চাদর পর্ব ৭+৮

0
390

চাদর
Subhra Roy
পর্ব ৭+৮

দেখতে দেখতে পূজো চলে এসেছিল । আজ দ্বিতীয়া । কাল আমরা দীপের বাড়ি যাব । বিকেল বেলায় সবাই এখানে চলে আসবে । কাল একসাথে সকালবেলা বেরোবো। দীপ রাতে না থাকতেও পারে । খেয়ে চলে যাবে । সকালে আসবে গাড়ি নিয়ে ।
সব ঠিকঠাক আছে । তবু কেমন যেন একটা লাগছে । ঠিক বুঝতে পারছি না । মনে হচ্ছে কি যেন একটা হবে । মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠছে ।
না । একটু বেশি ই স্ট্রেস নিচ্ছি আমি । সবাই থাকবে । কিচ্ছু হবে না । আসলে দীপের ছেলেমানুষি গুলো সবাই বোঝে না । বিদিশা ই বোঝে না তো অন্যদের কথা বাদ ই দিলাম । এখানে আমাদের সবার বাড়ি র লোকেরা ছোট থেকে বড় হতে দেখেছে আমাদের । আমাদের বজ্জাতি গুলো জানে । তাই কিছু মনে করে না । কিন্তু ওখানে সবাই কেমন হবে জানি না । কি ভাববে জানি না । তাই ভেতরে ভেতরে একটু চাপ লাগছে ।

ব্যাগ গোছানো ই আছে । সারা রাত প্রায় জাগাই । এত গুলো মাথা একসাথে হলে ঘুমের দফারফা হবেই । তাও তো গাধা টা কে জোর করে বাড়ি পাঠিয়েছিলাম। নতুন জায়গা, নতুন রাস্তা কিছুই জানি না আমারা। সেখানে দীপ ও যদি সারা রাত জেগে লাট খায়, তাহলেই হল। এমনিতেই ছেলে টা বাইরে গেলে ভীষণ কনসাস থাকে । আজ তো আর প্রথম যাচ্ছি না । সবাই ঘুমোবে । ও দু চোখের পাতা এক করবে না । এত স্ট্রেস দিলে চলে ।

বলতে বলতে গাড়ি চলে এসেছিল ।অ্যজ ইউজুয়াল জমিয়ে আড্ডা চলছিল। আর আমি, সত্যি বলছি গাড়িতে উঠলে একটু ও জেগে থাকতে পারি না । বিশেষ করে যদি জানি আমার সাথে কেউ আছে । আর এখানে তো সবাই আমার সাথেই আছে ।

মাঝে শুধু একবার ই দাড়িয়ে ছিল গাড়ি । হালকা কিছু খাওয়া হয়েছিল । তারপর সোজা দীপ দের বাড়ি ।

বাড়ি বলা কি ঠিক হবে? সেই সিনেমায় দেখা জমিদার বাড়ি যেন । সব কটা ভেবলে গেছি আমরা ।দীপরা আমাদের থেকে বড় লোক জানতাম ।কিন্তু এমন রাজা গজা মার্কা বড়লোক হবে দুঃসপ্নেও ভাবিনি ।থতমত খেয়ে রাজা তো বলেই ফেলল, এই দীপ ঠিক জায়গায় এনেছিস তো? এটা তোদের বাড়ি? মাইরি বলছি মনে হচ্ছে ভেতরে ঢুকলেই হারিয়ে যাব। প্লিজ একটা রুট ম্যাপ দিয়ে দিস । শুনে সবাই হেসে উঠেছিল।
হাসতে হাসতে দীপ বলেছিল, ম্যাপ নয় একটা গোটা গাইড ই তোদের দিয়ে দিলাম । নিজের কলার টা তুলে বলেছিল।
আমি তো এমনিতেই চাপে ছিলাম । এখন তো মনে হচ্ছে চাপে না চেপটে যাই। দু একবার আলাপ হয়েছে কয়েক জনের সাথে । কিন্তু তাতে কি মানুষ চেনা যায় । মনে হচ্ছে ভেতরে ঢুকে ই একগাদা ভিলেন টাইপের মানুষের সাথে দেখা হবে । যদিও দীপ বলেছে ওদের বাড়ির সবাই ভীষন ফ্রি মাইন্ডের মানুষ । তবে কে আর কবে শুনেছে কোন মানুষ নিজের ঘরের লোকের সাথে ঝামেলা করে । যতই হোক এবাড়ির লোক গুলো সেই উওম কুমারের আমলের সিনেমার মত না হলেই বাঁচোয়া ।ভিলেন দের আমি খুব ভয় পাই ।

ভাবতে ভাবতে আমার স্টকে থাকা সমস্ত দেব দেবীর নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ভেতরে ঢুকেছিলাম । দীপ এক গাট্টা মেরে বলল, কি তখন থেকে বিড়বিড় করছিস।
।এখানে একদম এরকম করবি না,ভদ্র ভাবে থাকবি, বলতে বলতে ভেতরে ঢুকে ছিলাম আমি ।

ডাইনিং হল তো নয় মনে হচ্ছে ঘরের ভিতরে ফুটবল গ্রাউন্ড ঢুকিয়ে দিয়েছে কেউ।আস্তে আস্তে গিয়ে সোফা গুলোতে বসেছিলাম আমরা । সারা জীবন ধরে যতটুকু ভদ্রতা করা শান্ত হয়ে থাকা শিখেছি ততটাই অ্যাপলাই করেছিলাম।সবাই আমাদের গল্প শুনেছে । আমরাও শুনেছি এবাড়ির সবার কথা । কিন্তু তবু প্রথম দিনই নিজেদের আসল চরিত্র গুলো দেখানো মোটেও ভালো কাজ হবে না। পরে তো যা হবার তাই হবে । এতগুলো বাঁদর একসাথে আছে যখন, কতক্ষণ কাক ময়ূরের পালক পরে থাকতে পারে সেটাই দেখার ।

দীপের বাবা, জ্যেষ্ঠা, কাকুরা বাড়িতে নেই । কদিন পর পূজো । এত লোকজন আসবে । তারপর ব্যাবসার কাজ তো আছেই। তাই সন্ধ্যার আগে ওদের সাথে দেখা হবে না ।
একটু পরেই সবাই এসে পড়েছিল। দীপের জ্যেঠিমা , দুই কাকিমা, ভাই বোনেরা । বাকিরাও সব দু এক দিনের মধ্যে এসে পড়বে ।প্রত্যেকটা মানুষ এত ভালো এত সুন্দর মনেই হচ্ছে না এই প্রথম বার আলাপ হল ।দীপের মা এর সাথেও আলাপ হল।আমাদের আসার অপেক্ষা করছিলেন। বড্ড মা মা মুখ। ফর্সা, মাথায় হালকা ঘোমটা ।কপালে টিপ। মাথায় সিন্দুর। ঠিক যেন মা দুর্গা । দেখেই বুকের ভেতর টা কেমন করছিল। আমি আস্তে আস্তে উঠেছিলাম । আমরা সবকটা বাঁদর ই আজকের মত অন্তত মানুষ হয়ে ছিলাম। সবাইকে প্রণাম করেছিলাম। সবাই পরিচয় করছিল আমাদের সাথে ।
হঠাৎ করেই দীপের বোন পরি বলেছিল, হ্যাঁ রে দা ভাই তুই যে এত মিথ্যুক তা তো জানতাম না । তুই কি বলতিস তোর বন্ধুদের মত বিচচু আর কেউ নেই । অনা দি তো পাঁচ মিনিট ও তোর সাথে ঝগড়া না করে থাকতে পারে না । ওরা পূজোয় এলে পুরো বাড়ি গমগম করবে । কিন্তু এ তো পুরো উল্টো গঙ্গা বইছে । পাঁচ নয় পঁচিশ মিনিট হয়ে গেছে অনা দি ঝগড়া তো দূরে থাক একটা কথাও বলেনি তোর সাথে । বাকি দের কথা তো ছেড়েই দিলাম । মনে হচ্ছে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে কেউ ওদের ।এদের নিয়ে পূজো জমবে না গলে জল হয়ে যাবে।
ওর কথা বলার ধরন দেখে হেসে উঠেছিল সবাই । সোম তো বলেই ফেলল, বাঁচা গেল বাবা । এত শান্ত হয়ে থাকতে থাকতে মনে হচ্ছিল আজ পাক্কা আমার পেট ফেঁপে যাবে ।
সবার সাথে আলাপ হয়েছিল । আমি শুধু চেয়ে ছিলাম দীপের মায়ের দিকে । কি মিষ্টি মা মা দেখতে। প্রণাম করার সময় সবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন । এবাড়ির সবাই খুব ভালো । তবু যেন ঐ মানুষটা আমাকে টানছিল ।
দীপ হঠাৎ একজন বয়স্ক মানুষকে নিয়ে এসে সোফায় বসিয়েছিল।হেসে পরিচয় করিয়ে দিল সবার সাথে, এই আমার সুইট হার্ট । আমার লাইফ লাইন । আর এগুলো সব আমার শিরা ধমনী বলে আমাদের দেখিয়ে ছিল ।
যেমন ঠাকুমা তেমন নাতি।
ও এরাই তাহলে তোমার পৃথিবী ছোট কর্তা ।এই জন্য তুমি আমাকে ভুলে থাকতে পার তাই না ।আর ঐ বুঝি অনা তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড ।যেমন বলেছিলে ঠিক তেমনটি । এদিকে এস তো একবার, আমাকে ডেকে ছিল দীপের ঠাকুমা ।
এসে হাত দুটো ধরে পাশে বসতেই বলেছিল, তাহলে তুমি আমার সতিন অনা দিদি ।
প্রথমে চমকে গেলেও পরে মজাটা বুঝে হেসে ফেলেছিলাম ।
আমিও কম নই ।বলেছিলাম, না গো সুইট হার্ট সতিন হওয়ার কোন ইচছেই আমার নেই । কারন তোমার ছোট কর্তা টির সাথে আমার এক মিনিট ও ঝগড়া না হয়ে যায় না । তোমার সতিন অন্য কেউ হবে । সে আসবে কদিন পর। তবে তোমার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে তোমার সাথে সই পাতাতে পারি ।হবে না কি আমার সই?
জিজ্ঞেস করছ অনা দিদি।আমি তো হাত বাড়িয়েই আছি ।বলে জড়িয়ে ধরে ছিল আমাকে ।

অনেকটা রাস্তা এসেছে সবাই । তাই স্নান করতে সবাইকে পাঠিয়ে দিল দীপের জ্যেঠিমা ।রাজা, সোম একটা ঘরে থাকবে । আর আমাদের জন্য আরো দুটো ঘর দিয়েছে । একটা ঘরে তো আর তিনজন থাকা যাবে না । আর আমরা থাকতে পারলেও অন্যের বাড়ি এসে একটু ভদ্র ভাবেই থাকা উচিত ।তাই আমি একাই থাকব । আর ও দুটো হে হে করবে আর আমার বই পড়ার দফারফা হবে।বই পড়ার বদ অভ্যাস টা যত দিন না ছাড়তে পারব ততদিন এমনই হবে। দীপ তো বলে আমার আর বই এর প্রেম সাত নয় জন্ম জন্মান্তরের। নইলে এত দিনেও একটা প্রেম করতে পারতাম না । মাঝে মাঝে ভাবি ঠিকই বলে সবাই । হায় । কবে যে আমি বদলাবো।

উঠে ঘরে যাবার জন্য এগোতেই দীপের মা ডাকল আমায় । দীপ বলেছে ছাদের পাশের ঘরটা তোর পছন্দ হবে। তাই ওটাতেই তুই থাকিস । খুব বই পড়িস তো তুই। দীপ বলেছে। আমার প্রচুর স্টক আছে । একই নেশা তো। ইচ্ছে মত নিয়ে পড়িস । ছেলে টার তো এক মিনিট বসার ও ধৈর্য্য নেই । কি করে যে পড়াশোনা করে কে জানে? এই যা তুই বলে ফেললাম । কিছু মনে করলি না তো মা?
কি যে বল।জান আমার না মা নেই ।শুধু মানি আছে । তোমাকে দেখে না খুব আদর করতে, আদর খেতে ইচ্ছে করছে । আমি তোমাকে দীপের মত মামনি বলব? তুমি কিছু মনে করবে না তো। বলে দীপের মায়ের কোলে মাথা রেখেছিলাম আমি। সারাটা কোল জোড়া মা মা গন্ধ । মা দের গন্ধ বোধহয় একই হয় । ঠিক এমনই একটা মানির সারাটা শরীর জুড়ে থাকে ।

সারাটা দিন হইহই করে কাটছিল। সন্ধ্যাবেলা পরি এসে বলল, চল সবাই ঠাকুর দালানে আজ আল্পনা দেওয়া হবে । আসলে এত বড় দালান তো একজনে তো আর দিতে পারবে না আর একদিনে দেওয়া যায় ও না । এটা আমাদের পূজোর স্পেশালিটি। যারা পারে তারা সবাই দেয় ।চল না সবাই ।বলে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেছল।

আমরা গিয়ে দেখি সত্যি ই হইহই কান্ড । অনেকে মিলে আল্পনা দিচ্ছে । আমার ও ইচ্ছে করছিল । আসলে আমাদের ওখানে কিছু হলেই আমি আল্পনা দিই। আমার বড্ড ভাল লাগে । কিন্তু এখানে কেউ যদি কিছু ভাবে। তার চেয়ে দেখাই ভালো ।ইস এত বড় যায়গাটা। হাতটা নিশপিশ করছে তুলি টা ধরার জন্য । চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু মা দুর্গা র ও সেটা পছন্দ হল না ।

এই খেপি এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস? আল্পনা দিবি না। ভাল আল্পনা দিস বলে বেশি ভাও খাস না । মহারানির মত দাড়িয়ে আছেন।যা । এই পরি এটাকে নিয়ে যা তো । জান মামনি অনা না ব্যাপক আল্পনা দেয় ।বলতে বলতে ওদিকে চলে গেছল গাধাটা । বলেছিলাম না আমাকে শান্তিতে থাকতে দেখতে পারেনা ।

আল্পনা দিতে দিতে গল্প ও চলছিল বুঝতেই পারিনি কখন রাত হয়ে গেছে । জ্যেঠিমা খাওয়ার জন্য জবাদি কে ডাকতে পাঠিয়ে ছিল। তখন দেখি রাত দশটা বেজে গেছে । এখনো অনেক বাকি ।অবশ্য পরি বলেছিল একদিনে শেষ করা যায় ও না ।তবু যেতে ইচ্ছে করছিল না । আমার খাপছাড়া কাজ পছন্দ না ঠিক । কিন্তু আমার জন্য খাবার নিয়ে বসে থাকবে অন্যরা সেটাও ভালো দেখায় না ।

খেতে বসে দেখি এলাহি কান্ড । এত রকম রান্না আমরা সাধারনত বিয়ে বাড়িতেই খাই।তবে সবকটা রান্না ই ফাটাফাটি । সবাই জমিয়ে খেয়েছি।সবার তো ঘুমে চোখ ঢুলুঢুলু । তবে আমার সেরকম একটা ঘুম পাচ্ছে না । তাই বই নিয়েই একটু বসেছিলাম ।সত্যিই মামনির বিরাট স্টক । আমি যে ঘরটায় আছি সেখানে একটা জানালা আছে। সেটা দিয়ে পুরো ঠাকুর দালানটা দেখা যায় । চারদিক চুপচাপ । দালানে আলো জ্বলছে । মায়ের মুখ, অর্ধেক আঁকা আল্পনা, লাইট থেকে চুঁইয়ে পড়া নরম আলো।কেন জানি না বড্ড ভালো লাগছে । বড্ড শান্তির এক টুকরো সময় । কেন জানি না মোহগ্রস্তের মত ধীরে ধীরে নেমে এসেছিলাম । আবার তুলিটা তুলে আঁকতে শুরু করেছিলাম । এতটা পথ এসেছি।ঘুম আসার কথা । কিন্তু এতটুকু ক্লান্তি ও নেই । মনে হচ্ছে আদি অনন্ত কাল ধরে এভাবেই এঁকে যেতে পারি আমি ।মায়ের সামনের পুরো জায়গাটা আল্পনা দেওয়া শেষ । বাকি টুকু কাল করলেই হয়ে যাবে । আস্তে আস্তে উঠে একটা থামে হেলান দিয়ে বসে ছিলাম । মা কে দেখছিলাম ।এমন মূহুর্ত জীবনে বার বার আসে না ।আজ যেন বিশ্বচরাচর ফাঁকা ।শুধু জেগে আছি আমি । এমন করে মা যে জীবনে কখনও আসেনি । মনে হচ্ছে সামনে মা এর মূর্তি নয় মা নিজে দাড়িয়ে আছে । এক্ষুনি এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে আর সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে আমার । ভেতর টা ফাঁকা হয়ে গেছল আমার । শরীরটা আর একটু ছেড়ে দিয়েছিলাম। চোখ দুটো বন্ধ করে মনের ভেতর ভরে নিচ্ছিলাম মুহূর্ত টুকু । চোখ থেকে কি জল পড়ছিল? বোঝার আগেই চোখের ওপর আমার চেনা ছোঁয়া । উফ একা কি আমাকে কখনও থাকতে দেবে না গাধাটা?

এত রাতে এখানে কি করছিস? তোর পাগলামি কবে বন্ধ হবে বলত? তোকে পাহারা দিতে কি আমি রাতেও ঘুমোতে পারব না । একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে দিতে দিতে বলেছিল, অন্য জায়গা হট করে ঠান্ডা লেগে যাবে ।একটুও নিজের খেয়াল রাখতে পারিস না বল।
সত্যিই বেশ ঠান্ডা লাগছিল ।বুঝতেও পারিনি ।কি করে আমাকে এত বুঝিস রে ।একটু কম বোঝ আমায় ।তুই যখন থাকবি না বড্ড কষ্ট পাব নইলে ।
কথা ঘুরিয়ে বলেছিলাম, তুই এত রাতে কি করছিস? ঘুমোসনি কেন? এখন তোকে কেউ দেখলে কি ভাববে বল তো । তোর জন্য বিদিশা র মত শক্ত পাবলিক ই ভাল।
নে আর ভাট বকতে হবে না ।বহুত করেছিস। হ্যাঁ রে তুই মানুষ । সারা দিন এত হাঙ্গামা গেছে, তার পর এতটা আল্পনা দিলি । আমারই ভুল । তোকে তখন না বললেই ভালো হত। কখন থেকে দেখছি এখানে । দেখ ভোর হতে চলল। শরীরটা খারাপ না করা পর্যন্ত শান্তি নেই বল তোর।
না মানে…….
চুপ।একটা কথা ও বলবি না ।যা গিয়ে চুপ করে শুয়ে পড়।
জানতাম আর থাকতে দেবে না । চুপচাপ ঘরে চলে গেছলাম আমি।

আজব মেয়ে একটা । জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি ঠাকুর দালানে এত রাতে উঠে আল্পনা দিচ্ছে । কোন কাজ আধখানা করে রাখতে পারে না । তখনই ডাকলে কিছুতেই আসত না । ঝগড়া করেও থাকত। ভারী মিষ্টি দেখাচ্ছিল তখন । মনে হচ্ছিল ধরে….. মাঝে মাঝে এমন অদ্ভুত ইচ্ছে কেন জাগে মনে কে জানে । তবে আর ভুল করতে পারব না । আবার দেখ আল্পনা দেওয়ার পরও বসে আছে । পাগলি একটা । এবার ঠিক ঠান্ডা লাগাবে। কি যে ভাবে মনে মনে কে জানে । না এবার না নিয়ে এলে মুশকিল । এসে দেখি থামে মাথাটা এলিয়ে কাঁদছে । এই পাগলি তুই কাঁদলে আমার কষ্ট হয় বুঝিস না । চোখ টা মুছে দিতেই তাকিয়ে ছিল আমার দিকে । কেন এত কষ্ট পাচ্ছিস তুই বল না আমাকে ।তোর সব কষ্ট আমার ।তুই ও শুধু আমার । বিদিশা যে প্রশ্ন গুলো আমাকে করেছিল । তার উওর গুলো বোধ হয় খুঁজে পাচ্ছি আমি। বকুনি দিয়ে ঘরে পাঠাতে হল । তাই মেয়ের মুখ ভার । একটু ও যদি না ঘুমোয় শরীর খারাপ হবে যে ।কেন এত অবুঝ তুই অনা ।ভাবতে ভাবতে ভাবতে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়েছিল দীপ ।

আজ সকাল থেকে বাড়ি গমগম করছিল । বাইরে যারা থাকে সবাই আসতে শুরু করেছে ।
এই দাভাই ওঠ ।আর কত ঘুমোবি। সবাই উঠে পড়েছে । ডাকছে তোকে । আর দেখ কে কে এসেছে । তুই কি আজ উঠবি না, না তোর মাথায় জল ঢালব।
পরির চিৎকারে বাধ্য হয়ে উঠতে হল।
কেন রে আমি ঘুমোলে তোর কি? আর পূজোর বাড়ি সবাই এক এক করে আসবে। তো আমি কি করব।যা পালা তো।
তোর থেকে অনা দি ভালো ।সেই কোন সকালে উঠেছে । সবার সাথে এটা ওটা করছে। রাজাদা, সোমদাও কত হেল্প করছে। তনু দি,রিমি দি ও আছে ।আর তুই বাড়ির ছেলে হয়ে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিস।ছি লজ্জা করেনা তোর।

না করে না ।আর অনা উঠে গেছে । শরীর খারাপ না করে ছাড়বে না মেয়েটা । একটুও ঘুমিয়নি। ভাবতে ভাবতে উঠেপড়েছিলাম।

পারে বটে লাফাঝাঁপা করতে । আমরা সবকটা বসে বসে আড্ডা মারছি ।আর ওনার পাত্তা নেই। আমাদের এখানে একটা মেলা বসে পূজোর সময় ।সেখানে যাওয়ার প্লেন করছি ।কিন্তু মহারানীর দেখা নেই । আজ সন্ধ্যায় যাব। কাল থেকে পূজো ছেড়ে সেভাবে আর বেরোনো যাবে না । আজ ই যা একটু ফাঁকা পাওয়া যাবে।

দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর দীপের ঘরে বসে আড্ডা চলছিল । পরি তো আছেই ।সাথে অন্য চারটে ভাইবোন ও আছে । দীপের জ্যেঠিমার দুই মেয়ে । বড় দুই দিদি র আদরের ভাই গাধাটা । কাল আসছে ওরা ।বাইরে থাকে তবু পূজোর সময় যেমন করে হোক চলে আসবে, বলছিল পরি। ওদের পুঁচকে গুলোর সাথে আলাপ করতে অপেক্ষায় আছি আমরা । গল্প করতে কখন ঘুমিয়ে গেছি বুঝতেই পারিনি ।

বিকেল হয়ে গেছে । সবাই যাবার জন্যে রেডি । কিন্তু মহারানি এখনও ঘুমোচ্ছে । তনু রিমি ডাকল কবার। কিন্তু মাথা ব্যাথা বলে আবার শুয়ে পড়েছে । নিজের ঘরেও যায়নি । ঘুমিয়ে গেলে মেয়েটার কোন হুশ থাকে না । একে কাল সারাদিন ধকল গেছে ।রাতেও ঘুমোয়নি। আবার সকাল থেকে দৌড়াদৌড়ি করেছে সবার সাথে । শরীর খারাপ লাগা তো স্বাভাবিক । কথা শোনে কোন? মামনি কে বললাম পরি আর সবাই কে নিয়ে এগোতে । আমি পরে অনা উঠলে ওকে নিয়ে যাব । বাড়িতে এত লোক আছে । আমি পরে গেলেও অসুবিধা হবে না ।

ঠান্ডায় গুটিয়ে শুয়ে আছে ।তবু ঢাকা নেয় নি । এই মেয়েটা কবে বড় হবে ।মানি ওর চিন্তায় পাগল। ও আছে তাই নইলে অন্য কোথাও হলে মানি একা ছাড়তই না । এই যা ঢাকা টা দিতে গিয়ে আমার হাতটাকেই চেপে ধরে ঘুমোচ্ছে । পাগলি একটা । কি বলছিস রে ঘুমের ঘোরে । মুখের কাছে কান পেতে শুনছিল দীপ।

আমাকে ছেড়ে যাসনা প্লিজ দীপ। আমি তোর আর বিদিশার মাঝে কখনও আসব না । তোকে ছাড়া যে আমি থাকতে পারব না গাধা । ঘুমের ঘোরে ফুঁপিয়ে উঠেছিল অনা ।
এই স্বপ্ন দেখছিস না কি রে? আমি তোকে ছেড়ে কোথায় যাব ।এই…….. দীপ ডাকতেই হঠাৎ পাশ ফিরে দীপের বুকে মুখ ঢুকিয়ে দিয়েছিল মেয়েটা । আলতো করে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল দীপ । আজ আরও ভালো করে বুঝতে পারছে মেয়ে টা ওর অনেক বেশি কিছু । বেস্ট ফ্রেন্ডের চেয়ে ও বেশী । ওর জীবন। খুব আদর করতে ইচ্ছে করছে । ভীষণ রকম ইচ্ছে করছে ।নিজের বৌ এর মত করে । চাদরটা টেনে ভালো করে ঢাকা দিতে গিয়ে একটু বেশি আঁকড়ে ধরে নেওয়ায় ঘুম ভেঙে গেছল অনার। হড়বড় করে উঠে বসেছিল ।
আমি এখানে কি করছি? বাকিরা কই।সবাই বলল যে মেলা দেখতে যাবে?
সবাই চলে গেছে ।তুই তো ঘুমোচ্ছিলি।সবাই মিলে কত ডাকল।উঠলিই না । এই জন্য সময় মত রেস্ট নিতে হয় । আরো জাগ সারারাত।
আমি যাব……..
এই চিল্লাবি না । নিজে ঘুমিয়ে এখন চেঁচামেচি ।যা রেডি হয়ে নে ।তোর জন্যই বসে আছি ।
হড়বড় করে উঠে রেডি হতে ছুটেছিল অনা । মানি দেখলেই বলত, মেয়ে টা ছোটই রয়েগেল।

মেলাটা বেশ বড় । মেলার বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে রাজা কে ফোন করল দীপ। সবাই যখন আছে একা একা ঘুরে তো লাভ নেই কিছু ।আসতেই পরি বায়না জুড়ে দিল, দাভাই চল না চাট ফুচকা খাব। তোরা আসছিস বলে মামনি খেতে দিল না ।চল না রে।

পরির সাথে আমরা সবাই খাচ্ছিলাম । বিরাট বড় মেলা ।খুব মজা হচ্ছে । মামনি পরি কে রেখে বাচ্চা গুলোকে নিয়ে চলে গেছে । আমরা আর একটু পরে যাব। খাওয়ার পর দোকান গুলো ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করছিলাম সবাই ।হঠাৎ দেখি দীপ প্রায় আমার পেছনে পেছনে ঘুরছে ।প্রথমে ভাবছিলাম ভেক করছে ।দিন রাত পেছনে লাগা তো স্বভাব । কিন্তু মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি গম্ভীর হয়ে আছে । আবার কি হল রে বাবা । ভাবতে ভাবতে এগোতে যাব হঠাৎ হাত ধরে টেনে বলল, চল এবার অনেক ঘোরা হয়েছে ।
আর একটু ঘুরি না রে। এখনো অনেকটা দেখা বাকি আছে ।
তোর মাথায় একবার কথা বললে ঢোকে না তাই না রে।
দীপের আওয়াজ শুনে রাজারা সবাই ছুটে এসেছিল।
কি হয়েছে রে? সোম জিজ্ঞেস করল।
কিছু না অনেক দেরি হয়ে গেছে বাড়ি চল।
এমন কিছু রাত হয়নি ।মেলা তেও প্রচুর লোকজন । কিন্তু দীপের গলায় এমন কিছু ছিল যে কেউ না করে নি। যে ছেলেটা সারা দিন অন্যের পেছনে লাগে সে তো আর শুধু শুধু এমন করবে না । একটু খানি এগিয়েছি মেলা ছেড়ে কি হঠাৎ দু তিনটে ছেলে এসে সামনে দাঁড়িয়ে ছিল ।

কি বস এত তাড়াতাড়ি যাওয়ার কি আছে। একটু ঘোরাঘুরি কর ।এত বড় মেলা ।এত তাড়াতাড়ি দেখা হয়ে গেল ।এই তো এলে। আমরাও একটু দেখি বলে বিচ্ছিরি ভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছিল ছেলেগুলো । কি বাজে চাউনি।দেখেই বুকের ভেতর পর্যন্ত কেঁপে গেছল। এখানটা একটু ফাঁকা ।গাড়িটা একটু দূরে রয়েছে । আমার হাতটা ধরে ঠেলে একদম নিজের পেছনে করে দিয়েছিল দীপ । ভয়ে ভেতর পর্যন্ত ঠান্ডা হয়ে গেছে আমার ।
ফালতু না বকে সরে যাও বলছি। যেতে না দিলে খারাপ হবে । ফালতু ঝামেলা আমার ভালো লাগে না ।কেটে কেটে কথা গুলো বলেছিল দীপ।
তাই কি করবি রে বে? তোর এই বান্ধবীর সাথে একটু গপ্প করব আমরা । বৌ তো আর নয় তোর ।যা ফোট, বলে হাতটা ধরে টানতে গেছল আমার । ভয়ে দীপের জামাটাই জোরে ধরে চোখ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। হাতটা আমার কাছ পর্যন্ত আসেনি । চোখ খুলে দেখেছিলাম হাতটা ধরে মচড়ে দিয়েছে দীপ । ফোন টা সোম কে দিয়ে বলল রজত আংকেল এর নম্বর টা লাগা ।বল দীপ বলল মেলার মাঠে কতগুলো ছেলে মেয়েদের বিরক্ত করছে ।ইমিডিয়েট যেন থানা থেকে পুলিশ আসে।আর আজ তো আমাদের বাড়ির মেয়েদের দিকে চোখ দিয়েছে ।আজ তো এর শেষ দেখেই ছাড়ব। যে চোখ দিয়ে অনা কে দেখেছিস সেই চোখ গুলো ই থাকবে না । ও আমার কে হয় জানিস? যার জন্য তোকে মারতে আমার একটা মিনিট সময় লাগবে না ।একে দীপের ঐ রূপ তাতে ফোন সব কটা পেছন ফিরে ছোটা শুরু করেছিল। হাত মচড়ে ধরা লোকটাকে তো মেরেই ফেলত যদি রাজা ধরে না ফেলত । ভয়ে দীপকে জড়িয়ে ধরেছিলাম আমি ।এ দীপকে তো আমি চিনি না । একটা মানুষের এমন করেও দুটো রূপ হয় ।
এই খেপি ভয় পাস না ।আমি আছি তো ।আমি থাকতে তোর কিচ্ছু হবে না ।তুই জানিস না ।বলতে বলতে জড়িয়ে ধরেছিল আমাকে ।এই তো আমার চেনা গলাটা ।চেনা মানুষ টা ।এক মূহুর্তে কেমন পাল্টে গেছল। শুধু আমার জন্য ।আর একটু জোরে আঁকড়ে ধরে ছিলাম অনেক কিছু না বোঝার জন্য ।

বাড়িতে সবটা সবাইকে বলতে বারন করে দিয়েছিল দীপ ।ফালতু সবাই চিন্তা করবে । শুধু আমরা কজন ঘটনাটা জানতাম । ওর রজত আংকেল কেও বারন করে দিয়েছিল সবাই কে বলতে । বাড়িতে শুধু জানত কটা বদমাশ ছেলে মেয়েদের ডিস্টার্ব করছিল । দীপের জন্য তাদের ধরা গেছে । রাতে এসেছিলেন রজত আংকেল নিজে। বড় পুলিশ অফিসার ছাড়াও দীপদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ড ও উনি । দীপ রাজা সোম সবার খুব প্রশংসা করলেন । সাহস সবার থাকে কম বেশি কিন্তু দরকারে সবাই কাজে লাগাতে পারে না ।ওরা সেটাই করেছে । আর সেটা বলতেই এতদূর ছুটে এসেছেন মানুষটা। ওদের সবাইকে প্রণাম করার পর আশীর্বাদ করলেন ।খুব ভালো মানুষ । খাওয়া দাওয়া করে পূজার সময় অবশ্যই একদিন আসবেন কথা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন ।আমারা গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এসেছিলাম। চলে যাচ্ছি হঠাৎ আমাকে ডাকলেন । কাছে যেতে শুধু একটা কথাই বলছিলেন, ছেলেটাকে ছোট থেকে চিনি ।রাগলে মাথার ঠিক থাকে না ওর কোনদিনই ।কিন্তু আজ যেন পাগল হয়ে গেছল। এমন রাগ আমি ওর কখনও দেখিনি । লোকটাকে আর একটু হলেই মেরে ফেলত ।ফোনে শুধু একটা কথাই বলেছিল যে আমার অনার দিকে চোখ তুলে তাকাবে তাকে আমি শেষ করে দেব। তোমরা তো বেস্ট ফ্রেন্ড শুনলাম । দেখো মা যে জন্য ওর এত পাগলামি সেটা যেন হারিয়ে না যায় ।তাহলে পাগলটাকে রাখা যাবে না ।বলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছলেন ।

ওরা দূরে থাকায় কিছু শুনতে পায় নি । ভাবছে আজকের ঘটনার বিষয়ে কিছু জানলেন। কিন্তু আমি কি ভাবছি । ঠিক কি বলতে বা বোঝাতে চাইলেন আমাকে । ঠিক কোন পথে হাঁটছে সময় । আবার মাথাটা ঝিমঝিম করছে ।বুকের ভেতর টা কাঁপছে । না যা হয় হোক পূজোর পর ফিরে গিয়ে দীপের সাথে কথা আমাকে বলতেই হবে ।পূজো টা ভালো ভাবে মিটলেই হল।

পর্ব ৮

দেখতে দেখতে পূজো চলে এসেছিল । পঞ্চমির দিন । যারা আসার কম বেশি সবাই চলে এসেছে । দীপের দুই দিদি ও চলে এসেছে । ওদের দুই পুচকুর সাথে সময় কোন দিক দিয়ে কেটে যাচ্ছে বোঝাই যাচ্ছে না । তনু তো বলেই দিল, এখানে কেউ বলবেই না তুই আমাদের বন্ধু । সারাদিন ওদের নিয়ে মেতে আছিস। না আমাদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিস, না কিছু ।দীপ ঠিকই বলে তুই বড় হবি না । আচ্ছা রেগে গেছে সবাই আমার ওপর ।

সকাল বেলা রেগে গিয়ে বলছিল চা খেতে খেতে । সবাই ডাইনিং এ বসে আছি আমরা । জলখাবার তৈরী হচ্ছে । আমাদের সবকটা পেটুক এখানে এসে আরো বড় রাক্ষসে পরিনত হয়েছে । সারাদিন কিছু না কিছু ঠুসেই যাচ্ছে । হঠাৎ দীপ বলল, ছোট দের আড্ডা দিতে নেই তুই জানিস না তনু। বড়রা আড্ডা মারে আর ছোটরা কুমিরডাঙা খেলে। আর দুম দাম কাছাড় খায় ।
আবার আমার পেছনে লাগা শুরু করেছে বদমাশটা।

আসলে সেদিন রাতের ঘটনাটার পর আমরা সবাই একটু ভয় পেয়ে গেছলাম । একে তো বাইরে এসে এরকম একটা বাজে ব্যাপার । তার ওপর দীপের ওই চেহারা ।আমাদের এতদিনের বন্ধুত্ব ।কখনও ওকে এভাবে রাগতে আমরা কেউ দেখিনি । আমার ব্যাপারে দীপের পজেসিভনেস ওরা সবাই জানে ।কিন্তু এখানে যদি কেউ জানত দীপ আমার জন্য এরকম একটা কান্ড করেছে কিছুই কি ভাবত না কেউ। যেখানে আর কদিন পর বিদিশা আসবে ।পরি পর্যন্ত বলছিল, জান অনাদি দাভাই কে এত রেগে যেতে আগে কখনও দেখিনি । ও তোমার এত কেয়ার করে তবে বিদিশাদি কে বিয়ে করবে কেন?
আমি হেসে বলেছিলাম, আরে আমরা তো বেস্ট ফ্রেন্ড তাই ।ওখানে আমার জায়গায় তনু বা রিমি থাকলেও ও এটাই করত ।বন্ধুরা ওর জীবন । আর বিদিশা এলে দেখবি ও কত ভালো । তখনতো এই দিদি কে ভুলেই যাবি ওকে পেয়ে ।
কখনও না অনাদি । তুমি তো এই কদিনে আমারও বেস্ট দি প্লাস ফ্রেন্ড হয়ে গেছ । তোমাকে আমি কখনো ভুলব না বরং সারাজীবন ধরে জ্বালাবো । বলে জড়িয়ে ধরে ছিল আমাকে ।
হেসে কথাটা ঘুরিয়ে দিয়েছিলাম । কিন্তু এইটুকু বাচ্চা মেয়ের মাথায় যে কথাটা এসেছে সেটা অন্য কারো মাথায় আসতে কতক্ষণ । ছেলেটার এই কাজ গুলোর জন্যই ভয়ে ভয়ে থাকি আমি । ওর মত সহজ করে দুনিয়ার সবাই ভাবে না এটা কিছুতেই বুঝতে চায় না ।এখানে কোন কথাই বলা যাবে না । কিন্তু ফিরে গিয়ে একবার কথা বলতেই হবে ।কেন এত অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে । নিজের ভেতর নিজেকে প্রশ্ন করার উপায় নেই । ফালতু কিছু উওর পাব যেগুলো আমি ভাবতেও চাই না । আর বাইরে তো আরই বাজে অবস্থা । কি যে হচ্ছে ।কি যে হবে । শেষে দেখব আমিই পাগল হয়ে গেছি। তবে এই কটাদিন যেভাবে হোক ভালো করে কাটিয়ে দিতে হবে । আমি চাই না কারো মনে আর কোন প্রশ্ন আসুক । তাই সেই প্রসঙ্গে আর কোন কথাই বলিনি।পরদিন সকাল থেকে আমাদের দেখে কেউ বলতেও পারত না আগের দিন রাতে কি ঘটনাটাই না ঘটে গেছে । একটু পরেই দীপের দুই দিদি এসেছিল।সাথে পুচকু গুলো । এবাড়িতে পূজোতে অনেকে আসে। আর তাদের মধ্যে খুদে দের সংখ্যা নেহাত কম নয় । তো হয়েছে কি দুপুর বেলা সবাই খাওয়া দাওয়ার পর এদিকে ওদিকে আছে ।আর ছোটগুলো দালানে খেলছে । প্রতিমা সাজানোর কাজ ও চলছে । আমি একটা বই নিয়ে ওখানে বসেছিলাম ।খেলাও দেখা হচ্ছে । মা কে সাজানো ও দেখা হচ্ছে । আবার বই ও একটু পড়া হচ্ছে । এই সময় দীপের এক কাকুর মেয়ে নেহা এসে ওদের সাথে খেলার জন্য জেদ ধরে বসল । ও মা ওদের দেখাদেখি বাকি সবকটা এসে টানাটানি শুরু করে দিল। উপায় না দেখে একটু খেলছিলাম ওদের সাথে । কতদিন কুমিরডাঙা খেলিনি । একটু মজাও লাগছিল ।তার ওপর এখন সব অন্যদিকে ব্যস্ত । গাধাটাও নেই । তাই কেউ হাসাহাসি করবে সে ভয় ও নেই । নিশ্চিন্ত মনে খেলছিলাম আমি । তো ডাঙা মানে কোন উঁচু জায়গায় ওপরে উঠতে হবে ।নইলে ছুঁয়ে দিলেই আউট । তো ঠাকুর দালান হয়ে ভেতরে যাওয়ার রাস্তায় একটু সিঁড়ি দিয়ে উঁচু করা আছে দৌড়ে ওটার ওপর উঠতে গেছলাম ।পেছন দিকে দেখতে গেলাম আমাকে ধরতে আসছে না তো । ব্যস যা হওয়ার তাই হল ।কারো সাথে একটা ধাক্কা ।ভাবলাম গেলাম আজ । একে তো এই বয়সে খেলছি । তার ওপর উল্টো দিকে তাকিয়ে ছুটছি । আজ প্রেস্টিজ একবারে ধুলোয় গড়াগড়ি খাবে।লজ্জায় চোখ বন্ধ করে দিয়েছি । ইস কি মরতে খেলতে গেছলাম । যাক ধরে নিয়েছে আমায় ।কোমরটা এ যাত্রায় ভাঙলো না ।হঠাৎ শুনি, এই কি হল রে । চোখ বন্ধ করে আছিস কেন? পড়লে না হাড় সব গুঁড়ো হয়ে যেত বাঁদরি । তুই বাচ্চাই রয়ে গেলি ।
তাকিয়ে দেখি গাধাটা চেপে ধরে আছে আমাকে ।যা বাবা । আবার পেছনে লাগবে আমার ।দূর ভালো লাগে না । আমি চটপট ওর হাত ছাড়িয়ে বলে ছিলাম, আমি মোটেও পড়ে যাইনি । ওপারে যাচ্ছিলাম । তুই শুধুই ধরলি।
ও এই কেস । তুই পড়িসনি না রে ।তা হলে ভয়ে চোখ বন্ধ করেছিলিস কেন? শোন তোকে না আমার থেকে বেশি কেউ চেনে না । দাড়া ফিরে এসে সবাইকে বলছি।

এই না কাউকে কিছু বলবি না । আমি না তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ।
সে এসে ভাবব ।
বলে বেরিয়ে গেছল। কাল রাতে নানা কাজে ব্যপারটা ভুলে গেছল। আজ সকাল থেকে আবার স্বরূপ উন্মোচন করেছেন বাবু ।শয়তানের গাছ একটা ।

মাথাটা আবার গরম হচ্ছে আমার । ধুর । আবার সবাই কে বলা হচ্ছে হেসে হেসে । দাড়া দাড়া সুযোগ সবার আসে । রেগে গিয়ে রান্না ঘরে চলে গেছলাম । না একটা বদমাশের সাথেও কথা বলব না আর ।
রান্না ঘরে গিয়ে দেখি মামনি আর জবাদি মিলে লুচি আর কি কি সব বানাচ্ছে ।এবার আলু র দম করবে ।হঠাৎ কি মনে হওয়ায় আমি বললাম, মামনি এটা আমি করব। খুব একটা খারাপ বানাই না ।
মামনি হেসে বলল, করবি তো কর না । জবা রইলো যা লাগে ওকে বলবি ও দিয়ে দেবে । আমি মা মানে তোদের সুইট হার্ট কে চা দিয়ে আসি । এই তো এল। এখনও চা খাওয়া হয় নি ।
রোজ রান্না না করলেও খুব একটা খারাপ হয় না ।বরং অন্যরা ভালো ই বলেছে । আসলে সকাল থেকে পেছনে লাগলে কার আর ভালো লাগে । তাই এখানে পালিয়ে এলাম । কিছুক্ষণ অন্তত শান্তি তে থাকি। বই একটা হাতেই ছিল । আলুটা কষে বসিয়ে দিয়েছি ।সেদ্ধ প্রায় হয়েই গেল। এদিকে গল্পটাও জমে উঠেছে । এরকম অবস্থায় ছাড়া ও যাচ্ছে না ।

তুই রান্না করতে করতে ও পড়বি ।পুড়ে মরবি একদিন ।

তুই এখানে ও এসেছিস জ্বালাতে । বেরো বলছি । নইলে তোর একদিন কি আমার একদিন ।

ওরে না ।তাই নাকি । কি করবি রে তুই। তোকে জ্বালাবো বেশ করব বলে আমার চুলের ক্লিপ টা খুলে নিল গাধাটা ।
তবে রে আমার ক্লিপ দে ।

দেব না । দেব না । বলে আমার চশমা টা ও নিয়ে ছুট লাগালো ।

দাড়া যাচ্ছি আমি। মামনিকে বলছি তুই কেমন পেছনে লাগছিস আমার । জবা দি কে রান্না টা দেখতে বলে ছুটে ছিলাম ডাইনিং এ। সবাই মিলে বসে আছে । আড্ডা মার। তা না । দাড়া পেছনে লাগা বার করছি তোর।

এই গাধা আমার ক্লিপ আর চশমাটা দে বলছি।

দেব না তো । নিতে গেলে আমাকে ধরতে হবে ।

দিবি না তো বলে ওর পেছনে ছুটে ছিলাম । অত বড় ডাইনিং । সোফা ধরে গোল হয়ে ঘুরছে ও। ওর পেছনে পেছনে আমি । সব চুল খুলে এলোমেলো হয়ে গেছে । এত জ্বালাতন করে না । সবাই হাসছে এবার । মামনি তো বলেও ফেলল, বড় দাদা দিদি গুলো যদি এরকম করে ছোট গুলোর আর দোষ কি । দিয়ে দে না দীপ।
কিন্তু মামনির দীপ থোড়াই শোনার বান্দা । সমানে ছুটিয়ে মারছে ।
ওর সাথে না পেরে ভালো করে ভেংচি কেটে ধপাস করে সুইট হার্টের পাশে বসে পড়েছিলাম । দেখেছ তোমার ছোট কর্তা কেমন জ্বালাচ্ছে আমাকে? একটু ও শান্তি তে থাকতে দেয় না আমাকে, বলেছিলাম আমি ।
এটাতো ঠিক না ছোট কর্তা । আমার সই কে কেন এত বিরক্ত করছ ? এবার আমি কিন্তু ঝগড়া করব। তবে একটা কথা ঠিক চশমাটা তুমি না নিলে তো জানতেই পারতাম না আমার সই এর চোখ দুটো এত সুন্দর । তার জন্য ঝগড়াটা মাফ করাই যায় ।

তবে । শুধু ঝগড়া করলেই হবে । আদর ও করতে হবে ।বলে দীপ জড়িয়ে ধরেছিল সুইট হার্ট কে।
এটা কিন্তু ঠিক হল না ।বকা দেওয়ার বদলে আদর করছ তুমি । যাও তোমার সাথে ও কথা বলব না । গাধার সাথেও বলব না ।বলে মুখ ঘুরিয়ে বসে ছিলাম ।
ওরে বাবারে । তুই আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারবি? আবার রাগ করা হচ্ছে ।চল মামনি খেতে দিচ্ছে বলে আমার গাল দুটো টিপে দিয়ে উঠেগেছল দীপ।

খেতে বসে আবার চলছিলো গল্প । আলুর দম টা মুখে দিয়েই রাজা বলেছিল, অনা এটা তুই বানিয়েছিস তো।
আমি মাথা নাড়তেই বলেছিল, ঠিক ধরেছি। একমাত্র আমাদের অনাই আলুর দমে দারচিনি দেয় ।দীপের ফেভারিট বলে । এখন অবশ্য আমাদের ও।
তবে খেতে বেশ ভালো ই লাগে সেটা বল।ফালতু রাগাচছিস কেন রে ওকে, বলেছিল রিমি।
জান কাকিমা এই আলুর দমের একটা গল্প আছে, বলে গল্পটা বলেছিল রিমি।
আমাদের সবে মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে । একদিন বিকেলে অনাদের বাড়িতে আমাদের আড্ডা বসেছে । কি একটা কাজে মানি বাইরে গেছল। এদিকে খাওয়ার ডিপার্টমেন্ট মানির ছিল ।মানি বাড়িতে নেই ।আর আমাদের ও খুব খিদে পেয়েছে । টাকা থাকলেও বাইরের কিছু খেতে ইচ্ছে করছিল না । সবাই ঠিক করলাম লুচি আর আলুর দম করব। যেই ভাবা সেই কাজ ।টেরা ব্যাকা হলেও লুচি হল। এবার আলুর দমের পালা । ওটা দীপ অনা আর সোম এর ভাগে পড়েছিল। সবাই নতুন রান্না ঘরে । শুধু দীপ কদিন আগে কিছু একটা তরকারি খেয়েছিল যেটাতে দারচিনি ফ্লেভার ছিল। ওর পছন্দ ও হয়েছিল । ও সটান বলল আলুর দমে দারচিনি দিলে ব্যপক টেস্ট হয় । সেই মত আলুর দমে দারচিনি দেওয়া হল। যদিও সেদিন আলুর দম নয় মশলার দম হয়েছিল। কেউ ই তো জানি না কতটা মশলা দিতে হবে । আন্দাজে দেওয়া হয়েছিল । সবাই চা দিয়ে আর আলু গুলো ধুয়ে লুচি সরি পাঁপড় খেয়েছিলাম। শুধু দীপ ই সেদিন আলুর দম ভালো করে খেয়েছিল ।অনা কত কষ্ট করে বানিয়েছে বলে কথা।
সেই থেকে অনার বানানো আলুর দমে দারচিনি মাস্ট ।বলে হেসে উঠেছিল সবাই ।

তবে যাই বলিস তোরা অন্যরকম হলেও খেতে বেশ ভালো হয়েছে, বলেছিল মামনি।

আড্ডা গল্পে মজাতে কোন দিক দিয়ে সময় কাটছিল তার কোন হিসাব ছিল না ।
হিসেব মত কাল থেকে ই পূজো শুরু । রাত থেকেই তার তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছল।

ষষ্ঠীর সকাল ।সকাল থেকেই পূজোর নানা কাজ চলছে । আমি স্নান করে নিচে আসতেই দেখি বাকি সবাই ও রেডি। দীপ শুধু আসেনি । নিশ্চয়ই ঘুম থেকে ওঠেনি ।এদিকে মানির দিদি মানে দীপের বড় মাসি, মেসো আর তাদের ছেলে এসেছে । আমরা সবাই আলাপ করলাম ।খুব ভালো সবাই । সকালে তেমন কোন কাজ নেই । কাল মানির ঘরে বেশ কিছু ভালো বই দেখেছি । কতগুলো র তো আমি নাম ই জানতাম না । ভাবলাম আজ বিকেলের পর আর হয়তো তেমন পড়ার সময় পাব না । যতই হোক পূজোর বাড়ি । কত কাজ । বই নিয়ে বসে থাকলে খারাপ দেখায় । কিন্তু এখন একটু ফাঁকা আছে । এখন একটু পড়লেও সমস্যা নেই । ভীষন রকম লোভ হচ্ছে । তাই মানিকে বলে কটা বই নিতে মানির ঘরে গেছলাম আমি। বই গুলো দেখছি হঠাৎ চোখে পড়ল ওপরের তাকে কটা বই ।বেশ পুরোনো । কিন্তু এত উঁচুতে যে শুধু তে হাতে পাব না । তাই একটা টুলে উঠে বই গুলো পাড়ছিলাম। টুলটা বেশ উঁচু । পুরনো দিনের বাড়ি তো । ওপর থেকে জিনিস পাড়ার জন্যই হয়তো রাখা হয়েছে । বই গুলো নিয়ে নামব কি করে ভাবতে গিয়েই হঠাৎ পা টা একটু সরে গেছল ।হাত খালি থাকলে নামতে সমস্যা হত না । একহাতে বই আর একহাতে কিছু ধরতে না পেরে সোজা উল্টে যাচ্ছিলাম । হঠাৎ দেখি কোমরটা ধরেছে দীপ।
তুই শান্ত ভাবে কিছু করতে পারিস না বল। কোন দিন একটা বড় বিপদ না ঘটানো পর্যন্ত তোর শান্তি হবে না ।

এই লেকচার পরে দিবি পরে আগে নামা তো আমাকে । আর তুই এঘরে কি করছিস রে ।

স্নান করছিলাম । কাল মামনির কাছে ঘুমিয়ে গেছলাম । তাই এখানেই স্নান টা করে নিলাম । কেন না থাকলে ভালো হতো । আজ সিওর হাত পা মাথা সব ভাঙতো । অবশ্য তাহলেই ঠিক হত ।সারাটা পূজো জামার বদলে ব্যান্ডেজ এ মুড়ে থাকতি।যদি একটু বুঝে শুনে কাজ করতিস।
বলে আসতে আসতে নামিয়ে ছিল ওর বুকের ওপর দিয়ে । সবে স্নান সেরে এসেছে ।ভিজে চুল।স্যাম্পু আর আফটার সেভ লোশনের গন্ধে মাথাটা আবার ঝিম ঝিম করছে । সারা শরীর টা ছুঁয়ে আছে ওকে ।নিশ্বাস গুলো গুনতে পারছি আমি ওর।চলে যাওয়া উচিত আমার ।কিন্তু পা গুলো চলছে না ।ছেলেমানুষি গুলো সরিয়ে সামনের ছেলেটার চোখ গুলো আবার বদলে যাচ্ছে । এই বদলে যাওয়াটাই ভয় পাই আমি । নিজেকে ধরে রাখা কঠিন । আর বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ যদি উল্টো দিক থেকে আসে তবে? সেটা আরও ভয়ের। কোন রকমে বলেছিলাম, ছাড় যেতে হবে ।

কিছু বলল না ।ভেজা মাথাটা ঝাঁকিয়ে সারা মুখে জল ছিটিয়ে দিয়ে আলতো হেসে আমার গালে ঠোঁট দুটো ছুঁইয়ে দিয়ে চলে গেল । আর আমি আবার ভেবলে গিয়ে বসে পড়লাম খাটে । কি চাইছে ছেলেটা? কি ভাবছে।কি করছে জানে ও। কি চলছে ওর মাথার ভেতর । না এবার জানতেই হবে আমাকে । কেন করছে ও আমার সাথে এরকম? আমার কি কোন দাম নেই । এত সস্তা ভাবছে আমাকে? ভেতরে ভেতরে এবার একটা রাগ গুমরে উঠতে লাগল আজ এতদিন পর । উওর টা জানার ছিল । কিন্তু এত তাড়াতাড়ি পাব সেটা ভাবতে পারিনি ।

তোকে যে কেন এত ভাল লাগে ।তোকে যে কেন এত ভালবাসি। সেটাই যদি বুঝে যেতিস পাগলি তা হলে তো আর কষ্ট ই থাকত না । আমাকে দেখতে পারবি অন্য কারো সাথে, বিদিশা র সাথে । পারবি না ।তবু নিজের ভেতরের কথা টা শুনবি না । নিজেও কষ্ট পাবি আর আমাকেও দিবি । কেন রে ।বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কি ভালবাসতে নেই । আমি তোর মত মহান নই রে অনা । তোকে কারো সাথে দেখতে পারব না আমি । আমি জানি তুই ও আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবি না । তাই তো সেদিন সকালে ছুটে এসে ছিলি । পূজো টা পেরোতে দে। তারপর তোকে দেখছি আমি । বড্ড বড়, মহান হওয়ার সখ। বাঁদরামি ঘোচাবো আমি তোর । একটু আগে পড়েই যাচ্ছিল । না ধরলে কি যে হত। সেই ছোট থেকে যখনই কোন দরকার হয়েছে দুজনে দুজনের জন্য ঠিক পৌঁছে গেছি । লোকে শুনলে হাসবে । বানানো গল্প ও বলতে পারে । কিন্তু বানিয়ে বানিয়ে কি আর বন্ধু, ভালবাসা এগুলো পাওয়া যায় ।এগুলো বড় আদরের জিনিস ।যত্নে রাখতে হয় । যে এগুলো জীবনে কখনও পায় নি সে জানবেও না জীবনে কতটা না পাওয়া হয়ে রয়ে গেল ।
কি মিষ্টি লাগছিল তখন তোকে দেখতে । খুব ইচ্ছে করছিল তোকে অনেক অনেক আদর করতে । কিন্তু করিনি জানিস । কারন তোকে আদর যখন করব তখন তুই যেন আমাকে ভালবাসিস। এটা ভেবে যেন কষ্ট না পাস যে তুই অন্য কারো কিছু লুকিয়ে নিচ্ছিস। তোর জিনিস, এটুকু জোর যেন সেদিন তোর মধ্যে থাকে।
মনে আছে বিদিশার সাথে তখন সবে রিলেশনটা হয়েছে আমার । একদিন কি একটা কথা হতে হতে তোকে রাজা বলেছিল, তুই তো দীপের সব জানিস।সব।
তুই বলেছিলি, না সব জানি না ।
রাজা আবার জিজ্ঞাসা করেছিল, সে কি রে তুই জানিস না সেটা আবার হয় না কি ।
তুই হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে ফিসফিস করে বলেছিলি, জানিনা তো।দীপ কেমন করে বিদিশা কে আদর করে জানি না তো।
তারপর হড়বড় করে কথা ঢাকতে বলেছিলি, দেখ দীপ এখন শুধু আমাদের বন্ধু নয় ।বিদিশা র বয় ফ্রেন্ড ও বটে । তাই ওদের এখন নতুন নতুন ফিলিংস জাগবে ।সেটা জানা কি আমার পক্ষে সম্ভব বল। বরং এই কথা টা এখন বিদিশার জন্য বলা ঠিক ।
সেদিন আড্ডার ফাঁকে কথাটা মিশে গেছল । আমি হালকা করে শুনতে পেলেও অত মাথায় ঢোকাই নি।কিন্তু জানিস এখন তোকে খুব বলতে ইচ্ছে করে, পাগলি আজ ও তোর থেকে বেশি আমাকে কেও জানে না ।আর বিদিশা র কথা তো বাদই দিলাম । বিদিশা কে আদর আমি কখনও করিনি । আমার সব কিছু যে তোর জন্য ।তবে বিদিশার কাছে একটা কারনে আজও আমি কৃতজ্ঞ । সেদিন ও যদি ওভাবে না বলতো তবে সত্যি বুঝতে আমার আরো অনেক দেরি হত।সো ধন্যবাদ বিদিশা । আমার পাগলিটাকে সারা জীবনের জন্য আমার কাছে রাখতে পারার জন্য ।

ভাবতে ভাবতে নিজের ঘরে এসেছিল দীপ। রাগ করেছে পাগলিটা ।আর একটু রাগাতে হবে ।রাগলে ভারি মিষ্টি লাগে আমার বাঁদরিকে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here