ছত্রিশ ঝামেলা পর্ব ৯

0
170

#ছত্রিশ_ঝামেলা
#পর্ব_৯

পিয়াসার গতকাল হাতের স্টিচ কাটবার কথা। খবর নেওয়া দরকার। নিশাত ঠিক করেছে ফোন করে যাবে না। সরাসরি বাড়ি গিয়ে পিয়াসাকে চমকে দেবে। পিয়াসা তার মামার বাড়িতে থাকে। পিয়াসার মায়ের বিয়ের পরপরই পিয়াসার নানা মারা যান। পিয়াসার মামা তখন ছোট। শাশুড়ি আর একমাত্র শালাকে দেখাশোনা করতেই পিয়াসার বাবা ওবাড়িতে থেকে যান। তবে নিশাতের মনে হয় এই দেখাশোনার ব্যাপারটা সত্যি না। কারণ তিনি কাজকর্ম কিছুই করেন না। পিয়াসার নানার পেনশনের টাকা এবং সামান্য কিছু ঘর ভাড়ার টাকায় টানাটানির মাঝে পিয়াসাদের সংসার চলে। নিশাতের ধারণা, পিয়াসার বাবার আদৌ কোনো বাড়ি ছিল না বলে তিনি শ্বশুরবাড়িতে থেকে গেছেন। ঘরজামাই হবার গল্পটা ঢাকতেই তিনি দেখাশোনার গল্পটা করেন। পিয়াসার বাবা মাসুকুর রহমান নিশাতকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। দেখা হওয়া মাত্রই আন্তরিক স্বরে বলেন, নিশু, আমার মমতাময়ী নিশু মা, তোমাকে দেখে চক্ষু তৃষ্ণা মিটলো। কতদিন তোমায় দেখি না বলো তো?
বান্ধবীর বাবার স্নেহ মমতা নিয়ে কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলে তিনি নির্ঘাত এই পৃথিবীর সেরা বান্ধবীর বাবা হতেন৷ তবে উনার এত স্নেহের পরেও ওবাড়িতে যেতে নিশাতের ইচ্ছে করে না। কারণ পিয়াসার ছোট মামা। ছোট মামা হলেও উনার বদ ইচ্ছে অত্যন্ত বড়। পিয়াসার ছোট মামার নাম মন্না। নিশাত তাকে ডাকে মন্না মামা। নিশাতের সাথে দেখা হলেই তিনি জিভ বের করা কুকুরের মতো তাকান। সেই জিভ দিয়ে একটু পর ঠোঁট চাটেন। লালা টেনে নেবার মতো হিসহিস শব্দ করেন। নিশাত মন্না মামার জিভ থেকে অদৃশ্য লালা ঝড়াও যেন দেখতে পায়। নিশাতের মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়, মন্না মামার চোখের ভেতরে এক্সরে রশ্মি আছে। যেটা দিয়ে তিনি নিশাতের জামার ভেতর দেখতে পান। তবে একটা জিনিস স্বস্তির; প্রতি বৃহস্পতিবার ছাড়া সপ্তাহে আর কোনোদিনই তিনি বাড়িতে থাকেন না। বৃহস্পতিবার মন্না মামার কাপড় ধোয়া দিবস। ওই দিন তিনি শুধু নিজের কাপড় নয়, বাড়ির সবার কাপড় ধুয়ে দেন। একবার নিশাত বৃহস্পতিবারে পিয়াসাদের বাড়ি গিয়েছিল। মন্না মামা বারবার বলছিলেন,
–“নিশাত ভুল করলে। তোমার কাপড়-চোপড়গুলোও নিয়ে আসতে ধুয়ে দিতাম। এক কাজ করো তো তোমার গায়ের জামাটা চট করে খুলে দাও তো। ধুয়ে ফেলি। তুমি বরং পিয়াসার থেকে একসেট ধোয়া জামা পরে ফেলো।”
নিশাত সেদিন ওবাড়িতে পিয়াসার জামা পরে সারাদিন বসেছিল। মন্না মামা তার জামা ধুয়ে, ইস্ত্রি করে দিয়েছিলেন।

নিশাত হিসেব করলো। আজ মঙ্গলবার। তার মানে মন্না মামা বাড়িতে নেই। নিশাত স্বস্তির সাথে বেল টিপলো। আশ্চর্য! দরজা খুলেছে মন্না মামা। তার ঘাড়ে এবং বাঁ হাতে ব্যান্ডেজ। তিনি দাঁত বের করে বললেন,
-“ওহ নিশু, তোমাকে তো দেখি আজ ফাটাফাটি লাগছে। স্লিম হয়েছো না কি? মেয়ে মানুষ যত স্লিম তত সুন্দর! মেয়ে মানুষ হবে বাঁশপাতার মতো। চট করে উলটানো পাল্টানো যাবে। বাঁশপাতা দেখো না- বাতাস দিলেই এপিঠ ওপিঠ উল্টায় যায়। তুমিও বাঁশপাতার মতো হয়ে গেছ। তুড়ি মেরে উল্টানো যাবে।”
মন্না মামা অশ্লীল ইঙ্গিতে হাসলেন।
নিশাত সাথে সাথেই মন বদলালো। পিয়াসাদের বাড়ি থেকে যথাসম্ভব দ্রুত বেরিয়ে যেতে হবে।
নিশাত দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“আপনি অ্যাক্সিডেন্ট করেছেন না কি? এই অবস্থা!”
-“আর বলো না, এক বুড়ি ঢংগীরে বাঁচাইতে গিয়া বাইক নিয়া খাঁদে। বুড়ি হাঁটতেছিল রাস্তার মাঝখান দিয়া। ইয়া বড় বড় দুই তবলা ছড়াইয়া। হর্ণ দিই, কানে শোনে না। শেষে বাইক আনকনট্রোল হইয়া ড্রেনে। শরীরের তিন জায়গায় কাটছে। হাত ভাঙলো।”
মন্না মামা লুঙ্গি উঠিয়ে উরু দেখাতে লাগলেন।
-“এই দেখো কতটুকু কাটছে। হাত দিয়া দেখো, সমস্যা নাই। তুমি আমার ভাগ্নি মানুষ। উরুতে হাত দিলে তো সমস্যা নাই।”
নিশাত প্রসঙ্গ বদলালো।
-“পিয়াসা বাড়িতে নেই মামা? ওর সাথে জরুরী একটা দরকার ছিল। আসলে আমাকে টিউশন পড়াতে যেতে হবে তো। পিয়াসা…”
নিশাত জোরে চেঁচিয়ে ডাকলো। নিশাতের ডাক শুনে পিয়াসার বাবা মাসুকুর রহমান বেরিয়ে এলেন। তার এক হাতে খুনতি। গায়ের সাদা স্যান্ডো গেঞ্জিতে হলুদ তেলের দাগ! বুঝাই যাচ্ছে তিনি রান্না করছেন।
-“নিশু আমার মমতাময়ী মা জননী। এসো এসো…কতদিন পর এলে। ভালো সময়ে এসেছো। আজ কিন্তু দুপুরে খেয়ে যাবে। আমি রানা করছি। চেপা শুটকির ঝাল বড়া হচ্ছে। চেপা শুটকি আর শুকনা মরিচ একসাথে বেটে বড়ি বানানো হয়েছে। সেই বড়ি কুমড়ো পাতায় মুড়িয়ে ডুবা তেলে ভাজা হচ্ছে। গরম ভাতের সাথে খেতে অমৃতসম। সাথে আছে মুগের ডাল। আর ছোটমাছ দিয়ে আমড়ার টক। বুঝতেই পারছো, হেব্বি চাপে আছি। তুমি এসো তো, টকের লবণ নিয়ে বিরাট ঝামেলায় আছি। একবার মনে হচ্ছে লবণ কম হয়েছে, আরেকবার মনে হচ্ছে বেশি। কী মুশকিল বলো তো!”
নিশাত অধীর গলায় বললো,
-“আজ খেতে পারবো না চাচা। আরেকদিন এসে খাবো। আজ আমার একটু বিজি শিডিউল। পিয়াসা কোথায়?”
-“পিয়াসা ওর ঘরে। বেচারির হাতের স্টিচ কাটা হলো গতকাল৷ আজ সেজন্যই তো এত আয়োজন। মেয়েটা নিজের হাতে মেখে আজ কতদিন পর ভাত খাবে। তুমি বরং পিয়াসার সাথে দরকারি কাজটা সেড়ে ফেলো। এর মধ্যে রান্না এগিয়ে গেলে খেয়ে যাবে গো মা।”

নিশাত পিয়াসার ঘরে এসে থমকে গেল। সমস্ত ঘর এলোমেলো। বই, কাপড়-চোপড়ে মেঝে একাকার। মেঝেতে চিত হয়ে পিয়াসা শুয়ে আছে। নিশাত কয়েকটা বই কুড়িয়ে শেলফে রাখলো। পিয়াসা শুয়ে থেকেই বললো,
-“গুছিয়ে লাভ নেই। আবার ফেলবো। জীবনই যার অগোছালো, তার আবার গুছালো ঘর কী?”
নিশাত শুনলো না। সে কাঁধের ব্যাগটা রেখে ঘর গুছাতে লাগলো।
-“চাকরগিরি ব্যাপারটা তুই বাই বর্ন পেয়েছিস, তাই না? তোর বাবা লোকের চাকর ছিলেন, এখন তোর মা। তারপর তুই সেই পথেই হাঁটছিস। তারপর তোর ছেলেমেয়ে হলে তারাও হবে!”
নিশাত পিয়াসাকে টেনে তুলে বসালো।
-“কেন এমন করছিস? কিছু হয়েছে? ওই ঠুল্লার কি মনের জলভাগ বেশি?”
পিয়াসা জবাব না দিয়ে উঠে চলে গেল। চোখেমুখে পানি দিয়ে এসে বসলো। তার দৃষ্টি বিভ্রান্ত!
-“কেন এসেছিস নিশু?”
-“তোকে প্রথম পুরষ্কার দিতে এসেছি।”
-“ওহ!”
-“আজ সারাদিনের জন্য আমি তোর চাকর।”
-“এটা পুরষ্কার?”
-“এটাই ছিল। তবে আজ শিডিউলে একটু গড়মিল হয়ে গেছে। লাস্ট মোমেন্টে প্ল্যান বদলালাম। সারাদিনের চাকরগিরিটা তোর সুবিধামতো একটা দিনে করে দেবো।”
পিয়াসা আবার মেঝেতে শুয়ে পড়লো। স্থির দৃষ্টিতে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“নিশু শোন। এরপর থেকে কোনো দরকার হলে আমাকে ফোন করে ডাকবি। আমাদের বাড়ি আসবি না। ছোটমামা তোকে বিয়ে করবেন বলে পাগল হয়ে আছেন। তার চোখের সামনে কম পড়াই ভালো। কখন কী অঘটন ঘটান!”
-“কেন? আমি তোর মামী হলে সমস্যা কী?”
-“সমস্যা নেই। তবে আনন্দেরও কিছু নেই। ছোটমামা বারো ঘর ঘুরে খাওয়া বিড়াল। সঙ্গদোষে লোহা ভাসে। তখন তুইও হয়ে যাবি বারো ঘর ঘুরে খাওয়া বিড়ালনী।”
নিশাতও পিয়াসার পাশাপাশি মেঝেতে শুলো। একদম পিয়াসার মতো করে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আমাদের নতুন বাসাটা কেন দেখতে গেলি না বলতো? আমার ঘরে তোর একটা ছবি আছে। ছবিটা দেখলে তুই চমকে যাবি পিয়া।”
-“দেখতে যাইনি কারণ আছে।”
পিয়াসা নিশাতের পাশ থেকে উঠে পাশের ঘরে গেল। ফিরে এলো একটা বিশাল শপিং ব্যাগ নিয়ে। নিশাতের সামনে রাখলো। নিশাত উঠে বসলো।
-“এসব কী?”
-“ঠুল্লা বিয়ের শপিং করে পাঠিয়েছে। বলছে কক্সবাজার যাবার আগে বিয়ে করে ফেলতে। আমি ইউনিভার্সিটি থেকে ট্যুরে গেলে সেও যাবে। লুকিয়ে হানিমুন।”
নিশাত বিয়ের শাড়িটা নিজের গায়ে মেলে দেখলো।
-“এত সুন্দর শাড়ির জন্য হলেও তোর বিয়ে করা উচিত। এজন্য এত ঘাবড়ে গেছিস কেন?”
পিয়াসা নিশাতের হাত থেকে বিয়ের শাড়িটা নিয়ে ভাজ খুললো। ভেতর থেকে একটা চিঠি বের করে বললো,
-“পড়ে দেখ!”
-“পড়তে ইচ্ছে করছে না। হাতের লিখা অতি জঘন্য।
মুখে বলে ফেল।”
-“ঠুল্লার মা-বাবা কেউ নেই। এতিমখানায় বড় হয়েছে।আমার বাবার মতো ভিটেমাটি ছাড়া। বিয়ের পর ঘরজামাই থাকতে চলে আসবে৷ বাবা নাহয় নিজের শ্বশুরবাড়িতে থাকছে। ঠুল্লা কোথায় থাকবে? নানা শ্বশুরের বাড়িতে? আমি এটা নিতে পারবো না।”
-“সোজা করে বলে দে, আমায় বিয়ে করতে হলে নিজের বাড়ি বানাতে হবে।”
-“বললে যদি আমায় ছেড়ে চলে যায়?”
-“চলে গেলে চলে যাবে। আরো ঠুল্লা পাবি।
এক ঠুল্লা চলে গেল।
তাতে কী এলো গেল?
তাছাড়া তুই এখন বিয়ে করে ফেললে আমাদের কক্সবাজার গিয়ে আনন্দ করা হবে না।”
পিয়াসা সাথে সাথেই নিশাতের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো।
-“তুই এক্ষুনি আমার সামনে থেকে যা। এক্ষুনি যা।”
-“এক্ষুনি যাবো? তোর বাবা বলছিল খেয়ে যেতে। শুটকির ঝাল বড়া ভাজা হচ্ছে। একটু খেয়ে যাই। বাড়ি থেকে না খাওয়া বেরিয়েছি।”
-“তুই এক্ষুনি যা। যাস্ট নাউ!”
নিশাত ব্যাগ কাঁধে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। পিয়াসা সিলিং এ তাকিয়ে পিছু ডাকলো।
-“নিশু…”
নিশাত জবাব না দিয়ে বসলো পিয়াসার পাশে৷
পিয়াসা নির্লিপ্ত স্বরে বললো,
-“হঠাৎ তোদের এই আর্থিক সমৃদ্ধি আমি নিতে পারছি না নিশু। তোর মা লোকের বাড়িতে কী এমন কাজ করেন যে এতগুলো টাকা পেয়ে গেলেন? আলাদিনের চেরাগ পেলেও তো এমন হবার কথা না।”
-“টাকা মা পাননি! হালিম চাচা দিয়েছেন। তাছাড়া আগের কাজটা মা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন অন্য বাড়িতে কাজ পেয়েছেন। ঠিক বাড়িতে নয়। শিল্প প্রতিমন্ত্রীর ওয়াইফের পারসোনাল কাজের সাহায্যকারী। শর্ট টাইমের জন্য প্রতিদিন ছয়ঘন্টা কাজ। এর মধ্যে কাপড়চোপড় ধোয়া, ঘর গুছানো যাবতীয় সব।”
-“তোর মা আগের কাজটা ছাড়লো কেন?”
-“মা তো কোনো বাড়িতেই ছ’মাসের বেশি কাজ করে না। এইসব বুয়া টাইপের কাজে নাকি দীর্ঘদিন এক বাড়িতে থাকলে কোনো কদর থাকে না।”
-“নিশু শোন্, আওলা ঝাওলা কথা আমার সাথে বলবি না। তোর মা ঠিক কী ধরনের কাজ করছেন, আমার মনে হয় তোর খোঁজ নেওয়া উচিত।”
-“তুই আমার মা’কে সন্দেহ করছিস?”
-“সন্দেহ করছি না, সন্দেহ করলে তুই বেঁচে যেতি। আমি বরং নিশ্চিত করে বলছি, তোর মায়ের কাজের বিনিময়ে টাকা পাওয়াটা অবিশ্বাস্য।”
নিশাতের চোখ ভিজে এলো৷
-“মায়ের কথা বলেই যে তুই কেঁদে পার পেয়ে যাবি তা কিন্তু নয় নিশু। তোর মা হওয়া ছাড়াও তিনি একজন আলাদা মানুষ। একজন মানুষ; দোষ গুণ মিলিয়েই তবে মানুষ।”
নিশাত কোনোরকমে বললো,
-“আমি জানি আমার মা একদম পরিষ্কার পানির মতো। মায়ের কাজের খোঁজ নেবার কোনো দরকার নেই।”
নিশাত মুখ কালো করে বেরিয়ে এলো। মন্না মামা নিশাতের পিছু পিছু এলেন।
-“কী ব্যাপার না খাইয়াই চলে যাইতেছ। চলো তোমাকে রিকশা ঠিক কইরা দিই। আজকাল রিকশাওয়ালা সবগুলা টাউট। কোমরে ভাংতি নিয়া বলবে ভাংতি নাই।”
-“লাগবে না মামা। আমি ঠিক করতে পারবো। টাউট রিকশাওয়ালা যেমন আছে ভালো রিকশাওয়ালাও আছে। আর আমি কাছেই যাবো। আমার ছাত্রীর বাসা এই সামনের গলিতেই।”
মন্না মামা তাও নিশাতের পিছু পিছু আসতে লাগলেন।
-“আর কিছু বলবেন মামা?”
-“বলা আর কী! তুমি তো আমার সব জানোই। বাবার বাড়িটা আমার নামে। সাত কাঠার উপর বাড়ি। এক কাঠার দাম কত জানো? দেড় কোটির উপরে। দুই কাঠা বেচে দিলে আজীবন নিশ্চিন্ত।”
নিশাত হাঁটা থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।
-“বাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছেন না কি?”
-“পুরো বাড়ি তো বিক্রি করবো না। শুধু দুই কাঠা।”
-“দুই কাঠা যেদিন বিক্রি করবেন আমাকে বলবেন। আমি আপনার বাড়ি কিনতে আগ্রহী মামা।”
-“তুমি কিনবে?”
-“জি মামা। মা অনেকদিন থেকেই বলছিলেন, জায়গা কিনবেন। সুবিধামতো পাচ্ছেন না। আপনি আপন মানুষ। আপনার জায়গা হলে ভালো হয়।”
মন্না হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকালো। তার চোখের মণি ক্রমাগত নড়ছে। নিশাত মন্না মামার সামনে দাঁড়িয়েই রিকশা ডাকলো। সে এখন যাবে শাকিব স্যারের বাড়ি। তার মন খারাপ থাকলেই সে শাকিব স্যারের বাড়ির সামনে ঘুরাঘুরি করে। কেন জানি বাড়িটার দিকে তাকালেই নিশাতের ভেতর শান্ত হয়ে আসে। মন স্থির হয়। মনটা বলে, কে বলে তোমার কিছু নেই নিশাত। তোমার সব আছে। এই যে বাড়ি, এই বাড়ির একটা লোক তো তোমারই হয়ে আছে মনের ভেতর।

শাকিব স্যারের বাড়ি গিয়ে নিশাত খুব বিস্মিত হলো।
বাড়ি নতুন করে রং করা হচ্ছে। নিশাত গেটে উঁকি দিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করলো,
-“বাড়ি রং করা হচ্ছে কেন?”
সে কড়া কণ্ঠে জবাব দিলো,
-“বাড়ি কি আপনের?”
-“উঁহু।”
-“তো রং করলে আপনের সমস্যা কী? আপনের টেকায় তো রং করতেছে না। আজাইরা পাবলিক।”
নিশাত মনে মনে বললো, এই বাড়িটা আমার না হলেও এই বাড়ির একটা মানুষ আমার। একদম আমার।

~চলবে~

#তৃধাআনিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here