চোরাবালি পর্ব ৯

0
180

#চোরাবালি_৯
রেশমা আক্তার

চোখ বন্ধ করে লানা ভাবল অনেক কিছুই, তবে একটা ব্যাপারই ঘুরেফিরে দানা বাঁধতে থাকল। এই যে এত এত ঘটনা, ঘটনা সংশ্লিষ্ট জিনিসপত্র, চরিত্র এরা কেউ লানার মনগড়া নয়। লানা চাইলেই তার স্বপ্নদৃশ্যে কোন পরিবর্তন আনতে সক্ষম নয়। এসব ঘটছে এবং তার ইচ্ছের বাইরেই ঘটছে। কিভাবে ঘটছে সে জানেনা।

চিন্তা বাঁধাপ্রাপ্ত হল জোহারের ডাকে। সোহা… সোহা… নাম ধরে ডাকছে জোহার। লানা টপ করে উঠে দাঁড়াল। তার হাতে নোটবুক। এই নোটবুকটা তাকে আরও দেখতে হবে। কিন্তু এটা কি বাইরে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে? প্রথমত, এটা সে দেখেছিল সোহার লকারে। সেদিন তার সেই দেখাটা কেউ ধরে ফেলেছিল। তাকে দ্রুত স্বপ্ন ভেঙে বাস্তবে চলে যেতে হয়েছিল। সেদিন ব্যাপারটা সাধারণ মনে হয়েছিল। কিন্তু তারপর এই ডায়েরী, নোটবুক, এ্যালবাম সব সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। লানা এগুলো আর কোথাও খুঁজে পায়নি। এসব জিনিস এখানে বাক্সবন্দী করে রাখার একটাই মানে, এগুলো আড়াল করার চেষ্টা। অর্থাৎ কেউ হয়ত চাচ্ছে না এগুলো কেউ দেখুক। সেই অন্য কেউটা কে?
জোহার ডাকছে আবার।
আপাতত নোটবুকটা এখানে রেখে যাওয়াই উচিৎ মনে হল লানার। কারণ এখানে তার উপস্থিতি টের পেয়ে যদি আবার জিনিসগুলো স্থানান্তরিত হয়?

লানা বাইরে এসে জোহারকে দেখতে পেল না কোথাও। সে বাইরের দরজায় উঁকি দিল। নিচ তালাটার সামনের দিকটা পুরোটা থাই গ্লাসের ডোর। সুতরাং ভেতর থেকেও বাইরের লন ও বাগানের কিয়দংশ দেখা যায়। লানা দেখল বাগানে জোহারের কাছে অফিসের কাজে আসা লোকদুটো এখনও বসে আছে। তবে ওখানে জোহার নেই।

জোহার কোথায় গেল? ওপরে?

লানা এক পা দু’ পা করে বাইরে এলো। তীব্র রোদে ধাঁধিয়ে গেল চোখ। মাথাটাও কিঞ্চিৎ ঘুরে উঠল। নিজেকে সামলে আস্তে আস্তে নিচে নেমে গেল সে। বাগানের শ্বেত পাথরের টেবিলের ওপর রাখা ফাইল ও কাগজপত্র। লোকদুটো অল্পবয়সী, তারা লানাকে আসতে দেখে দু’জনই সটান উঠে দাঁড়াল। টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে বলল
– গুড আফটারনুন ম্যাম…

লানা ধীরে ধীরে এসে দাঁড়াল টেবিলের পাশে। একটা পেপার হাতে নিয়ে দেখল। জানতে চাইল

– হাউ ইজ দ্যা কম্পানী ডুইং?

লোকদুটি ইতস্তত করছে। একজন বলল
– ম্যাম, ইট ইজ ওকে নাউ।

– আপনারা আমাকে ঠিক কথা বলছেন না। আমার ধারণা ‘ ব্লু সি বিচ’ এখন অনেক কঠিন একটা সময় পার করছে।

লোক দু’জন মুখ চাওয়াচাওয়ি করে মাথা নত করল। লানা কিছু পেপারস হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে বলল
– ব্লু সি বিচ’ এর প্রেজেন্ট স্ট্যাটাসের একটা ভার্চুয়াল রিপোর্ট তৈরি করুন। সমস্ত ফাইনান্সিয়াল ডাটা এড করে রিপোর্ট টা আমাকে দিবেন। আমি দেখব।

কিছুটা দ্বিধা কিছুটা বিস্ময় নিয়ে লোক দু’জন মাথা ঝাঁকিয়ে সন্মতি জানাল।
লানা এবার একটু অন্যমনস্ক স্বরে বলল

– হেড অফিসের লোকেশনটা বলুনতো?

লোকদুটি আবারও দ্বিধাগ্রস্থ, একজন গলা পরিষ্কার করে বলল
– আগ্রাবাদ, লেন টু…, সাবিত টাওয়ার।
– চিটাগং…
– ইয়েস ম্যাম…
– এখান থেকে যেতে কেমন সময় লাগে?
– চিলমাই থেকে আগ্রাবাদ… ঘন্টা দুইয়ের পথ…
– চিলমাই….?
– ইয়েস ম্যাম….। বস তো নিজের গাড়িতে যান, তাই শর্টকাটে যান। বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে গেলে আরও সময় বেশী লাগবে।
– বাসস্ট্যান্ড….?
– ইয়েস ম্যাম… এখান থেকে তো বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার কোন লোকাল ট্রান্সপোর্ট নেই। এটা যেহেতু একটা প্রাইভেট প্রপার্টি, আই মিন আপনি তো জানেনই, আপনাদের এ পাহাড় থেকে লোকালয় যাবার পথটা কিছুটা দুর্গম। আসেপাশে লোকালয় নেই, তাই বসকে আমরা খুব প্রয়োজন না পড়লে ডাকি না অথবা আমরা নিজেরাই কেউ এসে দরকারী সিগনেচারগুলো করিয়ে নিই।
– ও.. হুম.. ঠিক আছে..

জোহার নেমে এলো ফর্মাল পোশাকে। এভাবে স্যুট, বুট পরিহিত জোহারকে দেখতে কেমন, জানা ছিল না লানার। ব্লু স্যুটে চমৎকার লাগছে জোহারকে। কিন্তু মুহূর্তে মুগ্ধ চোখে ভয় বাসা বাঁধল। এই মানুষটা একটা সিরিয়াল কিলার? উফ্ ভাবতে পারছে না লানা।

জোহার এসে অবাক চোখে দেখল লানাকে। লানা কাগজগুলো টেবিলে রেখে হাসল স্মিত।
জোহার বলল,
– এই শরীরে বের হলে কেন? ভেতরে যাও। আর শোন, আমি একটু বের হচ্ছি। ঘন্টা দুই, তিন সময় লাগবে। তুমি নিজের ঘরে গিয়ে রেস্ট নাও। রুমকি, মুনকে দেখবে।

লানা মাথা হেলিয়ে সন্মতি জানাল। ভেতরে এসে সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে থাকল, জোহার লোকদুটোকে নিয়ে গার্ডেনের বাইরে এক কর্ণারে পার্কিং এ রাখা দুটো গাড়ির একটায় উঠে বসল। লোকদুটোর একজন ড্রাইভ করছে। গাড়িটা বেড়িয়ে গেল।
লানার মনে হল, কিছুটা সময় পাওয়া গেল। আচ্ছা, সে কি আবার স্টাডিতে ঢুকে যাবে? মুন, রুমকির সাথে ব্যস্ত আছে। হয়তো আরও কিছু তথ্য পাওয়া যেত। কিন্তু পরক্ষণেই হতাশ হল। কি লাভ এতকিছু জেনে। যার বাস্তব কোন ভিত্তিই নেই? বরং, এই জায়গাটার ব্যাপারে একটু খোঁজ নেয়া যাক।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার মধ্যে একটা পরীক্ষা হয়ে যাক।
লানা দরজার পাশে ঝোলানো চাবির হুকের দিকে তাকালো। এখানে নিশ্চই আরেকটা গাড়ির চাবিও আছে।

লানা মন্থর পায়ে এগিয়ে গিয়ে চাবি খুঁজল। একটা চাবি মুঠোয় নিয়ে এগিয়ে গেল সামনে দরজার দিকে।
এখন দেখতে হবে গাড়িটা ঠিক আছে কিনা। গ্যারেজের ছাউনির নিচে দুটো গাড়ি ছিল। একটা নিশ্চই অফিসের। এটা জোহারের ব্যক্তিগত।
লানা গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিতেই গাড়ি সচল গতিতে বেড়িয়ে এলো। লানা ড্রাইভিং এ ভালো। তবে এ পাহাড়ি পথে কতটা কি পারবে জানে না। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হবে, ড্রাইভ করা কালীন সময়ে স্বপ্ন ভেঙে গেলে। কিন্তু আজ কিছু একটা তাকে করতেই হবে। যতটা সম্ভব, এর একটা বিহিত জানতেই হবে তাকে। জোহার বাড়িতে নেই, এটাই সুযোগ।

গাড়িটা উঁচু থেকে ক্রমশ নেমে এলো পথে। পাহাড় কেটে ঢালে ঢালে পথ বয়ে গেছে নিচে। সুন্দর পিচঢালা পথ। এক দিকটা উন্মুক্ত। পাশাপাশি অন্যান্য জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড় গায়ে গায়ে। লানা খুব সাবধানে চালাচ্ছে। চারিদিকে গাছ গাছালিতে অসংখ্য পাখির কিচিরমিচির। সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ। সামনে বাঁক নিতেই একটা ছোট্ট মাইলফলক। যেখানে লেখা ‘ চিলমাই- ছয় কি:মি:’

তার মানে চিলমাই পাহাড় এটা হলেও আসল চিলমাই নামক জায়গাটা হয়তো ছয় কি: মি: নিচে অবস্থিত। লানা ঘুরে আরও নিচে নামল। মিনিট পাঁচেক চালাতেই সে আরেকটা মাইলফলক দেখতে পেল। এখানেও লেখা

‘চিলমাই- ছয় কি:মি:’
লানা গাড়ি মন্থর করে লেখাটা ভালো করে পড়ল। আবার গাড়ি চলল নিচের দিকে।

খুব দ্রুত যাওয়া দরকার, কিন্তু লানা পারছে না। একটু পরপর বাঁক নিতে হচ্ছে। জোহারের আসার আগে যতটা সম্ভব লোকালয়ে গিয়ে কিছু তথ্য সংগ্রহ করে নিতে হবে। এত সময় ধরে, এতগুলো দিন ধরে তার সাথে যা ঘটছে সেটা কেমন স্বপ্ন বা আদৌ স্বপ্ন কিনা সেটা দেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আজ এর সদ্ব্যবহার করতেই হবে।

লানা সামনে আবার দেখতে পেল মাইলফলক

‘চিলমাই- ছয় কি:মি:’
বারবার একই লেখার মাইলফলক কেন ব্যবহার করা হয়েছে কে জানে। লোকটা বলেছিল এটা একটা প্রইভেট প্রপার্টি। সুতরাং এ পাহাড় বা বাংলোর মালিকরাই এসব তৈরি করেছে নিশ্চই। কিন্তু একই রকম লেখা হবে কেন?

লানা চারপাশে খেয়াল করল, ফলকটির পাশে একটা ছোট্ট বাঁশের ঝাড়।

লানার গাড়ি আবার বাঁক নিল এবং একটু পরে ঘুরেফিরে আবার ফলকটির কাছে এসে থামল। ফলকের পাশে বাঁশঝাড়। লানা ঘেমে গেছে। তার খুব গরম লাগছে আর পানির পিপাসা হচ্ছ।সে গাড়ি থেকে নামল এবং এগিয়ে গেল ফলকটির কাছে। একটা শুকনো মাটির টুকরো দিয়ে ফলকটির ওপর ক্রস চিহ্ন দিল।

গাড়ি চালিয়ে একটু পরে আবারও ফিরে এলো ফলকটির কাছে। ফলকের ওপর ক্রসচিহ্ন এবং পাশের বাঁশ ঝাঁড়ও বহাল তবিয়তে দেখতে পেল।
তার মানে, লানা বারবার একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অথচ এ পথের কোন বিকল্পও নেই। গাড়িতে এসে বসে অনেক্ষণ বসে ভাবল লানা। এর মানে কি এটাই যে, তার এ সময়টা আর এ জায়গাটা থেকে সে চাইলেই বের হতে পারবে না? নাকি এর বাইরে বাস্তব জীবন বলতে কিছুই নেই।
যা যা সে শুনছে সব ভুল। ‘ব্লু সি বিচ’, আগ্রাবাদ, চিলমাই, ঢাকা, ধানমন্ডির নীলকুঞ্জ কিংবা রায়হান আহমেদ রিজভি, পিহু, ডক্টর পার্থ এরা কেউই বাস্তবতা নয়, বরং লানার উত্তপ্ত মস্তিষ্কপ্রসূত কল্পনা।

কিন্তু সত্যিই কি তাই? মাথা কাজ করছে না তার। এখন বিকেল। জোহারের আগে বাড়ি ফিরতে হবে তাকে।
যেহেতু আপাতত এখান থেকে লানা বের হতে পারছে না সুতরাং আবার গাড়িতে স্টার্ট দিল সে। গাড়ি এবার ক্রমশ উঠে এলো উপরে । লানা খুব সহজে গাড়ি নিয়ে বাসায় ফিরে আসতে পারল। গাড়িটা গ্যারেজে রেখে ক্লান্ত পায়ে ঘরে ফিরল লানা। মুনকে দিয়ে চলে গেল রুমকি।

সন্ধ্যা নাগাদ ফিরল জোহার। মুন শেষ বেলায় ঘুমিয়ে পড়েছিল। লানাও অবসন্ন শরীরে এসে রকিং চেয়ারে এলিয়ে দিয়েছিল শরীর। জোহার এসে দু’টি ঘুমন্ত মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। মুন বিছানায়।

জোহার এসে হাঁটু মুড়ে বসল লানার চেয়ারের পাশে। কি নিষ্পাপ আর স্নিগ্ধ লাগছে সোহাকে। সোহার ছোট ছোট চুলগুলোর একগোছা উড়ে এসে পড়েছে মুখের ওপর। জোহার আলতো আঙুলে সরিয়ে দিতে চাইল সেটা। খুট করে শব্দ হতেই চমকে উঠল লানা। জোহার তটস্থ হল
নিজের ঠোঁটে তর্জনী চেপে বলল
– সরি.. সরি, তোমার ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম।

লানা ভায়র্ত চোখে চারিদিকে তাকাল। বুঝে নিতে চাইল সবকিছু। জোহার লানার একটা হাত ধরে বলল
– ভয় পেলে কেন? কোন দুঃস্বপ্ন দেখেছ ?

নিশ্চল চোখে লানা তাকাল জোহারের দিকে। কি টলটলে দুটি চোখ। এই মানুষটা কাউকে নৃশংসভাবে মারতে পারে, ভাবতেই পারছে না লানা।
– সোহা….
– বলো
– চল, আমরা দূরে কোথাও চলে যাই
– কোথায়…?
– ইউ এস এ তে, ওখানে তোমার ড্যাড আছেন।
– কেন?
– কোম্পানীটা শেষ পর্যন্ত রাখতে পারব কিনা জানিনা। ব্যাংকের লোনগুলো শোধ না করতে পারলে শেষ পর্যন্ত কোম্পানী দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। একটা বিরাট এমাউন্ট দরকার এই ফাঁড়া কাটিয়ে উঠতে। আমাদের ধানমন্ডির বাড়িটা বিক্রি করে দিব কিনা ভাবছি। কিন্তু সেখানে যে আমাদের পিহুর কবর আছে। কিভাবে বিক্রি করি বলতো?

লানা ব্যাথিত চোখে তাকিয়ে আছে জোহারের দিকে। পিহু, জোহারের বড় বাচ্চাটার নাম, যে কিনা একটা দুর্ঘটনায় মারা গেছে। যে বাবা তার বাচ্চার কবর নিয়ে এমন শোকার্ত হতে পারে, সেকি খুন করতে পারে কাউকে?
জোহারের চোখভর্তি পানি। লানা জোহারের মাথায় হাত রাখল। জোহার লানার হাঁটুর উপর মাথা নত করল। হয়ত স্বান্তনা খুঁজল। লানা কিছুটা দ্বিধান্বিতভাবে হাত বোলালো জোহারের মাথায়। তার মন বলল, জোহার যদি খুনি হয়, হোক না। এমন কারো হাতে মৃত্যু হোক যাকে লানা মন প্রাণ দিয়ে, একদিনের জন্য হলেও ভালোবেসে ফেলেছিল।

লানা সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে বলল
– জোহার, আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। কথাটা শুনে তোমার মনে হতে পারে অবাস্তব। কিন্তু ব্যাপারটা সত্যিই ঘটছে।

জোহার মাথা তুলল। তার চোখে প্রশ্ন। লানা বলল
– জোহার, আমি সোহা নই। আমার নাম লানা। আমি তোমার এখানে কিভাবে এলাম, আমি জানিনা। একদিন হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি আমি অন্য কোন শরীরে, এখানে, এই বাড়িতে। তুমি আমাকে ডাকছ, সোহা… সোহা বলে। আর মুন ডাকছে মম্…। এসব কি হচ্ছে, আমি আসলে সত্যিই কিছু বুঝতে পারছি না।

জোহার একইভাবে ব্যথাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। লানার চোখেও কিছু প্রত্যাশা। সে আশা করছে, জোহার তাকে বিশ্বাস করবে। কিন্তু জোহারের মধ্যে তেমন কোন ভাবান্তর নেই। সে এখন প্রায় ডুবে যাওয়া কোন নাবিকের মত। ভেসে থাকতে চাইছে, আশ্রয় চাইছে প্রিয়তমার চোখে। জোহারকে এতটা কাছাকাছি, এতটা দুর্বল আগে কখনও দেখেনি লানা।

জোহার কাতর এবং ক্ষীণ কন্ঠে বলল
– তুমি সোহা, নাকি লানা, আমার জানার প্রয়োজন নেই। শুধু আজকের এই তুমিই আমার , একান্ত আমার। প্লিজ আর এসব বল না। আমি আর পারছি না। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। শুধু এই যে তুমি আমার কাছে আছ, আমায় এমন সরল, সহজভাবে ছুঁয়ে আছ। এমনটাই থেকো সব সময়। আবার পাল্টে যেও না। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ।

জোহার জড়িয়ে ধরেছে লানার কোমর। তার নিশ্বাস আর ঠোঁটের স্পর্শ এখন লানার শরীর জুড়ে। লানা কি বাঁধা দেবে জাহারকে? বলবে
প্লিজ আমাকে ছাড়ুন, আমি সোহা নই।

কিন্তু এই যে শরীর সোহার, এই যে বাড়ি, এই যে জোহার, এসবই তো এখন তার। কীভাবে অস্বীকার করবে লানা? এই যে ভীষণ ভালোলাগা, এই যে জোহারের স্পর্শে এলোমেলো হয়ে ভেসে যাওয়া শরীর, মন এসব কীভাবে অস্বীকার করবে সে? জোহার তার স্বামী, অনিচ্ছা বা অবাস্তব হলেও তাই। সবচেয়ে বড় কথা, সে ভালোবাসে জোহারকে। জোহারই তার জীবনের প্রিয় সেই প্রত্যাশিত মানুষ। সে কিছুতেই পারবে না জোহারের এ ভালোবাসাকে অস্বিকার করতে। যদি জোহার তাকে মেরে ফেলে ফেলুক না…।

( চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here