ছন্দহীন পদ্য পর্ব ২

0
766

ছন্দহীন পদ্য
.
পর্ব_ ২
.
‘এ কেমন অসভ্যের মতো আচরণ? আপনি সিগারেটের ধোঁয়া আমার মুখে ছাড়লেন কেন?’

কোনো জবাব এলো না। মানুষটি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অবাক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখভর্তি কালো দাড়ি-গোঁফ। ঘাড় অবধি লম্বা চুল। এরকম চুল দাড়ি শুধু পাগলের থাকে বলে ইভার ধারণা ছিল। কিন্তু এই মানুষটিকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। বেশ লম্বা দেখতে। গায়ের রঙ ফরসা। অন্তর্ভেদী, বুদ্ধিদীপ্ত দু’টা চোখ। চেহারায় আভিজাত্য ভাব প্রবল। দরজা খোলার পর ছেলেটি দেয়ালে হাত ঠেকিয়ে একটু ঝুঁকে এসে ওর মুখে ধোঁয়া ছেড়েছিল। এখন হাত নামিয়ে নিয়েছে। সুদর্শন হলেও ইভা প্রশ্রয় না দিয়ে বললো, ‘কথা বলছেন না কেন? এই কাজটা কেন করলেন আপনি? নিজে তো বি*ষ টানছেন। আবার আরেকজনের মুখে ধোঁয়া ছেড়ে দিলেন। হা করে তাকিয়ে না থেকে কথা বলুন।’

ছেলেটি মুচকি হেঁসে ডাস্টবিনে সিগারেট ফেলে দিয়ে ভেতরে আসার জন্য পা বাড়াতেই ইভা ঠেলে পুনরায় দরজা বন্ধ করে দিল। বন্ধ করে মনে হলো এরকম একটা কাজ সে আজ প্রথম করেছে। এবং ভেতরে ভেতরে কেমন ভালো লাগছে। একটা ছেলেকে ঠেলে বাইরে বের করে দরজা লাগিয়ে দেওয়াতে ভালো লাগার কি থাকতে পারে কে জানে। কাজটা ইভা অবচেতনে হঠাৎ করে ফেলেছে৷ এখন খানিকটা লজ্জা পাচ্ছে সে। অবশ্য তালতো ভাইয়ের সঙ্গে একটু উষ্ণ সম্পর্ক হবে, এটাই সমাজের প্রচলিত নিয়ম। রক্ষণশীল পরিবারে এগুলো আরও বেশি পালন হয়ে থাকে। ইভার তবুও কেমন অদ্ভুত লেগেছে নিজের আচরণ। নিজেকে কেমন অন্যভাবে আবিষ্কার করেছে আজ। এরকমও পারে সে? দরজার অপর পাশ থেকে নক শুনে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো, ‘আশ্চর্য লোক তো আপনি। একটা মেয়ের মুখে ধোঁয়া ছেড়েছেন, সেটার কোনো জবাব না দিয়ে হেঁসে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছেন।’

ওপাশ থেকে পুরুষালি গম্ভীর গলাকে কোমল করে বললো, ‘এই যে অপরিচিতা, আগে দরজাটা খুলুন, তারপর বলছি।’

– ‘দরজা এতক্ষণ খোলাই ছিল। আপনি কিছু না বলে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছিলেন কেন।’

– ‘আমি ভেতরে যেতে যেতে বলতাম। আপনি সেই সুযোগ দেননি।’

– ‘দরজার সামনে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন সে খেয়াল আছে?’

– ‘সে তো আমি নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে দরজা খুলে কবিতার মতো সুন্দর, স্নিগ্ধ একজন নারীর দর্শন পেলে স্তব্ধ হওয়া ছাড়া তো উপায় থাকে না।’

ইভা মুখে হাত দিয়ে ফিক করে হেঁসে ফেললো, তবুও ওপাশে শব্দ যেতে না দিয়ে প্রকট রাগ দেখিয়ে বললো, ‘আপনি আসলেই অসভ্য। অচেনা একটা মেয়ের মুখে ধোঁয়া ছেড়ে এখন আবার ফ্লার্টিং শুরু করেছেন।’

– ‘আত্মপক্ষ সমর্থন করতে ইচ্ছা করছে না অপরিচিতা৷ আমাকে শাস্তি দেওয়া হোক।’

– ‘দরজার বাইরে থাকুন এটাই শাস্তি।’

– ‘হৃদয়হীন নারী, আমাকে যা শাস্তি দেওয়ার গৃহে নিয়ে দেওয়া হোক।’

– ‘শাস্তি যে দেবে সেইই শুধু সিদ্ধান্ত নিবে কি শাস্তি দেওয়া হবে, অপরাধী নয়।’

– ‘যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো!’

ইভার যথেষ্ট রাগার কথা। মুখে ধোঁয়া দিলে সে মুখে চ*ড় মা*রার মতো মেয়ে। এমন সুযোগও কাউকে কোনোদিন দেয়নি। কিন্তু কিছুতেই সেই অনুপাতে রাগ হচ্ছে না। সে তবুও কঠিন গলায় বললো,

– ‘আপনাকে নির্বাসনই দেওয়া হলো। দরজা আর খুলবো না।’

ততক্ষণে আফরা এসে বললো, ‘কিরে তুই দরজা খুলে না দিয়ে এখানে কি করছিস?’

– ‘শাস্তি দিচ্ছি।’

আফরা দরজা খুলে দিতে দিতে বললো, ‘তোর মাথায় কি গোবর ইভা। এত সময় বাইরে রেখে এটা কেমন রসিকতা হচ্ছে!’

ইভা কোমরে হাত দিয়ে দাঁত কটমট করে তাকিয়ে থেকে বললো, ‘কিছু না জেনে আমাকে উলটো বকা শুরু করেছো, তাই না? আমি দরজা খুলে দিয়েছিলাম, তারপর উনি কি করেছেন জিজ্ঞেস করো।’

অনিক ভেতরে এসে দরজায় হেলান দিয়ে প্যান্টের পকেটে এক হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। আফরা ওর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ওর সঙ্গে কি করেছো অনিক?’

অনিক ঘাড়ের চুলে হাত বুলিয়ে বললো, ‘আমার ধারণা ঠিক হলে এই অপরিচিতা আমার তালতো বোন তাই না?’

– ‘হ্যাঁ আমার ফুফাতো বোন। এখন কি করেছো বলো।’

– ‘তোমার বোনকে একা পেয়ে আমি যা করেছি তার জন্য স্যরি ভাবি।’

আফরা বিস্মিত হয়ে বললো, ‘হোয়াট! কি বলছো এসব?’

ইভা চোখ পাকিয়ে থেকে বললো, ‘কি মিন করছেন আপনি? আপু একা পেয়ে আমাকে উনি কিছু করেন নাই। আমি দরজা খুলে দিতেই আমার মুখে সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে দিছেন।’

– ‘তাই না-কি? এটা কেমন রসিকতা অনিক?’

– ‘তালতো বোনের সঙ্গে একটু রসিকতা করা যাবে না?’

– ‘তা যাবে, মুখে করো, তাই বলে সিগারেটের ধোঁয়া!’

– ‘সত্য কথাটা বলে এবার দুই নারীর চিপা থেকে বাঁচি তাহলে। আসলে দরজা দেরিতে খোলার কারণে আমি ভাবির মুখে ধোঁয়া ছাড়তে চেয়েছিলাম। বুঝতে পারিনি অন্যকেউ।’

ইভা প্রতিবাদ করে বললো, ‘মিথ্যে কথা, আপনি ঝুঁকে এসে মুখ না দেখে ধোঁয়া ছেড়েছেন বুঝি?’

– ‘তা না, ধোঁয়া ছাড়ার পর বুঝেছি ভুল জায়গায় কাজটা করে ফেলেছি। তখন আর ধোঁয়া মুখে ফেরত নিতে পারিনি।’

– ‘তবুও ধোঁয়া চেনা মানুষের মুখে দেওয়াও খুবই জ*ঘন্য কাজ।’

– ‘সেটাও মাথা পাতা নিলাম। এখন আমাকে যেতে দেওয়া হোক।’

– ‘আপনাকে কেউ ধরে রাখেনি।’

আফরা হাসতে হাসতে বললো, ‘কিরে তোমরা রীতিমতো ঝগড়া শুরু দিয়ে দিয়েছো দেখছি। যাও তো অনিক। তোমার রুমে যাও।’

অনিক যাবার সময় ওর কাছাকাছি এসে বললো, ‘আসলেই কাজটা ঠিক হয়নি আমার, আবারও বলছি স্যরি। ধোঁয়া ছেড়ে আপনার চোখে মুখে লাগিয়েছি। আপনি চাইলে আমি মুখ ধুইয়ে দিতে পারি।’

ইভা বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বললো, ‘আপু শুনেছো উনি কি বলছে। তোমার দেবর কিন্তু খুবই অসভ্য।’

– ‘আমি খারাপ কিছু তো বলিনি। কারও কাপড়ে ময়লা লাগালে সেটা ঝেড়ে দিতে চাওয়াটাই তো ভদ্রতা। তাই না ভাবি? তুমিই বলো।’

– ‘আমার বোনটার সাথে প্রথমদিনই কি শুরু করেছো অনিক। যাও তো রুমে।’

তারপর বোনকেও টেনে নিয়ে এলো সে। ইভাদের বাড়ি সুনামগঞ্জে। সে সিলেটে একটি ন্যাশনাল ভার্সিটিতে অনার্সে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু কোথায় থাকবে তা নিয়ে সমস্যায় পড়েছিল। হোস্টেলে উঠে পড়ালেখা করতে খরচটা বেশি হয়ে যায়। কিন্তু আফরার মুখে এসব শুনে ওর বর নাঈম বললো, ‘আমাদের বাসা খালি পড়ে আছে। তাহলে সে হোস্টেলে থাকবে কেন? এখানেই থাকতে পারবে, ওকে বলো আমাদের এখানে এসে উঠুক।’

সেভাবেই এখানে আসা ওর। নাঈম আর আফরার বিয়েটা সম্পর্কের। শুরুর দিকে দুই পরিবার না মানলেও বিয়ের পর মেনে নিয়েছিল। এই বাসাটা মূলত অনিকদের চাচার। ওরা পুরো পরিবার ইংল্যান্ডে থাকে। তিনতলার এই বাসা পুরোটাই খালি। ভাড়াটিয়া তুলেননি তার চাচা। বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে দেশে এলে গ্রাম আর শহরে মিলিয়ে থাকেন। এখন নিচের তলায় শুধু অনিকরাই আছে।
আফরা ওকে বিছানায় বসিয়ে বললো, ‘তুই তো এমন ছিলি না ইভা, এত ঝগড়া শিখলি কোত্থেকে?’

– ‘মুখে সিগারেটের ধোঁয়া দিয়েছে, বুঝেছো আপু ব্যাপারটা?’

ইভা এখনও রেগে আছে দেখে আফরা রসিকতা করে বললো,

– ‘তাতে কি হয়েছে এমন? বিয়ের পর যদি দেখিস তোর বর সিগারেট খায় তাহলে কি করবি? রাতে তো সে তোর নাকে-মুখে শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়বে।’

– ‘ওয়াক, এমন জামাইর সাথে ঘুমাবোই না। বাইরে বের করে দেবো। যাই আপু, আমি মুখ ধুয়ে আসি। কেমন যেন লাগছে।’

আফরা খিলখিল করে হাসছে। বিয়ের পর নাঈম অফিসে চলে গেলে একা বাসায় ভালো লাগতো না। তাই নিজেই একটা জব নিয়েছে৷ এখন ও আসায় সময়টা ভালোই কাটবে মনে হচ্ছে।
ইভা মুখ-হাত ধুয়ে বের হবার পর আফরা বললো, ‘তোর রুমটায় চল। সবকিছু গুছিয়ে নে।’

পাশের রুমের দরজা খুলে বাতি জ্বেলে দিল আফরা। ইভা তাকিয়ে দেখে, একই রুম। ভেতরে বিশেষ কিছু নেই। শুধু একটা আলনা আর মাঝখানে পালঙ্ক আছে। এটাচ বাথরুম, পশ্চিমে দরজা খুললে বারান্দার মতো আড়াই হাত জায়গা। কোমর অবধি রেলিঙ৷ দিনে সেখানে দাঁড়ালে সবুজ মাঠ দেখা যায়। এরপর পাহাড়। চা বাগান।
আফরা হাই তুলে বললো, ‘বইনরে আমি তোকে বিছানা বালিশ-টালিশ দিচ্ছি তুই বিছিয়ে নে। ভদ্রতা দেখানোর এনার্জি পাচ্ছি না আমি। ক্লান্ত লাগছে।’

ইভা হাসতে হাসতে বললো, ‘আচ্ছা দাও, আর তুমি এমনিতেই অলস আবার এখন জব ধরেছো।’

আফরা যেতে যেতে বললো,

– ‘জব করতেও ইচ্ছা করে। আবার করতেও ক্লান্তি লাগে।’

রুমে এসে বিছানা বালিশ ওর কাছে দেয়। ইভা সেগুলো নিয়ে চলে যায়।

অনিকের আজকাল দু’বার গোসল করার অভ্যাস হয়েছে। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই নাশতা করে টিউশনি পড়াতে যায়। এসেই গোসল করে সিগারেটের প্যাকেট সামনে নিয়ে লিখতে বসে। খানিক পর পর একেকটা সিগারেট ধরায়। ধোঁয়া কেমন ঘোর লাগিয়ে দেয় তাকে। সিগারেট টানতে টানতে চরিত্রগুলো নিয়ে ভাবে। এভাবে ঘণ্টা কয়েক লেখালেখিতে কেটে যায়। মাঝে মাঝে চা নিয়ে বসে। চা আর সিগারেট তার লেখালেখির একমাত্র সঙ্গী। টিউশনি থেকে ফিরে সেই যে লিখতে বসে। উঠে দুপুরবেলা। খাওয়া-দাওয়া করে বাইরে বের হয় তখন। এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ায়। বিকেলে পাব্লিক লাইব্রেরিতে গিয়ে বই পড়ে। তারপর আবার সন্ধ্যায় টিউশনি আরেকটা। বাসায় ফেরা হয় আটটার দিকে। এসে গোসল করে কখনও বই পড়ে আর না হয় লিখে। আজকাল লেখার চাপটা ভীষণ। প্রতি দুই ঈদে পত্রিকায় উপন্যাস যায় তার। বছরের মাঝামাঝি সময় থ্রিলার উপন্যাস বের হয়। বইমেলায় একটা প্রেমের ছোট্ট উপন্যাস, আরেকটা দীর্ঘ কলেবরের সামাজিক কিংবা সমকালীন উপন্যাস বের হয়৷ প্রতি রমজান মাসে ফেইসবুকেও একটা উপন্যাস দেয়। ফেইসবুকে লিখতে তার ভালোই লাগে৷ পাঠকদের প্রতিক্রিয়াটা সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায় বলে না-কি তার লেখালেখির হাতেখড়ি ফেইসবুকে সেজন্য। এটা নিজেও জানে না। তবুও ফেইসবুকে প্রতি বছর একটা উপন্যাস দিয়ে যাচ্ছে সে৷ শুরুর দিকে পদ্য আপু আর সে ডুয়েল পাঠ করে বেশকিছু উপন্যাস ইউটিউবে দিয়েছিল। সেগুলোর ভিউ হতো লক্ষাধিক। এখন আর সেসবে সময় দিতে পারে না। ভালোও লাগে না। আচ্ছা পদ্য আপুর সঙ্গে এখনও ডুয়েল ভয়েজ দেয়ার সুযোগ হলে কি তার সময়ের অভাব থাকবে? ভালো না লাগা থাকবে? হয়তো থাকবে না, শত ব্যস্ততাকে পেছনে ফেলে আবার ছেলে-মানুষিতে মেতে উঠবে। রাত জেগে সেই টিনেজ বয়সের মতোই আবার কিবোর্ড চেপে ভীষণ প্রেমময় গল্প ফাঁদবে। তারপর দু’জন মিষ্টি করে প্রণয়ের সংলাপ পাঠ করে ভক্তদের শুনাবে৷ এখন আর তার চ্যানেলে ডুয়েল পাঠের গল্প যায় না। ফেইসবুকেও আর কতদিন উপন্যাস দিতে পারবে কে জানে। বইমেলার আর মাত্র তিনমাস সময় হাতে আছে। প্রেমের উপন্যাসটা এখনও তার লেখা শুরু হয়নি। মোটা উপন্যাস শুরু করেছে৷ কচ্ছপের মতো মন্থর গতিতে এগুচ্ছে। গোসল করে এসে শর্ট প্যান্ট আর মেগি হাতা গেঞ্জিটা পরে নিল সে। বাসায় এই পোশাকেই থাকে। কেমন আরাম পায়। হালকা লাগে নিজেকে। লম্বা চুলগুলোতে আঙুল চালিয়ে ঠিক করতে করতে ডিমলাইট জ্বেলে দেয়। চেয়ার টেনে ল্যাপটপ খুলে বসে। সমকালীন উপন্যাসটার নাম এখনও ঠিক করা হয়নি। লেখাটাও এগুচ্ছে না। সিগারেট একটা বের করে ধরিয়ে নিল। চোখবন্ধ করে টান দিয়ে ভাবতে বসলো সে। এভাবে হবে না৷ সমকালীন উপন্যাসটা লিখতে হবে ভোরে৷ সন্ধ্যায় প্রেমের উপন্যাস। দু’টা একসঙ্গে এগিয়ে যাক৷ একটা তো শুরু করা হয়ে গেছে৷ আরেকটা কিভাবে করবে? প্রেমের উপন্যাসের প্লটটাও এখনও ভাবা হয়নি। হঠাৎ মাথায় এলো আজকের ঘটনাটা। বেশ নাটকীয় এবং মজার ঘটনা। নায়ক দরজা খুলে ধোঁয়া ছেড়ে দিয়েছে নায়িকার মুখে। আচ্ছা মেয়েটির কি রিলেশন আছে? থাকলে পুরো বাস্তব একটা গল্প একটু কল্পনার রঙ তুলি দিয়ে টেনে পুরো একটা উপন্যাস হয়ে যেতে পারে। অতীতেও এরকম লিখেছে সে। টিউশনি পড়াতে গিয়ে এক ছাত্রের বোনকে নিয়ে। একেবারে মেয়েটির রুম, পড়ালেখা, হাঁটা-চলা, চেহারার বর্ণনা। বেশ মজা পায় এভাবে লিখতে। অথচ যাকে নিয়ে লেখা সে নিজে পড়লেও বুঝবে না কিছু। ভালোই প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল পাঠকদের। সে অ্যাশট্রেতে সিগারেটটা ফেলে আজকের ঘটনাটা লিখতে গিয়ে মনে হলো মেয়েটার পোশাক-আশাক আচার-আচরণ উঠে আসছে না। মূল ঘটনাটা লিখে সে দরজা খুলে সিটিং রুমে এলো। তার রুমটা সামনে। ডান দিকে বাইরে যাওয়ার মূল দরজা৷ সিটিং রুম থেকেই সকল কামরায় যাওয়ার পথ। সে এগিয়ে গিয়ে দেখে নাঈম রুমে৷ পাশের রুমে খয়েরী রঙের পর্দার ফাঁক দিয়ে আলো দেখা যাচ্ছে। এই রুমেই মেয়েটা আছে তাহলে। সে যাওয়ার জন্য বিশেষ কোনো অজুহাত খুঁজে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছিল। তখনই কিচেন থেকে চা’র ট্রে হাতে আফরা এলো।

– ‘অনিক তোমার চা’টা নাও।’

চা দেখে তার ভালোই লেগেছে। তবুও কাপ হাতে নিতে নিতে বললো,

– ‘এই সময় আবার চা জ্বাল দিতে গেলে কেন ভাবি?’

– ‘আর বলো না, তোমার ভাইয়ের কখন কি মন চায় তার ঠিক আছে না-কি!’

– ‘ডিউটির শেষ নাই। বউ পাইলে ব্যাটারা ভালোভাবে খাটিয়ে নেয় ভাবি। বিবাহিত ব্যাটাদের এইজন্য আমি দুই চোখে দেখতে পারি না।’

– ‘এহ আসছে দরদ দেখাইতে, ইভার চা’টাও নিয়ে যাও তোমার ভাইকে দিয়ে আমি আসছি।’

নাঈম বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী উপন্যাস আজ বের করেছে ঘুমানোর আগে পড়ার জন্য৷ পড়া তার মোটেও একমাত্র লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নয়। বেশ কয়েক মাস থেকেই তার অনিদ্রা জনিত সমস্যা হচ্ছিল। আগে এমন ছিল না৷ আফরাকে জড়িয়ে ধরে নানান গল্প-গুজব করে হঠাৎ ঘুমিয়ে যেত। এখন অর্ধেক রাতই ছটফট করে কেটে যায়। এক ডাক্তার বন্ধু বলেছিল বই পড়লে মানুষের ভালো ঘুম হয়। বই পড়ার সঙ্গে না-কি মস্তিষ্কের নিবিড় সম্পর্ক আছে। যেহেতু কাল্পনিক বই চোখ দিয়ে পড়ে মাথা দিয়ে বুঝার পাশাপাশি কল্পনাও করতে হয়। তাতে শরীরের মতো মস্তিষ্কেরও ব্যায়াম হয়। যার কারণে ঘুম হয় ভীষণ গাঢ়। সত্যিই তার কাজ হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের কিছু গল্প-উপন্যাস এনেছিল। রাতে দু-এক পৃষ্ঠা পড়লেই তার ঘুম চলে আসতো। কিন্তু তা দিয়েও আজকাল কাজ হচ্ছে না। উলটো যে বই হাতে নেয়, তার পুরো গল্প জানার জন্য রাত জেগে পড়তে শুরু করে। বড়োই মুসিবত। আফরা এসে চা’র কাপ বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘উঠে চা’টা নাও।’

নাঈম বইটা বুকের ওপর রেখে চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে বললো, ‘তুমি খেয়ে নাও, চা খেলে যে ঘুম আসে না আমি ভুলে গিয়েছিলাম। প্লিজ রাগ করো না।’
__চলবে…
লেখা: জবরুল ইসলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here