইয়ারাবী ওটা দেখে উঠে দাঁড়াতেই আবরার বলে,

-“কী করছো?আর কিছুক্ষণ রেস্ট নাও।”

-“আপনারা বসুন আমি এইতো আসছি।”

এই বলে পিছনের দিকে যেয়ে জারার কান টেনে ধরে বলে,

-“কী মিস.ফায়ার ?তোমার সাহস তো কম না আমার ভাইয়াকে কান ধরিয়ে দাঁড়ান করে রেখেছো”

-“আহ্ আপিপু কানটা ছাড়ো।শুধু ও তোমার ভাই আমি তোমার কিছুনা।”

-“ইয়ারাবী এর কথায় একদম গলবানা।এন্ড সাদি পিচ্চি আমি ওর ভাই, অবশ্যই আমার দিকটাই বেশি টানবে।”

-“না আপিপু আমার কথা শুনো।”

-“নো ইয়ারাবী আমি তোমার ভাই,তুমি আমার কথা আগে শুনো।”

একপর্যায়ে ওরা দুজন বিশাল আকারে ঝগড়া বাধিয়ে দেয়।ইয়ারাবী না পেরে কানে হাত দিয়ে চিল্লিয়ে বলে,

-“এনাফ,কী শুরু করেছো তোমরা? আমি তোমাদের দু’জনের বোন।”

-“হু,একমিনিট তুই এখানে কী করছিস?আজ না তোর শপিং করার কথা।”

-“করবে কী করে ম্যাডাম তো অসুস্থ হয়ে পরেছেন।”

-“আরে আবরার ভাইয়া তুমিও আছো।”

কথাটা বলে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশ্যাক করে। ইয়ারাবী ওর ভাইয়ার কথা শুনে বলে,

-“ইমু ভাইয়া,আমি তোমার ছোট তাহলে তুমি ওকে ভাইয়া কেন বলছো?”

ইয়ারাবীর কথা শুনে ওরা কিছুটা চমকে যায়,কোনো মতে ইমন নিজেকে সামলে বলে,

-“হ্যাঁ,হ্যাঁ আসলে হয়েছে কী আবরার আমার বড় তাই আরকী?”

আবরারও ইমনের সাথে সাই মিলায়।কিন্তু ইয়ারাবীর মনে হচ্ছে কোথাও কোনো গন্ডোগোল আছে।কিন্তু ওর কিছু চিন্তা করতে ভালো লাগছেনা।কোথাও একটা খালি খালি অনুভব করছে।মাথাটা যন্ত্রনা করছে,তবু্ও শত যন্ত্রনা বুকে চেপে হেসে হেসে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
এর মধ্যেই বাকীরা শপিং শেষ করে চলে আসে।ইমন আর জারাকে দেখে ইয়ারাবীর মা আর খালা অবাক হয়ে যায়।ইয়ারাবী কোনোমতে ব্যাপারটা সামলে নেয়।কেননা এখানে একমাত্র ইয়ারাবী ওদের রিলেশনের ব্যাপারটা জানে।শপিং করে সবাই অনেকটা ক্লান্ত হয়ে যায় তাই রেস্টুরেন্ট থেকে সবার লান্চ করার চিন্তা করে।সবাই খাবার খাচ্ছে,তবে ইয়ারাবী খাবারগুলো নাড়াচাড়া করছে।অন্যদিকে ইয়ারাবীর খালা কেমন একটা ভয়ে ভয়ে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।বিষয়টা ইয়ারাবীকে খুব ভাবাচ্ছে।আবরার ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“কী হয়েছে,খাচ্ছোনা কেন?”

-“আসলে একটু আগে খেয়েছি, তাই আর ইচ্ছা করছেনা।”

-“আগে খেয়েছিস মানে?মাত্র দু’টুকরা কেক?”

-“অনু ও খেতে চাচ্ছেনা জোর করনা।”

ইয়ারাবীর চোখ যায় ওর মায়ের দিকে।দেখে ওর ছোট বোন ইয়ামিলাকে খুব যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছে।ইয়ারাবীর খুব খারাপ লাগছে,ওরো ইচ্ছা করছে ওর মাও ওকে খাইয়ে দিক।কিন্তু সেটা আর সম্ভব নয়,ও কবে ওর মায়ের হাতে খেয়েছে তাও ওর মনে নেই।আগে যদি বলতো খাইয়ে দিতে তবে অপমান ছাড়া আর কিছুই দতে পারবেনা।একবার রাগ করে সারাদিন খেয়ে ছিলোনা,তাও ওর মা ওকে না খাইয়ে দিয়েছিলো না খেতে ডেকে ছিলো।সেই দিনটার কথা মনে পরলে আজও কান্না পায়।

খেয়ে-দেয়ে সবাই বের হচ্ছে কমপ্লেক্স থেকে তখন ওর খালা প্রচুর পরিমানে ঘামতে শুরু করলো।বারবার মলের বাইরের রাস্তার দিকে তাকাচ্ছে।ওর ওমন ভাব দেখে মিসেস ইশানি প্রশ্ন করেন ঠিক আছে নাকী।ও কোনো মতে হ্যাঁ বলে মলের থেকে বের হয়।আজ রবিবার তবুও রাস্তায় প্রচুর গাড়ি চলছে।গাড়িতে উঠবে এমন সময় ওর খালা সবার অগোচরে ইয়ারাবীকে এক ধাক্কা মারে।দুর্বল শরীরে ইয়ারাবী নিজেকে সামলাতে না পেরে রাস্তায় পরে যায়।ঠিক তখনি একটা চলন্ত ট্রাক ওর দিকে ধেয়ে আসে।

#চলবে_______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here