চিত্ত চিরে চৈত্রমাস পর্ব ২৮

0
768

#চিত্ত_চিরে_চৈত্রমাস
#মম_সাহা

পর্বঃ আঠাশ

(৭৫)

ধূসর রঙের মেঘেদের আনাগোনা আকাশ জুড়ে। প্রকৃতির ভীষণ মন খারাপ আজ। কিন্তু চিত্রার মনে উৎফুল্লতার জোয়ার। কী একটা প্রাপ্তির আনন্দ যেন তার পুরো শহর জুড়ে। অথচ কোথাও মন ভালোর ছিটেফোঁটা কারণও নেই। সওদাগর বাড়ির মানুষেরা ভেঙে পড়েছে। দেয়ালের মাঝে প্রতিটা মানুষের নিজস্ব হাহাকার। অহি আপার বিয়ের ডেট টাও বেশ পেছানো হয়েছে। মন খারাপের বেলা গুলো, ভীষণ পানসে আঁকা। চিত্রা ঘুম থেকে উঠেই বেশ সময় নিয়ে গোসল সেড়েছে। বেছে বেছে বর্তমান প্রকৃতির সাথে মিলিয়ে ধূসর রঙের জামা বের করেছে। সাদা সেলোয়ার, ওড়নার সাথে মিলেই কেমন বিষন্ন, বিষন্ন রঙে সাজিয়ে নিলো নিজেকে। তার মা চলে গিয়েছে কলেজ, ভাইজানও বাসায় নেই। এটাই মোক্ষম সময় বাহার ভাইয়ের কাছে চলে যাওয়ার। ছোটো করে একটা চিরকুটও লিখলো সে। পড়ার টেবিলের উপর কালমদানি টা দিয়ে চাপা দিয়ে যত্ন সহকারে রেখে দিলো চিরকুট টা। সে হারিয়ে গেলে আম্মু, ভাইজান যে পা* গল হয়ে যাবে। তাই তাদের সেই সময়টায় স্বান্তনার বাণী হিসেবে রেখে গেলো চিরকুট টা। চিত্রা জানে, সে যাওয়ার পর মা এবং ভাইজান আবার নিজ গৃহে ফিরে যাবে। আর কতদিন গৃহান্তরে থাকবে? আর যার জন্য গৃহান্তর, সেই যদি না থাকে তবে সে গৃহান্তরের আর কীই-বা মূল্য রইলো! পুরো ঘরের কোণায় কোণায় একবার হাত বুলিয়ে দিলো সে। সব ক’টা জিনিস চোখ ভরে দেখে নিলো। এরপর আর দেখতে যদি না পায়? কবে না কবে আবার আপন মানুষের ভীড়ে ফিরে আসবে কে জানে? আদৌও ফিরে আসবে কিনা? পৃথিবীতে কিছু পেতে হলে কিছু ত্যাগ করতে হয়। যেমন বাহার ভাইকে পাওয়ার জন্য চিত্রা ছাড়ছে পরিবার। কী ই বা করার? লোকটার যে সে ছাড়া কেউ নেই। তপ্ত এক শ্বাস ছেড়ে পা রাখলো সে ফ্লাটের বাহিরে। গন্তব্য তার অজানা, তাতে ক্ষতি কী? পথসঙ্গী তো তার চেনা।

(৭৬)

লোকাল বাসের ডান সাইডের তিন নাম্বার সারির জানালার পাশে সিট টাতে বসে আছে চিত্রা। জ্যামে ঠাসা রাস্তা। হুড়মুড় করে বাসের ভেতর একজন মহিলা প্রবেশ করেই চিত্রার সাথের ফাঁকা সিটটায় বসে পড়লো সে। চিত্রা একপলক মহিলাটির দিকে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো জানালার বাহিরে। কিন্তু হুট করেই তার মস্তিষ্কে মহিলাটির মুখের অবয়ব ভেসে উঠলো। কেমন পরিচিত মুখ! চিত্রা আবার ঘাড় ঘুরালো, মহিলাটার দিকে তাকালো। বড্ড পরিচিত লাগলো মহিলাটাকে। অথচ সে এর আগে দেখে নি মানুষটাকে।

চিত্রার পাশে বসা মহিলাটা চিত্রাকে এমন তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো, মিষ্টি হেসে বললো,
“কী গো মেয়ে? ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”

চিত্রা বেশ থতমত খেয়ে গেলো। আমতা-আমতা করে বললো,
“না, না আন্টি, আসলে আপনাকে বেশ পরিচিত মনে হচ্ছে।”

“তাই নাকি? আমার তো মনে হচ্ছে না এর আগে তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছে?”

“না আন্টি, দেখা হয় নি। হয়তো মনের ভুল।”

চিত্রার উত্তরে কোমল হাসলেন মহিলা। কিন্তু এবার মহিলাও চিত্রার দিকে তাকিয়ে রইলেন। চিত্রার মুখ-চোখ জুড়ে কী যেন খুঁজে বেড়ালেন। অতঃপর কণ্ঠ ধীর করে জিজ্ঞেস করলো,
“তোমার নাম কী?”

চিত্রা বেশ দোটানায় পড়লো। নাম বলবে কী বলবে না করেও অবশেষে নাম বললো,
“তোফা সওদাগর।”

নামটা শুনে মহিলাটা স্বস্তির শ্বাস ফেললো যেন। কিন্তু তার মনের মাঝে তখনো তুমুল খচখচ। চিত্রারও কেমন অস্বস্তিতে ভরে গেলো শরীর। মহিলাটাকে সে এর আগে দেখে নি কিন্তু তবুও কেনো পরিচিত মনে হচ্ছে! তন্মধ্যেই মহিলাটার প্রশ্ন ভেসে এলো,
“তোমার আর কোনো নাম আছে? ধরো ডাকনাম বা অন্যকিছু?”

চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো। সে তো ইচ্ছে করে ডাকনাম টা বলে নি, তাহলে মহিলাটা আন্দাজ কীভাবে করলো যে ডাকনাম থাকতে পারে! চিত্রা মাথা দুলিয়ে বললো,
“চিত্রা, এই নামেই ডাকে আমাকে সবাই।”

চিত্রা নামটা শুনতেই কেমন যেন বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে রইলো মহিলা। হাত-পায়ে দেখা দিলো তার মৃদু কম্পন। শরীরে অস্বাভাবিক ভাবে ঘামের উপস্থিতি। মুহূর্তের মাঝেই পাশের নারীটির এহেন পরিবর্তনে ভড়কে গেলো চিত্রা। ব্যতিব্যস্ত কণ্ঠে বললো,
“কী হলো আন্টি আপনার? ঘামছেন কেন? কোনো সমস্যা হচ্ছে?”

মহিলা কাঁপতে কাঁপতে দু’হাতের আঁজলে নিজের মুখটা ঢেকে ফেললো। চিত্রা চোখ মেলে মহিলা টার পা থেকে মাথা অব্দি আবার পর্যবেক্ষণ করলো। কালো রঙের ডিজাইনিং শর্ট হাতার ব্লাউজের সাথে মখমলের কালো শাড়ি পরিহিতা রমনীর শুভ্র রাঙা শরীর। ডান হাতে কালো মোটা চেইনের ঘড়ি। চুল গুলো বয়কাট। বেশ সম্ভ্রান্ত ঘরের মনে হলো। এই মানুষটার লোকাল বাসে চড়ার কী দরকার ছিলো!

চিত্রা চিন্তিত কণ্ঠে আবার প্রশ্ন করলো,
“আন্টি, কী হয়েছে আপনার? বলুন?”

মহিলাটা নিজেকে অনেকটা সময় নিয়ে ধাতস্থ করলো অতঃপর সিটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,
“ও তেমন কিছু না। লোকাল বাসে চড়ার অভ্যাস নাই তো তাই আর কি। তোমার মায়ের নাম মুনিয়া বেগম তাই না?”
“হ্যাঁ।”

চিত্রা উত্তর দিয়েছে ঠিকই কিন্তু কণ্ঠ তার তখনো কাঁপছিলো। মহিলাটা কী মায়ের কলিগ? মাকে কী বলে দিবে চিত্রার সাথে দেখা হওয়ার কথাটা! এমন অনেক অহেতুক ভাবনায় ভীত হলো চিত্রা। মহিলাটাও অনেকটা সময় চুপচাপ ছিলেন। অতঃপর অনেকটা পথ যাওয়ার পর উঠে দাঁড়ালেন মহিলা। বাস তখন ধীর গতি নিচ্ছিল যাত্রী নামানোর জন্য। ভদ্র মহিলা চিত্রার মাথায় হাত বুলিয়ে বিবশ কণ্ঠে বললেন,
“আমি এতিমখানা চালাই। বিরাট এক এতিমখানা আছে আমার গাজীপুরে। আমার সন্তানকে আমি তাদের মাঝে খুঁজে নিয়েছি। নিজের ইচ্ছায় খুব কম মানুষই পাপী হয়, তবে অনিচ্ছাকৃত পাপের বোঝা তাকে বয়ে বেড়াতে হয় চিরকাল। তোমার এমন গোছানো ভাব দেখে ভালো লাগলো। জীবনের কোনো মোড়ে যেন আমাদের আর দেখা না হয়। তুমি ভালো থেকো, আমার দু’হাতের প্রার্থনায়।”

কথা শেষ হতেই ঝড়ের বেগে নেমে গেলেন ভদ্রমহিলা। চিত্রা ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে রইলো মহিলাটির যাওয়ার পানে। চিত্রার হয়তো বোধগম্য হলো এখন, কেন মহিলাটিকে এত চেনা চেনা লেগেছে তার। নিজের মুখের আদলের সাথে যে সেই ভদ্রমহিলার প্রচুর মিল ছিল যা চিত্রার মস্তিষ্কে হুট করে খেলো গেলো। যাকে এই জীবনে দেখতে চাওয়ার কোনো ইচ্ছে সে পোষণ করে নি, আজ যেতে যেতে তাকেই দেখে নিলো। চিত্রা ভুলে যাবে এই সাক্ষাৎ। কিছু মানুষের সাথে দেখা না হওয়াই উত্তম। কারণ মানুষ যতটা ক্ষণস্থায়ী, তাদের সাথে কাটানো স্মৃতি ততটাই দীর্ঘস্থায়ী। আরও একটা কেমন অস্বচ্ছ স্মৃতি জমা হলো চিত্রার হৃদয়ে! “জন্মদাত্রী” মানুষটার সাথে স্মৃতি কখনো চায় নি চিত্রা।

(৭৭)

গা ছমছমে শুনশান এক কবরস্থানে দাঁড়িয়ে আছে চিত্রা। সন্ধ্যার হিমশীতল বাতাস তাকে কেমন ছুঁয়ে যাচ্ছে। শরীরের লোমকূপ কাঁপিয়ে দিচ্ছে সেই বাতাস। একটু ভয়, রোমাঞ্চ, প্রাপ্তির আনন্দ সকল অনুভূতি মিলেমিশে একাকার। চিত্রা চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখলো। শহর থেকে বেশ কিছুটা দূরে হওয়ায় এখানে আসতে আসতে সন্ধ্যা নেমেছে। কিন্তু বাহার ভাই বেছে বেছে এখানেই কেন আসতে বললো? আর বলেছে নাহয় মানা যায়, কিন্তু কই মানুষটার টিকি টারও দেখা নেই চারপাশে।

চিত্রা ক্ষীণ স্বরে কয়েকবার ডাকলো, “বাহার ভাই, বাহার ভাই? আছেন? শুনছেন?”

কোনো উত্তর এলো না। কেবল বড় বড় তালগাছ, বটগাছের আড়ালের ঝোপঝাড় থেকে শুকনা পাতার উপর হেঁটে যাওয়ার মড়মড় শব্দ হলো। চিত্রার শরীরে কাঁপুনি দিলো। ভয় এসে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিলো তাকে। কিন্তু ঐ যে প্রাপ্তির আকাঙ্খা, সেটা ভয়কেও ছাঁপিয়ে গিয়েছে। তাই সে আরেকটু গলা তুলে ডাক দিলো,”বাহার ভাই?”

এবারও সাড়া পাওয়া গেলো না। কবরস্থানে লাগানো হলদেটে লাইট গুলো একটু দুলে দুলে উঠলো। চারপাশে অনেক মানুষের উপস্থিতি টের পেলো সে। হেঁটে যাওয়ার শব্দ কানে বারি খেলো তার কিন্তু চারপাশ শূণ্য খাঁ খাঁ। ভয়ে চিত্রার কলিজা শুকিয়ে এসেছে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে যখন আবার ডাক দিতে যাবে বাহার ভাইকে, তখনই বা’পাশের ঝোপের আড়াল থেকে গুনগুনিয়ে গানের শব্দ শোনা গেলো। লোকমুখে শোনা কত রকমের উদ্ভট কথা মনে পড়ে গেলো তার! চিত্রা একবার ভাবলো ছুটে বেরিয়ে যাবে এখান থেকে আবার কী মনে করে সে গেলো না। যা হবে দেখা যাবে কিন্তু বাহার ভাইকে পাওয়ার আশা ছাড়া যাবে না। মনকে শক্ত করে ধীর পায়ে ঝোপের কাছটা গেলো চিত্রা। গানের গলাটা আরেকটু পরিষ্কার হলো। স্বচ্ছ কণ্ঠে শোনা গেলো,
“গর্ভধারিণী মা, জনম দুঃখিনী মা,
দুঃখের দরদী আমার জনম দুঃখী মা।
আমার মায়ের কান্দন যাবত জীবন,
দু’চার মাস বোনের কান্দন রে,
ওরে ঘরের পরিবারের কান্দন, কয়েকদিন পর থাকে না,
দুঃখের দরদী আমার জনম দুঃখী মা।
পুত্র যদি কুপুত্র হয়, মা এ নাহি ফেলে,
হাজার দোষ গোপন করিয়া, তবু মায়ে পালে,,, ”

“বাহার ভাই!”

চিত্রার বিস্মিত ডাকে গান থেমে গেলো। কিন্তু বাহার তাকালো না চিত্রার পানে। অনবরত পুরোনো এক কবরে হাত বুলিয়ে গেলো। চিত্রার চোখে-মুখে ছড়ানো বিস্ময়, কণ্ঠেও অবাক ভাব। বাহার ভাইয়ের কেমন বিধ্বস্ত অবস্থা! পড়নের সাদা পাঞ্জাবিটাতে ধূলোয় মাখামাখি। গালে অবহেলার দাড়ি। চোখ মুখে কেমন বিধ্বস্ততা! চিত্রা আবার ডাকলো,
“বাহার ভাই, কী করছেন?”

“মাকে একটু ছুঁয়ে দিচ্ছি।”

ভাঙা স্বরে বাহার ভাইয়ের উত্তর। বাহার ভাই কী কাঁদছে? চিত্রা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলো বাহার ভাইয়ের দিকে, কম্পিত হাতটা রাখলো বাহার ভাইয়ের বাহুতে। তৎক্ষনাৎ বিদ্যুৎ বেগে উঠে দাঁড়ালো বাহার। ধূলো ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,
“অবশেষে ঠিকানা চিনে আসলে?”

“আসতে তো হতোই। আমার গন্তব্যের সমাপ্তি তো আপনিই।”

হলুদ নিয়ন বাতির ঝাপসা আলোয় বাহার ভাইয়ের মুখ কেমন চকচক করে উঠলো, রহস্য করে হেসে বললো,
“ভয় লাগছে না তোমার? যদি খারাপ কিছু হয়ে যায়? যতই হোক, মানুষ হিসেবে তো আমি খারাপ।”

বাহার ভাইয়ের এহেন কণ্ঠে কিঞ্চিৎ ভড়কে গেলো চিত্রা। মৃদু কম্পন বয়ে গেলো শরীর জুড়ে। তবুও নিজেকে যথেষ্ট সংযত করে বললো,
“খারাপ কিছু হবে না আমার ভরসা আছে।”
“অথচ আমি খারাপ কিছু করার জন্যই সওদাগর বাড়িতে পা রেখেছিলাম। সওদাগর বাড়ির দম্ভ, সম্মান ভেঙে চুরমার করে দিতেই তো গিয়েছিলাম।”

একে তো অনাকাঙ্খিত জায়গা তার উপর বাহার ভাইয়ের অপ্রত্যাশিত কথায় হতভম্ব চিত্রা। তবুও সাহস নিয়ে বললো,
“আমরা এখান থেকে বেরিয়ে কথা বলি, বাহার ভাই? চলুন।”

চিত্রার ভয়ে জুবুথুবু মুখটা দেখে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো বাহার। দুনিয়ার সবচেয়ে অপরিচিত লাগলো তাকে। চিত্রা পা কাঁপছে, দাঁড়িয়ে থাকতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, কথাও বের হচ্ছে না। এই অপরিচিত বাহার ভাইকে তার ভয় লাগছে। কেমন যেন বিধ্বস্ত লাগছে মানুষটাকে!

বাহার চিত্রার থেকে একটু সরে গিয়ে পাশাপাশি থাকা দু’টি কবরের মধ্য খানে শুয়ে পড়লো। হাত-পা মাটির উপর বিছিয়ে বেশ আরাম করে শুয়ে পড়লো। যেন এর চেয়ে আরামের জায়গা কিছু নেই। অতঃপর খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বেশ উচ্চস্বরে বললো,
“শুনছো সর্বনাশিনী রঙ্গনা, আমি মারা গেলে, আমারে হেতায় তুমি রেখে যেও। এই কবর দুটির মাঝে যেন ঠাঁই হয় মোর।”

মারা যাওয়ার কথা শুনে আৎকে উঠলো চিত্রা। তড়িঘড়ি করে বললো,
“অমন বলবেন না, বাহার ভাই। আমাদের এখনো একসাথে সংসার করা বাকি। অনেক বছর বাঁচা বাকি আমাদের।”

বাহার আবার হো হো করে হেসে উঠলো। অবশ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“সংসার করার খুব সাধ না তোমার?”

“হ্যাঁ।”

“অথচ আমার গায়ে কলঙ্কের কালি।”

“আমি আপনাকে বিশ্বাস করি, বাহার ভাই। চাঁদের গায়ের কলঙ্কের কথা রটে সাধারন মানুষ, তাই বলে চাঁদের অসাধারণত্ব তারা কখনো গোপন করতে পারে নি। মানুষের স্বভাবই সুন্দরে কালি লেপা। চাঁদের গায়ের দীপ্তিময় সৌন্দর্যের কাছে মানুষের মুখে রটা কলঙ্ক নেহাৎই কৌতুক।”

“কাব্য আর বাস্তবতা যে ভীন্ন রঙ্গনা। আমাদের বোধহয় এ জনমে আর সংসার করা হবে না। জানো রঙ্গনা, সেই আদি থেকেই আমি দেখেছি আমার কোনো শখ পূরণ হয়নি, তাইতো তোমাকে মনে প্রাণে নিজের ভেবেও চাওয়ার সাহস করি নি। কিন্তু অপ্রাপ্তির এই জীবনে প্রাপ্তির শখ তো আমারও হয়, হয় না বলো? ভেবেছিলাম একটা চাকরি করবো, একটা চাকরির অভাবে অনেক কিছু হারিয়েছি, কেবল তোমায় হারাতেই চাই নি। কিন্তু আমার ভাগ্য দেখো, তোমাকে পাওয়ার আগেই চারপাশে কেমন না পাওয়ার ঘোষণা! আমারই কেন বার বার স্বপ্ন ভাঙতে হবে বলো রঙ্গনা?”

চিত্রা চুপ করে কেবল বাহারের এতদিনের লুকিয়ে রাখা অভিযোগ শুনলো। কোনো কথা বললো না, শব্দ করলো না। বাহার আগের ন্যায় শুয়ে থেকেই বললো,
“তোমাকে আমার অভাগিনী মায়ের গল্প শোনাই আসো। স্বামী ভক্ত একজন নারীর গল্প। যে গল্পে জুড়ে আছে ভয়াবহ বিচ্ছেদ। বোকা-সোকা আম্মা আমার কখনো সুখ চায় নি, কেবল চেয়ে গেছে স্বামীর মঙ্গল। আজ যদি সে নিজের জন্য কিছু করতো, তবে আমাকে এখন উন্মাদ হয়ে দু’টো কবরের মাঝখানে শুয়ে থাকতে হতো না। আমার মাকে যিনি বিয়ে করেন, তিনি কখনো আমার আম্মুকে তার বাড়ি নিয়ে যায় নি। আমার আম্মু সবসময় আমার নানার কাছে থাকতো। গরীব নানা ভাই আমার তবুও যত্নে রাখতেন মেয়েকে। আমাদের যে জন্মদাতা, আমার মায়ের স্বামী, তিনি সপ্তাহে কয়েকদিন এসে থেকে যেতেন, টাকাও পাঠাতেন। আমার জীবনটা তখনও ঠিক ছিল। আম্মাও অতটুকুতে খুশি ছিলো। কিন্তু সমস্যা হয় যখন আমার বয়স সাত কিংবা আট আমার বোনও তখন মায়ের গর্ভে, ঐ ভদ্রলোকের আসা-যাওয়া কমে যায়। তবে এর আগে থেকেই কম আসতেন কিন্তু বোন গর্ভে আসার পর দু তিন মাসে একবার আসতে। কখনো টাকা পাঠাতেন, কখনো পাঠাতেন না। মায়ের যখন নয় মাসের মাঝামাঝি, আমরা যেখানে থাকতাম সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় বাসা ভাড়া দিতে না পারার কারণে। আব্বুর একটা নাম্বার ছিল আম্মুর কাছে। অনেক পুরোনো বোঝাই যায়। কখনো আমার মা সে নাম্বারে কল দেয় নি বোধহয়, যদি আব্বু রাগ করে। কারণ লোকটাকে তো আমার মা বড্ড ভালোবেসে ছিল। সেদিন যখন আমরা পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছি, একটু বাঁচার আশায় মা তার স্বামীকে কল দিলো তখন অপর পাশ থেকে মেয়েলী কণ্ঠ ভেসে এলো। মাকে যা না তা বলে অপমান করলো। আমার মা গরীবের মেয়ে হলেও আত্মসম্মানবোধ তার আকাশ ছোঁয়া। ওসব কথা সহ্য করতে না পেরে মা জ্ঞান হারালো। তাকে আমি আর নানা মিলে নিয়ে গেলাম কাছের এক সরকারী হসপিটালে। আমার বোন পৃথিবীতে আসার সময় হয়ে গিয়েছে। অনেক টাকার দরকার। চোখে-মুখে যখন আঁধার দেখছি আমি। আট বছরের আমি কী বুঝতাম বলো? কিইবা করতে পারতাম? নানা আমাকে আমার আব্বুর ঠিকানা দিলো, বললো যেভাবে হোক আব্বুকে আনতে হবে। ছোটো জীবনের বড় দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে আমি ছুটে এলাম গাজীপুর থেকে ঢাকায়। কতবার রাস্তায় পিছলে পড়ে ‘মা’ বলে আর্তনাদ করেছি! কেউ ছিলো না আমার হাতটা টেনে তুলে ধরার। তখনই বুঝে গিয়েছিলাম, আমার পুরো পৃথিবী শূন্য। আমার পথ সহজ না। এই ঢাকা শহরে পা রাখতে মাথা ঘুরে গেলো। সারাদিন পর রাতের দিকে খুঁজে পেলাম বাবার বাড়ি কিন্তু তার বাড়িতে এসে আমি অবাক, বিস্মিত। চারদিকে আলোকসজ্জা। বাবার কোলে যমজ দু’টো ছেলে, যাদের একবছরের জন্মদিন পালন করা হচ্ছে, সাথে তার রাণীর মতন বউ। বুঝলাম, আমার মায়ের বিধ্বস্ততার কারণ কী! আমার আর সেই মুহূর্তে ঐ লোকটার কাছে যেতে ইচ্ছে করে নি। কেবল ঘৃণা জন্মেছিল। সেই রাতের রাস্তায় না খেয়ে অপরিচিত এই ইট পাথরের শহরে ঘুরে বেড়িয়েছি। গাড়ি ভাড়ার টাকা নেই, ফিরবো কীভাবে! অবশেষে ভিক্ষে করেছি। বুঝলে আমার হাতের বাস্তবতার নির্মমতা কেমন ছিল? পরের দিন যখন হসপিটাল এসে পৌঁছালাম দেখি বড্ড দেরী হয়ে গেছে ফিরতে ফিরতে। মা আমার জন্য অপেক্ষা করেন নি। আমার কোলে সদ্য জন্ম নেওয়া নবজাতক চিৎকার করে কাঁদছে অথচ আমি কাঁদতে পারি নি মা হারানোর পরও। মা যে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিল হাতে, চোখে দিয়ে গিয়েছিল বড় হওয়ার স্বপ্ন। মা কত স্বার্থপর বলো? যে লোকটা মাকে আদৌও ভালোই বাসে নি, তার জন্য মা কিনা অভিমান করে বিদায় নিলো! আর আমি যে মাকে এত ভালোবাসলাম, তা বুঝি কিছুই না? ভালোবাসা মানুষকে সত্যিই অসহায় করে দেয়। আট বছরের একটা শিশুে কোলে আরেকটা শিশুর দায়িত্ব, মাথার উপর ছাতা নেই কেবল ছিল রোদের উত্তপ্ততা। মেয়ে হারানোর শোকে আমার নানাজানও ভেঙে এসেছিল। কিন্তু আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে জীর্ণ-শীর্ণ দেহখান নিয়েও আবার পথ চলা শুরু করলো। প্রিয় শহর ছাড়িলাম, ছাড়িলাম আব্বা ডাকার স্বাধ। মায়ের কবর নিয়ে চলে এলাম এখানে। চলতে চলতে গুটি গুটি পায়ে চলে গেলাম অনেকটা দূর। নিচের পড়াশোনা, বোনের দায়িত্ব, নানা ভাই এর বৃদ্ধ দেহের বোঝা সব আমার পিঠে কিন্তু বড় হতে হলে তো পড়াশোনা লাগবে তাই ছাড়লাম না সেটা। নিজেও ইটের ভাঁটায় কাজ করতাম। যা টাকা পেতাম তা দিয়ে সংসার চলতো কিন্তু আমার বোনের শখ যে পূরণ করার ক্ষমতা ছিলো না। নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন এই অসহায় জীবন থেকে মুক্তি পেলেন নানাভাই। এই পৃথিবীর বুকে আমাকে আর আমার বোনকে একা রেখে দিয়ে গেলেন। এতদিন যেই সাহস টা ছিল, তাও নিভে গেল। এতিম দু’টো ছেলেমেয়ে পুরো পৃথিবীতে একা। বাবা বলতে মানুষটার অস্তিত্ব তখন আর আমার জীবনে নেই। সংসার চালাতে নানা ভাইয়ের রিকশার প্যাডেল ঘোরালাম। ঠেলাগাড়ি টানলাম, কুলি হয়ে খেলাম কত লা* ঠিঝাঁটা। সে গল্প পৃথিবীর বুকে লুকানো অমর কোনো এতিমের কাব্যগ্রন্থ। নিজের পড়াশোনা আর বোনের পড়াশোনা চালিয়ে গেলাম। তখন আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। কঠোর পরিশ্রমের পর ভর্তি হলাম পাবলিক ভার্সিটিতে। রোজ এখান থেকে শহরে যেতাম আবার আসতাম এখানে। বোনও তখন ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। এখানেরই একটা স্কুলে তাকে পড়াতাম। একদিন বায়না করলো নুপুর কিনে দেওয়ার। কী তার বায়না! স্কুলে সকলের নুপুর আছে কেবল তারই নেই। বোনকে বুঝাতে পারি নি, সুখ যে সকলের থাকে না। তবুও আমি কথা দিলাম নুপুর কিনে দিবো। ঢাকা যখন যেতাম, ভার্সিটি শেষে একটা বড় শপিং মলে সেলসম্যান এর কাজ করতাম। এমনই একদিন ঘটনা, দু’দিন পর ঈদ, শপিংমলে তুমুল ভীড়। বাড়ি ফিরতে পারছি না। অবশেষে বোনাসের টাকা পেয়ে বোনের জন্য একটা নুপুর কিনলাম, একজোড়া নুপুর কেনার সামর্থ্য যে আমার ছিল না। নুপুর কিনে, ফিরে এলাম বাড়ি। রাত তখন এগারোটা। ঘরে ফিরে দেখি বোন আমার ঘরে নেই। দ্রুত প্রতিবেশীদের কাছে গেলাম, কিন্তু কেউ দিতে পারলো না আমার বোনের খোঁজ। পুরো এলাকাতে পা* গলের মতন ছুটে বেড়ালাম। বুকে তখন হারানোর ভয় উৎপাত চালাচ্ছে। টানা দু’দিন খোঁজাখুঁজির পর বোনের লা* শ পেলাম স্কুলের সাথে ডোবায়। আমার পুরো পৃথিবী একলা করে কেমন করে আমাকে ছেড়ে চলে গেলো অভিমানীনি, দেখলে? ওর্ কত স্বা* র্থপর তুমি দেখলে রঙ্গনা। আমায় ওরা কেমন শূন্য করে দিয়ে চলে গেলো। আমারে কতটা নিঃস্ব করে দিয়েছে এ পৃথিবী, আমি কারে দেখাই সে নিঃস্বতা। রঙ্গনা, তুমি দেখলে তো আমার অপ্রাপ্তির খাতায় কেমন বিরাট একটা শূন্যতা? আমার বোনটা নুপুরও পড়ার সুযোগ পেলো না, অমন ফুলটাকে বাঁচতে দিলো না এই সভ্য সমাজ। এই সমাজ আমার সব কেড়েছে। অসহায়দের জন্য এই সমাজ না রঙ্গনা। এতিমদের জন্য এ সমাজ না। মানুষ শা* লা এত নিষ্ঠুর। আমাকে বাঁচতেই দিলো না সুখের সাথে। কী ব্যাথা যে রঙ্গনা!”

কবরস্থানের নিস্তব্ধতা ভেদ করেও বাহার ভাইয়ের কেমন একটা হাহাকার। চিত্রা বসে পড়লো থম মেরে। বাহার ভাইয়ের বর্তমান অবস্থাকে কোনো মৃ* ত লা* শের হাহাকার বলা যায়। এই আর্তনাদ থামানোর ভাষা চিত্রার জানা নেই, সে কেবল অশ্রু বিসর্জন দিতেই জানে।

বাহার ভাই অনেকক্ষণ চুপ রইলো। লোকটা কী কাঁদলো! কে জানে! নিরবতা ঠেলে গম্ভীর পুরুষালী কণ্ঠে বাহার ভাই বললো,
“কাঁদছো রঙ্গনা? কেঁদো না। আমার জন্য কেউ কাঁদুক তা আমি চাই না। জীবনের এত গুলো বছর তো কাটালাম কারো দয়ামায়া বিহীন, কেউ আমার জন্য মায়া দেখালে আমার হাসি আসে। বোনের দেহটা মায়ের সাথে শুইয়ে দিয়ে কথা দিয়েছিলাম এই সভ্য সমাজে চরম অ* সভ্য হবো আমি। বোনের মৃ* ত্যুর রহস্য ভেদ করে জানলাম শহর থেকে এক নেতা এসেছিল ওদের গ্রামের স্কুলে আর তারই দৃষ্টির লাল*সায় স্বীকার আমার বোন। সেই তুমুল রাগ আর প্রতিহিংসা নিয়ে আমি পা রেখে ছিলাম শহরে। আর কেন তোমাদের বাড়ি গিয়েছিলাম বলো তো?”

চিত্রা জবাব দেয় না। কেবল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ছন্নছাড়া বাহার ভাইয়ের দিকে। তাই বাহার ভাই নিজেই বলে,
“আমার জীবনের চরম সর্বনাশ যে করেছে, তার মহল ঘৃণায় ভেঙে দিতে গিয়েছিলাম। আমার জন্মদাতার ভয়ঙ্কর বিশ্বাসঘাতকতার জন্য গিয়েছিলাম।”

চিত্রা অবাক হলো। বাহার ভাইয়ের জন্মদাতার সাথে চিত্রা নিজের বাড়ির কোনো সংযোগ পেলো না। অবাক কণ্ঠে বললো,
“আমাদের বাড়িতে আপনার জন্মদাতা?”

বাহার তাচ্ছিল্য হাসলো। হেয়ালি করে বললো,
“তুমি এত বো* কা কেন গো? তবে তোমার এমন বোকামি আমার প্রিয়। আমার জন্মদাতা তোমাদের বাড়িতে কেন জিজ্ঞেস করলে! কারল আমার জন্মদাতার বাড়িই ওটা। আফজাল সওদাগরই আমার জন্মদাতা।”

চিত্রা বি*স্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে রইলো। অবাক কণ্ঠে বেশ উচ্চস্বরে বললো,
“কী!”

“তোমার বড় চাচীর যখন সন্তান হচ্ছিলো না তখনই তোমার চাচা আমার আম্মুকে বিয়ে করেছে। কিন্তু সে সমাজের কাছে পরিচয় দেয় নি আমাদের। যখন তার সন্তান হলো সে ভুলে গেলো আমাদের। তোমার চাচীও যখন জানতে পারলো স্বামীর কথা, তখন লুকিয়ে গেলো,সবার কাছে। আর আমাদের থেকে কেড়ে নিয়েছে বাবাকে। এই যে আমি তোমাদের বাড়ি থাকতাম, এত কিছু করতাম, তবুও তোমার চাচা কিছু বলতো না একমাত্র এই কারণেই।”

“বড় চাচীও জানতো?”

“না, এতদিন জানে নি। তবে সেদিন জেনে গিয়েছিল যার ফলস্বরূপ সে আমার হাতেপায়ে ধরে বলেছিল তোমাদের বাড়ি ছাড়ার কথা। তাই তো ছেড়েছিলাম বাড়ি। কিন্তু ঐ যে ভাঙা ভাগ্য, ফেঁসে গেলাম খুব খারাপ একটা জালে। আমি জানি, এ জাল থেকে বের হওয়া সম্ভব না।”

“কে ফাঁসিয়েছে আপনাকে?”

“আমাদের ভার্সিটির ঐ রাজনৈতিক নেতা। আর আমার বোনের খু* নি। আরও একটা মেয়ে ঝরে গেলো অকালে। কিন্তু সে বিচার পাবে না। আর ক্ষমতার কাছে হয়তো হেরে যাবো আমি।”

চিত্রা উঠে দাঁড়ালো। দ্রুত বাহারের কাছে গিয়ে বাহারের ডান হাত আঁকড়ে ধরে চোখের জল ছেড়ে দিয়ে বললো,
“চলুন না বাহার ভাই, আমরা চলে যাই এখান থেকে। অন্য কোনো শহরে, অপরিচিত কোনো স্থানে আমরা দু’জন থাকবো। চলুন না।”

বাহার ভাইও গা ঝেরে উঠে দাঁড়ালো। চিত্রার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“তাহলে চলো, দূরে কোথাও ঘর করি আমরা। আমাদেরও পূর্ণতার গল্প হোক।”

দু’জন এতিম ছেলেমেয়ের ভাগ্য সত্যিই যদি ভালো হতো! বাহার আর চিত্রার মিষ্টি স্বপ্নের মাঝে জল ঢেলে কবরস্থানের চারপাশ থেকে বেরিয়ে এলো পুলিশ ফোর্স। দু’জনকে ঘিরে ফেললো তারা। চিত্রা আর বাহার কেবল অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। তাদের চোখে মুখে টর্চের আলো পড়তেই চোখ-মুখ কুঁচকে ফেললো তারা। অনেক কষ্টে চোখ মেলে তাকাতেই নুরুল সওদাগরের গম্ভীর মুখটা ভেসে এলো চোখের সামনে। বাহারের হাতে ততক্ষণে হ্যান্ডকাফ পড়ানো হয়ে গেছে। চিত্রা কেবল দেখে গেলো চুরমার করা স্বপ্ন ভাঙন। চিত্রা নিজের বাবার পা চেপে ধরলো। আকুতি মিনতি করতে করতে বললো,
“আব্বু, ছেড়ে দেন বাহার ভাইকে। ছেড়ে দেন আব্বু। আপনি তো জানেন বাহার ভাই এমন করতে পারে না। প্লিজ ছেড়ে দেন আব্বু। আমরা অনেক দূর চলে যাবো, একটা বার দয়া করুন। আমরা আর এখানে ফিরে আসবো আব্বু। ছেড়ে দেন। আমি বাঁচবো না যে উনাকে ছাড়া।”

নুরুল সওদাগর তার দায়িত্ব পালন করলেন। মেয়ের কথা অনেক শুনতে চেয়েও দায়িত্বের সাথে আপোস করতে পারলেন না তিনি। তার চোখে ভেসে উঠলো অনেক বছর আগের সেই দিনটি যেদিন অবনীও এমন হাহাকার করেছিল। কিন্তু নুরুল সওদাগর পারেন নি কিছু করতে। সে মানুষ হিসেবে যেমন হোক, দায়িত্ব কখনো হেরফের করে নি। তাই তো সেদিন অমন নিষ্ঠুরতম কাজটা করতে পেরেছিল। আর আজ! সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো আবার!

বাহারের ঠোঁটে তখনও হাসির রেখা। কণ্ঠে বিষাদ, আফসোসের সহিত সে উচ্চারণ করলো,
“আমাদের আর সংসার করা হলো না, রঙ্গনা।”

#চলবে

[৩১০০+ শব্দ। আর হ্যাঁ,হাইপার হবেন না, বকাও দিবেন না। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here