চুপিচুপি ভালোবাসি পর্ব ১৪

0
828

#চুপিচুপি_ভালোবাসি💞
Writer:#আয়েশা_আক্তার
#পর্ব_১৪

🍁
মারুফার ঘরে খাটের উপর পায়ের উপর পা তুলে বসে আছি আমি। আমার সামনেই রাগী লুক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে মারুফা। ম্যাডাম এর এতো রাগ যে পুরো ৮ দিন আমার সাথে একটা কথাও বলে নি। এমনকি কলেজ ঈদের ছুটি হ‌ওয়ার পর বাড়িতে আসার সময়ও একাই এসেছে। আমাকে একবার জানায়নি পর্যন্ত। তাই আর কি করা বাড়ি ফিরেই সোজা বেস্টুর বাড়িতে চলে এসেছি। এতো রাগ কি মানা যায় নাকি? কিন্তু এখানে এসে তো দেখি আরেক কাহিনী। মারুফা শাড়ি পড়ে ভালোই সেজে গুজে বসে আছে। আমি তো শকড, মারুফা আর শাড়ি! আমার যেন বিশ্বাস ই হচ্ছিলো না। কিন্তু পরক্ষণেই ওর ছোট বোন জান্নাতের কথা শুনে বিশ্বাস করতে হলো। জান্নাতের কথা অনুযায়ী আজ মারুফাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে। আর তারা পাশের ঘরেই আছে। এই কথা শুনে আমি কি রিয়্যাকশন দিবো বুঝতে পারছিলাম না। আজ যদি মারুফা কে পাত্রপক্ষ পছন্দ করে নেয় তাহলে আয়াত ভাইয়ার কি হবে? আর যদি পছন্দ হয় কেন বলছি? ওকে যে পছন্দ হবে সেটা আমি ১০০% শিওর।ওকে দেখতে তো মাশাআল্লাহ পছন্দ না হয়ে পারবেই না। তাহলে আয়াত ভাইয়া কি তাহলে এবার দেবদাস হয়ে যাবে? যেভাবে সেজেগুজে বসে আছে তাতে তো মনে হচ্ছে ও বিয়েটা করেই নিবে। এসব ভাবতেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আমার। এই মাইয়া কি এবার আয়াত ভাইয়াকে ছ্যাঁকা দিয়ে আরেকজন কে বিয়ে করে নিবে নাকি? কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে দড়জার কাছে গিয়ে পাশের রুমে একটু উকি দিলাম। কিন্তু উনারা সব উল্টোদিকে ফিরে বসে আছেন। মুখ দেখতে পাচ্ছি না। কিছুক্ষণ এমন উঁকিঝুঁকি দেওয়ার পর একজন কে দেখতে পেলাম। উনি আর কেউ নন আয়াত ভাইয়ার মা রোকসানা চাচি। এবার জ্বিভ কামরে ধরলাম আমি। তারমানে আয়াত ভাইয়ার পরিবার ই এসেছে আর আমি কিনা কি ভাবছিলাম। আমি যে আসলে কত বড় বোকা সেটা আজ আবার ও প্রমাণিত হয়ে গেলো। আমি গিয়ে খাটের উপর বসলাম। মারুফা একবার তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। এখনও রেগে আছে। তাতে কি আমি তো ব্যাপক খুশি। ছোটবেলায় আমরা একে অপরকে বলতাম এমন কাউকে বিয়ে করবো যার আর একটা ভাই থাকবে। একজন ক আমি বিয়ে করবো আর অন্যজনকে মারুফা। কিন্তু কথাটা যে এইভাবে সত্যি হয়ে যাবে ভাবতেই একটা গান মাথায় আসছে। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!! এসব ভাবতে ভাবতেই মারুফাকে নিয়ে যাওয়া হলো। ঐ রুমে কি হলো জানি না খানিক বাদে মারুফা এসে আমার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো। কিন্তু আমি তো আরো আরাম করে বসে আছি। কাকিমা এসে মিষ্টি দিয়ে গেলো। তাতে বুজলাম বিয়ে পাকা! আহা কি মজা। আমি ওকে দেখিয়ে মিষ্টিটা মুখে পুরে নিলাম। এমনভাবে খাচ্ছি যেন এর থেকে ভালো কোনো মিষ্টি হতেই পারে না। ও রাগে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। কত রাগ এই মেয়ের! তাতে আমার কি? ওর রাগ দেখার টাইম আছে নাকি আমার।এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার মারুফার দিকে তাকালাম। ও এখনও রাগী চোখেই তাকিয়ে আছে। বাট হু কেয়ারস? আমি ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে ওর জান্নাতের দিকে তাকালাম। ও বেশ আয়েশ করে পেয়ারা খাচ্ছিলো। আমি তাকাতেই মুচকি হেসে বলল,,

–“আপু পেয়ারা খাবা? অনেক টেষ্টি!”

আমি ও একটা হাসি দিয়ে বললাম,,
–“না গো এখন খাবো না। তুই বরং তোর বোনকে খাওয়া। ভালো করে খাওয়া! কিছুদিন পর তো চলেই যাবে বেচারি! এখানে আর কয়দিন ই বা আছে বল। ও এখন কয়েকদিনের মেহমান মাত্র! একটু ভালো মন্দ খাওয়া!”

জান্নাত চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর মারুফার দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকালো। আমি ওকে এক চোখ টিপে একটা হাসি দিলাম। ও কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হুহা করে হেসে উঠলো। আমদের হাসি দেখে মারুফার রাগ আরো বেড়ে গেল। এই মুহূর্তে ওকে একদম টমেটোর মতো লাগছে। রাগের কারনে ফর্সা গোলগাল মুখটা একদম লাল হয়ে গিয়েছে। বেশ লাগছে ওকে এমন টমেটো হতে দেখে। ওকে আরো একটু রাগিয়ে দেওয়ার জন্য বললাম,,

–“জান্নাতিই! তোর বোনকে দেখ কেমন লাল টমেটো হয়ে গিয়েছে। একটা ছবি তুলে রাখ তো! আয়াত ভাইয়া কে দেখাবো। এমন অবস্থায় দেখলে আয়াত ভাই নিশ্চয়ই হা হয়ে যাবে।”

মারুফা আমাকে মারার জন্য তেড়ে এলো। আমাকে আর পায় কে আমি তো ভো দৌড়! দৌড়াতে দৌড়াতে কখন পাশের ঘরে চলে গিয়েছি টের ই পাইনি। আমি দৌড়ে গিয়ে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে পরলাম। মারুফা দৌড়ে আসতেই আয়াত ভাইয়ার সঙ্গে খেলো এক ধাক্কা। ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই আয়াত ভাইয়া ধরে ফেললেন। ওয়াহ্ হোয়াট আ সিন! সেই লেভেলের হাঁসি পাচ্ছে আমার। হঠাৎ কেউ আমার হাত টেনে অন্য। রুমে নিয়ে এলো। আমি চিৎকার দিবো এমন সময় কেউ আমার মুখ চেপে ধরলো। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছি। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলেই দেখি নির্ভীক! উনাকে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। তারপর মুখ থেকে উনার হাত সরিয়ে বললাম,,

–“কি হচ্ছে কি? এভাবে আমাকে এখানে নিয়ে আসার মানে কি?”

–“চুপ! তোকে না সেদিন বললাম এরকম এলোমেলো ভাবে বাড়ি থেকে বের হবি না! তাহলে কেন বের হয়েছিস?এই তুই কি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিস যে সবগুলো নিরীহ ছেলেকে মেরেই ছারবি? না জানি রাস্তায় তোকে দেখে কত ছেলে হার্ট অ্যাটাক করেছে?”

এবার আমি নিজের দিকে তাকালাম। কাঠালি রংয়ের থ্রি পিস পড়েছি। কোনরকম গোসল করেই দৌড়ে এদিকে চলে এসেছি চুল গুলো ও আচরাই নি। এইরে!! কিন্তু আমি বুঝি না উনি এমন কেন বলেন যে আমাকে দেখলে ছেলেরা হার্ট অ্যাটাক করবে! আচ্ছা আমাকে কি এতোটাই বাজে দেখতে লাগছে নাকি? আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি বললেন,,

–“কি হলো কথা বলছিস না কেন?”

–“আপনিই তো বললেন চুপ থাকতে!”

উনি কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকলেন আমার দিকে তার পর বললেন,,
–“বেশ ভালোই কথা বলা শিখেছিস দেখছি। যাই হোক এবার চল। ন‌ইলে সবাই কি না কি ভাববে।”

আমিও আর কথা বাড়ালাম না। চলে এলাম ড্রয়িং রুমে। আমাকে দেখেই তো রোকসানা চাচি খুশিতে গদগদ হয়ে গেলেন। উনি হাসি মুখেই বললেন,,

–“আরে ব‌উমা যে! তুমি এখানে? নির্ভীক ডেকেছে নিশ্চয়ই?”

উনার কথা শুনে আমি চোখ বড়বড় করে তাকালাম। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম এখানে মারুফাদের বাড়ির কেউ নেই। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চাচিকে বললাম,,

–“না চাচি আমাকে উনি ডাকেন নি। আপনি হয়তো জানেন না যে মারুফা আমার বান্ধবী। আমি তো ওর সাথেই দেখা করতে এসেছিলাম। আমি তো জানতাম ও না যে আপনারা এখানে আসবেন।”

একটু হাসার চেষ্টা করে কথাগুলো বললাম।চাচিও আর কিছু বললেন না। বিয়ের কথা পাকা করার পর সবাই চলে যেতে চাইলে আমি উনাদের আমাদের বাড়িতে নিয়ে এলাম। ওনারা প্রথমে আসতে চাইছিলেন না। কিন্তু নির্ভীকের কথায় সবাই রাজি হলেন। আর যাই হোক আব্বুর সাথে দেখা না করে কেউ যাবে না সেটা আমি নিশ্চিত। কিন্তু বাড়িতে আসতেই নির্ভীকের জ্বালাতন বেড়ে গেলো। যেমন, সবাই একসাথে গল্প করছি সেই সময় সবার আড়ালে কখনও বা আমার উড়নার এক কোনা নিয়ে হাতের আঙ্গুলে পেচাচ্ছেন। আবার কখনও বা চুল ধরে টানছেন। একেক সময় চোখ টিপছেন। বিরক্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি আমি। সবার সামনে কিছু বলতেও পারছি না আবার সহ্য‌ও করতে পারছি না। চুপচাপ বসে আছি। ঠিক এমন সময় ব্যাপারটা আয়াত ভাইয়ার নজরে পরে গেল। উনি আমাদের দিকে তাকিয়ে মামনি কে বললেন,,

–“জেঠিমনি! মনে হয় এবার তোমার ছেলের ব‌উকেও ঘরে তোলা উচিত। বিয়ের পরেও বেচারা আমার ভাই কতদিন ব‌উ ছাড়া থাকবে বলো!”

উনার কথা শুনে উপস্থিত সবাই আমাদের দিকে তাকালো। আমি চোখ বড়বড় করে একবার সবার দিকে তাকালাম তারপর নির্ভীকের দিকে তাকালাম। তারপর ঠোক গিলে দৌড়ে ওখান থেকে চলে আসলাম। বাইরে আসতেই সবার হো হো শব্দের হাসি কানে এসে লাগলো। কি লজ্জাজনক ব্যাপার। মনে মনে নির্ভীক কে হাজারো গালি দিচ্ছি।

চলবে!
বাড়িতে মেহমান আসছে তাই কাল গল্প দিতে পারিনি। আমি অনেক খারাপ লিখি তারপরও আপনারা আমার গল্প পড়ছেন এজন্য ধন্যবাদ। সরি আপনাদের ইমোশন নিয়ে খেলার জন্য। যাই হোক এই গল্পটা শেষ হলে আমি আর গল্প লিখবো না। আপনাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে থাকলে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
ধন্যবাদ সবাইকে..!!🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here