#চুপিচুপি_ভালোবাসি (পর্ব ০৭)
#আয়েশা_আক্তার
·
·
·
কফিশপে গালে হাত দিয়ে বসে আছি। আমার সামনেই নির্ভীক ভাইয়া বসে আছেন। আজকে যা হলো তাতে আমার কলেজ যাওয়ার ইচ্ছেটাই মরে গিয়েছে। এগুলো যে এখন থেকে প্রায়ই ঘটবে বেশ ভালোই বুঝতে পারছি আমি। এদিকে আমি চিন্তায় মরে যাচ্ছি আর উনি নির্ভীক ভাবে বসে আছেন। উনার নামটা যে উনার জন্য পারফেক্ট সেটা আজ বুঝলাম। সব পরিস্থিতিতেই এমন নরমাল কি করে থাকে কে জানে। উনি দাঁত কেলিয়ে বললেন,,
–“কিরে কি ভাবছিস? আচ্ছা আমি কি এতটাই হ্যান্ডসাম ছেলে নাকি যে তোর ক্লাসমেট গুলা আমার পেছনে পড়েছিল?”
ভাব দেখলে গা জ্বলে যায়। সবসময় নিজের তারিফ নিজে করে বেড়ায়।
–“এত ভাব নেওয়ার কিছু নেই। আপনাকে দেখতে এমন আহামরি কিছু নয় যে ওরা এরকম সেমলেসের মতো আপনার পেছনে ছুটবে! নির্ঘাত অন্য কোন ব্যাপার আছে। সামথিং ইজ ফিশি!!”
–“সেটা তো দেখতেই পাচ্ছিলাম ওরা ঠিক কি করেছিল!” (ভাব নিয়ে)
তখনই আগমন ঘটলো আয়াত ভাইয়ার। ফুল এ্যাটিটিউড নিয়ে আমাদের পাশে বসে পড়লো। উনি ঠিক আছেন এটা আমার কাছে ঠিক ই লাগছে কিন্তু নির্ভীক ভাইয়া যেন এটা মানতে পারছেন না। উনি হা করে আয়াত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন। উনি আয়াত ভাইয়ার দিকে বিষ্ময় মাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,,,
–“আয়াত!! তুই ঠিক আছিস তো? যে অবস্থায় তোকে ছাড়া হয়েছিল তাতে তো তুই এতোক্ষণে,,,,
–“তুই যেমনটা ভাবছিস তেমন কিছুই হয় নি। তোরা চলে আসার পর আমি তো ভাবলাম আজ আমি শেষ! নাজানি কি হয়! যেভাবে ওরা শর্মির পেছনে পড়েছিল তাতে আমি তো তোর ভাই আমাকে যে কি কি প্রশ্ন করবে সেটাই ভাবছিলাম। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো তোরা চলে আসার পর মেয়েগুলোও ক্লাসে ফিরে গেল। ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত!!”
তারমানে ঠিকই ধরেছি। এসব ঐ তাশার কাজ।এই মেয়ের সমস্যাটা কি সেটাই বুঝতে পারি না আমি। নির্ভীক ভাইয়া চোখ ছোট ছোট করে আয়াত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি বললাম,,
–“বলেছিলাম না সামথিং ইজ ফিশি! তাশা কি বাচ্চি ওকে তো আমি উইদাউট ওয়েল ফ্রাই করবো আমি।
নির্ভীক ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বললেন,,
–“এই তাশা টা আবার কে? আর এর সাথে ওর ই বা কি কানেকশন?”
আমাদের সামনে হুরমুর করে এসে দাঁড়াল নিলা। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,,
–“বেবি তুই ঠিক আছিস তো? না কলেজে গিয়েই দেখলাম ঐ তাশা হাসছে আর বলছে তোকে নাকি আজ সেই লেভেলের জ্বালাইসে। সবাই নাকি তোর পেছনে লাগছিল। আমি তো ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। বাইরে তাকাতেই দেখলাম আয়াত ভাইয়া এইদিকে আসছে তাই আমিও পেছন পেছন চলে এলাম। তুই সিরিয়াসলি ঠিক আছিস তো?”
–“হুম আমি ঠিক আছি। ঐ তাশা না কাঁসা ওরে তো আমি ছারুম না দোস্ত। আজ সকাল থেকে দৌড়ের উপর আছি ঐ মাইয়ার জন্য।”
আমিদের কথার মাথামুণ্ডু কিছুই নির্ভীক ভাইয়া আর আয়াত ভাইয়ার মাথায় ঢুকছে না মনে হয়। অনেক ভেবে কোন কুল কিনারা না পেয়ে নির্ভীক ভাইয়া বললেন,,
–“এই তাশা টা কে? আর তোর সাথেই বা কি করলো? একটু বুঝাইয়া ক!”
নিলা বলতে লাগলো,,
–“তানিশা! দেখতে যতটা কিন্তু ব্যাবহার ঠিক ততটাই লেইম। দ্য মোস্ট ড্রামা কুইন অফ আওয়ার ক্লাস। বেশি ড্রামা করে বলে আমরা ওর নাম দিয়েছি তাশা। ওর সমস্যা হচ্ছে শর্মি। জানি না ঠিক কি কারণে ওর শর্মির উপর প্রচুর রাগ। অনেকবার জানার চেষ্টা করেছি ঠিক কি কারণে ওর এতো রাগ কিন্তু কোনভাবেই জানতে পারি নি। ওর কাজ হচ্ছে কারণে অকারণে শর্মিকে সবার সামনে অপদস্থ করা। ছোট ছোট বিষয়েই ঝামেলা করে শর্মিকে ফাঁসানো। আর কাল শর্মি আপনার বাইকে উঠেছে সেটা ওর একদম পছন্দ হয়নি। কাল ও আপনার সাথে কথা বলতে এসেছিল আপনি হয়তো খেয়াল করেননি। ওকে ইগনোর করে আপনি শর্মির হাত ধরেছিলেন এটা হয়তো ওর ইগোতে লেগেছে। তাই আজ সকালে ওর বান্ধু-বান্ধব কে দিয়ে সবার সামনে এটা প্রমাণ করতে চাইছিল যে আপনার আর শর্মির মাঝে কিছু একটা আছে। যাতে করে সকলের সামনে ওকে ছোট করতে পারে।”
–“সব মাথার উপর দিয়ে গেলো। কিছুই বুঝতে পারলাম না।” (নির্ভীক ভাইয়া)
–“আপনার না বুঝলেও চলবে। এসব ছাড়ুন আমি বলেছিলাম না আপনি এতোটাও সুন্দর নন যে ওরা সেইমলেস এর মতো আপনার পেছনে ছুটবে। আর তানিশার ব্যাপারটা আমি বুঝে নিবো। কিন্তু আমি একটা কথা বুঝতে পারছি না আপনি এত ঘনঘন আমাদের কলেজে আসেন কেন? না মানে আগে ১০-১২ দিনের ছুটি পেলেও তো শাহজাদপুর আসতেন না আর এখন ২ দিনের ছুটি পেলেও চলে আসছেন ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না আমার।”
উনি কিছু বললেন না। কিছুক্ষণের জন্য পরিবেশটা কেমন থমথমে হয়ে গেলো। কেউ কোন কথা বলছে না।সবার মাঝেই কেমন নিরবতা বিরাজ করছে। ঠিক বুঝলাম না আমি কি এমন বলে দিলাম যে সবার বাকশক্তি হারিয়ে গেলো? আমি কি ভুল কোন প্রশ্ন করে বসলাম? কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙ্গে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন নির্ভীক ভাইয়া। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,,
–“সেটা যদি তুই বুঝতিস তাহলে তো হতোই!!”
বলেই ওখান থেকে বেরিয়ে গেলেন উনি। সাথে আয়াত ভাইয়াও চলে গেলেন। আর আমি এখনো ওনার যাওয়ার পানে চেয়ে আছি। কি বলে গেলেন উনি। কি বোঝার কথা বললেন আমাকে। অদ্ভুত!
🍁
ব্রেক টাইম! কমন রুমে বসে আছি আর ভাবছি কি হচ্ছে আমার সাথে। কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটি মাস। এখন আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে। এই কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার এসেছেন নির্ভীক ভাইয়া। ওনার সব কথাতে যেমন বিরক্ত হয়েছি কিছু কিছু কথায় অবাক ও হয়েছি। কিন্তু কোন মানে খুঁজে পাই নি। আয়াত ভাইয়াও মারুফা কে জ্বালিয়ে মেরেছেন। উনার মতে যতদিন না মারুফা উনার প্রেমে না পড়বে ততদিন উনি মারুফা কে জ্বালাবে। মারুফা প্রথম প্রথম বিরক্ত হলেও এখন বিষয়টাকে ইনজয় করে। সে যাই হোক আমি যখন এইসব নিয়ে ভাবছিলাম তখনই সেখানে এসে বসলো মারুফা। ওর ভাব টা এমন যেন ওর সদ্য বিবাহিত জামাই বাসরের আগেই ভেগে গেছে। এমন মুখ বানানোর মানেটা কি? ওর এই উদাস মার্কা চেহারা ঠিক মানতে পারছি না আমি। তাই বলেই ফেললাম,,
–“কিরে এরকম মুখ করে আছিস কেন? কিছু হয়েছে?”
ও গালে হাত দিয়ে উদাস গলায় বলল,,
–“কিছু মানে অনেক কিছু হয়েছে দোস্ত!! যা হয়েছে সেটা একদমই ভালো লাগছেনা আমার! খবরটা শুনে কষ্ট লাগতেছে দোস্ত। এখন তো মনে হচ্ছে আমার কপালে ঐ জংলি আয়াত ই আছে।”
তোর কপালে যে আয়াত ভাইয়াই আছে সেটা তো আগে থেকেই জানি। কিন্তু এই মুহূর্তে ওর মুখ দেখে সেই লেভেলের হাঁসি পাচ্ছে। কিন্তু বেস্টু বলে কথা! ওর সামনে তো আর হাসতে পারি না। বেস্টুর কষ্টে তো আমার ও কষ্ট হওয়া উচিত। তাই মুখে একটু দুঃখী দুঃখী ভাব এনে বললাম,,
–“আহারে!”
ওর মনে হয় এটা ঠিক পছন্দ হলো না। ঝটপট আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,
–“আমি মরি আমার জ্বালায় আর তুই মজা নিতাছোস?”
আজব আমি আবার মজা নিলাম কখন। এইজন্যই বলে কারোর দুঃখে দুঃখী হতে নেই। আমি ভনিতা না করেই বললাম,,
–“কি হোইসে তাই ক? এতো পেচাস ক্যা?”
ও ব্যাথিত গলায় বলল,,
–“নির্ভীক ভাইয়ার নাকি গার্লফ্রেন্ড আছে। আমার ভালো লাগছে না রে দোস্ত। ক্রাশের গার্লফ্রেন্ড আছে এইটা কীভাবে মেনে নিবো?”
আজিব! নির্ভীক ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড আছে তাতে এতো দুঃখ প্রকাশ করার কি আছে। এমনভাবে রিয়্যাক্ট করছে যেন ওর জামাই অন্য একটা মেয়ের সাথে ভেগে গিয়েছে। এই মাইয়াটাও না! রাগ লাগছে এখন এর উপর। তাই উল্টোদিকে ফিরে ছোট করে বললাম,,
–“ও!”
আমার এই উত্তর টাও ওর ভালো লাগলো না। ও উত্তেজিত গলায় বলল,,
–“শুধু ও! ঐ তোর কি একটুও কষ্ট হচ্ছে না। একবার ও মনে হচ্ছে না কে ঐ মেয়ে যার জন্য নির্ভীক ভাইয়া এতো পাগল। ঐ মেয়েটার উপর রাগ বা হিংসা হচ্ছে না? মনে হচ্ছে না মেয়েটার মাথা ফাটাইতে?!”
এই মুহূর্তে মারুফার উপর যা রাগ লাগতিসে সেটা বলে বুঝাতে পারব না। এই মাইয়া নির্ভীক ভাইরে নিয়া কেন পড়ছে কে জানে। কিসের কি আয়াত ভাইয়ার কথা ভাববে তা না আরেকজনের জামাইরে নিয়া টানাটানি করতেছে। আজব আমার কেন হিংসা হতে যাবে? বিরক্ত গলায় বললাম,,
–“ঐ আমি কি নির্ভীক ভাইয়ের বউ নাকি যে উনি অন্য কারোর সাথে প্রেম করলে আমার কষ্ট বা হিংসা হবে? উনি কার জন্য পাগল কার জন্য নয় সেটা আমি জেনে কি করবো। আর আমাকে একটা কথা বল তুই অন্যের জামাইরে নিয়া এতো লাফাইতাছিস ক্যান? নির্ভীক ভাইয়ার গফ আছে কি না তা নিয়া তোর এতো মাথা ব্যাথা কেন? আর এহন যদি তুই আমারে ভাষণ দিবার আসোস ঐ মাইয়ারে কি করমু জানি না কিন্তু তোর মাথা ফাটাইতে একবার ও ভাববো না।”
বলেই হনহনিয়ে চলে এলাম। এরা কি পাইছে কি আমায়? মেজাজ খারাপ করে দিলো বেয়াদব ছেরি। নিজের ডারে রাইখা অন্যের টার দিকে নজর সবার। আজ আর ক্লাস করব না। তাই বাড়ির পথে পা বাড়ালাম। কচিং ও করবো না। বাড়ি গিয়ে শাওয়ার নিয়ে একটা লম্বা ঘুম দিবো। তাতে যদি বিরক্তিটা কমে..!!
·
·
·
চলবে……………………..