চমক পর্ব 3

0
1427

গল্প:-চমক
ছদ্মনাম মায়া ইসলাম
৩.
তাজ দুজন গার্ড রেখে দিছে মেহজাবিন কোথায় যায়, কি করে তা টাইম টু টাইম জানার জন্য। আর একজনকে ঠিক করেছে মেহজাবিনের এ টু জেট ডিটেইলস জানতে।

আজ বিকেলে মায়াকে সঙ্গে নিয়ে মেহজাবিন শপিংমলে আসছে কিছু কেনাকাটার জন্য। গার্ডের কাছ থেকে খবর পেয়ে তাজ ও চলে আসলো তাদের বলা অনুযায়ী। কিছুক্ষণ কেনাকাটা করার পর মেহজাবিনের এক কোণে চোখ আটকে যায়। একটু দূরেই কে যেন ফটো তোলার মতো মোবাইল ফোন ওর দিকে তাক করে আছে। মেহজাবিনের কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে, তবে মুখের সামনে ফোন থাকায় লোকটার চেহারা ভালো করে দেখতে পেলোনা।
মেহজাবিনের এখন অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। তাই কিছু চিন্তা করে মায়াকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। তখ‌ই মায়া বায়না ধরলো সে পার্কে যাবে। কোনোদিন‌ই দেখার ভাগ্য হয়নি তার পার্ক জায়গাটা কেমন। তাই আজ যাওয়ার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে আছে। তবে মেহজাবিন তো যেতে চাচ্ছে না। ওর ওসব পার্ক টার্ক ভালো লাগে না। কিন্তু শত বুঝানোর পর‌ও মায়া শুনতে নারাজ। সে যাবে তো যাবেই। অগত্যাই ওকে নিয়ে মেহজাবিনের পার্কে যেতে হলো। কিন্তু ওদের যে, কেউ ফলো করছে তা কারোরই বোধগম্য হলো না।

হাঁটতে গিয়ে মায়ার সাথে একটা মেয়ের পরিচয় হয়। মেয়েটি স্বইচ্ছায় এসেছে পরিচিত হতে। নাম নাকি তিতলী। মায়ার সাথে এক কলেজেই পড়ে। মায়াকে নাকি খুব ভালোভাবেই চিনে তবে মায়া তিতলীকে চেনেনা। তাই আজ দেখা পেয়ে‌ই ভাব জমাতে আসলো। একসময় নিজের নাম্বার মেহজাবিনের ফোনে (মায়ার ফোন না থাকায়) সেভ করে বায় বলে চলে যায়। তখন মেহজাবিন খেয়াল করলো সামান্য দূরের বেঞ্চে বসা একটা ছেলের কাছে তিতলী গিয়ে পাশে বসেছে। তারপর হাসতে হাসতে হাত নাড়িয়ে কিসব বলে কয়ে ছেলেটার সাথে বাইকে উঠে চলে যাচ্ছে।
মেহজাবিন চোখ ফিরিয়েও ফিরালো না। বেঞ্চের উপর একটা মোবাইল ফোন দেখা যাচ্ছে। যেটা ওই ছেলেটার হাতে নাড়াচাড়া করতে দেখা গিয়েছিল।
ওখানে গিয়ে মেহজাবিন তিতলীকে কল করে। তিন বারের রিং‌ এ ফোন রিসিভ হলে মেহজাবিন ব্যাপারটা বলে দেয়। আর তার কিছুক্ষণ পর‌ই তিতলী চলে এসেছে। ফোন‌ওয়ালা প্লাস বাইক‌ওয়ালাকে দেখে মেহজাবিন একটু আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলে উঠলো,

‘ওহ্, তাহলে আপনার ফোন এটা! এই নিন, আর সব বিষয়ে সচেতন হোন। এই বলে তাজের সামনে ফোন এগিয়ে দেয়। তাজ ফোনটা হাতে নিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে বলল,

‘চমৎকার!

‘মানে?? মেহজাবিন আরো একটু আশ্চর্য হয়ে গেল।

‘এই যে, আমাকে ফলো করা শুরু করে দিছো। কখনো ভার্সিটিতে, কখনো শপিং মলে, কখনো বা পার্কে (বলে কি! এতো দেখি নিজের ব্যাপারটা অন্যের ঘাড়ে চাপাচ্ছে)।
আরে ভাই বললেই তো পারো, যে আমাকে তোমার ভালো লাগে, প্রতিক্ষণ আমার দর্শন চাও, আমার আশেপাশে তোমার থাকা চাই, আমার ভয়েস তুমি বার বার শুনতে চাও, আর…আর…আর আমাকে তুমি খুব করে কাছে চাও(লাস্টের কথাগুলো বলতে তাজের গলা কেঁপে উঠে)।
এগুলো বলে মেহজাবিনের একটু কাছে এসে আবারো বলল,

‘তাহলে‌ই তো হয়। লজ্জার কি আছে? যা আমি তোমাকে একদম বিয়ে করে ফেলতে পারি। তাই না?? যেটা তুমি চাও।( তাজ একদম ইমোশনাল হয়ে পরেছে।)
মেহজাবিন হতভম্ব হয়ে পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে। ওর মাথায় আসছে না, তাজ এগুলো কি বলছে।

তাজ এখন সহজ হয়ে নাটকীয় ভাবে মায়াকে ধমক দিয়ে বলতে লাগলো,
‘এ্যাই, তুমি কি এর বোন? মেহজাবিনের দিকে ইঙ্গিত করে।

‘হ্যাঁ

‘তোমার বোন আমার প্রেমে দিওয়ানা হয়ে আছে। জানো তো তুমি?

মায়া অবুঝের মতো দুদিকে মাথা নেড়ে বলল, ‘না।

‘তাহলে এখন জেনেছো নিশ্চয়ই?

‘ আধাবুদি

‘আধাবুদি?? তাজ ওয়ার্ডটা এই ফার্স্ট শুনলো।

‘না, ঐ মোটামুটি।

‘কেন, মোটামুটি কেন?
হোয়াট‌এভার, বুঝতে পারবে। আগে তোমার আব্বুর নাম্বারটা দাও। তারপর পানির মতো একদম পরিষ্কার হয়ে যাবে।
বাবার নাম্বার নিয়ে তাজ কি করবে? মেহজাবিন ভেবে কুল পাচ্ছে না। আবার উল্টো পাল্টা বলবে না তো। মেহজাবিন নিষেধ করতে যাবেই, কিন্তু এর‌ই মধ্যে মায়া বলে দিয়েছে। অসহায় মেহজাবিন একবার তাজের দিকে তাকায়, আর একবার তিতলীর দিকে, আর মায়ার দিকে। মেহজাবিনের এই কর্মকান্ডে তাজ ভিতরে ভিতরে হাসিতে ফেটে পরছে। কিন্তু বাহিরে একদম গম্ভির।
মেহজাবিন কিছু জরিপ করতে পারে এই ভেবে তাড়াহুড়ো করে বাইকে উঠে বসে তিতলীকে নিয়ে। তারপর মেহজাবিনের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসা হেসে বলল, ‘ হবু ব‌উ এখন আসছি। দেখা হবে বিয়ের পর।
বাইকের গর্জন করে চলে যাচ্ছে ওরা দুই ভাই বোন। আর পিছনে ফেলে রেখেছে ভেজালকার কথার মানে খুঁজতে যাওয়া দুই বোনকে।

তাজ বেলকনির একটা সোফায় বসে ফোনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। স্ক্রিনে মেহজাবিনের ছবিগুলো একে একে ভাসছে। যেগুলো শপিংমলে মেহজাবিনের অজান্তে তুলেছে তাজ। কিন্তু মেহজাবিন ঠিক‌ই টের‌ পেয়েছিল। আর সঙ্গে সঙ্গেই স্থান ত্যাগ করেছিল। যা তাজকে খুব রাগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু পরক্ষণেই নিজের ভাগ্যকে ধন্যবাদ জানিয়েছে, এমন একটা কেয়ারফুল মেয়ের সন্ধান দেওয়ায়। আর এখন আল্লাহ্ আল্লাহ্ করে বিয়েটা হয়ে যাক, তাহলেই তাজ চিন্তামুক্ত হয়। আরে, হবু শ্বশুরমশাইকে তো কল করে বিষয়টা জানিয়ে দেয়া উচিত, কথাটা তাজ একদম ভুলেই গেছিল…….. চলবে ইনশাআল্লাহ। আগামী পর্বে সমাপ্তি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here