চিত্তবৃত্তি পর্ব ৭

0
759

#চিত্তবৃত্তি : ৭
#জান্নাতুল_নাঈমা
আশ্রমে গুটিকয়েক দিন কীভাবে যেন কেটে গেল। অনাথ নয়টি বাচ্চাই বেশ মিষ্টি৷ শান্ত প্রকৃতির। প্রতিটি বাচ্চার চোখজোড়াও অগাধ মায়ায় ভরা। সেই মায়াবী চোখে মাঝে মাঝেই তাকিয়ে রয় মুসকান। বুকের গভীরে ওদের জন্য তৈরি করে নেয় এক মায়া সমুদ্র। মাত্র কয়েকদিনেই বেশ মিশে গেল সে। এই আশ্রম, আশ্রমে থাকা প্রতিটি বাচ্চাকেই খুব আপন আপন অনুভব করল। প্রত্যেকের চোখেই দেখতে পেল নিজের প্রতিচ্ছবি। দাদুভাই তার জন্য আলাদা রুম দিয়েছে। সেই রুমের জানালার পাশে বসে আছে সে। এই আশ্রমের সবচেয়ে ছোটো রুমটা তার। কারণ এই রুমে সে একাই থাকবে। একান্তে সময় কাটাবে, ঘুমাবে, পড়াশোনা করবে। দাদুভাই যতই বলুক বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য তাকে এখানে থাকতে দেয়া হচ্ছে। আসল কথা সেটা নয়। দাদুভাই তাকে একা ছাড়তে চায় না। দাদুভাইয়ের চেয়েও বেশি যে মানুষটা তাকে চোখে চোখে রাখতে চায় সে হচ্ছে ছোটোসাহেব। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরুলো মুসকানের। এ কয়েকদিনে ইমন এখানে আসেনি। বলেছে সপ্তাহে দু’দিন আসবে। বৃহস্পতি আর শুক্রবার। ঐ মানুষটাকে নিয়ে অনেক ভেবেছে সে। এখনো ভাবছে। মানুষটার চোখে এতদিন তার প্রতি স্নেহ দেখেছে। সেই স্নেহের আড়ালে অন্যরকম অনুভূতি ছিল। প্রতি ক্ষণে ক্ষণে এ কথাই তার হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দিচ্ছে। অন্তঃকরণ ভয়ে সিঁটিয়ে যাচ্ছে একটা কথা ভেবেই। ছোটোসাহেবের বাবা কখনো তাকে মেনে নেবে না। কিন্তু ছোটোসাহেব এক কথার মানুষ। সে যখন একবার বলেছে তাকে বিয়ে করবে। সেই কথার নড়চড় করার সাধ্য নেই। যদিও ইমন বলেছে মুসকানের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু হবে না৷ তবুও মুসকানের দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে। অমন মানুষের থেকে সত্যিকারের ভালোবাসা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। সেই ভালোবাসা যদি এতটা কাছাকাছি এসে সম্মানের সঙ্গে হাতছানি দেয়। কতদিন নিজেকে সামলে রাখবে সে? এমন তো নয় ছোটোসাহেবকে সে অপছন্দ করে। পছন্দের মানুষটা যখন ভালোবাসা চাউনি নিয়ে তাকাবে৷ আকুল আবেদন জানাবে। ক্ষণে ক্ষণে মুগ্ধ করা আচরণ উপহার দেবে। তখন কী ভালো না বেসে উপায় থাকবে? অতিরিক্ত টেনশনে মাথা ব্যথা হলো মুসকানের। বিছানায় শরীর এলিয়ে কিছুক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করল। কিন্তু ঘুম কিছুতেই ঘুম ধরা দিল না। অগত্যা রুম ছেড়ে বেরিয়ে বাচ্চাদের খোঁজ নিতে গেল সে।

সময়টা বিকেল। বাচ্চারা খেলাধূলা করছে। এ আশ্রমের সবচেয়ে বড়ো বাচ্চাটির বয়স এগারো। নাম, ঝিমলি। আর সবচেয়ে ছোট্ট মেয়েটির বয়স চার। নাম রিপ্তি। ওকে এখনো স্কুলে ভর্তি করানো হয়নি৷ এক বছর পর, বাকিদের মতো ওকেও এখানকার প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করানো হবে। মুসকান বাচ্চাদের দেখে নিয়ে হঠাৎ চারপাশে নজর বুলালো। ভাবল, এতবড়ো জায়গাটা ফাঁকা রয়েছে। একপাশে ছোটোখাটো বাগান থাকলে মন্দ হতো না। কথাটা মাথায় আসা মাত্র দাদুভাইকে জানাতে গেল। দাদুভাই শুনে প্রচণ্ড উৎফুল্ল হয়ে বলল,

– এই না হলো আমার গিন্নি। আমরা দুই পুরুষ মানুষ কি আর এতোকিছু বুঝি। এইবার তুমি আসছ লক্ষ্মীর পা পরেছে আমার ঘরে। নিজের মতো সব গুছাই নেও৷ যা যা করা লাগব খালি বলবা। আমি সব ব্যবস্থা করে দিব।

দাদুভাইয়ের প্রফুল্লতা নিমিষেই মুসকানের মন ভালো করে দিল। ইমন এলো বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে। সে আসতে না আসতেই মুসকান নম্র সুরে অনুরোধ করল,

– হাত, পা ধুয়ে আসুন। খিচুড়ি রেঁধেছি।

ইমন আফসোস মিশ্রিত গলায় বলল,

– রান্না থেকে এবার রেহাই নাও। আর কত রাঁধবে বলো তো? এখানে তোমার কোনো খাটুনির দরকার নেই। ফ্রি থাকবে। খাবে, ঘুমাবে, পড়াশোনা করবে। আর বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাবে, ব্যস।

মুসকান আমতা আমতা করল। ঘোমটা দেয়া ওড়নাটা আরেকটু চেপে নিল মাথায়। শান্ত, কোমল কণ্ঠে বলল,

– এ কয়েকদিন রাঁধিনি। আজ বাচ্চাদের কিছু রান্না করে খাওয়াতে ইচ্ছে করল।

ইমন ঈষৎ হেসে বলল,

– ওকে ফাইন। তুমি খাবার বাড়ো আমি আসছি।

ইমন চলে গেল ডানপাশে কলপাড়ে। আর মুসকান বাম পাশে খাবার ঘরে ঢুকল। সে খুব ভালো করেই জানে ও বাড়িতে কারো রান্না খেতে পারে না ইমন। মেজো মায়ের হাতের রান্না তো একেবারেই পছন্দ করে না। ছোটো কাকি রান্নাবান্না সম্পর্ক তেমন অভিজ্ঞ নয়। নতুন কাজের মহিলাটির হাতের রান্না কেমন কে জানে? সব ভেবেচিন্তে মুসকান দুপুরে রান্না করেছে। সে জানে তার ছোটোসাহেব তার হাতের রান্না খুব পছন্দ করে। প্রথম দিকে যখন ইমন তার রান্না খেতে শুরু করে৷ একদিন বলেছিল,

– দাদির থেকে রান্নাটা এত ভালো আয়ত্ত করেছ মুসকান। বিলিভ মি আজকের পর তোমার হাতে ছাড়া অন্য কারো হাতের রান্না আর মুখে রুচবে না।

সত্যি সত্যি সেদিনের পর যতবারই অন্যকারো হাতে বা অন্য কোথাও গিয়ে খেতে হয়েছে। বাড়ি এসে আফসোস করেছে ইমন। তার সৎ মায়ের রান্না বেশ ভালো তবুও সেই রান্না যেন মুসকানের কাছে হেরে যায়৷ কারণ মুসকান যে তার প্রিয় দাদির থেকে রান্না শিখেছে।

ইমন দাদুভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে বাচ্চাদের চকোলেট দিল৷ এরপর ফ্রেশ হয়ে খাবার ঘরে চলে এলো। মুসকানের হাতে রান্না করা পাতলা খিচুড়ি আর গরু মাংস টেবিলে দেখে মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল তার। আচমকা মৃদু হেসে বসে পড়ল ঝটপট। বলল,

– ঢুলা খিচুড়ি! অনেকদিন পর করলে।

তার বিস্মিত চোখ, তৃপ্তময় খুশি দেখে ভালো লাগায় বুক ভরে ওঠল৷ চুপচাপ পাশের চেয়ারে বসে এগিয়ে দিল কেটে রাখা সালাদ। ইমন তৃপ্তি সহকারে খাওয়া শুরু করে বলল,

– তুমি খেয়েছ?

মুসকান মাথা নাড়াল। ইমন বলল,

– একটু পর তোমাকে নিয়ে বেরুবো। তোমার জন্য কয়েকটি জিনিস দেখেছি৷ তোমার যদি ভালো লাগে তবেই নিয়ে আসব৷ ওগুলো ভালো না লাগলে ঘুরে ঘুরে অন্য গুলো চয়েজ করে নিয়ে আসবে।

মুসকান অবাক চোখে তাকাল। বলল,

– কী দেখেছেন?

– তোমার রুমটা তো ফাঁকা। বিছানা ছাড়া কিচ্ছু নেই। অন্তত ড্রেসিং টেবিল, পড়ার টেবিল, ওয়ারড্রব, বুকশেলফ তো লাগবে?

সহসা নিভে গেল মুসকান৷ এগুলো তো অনেক টাকার ব্যাপার! ইমন যেন মুখ পড়ে ফেলল তার। বলল,

– এত চিন্তা করছ কেন? আমি আছি না।

মুসকান সহসা চমকে তাকাল। বক্ষস্থলে যেন শব্দ হলো ধড়াস ধড়াস। ওর চমকানো খেয়াল করে কেশে ওঠল। মুসকান দিকবিদিক ভুলে গিয়ে গ্লাসে পানি ভরে এগিয়ে দিল৷ ইমন ঢকঢক করে পানি পান করল বলল,

– দাদুভাই তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে মুসকান। নিজের নাতনিদের থেকেও বেশি। সে যেমন তার নাতনিদের ওটা সেটা গিফট করে তোমাকে কি করতে পারে না?

ইমনের গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মুসকান। হৃৎস্পন্দনের তীব্র ওঠানামায় মুখো ভঙ্গি অন্যরকম হয়ে আছে তার। ইমনের কথার প্রতিত্তোরে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও মনে মনে বলল,

– শুধু কি দাদুভাই? আপনার ভালোবাসাটুকুও তো লুকাতে পারছেন না।

ইমন কী বুঝে ফেলল তার মনের কথা? নয়তো খাওয়া শেষ করে ওঠার পূর্বে বলল কেন,

– বলাবলিতে আমার ভালোবাসা নির্ভর করে না মুসকান৷ আমি ভালোবেসে সম্মান দেয়া আর দায়িত্ব পালনে বিশ্বাসী।
.
.
ইমন আজ বাইক নিয়ে বেরোয়নি। প্রথমে অটো করে ওরা ফার্ণিচারের দোকানে এলো। ওখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিল দিহান। দোকানটা তার কাকার। তাই সে আসাতে বেশ উপকারই হলো। মুসকানকে ফার্ণিচার পছন্দ করতে বলে ইমন আর দিহান চেয়ারে বসল। দিহান ইমনের দিকে চেপে গিয়ে বলল,

– কী বন্ধু সংসার সাজাবা নাকি।

ইমন বাঁকা হাসলো। দিহান পুনরায় বলল,

– ফুলটুলের ব্যবস্থা করব নাকি?

ভ্রু কুঁচকে ইমন বলল,

– কেন?

– ফুলশয্যার জন্য।

– শা’লা, মাথায় খালি এসব ঘুরে। চুপচাপ থাক।

ফার্ণিচার দেখলেও দিহানের কথাগুলো স্পষ্ট কানে এসেছে মুসকানের৷ লজ্জায় শরীর শিরশির করে ওঠেছে তার। কপোলদ্বয় সহসাই রক্তিম বর্ণ ধারণ করছে৷ বক্ষঃস্থলে বাড়ছে তীব্র ধুকপুকানি। এমন অনুভূতি হচ্ছে কেন তার? ছোটোসাহেবকে নিয়ে একটু বেশিই ভেবে ফেলার দরুণ এমন হচ্ছে না তো? নাকি অবচেতনে তারও অনুভূতি তৈরি হচ্ছে। সম্পূর্ণ নতুন এক অনুভূতি। যে অনুভূতির সঙ্গে ইতিপূর্বে পরিচয় ছিল না তার। আজ সেই অনুভূতিতে সেও সিক্ত হচ্ছে!

ফার্ণিচার কেনা শেষে সেগুলো দিয়ে দিহানকে আশ্রমে পাঠিয়ে দিল ইমন৷ এরপর মুসকানকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল টুকটাক শপিং করতে। ইমন আগে আগে আর মুসকান পিছে পিছে। এমতাবস্থায় সহসা ইমন দাঁড়িয়ে পড়ল৷ রাস্তা পাড় হতে হবে তাই। মুসকানও তার পাশে দাঁড়াল। প্রস্তুতি নিল ইমনের পায়ে পা মিলিয়েই পাড় হবে। এত গাড়ি, অটো, সিএনজি। দ্রুত পাড় হওয়া প্রায় মুশকিলই। সতর্ক চাউনিতে চারপাশ তাকিয়ে বারকয়েক ঢোক গিলল মুসকান৷ আচমকা ঝড়ের গতিতে ইমনের বলিষ্ঠ হাত তার নরম হাতটা আঁকড়ে ধরল৷ আঙুলের ফাঁকে আঙুল গলিয়ে নিল সন্তর্পণে। মৃদুস্বরে বলল,

– দ্রুত পা বাড়াও।

সহসা এমন স্পর্শে হৃদয় কেঁপে ওঠল মেয়েটার৷ হাতে অনুভূত হওয়া শিরশিরে অনুভূতিটা ধীরেধীরে সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়ল যেন। ভাবল রাস্তা ক্রস করার পরই ইমন হাতটা ছেড়ে দেবে৷ কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে ইমন হাতটা আর ছাড়ল না। যে পর্যন্ত না কেনাকাটার পর টাকা দেয়ার প্রয়োজন পড়ল। পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করার প্রয়োজন হলো। সে পর্যন্ত ঐ হাত সে ছাড়লই না৷ যখন ছাড়ল ঠিক তখনি যেন হুঁশ ফিরল ইমনের। মুসকানের থমথমে মুখটা দেখে হোঁচট খেল সে। অদ্ভুত ঘোর থেকে বেরিয়ে দম ছাড়ল বড়ো করে। কেনাকাটা শেষ করে ফেরার পথে রিকশা নিল। রিকশা দিয়ে যেতে যদিও সময় লাগবে বেশ তবুও রিকশাই নিল। কেন যেন মুসকানের সঙ্গে এ প্রথম একান্তে সময় কাটাতে ভালো লাগছে তার। রিকশা চলছে তার আপন গতিতে। এই শীতের রাতে মুসকান যেন শীতার্ত ভোরের মতো শান্ত হয়ে গেছে। তার সেই শান্ত ভাব যে ইমনের বুকের ভেতর উত্তাল সৃষ্টি করছে। বোকা মেয়েটা একটুও টের পেল না। দু’জনের মধ্যে চলতে থাকল শুধু পিনপতন নীরবতা। রাস্তায় থাকা বিটগুলো ক্রস করার সময় রিকশা বেশ নড়েচড়ে ওঠল। ক্ষণে ক্ষণে এই অবস্থা চলতে থাকলে ইমনের মনে ভয় জন্মাল। মুসকান যেভাবে একদিকে সেঁটে বসে আছে। পড়ে না যায় আবার। এই নিয়ে অতিরিক্ত টেনশনে আপনমনেই পিছন দিক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিল সে। ধীরেধীরে সে হাতটা মুসকানের কোমর ক্রস করছিল। কিন্তু সহসা এমন স্পর্শ পেয়ে চমকে ওঠে মুসকান। হৃৎপিণ্ডে শুরু হয় প্রবল আন্দোলন। দুরুদুরু বুকে তীব্র ভয়ে সে চোখমুখ খিঁচে শক্ত হয়ে যায়। আকুতি নাকি প্রতিবাদ ঠিক কোনটা বুঝে ওঠল না ইমন৷ এমন কণ্ঠস্বরে সহসা মুসকান বলে,

– প্লিজ ছোটোসাহেব। আপনাকে আমি এমন আশা করিনি।

এহেন কথায় ইমন ভড়কে গেল। হকচকিয়ে বলল,

– রাস্তাটা খুব খারাপ মুসকান। ভয় হচ্ছে যদি পড়ে যাও। এখানে হাত রাখলে আমি তোমাকে সেফ করতে পারব।

চমকে বা পাশে তাকাল মুসকান। দেখতে পেল ইমনের বলিষ্ঠ হাতটা তাকে আগলে হুডির সাইটে ধরে আছে। আচমকা গা কাঁপিয়ে মাথা নত করে ফেলল সে। নীরস গলাটা ঢোক গিলে ভেজাল। ছোটোসাহেবকে নিয়ে কিয়ৎকাল পূর্বে যে জঘন্য ভাবনাটা সে মনে এঁটে ছিল। সেটা ভেবেই বুকটা হুহু করে ওঠল। তার মন এতখানি নিচে নামতে পারলো? ছিঃ ছিঃ। লোকটা না হয় তাকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চেয়েছে। বিপদের সময় সব সময় পাশে পাশে রয়েছে। আগলে রাখছে। আর সে কিনা এক মুহুর্তেই তার চরিত্রে কালি লাগিয়ে দিচ্ছিল। ছিঃ ছিঃ…

– গিল্টি ফিল করছ? ইট’স ওকে আমি কিছু মাইন্ড করিনি। তুমি যা বলেছ, যা ভেবেছ খুব স্বাভাবিক।

ভেতরে রাখা উত্তেজনা তীব্র হলো। অপরাধী মনোভাব গাঢ় হয়ে উপচে এলো কান্না৷ সহসা চোখ গলে জল গড়াল। নিঃশব্দে বেরিয়ে আসা জল গুলো ইমন দেখল না। তবে কয়েক পল পর চাপা কান্নার দরুণ হেচকি ওঠল মুসকানের। ঠিক তখনি ইমন টের পেল সে কাঁদছিল। যা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। মুসকান তো মানসিক ভাবে এতটা দুর্বল নয়। তাহলে আজ কী হলো ওর? শক্ত প্রকৃতির মানুষদের একটা করে দুর্বল জায়গা থাকে। সেই দুর্বল জায়গায় আঘাত পড়লে তারাও ভেঙে পড়ে। মুসকানের ক্ষেত্রে কী তাই হলো? মুসকানের দুর্বল জায়গাটা কী? ভাবতে ভাবতেই ইমনের কেন যেন মনে হলো- মুসকানের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা তার প্রতি ওর শ্রদ্ধাবোধ। যা আজকে কিছুসময়ের জন্য একটু নড়বড়ে করে ফেলেছিল। সেই অপরাধবোধেই এই কান্না। দীর্ঘশ্বাস ফেলল ইমন। এক হাতে তাকে আগলে রাখল সন্তর্পণে। অপর হাতটা স্পর্শ করল মাথায়। বলল,

– ডোন্ট ক্রাই মুসকান। আমি কিচ্ছু মনে করিনি। বরং তোমার সচেতনতা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। তুমি অনন্য, তুমি আস্ত এক মুগ্ধতা, তুমি আমার জন্য ঠিক কী আমি কখনো প্রকাশ করতে পারব না।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here