চিত্তবৃত্তি পর্ব ৯

0
710

#চিত্তবৃত্তি
#পর্ব_৯
#জান্নাতুল_নাঈমা

দীর্ঘদিনের প্রণয় পরিণয়ে রূপ নিল। ইমনের বন্ধু মহলে এ প্রথম কারো প্রেম সফল হলো। এই নিয়ে সকলে শুরু করল হৈচৈ। মুসকান এদের কাণ্ড দেখে মিটিমিটি হাসছে। দিহানের অবস্থা দেখার মতো। সায়রীকে বউ হিসেবে পেয়ে তাকে আর পায় কে। অতি খুশিতে যেন উন্মাদ হয়ে গেল সে। এই বউকে ড্যাবড্যাব করে দেখছে। এই থম মেরে আছে। আবার হুট করেই শাসন করছে,

– শোন এখন থেকে তুই আমার বউ। আমাকে মান্য করে চলবি।

সায়রী চোখ কটমট করে জবাব দিল,

– বিয়ে করেছিস তো কী হয়েছে? আমার মাথা কিনে নিয়েছিস? শোন দিহান বকবকানি থামা। নয়তো ঠোঁটে সেফটিপিন লাগিয়ে দিব।

দিহান দাঁত ক্যালিয়ে হেসে বলল,

– একদম এটা করিস না বোন। তাহলে চুমু ছাড়াই বাসর করতে হবে। ব্যাপারটা কী এবনরমাল হবে বল!

দিহানের চোখে বিস্ময়। বান্ধবী রিক্তা এহেন কথা শুনে চোখ বড়ো বড়ো করে ফেলল। পেছন থেকে দু’হাতে চেপে ধরল দিহানের মুখ। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

– কন্ট্রোল ইউর স্পিচ দিহান। এখানে মুসকান রয়েছে। আর বউকে বোন নয় বউ বলতে হয় বলদ।

রাগে ফোঁস ফোঁস করে সায়রী হাতে থাকা পার্সটা ঢিল দিল। যা সোজা এসে লাগল দিহানের বুকে। দিহান ‘ আউচ ‘ শব্দ করে বুক ডলতে শুরু করল। সায়রী রাগে গজগজ করে ওঠে চলে গেল ভেতরের রুমে। বলে গেল,

– তুই কক্ষণো শুধরাবি না। সব সময় আমার প্রেস্টিজ পাংচার করে দিস। আমার ধারেকাছে যেন তোকে না দেখি।

– এই এই কই ধারেকাছে না দেখি মানে! ইমন আর শুভ্রত যে ফুল কিনতে গেল। আজ তো আমাদের বাসর হবে। ইমনের ঐ সিঙ্গেল বেডটায় তোর আর আমার বাসর।

রিক্তা দিহানের মুখ থেকে হাত সরিয়ে যেন চরম বিপদ ডেকে আনল৷ কোনোভাবেই থামানো গেল না ছেলেটাকে। সে গড়গড় করে কথাগুলো বলেই ছাড়ল। এদিকে মুসকানের অবস্থা শেষ। সিনিয়রদের সঙ্গে থাকতেই অস্বস্তি হচ্ছিল। এর ওপর দিহান ভাইয়ার কী সব কথাবার্তা! লজ্জায় তার অস্বস্তি গুলো তীব্র হলো৷ মন শুধু পালাই পালাই করতে লাগল তার। এতগুলো সিনিয়র মানুষদের সঙ্গে নিজেকে বড্ড বেমানান লাগছে। এরা সবাই বন্ধু। আর সে একে তো এদের চেয়ে বয়সে ছোটো। তার ওপর সবার সঙ্গে ভালো পরিচয়ও নেই। যদিও এরা বলছে তারা তাকে চেনে। খুব ভালো করেই চেনে। তার সম্পর্কে ইমনের মুখে শুনেছে অনেক কথা। দীর্ঘশ্বাস ফেলল মুসকান। রিক্তা তার অস্বস্তি টের পেল। দিহানকে ইশারায় চলে যেতে বলল। দিহান সুযোগ পেয়ে ভেতর ঘরে চলে গেল। সায়রীর কাছে। রিক্তা মুসকানকে বলল,

– তুমি কিছু মনে করো না। আসলে আমাদের ফ্রেন্ডদের মধ্যে দিহান একটু এমনই। পাগলাটে স্বভাব আছে। দিলখোলা মানুষ আর কী। দিলে যা আসে মুখে তাই বলে দেয়।

মুসকান তীব্র অস্বস্তি নিয়েই জবাব দিল,

– আমি কিছু মনে করিনি।

ইমন আর শুভ্রত এলো এর পরেই। ফুলশয্যার ঘর সাজালো সবাই মিলে। সব কাজ সেরে দুপুরে বাইরে থেকে খাবার এনে খেলো ওরা। আর বেশি সময় নষ্ট করা যাবে না৷ তাই ফ্ল্যাটের চাবি দিহানকে দিয়ে সবার থেকে বিদায় নিল ইমন৷ মুসকানকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ফেরার উদ্দেশ্যে। কিন্তু বিপত্তি ঘটল বাস স্টেশনে গিয়ে৷ মোজাম্মেল চৌধুরীর নজরে পড়ে গেল ওরা। সিএনজিতে ওঠার পর পরই ইমনের ফোনে কল এলো। বাবা ফোন দিয়েছে দেখে প্রথমে ভাবল ধরবে না৷ পরোক্ষণেই কী ভেবে যেন ধরল৷ ফোন রিসিভ করতেই মোজাম্মেল চৌধুরী শান্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন,

– তুমি কোথায় ইমন?

– টাঙ্গাইল এসেছিলাম। এখন ফিরে যাচ্ছি।

ইমনের কণ্ঠও শান্ত, শীতল। মোজাম্মেল চৌধুরীর চোয়াল শক্ত হয়ে এলো৷ আবারো প্রশ্ন করলেন,

– বাসায় এলে না কেন?

– জরুরি কাজ ছিল বাবা।

– বাড়ির কাজের মেয়েকে নিয়ে কী এমন জরুরি কাজ তোমার বাবা? জানতে পারি?

– ও এখন কারো বাড়ির কাজের মেয়ে নয়।

তাচ্ছিল্য করে মোজাম্মেল চৌধুরী বললেন,

– ছিল।

সহসা চোখ বুজে দৃঢ়স্বরে ইমন বলল,

– রাখছি।

– ইমন…

– পরে ফোন করব বাবা।

মোজাম্মেল চৌধুরীর ছোট্ট ধমকে ইমনের কণ্ঠ আরো শীতল হয়ে গেল। বাবা হয়ে ছেলের এই শীতলতার অর্থ টের পেল মোজাম্মেল। তাই বোঝানোর স্বরে বললেন,

– সন্তানের ভুল ধরিয়ে দেয়া আমার কর্তব্য। তুমি আমাকে ভুল বুঝো না।

– কোনটা ভুল আর কোনটা সঠিক বোঝার বয়স আমার হয়েছে। বাকি কথা দেখা করে বলব।

ফোন কেটে দিল ইমন। তার পাশে বসে থাকা রমণীটি নিঃশ্বাস ছাড়ল শব্দ করে। সহসা ইমন ঘাড় ফেরাল৷ তাকিয়ে দেখল মুসকানের থমথমে মুখ। মুহুর্তেই চোখ বন্ধ করে নিল সে। ফোঁস করে ছাড়ল নিঃশ্বাস।
.
.
মুসকানকে আশ্রমে পৌঁছে দিয়ে বাড়িতে ফিরল ইমন৷ বাবা ফোন করার পর থেকেই তার মন বেশ বিক্ষিপ্ত। কেন যেন চুপচাপ থাকাটাই বেশি শ্রেয় মনে হচ্ছিল। এজন্য মেয়েটার সঙ্গে একটি শব্দও বিনিময় করেনি সে। যদি বাবার ওপরে হওয়া ক্রোধ ওর ওপর দেখিয়ে ফেলে? গুহায় ঘুমিয়ে থাকা সিংহকে জাগিয়ে তোলার পরিণতি যে খুব ভয়ানক হয়! বাবা সহ পরিবারের অনেকেই চেষ্টা করছে তার ভেতরে যে সত্তাটি ঘুমিয়ে আছে তাকে জাগিয়ে তুলতে। কিন্তু এর পরিণতি কত ভয়াবহ হতে পারে তা সম্পর্কে এরা ভাবছে না৷ মিথ্যা অহংবোধে সবাই দিশেহারা হয়ে গেছে। আর এদের কে উষ্কে দিচ্ছে ইমন বেশ ভালোই টের পাচ্ছে। কিন্তু এটা নিয়ে তখন কিছু অনুভব না করলেও এখন ভেতরে চাপ সৃষ্টি হলো। মেজাজ খারাপটা বেড়ে যেতে লাগল কয়েকগুণ।

রাতে পরিবারের সঙ্গে ডিনার করল ইমন। ঘুমানোর পূর্বে কল করল মুসকানকে। বারকয়েক কল দেয়ার চেষ্টা করল সে৷ প্রতিবারি ফোন বন্ধ পেল। শেষে বিরক্ত হয়ে কল করল দাদুভাইকে। সে জানালো, মুসকান ঘুমিয়ে পড়েছে। ইমনের মনটা খচখচ করতে লাগল। কেন যেন মন বলছে মুসকান ঘুমায়নি। কথাটা দাদুভাইকে বলতে পারল না। শুভ রাত্রি বলে রেখে দিল ফোন। সারারাত একটা অস্বস্তি নিয়ে ঘুম হলো। সকালবেলা সঠিক সময় বাড়ি থেকে বের হলো সে। পাশাপাশি লাগাতার কল করে গেল মেয়েটাকে৷ বরাবরই বন্ধ। দুপুর পর্যন্ত স্কুলে ক্লাস নিয়ে চরম মেজাজ খারাপ নিয়ে চলে গেল মুসকানের ভার্সিটির সামনে। মুসকান বর্তমান একটি জাতীয় ভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের স্টুডেন্ট। আজ থেকে তার ক্লাস শুরু। জানে ইমন। তাই ভার্সিটির গেটের সামনে বাইক নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল সে৷ সম্পর্কটা যদি পুরোনো হতো, তাদের মধ্যে যদি ঘনিষ্ঠতা থাকত আজ মুসকানকে কী যে করে ফেলতো সে নিজেও জানে না৷ সম্পর্কের সূচনা বলেই ছাড় পাবে মেয়েটা। প্রেমিককে কীভাবে কন্ট্রোল করতে হয় শেখাতে হবে মুসকানকে। হবু বরকে এভাবে অশান্তিতে রাখা কত বড়ো অন্যায় এটাও জানাতে হবে। মনে মনে এমন অনেক কল্পনা, জল্পনা করল ইমন৷ মিনিট পাঁচেক পরই বান্ধবী লিয়ার সঙ্গে আসতে দেখল মুসকানকে। বক্ষঃস্থলে মুহুর্তেই প্রশান্তি নেমে এলো তার। অধর কোণে ফুটল হাসি। মুসকানের পরনে শুভ্র রঙা সেলোয়ার-কামিজ। মাথায় হালকা গোলাপি রঙের ওড়না চাপা৷ কাঁধে কালো রঙের কাপড়ের ব্যাগ। আপাদমস্তক প্রেয়সীকে দেখে নিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ইমন। মুসকান গেটের কাছাকাছি আসতেই চমকে গেল। ইমনকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল সে। চোখ, মুখ মলিন করে এড়িয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করল। বুঝতে পেরে সহসা হাত ধরে ফেলল ইমন। অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,

– এসব কী মুসকান।

মুসকান কেঁপে ওঠল। ভয়ার্ত চোখে চারপাশে তাকাল। ইমন সঙ্গে সঙ্গে হাত ছেড়ে দিল। লিয়া বলল,

– কেমন আছেন ভাইয়া?

– ভালো নেই। তোমার বান্ধবীর মুড অফ কেন?

মুসকানের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বলল ইমন। লিয়া বলল,

– আমিও তাই জিজ্ঞেস করছি। বলছেই না।

– আচ্ছা তুমি বাসায় যাও। ওকে পৌঁছে দিব৷

লিয়া চলে গেল। মুসকানও সামনের দিকে পা বাড়াল। এতক্ষণের অবাক হওয়া ইমন এবার বিরক্ত হয়ে গেল। বাইক নিয়ে এগুতে এগুতে বলল,

– মুসকান বাইকে ওঠো।

মুসকান গুরুত্ব দিল না। সামনের একটি অটো ইশারা করে ওঠতে উদ্যত হলো। ইমন উত্তেজিত হয়ে পড়ল৷ আচমকা একহাতে টেনে ধরল মুসকানের হাত৷ ক্রমশ চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠল তার। গাঢ় দৃষ্টি ছুঁড়ে দিল মুসকানের রক্তিম চোখের ম্লান মুখটায়। অটোওয়ালা তাগাদা দিল,

– কী হইল আফা বহেন।

ইমন তৎক্ষনাৎ শীতল কণ্ঠে বলল,

– আই সে গেট অন দ্যা বাইক, মুসকান।

হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল মুসকান। মলিন কণ্ঠে বলল,

– লোকে দেখছে। প্লিজ।

ইমন ছাড়ল না। চারদিকে তাকিয়ে কয়েক জোড়া দৃষ্টি দেখল শুধু। এরপর বলল,

– এর জন্য দায়ী তুমি।

বাধ্য হয়ে বাইকে করেই আশ্রমে ফিরল মুসকান৷ সারাপথ ইমন একটা কথাও বলেনি। আর না বলেছে মুসকান। আশ্রমে ফেরার পর সেই যে নিজের রুমে ঢুকেছে মেয়েটা আর বের হওয়ার নাম নেই। ইমন দাদুভাইয়ের সঙ্গে গল্প করল। বাচ্চাদের সঙ্গে সময় দিল। দুপুরের খাবার খেল বাচ্চাদের সাথেই। মুসকানের খাবার তার রুমে দেয়া হলো। সে খেয়েছে কিনা জানা নেই। বিকেল পেরিয়ে রাত নামল তবুও মুসকান বের হলো না। দাদুভাই কয়েকবার ইমনকে জিজ্ঞেস করল,

– কী হলো বল তো?

ইমন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জবাব দিল,

– ছোট্ট একটা বিষয়। ও বড়োভাবে দেখছে।

– বিষয়টা কী?

– বাবা ওকে আমার বউ হিসেবে মানবে না। কাল ফেরার পথে ফোন করেছিল। আমাদের কথোপকথন শুনেছে। এজন্যই হয়তো আমার থেকে দূরত্ব বাড়াচ্ছে। সূচনাতেই দূরত্ব!

অদ্ভুত করে হাসল ইমন। সেই হাসিতে কিঞ্চিৎ বিষণ্ণতা মিশে রইল। দাদুভাই দীর্ঘশ্বাস ফেলল৷ কিছু বলতে পারল না। একদিকে ছেলে অপর দিকে নাতি। সত্যি কিছু বলার থাকে না।

সন্ধ্যার পর আশ্রমের ছোট্ট সদস্য রিপ্তিকে দিয়ে মুসকানের ঘরের দরজা নক করল ইমন। রিপ্তি দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল,

– আন্নি, মুসু আন্নি দলজা খুলো। দলজা খুলো।

বেশ কয়েকবার ডাকার পর দরজা খুলল মুসকান। ইমন রিপ্তিকে ইশারা করল দৌড়ে চলে যেতে। রিপ্তি চলে গেল। ইমন ভেতরে ঢুকলেই মুসকান মুখ লুকোনোর চেষ্টা করল। এদিক সেদিক তাকাতে লাগল বিরতিহীন। ইমন শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইল খোলা দরজার পানে। লাগাবে কি লাগাবে না। দ্বিধায় রইল সে। মুসকানের ফোলা ফোলা রক্তিম চোখ দু’টো নজরে পড়তেই সেই দ্বিধা হলো নিঃশেষিত। সহসা শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দিল সে। মুসকান আঁতকে ওঠে বলল,

– দরজা লাগাচ্ছেন কেন! দাদুভাই কী ভাববে?

দৃষ্টি দৃঢ় করে তর্জনী উঁচাল ইমন। মৃদু ধমকে বলল,

– চুপপ। দাদুভাই কিছুই ভাববে না৷ আমি আমার কর্তব্য পালন করতে এসেছি।

ভ্রু কুঁচকে তাকাল মুসকান। ইমন একইভাবে বলল,

– হবু বউয়ের অভিমান ভাঙাতে এসেছি। দরজা খোলা রেখে বাচ্চাদের নজরে যেন এসব না পড়ে তাই আঁটকে দিয়েছি। ক্লিয়ার?

মুসকান মুখ ফিরিয়ে নিল। শ্বাস নিল ঘনঘন। ইমন দম ছেড়ে পকেটে হাত গুঁজে দিল। পেশিবহুল বুকটা টান টান করে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বলল,

– চোখ, মুখের এ অবস্থা কেন?

মুসকান উত্তর দিল না। ইমন পুনরায় বলল,

– কিছু জিজ্ঞেস করছি।

– আপনি চলে যান। আমি চাই না আপনি আমার কাছে আসুন।

– হোয়াট!

মুসকান মৃদু কেঁপে ওঠল৷ ইমন কয়েক কদম এগিয়ে সামনে এলো। নত মাথায় দাঁড়িয়ে থাকা মুসকানের চিবুক ছুঁয়ে মুখ উঁচু করল। ফোলা চোখদুটোতে প্রগাঢ় চোখে তাকিয়ে দৃঢ়স্বরে বলল,

– এই নাটক বন্ধ করো মুসকান।

মুখ ফিরিয়ে পিছন ঘুরে দাঁড়াল মুসকান। নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করে বলল,

– যে কোনো সিদ্ধান্তই ভেবে নিতে হয়। সারাজীবনের একটি সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে নিছক আবেগকে প্রশ্রয় দেয়া বোকামি ছোটোসাহেব।

– আই সি..

শব্দ দু’টো বলেই অদ্ভুত ভাবে হেঁটে সামনে এলো ইমন। আপাদমস্তক মুসকানকে দেখে নিয়ে বলল,

– তোমার আবেগ তাহলে একটু বেশিই।

চমকে তাকাল মুসকান৷ একে অপরের দৃষ্টি মিলন ঘটতেই ইমনের বক্ষঃস্থল কেঁপে ওঠল৷ ধৈর্য্যের সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গেল তার। আচমকা হাত বাড়িয়ে মুসকানের কটিদেশ চেপে ধরল। নাক সমান লম্বা দেহখানি একবিন্দু ফাঁক রেখে মুখোমুখি হলো। শক্ত কণ্ঠে কম্পন এঁটে বলল,

– নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলো না মুসকান। নিজেরটা নিজে বুঝে নিতে শিখ। আমার অনুভূতিকেও অসম্মান করো না।

আচমকা ইমনের শক্ত স্পর্শে শিউরে ওঠল মুসকান৷ বক্ষঃস্থল কেঁপে ওঠে নৃত্য শুরু করল ধুকপুক ধুকপুক। তার পাতলা মসৃণ ঠোঁটজোড়াও তিরতির করে কাঁপতে লাগল। ইমনের দৃষ্টির কঠিনতা আরো বাড়ল। শান্ত, শীতল কণ্ঠ সহসা গম্ভীরতায় ছেয়ে গল। গমগমে স্বরে বলল,

– যে সিংহ গুহায় ঘুমিয়ে থাকে তাগে জাগাতে নেই মুসকান। ভেবো না আমি তোমাকে জুলুম করছি। বিলিভ মি. এই চোখে আমার প্রতি অনুভূতি না থাকলে ইমন চৌধুরী এটুকু করতো না। চৌধুরী বাড়ির ছোটোছেলে আর যাই আত্মসম্মানহীন নয়। যে চোখে আমার জন্য ভালোবাসা উপচে পড়ে। সেই চোখের মালিককে কি আর এটিটিউড দেখানো যায়?

কথাটা বলেই ধীরে ধীরে হাত আলগা করতে শুরু করল ইমন। পর মুহুর্তেই আবারো শক্ত করে পেঁচিয়ে মুখোমুখি করে নিল কান্নাকাটি করে ফুলিয়ে ফেলা মুখাবয়বের। মুসকান পুনরায় আঁতকে ওঠল। নিঃশ্বাস ছাড়ল ঘনঘন। এরপর অসহায় চোখে আবারো চোখ রাখল ইমনের চোখে। ইমন সে মায়াবী চোখে ডুব দিয়ে, কণ্ঠে মাধূর্য মিশিয়ে বলল,

– মোহময় এই চোখে আমার জন্য প্রেম না এনে অশ্রু আনছ? এত নিষ্ঠুর হলে তো চলবে না প্রিয়তমা। সম্পর্কের সূচনাতে এই টর্চার না করলেও পারতে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here